Breaking News

তবুও ভালোবাসি | পর্ব -২৩



ঝাপসা চোখে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছি, একটু একটু করে ঝাপসাটা কেটে যাচ্ছে। আব্বু ডক্টর এর সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন ফুফু আর চাঁচি আমার মাথার পাশে বসা। এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম আমি হসপিটালে আছি। আমি এতোটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম যে হসপিটালে নিয়ে আসতে হলো?
চাঁচি: এইতো আনিশা চোখ খুলেছে। (চাঁচির কথা শুনে আব্বু পাগলের মতো এসে আমার পাশে বসলেন, আমার হাত আব্বুর এক হাতের মুঠোয় নিয়ে ঢুকরে কেঁদে উঠলেন)
আব্বু: বলেছিলাম তো এতো টেনশন করিস না শুনিসনি আমার কথা, এখন দেখ নিজের কি অবস্থা করেছিস।
আমি: আব্বু তেমন কিছু হয়নি আমার।
আব্বু: হ্যাঁ তাতো দেখতেই পাচ্ছি।
আমি: ফুফু আব্বুকে কাঁদতে নিষেধ করো তো।
ফুফু: কেন নিষেধ করবো? তুই ছাড়া ভাইয়ার কে আছে? তুই যে এমন পাগলামি করিস তোর কিছু হলে ভাইয়ার কি হবে? রাইমা তো ভাইয়াকে ছেড়ে চলেই গেছে এখন তুইও পাগলামি শুরু করেছিস, কেন? ভাইয়ার ভালোবাসার চেয়ে কি তোদের কাছে ওই দুদিনের ছেলে গুলোর ভালোবাসা বড় হয়ে গেল?
আমি: (নিশ্চুপ)
ফুফু: আনিশা আর পাগলামি করিস না তুই বড় হয়েছিস এখন নিজের খেয়াল রাখতে শিখ।
চাঁচি: শুধু কি নিজের খেয়াল রাখলে হবে যে আসতে চলেছে তারও তো খেয়াল রাখতে হবে।
আমি: মানে?
ফুফু: কিছুনা তুই রেস্ট নে আমরা বাইরে আছি। (ফুফুর হাবভাব তো আমার ভালো লাগছে না, কি লুকাতে চাইছে ফুফু?)
আমি: দাঁড়াও ফুফু। (ফুফু চাঁচিকে নিয়ে চলে যাচ্ছিল আমার কথা শুনে পিছন ফিরে তাকালো)
আমি: কি লুকাচ্ছ তোমরা আমার থেকে?
ফুফু: কিছু নাতো কি লুকাবো?
আব্বু: সায়মা ওকে সত্যিটা বলে দে, এখন মিথ্যে বলে লাভ কি ও তো নিজেই কিছুদিন পর নিজের মধ্যে একটা অস্তিত্ব বেড়ে উঠছে যে সেটা বুঝতে পারবে। (আব্বুর কথা শুনে চমকে উঠলাম তবে কি আমি প্রেগন্যান্ট?)
ফুফু: আর এখন বললে ও আবারো আদিলের জন্য পাগল হয়ে উঠবে নিজের খেয়াল রাখবে না।
চাঁচি: রাখবে সায়মা, নারীরা নিজের ক্ষতি করলেও সন্তানের ক্ষতি কখনো করে না। ওর থেকে না লুকিয়ে বলে দিলে বরং ভালো হবে, এতে ও নিজের সন্তানের জন্য হলেও নিজের যত্ন নিবে আর পাগলামি করবে না।
আমি: আমি প্রেগন্যান্ট তাই না? (উপরের সিলিং ফ্যানের দিকে আনমনা হয়ে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলাম, দুচোখ ফেটে যেন কান্না নয় রক্ত বেরিয়ে আসতে চাইছে। আমি প্রেগন্যান্ট কিন্তু ওরা আমাকে বলতে চাইছে না। কিন্তু কেন? ওরা কি বুঝে না একজন নারী কতোটা স্বপ্ন দেখে মা হবার?)
ফুফু: হ্যাঁ।
আমি: আমার থেকে লুকাতে চাইছিলে কেন?
ফুফু: কারণ তুই ইমোশনাল হয়ে পড়বি আবার আদিলের কাছে ফিরে যেতে চাইবি।
আমি: বাহ্ একটা বাচ্চা আসতে চলেছে আর তোমরা তার মা'কে এই খুশির খবর দিতে চাইছ না, এখন আবার বাবাকে আলাদা রাখতে চাইছ। কেন ফুফু? বাচ্চাটার কি দোষ কেন সে বাবার থেকে আলাদা থাকবে?
আব্বু: আনিশা তুই ভুল বুঝছিস আমরা তোদের আলাদা করতে চাইছি না। কিন্তু এটাও তো সত্যি তোর শাশুড়ি তোদের আলাদা করতে চায় মেনে নিবে না তোকে।
আমি: আমি প্রেগন্যান্ট শুনলে হয়তো উনি মেনে নিবেন আমাকে।
আব্বু: নিবে না কারণ ও এমন মেয়েই নয় ওর কাছে ওর ইগো বড়।
আমি: তুমি জানো কিভাবে? (আব্বু নিশ্চুপ হয়ে রইলেন তারমানে আব্বু মা'কে আগে থেকে ছিনেন)
আমি: আর কতো চুপ হয়ে থাকবে আব্বু? তোমার চুপ হয়ে থাকার কারণে আমি আদিলকে হারাতে বসেছি আর এখন তো আমার বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসার আগেই ওর বাবাকে হারাতে বসেছে। আব্বু প্লিজ আমার বাচ্চাটার জন্য অন্তত...
আব্বু: হুম আমি শেষবার চেষ্টা করবো তুই চিন্তা করিস না। (আব্বু আমার মাথায় হাত রেখে কথাটা বলেই মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলেন)

চুপচাপ বেডে শুয়ে আছি আর ভাবছি আব্বু মায়ের সম্পর্কে এতোটা জানেন কিভাবে? মা আর আব্বু একে অপরকে কি ছিনে? কি সম্পর্ক তাদের মধ্যে? ভেবে কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। হঠাৎ মনে পড়লো আবির ভাইয়ার ডায়েরীর কথা, আদিল তো তখন বলছিল ডায়েরীতে অনেক কিছু লেখা আছে আমরা অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবো তাহলে কি আমার এই প্রশ্ন গুলোর উত্তরও পাবো? কিন্তু আমিতো অফিসেই যেতে পারলাম না। আচ্ছা আদিল কি জানেনা আমি হসপিটালে আছি ও আমাকে দেখতে আসলো না কেন? এসব সাতপাঁচ ভাবছিলাম হঠাৎ ডক্টর এসে রুমে ঢুকলো সাথে আব্বু।
ডক্টর: এখন কেমন লাগছে?
আমি: ভালো।
ডক্টর: এখন কিন্তু একদম অনিয়ম চলবে না, নিজের এবং বেবির খেয়াল রাখতে হবে। (ডক্টর এর কথায় শুধু মাথা নাড়লাম)
ডক্টর: ঠিকমতো ঘুমাতে হবে এবং খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করতে হবে। টেনশন একদম করা যাবে না সবসময় হাসিখুশি থাকতে হবে। (ডক্টর হাসি মুখে কথা গুলো বলতে বলতে চেকআপ করে নিলো তারপর চলে গেল)
আমি: আব্বু..
আব্বু: কিরে কিছু লাগবে তোর ফুফুকে ভিতরে আসতে বলবো?
আমি: আমি যে অসুস্থ আদিল জানেনা?
আব্বু: (নিশ্চুপ)
আমি: বললে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো আব্বু? ওর কি অধিকার নেই আমি প্রেগন্যান্ট এই খুশির খবরটা শুনার?
ফুফু: হ্যাঁ অধিকার আছে তবে এখন নয়। (ফুফু রুমে ঢুকতে ঢুকতে রাগি কন্ঠে কথাটা বললেন)
আমি: তাহলে কখন?
ফুফু: ওর মা যদি তোকে মেনে নেয় তবেই তুই ওকে এই খুশির খবরটা জানাবি এর আগে নয়।
আমি: আর যদি মেনে না নেয়?
আব্বু: তোর শাশুড়িকে খবর দিয়েছি সে হসপিটালে আসবে তখন নাহয় উনার সিদ্ধান্ত জানার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।
আমি: আব্বু তোমার ফোনটা দাও তো।
ফুফু: কেন আদিলকে ফোন করবি?
আমি: হ্যাঁ।
ফুফু: এতো বুঝানোর প...
আমি: ফুফু আমি অন্য বিষয়ে কথা বলবো।
ফুফু: কোনো বিষয়ে কথা বলার প্রয়োজন নেই।
আব্বু: আনিশা এখন এসব ওকে জানানোর প্রয়োজন নেই।
আমি: আব্বু তোমাকে বলা হয়নি আদিল আমাদের অফিসে জয়েন করেছে। আমি যেহেতু অফিসে যেতে পারিনি আদিলকে বলে দেই ও সবটা সামলে নিবে। আমি যে হসপিটালে আছি এই কথাটাও আমি ওকে বলবো না কথা দিচ্ছি তোমাদের।
আব্বু: ঠিক আছে। (আব্বু আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে চলে গেলেন, ফুফুও বেরিয়ে গেলেন)

আদিলকে একের পর এক ফোন করেই যাচ্ছি কিন্তু ও ফোন রিসিভ করছে না। বিরক্ত হয়ে ফোনটা পাশে রেখে শুয়ে রইলাম, কিছুক্ষণ পর আদিল নিজেই ফোন করলো।
আমি: হ্যালো।
আদিল: আনিশা কোথায় তুমি? তোমার ফোন কোথায় সকাল থেকে ফোন করে যাচ্ছি, সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে গেল আর তুমি...
আমি: আমার ফোন খুঁজে পাচ্ছি না।
আদিল: কি? তাহলে অফিসে আসনি কেন?
আমি: ওইযে ফোন খুঁজতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল।
আদিল: গুছিয়ে যখন মিথ্যে বলতে পারো না তাহলে মিথ্যে বলার চেষ্টা করো কেন?
আমি: কি আমি মিথ্যে বলছি?
আদিল: হ্যাঁ বলছ, নিশ্চয় অন্য কিছু হয়েছে তুমি ফোন খুঁজে পাচ্ছনা বলে বাহানা দিচ্ছ।
আমি: আদিল আমি মিথ্যে বলবো কেন?
আদিল: যে আনিশা সকালে ডায়েরীর কথা শুনে নাশতা না করে চলে আসতে চেয়েছিল সে নাকি এখন ফোন খুঁজে পাচ্ছে না বলে অফিসে আসেনি, কথাটা ভারী অদ্ভুত হয়ে গেলনা?
আমি: হলে হয়েছে আমি দুদিন অফিসে যেতে পারবো না, তুমি এক কাজ করো তো ডায়েরীতে কি কি লেখা পেয়েছ আমাকে ফোনে বলো।
আদিল: তোমার কি হয়েছে সেটা আমাকে বলবে না আর আমি ডায়েরীতে কি লেখা আছে সেটা তোমাকে বলবো? তুমি ভাবলে কিভাবে?
আমি: আদিল প্লিজ এমন করোনা।
আদিল: আমার কাছে এসবের চেয়ে তুমি ইম্পরট্যান্ট, আনিশা তোমার কথাবার্তা আমার ঠিক লাগছে না বলো আমাকে তোমার কি হয়েছে।
আমি: আমার কি হবে আমি ঠিক আছি।
আদিল: মিথ্যে বলছ তুমি।
আমি: ধ্যাত ভালো লাগেনা।
ফোন কেটে দিলাম। বারবার বলছে আমি মিথ্যে বলছি, আরে বাবা আমি সত্যিটা বলবো কিভাবে? আমার যে সত্যিটা বলা বারণ।

আব্বু: হ্যাঁ আনিশাকে বিকেলে রিলিজ করে দিবে।
ফুফু: হসপিটালে রাখার চেয়ে বাসায় নিয়ে যাওয়া ভালো। (আব্বু আর ফুফু কথা বলতে বলতে কেবিনে ঢুকলেন। আমি অপেক্ষা করছি মায়ের জন্য, কবে মা আসবেন আর কবে আমাকে মেনে নিবেন আর আমি কবে আদিলকে ফোন করে খুশির খবরটা দিবো। আচ্ছা আদিল বাবা হবে শুনলে ও প্রথমে কি বলবে? নিশ্চয় থ মেরে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকবে। আদিল কতোটা খুশি হবে? নিশ্চয় ততোটা যতোটা খুশি হলে চোখে পানি এসে যায়)
চাঁচি: আনিশার শাশুড়ি এসেছেন। (এসব ভেবে মিটিমিটি হাসছিলাম তখনি মা এসে রুমে ঢুকলেন)
মা: কেমন আছ? (মায়ের এমন শান্ত ব্যবহার দেখে বেশ অবাক হলাম তবে কি মা আমাকে মেনে নিবেন?)
ফুফু: এখন সুস্থ আছে এইতো বিকেলে রিলিজ করে দিবে। বলছিলাম আনিশা আপাতত আমাদের বাসায় থাকুক ওর তো এখন রেস্টের প্রয়োজন। (ফুফুর কথা শুনে মা ফুফুর দিকে তাকালেন তারপর পাশে রাখা চেয়ারটা টেনে এনে আমার পাশে বসলেন)
চাঁচি: দেখুন যা হবার তাতো হয়ে গেছে এখন আর এসব মনে রাখবেন না। নতুন মেহমান আসতে চলেছে এই খুশিতে নাহয় সব দুঃখ কষ্ট ভুলে যান।
ফুফু: হ্যাঁ ভাবি একদম ঠিক বলেছেন। নতুন মেহমান আসছে এর চেয়ে বড় খুশির খবর আছে নাকি? আপনি প্লিজ সব ভুলে যান।
আব্বু: আমার মেয়েটা যে একা কষ্ট পাচ্ছে তাতো নয় আদিলও কষ্ট পাচ্ছে, দুজনের কষ্টের অবসান প্রয়োজন এবার।
ফুফু: আগে কি হয়েছে রাইমা আবিরের সাথে কি হয়েছে সব ভুলে যান প্লিজ! আনিশাকে মেনে নিয়ে বাসায় ফিরিয়ে নিন।
চাঁচি: আনিশার এখন রেস্টের প্রয়োজন সবসময় ওকে হাসখুশি থাকতে হবে এভাবে টেনশন করতে থাকলে বেবির উপর...
মা: আদিল জানে এই খবরটা?
ফুফু: না আপনার সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করে বলা হয়নি।
মা: কিসের সিদ্ধান্ত?
চাঁচি: কিসের সিদ্ধান্ত মানে? আপনি আনিশাকে ফিরিয়ে নিবেন কিনা তা...
মা: আনিশা মা বাচ্চাটা কার আদিলের নাকি সিহাবের? (মায়ের মুখে এমন কথা শুনে সবাই থ হয়ে গেছে, সবাই মায়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। কি বলছেন মা এসব? একজন নারী হয়ে অন্য একজন নারীকে উনি এমন প্রশ্ন করতে পারলেন? ঠিক এই কথাটা যদি মা আদিলকে বলেন তাহলে আদিলের মনের অবস্থা কেমন হবে?)
মা: সবাই এতো অবাক হচ্ছেন কেন? এতে এতো অবাক হওয়ার তো কিছু নেই। আনিশা আমাদের বাসা থেকে এসেছে অনেক দিন হয়ে গেছে, আর সিহাবের সাথে যেহেতু ওর কিছু একটা চলছে তাহলে বাচ্চাটা তো সিহাবের হতেই পারে তাই না?
আব্বু: শিরিন? (আব্বুর ধমক শুনে মা যতোটা না কেঁপে উঠলেন তারচেয়ে বেশি অবাক হলেন ফুফু আর চাঁচি)
ফুফু: শিরিন? ও কোন শিরিন?
আব্বু: আমার মেয়ের চরিত্র সম্পর্কে আর একটা খারাপ কথা বললে খুন করে এখানেই ফেলে রাখবো। সায়মা ওকে এখান থেকে চলে যেতে বল প্রয়োজন নেই আমার মেয়েকে মেনে নেয়ার। আনিশা আদিলকে ভালোবাসে তাই বারবার ওর কাছে অপমানিত হবার পরও ওকে এখানে ডেকে এনেছিলাম। কিন্তু আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম ও নিজেই যে চরিত্রহীনা, যে নিজে এমন সে অন্যের মেয়েকে এমন ভাববে এটাই তো স্বাভাবিক।
মা: আনিশা তোমার আব্বু কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি...
আমি: বেরিয়ে যান।
মা: কি?
আমি: কানে কম শুনতে পান নাকি? বেরিয়ে যান এখান থেকে।
মা: অপমান করছ?
আমি: আপনার আবার মান অপমানবোধ আছে নাকি? মেয়েরা বিয়ের পর শশুড় শাশুড়িকে মা বাবা হিসেবে মেনে নেয়, আমার তো মা নেই ভেবেছিলাম আপনাকে পেয়ে বুঝি মায়ের অভাব পূরণ হবে কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। আপনি কারো মায়ের অভাব পূরণ করবেন কিভাবে আর মা হয়ে উঠবেনই বা কি করে আপনি তো কারো সত্যিকারের মা নন মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করছেন মাত্র।
মা: আনিশা?
আমি: চিৎকার করবেন না দরজা খুলা আছে বেরিয়ে যান।
মা: আজ যে অপমান করেছ তারপর আর আদিলকে নিয়ে ভুলেও স্বপ্ন দেখার দুঃসাহস করো না।
আমি: ভালোবাসা সত্যি হলে আদিল নিজে থেকেই আসবে আপনি আটকিয়ে রাখতে পারবেন না।
মা রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন। সবাই চুপচাপ হয়ে আছে মনে হচ্ছে সবার মাঝে নীরবতা নেমে এসেছে। আমি দুচোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি আর মায়ের বলা কথাটা ভাবছি "আনিশা মা বাচ্চাটা কার আদিলের নাকি সিহাবের" কথাটা যেন বারবার কলিজায় গিয়ে আঘাত করছে।

ফুফু: আনিশা আশা করি এতো কিছুর পর আর আদিলের কাছে ফিরে যেতে চাইবে না। (রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ফুফু কথাটা বললেন, পিছন ফিরে তাকালাম। হসপিটাল থেকে রিলিজ করে দিলো বাসায় আসলাম এতো সময়ের মধ্যে কেউ আমার সাথে কোনো কথা বলেনি এখন ফুফু বললেন)
ফুফু: তোর চরিত্রে উনি কলঙ্কের দাগ লাগিয়ে দিয়েছেন এরপরও যদি তুই আদিলের কাছে যেতে চাস তাহলে আমাদের আর কিছু বলার নেই।
আব্বুর দিকে তাকালাম মাথা নিচু করে সোফায় বসে আছেন। ফুফুর দিকে এক নজর তাকিয়ে চুপচাপ রুমে চলে আসলাম।

জানালার কাচ ঘেঁষে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি আর বাইরে তাকিয়ে পরন্ত বিকেলের শান্ত প্রকৃতি দেখছি। আজ প্রকৃতির মতো আমার মনও শান্ত হয়ে গেছে, আজ আর মন আদিলের জন্য চটপট করছে না। ওর ভালোবাসা পাবার জন্য মন আর বারবার উতলা হয়ে উঠছে না, হয়তো আর কখনো উতলা হবেও না। পেটের দিকে নজর পড়লো, পেটের উপর একটা হাত রেখে আনমনেই হেসে উঠলাম। আমিই মনে হয় একমাত্র নারী যে কিনা নিজের স্বামীকে এতো বড় খুশির খবরটা দিতে পারিনি, কখনো দিতে পারবো কিনা তাও জানিনা। আদিল আর আমার ভালোবাসার ফসল এই বেবি, আদিল খবরটা শুনলে নিশ্চয় খুব খুশি হতো হয়তো আনন্দে কেঁদেও ফেলতো। কিন্তু নিয়তি ওকে এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করে দিলো। তবুও আমি আশা রাখি একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে আদিল ফিরে আসবে আর আমার বেবি ওর আব্বুকে ফিরে পাবে...

চলবে😍

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com