Breaking News

আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ১৫ || লেখিকা: সুলতানা তমা

হিমি আমার কাধে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে, আমি ভাবছি হিমিকে কি কিছু জিজ্ঞেস করবো কিডন্যাপ এর ব্যাপারে? ভয় করছে হিমি যদি আবার রেগে যায়। হিমির দিকে তাকালাম এখনো কেঁদেই যাচ্ছে। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না, কেন যে ওকে এসব মনে করাতে গেলাম।
হিমি: আমি জানি আপনি কি ভাবছেন। (হঠাৎ হিমির কথায় আমার ঘোর কাটলো, এই মেয়ে কি জানে? ভুল কোনো ধারণা নিচ্ছে নাতো মনে?)
আমি: কি? কি জানো?
হিমি: ঐযে চারদিনের ব্যাপারে।
আমি: মানে? (হিমি উঠে দাঁড়ালো তারপর আমার দিকে তাকালো)
হিমি: ভালো সবাই বাসতে পারে কিন্তু নিঃস্বার্থভাবে ভালো সবাই বাসতে পারে নাহ।
হিমি রহস্যময়ী একটা হাসি দিয়ে চলে যেতে লাগলো। আমি নির্বাক হয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি হিমি কি জানে? কি বুঝতে পেরেছে ও? ভুল কিছু নয়তো? ওর এই হাসির রহস্য কি? ওর এই কথার মানেই বা কি?

কোনো কিছুতে মন বসাতে পারছি না বারবার শুধু মনে হচ্ছে হিমির মনে আমাকে নিয়ে কোনো ভুল ধারণা বাসা বাঁধেনি তো?
আপু: ভাই আসবো? (আপুর ডাকে আমার ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো, আপু দরজায় দাঁড়িয়ে আছে)
আপু: কিরে আসবো?
আমি: হুম।
আপু: মন খারাপ?
আমি: না।
আপু: কিছু কি হয়েছে?
আমি: আপু হিমিকে হারানোর ভয় হচ্ছে। সজিব ফোনে হুমকি দিচ্ছে আর এদিকে তো...
আপু: কি?
আমি: আমার মনে হয় সজিব আদিত্যর ফ্রেন্ড।
আপু: কি বলিস?
আমি: হুম। আদিত্যকে কিছু বলতেও পারছি না হুটহাট রেগে যাচ্ছে।
আপু: আমি কি আদিত্যকে বুঝাবো?
আমি: না আমি নিজেই বুঝাবো কিন্তু এখন নয় আগে ওর রাগ কমুক।
আপু: ঠিক আছে। তোকে ডাকতে এসেছিলাম নিচে চল নাশতা করবি।
আমি: আপু একটা প্রশ্ন করবো?
আপু: হ্যাঁ বল।
আমি: তুই কি কাউকে ভালোবাসিস? মানে কারো সাথে কি রিলেশন...
আপু: হঠাৎ এই প্রশ্ন করছিস যে?
আমি: না এমনি।
আপু: তাড়াতাড়ি নিচে আয়।
আপু দ্রুত হেটে চলে গেলো। আপু কি আমার প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলো? তাহলে কি আপু কাউকে ভালোবাসে? কিন্তু আব্বু যে আপুর বিয়ে ঠিক করছে? না না কোনো কিছু গড়মিল হবার আগেই আপুর থেকে জানতে হবে আর আব্বুকে জানাতে হবে।

সবাই বসে নাশতা করছি হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো, এই সাতসকালে কে ফোন করলো ভাবতে ভাবতে পকেট থেকে ফোনটা বের করল। সজিবের নাম্বার দেখে মাথায় রাগ ছড়ে বসলো।
আমি: হ্যালো।
সজিব: ছিনতে পেরেছিস?
আমি: তোকে আবার ছিনতে পারবো না?
সজিব: এতোদিন আমি তোকে হুমকি দিচ্ছিলাম কিন্তু এখন তো তোর ভাই আমাকে হুমকি দিচ্ছে, কি করি বলতো। আসলে আ...
আমি: হিমিকে ভুলে যা সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
চাঁচি: উফফ খাবার টেবিলে বসেও সেই একই নাম হিমি, অসহ্য।
রোদেলা: তোমাকে শুনতে কে বলেছে আম্মু? কানে তুলো দিয়ে রাখতে পারো না?
চাঁচি: এই চুপ কর।
আমি: উফফ চুপ করবে তোমরা?
সজিব: আমি তোর সাথে দেখা কর‍তে চাই।
আমি: কোথায়?
সজিব: রেস্টুরেন্টে।
আমি: কখন আসতে হবে?
সজিব: ঠিকানা সময় সব মেসেজে জানিয়ে দিবো।
আমি: ঠিক আছে।
সজিব ফোন রেখে দিলো। আমি খাবার রেখে ভাবছি সজিব হঠাৎ দেখা করতে চাইলো কেন? মেসেজটোন বেজে উঠলো, বারোটায় যেতে বলেছে। এখন বাজে আট'টা, তারমানে আমার হাতে চার ঘন্টা সময় আছে। আরিয়ান আর সিফাতকে কি বলবো? সজিবকে বিশ্বাস নেই যা খুশি করতে পারে। খাবার রেখে উঠে দাঁড়ালাম, রুমে গিয়ে একটু ভেবে দেখি কি করা যায়।

আদিত্য: ভাইয়া? (রুমের দিকে যাচ্ছিলাম সিঁড়িতে আসতেই আদিত্য পিছু ডাকলো)
আমি: কিছু বলবি?
আদিত্য: সকালের ব্যবহারের জন্য সরি। একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
আমি: হুম বল।
আদিত্য: তুমি কি সজিবের সাথে দেখা করতে যাচ্ছ? না মানে তোমার ফোনে কথা বলার ধরণ দেখে বুঝলাম।
আমি: হ্যাঁ।
আদিত্য: সজিব ভালো ছেলে নয় তুমি কেন শুধু শুধু রিস্ক নিচ্ছ?
আমি: ভালোবাসার জন্য এইটুকু রিস্ক তো নিতেই পারি। আচ্ছা সজিব কি তোর ফ্রেন্ড?
আদিত্য: হ্যাঁ। হিমিদের পাশের গ্রামের ছেলে সজিব, এখানে বাসা আছে বড় লোকের ছেলে। সজিব কিন্তু যা খুশি করতে পারে।
আমি: পরোয়া করিনা।
আদিত্য: কিন্তু আমি করি। ভাইয়া আমি খারাপ তাই বলে এতোটা খারাপ নই যে নিজের ভাইকে বিপদের দিকে ঠেলে দিবো। সজিব নিজের স্বার্থে সব করতে পারে, তোমার ক্ষতি করবে ও যেওনা তুমি।
আমি: আমি যাবো।
আদিত্য: আমি যেতে দিবো না।
আমি: পারলে আটকিয়ে দেখা।
আদিত্য: তোমার চোখ দুটো তো লাল হয়ে আছে। (আদিত্য আমার কপালে হাত দিয়ে চমকে উঠলো)
আদিত্য: তোমার শরীরে তো খুব জ্বর, বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধিয়েছ তাই না? চাঁচি চাঁচি...
আমি: আম্মুকে ডাকছিস কেন?
আদিত্য: তোমাকে আটকানোর রাস্তা পেয়ে গেছি।
আম্মু: কিরে ডাকছিলি? (আম্মু আঁচলে হাত মুছতে মুছতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসলেন, ইচ্ছে হচ্ছে আদিত্যকে দেই একটা)
আদিত্য: হ্যাঁ, দেখো ভাইয়ার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।
আম্মু: কই দেখি।
আমি: আম্মু কিছু হয়নি ও মিথ্যে বলছে।
আম্মু: অনেক জ্বর তো।
আদিত্য: হ্যাঁ ও এই জ্বর নিয়ে বাইরে যেতে চাইছে।
আম্মু: একদম না, রুমে চল।
আম্মু আমাকে টেনে রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, আদিত্য হাসছে। আশ্চর্য সকালে কি খারাপ ব্যবহার করল আর এখন আমাকে নিয়ে কতো ভাবছে।

বারোটা বাজতে মাত্র পনেরো মিনিট বাকি, আমি গায়ে বিছানা টেনে শুয়ে আছি। আদিত্য আম্মুকে কি বলেছে কে জানে আম্মু আমাকে এতক্ষণ ধরে শুয়ে রেখেছে আর কপালে জলপট্টি দিচ্ছে। আম্মুর অস্থির হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, জ্বর মোটামুটি বেশিই উঠেছে, আসলে বৃষ্টিতে ভেজার অভ্যাস নেই তো।
রোদেলা: ভাইয়া আসবো? (রোদেলার ডাকে দরজায় তাকালাম আর ওকে ইশারায় ভিতরে আসতে বললাম)
রোদেলা: আহারে রোমান্স করতে গিয়ে আমার ভাইটার কি হাল হলো।
আমি: মজা নিচ্ছিস? মজা না নিয়ে হিমির একটু খবর এনে দে, কে জানে পাগলীটা কি করছে।
রোদেলা: তোমার হিমি দরজা বন্ধ করে দিয়ে রুমে শুয়ে আছে, কারো ডাকে দরজা খুলছে না।
আমি: মানে? কিছু করে বসবে নাতো?
রোদেলা: ঝগড়া করেছ? কিছু করবে না ভয় পেয়ো না।
আদিত্য: রোদেলা যাতো ভাইয়ার সাথে আমার কথা আছে। (হুট করে আদিত্য এসে রুমে ঢুকলো, কি কথা বলবে ও? রোদেলা চলে যেতেই আদিত্য এসে আমার পাশে বসলো)
আমি: কেন করছিস এমন? সকালেই তো...
আদিত্য: সকালের কথা ভুলে যাও প্লিজ! আমি চাই না সজিব তোমার কোনো ক্ষতি করার সুযোগ পাক।
আমি: কিন্তু আমি না গেলে সজিব কি ভাববে? ভাববে আমি ভয় পেয়েছি। তখন ওর সাহস আরো বেড়ে যাবে।
আদিত্য: ঠিক আছে যেতে পারো কিন্তু একটা শর্তে।
আমি: কি?
আদিত্য: বাইক নেওয়া চলবে না। গাড়ি করে যাবে আর আমি ড্রাইভ করে নিয়ে যাবো।
আমি: তুই যাবি?
আদিত্য: হ্যাঁ তবে দূরে থাকবো।
আমি: ঠিক আছে।
আদিত্য: ভাইয়া একটা কথা বলবো?
আমি: হ্যাঁ বল।
আদিত্য: আমিতো ছোট নই তোমার থেকে মাত্র দুবছরের ছোট, আমি সব বুঝি। তুমি মেয়েটাকে ভুলে যাও, সজিব মেয়েটাকে যতোটা না ভালোবাসে তারচেয়ে বেশি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিয়ে করতে চায়। মেয়েটাকে ভুল যাও নাহলে সজিব...
আমি: একবার বলেছিস আর বলিস না কথাটা। গাড়ি বের কর গিয়ে আমি আসছি।
আদিত্য: হুম।

সজিবের দেওয়া ঠিকানায় আসলাম, আদিত্য গাড়িতে বসে আছে আর আমি রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। চারপাশে চোখ বুলাচ্ছি, আচ্ছা সজিবকে আমি চিনবো কিভাবে? হঠাৎ একটি ছেলে হাত নেড়ে ইশারায় ডাক দিলো, ও একা বসে আছে তারমানে ও সজিব।
সজিব: আমি ভেবেছিলাম আসবি না। (আমি বসতে না বসতেই সজিব কথাটা বললো, আমি মুচকি হাসলাম)
আমি: তোর ডাকে না এসে পারি?
সজিব: আমাকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল তাই না?
আমি: সেদিনই তো বললাম কাপুরুষকে দেখার ইচ্ছে...
সজিব: মুখ সামলে কথা বল এইটা রেস্টুরেন্ট এখানে কোন সিনক্রিয়েট করিস না।
আমি: ডেকেছিস কেন সেটা বল।
সজিব: হিমিকে ভুলে যা, আমি হিমিকে ভালোবাসি আর বিয়েও করবো।
আমি: তুই তো প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হিমিকে বিয়ে করতে চাস।
সজিব: তাতো বটেই, দুবছর আগের ওর হাতের থাপ্পড় আর ওর ভাইদের হাতের মাইর কি এতো সহজে আমি ভুলে যাবো?
আমি: এতকিছুর পরও তোর লজ্জা করেনা এসব করতে?
সজিব: লজ্জা করবে কেন? হিমি তো আমার বউ ওর সাথে আমার সব হয়ে গেছে এখন শুধু ওকে বউ সাজিয়ে আমার ঘরে আনার পালা। যেখানে হিমির সাথে আমার সব...
আমি: তোকে আমি...
আদিত্য: ভাইয়া ছাড়ো ওকে।
আমি: ও আমার হিমিকে জড়িয়ে খারাপ কথা বলেছে ওকে আমি...
আদিত্য: ছাড়ো বলছি। (সজিবের শার্টের কলার ধরেছিলাম আদিত্য এসে ছাড়িয়ে দিলো, ইচ্ছে হচ্ছে এই শালাকে এখানেই মেরে ফেলি)
সজিব: আমাকে মারলেই কি দুবছর আগের সত্যিটা মিথ্যে হয়ে যাবে? (সজিব বত্রিশটা দাঁত কেলিয়ে হাসছে ইচ্ছে হচ্ছে এক ঘুষি মেরে ওর সব কয়টা দাঁত ফেলে দেই)
আদিত্য: সজিব ভুলে যাস না ওই চারদিন আমিও তোর সাথে ছিলাম।
সজিব: তুই তো শালা মিরজাফর, এতদিন আমার সাথে থেকে এখন ভাইয়ের পক্ষ নিচ্ছিস।
আদিত্য: তুই কেরে? ভাই আগে না বন্ধু আগে? তাছাড়া তুই যদি ভালো হতি তাহলে মানতাম তুই তো একটা...
সজিব: এই...
আদিত্য: হিমিকে আমার ভাইয়ের বউ করে আনবো আর খুব শীঘ্রই পারলে আটকিয়ে দেখা।
আদিত্য আমাকে টেনে রেস্টুরেন্ট থেকে বের করে নিয়ে আসলো। আমি শুধু আদিত্যকে দেখছি আর অবাক হচ্ছি, যে ছেলেটা কারো কথা শুনে না সবসময় খারাপ পথে চলে সে আজ নিজের ভাইয়ের জন্য এতোটা ভাবছে?

আদিত্য কোনো কথা না বলে চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে, আমি পাশে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি। হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো, অধরা ফোন দিয়েছে দেখে বেশ অবাক হয়েই রিসিভ করলাম।
আমি: হ্যালো।
অধরা: দেখা করতে পারবি?
আমি: কেন কোনো প্রয়োজন? আসলে আমি অসুস্থ জ...
অধরা: হ্যাঁ খুব প্রয়োজন। তোকে কিছু কথা বলার আছে আর কথা গুলো আজই বলতে হবে।
আমি: কোথায় আসবো?
অধরা: কলেজে।
আমি: ঠিক আছে আসছি। (ফোন রেখে আদিত্যর দিকে তাকালাম)
আদিত্য: কি?
আমি: কলেজে যেতে হবে একটু, তুই বাসায় চলে যা আমি ড্রাইভ করে যেতে পারবো।
আদিত্য: সমস্যা নেই আমি নিয়ে যাচ্ছি আর আমি নাহয় গাড়িতে বসে থাকবো।
আমি: হুম।

গাড়ি থেকে নামতেই অধরা, সিফাত আর আরিয়ানকে গাছের নিছে দেখতে পেলাম। অধরা কি বলবে ভাবতে ভাবতে ওদের কাছে আসলাম।
সিফাত: কিরে কেমন আছিস?
আমি: তোদেরকেও ডেকেছে?
আরিয়ান: হ্যাঁ অধরা নাকি তোকে কি বলবে। শান্তকে ডেকেছিল কিন্তু ও তো আর আসতে পারবে না।
সিফাত: কিরে অধরা আরশান তো আসলো এবার বল কি কথা।
অধরা: বলছি।
আমি: তুই বল আমি বসি, জ্বর তো মাথাটা কেমন যেন লাগছে।
সিফাত: জ্বর নিয়ে আসতে গেলি কেন?
আমি: অধরা যখন ডেকেছে নিশ্চয় ইম্পরট্যান্ট কিছু।
অধরা: হ্যাঁ সত্যি এইটা অনেক সিরিয়াস বিষয়। (অধরার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে গাছের নিছে এসে বসলাম। আমার পাশে সিফাত আর আরিয়ানও এসে বসলো)
আমি: কি হলো বল।
অধরা: আরশান আমি আসলে...
সিফাত: ওয়েট ওয়েট কি এমন কথা বলবি যে এতো লজ্জা পাচ্ছিস?
অধরা: আমাকে তো বলতে দিবি তোরা।
আরিয়ান: হ্যাঁ বল।
অধরা: আরশান আমি তোকে ভালোবেসে ফেলেছি, কথাটা তোকে না জানিয়ে থাকতে পারছিলাম না তাই বলে দিলাম। (অধরা একদমে কথা গুলো বলে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি বোকার মতো ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, সিফাত আর আরিয়ান তো হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমি হাসবো নাকি অবাক হবো বুঝতে পারছি না, বোকার মতো শুধু অধরার দিকে তাকিয়েই আছি)
অধরা: সিফাত, আরিয়ান এইটা কিন্তু হাসির কোনো বিষয় নয়। আরশান আমি কিন্তু সিরিয়াস।
আমি: কি বলবো বুঝতে পারছি না।
সিফাত: মানলাম সিরিয়াস বিষয় এইটা, আচ্ছা অধরা এই কথাটা তুই আরশানকে আগে কেন বলিসনি?
আরিয়ান: হ্যাঁ আরশানের জীবনে হিমি আসার আগে বলতে পারতি।
অধরা: আসলে তখন আমি বুঝতে পারিনি।
সিফাত: এখন কয়েকদিনে বুঝে ফেলেছিস?
অধরা: হুম। হিমির প্রতি আরশানের ভালোবাসা কেয়ার এসব দেখে...
আরিয়ান: জেলাস ফিল করেছিস আর নিজের ভালোবাসাটা বুঝতে পেরেছিস তাইতো? অধরা তুই নিজেও জানিস আরশান হিমিকে কতো কষ্ট করে পেয়েছে আর ও হিমিকে কতোটা ভালোবাসে।
অধরা: আমিও তো আরশানকে খুব ভালোবাসি।
আমি: অধরা আমাদের সামনে বলেছিস ভালো কথা কিন্তু এই কথাটা যেন হিমির কান অব্ধি না পৌঁছোয়। আমি হিমিকে ভালোবাসি, আমি তোর কাছে হাত জোড় করছি প্লিজ আমাদের দুজনের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করিস না।
অধরা: কিন্তু আরশান আমিও তোকে ভালোবাসি।
আমি: আমি হিমিকে ভালোবাসি এইটা তো তোদের সবার জানা, তাহলে কেন জেনেশুনে ভুল পথে পা দিয়েছিস?
অধরা: কোনটা ভুল আর কোনটা ঠিক এসব কি মন বুঝে?
আমি: জেনেশুনে ভুল করেছিস আমার কিছু করার নেই। একটাই অনুরোধ এসব পাগলামি ভুলে আমাদের আগের অধরা হয়ে যাস। আসছি।
সিফাত: তোর না জ্বর একা যাবি কিভাবে?
আমি: আদিত্য গাড়িতে অপেক্ষা করছে।
আরিয়ান: ঠিক আছে যা।
অধরা কখনো এসব কথা বলবে আমিতো কল্পনাও করিনি। হিমির কথা জেনেশুনে অধরা এসব কথা বলতে পারলো কিভাবে?

সারা রাস্তা আদিত্যর সাথে কোনো কথা বলিনি, বাসায় পৌঁছেও কারো সাথে কথা বলিনি। চুপচাপ রুমে এসে শুয়ে পড়লাম, কিছু ভালো লাগছে না। বারবার শুধু আমি একটা কথাই ভাবছি হিমির কথা জানা সত্ত্বেও অধরা আমাকে নিয়ে এসব ভাবলো কিভাবে? কিভাবে বললো অধরা আমাকে ভালোবাসে?

গালের মধ্যে টুপটুপ করে পানি পড়ছে অনুভব করে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি হিমি আমার মাথার পাশে বসে কাঁদছে। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম রাত আট'টা দশ মিনিট বাজে, বিকেলবেলা ঘুমিয়ে ছিলাম, এতক্ষণ ঘুমালাম আমি? কিন্তু হিমি কাঁদছে কেন? হিমির একটা হাত আমার মাথায় রাখা ওর হাত ধরে ওর দিকে তাকালাম, হিমি ভেজা ভেজা চোখে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি: কি হলো কাঁদছ কেন? (হিমি চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়েই আছে)
আমি: সারাদিন রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছিলে কেন? একবারো আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয়নি? (হিমি আমার হাত থেকে ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো)
আমি: চলে যাচ্ছ কেন?
আম্মু: আরে মা চলে যাচ্ছ কেন? এই নাও ওষুধ আরশানকে খাইয়ে দাও। (হিমি আমি দুজনেই আম্মুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি)
হিমি: আন্টি আমার উপর আপনার রাগ হচ্ছে না?
আম্মু: রাগ হবে কেন?
হিমি: আমার জন্যই তো আরশানের এতো জ্বর, তখন আমাকে বললেই হতো আরশানের বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লাগে।
আম্মু: প্রিয় মানুষের খুশির জন্য এসব ছোট ছোট কষ্ট নিজেকে সহ্য করতে হয়। আরশান হিমি সন্ধ্যা থেকে ঠাই তোর মাথার পাশে বসে ছিল। (আম্মু হিমির গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে মৃদু হেসে চলে গেলেন। হিমি ওষুধ নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলো)
আমি: ওষুধ পরে খাবো আগে বল সারাদিন আমার সাথে কথা বলনি কেন?
হিমি: লজ্জায়।
আমি: কিসের?
হিমি: ভয়ংকর সেই চারদিন নিয়ে আপনার মনে যা ভাবনা কাজ করছে তার জন্য। (হিমির এই কথা শুনে সজিবের বলা কথাটা মনে পড়লো, তখন সজিব বলছিল হিমির সাথে ওর সব হয়ে গেছে। তাহলে কি হিমি বারবার এই কথাটাই আমাকে বুঝাতে চাইছে? কিন্তু আমার মনে তো এসব কোনো ভাবনা আসেনি, আর আসবেই বা কেন আমিতো হিমিকে ভালোবাসি ওর শরীরকে নয়। তাছাড়া ঐ ঘটনাটা একটা দুর্ঘটনা ছিল এতে তো হিমির কোনো দোষ ছিলনা)
হিমি: আসছি আমি।
আমি: দাঁড়াও। (হিমি উঠে চলে যেতে চাইছিল আমার কথায় মাথা নিচু করে বসে রইলো)
আমি: সকালে তুমি বলেছিলে ভালো সবাই বাসতে পারে কিন্তু নিঃস্বার্থ ভাবে ভালো সবাই বাসতে পারে না। কেন বলেছিলে এই কথা?
হিমি: সেদিনের ঘটনায় আমার কোনো হাত ছিলনা আর আমি এখন যাই বলি আপনি বিশ্বাস করবেন না। এই ঘটনা জানার পর আর আট-দশটা মানুষ যা ভাববে আপনিও তাই ভেবেছেন এতে আপনার কোনো দোষ নেই। আসলে সবাই একটা পবিত্র মেয়েকে বিয়ে...
আমি: কি বলতে চাইছ তুমি অপবিত্র?
হিমি: যদি বলি তাই?
আমি: আমার ভালোবাসা দিয়ে সব অপবিত্রতা ধুয়ে দিবো। (হিমি আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে)
আমি: বিশ্বাস করো হিমি আমার মনে এসব কোনো ভাবনা আসেনি। তবুও যদি তুমি ভয় পেয়ে থাকো তাহলে চলো কালই আমরা বিয়ে করে ফেলি। (হিমি দুহাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো)
হিমি: সরি আরশান আমি আপনাকে পরীক্ষা করার জন্য মিথ্যে বলেছি, আমি হেরে গেছি।
আমি: কিসের পরীক্ষা? (হিমি কিছু না বলে কেঁদেই যাচ্ছে। বুঝতে পারছি না হিমি কিসের পরীক্ষার কথা বললো, তাহলে কি হিমি কোনো ভাবে আমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিয়েছে? হিমির দুগালে ধরে ওর মুখ উপড়ে তুললাম, হিমি লজ্জায় আমার চোখের দিকে তাকাতে পারছে না)
আমি: জানিনা কিসের পরীক্ষা নিয়েছ, শুধু এইটুকু জেনে রাখো ভালোবাসায় কোনো পরীক্ষা চলে না যা চলে তা হলো বিশ্বাস।
হিমি আমার চোখের দিকে তাকালো, লজ্জায় ওর মুখ লাল হয়ে গেছে। আমি মুচকি হেসে হিমির কপালে চুমু দিলাম, হিমি আরো বেশি লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ গুঁজে দিলো...

চলবে😍

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com