তবুও ভালোবাসি | পর্ব -২৫
.আমি অবাক হয়ে মায়ের রুমের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছি, আমিতো ভাবতেই পারছি না যে আব্বু আমাকে নিষেধ করলেন আদিলের সাথে যোগাযোগ রাখতে তিনি নিজেই আবার এ বাসায় এসেছেন মায়ের সাথে কথা বলছেন। যদিও জানি কারো কথা লুকিয়ে শুনতে নেই কিন্তু এখন মনে হচ্ছে শুনতে হবে, হয়তো আব্বুর নিশ্চুপ হয়ে থাকার কারণ জানতে পারবো।
আদিল: তোমার আব্বু তো আমাদের বাসায় আসতেই পারেন এতে এতো অবাক হচ্ছ কেন?
আমি: চুপ করবে প্লিজ! (আদিলকে থামিয়ে দিয়ে রুমের ভিতরে তাকালাম)
মা: আমিতো ভাবতেই পারছি না কাল অপমান করে আজ আমার বাসায় আসার সাহস তুমি পেলে কোথায়?
আব্বু: আমিতো বাবা আমার চোখ ঠিক মেয়ের কষ্ট ধরে নিতে পারে, আনিশা সারারাত ঘুমায়নি তা...
মা: তাহলে আমার কাছে এসেছ কেন ওকে নিয়ে ডক্টর এর কাছে যাও।
আব্বু: শিরিন তুমি কিন্তু সব জেনেশুনে না জানার ভাণ করছ।
মা: হ্যাঁ করছি কারণ আমি চাইনা এই বিয়ের সম্পর্কটা ঠিকে থাকুক, আমি ওদের ডিভোর্স করাতে চাই।
আব্বু: এতে তোমার লাভ কি? আমার মেয়ের চোখে পানি দেখে ক্ষণিকের জন্য শান্তি পাবে তাইতো? কিন্তু শিরিন এইটা কেন বুঝতে পারছ না আমার মেয়ে একা কাঁদবে না তোমার ছেলেও কাঁদবে।
মা: (নিশ্চুপ)
আব্বু: রাইমা আর আবির কেন আমাদের বলেনি আমি জানিনা কিন্তু এখন তো আমরা সবটা জানি দুটু জীবন নষ্ট হতে দিও না।
মা: দেখো আমি আবারো...
আব্বু: শিরিন প্লিজ নিজের অভ্যাস এবার অন্তত চেঞ্জ করো। তুমি সবসময় নিজের অহংকার আর রাগকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছ এতে লাভ কি হয়েছে পেয়েছ আমাকে? (আব্বুর কথা শুনে বিস্ময়ভরা চোখে আদিলের দিকে তাকালাম আদিলও অবাক হয়ে আছে, তবে কি মা আর আব্বুর মধ্যে সম্পর্ক ছিল?)
আব্বু: সেদিন তোমার অহংকারের জন্য আমাকে হারিয়েছিলে আর আজ আবারো নিজের রাগ অহংকারকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নিজের ছেলে মেয়ের জীবন নষ্ট করছ। কেন শিরিন? অনেক তো হলো এবার নিজেকে চেঞ্জ করো, অহংকার দিয়ে নয় ভালোবাসা দিয়ে সব বিচার করো দেখবে সব...
মা: তুমি কি আমাকে পুরনো কথা মনে করাতে এখানে এসেছ?
আব্বু: না আমার মেয়েটা তিলেতিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে ভিতরে ভিতরে গোমড়ে মরছে তাই তোমার কাছে এসেছি।
মা: বাইশ বছর আগে তোমার সাথে আমার সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে, আমি চাই না তোমার সাথে আমার কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকুক।
আব্বু: সেদিন কি দোষ আমার ছিল? নিজের ভুলের শাস্তি ছেলে মেয়ে দুটুকে কেন দিচ্ছ?
মা: হ্যাঁ সেদিন আমার দোষ ছিল কিন্তু আমি পরে তোমার কাছে ফিরে গিয়েছিলাম তুমিই আমাকে গ্রহণ করনি।
আব্বু: হ্যাঁ ফিরে গিয়েছিলে কিন্তু অনেক দেরিতে, আনিশার আম্মু আর আমার বিয়ের ছয়মাস পর ফিরে গিয়েছিলে।
মা: ছয়মাসেই অন্য মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছিলে?
আব্বু: এখানে ভালোবাসার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? বিয়ে নামক বন্ধনে আমি জড়িয়ে গিয়েছিলাম, আমি কি করে পারতাম আনিশার আম্মুকে রেখে তোমাকে গ্রহণ করতে?
মা: চাইলেই তোমার স্ত্রীকে সব বলতে পারতে কিন্তু তুমি বলনি কারণ তুমি ভাইয়ার উপর রেগে ছিলে।
আব্বু: রাগ করাটা কি খুব বেশি অস্বাভাবিক ছিল?
মা: না স্বাভাবিক ছিল আর তাইতো নিজের রাগ মিটাতে তুমি ভাইয়াকেই মেরে ফেললে।
আব্বু: শিরিন তুমি আজো এই ভুল ধারণা নিয়ে বেঁচে আছ? ছিঃ তুমি ভাবো কিভাবে আমি ওদের খুন করেছি?
মা: ভাইয়া তোমাকে মেনে নেয়নি তোমাকে অপমান করেছিল তাই তুমি প্রতিশোধ নিয়েছ।
আব্বু: সেদিন তোমার ভাইয়ার এক্সিডেন্ট অন্য গাড়িতে হয়েছিল রাস্তায় পড়ে ছিল তোমার ভাই ভাবি আর তাদের ছোট বাচ্চা, কেউ সেদিন সাহায্য করেনি ওদের। আমি সে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম আমি ওদের হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলাম আর কাকতালীয় ভাবে তোমার সাথেও দেখা হয়ে যায়, তুমি রাগে নাকি অভিমানে জানিনা ধরে নিয়েছ আমি তাদের খুন করেছি। শিরিন সেদিন যদি আমি ঠিক সময় ওদের হসপিটালে না নিয়ে যেতাম তাহলে তোমার ছোট ভাইঝি মারা যেতো। হ্যাঁ মানছি আমি তখন গরীব ছিলাম বলে তোমার ভাইয়া আমাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি কিন্তু তাই বলে খুন করবো এতোটা খারাপ আমি নই।
মা: (নিশ্চুপ)
আব্বু: নিজের ইচ্ছেমত ধরে না নিয়ে ভাবো অহংকার মন থেকে মুছে ফেলো তাহলেই...
মা: আমি অহংকারী?
আব্বু: হ্যাঁ তুমি অহংকারী, সেদিন আমি গরীব ছিলাম বলে তোমার ভাইয়া আমাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি কিন্তু তুমিও একবারের জন্য বলনি এই গরীব ছেলেটাকেই তুমি চাও। তুমি সেদিন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে কারণ তুমি জানতে আমার সাথে বিয়ে হলে তুমি ভালো থাকবে না। আচ্ছা শিরিন বলতো আমাদের সম্পর্ক হওয়ার সময় কি আমি গরীব ছিলাম না? তুমি তো জেনেশুনে আমাকে ভালোবেসেছিলে তাহলে কিসের এতো দ্বিধা ছিল কেন তোমার ভাইয়াকে জোড় গলায় বলতে পারনি আমাকে ভালোবাস? তুমিতো চুপচাপ তোমার ভাইয়ার কথা মেনে নিয়েছিলে এমনকি তোমার বাবাকে পর্যন্ত আমাদের সম্পর্কের কথা জানাওনি।
মা: সেদিন আমি বুঝিনি ভাইয়া আমাকে যা বলেছিল...
আব্বু: সেদিন তোমার ভাইয়া তোমাকে বলেছিল আমাকে বিয়ে করলে তুমি সুখী হবে না আর তুমি সুখের পিছনে ছুটতে গিয়ে আমাকে হারিয়েছ। শিরিন তুমি নিজের দোষে আমাকে হারিয়েছ আর এখন আমার উপর অভিমান করে আদিল আর আনিশাকে কষ্ট দিচ্ছ। আমি তোমার কাছে হাত জোড় করছি প্লিজ এবার অন্তত ওদের মেনে নাও।
মা: নিবো না, আমি চাইনা তোমার সাথে আমার কোনো আত্মীয়তা থাকুক।
আব্বু: সেই বদরাগীই রয়ে গেলে। (আশ্চর্য আব্বু হাত জোড় করলেন সবকিছু এতো ভালোভাবে বুঝিয়ে বললেন তাও মা এমন করছেন)
আব্বু: শুধুমাত্র আমার মেয়ে বলে ওদের এতো বড় শাস্তি দিবে?
মা: শুধু এটাই কারণ নয়, সিহাবের সাথে আনিশার...
আব্বু: দেখো শিরিন তোমার সব অভিমান আমার উপর তাই আমাকে যা খুশি বলো কিন্তু আমার মেয়েকে নিয়ে কোনো খারাপ কথা বলো না।
মা: একশ বার বলবো কারণ আমার কাছে প্রমাণ আছে।
আব্বু: কিসের প্রমাণ? (মা বিছানা থেকে ফোনটা এনে আব্বুকে কি যেন দেখালেন)
আব্বু: ভাই বোন কি এমন পিক তুলতে পারেনা?
মা: হ্যাঁ পারে তবে আপন ভাই বোন হলে।
আব্বু: তুমি সত্যি পাল্টাবে না তুমি যেমন বদরাগী বদমেজাজি ছিলে তেমনি আছ আর থাকবেও।
মা: খবরদার আমাকে অপমান করবে না।
আব্বু: অহংকারী নারীর আবার অপমানবোধ আছে নাকি?
মা: তুমি কিন্তু...
আব্বু: আঙ্গুল নামিয়ে কথা বলো নিজে দোষ করবে আর অন্যকে শাস্তি দিবে এ কেমন বিচার তোমার? শিরিন তুমি নিজেও বুঝতে পারছ সব দোষ তোমার কিন্তু তুমি তোমার ইগোকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সেটাকে মেনে নিতে পারছ না।
মা: মেনে নিলাম সেদিন ভাইয়ার কথায় আমি অন্যায় করেছিলাম আর তুমিও ভাই ভাবিকে খুন করনি কিন্তু তবুও আমি তোমার মেয়েকে মিনে নিবো না।
আব্বু: আবারো তুমি ভুল করছ। এতো গুলো বছর পেরিয়ে গেছে তুমি সংসার করছ আমি সংসার করছি তাও কি ভুলতে পেরেছ আমাকে? শিরিন ভালোবাসা কখনো ভুলা যায় না আমিও ভুলতে পারিনি তোমাকে। আমাদের মতো আদিল আর আনিশাকে কষ্ট পেতে দিও না। আমি চাই না সারাজীবন আমি যে শূন্যতায় ভুগেছি সে শূন্যতা আমার মেয়ে অনুভব করুক। তাহলে তুমি কেন আদিলকে এই কষ্ট দিতে চাইছ তুমি কি তোমার ছেলেকে ভালোবাস না?
মা: ভালোবাসলেই যে সব মেনে নিতে হবে এমন তো নয়।
আব্বু: আদিল তো কোনো ভুল করেনি যে তোমাকে ওর ভুলটাকে মেনে নিতে হবে, আদিল ভালোবেসেছে আর ভালোবাসা কোনো ভুল নয়। তাছাড়া আদিল আনিশার বিয়েটা তাড়াতাড়ি দেওয়ার জন্য তুমিই তাড়াহুড়ো করেছিলে।
মা: হ্যাঁ তাড়াহুড়ো করেছিলাম তবে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। আমার আবির যখন মারা গেছে তখন আর এই মেয়ে আমার ছোট ছেলের বউ হয়ে থাকবে কেন?
আব্বু: তুমি কি রাগে অভিমানে অহংকারে নিজের হিতাহিত জ্ঞান টুকু হারিয়ে ফেলেছ? কিভাবে পারছ এমন অন্যায় বিচার করতে? শুনেছি তুমি মিতুর বিয়ে অন্যদিকে ঠিক করছ, কেন শিরিন? নিজের মেয়েকে সারাজীবন কাঁদাতে চাইছ কেন? (আব্বুর প্রশ্ন শুনে মা আব্বুর দিকে মাথা তুলে তাকালেন। সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে, কি হচ্ছে এসব?)
আব্বু: জোর দিয়ে বলতে পারবে তুমি আমার জন্য সারাজীবন কাঁদনি?
মা: (নিশ্চুপ)
আব্বু: মিতু বিয়ের পর হয়তো মুখ বুজে সব মেনে নিবে কিন্তু সুখী হবে না, তোমারই মতো সারাজীবন লুকিয়ে কাঁদবে।
মা: (নিশ্চুপ)
আব্বু: জানিনা তোমাকে কতটুকু বুঝাতে পেরেছি, তুমি ভাবো ভেবে আমাকে তোমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিও।
মা: শুনে যাও আমার সিদ্ধান্ত। (আব্বু বেরিয়ে আসতে চাইছিলেন মায়ের কথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়লেন)
মা: আমি সব বুঝেছি মেনে নিয়েছি কিন্তু তোমার মেয়েকে মেনে নিবো না কারণ তোমার মেয়ের সিহাবের সাথে সম্পর্ক আছে, বিয়ের পর যে মেয়ে পরপুরুষের সাথে নষ্টামি... (মায়ের পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই আব্বু মায়ের গালে কষিয়ে দুটু থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। আমি চোখ বড় বড় করে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছি, আব্বু কি করলেন এইটা?)
আব্বু: এই থাপ্পড় দুটু বাইশ বছর আগেই তোমাকে দেওয়া প্রয়োজন ছিল, তখন থাপ্পড় গুলো দিলে আমাকে সারাজীবন কাঁদতে হতো না। সেদিন সব অপমান মেনে নিয়েছিলাম বলে যে আজো মেনে নিবো তা ভাবলে কিভাবে? সেদিন অপমান আমাকে করেছিলে তাই মুখ বুজে সয়ে নিয়েছিলাম কিন্তু আজ আমার মেয়েকে নিয়ে খারাপ কথা বলেছ কেন সহ্য করবো আমি? আমার মেয়ে তো খারাপ নয় খারাপ তোমার অহংকারী মন মানসিকতা, এই অহংকার একদিন তোমাকে শেষ করে দিবে।
মা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন, আব্বু চুপচাপ বেরিয়ে আসলেন।
দরজায় এসে আব্বু আমাকে দেখে কিছুটা চমকে গেলেন, আব্বু একনজর আদিলের দিকে তাকিয়ে আমার হাত চেপে ধরলেন।
আব্বু: চল।
আমি: আব্বু..
আব্বু: এই বাসায় আর এক মুহূর্তও না, প্রয়োজন নেই তোর এমন বাড়ির বউ হয়ে থাকার।
আমি: চলে যাবো আব্বু যে বাসায় আমার আব্বুকে বারবার অপমান করা হয় সেখানে আমি থাকবো না। শুধু দু মিনিট সময় দাও মায়ের সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আব্বু: ওর সাথে আবার কিসের কথা? চল বলছি।
আমি: রাইমার মৃত্যু নিয়ে আব্বু। (আব্বু অবাক হয়ে আমার হাত ছেড়ে দিলেন)
আব্বু: রাইমার মৃত্যু?
আমি: হ্যাঁ আব্বু, রাইমা আর আবির ভাইয়ার সুইসাইড এর জন্য উনিই দায়ী।
আব্বু: কি?
আমি: চলো মায়ের কাছে।
মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, মা আমার হাতে থাকা ডায়েরীটার দিকে তাকিয়ে আছেন।
আদিল: আম্মু জানো এইটা কার ডায়েরী?
মা: কার?
আদিল: ভাইয়ার।
মা: কি?
আদিল: হ্যাঁ, এই ডায়েরীতে স্পষ্ট ভাবে লেখা আছে ভাইয়া ওদের রিলেশনের কথা তোমাকে জানিয়েছিল তুমি মেনেও নিয়েছিলে কিন্তু তুমি রাইমাকে দেখতে গিয়ে ওদের বাসার সামনে থেকে ফিরে এসেছিলে আর ভাইয়াকে কড়া ভাষায় বলে দিয়েছিলে এ বিয়ে সম্ভব নয়। কেন আম্মু? তুমি কেন ওদের বাসায় না গিয়ে ফিরে এসেছিলে কেন ওদের সম্পর্ক মেনে নাওনি?
মা: কারণ আমি সেদিন ওদের বাসার সামনে যেতেই আনিশার আব্বুকে দেখতে পাই, দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করতেই বলে রাইমা উনার মেয়ে। যে আমাকে বাইশ বছর আগে ঠকিয়েছে তার মেয়েকে আমি আমার ছেলের বউ করে আনবো এইটা তো অসম্ভব তাই মেনে নেইনি। আমার শত্রুর মেয়ে আমার বাড়ির বউ হবে সেটা আমি চাইনি।
আব্বু: আমি ঠকিয়েছিলাম বাইশ বছর আগে নাকি তুমি আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে আমি গরীব বলে?
মা: (নিশ্চুপ)
আদিল: মা অহংকার পতনের মূল, দেখো সেদিন তোমার সব ছিল বলে উনাকে ছেড়ে এসেছিলে আর আজ তোমার কিছুই নেই অথচ উনার সবকিছু আছে।
মা: (নিশ্চুপ)
আব্বু: সেদিন রাইমা আর আবিরের রিলেশনের কথা তুমি আমাকে জানাতে পারতে আমি মেনে নিতাম, অন্তত দুজনকে এভাবে মরতে হতো না।
মা: আমি চাইনি তোমার মেয়ে আমার বাড়ির বউ হয়ে আসুক।
আব্বু: তাহলে আনিশাকে বউ করে এনেছ কেন?
মা: আমি জানতাম না আনিশা রাইমার জমজ বোন, আমি ভেবেছিলাম ও রাইমা। আমার ছেলে পাগল হয়ে হসপিটালে ভর্তি থাকবে আর ও সুখে থাকবে তাতো হবে না তাই আমি আদিলের সাথে ওর বিয়ে দিয়েছিলাম। আদিল আমাকে ওর ছবি দেখিয়ে বলেছিল ওকে আদিল ভালোবেসে ফেলেছে আর মেয়েটা বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, আমি ভেবেছিলাম ও রাইমা তাই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আদিলের ভালোবাসা মেনে নিয়েছিলাম।
আব্বু: বাহ্ কি অসাধারণ, নিজে আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে আবার আমার উপরে অভিমান করে আমারই মেয়েদের উপর তুমি প্রতিশোধ নিচ্ছ। কি বলবো তোমাকে খুঁজে পাচ্ছি না।
মা: কিছু বলতে হবে না, সেদিন আমি ভাইয়ার কথা মেনে নিলেও পরে ফিরে গিয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করনি এক বছর পরেই তুমি বিয়ে করে নিয়েছিলে। দেখো আমি ভালো ভাবে বলছি আমি তোমার মেয়েকে মন থেকে মেনে নিতে পারবো না তাই...
আব্বু: প্রয়োজন নেই মেনে নেওয়ার, আমার মেয়ে তোমার মতো মহিলার কাছে ভালো থাকবে না তাই আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি। চল আনিশা।
আদিল: আব্বু আমার কথা শুনুন।
আব্বু: আমাকে ক্ষমা করো বাবা, আমিতো অনেক চেষ্টা করেছি তোমার মা মেনে না নিলে আমার কি করার আছে? আমি আনিশাকে নিয়ে যাচ্ছি, তোমার আম্মু নয় আমিই ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবো আশা করি তুমি সাইন করে দিবে। আমার মেয়েকে বিরক্ত করতে এসো না, কথা দিয়ে যাচ্ছি আমার মেয়ে তোমাকে বিরক্ত করবে না। (আব্বুর কথা শুনে চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে, আব্বু এমন কথা কেন দিলেন আমি যে আদিলের সাথে কথা না বলে থাকতে পারবো না)
আদিল: কিন্তু আব্বু আমি আনিশাকে ভালোবাসি।
আব্বু: সেটা তোমার মা'কে বলো আমাকে নয়।
আদিল: আনিশা ডায়েরীটা দাও। (আদিল আমার হাত থেকে ডায়েরীটা নিয়ে মায়ের সামনে ধরলো)
আদিল: তোমার কাছে কখনো কিছু চাইনি শুধু আনিশাকে চেয়েছিলাম কিন্তু... এই ডায়েরীটা পড়ার অনুরোধ রইলো। আম্মু এই ডায়েরীটা পড়লে তুমি বুঝতে পারবে ভাইয়া কতোটা কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন, আর তোমার প্রতি কতোটা ঘৃণা নিয়ে মারা গেছেন। তোমার মনে যদি এতটুকু মায়ের ভালোবাসা থেকে থাকে তাহলে আমি নিশ্চিত তুমি এই ডায়েরী পরে কাঁদবে আর নিজের ভুল বুঝতে পারবে। আর তাও যদি নিজের ভুল না বুঝতে পারো তাহলে ভাইয়ার মতো আমাকেও হারাবে।
আমি: আদিল কি বলছ এসব?
আদিল: আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না আনিশা।
আমি: তাই বলে সুইসাইড? আদিল সুইসাইড কোনো সমাধান নয়। দুজন দুপ্রান্তে বেঁচে থাকলে অন্তত এইটা ভেবে তো শান্তি পাবো যে আমার ভালোবাসার মানুষটা বেঁচে আছে আর এই পৃথিবীতেই কোথাও আছে।
আদিল: আনিশা?
আব্বু: আনিশা চল।
আদিল আমার হাত ধরে ছিল আব্বু আদিলের হাত ছাড়িয়ে দিয়ে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে আসলেন। চৌকাঠ পেরোনোর আগে শেষ বার পিছন ফিরে তাকালাম, আদিল ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে আমার দিকে তাকিয়ে পাগলের মতো কাঁদছে। চোখের পানি মুছে আদিলের থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম এটাই হয়তো আমাদের শেষ দেখা। হয়তো আর কখনো দেখা হবে না আমাদের বলা হবেনা ভালোবাসি শব্দটা...
চলবে😍
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com