Breaking News

আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ২২ || লেখিকা: সুলতানা তমা

গোধূলি সন্ধ্যা, ছাদে দাঁড়িয়ে আনমনা হয়ে আকাশপাণে তাকিয়ে আছি। চারদিকে একটু একটু করে অন্ধকার নেমে আসছে, মনে হচ্ছে এই রাতের আধারের মতো আমার জীবনেও একটু একটু করে অন্ধকার নেমে আসছে। হিমিকে ভালোবেসে সুন্দর একটা জীবন সাজাতে চেয়েছিলাম কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে গেলো। সবকিছু কেমন যেন এক মুহূর্তের মধ্যে মিথ্যে হয়ে গেলো। জীবনের এমন এক পর্যায়ে আমি আছি যে না পারছি সবকিছু মেনে নিতে আর না পারছি সবকিছু ঠিক করে নিতে।
আপু: আরশান? (হঠাৎ আপু এসে আমার কাধে হাত রাখলো, পিছন ফিরে আপুর দিকে তাকালাম না ইচ্ছে হচ্ছে না)
আপু: কিরে কি হলো? (আপু আমাকে ঘুরিয়ে দিলো, আপুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি আর আপুকে এক দৃষ্টিতে দেখছি। আপু লাল বেনারসি পরে বিয়ের সাজে সেজেছে, আপুকে খুব সুন্দর লাগছে তবে আরো একটু বেশি সুন্দর লাগতো যদি আপুর ঠোঁটের কোণে হাসি থাকতো)
আপু: ছাদে দাঁড়িয়ে আছিস যে নিচে যাবি না? একটু পর তো বরযাত্রী...
আমি: তো আমি কি করবো? আব্বু আছে তো।
আপু: আমার বিয়ে অথচ তুই এমন করছিস?
আমি: বিয়েটা তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হচ্ছে তাই এমন করছি।
আপু: কতবার বলবো আমি এই বিয়েতে রাজি।
আমি: হ্যাঁ রাজি কিন্তু সেটা আব্বুর ভয়ে, মন থেকে নয়।
আপু: মন থেকে চাইলেই কি সবকিছু পাওয়া যায়? সবকিছু যদি চাইলেই পাওয়া যেতো তাহলে তো পৃথিবীতে কষ্ট বলে কোনো শব্দ থাকতো না।
আমি: মানছি চাইলেই সবকিছু পাওয়া যায় না কিন্তু পাওয়ার জন্য তো চেষ্টা করতে হয়। চেষ্টা না করলে আল্লাহ্‌ তোকে দিবেন কিভাবে?
আপু: হয়তো অসীমের সাথেই আল্লাহ্‌ আমার ভাগ্য লিখে রেখেছেন তাই ওর সাথে বিয়ে হচ্ছে।
আমি: চেষ্টা করলে হয়তো তোর ভালোবাসার মানুষের সাথেই বিয়েটা হতো। চেষ্টা করার পর না পেলে এই কথাটা বললে মানাতো, তুই তো কোনো চেষ্টাই করিসনি।
আপু: একটু পর বিয়ে এখন আর এসব ভাবিস না। নিচে চল প্লিজ!
আমি: হুম।
আপু চলে গেলো, আপুর পিছু পিছু আমিও আসলাম।

রোদেলা: ভাইয়া? (ড্রয়িংরুমে যাচ্ছিলাম হঠাৎ রোদেলা আমার হাত ধরলো, পিছন ফিরে তাকালাম রোদেলা আর তারিন দাঁড়িয়ে আছে)
আমি: কিছু বলবি?
রোদেলা: তুমি হিমিকে কি বলেছ?
আমি: কি?
তারিন: অধরা আপুর বিষয়ে প্রমাণ দিয়ে নাকি তুমি হিমির থেকে অনেক দূরে চলে যাবে? হিমির সাথে কোনো সম্পর্ক...
আমি: হ্যাঁ বলেছি।
রোদেলা: কি বলছ এসব?
আমি: যে আমাকে এতটুকুও বিশ্বাস করে না তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক থাকতে পারেনা। যেকোনো সম্পর্কের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে বিশ্বাস, যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে সম্পর্ক টিকবে কিভাবে?
তারিন: আসলে হিমির মাথা ঠিক নেই তাই ভুলভাল...
আমি: আমার মাথা ঠিক আছে? আমার বোনের বিয়ে হচ্ছে অন্য একটা ছেলের সাথে অথচ আমি কিছুই করতে পারছি না। আব্বু বলেছে আজ রাইসার সাথে আমার এংগেজমেন্ট হবে কি করবো বুঝতে পারছি না। এসবের মাঝখানে অধরা এসে আমার গায়ে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে গেলো, বলতে পারো আমার মাথা ঠিক আছে কিনা? এতকিছুর মাঝেও তো হিমিকে কখনো রেগে কথা বলিনি, হিমিকে যেমন ভালোবাসতাম তেমনই বাসি।
তারিন: আসলে তোমাকে আর অধরাকে ওভাবে দেখে...
আমি: হিমি যেদিন বলেছিল ও অপবিত্র সেদিন নির্দ্বিধায় ওকে কাছে টেনে নিয়েছিলাম, আমি কিন্তু সেদিন জানতাম না কিডন্যাপ এর পর চারদিন ওর সাথে কি হয়েছিল। তবুও ওকে কাছে টেনে নিয়েছিলাম কারণ আমার কাছে ভালোবাসা দামী শরীর নয়। আর হিমি কি করলো? অধরাকে আমার বুকে দেখে সব সত্যি ভেবে নিলো, একবারো ভাবেনি ওর আরশান তো এমন না। আমি বারবার বলেছি সব সাজানো তবুও ও আমাকে এতটুকু বিশ্বাস করতে পারেনি। আসলে কি জানতো হিমি আমাকে মন থেকে ভালোবাসে না।
রোদেলা: ভাইয়া তুমি ভুল করছ হিমি তোমাকে ভালোবাসে বলেই কিন্তু রাগ করেছে, রাগ তো তার উপরেই করা যায় যাকে ভালোবাসা যায়।
আমি: হয়তো ভালোবাসে কিন্তু ওর ভালোবাসার গভীরতা খুবই কম, ঠুনকো ভালোবাসা ওর।
তারিন: আরশান ভাইয়া হিমি নাহয় রাগে তোমাকে বিশ্বাস করেনি কিন্তু তাই বলে তুমি এমন সিদ্ধান্ত নিবে?
আমি: একটা ভালোবাসার সম্পর্ক কখন পূর্ণতা পায় জানো? যখন দুটো মানুষের ভালোবাসার পরিমাণ সমান হয়। একজন কম ভালোবাসলে আর একজন বেশি ভালোবাসলে সেই ভালোবাসা কখনো পূর্ণতা পায় না। ভালোবাসায় জয়ী হতে হলে দুজনকে সমান চেষ্টা করতে হয়, একজনের চেষ্টায় কখনো ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না।
তারিন: কি বলতে চাইছ হিমি তোমাকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেনি? আচ্ছা হিমি যদি তোমাকে ভালো না বাসতো তাহলে কি সুইসাইড এর চেষ্টা করতো?
আমি: বললাম না হয়তো ভালোবাসে কিন্তু ওর ভালোবাসা ঠুনকো, এতোটাই ঠুনকো যে সামান্য আঘাতে কাঁচের মতো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে।
রোদেলা: কিছুই শেষ হয়নি তোমরা দুজনেই রেগে আছ, ভাইয়া তুমি অন্তত...
আমি: মাঝেমাঝে রাগ করতে হয় অভিমান করতে হয়, প্রিয় মানুষটিকে নিজের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য করতে হয়।
রোদেলা: গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে ভালোবাসার মানুষটাকেই হারিয়ে ফেলো না। রাগের মাথায় কোনো সিদ্ধান্ত নিও না পরে পস্তাতে হবে।
আমি: (নিশ্চুপ)
রোদেলা: চাচ্চু কিন্তু বলেছে আজ তোমার এংগেজমেন্ট রাইসার সাথে, ভেবে দেখো রেগে থাকবে নাকি কিছু করবে।
রোদেলা আর তারিন চলে গেলো, আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। সত্যিই তো আজ এংগেজমেন্ট হলে আমি তখন কি করবো? হিমির উপর এখন রাগ করাটা কি ঠিক হলো? একদম ঠিক হয়েছে, যে আমাকে বিশ্বাস করেনা তার সাথে সম্পর্ক কিসের আবার? আমি রাইসার হাতেই আজ আংটি পড়াবো।  হিমি বুঝুক বেশি কিছুই যে ভালো না।

রুম অন্ধকার করে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছি নিশ্চুপ হয়ে। বাইরে থেকে খুব চেঁচামেচি শুনা যাচ্ছে, হয়তো বরযাত্রী এসেছে। কোনো কিছুতে মন বসাতে পারছি না, কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না, কেমন যেন দুটানায় পড়ে গেছি। হঠাৎ রুমের লাইট জ্বলে উঠলো, পিছনে তাকিয়ে দেখি রাইসা।
রাইসা: আরশান তুমি রুম অন্ধকার করে একা একা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছ কেন?
আমি: কারণ আমার জীবনেই অন্ধকার নেমে এসেছে।
রাইসা: তাতে কি হয়েছে? আমিতো আছি তোমার জীবন আলোয় আলোয় ভরিয়ে দিবো। (রাইসার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম, রাইসা এসে আমার মুখোমুখি দাঁড়ালো আর আচমকা আমার গলা জড়িয়ে ধরলো)
আমি: কি করছ রাইসা?
রাইসা: তোমার মন ভালো করার চেষ্টা।
আমি: প্রয়োজন নেই।
রাইসা: আছে। দেখতো আংটিটা কেমন হয়েছে। মামা আমার জন্য এনেছেন, আজ তুমি আমার আঙ্গুলে এই আংটি পড়িয়ে দিবে, আমার আঙ্গুলে খুব সুন্দর মানাবে তাই না? (রাইসা একহাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে আছে আর অন্যহাতে আংটি আমার সামনে ধরে রেখেছে, গলা থেকে ওর হাত সরানোর চেষ্টা করছি কিন্তু রাইসা আমার আরো কাছে চলে আসছে)
হিমি: বাহ্ বাহ্! (রাইসার হাত কোনোভাবে সরিয়ে দিয়ে পিছনে তাকালাম, হিমি আমাদের দিকে তাকিয়ে হাত তালি দিচ্ছে। এমনিতে দুজনের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হচ্ছে তার উপর এই রাইসাটা...)
হিমি: নিজের এই চরিত্র ঢাকার জন্য আমার উপর রাগ করেছিলে? অন্যায় করেছ আর আমাকেই আবার কথা শুনিয়েছ। অন্যায়টা একবার নয় দুবার করেছ। রাইসা, অধরা আরো কেউ আছে বুঝি?
আমি: হিমি তুমি যা ভাবছ তা না।
হিমি: দু দুবার আমি নিজের চোখে তোমাকে দুটো মেয়ের সাথে দেখেছি এরপরও বলবে যা ভাবছি তা না?
আমি: হ্যাঁ বলবো কারণ...
রাইসা: হিমি আজ আমাদের এংগেজমেন্ট আর কিছুদিন পর বিয়ে, এখন তো আমরা রোমান্স করবো এটাই স্বাভাবিক, তুমি কেন আমাদের রোমান্সে বাধা দিচ্ছ আমিতো সেটাই বুঝতে পারছি না।
হিমি: এগুলো রোমান্স? নোংরা মেয়ে কোথাকার। আরশান ভালো থেকো তোমার এতো গুলো গার্লফ্রেন্ড এর মাঝখানে আমি আসতে চাই না, সকাল হলেই আমি তোমার থেকে দূরে চলে যাবো।
আমি: হিমি শুনো... (হিমি চলে যাচ্ছিল তাড়াতাড়ি ওর হাত ধরে ফেললাম, এখন রেগে থাকা বোকামি হবে)
আমি: আমাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে তাই বলে ছেড়ে চলে যাবে?
রাইসা: যে যেতে চায় তাকে যেতে দাও আরশান। হিমি যদি তোমাকে সত্যি ভালবাসতো তাহলে তোমাকে ক্ষমা করে দিতো। আমাকে দেখো, আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি আর তাইতো অধরার সাথে তোমার কি হয়েছে না হয়েছে সেগুলো নিয়ে একদম মাথা ঘামাই না।
আমি: রাইসা একদম চুপ আর একটা কথাও বলবা না। হিমি প্লিজ এমন করো না, তুমি চোখে যা দেখেছ তা সম্পূর্ণ ভুল।
হিমি: কোনটা ভুল অধরা তোমার বুকে শুয়ে ছিল এইটা? নাকি রাইসা তোমার গলা জড়িয়ে ধরে... ছিঃ! (হিমি কাঁদছে এবার কি করবো? বারবার আমার সাথেই এমন হচ্ছে কেন? সময় কি কোনো কিছুর প্রতিশোধ নিচ্ছে আমার থেকে?)
হিমি: আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি আর তাই তোমাকে হারানোর ভয় আমাকে সবসময় তাড়া করে বেড়ায়, এই ভয় থেকেই আমি পাগলামি করতাম। আর তুমি কিনা দু দুটো মেয়ের সাথে...
আমি: তুমি যা ভাবছ তা নয়। আচ্ছা তুমি আমাকে হারিয়ে ফেলবে এই ভয় পাও তো? একটু দাঁড়াও তোমার ভয় দূর করে দিচ্ছি। (হিমিকে ছেড়ে রাইসার সামনে এসে দাঁড়ালাম)
আমি: আংটিটা দাও।
রাইসা: কেন?
আমি: আমার বাবা যেহেতু আংটিটা এনেছেন আমিতো নিতেই পারি প্রশ্ন করছ কেন?
রাইসা: কিন্তু এই আংটি মামা আমার জন্য এনেছেন।
আমি: উঁহু এই আংটি তার হাতেই মানাবে যে আমার বউ হবে। (রাইসার হাত থেকে আংটি নিয়ে এসে হিমির আঙ্গুলে পড়িয়ে দিলাম, হিমি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: ভয় দূর হয়েছে? এই আংটি পড়িয়ে তোমাকে আমার করে নিলাম।
হিমি: না ভয় দূর হয়নি, তোমার আব্বু চাইলেই এই আংটি খুলে নিতে পারেন। (এখনো মেয়েটা আমার উপর ভরসা করতে পারছে না? খুব রাগ হচ্ছে ইচ্ছে হচ্ছে...)
আমি: চলো।
হিমি: কোথায়?
আমি: আমি যেখানে নিয়ে যাবো সেখানে।
হিমির হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলাম।

শান্তকে একটা মেসেজ করে বাইক স্টার্ট দিলাম।
আমি: উঠে বসো।
হিমি: কিন্তু আমরা কোথায় যাবো?
আমি: যেখানে গেলে তুমি আমাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারবে।
হিমি: মানে?
আমি: উঠে বসো, আব্বুর চোখে পড়লে ঝামেলা হয়ে যাবে। (হিমি চুপচাপ উঠে বসে আমার কাধে হাত রাখলো)
হিমি: এবার বলো আমরা কোথায় যাচ্ছি।
হিমির কথার জবাব না দিয়ে কাজি অফিসের দিকে এগিয়ে গেলাম।

রাত নয়টা, কাজি অফিসের সামনে এসে বাইক থামালাম। শান্ত, আরিয়ান আর সিফাত সবাইকে দেখে হিমি কিছুটা অবাক হলো, হিমি আরো একটু অবাক হলো যখন দেখলো এইটা কাজি অফিস।
হিমি: আরশান আমরা এখানে এসেছি কেন?
আমি: বিয়ে করবো তাই।
হিমি: মানে?
আমি: তুমি আমাকে বিশ্বাস কর না আমার উপর তুমি ভরসা করতে পার না, তোমার বিশ্বাস অর্জন করতে গেলে বিয়েটা করতে হবে এছাড়া আর কোনো উপায় নেই আমার কাছে।
হিমি: পাগল হয়ে গেছ? কি বলছ তুমি বুঝতে পারছ?
শান্ত: ভুল কি বলেছে ও? সেই প্রথম থেকে আরশান তোমাকে পাগলের মতো ভালোবেসে এসেছে আর তুমি ওকে বারবার কষ্ট দিয়ে এসেছ। আজ আরশানের খুব খারাপ সময় যাচ্ছে আর তুমি এই সময়টাতেও ওর পাশে নেই? পাশে থাকবে কি তুমি তো উল্টো ওকে যন্ত্রণা দিচ্ছ, তিলেতিলে শেষ করে দিচ্ছ ওকে।
সিফাত: ভালোবাসা মানে ভুল বুঝাবুঝি রাগারাগি করে দূরে সরে যাওয়া নয় হিমি, ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষের পাশে সবসময় থাকতে হয় সেটা সুখে হউক কিংবা দুঃখে।
আরিয়ান: তুমি তো আরশানকে বিশ্বাসই কর না, তবুও যে আরশান তোমাকে এখনো ভালোবাসে সেটাই তোমার সৌভাগ্য। আমি হলে এমন মেয়েকে দুটো থাপ্পড় দিয়ে দূরে সরিয়ে দিতাম যে কিনা আমার কথা বিশ্বাস করেনা সে...
আমি: আরিয়ান প্লিজ চুপ কর। আমি এখানে বিয়ে করতে এসেছি আর সেটা খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে কারণ আব্বু যেকোনো সময়...
হিমি: আমি বিয়ে করবো না আরশান। (হিমির কথা শুনে সবাই বেশ অবাক হয়েই ওর দিকে তাকালাম)
শান্ত: কেন তুমি ওকে ভালোবাস না?
হিমি: হ্যাঁ বাসি। কিন্তু তাই বলে এভাবে বিয়ে করবো? আমার পরিবার ওর পরিবার সবাই তো কষ্ট পাবে।
আমি: এভাবে বিয়ে করতে তুমি আমাকে বাধ্য করেছ হিমি। তুমি যদি আমাকে বিশ্বাস করে আমাকে সবকিছু প্রমাণ করার সুযোগ দিতে তাহলে আমাকে এতো রাতে কাজি অফিসে এসে বিয়ে করতে হতো না।
হিমি: আমি এভাবে বিয়ে করবো না, আমি বাসায় যাবো।
সিফাত: ধ্যাত এই মেয়ে তো তোকে ভালোই বাসে না। একবার তোর জন্য সুইসাইড করতে যাচ্ছে তো আবার বিয়ে করবে না বলে নাটক করছে। আসলে কি আরশান বেশি ভালোবাসলে এভাবেই মাথায় ছড়ে বসে।
আমি: প্লিজ চুপ করবি তোরা?
সিফাত: করলাম চুপ। কিন্তু তোদের পাঁচ মিনিট সময় দিলাম ভেবে সিদ্ধান্ত নে কি করবি তোরা। অনেক রাত হয়েছে একটু পর কাজি অফিস বন্ধ হয়ে যাবে। আর হিমি আমাদের ভুল বুঝনা, তোমাদের ভালোর জন্য আমরা এমন রাগ দেখাচ্ছি। প্রাণের ভয় আমাদেরও আছে, আরশানের বাবা আমাদের ছেড়ে দিবে না জানি তবুও এখানে এসেছি শুধুমাত্র তোমাদের ভালোবাসার কথা ভেবে। এবার তোমরা সিদ্ধান্ত নাও কি করবে। (ওরা সবাই একটু দূরে চলে গেলো। হিমির উপর খুব রাগ হচ্ছে বিশ্বাস করবে না আবার বিশ্বাস করাতে গেলেও বাঁধা। আমিতো বুঝতেই পারছি না এই মেয়ে আসলে চায়টা কি?)
আমি: তোমাকে পাঁচ মিনিট সময় দিলাম ভেবে সিদ্ধান্ত নাও কি করবে। মনে রেখো তোমার এই সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে আমরা সারাজীবন একসাথে থাকবো কিনা। আমাদের এই সম্পর্ক এতো সহজে কেউ মেনে নিবে না, একবার বিয়ে হয়ে গেলে ঠিকই মেনে নিবে। তুমি রাজি হলে আজ বিয়ে হবে আর রাজি নাহলে আজ বাসায় ফিরে রাইসার সাথে আমার বিয়ে হবে, এখন তোমার ইচ্ছা।
হিমি আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, চুপচাপ দূরে চলে আসলাম। জানি হিমির খুব কষ্ট হচ্ছে, এমন বিয়ে কে চায়? কিন্তু আমিই বা কি করবো? একের পর এক যা হচ্ছে হিমিকে হারানোর ভয় হচ্ছে খুব, তাছাড়া আব্বুকে বিশ্বাস নেই তাই বিয়েটা এভাবেই করে ফেলা ভালো।

বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর হিমিকে দেখছি, হিমি রাস্তায় পায়চারী করছে, হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে হিমসিম খাচ্ছে। হঠাৎ দেখলাম হিমি আমার দিকে এগিয়ে আসছে, হিমি কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা ভেবে আমার বুক ধড়পড় করছে, হিমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে নাতো?
হিমি: আরশান চলো।
আমি: কোকোথথায়?
হিমি: বিয়ে করতে, তোতলাচ্ছ কেন?
আমি: সত্যি?
হিমি: হুম। (দুচোখ বন্ধ করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম)
হিমি: কিন্তু একটা শর্ত আছে, বাসায় কাউকে এখন কিছু জানাতে পারবে না।
আমি: ঠিক আছে।

আমি সিগনেচার করে হিমির দিকে খাতা এগিয়ে দিলাম, হিমি কলম হাতে নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে, ওর দুচোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ে খাতা ভিজে যাচ্ছে। হিমির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি, হিমির সিগনেচার করতে হাত কাঁপছে, আচ্ছা আমি কোনো ভুল করছি নাতো?
শান্ত: হিমি? (শান্তর ডাকে হিমি আমার দিকে এক নজর তাকালো তারপর দ্রুত সিগনেচার করে দিলো)
সিফাত: শান্তি, বিয়েটা তো হয়ে গেছে এবার তোর আব্বু যা খুশি করুক।
আরিয়ান: আরশান অনেক রাত হয়েছে হিমিকে নিয়ে বাসায় যা। আর বিয়ের কথাটা এখনি বাসায় জানানোর প্রয়োজন নেই।
আমি: হুম।
সবাই হাসি ঠাট্টা করছে, হিমির দিকে তাকালাম চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো।

হিমি বাইক এর কাছে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে, ওর দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসলাম। হিমির কান্না দেখে নিজেকে খুব বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। আমারই বা কি করার ছিল?
হিমি: বাসায় চলো।
আমি: হিমি? (ডাক দিতেই হিমি আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁদতে শুরু করলো, কি করবো বুঝতেই পারছি না)
হিমি: খুব কষ্ট হচ্ছে আরশান, এভাবে বিয়ে করবো কখনো ভাবিনি। আম্মু আর ভাইয়ারা যখন জানবে খুব কষ্ট পাবে ওরা।
আমি: এভাবে বিয়ে কে চায়? আমার কিছু করার ছিল না হিমি। আমার উপর ভরসা রাখো আমি সবাইকে বুঝাবো, দেখবে সবাই খুশি মনে আমাদের বিয়েটা মেনে নিবে।
হিমি আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, দুহাতে আলতো করে ওর চোখের পানি মুছে দিলাম। হিমির ওড়না টেনে নিয়ে ওর মাথায় ঘোমটা দিয়ে দিলাম, এখন একদম বউ বউ লাগছে আমার মায়াবতীকে। আমি হিমিকে মুগ্ধ হয়ে দেখছি দেখে হিমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো, দুহাতে আলতো করে হিমির দুগালে ধরে ওর মুখটা উপরে তুললাম, হিমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে মুচকি হেসে ওর কপালে আমার ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিলাম...

চলবে😍

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com