Breaking News

আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ২১ || লেখিকা: সুলতানা তমা

খাটে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আছি আর ভাবছি কি থেকে কি হয়ে গেলো। হিমির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলাম বুঝতে পারিনি ঘুম ভেঙ্গে হিমির দুচোখে পানি দেখতে হবে আর এতসব কিছু ঘটে যাবে। প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণায় ঘুমে এতোটাই কাতর ছিলাম যে হিমি কখন গিয়েছে আর অধরা কখন আমার রুমে এসেছিল বুঝতেই পারিনি। এখন আমি কি করবো আমাকে তো কেউ বিশ্বাস করছে না।
আম্মু: আরশান? (আম্মুর ডাকে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম, আম্মু এসে আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত রাখলেন। আম্মুকে ঝাপটে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম)
আম্মু: পাগল ছেলে কাঁদছিস কেন?
আমি: আম্মু বিশ্বাস করো আমি কিছু জানতাম না, অধরা আমাকে ফাঁসানোর জন্য এমন করেছে। আমিতো হিমির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তারপর কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারিনি।
আম্মু: আমি জানি আমার ছেলে এরকম নয়।
আমি: কিন্তু হিমি তো আমাকে ভুল বুঝেছে, হিমির পরিবারের কাছে আমি ছোট হয়ে গেলাম আমাদের ভালোবাসা ছোট হয়ে গেলো। এরকম লজ্জার থেকে মৃত্যুও ভালো আম্মু।
আম্মু: চুপ কিসব বলছিস? কেউ তোকে ফাঁসানোর জন্য এমন করেছে বলে যে তুই সত্যি খারাপ হয়ে গেছিস তাতো নয়। আর কেউ না জানুক আমিতো জানি আমার সন্তান কেমন। আমি হিমিকে বুঝাবো তুই টেনশন করিস না।
আমি: হিমি বুঝবে না আম্মু কারণ হিমি নিজের চোখে অধরাকে আমার বুকে দেখেছে।
আম্মু: যা চোখে দেখা যায় তা যে সবসময় সত্যি হয় এমন তো না, হিমি ঠিক বুঝবে কারণ ও তোকে ভালোবাসে। আমি হিমিকে বুঝাবো আর অধরাকে ধরে এনে সত্যিটাও প্রমাণ করবো, তুই কান্না বন্ধ কর। (হঠাৎ হিমিদের ফ্ল্যাট থেকে চিৎকার চেঁচামেচি ভেসে আসলো, চোখের পানি মুছে আম্মুর দিকে তাকালাম)
আম্মু: কি হয়েছে বলতো ওদের ফ্ল্যাট থেকে এতো চেঁচামেচি শুনা যাচ্ছে কেন?
আমি: বুঝতে পারছি না আম্মু।
আম্মু: হিমি কিছু করে বসেনি তো?
আম্মুর কথা শুনে ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো, এক মুহূর্ত দেরি না করে হিমিদের ফ্ল্যাটের দিকে ছুটলাম।

হিমি দরজা বন্ধ করে ফেলেছে আর সবাই ওকে দরজা খুলার জন্য ডাকছে, ছোট ভাইয়া দরজায় ধাক্কাচ্ছেন।
তারিন: দরজা খুল হিমি দেখ আরশান ভাইয়া এসেছে।
ভাবি: আরশান তুমি ডেকে দেখো না হিমি দরজা খুলে কিনা।
আন্টি: প্রয়োজন নেই, হিমি তো মাঝেমধ্যেই এমন করে। কিছুক্ষণ পর হিমি নিজেই দরজা খুলবে সবাই যাও। (আন্টির কথায় কেন যেন শান্ত হতে পারলাম না, অন্যদিন হিমির দরজা বন্ধ করা আর আজকের করায় অনেক পার্থক্য। হিমি ওর ভালোবাসার মানুষকে অন্য একটি মেয়ের সাথে দেখেছে ওর কষ্ট পাওয়াটা স্বাভাবিক। হয়তো এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে নিজেকে আঘাত করবে, হিমি কিছু করার আগেই ওকে ডাকতে হবে)
ছোট ভাইয়া: যদি আমার বোনের কিছু হয়েছে তাহলে তোকে...
আমি: ভাইয়া আমাকে পরেও মারতে পারবেন তার আগে হিমির দরজা খুলা প্রয়োজন।
তারিন: আরশান ভাইয়া একদম ঠিক বলেছে।
আমি: হিমি দরজা খুলো প্লিজ! এসব মিথ্যে আমি তোমাকে প্রমাণ দিবো, আমাকে একটু সময় দাও প্লিজ! তুমি কেন বুঝতে পারছ না আমাদের দুজনকে আলাদা করার জন্য অধরা এইটা করেছে? (হিমি কোনো সাড়া দিচ্ছে না দেখে ভয়ে বুক কাঁপতে শুরু করলো, পাগলীটা কিছু করে বসেনি তো? ছোট ভাইয়ার দিকে তাকালাম)
ছোট ভাইয়া: কি?
আমি: ভাইয়া ভয় হচ্ছে, দরজা ভেঙ্গে ফেলি।
আন্টি: বললাম তো হিমি মাঝেমাঝে এমন করে দরজা ভাঙ্গতে হবে না।
আমি: আমার হিমিকে আমি ভালো করে ছিনি, হিমি আমার পাশে অন্য মেয়েকে একদম সহ্য করতে পারেনা।
ছোট ভাইয়া: তাহলে অন্য মেয়েকে পাশে...
আমি: ভাইয়া সব মিথ্যে আমি প্রমাণ করে দিবো।
আদিত্য: ভাইয়া সরো আমি দরজা ভাঙ্গছি।
আমি: হুম।

দরজা ভেঙ্গে রুমে ঢুকে হিমির অবস্থা দেখে ধপাস করে ফ্লোরে বসে পড়লাম। হিমি সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে ফ্লোরে, হিমির হাত থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছে। হিমি আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য নিজেকে এভাবে আঘাত করলো? রক্তে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে, হিমির যদি কিছু হয়ে যায় আমি কি নিয়ে বাঁচবো?
আম্মু: আরশান কি ভাবছিস? (আম্মুর ধাক্কায় আমার ঘোর কাটলো)
আমি: আম্মু হিমি...
আম্মু: ওকে হসপিটালে নিতে হবে, তুই ভেঙ্গে পড়িস না বাবা।
আদিত্য: আমি গাড়ি বের করছি তোমরা হিমিকে নিয়ে এসো।
ছোট ভাইয়া: ঠিক আছে।
হিমি ছোট ভাইয়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে, ওর হাত থেকে এখনো রক্ত পড়ছে। আমি হিমির মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, আমার জন্য আজ এই অবস্থা হলো ওর।

শান্ত: আরশান? (হিমির কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলাম হঠাৎ শান্তর কন্ঠ শুনে পিছন ফিরে তাকালাম, শান্ত, আরিয়ান, সিফাত, তারিন সবাই এসেছে)
শান্ত: তুই ঘুমিয়ে ছিলি তাই আমরা বাসায় চলে গিয়েছিলাম আর এর মধ্যে এতকিছু হয়ে গেলো?
আমি: আমার হিমি...
সিফাত: আরে পাগল কাঁদছিস কেন সব ঠিক হয়ে যাবে।
আদিত্য: ভাইয়া ডক্টর তো হিমিকে দেখছে টেনশন করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি: আমার জন্য সব হলো।
তারিন: এতে তোমার কি দোষ বলতো, সব তো অধরা আপু করেছে।
আরিয়ান: সত্যি বিশ্বাস হচ্ছে না অধরা এমন কিছু করেছে।
"আমার বোনের এতো বড় ক্ষতি যে করেছে তাকে আমি ছাড়বো না" (হঠাৎ কারো চিৎকার শুনে পিছনে তাকালাম, হিমির বড় ভাইয়া আসছে। এতক্ষণ ভাইয়া ছিলনা তারমানে ভাইয়া কিছু জানেননা, এখন ভাইয়াকে কি জবাব দিবো আমি? ভাইয়ার ভয়ঙ্কর রূপ দেখেই ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে)
বড় ভাইয়া: হিমিকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে এখন আবার এখানে দাঁড়িয়ে আছ?
আমি: (নিশ্চুপ)
বড় ভাইয়া: কি যেন বলেছিলে ভালোবাসার পরীক্ষা দিবে, এই তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা?
ছোট ভাইয়া: ভাইয়া কেন শুধু শুধু চেঁচামেচি করছ? এই ছেলেকে কিছু বলে লাভ নেই বাদ দাও তো।
বড় ভাইয়া: ও তো আমার বোনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।
ডক্টর: পেসেন্ট এর সেন্স ফিরেছে, চাইলে দেখা করতে পারেন। (ডক্টর এর কথা শুনে কেবিনে ঢুকার জন্য পা বাড়ালাম কিন্তু ছোট ভাইয়া আটকে দিলো। নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি)
তারিন: আরশান ভাইয়া আমি হিমিকে দেখে এসে তোমাকে বলছি।
আমি: হুম।

কেবিনের বাইরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি আর তারিন আসার অপেক্ষা করছি, জানিনা হিমির এখন কি অবস্থা। হঠাৎ আদিত্য এসে আমার দিকে ওর ফোন এগিয়ে দিলো, ওর দিকে তাকালাম কথা বলতে ইশারা করলো।
আমি: হ্যালো।
আব্বু: তুমি কোথায়?
আমি: হসপিটালে।
আব্বু: আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পর তোমার বোনের বিয়ে আর তুমি এখন হসপিটালে?
আমি: হিমি অসুস্থ নিশ্চয় শুনেছ?
আব্বু: তাতে কি হয়েছে? বোনের বিয়ের থেকে অন্য একটা মেয়ের...
আমি: অন্য একটা মেয়ে নয় হিমি আমার ভালোবাসা। আর বিয়ের চেয়ে একটা জীবন অনেক দামী।
আব্বু: ছেলে পক্ষ এসে যদি তোমাকে খুঁজে তখন কি জবাব দিবো?
আমি: বলবে আরশান তার ভালোবাসার মানুষকে বাঁচাতে হসপিটালে গেছে।
আব্বু: ভালোবাসা না ছাই। এই মেয়ে যদি তোমাকে সত্যি ভালবাসতো তাহলে সামান্য বিষয় নিয়ে তোমাকে ভুল বুঝে সুইসাইড করতে যেতো না।
আমি: তোমার কাছে সামান্য বিষয় হতে পারে কিন্তু হিমির কাছে সামান্য নয়, হিমি আমাকে সত্যি ভালোবাসে বলেই আমার পাশে অন্য মেয়েকে সহ্য করতে পারেনি।
আব্বু: সব আবেগ আর লোভ।
আমি: সবাইকে নিজের মতো ভেবো না।
আব্বু: আমি তোমার সাথে তর্ক করতে ফোন করিনি, বাসায় কখন আসছ?
আমি: ঠিক বলতে পারছি না।
আব্বু: বিয়েতে থাকবে না?
আমি: যে বিয়েতে আপুর মত নেই সে বিয়েতে আমার না থাকাটাই ভালো।
আব্বু: তুমি এখনো এসব ভাবো?
আমি: হ্যাঁ কারণ এইটা আমার বোনের সারাজীবনের প্রশ্ন।
আব্বু: প্রয়োজন নেই তোমার আসার, মনে রেখো তোমার বিয়েটাও আমার ইচ্ছেতেই হবে রাইসার সাথে।
আমি: চেষ্টা করতেই পারো কিন্তু সফল হবে না। (ফোনটা কেটে দিলাম, এই লোকটা আমাদের সবার জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে।)
তারিন: ভাইয়া হিমি তোমাকে ভিতরে ডাকছে। (তারিনের কথা শুনে হিমির কেবিনের দিকে পা বাড়ালাম)

হিমি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে, আমি নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। হিমির ভাইয়েরা ডক্টর এর সাথে কথা বলছে। হিমির কাছে গিয়ে ওর হাত ধরার সাহসও আমার হচ্ছে না।
ছোট ভাইয়া: হিমি ওকে ডাকলি কেন?
হিমি: (নিশ্চুপ)
ছোট ভাইয়া: ওর জন্য তোর এই অবস্থা আর তুই...
হিমি: ভাইয়া আরশান কোনো অপরাধ করেনি। (হিমির কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম, হিমি আমাকে এখনো বিশ্বাস করে? হিমি ইশারায় আমাকে ওর কাছে ডাকলো, চোখের পানি মুছে হিমির পাশে এসে বসলাম)
বড় ভাইয়া: তুই এখনো ওকে বিশ্বাস করিস?
হিমি: হ্যাঁ।
ছোট ভাইয়া: তুই সত্যি পাগল হয়ে গেছিস।
হিমি: এখন সুস্থ আছি আগে পাগল ছিলাম আর তাইতো সুইসাইড করতে চেয়েছিলাম।
ছোট ভাইয়া: হিমি তুই...
হিমি: ভাইয়া আমার বিশ্বাস আরশান কোনো অপরাধ করেনি, ওকে সবকিছু প্রমাণ করার একটু সুযোগ দাও।
আমি: হিমি আমি অধরাকে তোমার কাছে নিয়ে আসবো তুমি নিজে ওর থেকে সত্যিটা জেনো।
বড় ভাইয়া: কোনো প্রয়োজন নেই, আরশান তুমি হিমিকে ভুলে যাও। আর আমরা খুব শীঘ্রই তোমাদের বাসা থেকে চলে যাবো।
আমি: একটা ভুল বুঝাবুঝির জন্য আমাদের দুজনকে এতো বড় শাস্তি দিবেন ভাইয়া?
বড় ভাইয়া: আজ তুমি এই অন্যায় করতে পেরেছ যখন বিয়ের পরও একই অন্যায় করতে দুবার ভাববে না তুমি।
আমি: ভাইয়া সব আমাকে ফাঁসানো...
ছোট ভাইয়া: অনেক বলেছ এবার আসতে পারো।
বড় ভাইয়া: তুমি হিমির আশেপাশে না আসলেই আমরা খুশি হবো। আর কথাটা না শুনলে আমরা তোমার বাবাকে জানাতে বাধ্য হবো।
ছোট ভাইয়া: উঠো চলো। (ছোট ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে আমাকে দাঁড় করাতেই হিমি আমার অন্য হাত ধরে ফেললো, সবাই হিমির দিকে তাকালাম)
হিমি: ওকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিলে আমি আবারো সুইসাইড করার চেষ্টা করবো। মনে রেখো এখন আর হাতের শিরা কাটবো না চাকু দিয়ে গলায় টান দিবো, বাঁচানোর সুযোগও পাবে না তোমরা। (হিমির কথা শুনে ছোট ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিলেন। দুভাই দুজনের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন)
আমি: এখনো আমায় এতোটা বিশ্বাস কর? (হিমি আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না)
হিমি: ডক্টর বলেছে আমি সুস্থ আছি বাসায় যেতে পারবো।
আমি: আজই?
হিমি: হুম। আজ তো আবার ফারিয়া আপুর বিয়ে। (হিমিকে এখনি রিলিজ করে দিলে ভালোই হবে, বাসায় গিয়ে আম্মুর সাথে কথা বলে অন্তত জানতে পারবো বিয়ে ভাঙ্গার কোনো ব্যবস্থা হলো কিনা)
হিমি: কি ভাবছ?
আমি: কিছুনা।
হিমির পাশে চুপচাপ বসে আছি, হিমি মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছে।

ছোট ভাইয়া: হিমি চল। (আনমনা হয়ে বসে ছিলাম হঠাৎ ছোট ভাইয়া এসে কেবিনে ঢুকলেন, ভাইয়ার দিকে হিমি আমি দুজনেই তাকালাম)
ছোট ভাইয়া: ডক্টর তোকে রিলিজ করে দিয়েছে, একটু রেস্টে থাকলেই সুস্থ হয়ে যাবি।
হিমি: হুম।
ছোট ভাইয়া: আরশান তুমি হিমিকে নিয়ে এসো আমরা বাইরে অপেক্ষা করছি।
আমি: ঠিক আছে।

হিমিকে নিয়ে এসে গাড়িতে বসিয়ে দিলাম, পাশে তারিন আর ভাইয়ারা বসলেন।
বড় ভাইয়া: তুমি বাসায় যাবে না?
আমি: না।
আদিত্য: ভাইয়া বাসায় যাবে না কেন?
আমি: আমার উপর যে অপবাদ দেওয়া হয়েছে সেটা যে মিথ্যে প্রমাণ তো করতে হবে। অধরার হোস্টেলে যাবো আর ওকে হিমির সামনে এনে দাঁড় করাবো, অধরাই সব সত্যি বলবে।
আদিত্য: ঠিক আছে।
আমি: সাবধানে যাস।
আদিত্য: হুম। (আদিত্য গাড়ি স্টার্ট দিলো, গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে আর হিমি জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
শান্ত: আরশান চল। (হিমির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম হঠাৎ শান্ত এসে কাধে হাত রাখলো। সবাই যাবো অধরার কাছে আর সব সত্যি আজ অধরার মুখ থেকে বের করবো)
সিফাত: কিরে কি ভাবছিস চল।
আমি: হুম।

অধরার হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, কেন যেন খুব ভয় করছে বারবার মনে হচ্ছে অধরাকে হোস্টেলে পাওয়া যাবে না। অধরা নিজ থেকে এসব করে থাকলে অবশ্যই হোস্টেলে থাকবে আর যদি কারো ভয়ে করে থাকে তাহলে ও হোস্টেলে থাকবে না আমি নিশ্চিত।
আরিয়ান: আরশান অধরা হোস্টেলে নেই।
আমি: যা ভেবেছিলাম তাই হলো।
সিফাত: ওরা বললো অধরা তিনদিন হলো গ্রামের বাড়িতে গেছে।
আমি: তিনদিন ধরে গ্রামের বাড়িতে হলে আজ দুপুরে ও আমার বাসায় গিয়ে এসব কান্ড কিভাবে করেছে?
সিফাত: সেটাই তো ভাবাচ্ছে।
শান্ত: অধরার গ্রাম এখান থেকে অনেক দূরে আর আমরা তো জানি এই শহরে ওর কোনো আত্মীয়স্বজনদের বাসা নেই, তাহলে অধরা আছে কোথায়?
আরিয়ান: আমার কিন্তু ভয় হচ্ছে, অধরা সহজসরল মেয়ে ওকে কেউ ফাঁসিয়ে বিপদে ফেলেনি তো?
আমি: যদি তাই হয় তাহলে সেটা সজীব অথবা আব্বুর কাজ।
সিফাত: হতে পারে।
শান্ত: তাহলে তো অধরার কোনো বিপদ হবার আগেই ওকে খুঁজে বের করা প্রয়োজন, এই শহরে আমরা ছাড়া ওর আর কে আছে বল।
আরিয়ান: আরশান তুই অধরার উপর রেগে থাকিস না প্লিজ! ও যদি সত্যি অন্যায় করে থাকে তাহলে পরে শাস্তি দিস।
আমি: আমি ওর উপর রেগে নেই, এখন আমারো টেনশন হচ্ছে। এক কাজ কর তোরা অধরার খুঁজ করার চেষ্টা কর আমি বাসায় যাচ্ছি যদি আব্বুর থেকে কোনো খুঁজ পাই অধরার।
শান্ত: ঠিক আছে।
সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এবার অধরার উপর থেকে রাগ কমে গিয়ে সত্যিই টেনশন হচ্ছে, জানিনা মেয়েটা কোথায় আছে কেমন আছে।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে একটু পর অন্ধকার নেমে আসবে, হিমির পাশে বসে আছি, হিমি ঘুমিয়ে আছে। না পারলাম অধরাকে এনে সব প্রমাণ করতে আর না পারলাম আপুর বিয়েটা আটকাতে। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে কিছুই হয় না আমাকে দিয়ে। এখন আমি হিমির ভাইদের সামনে কিভাবে দাঁড়াবো? হিমির ঘুম ভাঙ্গার পর কি জবাব দিবো? মাথাটা বড্ড যন্ত্রণা করছে, রুমে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম সাথে সাথে হিমি আমার হাত ধরে ফেললো, পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি হিমি আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। নীল ডিম লাইটের আলোতে হিমির চোখের কোণে জমে থাকা পানি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, বুঝতেই পারছি না হিমিকে এখন কি বলবো, এসব বললে হিমি বিশ্বাস করবে কিনা।
হিমি: অধরা আসেনি?
আমি: আসলে অধরাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
হিমি: তাহলে কি আমিও ধরে নিবো সবকিছু সত্যি ছিল? (হিমির কথা শুনে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম, ও কি সেই হিমি যে হসপিটালে ওর ভাইদের সামনে আমাকে বিশ্বাস করেছিল?)
হিমি: আমি নিজের চোখে সবকিছু দেখেছি। ভাইয়াদের সামনে বলেছি আমি তোমাকে বিশ্বাস করি তুমি কোনো অপরাধ করনি। কিন্তু মন থেকে মেনে নিতে পারছি না, বারবার চোখের সামনে সেই দৃশ্য ভেসে উঠছে। আরশান...
আমি: ব্যস অনেক বলেছ, এই তোমার ভালোবাসা? নিজের ভালোবাসার মানুষের প্রতি বিশ্বাস নেই এ কেমন ভালোবাসা তোমার? আমিতো ভেবেছিলাম পৃথিবীর সবাই আমাকে অবিশ্বাস করলেও তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে, এখন দেখছি আমি ভুল ছিলাম।
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: এমন ঠুনকো বিশ্বাস নিয়ে আর যাই হউক ভালোবাসার সম্পর্ক গড়া যায় না। সবকিছু যে সাজানো ছিল তার প্রমাণ আমি দিবো, তবে হ্যাঁ এইটাও মনে রেখো প্রমাণ দেওয়ার পর তোমার সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
হিমি: আরশান?
আমি: যে আমাকে বিশ্বাস করে না তার সাথে আমি সারাজীবন কাটাবো কিভাবে? আমি বারবার বলার পরও যে আমার উপর ভরসা করতে পারছে না তার সাথে সারাটা জীবন কাটানো তো ইম্পসিবল।
হিমি: আরশান আমার কথা শুনো।
আমি: আর কিছু শুনতে চাই না হিমি, তুমি আমাকে এখনো ভালো বাসতে পারোনি। প্রমাণের অপেক্ষা করো, প্রমাণ দিয়ে আমি তোমার থেকে অনেক দূরে চলে যাবো।
হিমির হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে এনে চলে আসলাম। চোখের পানি মুছে নিলাম, কার জন্য কাঁদবো যে আমাকে বিশ্বাসই করে না? বিশ্বাস ছাড়া আর যাই সম্ভব হউক ভালোবাসা সম্ভব না। সবকিছুর প্রমাণ দিয়ে আমি হিমির থেকে অনেক দূরে চলে যাবো, আর কখনো হিমির জীবনে ফিরে আসবো না।

চলবে😍

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com