Breaking News

আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ৬ || লেখিকা: সুলতানা তমা

এতো বড় প্যাকেটে ছোট একটা কাগজ আর একটা পায়েল দেখে বেশ অবাক হলাম, কাগজ খুলতেই চমকে উঠলাম। চিঠি তাও হিমিকে নিয়ে? কে পাঠালো এই চিঠি? তাড়াতাড়ি পড়তে শুরু করলাম।
"হিমিকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছিস তাই না? আচ্ছা একবারো হিমির অতীত জানার চেষ্টা করেছিস? গ্রামের মেয়ে বলে যে সহজসরল হবে এইটা ভাবা তোর জন্য বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। মনে রাখিস হিমি শুধু আমার, আর হ্যাঁ হিমি আমার ভয়ে তোর প্রপোজে কখনোই রাজি হবে না। যদি কখনো হয়েও যায় তাহলে হিমিকে ওপাড়ে পাঠিয়ে দিবো। হিমির পায়েল দিয়ে দিলাম এমন আরো অনেক স্মৃতি আছে ওর যা...
আব্বু: এতো মনোযোগ দিয়ে কি পড়ছ আরশান? কি আছে এতে? (আব্বুর প্রশ্ন শুনে চিঠিটা লুকিয়ে ফেললাম)
আব্বু: কিসের পার্সেল বলো।
আমি: কিছুনা।
আব্বু: কি লুকালে?
আমি: সবকিছু বলতে হবে? আমাদের পার্সোনাল কিছু থাকতে পারেনা?
চাচ্চু: আরশান তুই ভাইয়ার সাথে এভাবে কথা বলছিস কেন?
আমি: আমরা বড় হয়েছি আমাদেরও কিছু পার্সোনালিটি আছে আমাদের নিজস্ব স্বাধীনতা দেওয়া...
আব্বু: তুমি যে এতো বড় হয়ে গেছ আমি বুঝতেই পারিনি।
আব্বুর দিকে রাগি দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে রুমে চলে আসলাম।

শান্তকে ফোন করে বললাম হিমির ভাইয়াকে পাঠিয়ে দিতে। চিঠিটা হাতে নিয়ে রুমের মধ্যে পায়চারী করছি আর ভাবছি চিঠিটা কে পাঠাতে পারে? কোনো ঠিকানা নেই আবার হিমির পায়েলও সাথে দিয়ে দিলো, আচ্ছা হিমির কোনো শত্রু নেই তো? এতো সহজ সরল মেয়ের শত্রু আবার কে হবে? ধ্যাত প্রশ্ন গুলা আমার মাথার ভিতরে খিলবিল শুরু করেছে, এই চিঠির পিছনে যে কি রহস্য আছে সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
আপু: ভাই? (আপু এসেছে দেখে চিঠি আর পায়েলটা টেবিলে রেখে বিছানায় এসে বসলাম)
আপু: কিরে এতো চিন্তিত লাগছে মুখটা? তখন দেখলাম পার্সেল...
আমি: আপু চিঠিটা পড়। (আপু চুপচাপ চেয়ার টেনে বসে চিঠি পড়তে শুরু করলো। পায়েলটা আদৌ হিমির কিনা সেটা জানার জন্য হিমিকে দেখানো প্রয়োজন, কিন্তু হিমি যদি কোনো কারণে আমাকে ভুল বুঝে?)
আপু: এই চিঠি কে পাঠিয়েছে আর এসব কি লেখা?
আমি: জানিনা কে পাঠিয়েছে কোনো ঠিকানা তো দেওয়া নেই। আর কিসব যে লেখা আমার মাথা ভনভন করছে।
আপু: ভাই শুন এই চিঠির পিছনে কি রহস্য আছে আমি জানিনা তবে এইটুকু বলতে পারি এসব নিয়ে হিমিকে কোনো প্রশ্ন করা তোর ভুল হবে। এখনি অতীত জানতে চাইলে হিমি ভাববে তুই ওকে বিশ্বাস করিস না। হিমি তো এখন থেকে এই বাসাতেই থাকবে, পরে নাহয় সুযোগ বুঝে পায়েলটা দেখাস।
আমি: ঠিক আছে, কিন্তু তুমি জানলে কিভাবে হি...
আপু: সকালে শান্ত আমাকে ফোনে সব বলেছে।
আমি: ওহ!
আপু: তোর বন্ধু গুলো খুব ভালো।
আপুর কথায় মৃদু হাসলাম, সত্যি ওরা খুব ভালো। শুধু হিমির বিষয়ে না সবকিছুতে সবসময় ওদের পাশে পাওয়া যায়।

রাত সাড়ে বারোটা, ছাদে বসে আছি আর আনমনা হয়ে ভাবছি কি হবে আমার ভালোবাসার? আমি কি আদৌ সাকসেসফুল হবো? হিমি কি আমাকে ভালোবাসবে? হিমির পরিবার মেনে নিবে তো? আর আব্বু... হঠাৎ পাশে রাখা ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো, অচেনা নাম্বার রিসিভ করলাম।
আমি: হ্যালো।
তারিন: আমি তারিন, এতো রাতে জেগে আছ যে হিমির চিন্তায় ঘুম আসছে না বুঝি? (তারিন হাসছে আমিও মুচকি হাসলাম, সত্যিই তো হিমিকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে ঘুম আসছে না)
তারিন: আমাদের হিমি মেডামেরও ঘুম আসছে না জানিনা কেন, হয়তো তুমি ঘুম কেড়ে নিয়েছ।
আমি: হিমি তোমার পাশে?
তারিন: হ্যাঁ, কেন কথা বলতে ইচ্ছে করছে?
আমি: হুম। (তারিন হুট করে ফোনটা হিমির হাতে ধরিয়ে দিলো, হিমি নিশ্চুপ হয়ে আছে। হিমির নিঃশ্বাসের শব্দেই আমি ওকে ছিনতে পারছি)
আমি: হিমি?
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: কথা বলো প্লিজ! (হিমি নিশ্চুপ হয়ে আছে, এই মেয়েটা এতো লাজুক কেন?)
আমি: আমি কিন্তু এই রাতের বেলা শান্তদের বাসায় চলে আসবো।
হিমি: এই না।
আমি: এইতো এখন ভয় পেয়ে মুখে কথা ফুটেছে। আচ্ছা হিমি তুমি এতো লাজুক কেন আর অল্পতেই এতো ভয় পাও কেন?
হিমি: আমি রাখছি।
আমি: একদম না আমি কিন্তু চলে আসবো।
হিমি: আজ ভয় দেখাচ্ছেন দুদিন পর তো আমরা এই বাসা ছেড়ে চলে যাবো তখন কিভাবে ভয় দেখাবেন? (হিমির কথা শুনে হাসলাম, পাগলীটা তো জানেই না ওকে যে আমার কাছে আনার ব্যবস্থা করে ফেলেছি)
আমি: তোমার পিছু পিছু নতুন বাসায় চলে যাবো।
হিমি: আমিতো সেদিন আপনাকে বলেছি আমি আপনাকে পছন্দ করিনা তারপরও কেন...
আমি: আচ্ছা হিমি তোমার কি অন্য কারো সাথে রিলেশন আছে?
হিমি: না, কেন?
আমি: তাহলে প্রবলেম কোথায়?
হিমি: কোনো প্রবলেম নেই আমি আপনাকে পছন্দ করিনা ব্যস।
আমি: অপছন্দের মানুষকে বুঝি কেউ জড়িয়ে ধরার অধিকার দেয়?
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: যদি পছন্দ না করো তাহলে সেদিন তোমার কপালে চুমু দেওয়াতে রাগ করনি কেন?
হিমি: জানিনা।
হিমি ফোন কেটে দিলো, ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছি সত্যি ও একটা পাগলী।

"বাসা ভাড়া কত দিতে হবে"
সকালবেলা ঘুম ঘুম চোখে নিচে নেমে আসছিলাম হঠাৎ কারো মুখে এই কথা শুনে সিঁড়িতেই থমকে দাঁড়ালাম। আম্মু, আব্বু, রোদেলা আর একজন লোক ড্রয়িংরুমে বসা, তাহলে কি ইনিই হিমির ভাইয়া?
রোদেলা: না না ভাইয়া কোনো টাকা লাগবে না, হিমি তো আমার বান্ধবী ওকে তো আমি এইটুকু হেল্প করতেই পারি।
ভাইয়া: হ্যাঁ তারিন বলছিল ওদের বান্ধবী তুমি, এজন্যই আমি এখানে এসেছি। আসলে আমিতো রাঙামাটি থাকি তাই আমার পরিবারকে কোনো একটা পারিবারিক...
আপু: ভাইয়া আপনি কোনো চিন্তা করবেন না নিশ্চিন্তে আমাদের বাসায় সবাইকে রেখে যেতে পারেন, রোদেলা যেমন আমার বোন হিমিও তো আমার বোন আমরা সবাই ওদের দেখাশোনা করবো। (আপু নাশতা এনে ভাইয়ার সামনে রাখতে রাখতে কথা গুলো বললো, বাব্বাহ্ সবাই যেভাবে ভাইয়াকে বুঝাচ্ছে ভাইয়ার তো না এসে উপায় নেই)
ভাইয়া: কিন্তু টাকার ব্যাপারটা?
আব্বু: তোমাদের পরিবারে সদস্য কতজন?
ভাইয়া: আমার মা, স্ত্রী, বোন হিমি, মেয়ে আনিলা আর ছোট ভাই দেশের বাহিরে আছে।
আব্বু: বাসা ভাড়া দেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না কিন্তু রোদেলা যখন ওর বন্ধুকে কাছে আনতে চাইছে তাহলে তো দিতেই হবে, ভাড়া লাগবে না। তবুও যদি তোমার মন না মানে মাস শেষে নিজের ইচ্ছামতো দিয়ে দিও। (ভাইয়া নিশ্চুপ হয়ে কি যেন ভাবছেন, আল্লাহ্‌ জানেন ভাইয়া রাজি হবেন কিনা)
ভাইয়া: তাহলে আমরা আগামীকাল চলে আসতে পারি?
আব্বু: হ্যাঁ তোমাদের ইচ্ছা।
ভাইয়া: আজ তাহলে আসি।
আম্মু: তুমি তো কিছু খাওনি বাবা, কিছু একটা মুখে দিয়ে যাও।
বাব্বাহ্ সবাই যে যত্নআত্তি করছে ভবিষ্যৎ এ তো হিমি আর আমার বিয়েতে কোনো বাধাই থাকবে না। ভাইয়া একটুখানি শরবত খেয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। আমি চুপচাপ এসে আম্মুর কাঁধে মাথা রেখে বসলাম।
আম্মু: খুশি?
আমি: হুম অনেক, লাভ ইউ আম্মু।
আব্বু: আরশান আজ এতো খুশি কেন?
আম্মু: সে তুমি বুঝবে না, এইটা আমাদের মা ছেলের ব্যাপার। (আম্মুর কথা শুনে আব্বু মৃদু হেসে উঠে চলে গেলেন)
রোদেলা: ভাইয়া আমি যে হেল্প করলাম আমাকে কি গিফট দিবে?
আমি: আম্মু ওর জন্য একটা ছেলে খুঁজে এনে দাও তো, এটাই বেষ্ট গিফট হবে।
রোদেলা: চাঁচি দেখেছ কি বলে?
আম্মু: এই ফাজিলের সাথে কথা বলিস কেন?
আম্মু হাসতে হাসতে উঠে চলে গেলেন, আমিও রোদেলার মাথায় আস্তে একটা থাপ্পড় দিয়ে নাশতার টেবিলে এসে বসলাম।

নাশতা সেড়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, আজ ঘুম থেকে উঠতে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। হিমি হয়তো কলেজে চলে এসেছে তাই বাইক স্পিডে চালাচ্ছি।
শান্ত: আরশান? (বাইক থেকে নামতেই শান্ত ডাক দিলো, আজ ওদের ডাকে সাড়া দিবো না। আগে হিমিকে একনজর দেখে আসি)
আরিয়ান: এই আরশান কোথায় যাচ্ছিস?
আমি: হিমির সাথে দেখা করতে।
শান্ত: হিমি আজ আসেনি। (শান্তর কথা শুনে থমকে দাঁড়ালাম, হিমি এইটা কি করলো?)
অধরা: আহারে আমাদের আরশানের মুখটা একদম চুপসে গেছে। (চুপচাপ এসে ওদের পাশে বসলাম)
শান্ত: হিমি আজ আসবে না।
আমি: কতো তাড়াহুড়ো করে বাইক স্পিডে চালিয়ে আসলাম ওকে দেখবো বলে কিন্তু...
অধরা: হিহিহি...
আমি: তোর পেত্নী মার্কা হাসি বন্ধ কর নাহলে...
সিফাত: আরে রাগ করিস না হিমি তো এখন থেকে তোর বাসাতেই থাকবে রোজ দেখতে পারবি।
আমি: হুম।
সিফাত: আরশান তোর এক্সিডেন্ট এর কথা ভুলে গেছিস? (সিফাতের কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম। বাইক স্পিডে চালানোটা আমার বদ অভ্যাস গুলোর মধ্যে একটি। দুবছর আগে এক্সিডেন্ট করে প্রায় এক মাস হসপিটালে ছিলাম, আম্মু তখন কাঁদতে কাঁদতে বাইক চালাতে নিষেধ করেছিলেন)
সিফাত: আন্টি কতো কান্না করেন তোর এই বদ অভ্যাস এর জন্য আর তুই কিনা হিমির জন্য আজ আবার বাইক স্পিডে চালিয়েছিস।
আমি: কিছু হবে না।
শান্ত: সেদিনও বলেছিলি কিছু হবে না তারপর মরতে বসেছিলি।
আরিয়ান: আন্টির কথা ভেবে যা করার করিস।
আমি: হুম।

সবার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম হঠাৎ চিঠির কথা মনে পড়লো, ওদের তো বলা উচিত।
আমি: জানিস কাল আমার নামে একটা পার্সেল এসেছিল। (আমার কথা শুনে সবাই হাসি ঠাট্টা রেখে আমার দিকে তাকালো)
শান্ত: তো?
আমি: একটা চিঠি আর একটা পায়েল ছিল।
অধরা: পায়েল?
আমি: চিঠিতে হিমিকে নিয়ে কিসব লেখা ছিল আর পায়েলটা নাকি হিমির।
সিফাত: কি লেখা ছিল? (সবকিছু ওদের বললাম, আমার মতো ওরা সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো)
আরিয়ান: সব তো শুনলাম আমার মনে হয় এইটা হিমির এক্স বয়ফ্রেন্ড এর কাজ।
শান্ত: এমনো তো হতে পারে হিমিকে কোনো ছেলে লাইক করে আর হিমি পাত্তা দেয়নি যার ফলে ছেলেটা তোকে হুমকি দিচ্ছে।
সিফাত: সবকিছুর উত্তর হিমি দিতে পারবে।
অধরা: পাগল হয়েছিস? এখনি হিমির অতীত ঘাটলে হিমি আরশানের প্রপোজে আর রাজি হবে না কারণ ও ভাববে আরশান ওকে বিশ্বাস করেনা।
শান্ত: ঠিক বলেছিস।
আমি: চিঠির বিষয়টা রহস্যের মতো লাগছে তবুও আমি হিমিকে কোনো প্রশ্ন করবো না, আমি হিমিকে হারাতে চাই না। একটা মানুষের জীবনে অতীত থাকতেই পারে, হিমি যেদিন নিজ থেকে আমাকে ওর অতীত বলবে সেদিন শুনবো এর আগে কোনো প্রশ্ন করবো না। আর হিমির অতীতে যা কিছুই থাকুক সব মেনে নিয়েই আমি ওকে ভালবাসবো।
অধরা: এইতো সত্যিকারের প্রেমিকের মতো কথা, হিমি তোকে কখনো ফিরাবে না দেখিস।
শান্ত: অলরেডি একবার ফিরিয়ে দিয়েছে তো।
সিফাত: তাতে কি হয়েছে আরশান আবার প্রপোজ করবে, কতবার হিমি ফিরিয়ে দিবে?
আরিয়ান: হিমির চিন্তা এবার বাদ দাও ক্লাসে যেতে হবে।
আমি: তোরা যা আমি যাবো না।
অধরা: পড়ালেখায় ফাঁকি দিতে নেই।
আমি: আমার ভালো লাগছে না। (সিফাতের পকেট থেকে জোড় করে সিগারেটের প্যাকেট বের করে আনলাম)
সিফাত: আরশান এখানে?
আমি: বললাম না ভালো লাগছে না। (সিগারেট খুব একটা খাই না কিন্তু যখন প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা করে তখন খাই। চিঠিটা খুব ভাবাচ্ছে আমায়, কেন বললো ও হিমি আমার প্রপোজে রাজি হলে হিমিকে মেরে ফেলবে? আমি নিজের অজান্তে হিমিকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি নাতো? উফফ হিমির মায়াভরা মুখটা এক নজর দেখতে পারলে সব দুশ্চিন্তা মাথা থেকে চলে যেতো)
আরিয়ান: আরশান?
আমি: হুম।
চোখ বন্ধ করে এসব ভাবছিলাম আর সিগারেট টানছিলাম, আরিয়ানের ডাকে চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। হিমিকে এখনি আসতে হলো? এবার কি করবো? হিমি আমার হাতে থাকা সিগারেটের দিকে তাকিয়ে আছে আর রাগে ফুঁসছে, তাড়াতাড়ি সিগারেট ফেলে দিলাম। শান্তর দিকে রাগি চোখে তাকালাম ও কানে ধরে ইশারায় বলছে কিছু জানেনা।
আমি: হিমি আমিতো সিগারেট খাই না। (হিমি হনহন করে হেটে চলে যাচ্ছে)
তারিন: মেয়েটা ওর ভাইয়াকে কতকিছু বলে বুঝিয়ে কলেজে এসেছে তোমার সাথে দেখা করবে বলে আর তুমি... ধ্যাত তোমার দ্বারা আর যাই হউক প্রেম হবেনা।
আমি: সব দোষ শান্তর, তোকে আমি...
শান্ত: তারিন তো সকালে বলেছিল ওরা আজ আসবে না। কিন্তু পরে যে হিমি তোর সাথে দেখা করার জন্য আসবে সেটা তো আমি জানতাম না।
অধরা: এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন হিমির কাছে যা।
আমি: হুম।

দৌড়ে এসে হিমির সামনে দাঁড়ালাম, হিমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। হিমি হয়তো এসব বদ অভ্যাস পছন্দ করে না তাইতো মায়াবী মুখটা এমন মলিন হয়ে গেছে। এখন কি করবো?
আমি: হিমি আ...
হিমি: আমি এসব পছন্দ করিনা।
আমি: ঠিক আছে ছেড়ে দিলাম, সিগারেট ড্রিংক ঝামেলা সবকিছু আজ থেকে ছেড়ে দিলাম। (হিমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, মৃদু হাসলাম)
আমি: তোমার জন্য আমি সব করতে পারি বুঝেছ?
হিমি: আশেপাশে কোথাও নদী আছে? আমাকে একটু নদীর পাড়ে নিয়ে যাবেন?
আমি: হ্যাঁ চলো, কিন্তু তোমাকে এমন আনমনা লাগছে কেন?
হিমি: নাতো।

হিমি আর আমি নদীর পাড়ে পাশাপাশি হাটছি, হিমি মাথা নিচু করে আনমনা হয়ে হাটছে আর আমি ওকে আড়চোখে দেখছি। হিমির চোখেমুখে আজ বিষণ্ণতার চাপ, বুঝতে পারছি না হিমির কি হয়েছে। আর হঠাৎ করে হিমি আমার সাথে এতো দূরে আসলো কেন?
আমি: হিমি একটা প্রশ্ন করবো?
হিমি: হুম।
আমি: তুমি কি আমাকে কিছু বলবে? (হিমি দাঁড়িয়ে পড়লো, আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে)
আমি: না মানে হঠাৎ করে আমার সাথে এখানে এসেছ তো তা...
হিমি: হ্যাঁ বলবো।
আমি: বলো।
হিমি: আপনি আমার সাথে আর যোগাযোগ না করলে খুশি হবো। (হিমির মুখে এই কথা শুনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে পড়লাম, হিমির দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছি)
হিমি: আমরা আগামীকাল নতুন বাসায় উঠছি তাই কিছুদিন ভাইয়া আমাকে কলেজে নিয়ে আসবে কারণ ওখানে তো আর তারিন থাকবে না। ভাইয়া কিছু সন্দেহ করুক বা বুঝে যাক তা আমি চাই না, আমি আমার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে চাই। আমার স্বপ্ন গুলো ভেঙ্গে দিবেন না প্লিজ! (হিমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, তবে কি হিমি জানেনা ওরা যে আমাদের বাসায় উঠছে? তারিন হয়তো বলেনি সারপ্রাইজ দিবে ভেবে। শুধু কি স্বপ্ন পূরণের জন্য হিমি আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে? নাকি চিঠির লোকটার ভয়ে?)
হিমি: কি দেখছেন এভাবে? (হিমির দিকে তাকিয়ে আনমনা হয়ে এসব ভাবছিলাম, হিমির কথায় বাস্তবে ফিরে আসলাম)
আমি: শুধু কি স্বপ্ন পূরণের জন্য আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছ? নাকি কোনো একজনের ভয়ে? (আমার প্রশ্ন শুনে হিমি চমকে উঠে আমার দিকে তাকালো, হিমির দুচোখে ভয়)
হিমি: মামামাননে?
আমি: কি লুকাচ্ছ আমার থেকে? (দুহাতে হিমির গালে আলতো করে ধরে ওর মুখটা উপড়ে তুললাম, হিমি ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: তুমি কাকে ভয় পাচ্ছ আমি জানিনা তবে এইটুকু বিশ্বাস আমার উপর রাখতে পারো তোমার বিপদের সময় কখনো তোমার হাত ছেড়ে দিবো না। হিমি ভালোবাসা মানে যে শুধু সুখের সময় পাশে থাকবো এইটা নয়...
হিমি: আর কতবার বুঝাব আপনাকে? কিভাবে বুঝালে আপনি আমার সমস্যাটা বুঝবেন? কিভাবে বললে আপনি বিশ্বাস করবেন যে আমি আপনাকে ভালোবাসি না আপনাকে আমার সহ্য হয় না?
আমি: এসব তোমার মনের কথা নয় হিমি, তুমি ভয়ে এসব বলছ। কাকে ভয় পাচ্ছ তুমি কে তোমাকে ভয় দেখাচ্ছে?
হিমি: আপনি আসলেই একটা খারাপ মানুষ।
হিমি ঝটকা দিয়ে আমার হাত সরিয়ে দিলো, ওর ভয়ার্ত দুচোখে পানি টলমল করছে। সত্যি কি হিমি আমাকে ভালোবাসে না? নাকি চিঠির লোকটার ভয়ে হিমি এমন করছে? হিমির ভয়ার্ত চোখ দুটু দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। কিন্তু কে সেই লোক...

চলবে😍

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com