Breaking News

আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ১৪ || লেখিকা: সুলতানা তমা

হিমি সেন্সলেস হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে ডক্টর ওকে দেখছেন। সবাই হিমির রুমে ভীর জমিয়েছে, আমি হিমির মাথার পাশে বসে আছি। কিছুক্ষণ আগের হাসি খুশি মেয়েটার মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে। এভাবে সেন্সলেস হলে তো শরীর খুব দূর্বল হয়ে পড়ে হিমির নিশ্চয় খুব কষ্ট হয়। হিমিকে এই অবস্থায় দেখতে আমার একদম ভালো লাগছে না।
ডক্টর: এর আগে কখনো এমন হয়েছে?
আন্টি: হ্যাঁ কিছুদিন আগে হয়েছিল।
ডক্টর: শুধু দুদিনই? দেখুন মিথ্যে বলবেন না এতে আপনাদের মেয়েরই ক্ষতি হবে।
ভাবি: না ডক্টর হিমির এই সমস্যা দু বছর ধরে। দু বছর আগে একটা ঘটনায় হিমি খুব ভয় পেয়েছিল তারপর থেকেই মাঝেমাঝে ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়, রাতে ঘুমের মধ্যে ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠে।
ডক্টর: চিকিৎসা করান নি?
ভাবি: আসলে এমন হলে এক দু ঘন্টা পরেই আবার হিমি স্বাভাবিক হয়ে যায় তাই চিকিৎসা করানো হয়নি। কিন্তু ইদানীং এই সমস্যাটা একটু বেশিই হচ্ছে।
ডক্টর: ভয়ের প্রভাব এখনো কাটেনি, ভয় কাটাতে হবে নাহলে উনার ব্রেনে চাপ সৃষ্টি হতে পারে এমনকি উনি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যেতে পারেন। (ডক্টর এর কথা শুনে বুক ধড়পড় করে উঠলো, কি বলছে এসব ডক্টর?)
ডক্টর: আপনারা চাইলে আমার কাছেও চিকিৎসা করাতে পারেন। তবে চিকিৎসার চেয়ে বেশি যেটা জরুরী তা হলো মেয়েটাকে একা রাখা যাবে না, টেনশন করতে দেওয়া যাবে না, সবসময় হাসিখুশি রাখতে হবে। যখন সে একা থাকবে তখনি সেই ভয়ংকর ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠবে যার ফল সরূপ সে আর সেই ঘটনাটা ভুলতে পারবে না আর এমন হতেই থাকবে। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় তার মানসিক ভারসাম্যতে প্রভাব পড়বে।
ভাবি: আপনিই চিকিৎসা করুন। আর হিমিকে আমরা সবসময় দেখে রাখবো।
ডক্টর: ঠিক আছে। ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি কিছুক্ষণ এর মধ্যেই সেন্স ফিরে আসবে। কাল একবার আমার চেম্বারে এসো ওকে নিয়ে। (ডক্টর আমার উদ্দেশ্যে কথাটা বলে বেরিয়ে গেলেন। আমি নির্বাক হয়ে বসে আছি আর হিমির মলিন মুখটা দেখছি এক দৃষ্টিতে)
ভাবি: আগেই বলেছিলাম হিমিকে কোনো বড় ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাও, আমার কথা কেউ শুনেনি। এবার বুঝ, মেয়েটার না কিছু হয়ে যায়।
আমি: ভাবি এভাবে বলছেন কেন? হিমির কিছু হবে না, আমি ওকে বড় ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবো।
আন্টি: আচ্ছা বাবা তুমি আর হিমি ছাদে কি করছিলে? (আন্টির প্রশ্ন শুনে ভয়ে আতকে উঠলাম কি বলবো এখন?)
ভাবি: আসলে মা হিমি তো বৃষ্টিতে ভিজছিল আরশান হয়তো হিমির চিৎকার শুনে ছাদে গিয়েছিল।
আমি: হ্যাঁ আন্টি আমি হিমির চিৎকার শুনে গিয়েছিলাম আর তারপরই তো ওকে কোলে করে নিয়ে আসলাম।
চাঁচি: কিন্তু আদিত্য তো বললো...
আম্মু: চুপ করো না।
আপু: ভাই তোর শার্টে রক্ত কেন? ভেজা কাপড় চেঞ্জ কর নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
রোদেলা: বুকের কাছে রক্ত আসলো কিভাবে? (হিমির নখ গেঁথে গিয়ে বুক থেকে রক্ত এসেছে, কতোটা ভয় পেলে কেউ এভাবে কাউকে আঁকড়ে ধরে ভাবতেই গাঁ শিউরে উঠছে, হিমি এতোটা ভয় পায় সেন্সলেস হওয়াটা তো স্বাভাবিক)
আম্মু: আরশান যা ভিজা কাপড় চেঞ্জ করে নে।
আমি: হুম যাচ্ছি।
হিমির দিকে এক নজর তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।

ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম হিমিকে একবার দেখতে যাবো, জ্ঞান ফিরেছে কিনা কে জানে।
চাঁচি: আমি কিন্তু সব বুঝি হ্যাঁ।
আম্মু: কি বুঝ? আরশান হিমিকে ভালোবাসে তাই তো? তাতে সমস্যাটা কি? (আম্মু আর চাঁচির কথা কাটাকাটি শুনে ড্রয়িংরুমে আসলাম)
চাঁচি: সমস্যা নেই আবার আছেও, এই মেয়ে কি আরশানের যোগ্য? দেখতে কালো তার উপর মধ্যবিত্ত, আরশানের আব্বু আর চাচ্চু মানবে? কালো হলেও নাহয় আরশানের জন্য মেনে নিলো কিন্তু এই মেয়ের তো সমস্যা আছে হুট করে অজ্ঞান হয়ে যায়, কে জানে কি রোগ...
আমি: চাঁচি? আমিতো হিমিকে ভালোবাসি তাই ওর গায়ের রঙ কালো নাকি ফর্সা, ওর ভাইরা বড় লোক নাকি মধ্যবিত্ত সেটা বুঝার দায়িত্বটা আমার উপর ছেড়ে দাও। আর হিমি কেন অজ্ঞান হয়ে যায় কি রোগ ওর সবকিছু নাহয় আমাকেই বুঝতে দাও, এখন হয়তো আমি ওর প্রেমিক কিন্তু একদিন তো স্বামী হবো।
চাঁচি: এখনি এতো দূর ভাবনা?
আমি: হিমিকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই ভালোবেসে ফেলেছি আর সেদিনই ওকে আমার বউ বানানোর স্বপ্ন দেখে ফেলেছি। হিমির পড়াশুনা শেষ হবার অপেক্ষা করছি, আব্বু যদি বাধা দেন তাহলে পড়াশুনা শেষ হবার অপেক্ষা না করে খুব শীঘ্রই বিয়েটা করে নিবো। মনে রেখো চাঁচি আমি কাউকে পরোয়া করিনা, ভালোবেসেছি যখন ভালোবাসার মানুষকে যোগ্য মর্যাদা দিয়ে বউ করে আনবো।
আম্মু: আরশান?
আমি: আম্মু আমি হিমির বিরুদ্ধে আর একটা কথাও শুনতে চাই না, এই বাসায় যেন কেউ হিমির বিরুদ্ধে কথা না বলে।
আদিত্য: আম্মু তুমি শুধু শুধু ওর বিষয়ে নাক গলাচ্ছ কেন? ও তো আব্বু চাচ্চু কাউকে সম্মান করে না, তোমাকে করবে নাকি? (চলে আসছিলাম আদিত্যর কথা শুনে থমকে দাঁড়ালাম)
আমি: কে কাকে কতোটা সম্মান করে সেটার হিসেব নাহয় পরে করবো, আগে তো এইটা জানি হিমি তোকে দেখে এতো ভয় পেয়েছে কেন?
আদিত্য: এই মেয়ের রোগ আছে বুঝেছ? আমাকে দেখে ভয় পায়নি।
আমি: সেটা নাহয় হিমির মুখ থেকে আমাকে জানতে দে।
আদিত্যর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে আসলাম। আমি যদি ভুল না করে থাকি তাহলে আদিত্যই নাম পাল্টে হিমির জীবনে ঢুকেছিল। নয়তো আদিত্য আর সজীবের মধ্যে কোনো কানেকশন আছে যা হিমি জানে।

হিমির রুমের দরজায় আসতেই দেখি ভাবি হিমিকে ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। আমাকে দেখে হিমি ইশারা দিয়ে ভিতরে ডাকলো। আমি এসে হিমির পায়ের কাছে বসলাম।
ভাবি: তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে নাও তাহলে আমাকে আর কষ্ট করে ওষুধ খাওয়াতে হবে না।
হিমি: বিয়ে করে যতো দূরেই যাই না কেন তোমাকে আমি ঠিক জ্বালাবো।
ভাবি: দেখেছ তোমার বউ কি ব... এই তুমি কাঁদছ কেন? (ভাবির কথা শুনে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম, হিমির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে চোখের কোণে পানি এসে গেছে বুঝতেই পারিনি)
হিমি: কাঁদছেন কেন আমিতো সুস্থ হয়ে গেছি।(হিমির দিকে তাকিয়ে মুখে হাসির রেখা টানার বৃথা চেষ্টা করলাম)
হিমি: আরে বাবা আমি একদম সুস্থ আছি।
ভাবি: কোথায় সুস্থ জ্বর উঠে গেছে তো।
আমি: জ্বর?
ভাবি: হ্যাঁ।
আমি: ভাবি আমি হিমির সাথে একটু একা কথা বলতে চাই আপনি যদি একটু আন্টিকে...
ভাবি: ঠিক আছে আমি ওদিক সামলে নিবো।
আমি: হুম।
ভাবি: বলতে না চাইলে জোড় করো না হিতে বিপরীত হয়ে যাবে তখন। (ভাবি কথাটা আস্তে বলে চলে গেলেন, ভাবি হয়তো ভাবছেন আমি দুবছর আগের ঘটনা জানতে চাইবো। কিন্তু আমি হিমির এই অবস্থায় এসব কিছু জানতে চাইবো না, হিমি টেনশন করুক আমি চাই না। আমি শুধু হিমিকে জিজ্ঞেস করবো আদিত্যকে দেখে ভয় পেয়েছে কেন?)
হিমি: সরি।
আমি: কেন?
হিমি: আমার জন্য আপনাকে কতো ঝামেলায় পড়তে হয়।
আমি: এখন সব ঝামেলা দিয়ে দাও বিয়ের পর শুধু রোমান্স চলবে।
হিমি: আপনার মুখে না কিছু আটকায় না।
আমি: হিমি আদিত্যকে দেখে ভয় পেয়েছিলে কেন?
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: বলো। (হিমি নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে, উঠে এসে হিমির মাথার কাছে বসলাম হিমিও উঠে আধশোয়া হয়ে বসলো)
আমি: তুমি বলতে না চাইলে আমি জোড় করবো না কিন্তু তুমি একটু বুঝার চেষ্টা কর আমারও তো এসব জানা প্রয়োজন। ডক্টর বলেছে তোমাকে...
হিমি: আমার তো কিছু হয়নি ডক্টর কেন আবার?
আমি: হ্যাঁ কিছু হয়নি, তবুও তুমি আমার জন্য কাল ডক্টর এর কাছে যাবে।
হিমি: ঠিক আছে।
আমি: এবার বলো তো আদিত্যকে দেখে ভয় পেয়েছ কেন?
হিমি: উনি কে আর এই বাসায় তো আগে দেখিনি?
আমি: এজন্য ভয় পেয়েছ অচেনা বলে?
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: ও আদিত্য আমার চাচাতো ভাই, হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করে তাই আগে দেখোনি। কিন্তু তাই বলে অচেনা মানুষ দেখে এতো ভয় পাবে? (হিমি কিছু না বলে মৃদু হেসে আমার কাধে মাথা রাখলো। বেশ বুঝতে পারছি হিমি কথা লুকাচ্ছে, কেন যে ও এমন করছে। এখন তো হিমিকে জোড় দিয়ে জিজ্ঞেসও করতে পারবো না কারণ ওকে টেনশন দেওয়া বারণ)
আমি: আচ্ছা হিমি এমন নয়তো আদিত্যই সজিব আর তুমি সেটা আমার থেকে লুকাচ্ছ? (হিমি মাথা নেড়ে না করলো)
আমি: তাহলে আদিত্য...
হিমি: আমাকে খুব ভালোবাসেন তাই না? আমি একটু কষ্ট পেলে আপনিও কষ্ট পান কান্না করেন আমার জন্য।
আমি: আমি একবার অসুস্থ হই তখন বুঝবে কেমন লাগে।
হিমি: আমি আপনার কিছু হতেই দিবো না।
আমি: হুম হয়েছে এবার ঘুমাও আমি যাচ্ছি, তোমার আম্মু দেখলে আমাকে ঝাড়ু পিটা দিবে।
হিমি হাসছে, আমি ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে আসলাম।

রাতের খাওয়াদাওয়া করে আনমনা হয়ে হেটে রুমের দিকে যাচ্ছি, মাথাটা খুব ভারী লাগছে। হঠাৎ আদিত্যর কন্ঠ শুনে থমকে দাঁড়ালাম, ওর রুম থেকে কথা ভেসে আসছে। আস্তে আস্তে গিয়ে আদিত্যর রুমে উঁকি দিলাম, আদিত্য ফোনে কথা বলছে আর চেঁচামেচি করছে।
আদিত্য: দেখ আমি কখনো ভাবিনি এই মেয়ে ফিরে আসবে, এসেছে যেহেতু এই মেয়েকে তোর যা খুশি কর। এই মেয়েকে তুই বিয়ে করবি নাকি মেরে ফেলে দিবি সেটা একান্তই তোর ব্যাপার। এসবে আমাকে একদম জড়াবি না আর আমার ভাইয়ের গায়ে যেন একটা আছড়ও না লাগে। (ফোনের অপর পাশ থেকে কে কি বলছে কিছুই তো শুনতে পাচ্ছি না)
আদিত্য: দেখ আমি আবারো বলছি মেয়েটাকে যা খুশি কর কিন্তু আমার ভাইয়ের যেন কোনো ক্ষতি নাহয়। আর তুই যদি জেনেশুনে আরশান ভাইয়ার ক্ষতি করিস তাহলে তোর ব্যবস্থা আমি আব্বু আর চাচ্চুকে বলে করাবো।
আমি: কাকে হুমকি দিচ্ছিস আদিত্য? (আমার কন্ঠ শুনে আদিত্য কেঁপে উঠে ফোন কেটে দিলো)
আমি: কে আমার ক্ষতি করবে? কাকে হুমকি দিচ্ছিলি?
আদিত্য: কই নাতো।
আদিত্যর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে আসলাম। আমার সন্দেহ ভুল নাহলে আদিত্য সজিবের সাথে কথা বলছিল, আদিত্য আমার নাম নিয়েছে আর মেয়েটা হয়তো হিমি। এখন আদিত্যকে কিছু জিজ্ঞেস করলেও বলবে না, হিমি কিছুটা সুস্থ হউক তারপর নাহয় আদিত্যকে প্রশ্ন করবো।

রাতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি, সকালে প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো। মাথা খুব ভারী হয়ে আছে শরীর দূর্বল লাগছে, জানিনা কি হয়েছে। আস্তে আস্তে উঠে বিছানায় বসলাম। সকালের শীতল বাতাসে একটু হাটাহাটি করলে ভালো লাগবে হয়তো তাই ছাদের দিকে রওনা দিলাম।

ছাদের দরজায় আসতেই হিমির কন্ঠ শুনতে পেলাম এতো সকালে হিমি উঠে পড়েছে? ও তো অসুস্থ। কিন্তু হিমি কথা বলছে কার সাথে? একটু এগুতেই দেখি আদিত্য হিমিকে চিলকোঠোর ঘরের দেয়ালের  সাথে চেপে ধরে ভয় দেখাচ্ছে আর হিমি ছুটার জন্য চেষ্টা করছে।
হিমি: ছাড়ুন।
আদিত্য: হুম ছেড়ে দিবো কিন্তু আমার কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও, দু বছর আগের ঘটনা যেন ভাইয়া না জানতে পারে। যদি ভাইয়া কিছু জেনেছে তাহলে তোমাকে সজিবের হাতে তুলে দিবো। (সজিবের কথা শুনে হিমি ভয়ার্ত চোখে আদিত্যর দিকে তাকালো, আদিত্য মৃদু হাসলো)
আদিত্য: আমার ব্যাপারে যেন ভাইয়া কিছু না জানে, যদি কিছু বলেছ তাহলে দুবছর আগে যেটা হয়নি সেটা হয়ে যাবে। কি বলবে ভাইয়াকে?
হিমি: ছাড়ুন প্লিজ!
দাঁড়িয়ে ছিলাম যেন ওদের কথা শুনে কিছু বুঝতে পারি কিন্তু হিমি তো এখন ভয় পেয়ে কাঁদছে। দৌড়ে হিমির কাছে আসলাম।

আমাকে দেখে হিমি আদিত্যকে ধাক্কা মেরে ফেলে ছুটে আমার কাছে চলে আসলো, আমাকে জড়িয়ে ধরে হিমি কাঁদছে।
আদিত্য: আরে ভাইয়া।
আমি: হিমি কাঁদছে কেন? তুই এখানে হিমির কাছে কি করছিলি?
আদিত্য: আরে ভাবি তো ছাদে বসে ছিল আমি দেখে কাছে আসলাম এখন কেমন আছে জিজ্ঞেস করবো বলে কিন্তু ভাবি তো গতকালের মতো ভয় পেয়ে গেছে।
আমি: তাই?
আদিত্য: হ্যাঁ তাই আর কি কারণ হবে।
হিমি: না আরশান ও মিথ্যে বলছে, ও তো আমাকে...
আমি: কেঁদোনা, আদিত্য আমি তোর সব কথা শুনেছি। রাতে ফোনে কাকে যেন হুমকি দিলি এখন আবার হিমিকে দিচ্ছিস, এসব কি চাচ্চুকে বলবো?
আদিত্য: আশ্চর্য তো কি বলবে আমি করেছিটা কি?
হিমি: আপনি কিছু করেননি তাই না? আপনি তো দুবছর আগেই যা করার করেছিলেন, এখন আবার নতুন করে আমার জীবনে এসেছেন।
আদিত্য: এই মেয়ে একদম চুপ। (আদিত্যর ধমক শুনে হিমি ভয় পেয়ে আমার পিছনে এসে লুকালো)
আমি: নিজের পাপ ঢাকার জন্য হিমিকে হুমকি দিচ্ছিস এখন আবার ধমক দিচ্ছিস, তোর সাহস হয় কি করে ওকে ধমক দেওয়ার।
আদিত্য: তুমি না এই মেয়ের প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছ তাই আমার দোষ দেখতে পাচ্ছ। আসলে তো ও একটা খারাপ মেয়ে তাই আমার নামে মিথ্যে বলছে।
আমি: যতোটুকু বলেছিস ততোটুকুতেই থেমে থাক, এর বেশি কিছু বললে তোকে এখানেই মেরে ফেলে রাখবো।
আদিত্য: এই বাজে মেয়েটার জন্য তুমি আমাকে মারবে?
আমি: আবার? তোকে আমি...
হিমি: আরশান ওকে ছাড়ুন, ও তো খারাপ ওর সাথে ঝগড়া করলে আপনারই সম্মান যাবে আপনার আম্মু কষ্ট পাবেন।
আদিত্য: এই মেয়েটার জন্য তুমি আমার সাথে এমন ব্যবহার করলে? এই মেয়েকে তুমি কতদিন আগলে রাখো দেখবো, এই মেয়ে কতদিন তোমার হয়ে থাকে আমি দেখবো।
আমি: তোকে... (আদিত্যকে মারতে যাচ্ছিলাম কিন্তু হিমি আটকে দিলো। আদিত্য রাগে গজগজ করতে করতে নিচে চলে গেলো)
হিমি: আপনি যে আমার জন্য নিজের ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করছেন এইটা কি ভালো? যখন মানুষ জানবে একটা মেয়ের জন্য দুভাই এর মধ্যে ঝগড়া হয়েছে তখন কি আমার সম্মান আর থাকবে?
আমি: সব তোমার জন্য হয়েছে, আমাকে কিছুই বলছ না তুমি। আমাকে সবকিছু বললে তবেই না আমি সজিবকে শাস্তি দিতে পারবো। না তুমি আমাকে বলবে কেন? আমি কে? হিমি আমার কি মনে হচ্ছে জানো তুমি আমাকে ভালোই বাস না।
হিমি: আরশান?
আমি: যদি ভালোবাসতে তাহলে আপন ভাবতে পারতে বিশ্বাস করতে। তুমি তো আমাকে আপন ভাবো না তাই সবকিছু লুকিয়ে রেখেছ।
হিমি: তা নয়...
আমি: তাহলে কি? কেন আমাকে বলছ না দুবছর আগে কি হয়েছিল? কেন ভীতু মেয়ের মতো এখনো সেই ঘটনা মনের মধ্যে পুষে রাখছ? তুমি তো চেষ্টা করলেই ভয় কাটিয়ে উঠতে পারো।
হিমি: কোন ভয় কাটিয়ে উঠবো? মন থেকে সজিবকে ভালোবেসেছিলাম আর ও আমার সাথে প্রতারণা করেছে সেইটা? নাকি আমি সজিবের সাথে ফিজিক্যাল রিলেশনে যাইনি বলে আমাকে কিডন্যাপ করে চারদিন একটা অন্ধকার রুমে আটকে রেখেছিল সেইটা? (হিমির কথা শুনে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম, হিমি ছাদে বসে পাগলের মতো কাঁদছে)
হিমি: আমি সেই চারদিনের কথা ভুলতে পারিনা, আমার চোখের সামনে সবসময় এগুলো ভাসে। আমি অন্ধকার ভয় পাই রাতে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাই, ঘুমের মধ্যে সেই অন্ধকার রুম দেখতে পাই। বলতে পারেন আমি কি করে অন্ধকার ঘরের কথা ভুলবো?
হিমি চিৎকার করে কাঁদছে, ওর পাশে বসে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। এখন বুঝতে পারছি হিমি কেন কথা লুকাতো, এসব ওকে মনে না করালেই ভালো হতো। নিজের ইচ্ছায় হিমিকে এতোটা কষ্ট দিলাম, এখন তো হিমির কান্না দেখে আমার চোখ থেকেও টুপটুপ করে পানি পড়ছে। মনে হচ্ছে আমার কলিজায় কেউ ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করেছে, খুব কষ্ট হচ্ছে, হিমির কষ্ট সহ্য করতে পারছি না...

চলবে😍

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com