আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ২০ || লেখিকা: সুলতানা তমা
হিমি হিমি? (হিমি আমার হাতের ব্যান্ডেজে হাত বোলাচ্ছিল হঠাৎ ওর ভাইয়ার কন্ঠ শুনে কেঁপে উঠে দুজনে ছিটকে দূরে সরে গেলাম)
হিমি: এবার কি হবে আরশান?
আমি: ভয় পেয়ো না।
ভাইয়া: হিমি? (ভাইয়া হিমিকে ডাকতে ডাকতে রুমে এসে আমাকে দেখে রাগি চোখে তাকালেন, পরিস্থিতি যে খুব খারাপ হবে সেটা ভাইয়ার লাল বর্ণের চোখ দেখেই বুঝতে পারছি। হিমির দিকে তাকালাম ভয়ে কাঁদতেছে)
ভাইয়া: তুমি এই রুমে কেন?
হিমি: ভাইয়া আ...
ভাইয়া: আমি ওর সাথে কথা বলছি।
আমি: ভাইয়া হিমিকে দেখতে এসেছিলাম।
ভাইয়া: হিমি তুই আমাকে কি কথা দিয়েছিলি?
হিমি: ভাইয়া সরি, আমি...
ভাইয়া: তুই আমাকে কি কথা দিয়েছিলি? (ভাইয়ার ধমকে হিমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, আমি কি করবো বুঝতেই পারছি না)
ভাবি: কি হয়েছে ওকে ধমকাচ্ছ কেন? (ভাবি দৌড়ে এসে হিমিকে জড়িয়ে ধরলেন)
ভাইয়া: তুমি সব জানতে তাই না? আমাকে কিছু বলনি কেন?
ভাবি: বললে তুমি হিমিকে এখানে রাখতে?
ভাইয়া: ও আমাকে কথা দিয়ে...
ভাবি: হ্যাঁ কথা দিয়েছিল, তখন পরিস্থিতি ওকে বাধ্য করেছিল কথা দিতে। মানুষের মনের উপর কোনো জোর খাটে না, ভালোবাসা কখনো বলে আসেনা। হিমির অজান্তেই ওর মনে যদি আরশানের জন্য ভালোবাসা জন্ম নেয় তাহলে এতে ওর কি দোষ?
ভাইয়া: ভালোবাসা শিখাচ্ছ আমাকে?
ভাবি: না, শুধু এইটুকু বুঝানোর চেষ্টা করছি ভালোবাসা অন্যায় নয়, হিমি ভালোবেসে ভুল করেনি।
ভাইয়া: ভালোবাসা অন্যায় নয় কিন্তু ভুল মানুষকে ভালোবাসা অন্যায়।
ভাবি: হ্যাঁ হিমি সে ভুলটা একবার করেছিল সজিবকে ভালোবেসে। কিন্তু আরশান এমন ছেলে নয়, আমরা তো এই বাসায় অনেক দিন হলো আছি, আরশানকে দেখেছি ওর পরিবারকে দেখেছি সবাই খুব ভালো।
আন্টি: প্রথমে সবাই ভালো থাকে কিন্তু পরে...
আমি: আন্টি আমি এখন হিমিকে যেমন ভালোবাসি সারাজীবন তেমনি ভালবাসবো।
আন্টি: এসব সবাই বলে।
আমি: কতজনকে দেখেছেন আমি জানিনা তবে আমার উপর ভরসা রাখতে পারেন।
ভাইয়া: তাহলে তোমার আব্বুর সাথে আমি কথা বলছি।
আমি: আব্বুকে এখনি কিছু বলতে পারবো না কারণ...
ভাইয়া: কারণ তুমি হিমিকে সত্যি ভালোবাস না, তুমি তোমার পরিবারে হিমির কথা জানাতে চাচ্ছ না।
আমি: সেটা নয় ভাইয়া, আপুর বিয়ে মিটে গেলেই আমি আব্বুকে হিমির কথা বলবো।
আন্টি: তার কোনো প্রয়োজন নেই, হিমিকে ভুলে যাও তুমি।
আমি: আন্টি...
ভাবি: সজিব ভুল করেছিল কিন্তু সজিবের ভুলের শাস্তি তোমরা আরশানকে কেন দিচ্ছ?
ভাইয়া: কারণ ওদের ভালোবাসাটাই সত্যি না।
আমি: ভাইয়া আমি কি করলে আপনি বিশ্বাস করবেন আমি যে হিমিকে সত্যি ভালোবাসি? (আমার প্রশ্ন শুনে ভাইয়া আর আন্টি আমার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালেন)
ভাইয়া: পরীক্ষা দিবে? (ভাইয়ার প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসলাম)
আমি: প্রয়োজন হলে তাই দিবো।
ভাইয়া: সুযোগ বুঝে আমি ঠিক তোমার পরীক্ষা নিয়ে নিবো। এবার তুমি আসতে পারো।
হিমির দিকে একনজর তাকিয়ে চুপচাপ চলে আসলাম।
শান্ত: একদিকে হিমির ভাইয়া আর আম্মু রাজি না অন্যদিকে তোর আব্বু, কি করে কি হবে বুঝতেই পারছি না। (জানালার পাশে বসে আনমনা হয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম, শান্তর কথা শুনে ওদের দিকে তাকালাম)
সিফাত: এজন্যই বলি প্রেম না করাই ভালো।
আমি: তোরা এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? সত্যিকারের ভালোবাসা এতো সহজে জয় করা যায় না, বাধা আসবেই আর সে বাধা পেরিয়েই জয় করতে হবে।
আরিয়ান: তোর ভিতরে কি কোনো ভয় নেই?
আমি: আছে তো হিমিকে হারানোর ভয়।
শান্ত: একবার তো মরতে মরতে বেঁচে এসেছিস আবার না সজিব তোর প্রাণটাই নিয়ে নেয়। (শান্তর কথার কোনো জবাব না দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলাম)
আরিয়ান: আদিত্য তো সজিবের বাসা জানে সজিবকে পুলিশে দিলে কেমন হয়?
সিফাত: তোর কি মনে হয় আরশানকে এভাবে মেরে সজিব বাসায় আরামে ঘুমাচ্ছে? (ওরা কথা বলছে, ওদের কথায় কান না দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম)
আমি: আসছি আমি।
শান্ত: কোথায় যাচ্ছিস?
শান্তর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে আসলাম।
আপু বিছানায় বসে আছে আর আপুর চারপাশে অনেক মেয়েরা আপুকে ঘিরে রেখেছে। দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আপুকে এক দৃষ্টিতে দেখছি, সবার মুখে হাসি শুধু আপুর মুখটাই মলিন।
--আরে আরশান? ভিতরে আসছ না কেন? (আপুর বান্ধবীর কথা শুনে আপু দরজার দিকে তাকালো)
আপু: ভাই? ভিতরে আয়। (ভিতরে ঢুকে বিছানায় একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম, লাল টুকটুকে বেনারসি আর অনেক গয়না পরে আছে বিছানায়)
আপু: কুড়িয়ে কুড়িয়ে হেটে তুই আসতে গেলি কেন আমাকে ডাকলেই পারতি। (আপুর কথার জবাব না দিয়ে বেনারসিটা হাতে নিলাম)
আপু: এভাবে কি দেখছিস? শাড়িই তো এইটা।
আমি: হুম শাড়ি, তবে এই শাড়িটা নিয়ে প্রত্যেক মেয়ের অনেক স্বপ্ন থাকে। প্রতিটা মেয়েই স্বপ্ন দেখে এই শাড়িটা পরে কার জন্য বউ সাজবে।
আপু: কি বলতে চাইছিস? (আপুর বান্ধবীদের দিকে তাকালাম সবাই চুপচাপ বেরিয়ে গেলো রুম থেকে)
আপু: আরশান সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে এসেছে...
আমি: তো?
আপু: রাতে আমার বিয়ে আর তুই এখন এসব আবোলতাবোল বকছিস।
আমি: রাতে বিয়ে, আরো কয়েক ঘন্টা পর। আপু বিয়েটা এখনো হয়ে যায়নি।
আপু: তো?
আমি: বিয়েটা ভেঙ্গে দিবি আর যাকে ভালোবাসিস তাকে বিয়ে করবি।
আপু: আমি কাউকে ভালোবাসি না।
আমি: যে ভাইকে এতো ভালোবাসিস তাকেই মিথ্যে বলছিস? তোর চোখ দুটো তো আমাকে সত্যিটা বলে দিয়েছে।
আপু: (নিশ্চুপ)
আমি: ছেলেটার নাম কি?
আপু: কোন ছেলে?
আমি: আপু বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু।
আপু: বাড়াবাড়ি তো করছিস তুই, কয়েক ঘন্টা পর আমার বিয়ে আর তুই এখন বিয়ে ভাঙ্গার চেষ্টা করছিস। একবার ভেবে দেখেছিস এখন বিয়েটা ভেঙ্গে গেলে যে লোকে মন্দ বলবে?
আমি: একবার এই বিয়েটা হয়ে গেলে যে সারাজীবন তুই যন্ত্রণার আগুনে পুড়ে ছাই হবি তখন কি লোকে গিয়ে দেখবে? নাকি তোর চোখের পানি কেউ মুছে দিবে? সবসময় লোকের ভয় পেলে চলে না আপু, মাঝেমাঝে নিজের মনের কথা শুনতে হয়।
আপু: আমি বিয়েটা মন থেকেই করছি।
আমি: তাই?
আপু: হুম।
আমি: সত্যি কখনো চাপা থাকে না আপু, একদিন আমি ঠিক সত্যিটা জানতে পারবো। আর সেদিন তোর সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
আপু: আরশান?
আমি: চিৎকার করে লাভ নেই বুঝেশুনে বিয়েটা করিস।
আপু আমার দিকে তাকিয়ে নিশ্চুপে চোখের পানি ফেলছে, চুপচাপ চলে আসলাম আপুর সামনে থেকে।
দুহাতে মাথা চেপে ধরে বিছানায় বসে ছিলাম হঠাৎ আম্মু এসে রুমে ঢুকলেন, আম্মুর হাতে খাবারের প্লেট।
আম্মু: আরশান খাবারটা খেয়ে নে।
আমি: (নিশ্চুপ)
আম্মু: কিরে খাবি না?
আমি: ইচ্ছে করছে না।
আম্মু: এইটা কেমন কথা? সকালে তো কিছুই খাসনি, এখনো খাবি না?
আমি: আম্মু একটা প্রশ্ন করবো? (আম্মু আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে খাবারের প্লেট টেবিলে রেখে আমার পাশে এসে বসলেন তারপর আমার মাথায় হাত রাখলেন)
আম্মু: বল।
আমি: তুমি তো জানো আমি হিমিকে ভালোবাসি, আব্বু যদি রাইসার সাথে আমার বিয়েটা দেন তাহলে তুমি কি করবে?
আম্মু: (নিশ্চুপ)
আমি: একটা কথা তো সত্যি আমি রাইসার সাথে কখনো সুখী হবো না কারণ হিমিকে কখনো ভুলতে পারবো না। পারবে তো সারাজীবন আমার চোখের পানি সহ্য করতে? (আম্মু আমার দিকে নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছেন)
আমি: আব্বু সবসময় যা চেয়েছেন তাই হয়েছে, এবারো কি আব্বুর কথায় সব হবে? আব্বুর জন্য কি সারাটা জীবন ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণায় কাঁদবো?
আম্মু: না। তোর আব্বুর কথায় সব হলেও তোর বিয়েটা আমি অন্য কারো সাথে হতে দিবো না। তুই হিমিকে নিয়ে সুখে থাকলে আমি হিমিকেই তোর বউ করে আনবো, প্রয়োজন হলে তোর আব্বুর বিরুদ্ধে যাবো।
আমি: তাহলে আপুর বেলায় উল্টো কেন আম্মু? আমি তোমার ছেলে, আপু তোমার মেয়ে নয়?
আম্মু: মানে? (আম্মু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন তারমানে আম্মু কিছু জানেন না)
আমি: আম্মু আপু কাউকে ভালোবাসে কিন্তু এই বিয়েটা আপুকে করতে হচ্ছে শুধুমাত্র আব্বুর জন্য।
আম্মু: কি বলছিস এসব?
আমি: আব্বু আপুকে বিয়েটা করতে বাধ্য করেছে। আপু সব নীরবে সহ্য করে যাচ্ছে কাকে ভালোবাসে সেটাও বলছে না।
আম্মু: এতোদিন বলিসনি কেন আমাকে এসব?
আমি: আপু আব্বুর কথায় নিজের সুখটাকে এভাবে বিসর্জন দিবে আমি ভাবতে পারিনি।
আম্মু: তুই খেয়ে নে আমি আসছি।
আমি: আপুর বিয়ে না আটকানো পর্যন্ত আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে না আম্মু।
আম্মু: আমার উপর ভরসা রাখ।
আম্মু চলে গেলেন। জানিনা আম্মু কি করবেন, বিয়েটা আদৌ আটকাতে পারবেন কিনা।
দুচোখ বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে ছিলাম হঠাৎ দরজা আটকানোর শব্দে বিরক্ত হয়ে চোখ মেলে তাকালাম, হিমিকে দেখে বিরক্তি কেটে গিয়ে মুখে মুচকি হাসি ফুঁটলো। হিমি দরজা বন্ধ করে এসে আমার পাশে বসলো, ওর মুখে হাসি দেখে ভ্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম।
হিমি: বলবো না।
আমি: কি?
হিমি: গুড নিউজ।
আমি: বলো। (হিমি মৃদু হেসে আমার বুকে তুথুনি রেখে আমার দুচোখে চোখ রাখলো)
আমি: কি হলো বলো।
হিমি: ছোট ভাইয়া আসছে আজ।
আমি: তো?
হিমি: ভাইয়া বলেছে এসে প্রথমেই তোমার সাথে দেখা করবে কথা বলবে আর তোমাকে ভাইয়ার পছন্দ হলে বড় ভাইয়াকে রাজি করাবে। আমার আরশান তো দেখতে মাশাআল্লাহ্ খুব সুন্দর আ... (হিমির দিকে তাকিয়ে আমি হাসছি দেখে ও থেমে গেলো, বোকার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি এখনো হেসে যাচ্ছি ওর পাগলামি দেখে)
হিমি: কি হলো?
আমি: যে মায়াবতী আমাকে সবসময় আপনি করে কথা বলে সে আজ এতোটাই খুশি হয়েছে যে খুশিতে তুমি করে বলে ফেলেছে। (আমার কথা শুনে হিমি দুচোখ বন্ধ করে জিহ্বায় কামড় দিলো। মুচকি হেসে দুহাতে হিমির দুগালে আলতো করে ধরলাম, হিমি শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: তোমার মুখ থেকে তুমি ডাক শুনতে মাঝেমাঝে খুব ইচ্ছে হতো কিন্তু কখনো তোমাকে জোড় করিনি। কারণ আমি জানতাম একদিন তুমি নিজ থেকেই বলবে।
হিমি: হুম আজ আমি অনেক খুশি আর এই খুশিতেই বলে ফেলেছি।
আমি: এখন থেকে সবসময় বলবে কেমন?
হিমি: ঠিক আছে।
আমি: তোমার ছোট ভাইয়া রাগ করেনি আমাদের রিলেশনের কথা শুনে?
হিমি: করেছিল কিন্তু পরে আবার রাজি হয়ে গেছে। যদি একবার ভাইয়া তোমাকে পছন্দ করে ফেলে তাহলে আমাদের বিয়েটা আর কেউ আটকাতে পারবে না।
আমি: হুম খুব শীঘ্রই সবাইকে রাজি করিয়ে বিয়ে করে ফেলবো, আমি তোমাকে হারাতে চাই না।
হিমি: কিন্তু তোমার আব্বু? (হিমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলো ওর দুচোখে ভয়ের ছাপ)
আমি: ভয় পেয়ো না সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্। (হিমি চুপচাপ আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো, দুহাতে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। আব্বুকে ভয় আমিও পাচ্ছি কারণ উনি যা চান তা জেদ করে হলেও করেন। কিন্তু এই ভয়টা হিমিকে বুঝতে দেওয়া যাবে না)
হিমি: আরশান? (হঠাৎ হিমির ডাকে আমার ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো, বুকে শুয়েই হিমি আমাকে ডাকছে)
আমি: কি?
হিমি: রাইসা তোমাকে ভালোবাসে তাই না? (হিমির গলাটা ধরে আসছে তারমানে কান্নারা ওর দুচোখে ভীড় জমিয়েছে। উঠে বসে হিমির একদম কাছে এসে ওর দুগালে আলতো করে ধরলাম। আমার চোখের দিকে তাকাতেই ওর দুচোখ থেকে টুপটুপ করে দু ফোঁটা পানি পড়ে গেলো, মৃদু হেসে ওর চোখের পানি মুছে দিলাম)
আমি: হিমি একটা মানুষকে অন্যজন ভালোবাসবে পছন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক। একজন মানুষকে অন্য একজন মানুষের পছন্দ হতেই পারে তাই বলে কি তাকে সে মানুষটাও ভালোবাসে? আমাকে তো রাইসা অধরা দুজনেই ভালোবাসে আমি কি তাদের ভালোবাসি?
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: সজিব তো তোমাকে ভালোবাসে তুমি কি সজিবকে ভালোবাস? খুঁজ নিয়ে দেখো তোমার অজান্তে অনেকেই তোমাকে পছন্দ করে কিন্তু তাই বলে কি তাকে নিয়ে ভাবতে হবে? আল্লাহর সব সৃষ্টিই সুন্দর আর তার মধ্যে অন্যতম মানুষ, একজনকে আরেকজন পছন্দ করতেই পারে।
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: লোকে বলে না তাকে বিয়ে করা উচিত যে তোমাকে ভালোবাসে? আমি এইটা মানিনা, আমার মতে তাকে বিয়ে করা উচিত যাকে আমি ভালোবাসি আর সে আমাকে ভালোবাসে। অধরা আর রাইসা তো আমাকে ভালোবাসে তাই বলে কি আমি তাদের বিয়ে করবো? নাতো, আমি তোমাকে বিয়ে করবো কারণ আমি তোমাকে এবং তুমি আমাকে দুজন দুজনকে ভালোবাসি। (হিমি ভেজা ভেজা চোখে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, মুচকি হেসে ওর কপালে কপাল ঠেকালাম)
আমি: আমার ভালোবাসা তুমি, আমার ভালো লাগা তুমি, আমার ধ্যানধারণা চিন্তাভাবনা সবকিছুতে তুমি, আমার গল্পে তুমি, আমার এই জীবনের গল্পে এই মায়াবতী ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের জায়গা নেই, বুঝেছ মায়াবতী? (হিমি কাঁদতে কাঁদতে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো, হঠাৎ করে মাথা যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠলাম)
হিমি: কি হয়েছে আরশান?
আমি: মাথা যন্ত্রণা করছে।
হিমি: চুপচাপ শুয়ে পড়ো।
আমি: হুম।
হিমির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম। হিমি আমার চুলে হাত বুলাচ্ছে আর আমি দুচোখ বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছি।
হঠাৎ সবার চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গলো, ঘুম ঘুম চোখে পাশে তাকালাম হিমি নেই। সবার চেঁচামেচি শুনে দরজার দিকে তাকাতেই দেখি আম্মু, আপু, অধরা, হিমি, ভাবি, আর হিমির ভাইয়া হয়তো উনি। কিন্তু হিমি এভাবে কাঁদছে কেন?
আপু: আরশান এসব কি? (আপুর প্রশ্ন শুনে বোকার মতো সবার দিকে তাকিয়ে আছি, কিছু বুঝতেই পারছি না)
ভাবি: রুদ্র এসেছিল তোমার সাথে হিমির বিয়ে নিয়ে কথা বলতে আর তুমি... ছিঃ!
ভাইয়া: হিমি এই তোর আরশান? এই তোর ভালোবাসা? (হিমি পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে আর আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দুচোখের পানি ঝরাচ্ছে। কিছু বুঝতে না পেরে আস্তে আস্তে উঠে বিছানায় বসলাম)
আপু: অধরা?
অধরা: আমার কোনো দোষ নেই আপু আরশান আমাকে ফোন করে আসতে বলেছিল। আসলে সবসময় তো আমরা বাইরেই... এখন তো আরশান অসুস্থ তাই...
আপু: একদম চুপ, বেরিয়ে যাও। (আপুর ধমক শুনে অধরা ফ্লোর থেকে ওর ওড়নাটা তুলে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে গেলো)
ভাবি: আরশান তুমি কিছু বলছ না কেন?
আমি: কি বলবো ভাবি? আমিতো কিছু বুঝতেই পারছি না। (হিমির ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসছে দেখে ভয়ে আতকে উঠলাম)
ভাইয়া: এগুলো কি? তোমার সারা মুখে ওই নষ্ট মেয়েটার ঠোঁটের ছাপ, মেয়েটাকে খারাপ অবস্থায় তোমার বুকে দেখেছি এরপরও বলবে তুমি কিছু বুঝতে পারছ না? (ভাইয়ার কথা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, ঘুমানোর আগে হিমি ছিল আমার পাশে কিন্তু ঘুমানোর পর কি হয়েছে কিছুই তো...)
ভাইয়া: হিমির কান্না শুনে বাহির থেকে দেশে ছুটে এসেছি, হিমি যখন বললো তুমি খুব ভালো ছেলে তখন অতীতের সব ভুলে গেলাম। আমাদের বোন সুখে থাকলে ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকবো তাই তোমার কাছে এসেছিলাম আর তুমি কিনা হিমিকে এভাবে ঠকাচ্ছ ওর চোখের আড়ালে?
আম্মু: তোমাদের সবার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে আমার ছেলে এরকম নয়, আরশান হিমিকে সত্যি ভালোবাসে।
হিমি: তোমার গল্পে মায়াবতী ছাড়া আর কোনো মেয়ের জায়গা নেই কিন্তু একটা নষ্টা মেয়ের জায়গা ঠিকই আছে তাই না আরশান?
আমি: হিমি তুমি অন্তত আমাকে ভুল বুঝ না।
হিমি: অনেক হয়েছে আরশান অনেক ঠকিয়েছ আমায় আর না প্লিজ! (হিমি কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে গেলো)
ভাইয়া: যদি হিমি তোর কারণে খারাপ কিছু করে বসে তাহলে তোকে আমি খুন করে ফেলবো।
ভাইয়া আমার শার্টের কলার চেপে ধরে কথা গুলো বলে চলে গেলেন। এতক্ষণে লক্ষ করলাম আমার শার্টের বোতাম খুলা, তারমানে অধরা আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব করেছে। কিন্তু আমি সবাইকে এইটা বিশ্বাস করাবো কিভাবে? আম্মু, আপু, ভাবি সবাই একে একে চলে যাচ্ছে আমি সবার পথপাণে চেয়ে আছি, আমার দুচোখ দিয়ে বৃষ্টির মতো পানি পড়ছে। বারবার শুধু একটা কথা মনে হচ্ছে, অধরা আমার বন্ধু হয়ে আমার এতো বড় ক্ষতি করতে পারলো? অধরা কি এসব ইচ্ছে করে করেছে নাকি কারো ইশারায় করেছে? প্রশ্নটা বারবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে...
চলবে.........
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com