তবুও ভালোবাসি | পর্ব -২৭
আদিল আমার কপালে আশা চুলগুলো কানের এক পাশে যত্ন করে গুঁজে দিলো, আদিলের দিকে তাকিয়ে আছি ও মুচকি হাসছে, আশ্চর্য এমন পরিস্থিতিতে ও হাসছে কিভাবে?
আমি: হাসছ যে?
আদিল: তুমি আমার থেকে দূরে যেতে চাও কিন্তু সফল হতে পারোনা এইটা ভেবে।
আমি: (নিশ্চুপ)
আদিল: আনিশা তুমি কি বুঝতে পারছ না আমরা একে অপরকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না? কেন এমন করছ? ফোন অফ করে রেখেছ এই দুদিন কোনো যোগাযোগ করোনি, কেন আনিশা?
আমি: তুমি কি আব্বুর কথা ভুলে গেছ? আব্বু তোমাকে কথা দিয়েছেন আমি তোমাকে বিরক্ত করবো না।
আদিল: তুমি আব্বুর কথা শুনে... (আদিল রাগে কটমট করতে করতে বিছানায় গিয়ে বসলো)
আদিল: তুমি তোমার আব্বুর কথা শুনে আমার সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছ, তাহলে আমি কেন আম্মুর কথা অমান্য করে তোমার কাছে বারবার ছুটে আসছি?
আমি: আমিতো তোমাকে বলিনি ছুটে আসতে।
আদিল: কি? (হনহন করে হেটে আমার কাছে আসলো তারপর দুহাতে আমার দুগাল জোড়ে চেপে ধরলো, ব্যথায় চটপট করে ওকে ছাড়াতে চাইলাম কিন্তু কিছুতেই ছাড়ছে না)
আদিল: আমি তোকে ভালোবাসি তাই বারবার তোর কাছে ছুটে আসি বুঝিস না তুই? (আদিল আমাকে ধাক্কা মেরে সোফায় ফেলে দিলো, আমি মাথা নিচু করে বসে আছি)
আদিল: তোকে তো আমার খুন করে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। এই তুই জানিস এই দুদিন আমি তোর নাম্বারে কতবার ডায়াল করেছি? তোর বাসার ল্যান্ড লাইনে কয়বার ফোন করেছি তোর কোনো ধারণা আছে? যতোবার ফোন করেছি তোর ফুফু বারবার কথা শুনিয়েছে তারপরও বেহায়া হয়ে বারবার ফোন করেছি শুধু তোর কন্ঠটা একবার শুনার জন্য আর তুই কিনা... (আদিল মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে আছে আমি চুপচাপ বসে ওকে দেখছি, অনেক রেগে গেছে এখন আমার চুপ হয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই। ডিভোর্স তো হয়েই যাবে এই শেষ সময়ে ঝগড়া করতে চাই না)
আদিল: আমার সাথে যাবে? (আদিল আমার কাছে এসে ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে আমার হাত দুটু ধরে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, আদিল আমার উত্তরের অপেক্ষা করছে কিন্তু ও কোথায় নিয়ে যাবে আমাকে?)
আদিল: কি হলো বলোনা যাবে আমার সাথে?
আমি: কোথায়?
আদিল: অনেক দূরে যেখানে আমাদের ভালোবাসায় কেউ বাধা দিবে না।
আমি: উঁহু যাবো না।
আদিল: রাগ দেখিয়েছি বলে অভিমান করেছ? মাথা ঠিক ছিলনা।
আমি: অভিমান নয় আমি যাবো না।
আদিল: চলো প্লিজ পালিয়ে যাই অনেক দূরে, যেখানে আম্মু আর আমাদের ভালোবাসায় বাঁধা দিতে পারবে না।
আমি: কেন পালিয়ে যাবো আমরা কি প্রেম করেছি? সবার অনুমতিতে আল্লাহর কালেমা পড়ে বিয়ে হয়েছে আমাদের, কাপুরুষের মতো পালিয়ে যেতে চাচ্ছ কেন? বিয়ে নামক বন্ধনের যদি সত্যি কোনো শক্তি থেকে থাকে তাহলে আমরা ঠিক এক হতে পারবো।
আদিল: পারবো না আনিশা, আম্মু মেনে নিবে না।
আমি: (নিশ্চুপ)
ফারজানা: আনিশা কথা শেষ হলে বেরিয়ে আয়, তানিয়ার বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়ে যাচ্ছে।
আমি: আসছি।
আদিলের দিকে একবার তাকিয়ে বেরিয়ে আসার জন্য পা বাড়ালাম।
দরজা খুলতে যাবো তখনি আদিল আমার হাত ধরে ফেললো, ওর হাতের মুঠো থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে আনলাম। আদিল বিস্ময়ভরা চোখে তাকালো আমার দিকে।
আদিল: কি হলো?
আমি: তোমার আম্মু যেহেতু রাজি না তখন আমার মনে হয় আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়া উচিত।
আদিল: কি বলছ এসব?
আমি: হুম, যেখানে বড়দের সায় নেই সেখানে আমরা সুখী হতে পারবো না। ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিও সাইন করে দিবো।
আদিলকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে আসলাম।
তানিয়ার পিছনে দাঁড়িয়ে আছি পাশে ফারজানা, ওদের রেজিস্ট্রি হচ্ছে। চোখের সামনে আদিল আর আমার বিয়ের স্মৃতি গুলো ভেসে উঠছে। বিয়ে তো আল্লাহর হুকুম ছাড়া হয় না তাহলে আমরা এক হতে পারছি না কেন?
ফারজানা: কিরে ভাইয়াকে বলেছিস? (ফারজানা কানের কাছে ফিসফিস করাতে ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো)
আমি: কি?
ফারজানা: তোর প্রেগনেন্সির কথা ভাইয়াকে বলেছিস?
আমি: না।
ফারজানা: কেন? আনিশা একবার বলে দেখ বাচ্চার জন্য হলেও ভাইয়া তোর কাছে ফিরে আসবে।
আমি: আদিল তো আমাকে ছেড়ে যায়নি ওর মা মেনে নিচ্ছেন না।
ফারজানা: বাচ্চার কথা জানলে সবাই মেনে নিবে।
আমি: যে মহিলা জিজ্ঞেস করে বাচ্চাটা কার সে মেনে নিবে? হাসালি!
ফারজানা: তাহলে দুজন দূরে কোথাও পালিয়ে যা।
আমি: কি বলছিস? (হঠাৎ হাতে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পাশে তাকালাম, আদিল ওর হাতের মুঠোয় আমার হাত নিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। ওর হাতের মুঠো থেকে হাত ছাড়িয়ে আনতে চাইলাম কিন্তু ও শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে)
ফারজানা: ভাইয়া ছেড়ো না এভাবেই ধরে রেখো। (ফারজানা হাসছে দেখে রাগি চোখে তাকালাম ওর দিকে)
আদিল: ছাড়ার জন্য ধরেছি নাকি? ঠিক এভাবেই তো রেজিস্ট্রি খাতায় সাইন করে কালেমা পড়ে ওকে আমার করে নিয়েছিলাম। মৃত্যুর আগে এই হাত ছাড়ছি না।
আমি: কিন্তু তোমার আম্মু ছাড়িয়ে দিবে।
আদিল: হাত ছাড়াতে চাইছ কেন সবাই তো ভাববে আমার উপর অভিমান করেছ।
আমি: আদিল?
আদিল: বললাম তো চলো পালিয়ে যাই, কথা দিচ্ছি তোমাকে কখনো কষ্ট পেতে দিবো না। (আদিলের দিকে রাগি চোখে তাকালাম)
আমি: আদিল প্লিজ সবার সামনে এমন করো না।
আদিল: ঠিক আছে চলো।
আমি: কোথায়?
আদিল আমার হাত ধরে টেনে বাগানের দিকে নিয়ে আসলো।
আদিল: এবার বলো।
আমি: আদিল আমি তানিয়ার বিয়েতে এসেছি তোমার সাথে...
আদিল: তানিয়া ফারজানা ওরাও চায় আমাদের মিল হউক কাজেই তানিয়া রাগ করবে না। আনিশা অনেক হয়েছে আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না এবার সবকিছুর সমাধান প্রয়োজন। আর আম্মু কখনো তোমাকে মেনে নিবে না একটাই সমাধান আছে চলো পালিয়ে যাই।
আমি: প্রবলেম তোমার আম্মুর আমার পরিবারে নয় তাহলে আমি কেন আমার পরিবার ছেড়ে তোমার হাত ধরে পালিয়ে যাবো? আদিল আমি আব্বুকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।
আদিল: আমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে?
আমি: (নিশ্চুপ)
আদিল: কি হল বলছ না কেন?
আমি: হাত ছাড়ো লাগছে।
আদিল: আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে, কথা দিচ্ছি তোমার থেকে অনেক দূরে চলে যাবো।
আমি: পারবো না থাকতে তোমাকে ছাড়া কিন্তু আব্বুকে একা রেখে তোমার সাথে পালিয়েও যেতে পারবো না।
আদিল: তাহলে তুমি কি করতে চাও?
আমি: আমি সবাইকে নিয়ে সংসার সাজাতে চাই।
আদিল: আনিশা তুমি বুঝতে পারছ না কেন এইটা কখনো সম্ভব নয় আম্মু তোমাকে মেনে নিবে না।
আমি: তাহলে আমাকে আর বিরক্ত করো না। (আদিলের হাত ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে দিলাম, ও আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে)
আদিল: আনিশা?
আদিলের ডাকে সাড়া না দিয়ে হনহন করে হেটে ওর সামনে থেকে চলে আসলাম, নিজের মা'কে বুঝাতে পারে না আবার ভালোবাসি বলতে এসেছে।
ফারজানা: আমি বুঝতে পারছি না তুই এই ঝড় বৃষ্টির রাতে একা একা যাবি কিভাবে। (গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি আর ভাবছি আজ বোধহয় আব্বু খুব রাগ করবেন)
ফারজানা: কিরে কথা বলছিস না কেন?
আমি: কি বলবো? সন্ধ্যা যে হয়ে যাবে আমিতো ভাবতেই পারিনি আর এতো ঝড় বৃষ্টি শুরু হবে ভাবিনি।
ফারজানা: সব দোষ আমার।
আমি: নিজেকে দোষ দিচ্ছিস কেন?
ফারজানা: তখন তো তুই গাড়ি আনতে চেয়েছিলি আমিই তো বারণ করলাম, এদিকে তানিয়াকে বিদায় দিতে সন্ধ্যা হয়ে গেল আর এখন এই ঝড় বৃষ্টি।
আমি: চিন্তা করিস না তুই বাসায় যা আমি ঠিক চলে যাবো।
ফারজানা: হ্যাঁ তোর কিছু হউক আর তোর আব্বু আমার বারোটা বাজাক, আমিই তো তোকে গিয়ে নিয়ে এসেছিলাম।
আদিল: আমি থাকতে যে তোমরা কেন এতো টেনশন করছ। (আদিলকে দেখে চমকে উঠলাম, ও এখনো বাসায় যায়নি? তখন রাগ দেখানোর পর তো আর আমার সামনে আসেনি কোথায় ছিল?)
ফারজানা: আমি বেঁচে গেছি।
আদিল: তুমি যাও আমি আনিশাকে বাসায় পৌঁছে দিব।
ফারজানা: ঠিক আছে।
আমি: ফারজানা আমি ওর সাথে যাচ্ছি না।
ফারজানা: প্লিজ আমার জন্য আজ সব অভিমান ভুলে যা।
আমি: ফারজানা...
ফারজানা: প্লিজ প্লিজ! আমাকেও তো বাসায় ফিরতে হবে।
আমি: তোর কি এখান থেকে তো পাঁচ মিনিটের রাস্তা।
ফারজানা: প্রিয় মানুষ সাথে থাকলে অনেক দূরের পথও কাছের মনে হয় বুঝেছিস? ভাইয়া আসছি।
আদিল: ঠিক আছে।
আমি: ফারজানা শুন...
ফারজানা: ভালো থাকিস সব অভিমান ভুলে ভাইয়াকে আপন করে নিস, মানুষটা সত্যি তোকে অনেক বেশি ভালোবাসে। (ফারজানা আমাকে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বলে হাসিমুখে চলে গেল। আমি আদিলের দিকে তাকিয়ে আছি সত্যিই ও আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে?)
আদিল: আনিশা গাড়িতে উঠো। (আদিলের ধাক্কায় আমার ঘোর কাটলো)
আমি: হ্যাঁ উঠছি।
আদিল বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে হয়তো কিছু বলতে চায় কিন্তু আমি ওকে পাত্তা না দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। কি কথা বলবো আদিলের সাথে? সেই তো বারবার ভালোবাসি শব্দটা বলবে। যেখানে ওর আম্মু আমাকে মেনে নিচ্ছেন না সেখানে ভালোবাসার মূল্য কি? কোন মেয়ে চায় শাশুড়ির অমতে সংসার করতে? প্রত্যেক মেয়ে তো চায় সবাইকে নিয়ে ছোট একটা সংসার সাজাতে, কিন্তু আমার ভাগ্যে যে সেটা নেই হয়তো সব মেয়ের ভাগ্যে সেটা থাকেও না।
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল ঘুম ঘুম চোখে চারপাশে চোখ বুলালাম, আমি কোথায় বুঝতে পারছি না। গাড়িতে বেশ ঠান্ডা লাগছিল চোখ বুজে আসছিল তারপর... আর তো কিছু মনে পড়ছে না।
আদিল: ভয় পেয়ো না কেউ তোমাকে কিডন্যাপ করেনি। (আদিল চায়ের কাফে চুমুক দিতে দিতে রুমে এসে ঢুকলো, আমিতো এখনো বুঝতে পারছি না আমি কোথায়)
আদিল: গাড়িতে আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলে তারপর এখানে নিয়ে এসেছি।
আমি: কিন্তু আমার তো বাসায়...
আদিল: এমন রোমান্টিক ওয়েদারে তোমাকে বাসায় দিয়ে ভদ্র ছেলের মতো আমিও বাসায় ফিরে যাবো ভাবলে কিভাবে? অনেক তো অভিমান দেখিয়েছ তাই ভাবলাম আজ রাতটা নাহয় আমাদের দুজনের হউক।
আমি: মানে?
আদিল: উফফ তুমি কি পিচ্ছি মেয়ে যে সব বুঝিয়ে দিতে হবে? বুঝনা ভালোবাসি যে?
আমি: কয়টা বাজে?
আদিল: এগারোটা।
আমি: কি?
আদিল: এতো অবাক হচ্ছ কেন? মনে হচ্ছে তোমার জন্য ঘড়ির কাটা আটকে না থেকে বিরাট বড় অন্যায় করে ফেলেছে।
আমি: আদিল তুমি নিজেও বুঝতে পারছ আব্বু টেনশন করছেন এসব কিভাবে বলতে পারছ?
আদিল: আমার শশুড় মশাইকে টেনশনে রাখবো এতোটা খারাপ ছেলে আমি নই। ফারজানা তোমার আব্বুকে ফোন করে বলেছে তুমি আজ বিয়ে বাড়িতে থাকছ। (যাক বাবা বাঁচা গেল আব্বু অন্তত টেনশন করে নিজের শরীর খারাপ করবে না। কিন্তু আদিল আমাকে না বলে কোথায় নিয়ে আসল?)
আদিল: তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে, তানিয়ার বিয়ে উপলক্ষে সেজেছ কিন্তু আমার জন্য তো কখনো সাজনি? (আদিল এসে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো, ওর কথার কোনো জবাব না দিয়ে চুপচাপ বসে আছি)
আদিল: আমাকে এতো কাছে পেয়েও অভিমান করে থাকবে? (আদিল আমার একটা হাত টেনে নিয়ে আলতো করে চুমু খেলো। আমার হাতের আঙ্গুলের ভাজেভাজে ওর আঙ্গুল গুলো ঢুকাচ্ছে, আদিলের এই পাগলামি গুলো আজ বড্ড বেশি ভালো লাগছে)
আদিল: মহারাণী নাকি অভিমান করে আছে? আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে তো ঠিকই। (আদিলের কথা শুনে এবার ফিক করে হেসে দিলাম, সত্যি ওর মতো পাগলের উপর অভিমান করে থাকা অসম্ভব)
আদিল: এভাবে সবসময় হাসতে পারো না? আমিতো তোমাকে সবসময় হাসিখুশি দেখতে চাই।
আমি: কি করে হাসবো তোমার আম্মু কি সে পরিস্থিতি রেখেছেন? (আদিল কিছু বলতে যাবে তখনি দরজায় টোকা পড়লো, আদিল উঠে দরজা খুলতে চলে গেল)
আদিল: ভিতরে আয়।
প্রান্ত: না আর আসছি না, খাবার গুলো নে। (প্রান্তকে দেখে বেশ অবাক হলাম ও এখানে...)
আদিল: বসের জন্য তো দেখছি অনেক দরদ।
প্রান্ত: বস তো অফিসে বাসায় তো তোর বউ আর আমার ভাবি, আসছি।
আদিল: ঠিক আছে।
প্রান্ত চলে যেতেই আদিল খাবার গুলো এনে টেবিলে রাখলো।
আদিল: আনিশা খেয়ে নাও।
আমি: প্রান্ত এখানে...
আদিল: আপনি প্রান্তর বাসাতেই আছেন।
আমি: ওহ!
আদিল: খেয়ে নাও অনেক রাত হয়েছে।
কিছু বলতে যাবো তখনি আদিলের ফোন বেজে উঠলো, আদিল ফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে যাবার জন্য পা বাড়ালো। আবার পিছন ফিরে তাকিয়ে আমাকে খাওয়ার জন্য ইশারা করলো। কে ফোন দিল যে আমার থেকে দূরে গিয়ে কথা বলতে হচ্ছে? হউক যে খুশি আগে খেয়ে নেই বড্ড খিদে লেগেছে।
খাওয়া শেষ করে বিছানায় বসে পা নাচাচ্ছি আর আদিলের জন্য অপেক্ষা করছি। আদিল এখনো কথা বলে যাচ্ছে কিন্তু এতক্ষণ ধরে কার সাথে কথা বলছে? বারান্দায় যাবো কি যাবো না ভাবতে ভাবতে এক পা দু পা করে হেটে চলেই আসলাম।
আদিল: আম্মু তোমাকে আর কতবার বুঝাব আমি আনিশাকে ডিভোর্স দিতে পারবো না। ডিভোর্স পেপার বাসায় এনেছ যখন তুমি ডিভোর্স পেপার নিয়েই থাকো আমি আর বাসায় ফিরে যাবো না। (ডিভোর্স পেপার? মা শেষ পর্যন্ত ডিভোর্স এর ব্যবস্থা করেই ফেললেন? ডিভোর্স সত্যি হয়ে যাবে নাতো? মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে, দেয়ালে হেলান দিলাম তাড়াতাড়ি)
আদিল: আনিশা... (আদিল ফোন কেটে দিয়ে আমাকে ধরলো)
আদিল: কি হয়েছে তোমার? ডিভোর্স পেপারের কথা শুনেছ? আরে পাগলী আম্মু এমন করছে বলে আমি সাইন করবো নাকি? (আদিলের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম। রাগের মাথায় অনেক বার বলেছি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিবো কিন্তু এইটা মন থেকে কখনো বলিনি, অনেক কষ্ট হচ্ছে এখন)
আদিল: আনিশা কি হচ্ছে বাচ্চাদের মতো কাঁদছ কেন? আমরা তো দুজন দুজনকে ভালোবাসি আমাদের ডিভোর্স কি কখনো সম্ভব?
আমি: আদিল আমি তোমাকে ভালোবাসি আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করবো না।
আদিল: সাইন করতে কে বলেছে তোমাকে? আমিতো আর ফিরে যাবো না ওই বাসায় আমি তোমার কাছে চলে এসেছি। আমাদের এক হওয়ার সব প্ল্যান নীরব আর আমি করে ফেলেছি, প্রান্তও আমাদের হেল্প করবে। মিতুকে নিয়ে চিন্তা করো না ওদের বিয়ের প্ল্যানও আমরা করেছি।
আমি: (নিশ্চুপ)
আদিল: সব তো বললাম এবার কান্না থামাও।
আমি: (নিশ্চুপ)
আদিল: আনিশা দুদিন পর তুমি বাচ্চার মা হবে আর এখন তুমি বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি করছ? আমি কিন্তু পরে... (আদিলের কথা আর কিছু শুনতে পাচ্ছি না শুধু মনে হচ্ছে এবার প্রেগনেন্সির কথা আদিলকে জানানো প্রয়োজন)
আদিল: আনিশা কি হলো?
আমি: আদিল তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।
আদিল: হ্যাঁ বলো এতো কি ভাবছ?
আমি: আসলে... (আচ্ছা এই কথা তো আদিল বাদে সবাই জানে তাহলে ওকে বলতে এতো লজ্জা হচ্ছে কেন?)
আদিল: কি হল বলো।
আমি: বলতে পারবো না। (আদিলের একটা হাত এনে আমার পেটের উপর রাখলাম, আদিল বিস্ময়ভরা চোখে একবার আমার চোখের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার আমার পেটের দিকে তাকাচ্ছে। কিছুটা বিস্ময়, ঠোঁটের কোণে হাসি আর চোখের কোণে জল সবকিছু মিলে আদিলকে অন্যরকম লাগছে)
আদিল: সত্যি?
মাথা নাড়লাম, আদিল কাঁদছে। আদিল এতো খুশি হয়েছে আর আমি কিনা ওকে এমন খুশির খবরটা এতো পরে দিলাম। আদিল কান্নার কারণে কোনো কথা বলতে পারছে না, এই প্রথম ওর চোখে পানি দেখে আমি খুশি হচ্ছি। আদিল আমার পেটের শাড়ি সরিয়ে পেটের মধ্যে হাত রাখলো, অন্যহাত আমার গালে রেখে আমার কপালে আলতো করে চুমু খেলো। আদিল দুচোখ বন্ধ করে আমার কপালে ওর কপাল ঠেকালো আমিও দুচোখ বন্ধ করে ফেললাম, আজ মনে হচ্ছে আমরা দুজন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দম্পতী...
চলবে😍
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com