আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ১৭ || লেখিকা: সুলতানা তমা
মেহমানদের সামনে আপু বসে আছে, সবাই কতো হাসিখুশি। কিন্তু আমি আপুর দিকে নজর রাখছি, আপুর দুচোখে পানি টলমল করছে মুখটা মলিন হয়ে আছে। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে আপু কষ্ট করে মলিন মুখে হাসি ফুঁটানোর বৃথা চেষ্টা করছে। আপু কোনো চালাকি করছে নাকি আব্বু বুঝে উঠতে পারছি না।
আদিত্য: আপুর দিকে এমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে কি দেখছ? (কানের কাছে আদিত্যর কন্ঠ শুনে আমার ঘোর কাটলো, আদিত্যর দিকে তাকালাম)
আদিত্য: কি?
আমি: কেন জানিনা মনে হচ্ছে আপু এই বিয়েতে রাজি না। আপুর দিকে দেখ চোখে পানি চিকচিক করছে, মুখটা মলিন।
আদিত্য: তাহলে বিয়ে হবে না।
আমি: তোর কি মনে হয় আব্বু সেটা মেনে নিবে? আব্বু ছেলে পছন্দ করেছেন মানে নিশ্চয় ব্যবসায়ীক কাজের লাভ খুঁজেই করেছেন।
আদিত্য: তাই বলে আমরা আপুকে কষ্টের দিকে ঠেলে দিবো?
আমি: মেহমান যাক তারপর নাহয় এসব নিয়ে কথা হবে।
আদিত্য: হুম।
খাবার টেবিলে বসে আপুকে লক্ষ করছি, আপু আঙ্গুল দিয়ে প্লেটের ভাত নাড়াচাড়া করছে আর কি যেন আনমনা হয়ে ভাবছে। মেহমান যাওয়ার পর থেকেই দেখছি আপু বারবার আনমনা হয়ে কি যেন ভাবছে।
আম্মু: কিরে আরশান খাচ্ছিস না কেন? (আম্মুর ডাকে আপু আমি দুজনেই কেঁপে উঠলাম, আপু তাড়াতাড়ি খাবার খাওয়ায় মন দিলো)
আদিত্য: আপু ছেলেকে তোমার পছন্দ হয়েছে? (আদিত্যর প্রশ্ন শুনে আপু মাথা তুলে তাকিয়ে মৃদু হাসলো)
আদিত্য: আচ্ছা আপু তুমি এই বিয়েতে রাজি তো? না মানে কোনো...
আব্বু: আদিত্য একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না? আর ফারিয়া বিয়েতে রাজি হবে না কেন? সুন্দর সুদর্শন, উচ্চ শিক্ষিত, ভালো বংশের ছেলে, টাকা পয়সা ব্যাংক ব্যালেন্স এর অভাব নেই ছেলের। এমন ছেলেই তো পাত্র হিসেবে ভালো।
আমি: আব্বু এসবের আগে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো ভালোবাসা, আগে তো দুজনের মধ্যে বুঝাপড়া...
আব্বু: বিয়ের পর এমনিতেই ভালোবাসা হয়ে যাবে।
আমি: আব্বু...
আব্বু: ইদানীং প্রেম ভালোবাসা নিয়ে একটু বেশিই ভাবছ মনে হচ্ছে? ফারিয়াকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না নিজেকে নিয়ে ভাবো। কারো কথা তো তুমি শুনোনা, শুধু একটা কথাই বলি ভুল করেও পঁচা শামুকে পা কাটতে যেওনা। (আব্বু উঠে চলে গেলেন, আপু আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। পঁচা শামুক বলতে আব্বু কি বুঝাতে চেয়েছেন?)
আম্মু: কেন যে শুধু শুধু তোর আব্বুকে রাগাতে যাস।
চাঁচি: এটাই তো তোমার ছেলে ভালো পারে।
রোদেলা: ভাইয়ারা তো ভুল কিছু বলেনি, যেখানে আপু রাজি না সেখানে বিয়ে হবে না ব্যস।
আপু: আমি কি একবারো বলেছি আমি রাজি না? তোরা কেন শুধু শুধু অশান্তি সৃষ্টি করছিস?
আমি: আপু কিছু লোকানোর চেষ্টা করিস না, আমি ঠিক সব খুঁজে বের করবো।
আপু আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে, চুপচাপ উঠে চলে আসলাম।
রুমে ঢুকে লাইট জ্বালাতেই বিছানায় ছড়িয়ে থাকা চুড়ি গুলোর দিকে চোখ পড়লো। হিমি এখনো রেগে আছে আর রাগ করাটা তো স্বাভাবিক, এভাবে হুট করে এমন মেসেজ দেখলে তো যে কারো রাগ হবে। রুমে একদম মন বসছে না গীটার হাতে নিয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালাম।
চিলকোঠোর ঘরে ডীম লাইট জ্বালিয়ে ফ্লোরে বসে আনমনা হয়ে গীটার বাজাচ্ছি আর হিমির কথা ভাবছি। হঠাৎ দরজায় চোখ পড়লো, হিমি দাঁড়িয়ে গীটার বাজানো শুনছে। গীটার রেখে হিমির দিকে তাকালাম, হিমি এগিয়ে এসে আমার পাশে বসলো।
আমি: ঘুমাওনি? অনেক রাত হয়েছে তো।
হিমি: আপনার সাথে কথা না বলা পর্যন্ত ঘুম আসছিল না। আর আজ তো হুট করে আপনার রুমেও যেতে পারিনি কারণ আপনার আব্বু বাসায়।
আমি: তাতে কি হয়েছে?
হিমি: আপনার আব্বুকে দেখলেই আমার কেমন যেন ভয় লাগে। (হিমির কথা শুনে মৃদু হাসলাম)
হিমি: আরশান সরি। (হিমি আমার কাধে মাথা রেখে এক হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো, আমি বেশ অবাক হয়েই ওর দিকে তাকালাম)
হিমি: সকালে অধরার আই লাভ ইউ লেখা মেসেজ দেখে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল তাই রেগে গিয়ে...
আমি: তারিনের সাথে কথা হয়েছে?
হিমি: হ্যাঁ।
আমি: এজন্যই মহারাণীর রাগ কমে গেছে।
হিমি: সরি। আসলে একবার প্রতারণার স্বীকার হয়েছি তো তাই এখন অল্পতেই ভয় পেয়ে যাই।
আমি: বিশ্বাস রাখো আমার উপর আমি তোমাকে ঠকাবো না। (হিমি মিষ্টি হাসি দিয়ে আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো)
আমি: সারাদিন যে আমাকে কষ্ট দিয়েছ এবার তোমাকে কি শাস্তি দেওয়া যায়?
হিমি: যা শাস্তি দিবেন মাথা পেতে নিবো।
আমি: তুমি গান গাইবে আর আমি গীটার বাজাবো।
হিমি: হ্যাঁ আর আম্মু আমার কন্ঠ শুনে এসে আমাকে আপনার সাথে দেখুক আর কাল সূর্য উঠার আগেই আমাকে নিয়ে গ্রামে চলে যাক তাই তো?
আমি: লাগবে না, তুমি দূরে গেলে আমি দম বন্ধ হয়ে মরেই যাবো।
হিমি: মরার কথা আসছে কেন?
আমি: তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো নাতো। (হিমি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো এক দৃষ্টিতে। আমি হিমির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছি, নীল ডীম লাইটের আলোতে হিমির মায়াবী মুখ আরো বেশি মায়াবী লাগছে)
হিমি: হাসছেন কেন?
আমি: রাতের আধারে পেত্নী দেখে।
হিমি: কি?
আমি: ভালোবাসি। (হিমির কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম, ও লজ্জায় দুচোখ বন্ধ করে নিয়েছে। চোখ দুটো বন্ধ, ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি, ডীম লাইটের আলো সবকিছু মিলে হিমিকে এক অদ্ভুদ সৌন্দর্য ঘিরে নিয়েছে, আমি মুগ্ধ হয়ে হিমির সৌন্দর্য দেখছি)
আমি: এইযে লজ্জাবতী? (আমার ডাকে হিমি চোখ খুলে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো)
আমি: আচ্ছা তুমি কি বিয়ের পরও এভাবে লজ্জা পাবে? (হিমি ভ্রু কুঁচকিয়ে আমার দিকে তাকালো, আমি মুচকি হাসলাম)
আমি: না মানে বিয়ের পর এভাবে লজ্জা পেলে আমরা রোমান্স করবো কিভাবে?
হিমি: আপনি সত্যিই খুব দুষ্টু। (হিমি লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ গুঁজে দিলো, ওকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু দিলাম)
হিমি: আরশান আমাদের ভালোবাসা সাকসেস হবে তো? বিয়ে হবে তো আমাদের?
আমি: আমার উপর ভরসা রাখো, আল্লাহ্ ছাড়া আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না।
হিমি: আর অধরা?
আমি: আবার অধরা?
হিমি: কথা দিন ওই বজ্জাত মেয়ের সাথে আর কথা বলবেন না।
আমি: ঠিক আছে বলবো না।
হিমি চুপচাপ আমার কাধে মাথা রেখে একহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে আর আমি গীটার বাজাচ্ছি।
সকালে হুট করে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, ঘুম ঘুম চোখে চারপাশে তাকিয়ে নিজেকে চিলকোঠোর ঘরে আবিষ্কার করলাম। হিমি আমার বুকে মুখ গুঁজে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে, ওর চুল গুলো এলোমেলো হয়ে ওর মুখে আর আমার উপরে ছড়িয়ে আছে। রাতের কথা মনে পড়লো, তারমানে গীটার বাজাতে বাজাতে এখানেই খাটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হিমির দিকে তাকালাম ওর মুখে আসা চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে দিলাম। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন এই ঘুমন্ত পরীটাকে জাগাতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু জাগাতে তো হবেই, হিমির আম্মু বা অন্য কেউ এভাবে আমাদের একসাথে দেখলে খুব বড় ঝামেলা হবে। হিমির গালে আলতো করে একটা হাত রেখে ওকে ডাকলাম...
আমি: হিমি হিমি?
হিমি: হু।
আমি: উঠে রুমে যাও।
হিমি: উঁহু। (হিমি আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, এখন তো মহাবিপদে পড়লাম)
আমি: হিমি তোমার আম্মু এসেছেন। (হিমি ধড়পড়িয়ে উঠে আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে বসলো, ঘুম ঘুম চোখে চারপাশে চোখ বোলাচ্ছে)
আমি: সরি তোমাকে জাগানোর জন্য মিথ্যে বলেছি। তোমার আম্মু তো তোমাকে খুঁজে ছাদে আসতেই পারেন, রুমে যাও।
হিমি: আম্মু যদি বুঝতে পারেন আমি যে সারারাত এখানে আপনার সা...
আমি: বুঝবে না, যাও তুমি।
হিমি: হুম।
আমি: হিমি শুনো। (হিমি চলে যাচ্ছিল আমার ডাকে থমকে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে তাকালো)
আমি: তোমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় খুব সুন্দর লাগে, মনে হয় যেন কোনো এক মায়াবী পরী ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত হিমিকে এতোটা সুন্দর লাগে জানা ছিল না আমার।
হিমি: প্রিয়জনের বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে এতোটা ভালো লাগে আমারও জানা ছিলনা।
হিমি হাসতে হাসতে দৌড়ে চলে গেলো, আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম।
রুমে এসে বিছানার দিকে নজর পড়তেই চমকে উঠলাম, চুড়ি গুলো বিছানায় নেই। কে এসেছিল আমার রুমে? চুড়ি গুলো কে নিলো?
রোদেলা: ভাইয়া চাচ্চু ডাকছেন নাশতা করবে না? (চুড়ি গুলো খুঁজছিলাম হঠাৎ রোদেলা আসলো)
আমি: তুই আমার রুমে এসেছিলি?
রোদেলা: আমিতো এখন মাত্র আসলাম, কেন কি হয়েছে?
আমি: কিছুনা যা আসছি আমি।
রোদেলা: তাড়াতাড়ি।
চুড়ি গুলো কোথায় গেল ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
আম্মু: আরশান সকালে কোথায় গিয়েছিলি? (খাবার মুখে দিতে যাবো তখনি আম্মু প্রশ্ন করলেন, সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এখন কি উত্তর দিবো?)
চাচ্চু: কোথায় ছিল মানে? রুমে ছিলনা?
আম্মু: না সকালে গিয়ে দেখলাম রুমে নেই।
আমি: রাতে গীটার বাজাচ্ছিলাম চিলকোঠোর ঘরে বসে আর ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
আব্বু: একা? (আব্বুর প্রশ্ন শুনে চমকে উঠলাম হাত থেকে খাবার পরে গেলো, আব্বু একা কিনা জিজ্ঞেস করলেন কেন? তবে কি...)
আব্বু: না মানে...
আপু: বাদ দাও না খেতে বসেছে খেতে দাও ওকে। (আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে রহস্যময়ী একটা হাসি দিলেন, তারমানে আব্বু হিমিকে আমার সাথে দেখেছেন। আপুর বিয়ের আগে এখনি হিমির কথাটা আব্বুকে জানতে দেওয়া উচিত হয়নি)
রোদেলা: আরশান ভাইয়া তুমি তো কলেজে যাওনি তাই জানোনা, কলেজ থেকে টুরে যাচ্ছে, যাবে তুমি? তুমি গেলে আমি যেতে পারবো আরকি?
আদিত্য: কেন যাবে না ভাইয়া তো এমন একটা সুযোগেরই অপেক্ষা করছিল। (আদিত্য আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে, আমি আব্বুকে লক্ষ করছি শুধু)
আব্বু: এখন কারো কোথাও যাওয়া হবে না। অসীম এর আব্বু বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলেছেন, এক সপ্তাহ পর বিয়ে।
আদিত্য: অসীম?
আব্বু: নিজেদের বোন বিয়ে দিবে অথচ যার কাছে দিবে তার নামটাই জানোনা?
আপু: অন্যরা জানার প্রয়োজন কি আব্বু? তুমি তো একাই একশ, তুমিই সবকিছু জানলে হবে।
আপু কথা গুলো বলে হাসলো, আব্বু কোনো উত্তর দিলেন না কথা গুলোর। সবকিছু কেমন যেন রহস্যের মতো লাগছে, আপু আর আব্বু কিছু একটা যে লুকাচ্ছে সেটা তো এখন স্পষ্ট।
কলেজে সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি। সিফাত গীটার বাজাচ্ছে, আরিয়ান আর শান্ত গান গাইছে, আমি আনমনা হয়ে বসে আছি। হঠাৎ শান্ত ধাক্কা দিলো আমাকে।
শান্ত: কি হয়েছেরে?
আমি: কিছুনা।
সিফাত: অধরাকে খুব মিস করছি রে, ও এভাবে বদলে যাবে কখনো ভাবিনি।
আমি: (নিশ্চুপ)
আরিয়ান: অধরার সাথে তোর আর কথা হয়েছে?
আমি: না, হিমি তো আমার ফোনটাই ভেঙ্গে দিয়েছে।
সিফাত: বিয়ের আগেই ফোন ভেঙ্গে ফেলেছে? ভাই আমি নিশ্চিত বিয়ের পর তুই কোনো ভুল করলে হিমি তোকে আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলবে। (ওরা সবাই হাসাহাসি করছে, আমি মুচকি হাসলাম এমন গুণ্ডি বউই তো হওয়া দরকার)
শান্ত: কেমন চলছে তোদের প্রেম?
আমি: আব্বু হিমির ব্যাপারে সব জেনে গেছেন।
শান্ত: কি বলছিস?
সিফাত: তোর আব্বু যেরকম আমার মনে হয় না মেনে নিবে তোদের।
আমি: হিমির পড়াশুনা নিয়ে ভাবলে হবে না তার আগেই বিয়ে করতে হবে।
আরিয়ান: কিন্তু কিভাবে?
আমি: আপুর বিয়ের পর পরই কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
শান্ত: তোর আব্বু মানবে?
আমি: মানাতে হবে।
সিফাত: চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে আর আমরা তো আছি তোর সাথে।
আমি: হুম।
"চলো না ঘুরে আসি অজানাতে!
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে"
হিমি: আরশান? (সবাই একসাথে গান গাইছিলাম হঠাৎ হিমির ডাকে থেমে গিয়ে সামনে তাকালাম, কোমড়ে হাত দিয়ে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে)
সিফাত: নে তোর গুণ্ডি বউ চলে এসেছে।
আমি: হিমি?
হিমি: কলেজে আসবেন আমাকে বলেননি কেন? একসাথে আসতে পারতাম।
আমি: তুমি যে আসবে সেটাও তো বলনি।
হিমি: এখন আমাকে দোষ দেওয়া হচ্ছে? আপনি...
আরিয়ান: এই হিমি তোকে এখনো আপনি করে কথা বলে?
আমি: হুম ও যেভাবে ডেকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে আমি সেভাবেই খুশি।
শান্ত: বাব্বাহ্ কি প্রেম।
হিমি: কি যেন গান গাইছিলেন? চলো না ঘুরে আসি অজানাতে যেখানে নদী এসে থেমে গেছে। চলুন নদীর পাড়ে ঘুরতে যাবো।
আমি: এখন?
হিমি: হুম চলুন।
হিমি আমার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে নিয়ে আসলো। আমার এক হাত জড়িয়ে ধরে হিমি হাটছে, আমি পাগলীটাকে মুগ্ধ হয়ে দেখছি। প্রেম ভালোবাসা কখনো পছন্দ করতাম না, কখনো ভাবিনি কোনো এক মায়াবতী আমার জীবনে আসবে আর এমন পাগলামি করবে।
নদীর পাড়ে বসে আছি আর হিমিকে দেখে মিটিমিটি হাসছি, হিমি কাশফুল ছুঁয়ে দিচ্ছে আর ছুটাছুটি করছে। এমন বাচ্চা মেয়ে নাকি দুদিন পর আমার বউ হবে হাহাহা!
হিমি: হাসছেন কেন? (হিমি অনেক গুলো কাশফুল হাতে করে নিয়ে এসে আমার পাশে বসলো)
হিমি: সুন্দর না এগুলো?
আমি: হুম তবে তোমার চেয়ে কম সুন্দর।
হিমি: মিথ্যে কথা, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর আর পবিত্র হচ্ছে ফুল। ফুলের সাথে মানুষের তুলনা করা বোকামি, আর আমিতো...
আমি: হিমি প্লিজ!
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: সেদিন কিন্তু আমার পরীক্ষা নিয়েছ আর আমিই জিতেছি। আদিত্য আমাকে সব বলেছে আমি সব জানি, আর মিথ্যে বলোনা প্লিজ!
হিমি: আদিত্য? হয়তো সেদিন সজিবের সাথে মিলে আমাকে কিডন্যাপ করেছিল কিন্তু এটাও সত্যি ও আর একজন ছেলের জন্য আমি আজো বেঁচে আছি আর আপনি আমাকে পেয়েছেন। সেদিন যদি ওরা সজিবকে বাধা না দিতো তাহলে আজ হয়তো...
আমি: ভুলে যাওনা ওসব, কেন শুধু শুধু ভয়ংকর দিন গুলো মনে করে নিজেকে কষ্ট দাও।
হিমি: ভুলে গিয়েছি তো, আপনাকে পেয়ে আপনার ভালোবাসায় আমি সব ভুলে গিয়েছি, নতুন করে স্বপ্ন দেখছি।
হিমি আমার কাধে মাথা রেখে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। হিমির লম্বা চুল গুলো বাতাসে এলোমেলো হয়ে আমার চোখেমুখে এসে পড়ছে, আমি আবেশে দু চোখ বুজে হিমির চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছি।
আব্বু: আরশান? (রুমে ঢুকা মাত্র আব্বু পিছু ডাকলেন। বাসায় আসা মাত্র আব্বু আমার রুমে বিষয়টা একটু সিরিয়াসই মনে হচ্ছে। শার্টের বোতাম খুলতে যাচ্ছিলাম, আবার শার্ট পরে পিছন ফিরে তাকালাম। আব্বু আমার দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিলেন। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আব্বুর দিকে তাকালাম)
আব্বু: তোমার আম্মু বললো তোমার ফোন নাকি হারিয়ে গেছে, এক সপ্তাহ পর ফারিয়ার বিয়ে অনেক কাজ বাকি। ফোনের প্রয়োজন আছে তোমার, এইটা রাখো। (আমি চুপচাপ আব্বুর হাত থেকে প্যাকেট'টা এনে বিছানায় রেখে দিলাম)
আব্বু: আসছি।
আব্বু চলে গেলেন, আমিও ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকতেই বিছানায় রাখা ফোনের দিকে নজর পড়লো, সিমটা বের করে এনে ফোন অন করলাম। আব্বু কি শুধুমাত্র আপুর বিয়ের উপলক্ষে আমাকে ফোন দিলেন নাকি অন্য কোনো কারণ আছে? এসব ভাবতে ভাবতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছিলাম হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। আশ্চর্য ফোন অন করার সাথে সাথে কে ফোন দিলো? ফোন হাতে নিয়ে সজিবের নাম্বার দেখে বেশ অবাক হয়েই রিসিভ করলাম।
আমি: হ্যালো।
সজিব: তোমার সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু দুদিন ধরে তোমার ফোন সুইচড অফ বলছে। (সজিবের মুখে তুমি? এতো নরম কন্ঠ? একটু বেশিই অবাক হলাম)
সজিব: কথা বলছ না যে? অবাক হচ্ছ? আসলে আমি সরি বলার জন্য ফোন দিয়েছি।
আমি: সরি?
সজিব: হ্যাঁ। অনেক ডিস্টার্ব করেছি তোমাকে আর হিমিকে এজন্য সরি। আর কখনো তোমাদের মাঝে আসবো না, ভালো থেকো।
আচমকা ফোন কেটে দিলো, আমি এখনো নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সজিবের ফোন দেওয়া সরি বলা সব কি সত্যি ছিল নাকি কোনো অভিনয়? হঠাৎ করে এতো পরিবর্তন এতো শান্তশিষ্ট? পরিবেশ তো ঝরের পূর্বেই শান্ত থাকে, তাহলে কি সজিব কোনো প্ল্যান করছে? হয়তো সব সজিবের অভিনয়, হয়তো বড়সড় কোনো ঝর আসতে চলেছে হিমি আর আমার জীবনে...
চলবে😍
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com