তবুও ভালোবাসি | পর্ব -২২
আদিল আমার বুকে শুয়ে নিশ্চিন্তে ফোন টিপছে কখন যেন মা এসে পড়েন
আদিল তো আমার কোনো কথাই শুনছে না।
একবার মা আমাদের একসাথে দেখলে রেগে আগুন হয়ে যাবেন
তখন আর মায়ের ভুল ভাঙানোর সুযোগটুকুও পাবো না।
দরজায় ঠোকা পড়লো ভিতরটা কেঁপে উঠলো মা নয়তো?
আদিল: এতো ভয় পাচ্ছ কেন?
আমি: যদি মা হন? দুজন একরুমে আছি...
আদিল: স্বামী স্ত্রী এক রুমে থাকবে নাতো কি আলাদা থাকবে?
(আবার ঠোকা পড়লো আদিল দরজা খুলতে চলে গেল,
আমি ভয়ে চুপসে বিছানায় বসে আছি)
আদিল: ওহ তুই। (যাক নীরব এসেছে আমিতো ভেবেছিলাম মা আজ আর..)
নীরব: ভাবি কেমন আছ?
আমি: এইতো। নিজেকে তো দেবদাস বানিয়ে ফেলেছ।
নীরব: কোথায় নাতো।
আদিল: তোমরা কথা বলো আমি আসছি।
আমি: ঠিক আছে।
নীরব: কি করবো এখন মিতুকে ছাড়া থাকতে পারছি না,
এক বাসায় থেকেও কথা হয় না এর চেয়ে বড় কষ্ট আর আছে?
আমি: তোমরা কথা বলো না?
নীরব: আম্মুর চোখের আড়ালে দুএকটা কথা ছাড়া আর কথা হয়না।
সেদিন রাতে হুট করে আমার রুমে গিয়ে আমাকে ঝাপটে ধরে কাঁদতে শুরু করলো,
ওর চোখে পানি দেখতে কি আমার ভালো লাগে?
মিতু বলেছিল পালিয়ে যেতে চাইলে আমিও পারতাম কিন্তু আদিলের সম্মান?
যে বন্ধু আমাকে এতো ভালোবাসে তার সম্মান নিয়ে তো আমি খেলা করতে পারিনা।
তাছাড়া আমরা পালিয়ে গেলে আম্মু আরো রেগে যাবেন তখন আর তোমাদের এক হওয়া হবে না।
এসব ভেবে আমি মিতুকে পালিয়ে যাবো না বলেছিলাম এতে মহারাণী অভিমান করে আছেন।
মিতু: আমি মুটেও অভিমান করিনি। (মিতু কখন এসে দরজায় দাঁড়িয়েছে খেয়ালই করিনি)
আমি: মিতু এই সময় অভিমান করে থাকা মানায়? এখন তো সমস্যার সমাধান করতে হবে।
মিতু: আমাকে সেদিন ধমক না দিয়ে বুঝিয়ে বললে পারতো।
নীরব: ধমক দিয়েছিলাম বলে এতো অভিমান? আরে বাবা তখন মাথা ঠিক ছিল নাকি?
আমি: এখন তো মাথা ঠান্ডা আছে এখন অভিমান ভাঙিয়ে নিলেই পারো।
মিতু: প্রয়োজন নেই ভাঙানোর আমিতো কারো উপর অভিমানই করিনি।
(মিতু চলে যাচ্ছিল নীরব তাড়াতাড়ি মিতুর হাত ধরে ফেললো।
মিতুর সামনে দাঁড়িয়ে নীরব মিতুর দুগালে ধরে চোখের দিকে তাকালো)
নীরব: সরি আর কখনো ধমক দিবো না।
মিতু: (নিশ্চুপ)
নীরব: সরি তো, আচ্ছা কান ধরছি।
মিতু: (নিশ্চুপ)
নীরব: ভাবির সামনে কান ধরতে যাচ্ছি তুমি আমাকে আটকাবে না?
ভাবি তো পরে আমাকে খোঁচা দিবে। (এবার মিতু হেসে দিলো,
আমিও হাসছি ওদের মিষ্টি প্রেম দেখে)
নীরব: যাক অবশেষে অভিমান ভাঙলো তাহলে।
মিতু: আর কখনো ধমক দিলে কিন্তু...
নীরব: মাঝেমাঝে দিতে হয় তাই না ভাবি?
মিতু: আচ্ছা ভাবি বলতো ওর বয়স কতো আর আমার বয়স কতো?
নীরব: হঠাৎ বয়স হিসেব করছ কেন?
আমি: হ্যাঁ হঠাৎ বয়স হিসেব করছ কেন?
মিতু: বয়সের দিক হিসেব করলে ও বুইড়া জামাই আর আমি পিচ্ছি বউ,
ওর তো উচিত পিচ্ছি বউকে ধমক না দিয়ে ভালোবেসে বুঝানো।
(মিতুর কথা শুনে নীরব হা হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি হাসছি)
মিতু: ভাবি তুমি হাসছ আমি ঠিক বলিনি?
আমি: হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছ।
নীরব: আমি বুড়ো হয়ে গেছি? পিচ্ছি বউকে তো তাহলে বেশি বেশি আদর করা প্রয়োজন।
(নীরব মিতুকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো মিতু প্রাণ খুলে হাসছে।
এতো কষ্টের মাঝেও দুজনের চোখে কতো স্বপ্ন।
মা এই দুজনকে আলাদা করতে চাইছেন কিভাবে?)
মা: বাহ্ বাহ্! (মায়ের কন্ঠ শুনে নীরব আর মিতু দুজন আলাদা হয়ে গেল,
আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি)
মা: মিতু আমার শর্ত ভুলে গেছিস? আর নীরব এসব কি?
নীরব: আম্মু...
মা: এই মেয়ে আমার বাসায় কেন?
মিতু: আম্মু এইটা কিন্তু ভাবির শশুড় বাড়ি।
মা: দুদিন পর ডিভোর্স হয়ে যাবে আর এখন শশুড় বাড়ি বলা হচ্ছে।
(মায়ের চেঁচামেচি শুনে আদিল কোথা থেকে যেন দৌড়ে আসলো)
আদিল: আম্মু কি হয়েছে?
মা: এই মেয়েকে কোন সাহসে আমার বাসায় নিয়ে এসেছিস?
আদিল: আম্মু ও দাদুকে দেখতে এসেছে।
মা: প্রয়োজন নেই, আর মাত্র কিছুদিন তারপর ডিভোর্স হয়ে যাবে।
এখন এসব ভালোবাসা দেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
আমি: মা আপনি কিন্তু চারটা জীবন নিয়ে খেলা করছেন।
মা: মানে?
আমি: আপনি চাইলে সব সমাধান হয়ে যায় আদিল আর আমি সুখে থাকতে পারি,
মিতু আর নীরবের বিয়েটাও হয়ে যায়। কিন্তু আপনি ইচ্ছে করে আমাদের সবার...
(মা এসে আমার দুগালে দুটু থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন, সবাই অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছি)
মা: কখনো তোমার গায়ে হাত তুলিনি তো তাই আমার মুখের উপর কথা বলার সাহস পাচ্ছ।
এতো যে জ্ঞান দিচ্ছ আমাকে একবারো নিজেকে প্রশ্ন করেছ আদিলের সাথে
সুখে সংসার করলে সিহাবকে কি করবে? নাকি দু পুরুষকে একসাথে রাখার ইচ্ছে আছে?
আমি: মা?
আদিল: আম্মু তুমি কিন্তু আনিশাকে বাজে কথা বলছ।
নীরব: এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে আম্মু।
মিতু: আম্মু ও তোমার ছেলের বউ বলে ওর গায়ে তুমি কলঙ্কের কালি মেখে দিতে পারো না,
ভুলে যেওনা তোমারও একটা মেয়ে আছে আর তাকেও বিয়ে দিয়ে অন্য কারো ঘরে পাঠাবে।
মা: যা সত্যি তাই বলেছি, তোরাই ওকে জিজ্ঞেস কর ওর সিহাবের সাথে সম্পর্ক আছে কিনা।
আদিল: আমি আমার স্ত্রীকে বিশ্বাস করি আমার প্রতি ওর ভালোবাসাকে
সম্মান করি তাই জিজ্ঞেস করার কোনো প্রয়োজন নেই।
তুমি আগে সত্যিটা যাচাই করো তারপর আনিশাকে এসব নোংরা কথা বলতে এসো।
মা: আমি সব সত্যি জেনেই বলেছি।
আমি: মা আপনি ভুল জানেন। সিহাব আমাদের সব সম্পত্তি নিজের নামে
লিখিয়ে নিয়েছিল আর আমি সেগুলো ফেরত এনেছি তাই ও প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য...
মা: আদিল তোমার প্রেমে অন্ধ তাই ওকে যা খুশি বুঝাতে পারো কিন্তু আমাকে বুঝাতে এসো না,
সিহাবের সাথে যদি তোমার সম্পর্ক না থাকতো তাহলে তোমাদের এতো ক্লোজ ছবি কোথা থেকে আসলো? ডিভোর্স এর পর সিহাব তোমাকে বিয়ে করতে চায় কেন?
কোনো পুরুষ কি জেনেশুনে কোনো ডিভোর্সি নারীকে বিয়ে করতে চায়?
আমি: ও হয়তো আমাকে পছন্দ করে তাই বিয়ে করতে
চায় কিন্তু মা বিশ্বাস করুন ওর সাথে আমার রিলেশন নেই আগেও ছিলনা।
মা: তোমাদের দুজনের ক্লোজ ছবিই আমার কাছে সব স্পষ্ট করে দিয়েছে
আর কিছু বলে আমাকে বিশ্বাস করাতে হবে না।
আর যে মেয়ের বাবা খারাপ সে মেয়ে তো নষ্টা হবেই।
আমি: মা মুখ সামলে কথা বলুন, আপনার ছেলের বউ আমি আব্বু নয় তাই যা
বলার আমাকে বলুন।
আদিল: আম্মু কি শুরু করেছ?
মা: চোরকে চোর বললে আবার গাঁ জ্বলে।
মিতু: কোনো মেয়ের সতীত্ব নিয়ে কথা বললে তো তার গাঁ জ্বলবেই আম্মু।
মা: তুই চুপ কর। আদিল ওকে আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বল।
কোনো চরিত্রহীনার জায়গা আমার বাড়িতে নেই।
আদিল: আনিশা শুনো।
মিতু: ভাবি যেওনা।
ওদের কথা না শুনে দৌড়ে বেরিয়ে আসলাম।
যে বাড়িতে আব্বুকে অপমান করা হয় যে বাড়িতে বাড়ির বউয়ের চরিত্র
নিয়ে নোংরা কথা বলা হয় সে বাড়িতে আর এক মুহূর্তও থাকতে চাই না।
বাসায় এসে মেইন দরজা খুলা দেখে বেশ অবাক হলাম,
আস্তে আস্তে ড্রয়িংরুমে এসে ঢুকলাম আব্বু, ফুফু,
চাঁচি সবাই গম্ভীর হয়ে সোফায় বসে আছেন।
কি হলো সবার তবে কি মা আজ আবার ফোন করে...
ফুফু: সন্ধ্যা নেমে এসেছে চারপাশ অন্ধকার হতে শুরু করেছে এই
তোর বাসায় ফেরার সময় হলো?
আমি: আসলে ফুফু...
ফুফু: আসলে কি কেন গিয়েছিলি ওই বাসায়? (এবার কি উত্তর
দিবো ফুফুকে আমি যে ফুফু আর আব্বুর চোখের দিকে তাকাতে পারছি না)
আব্বু: আজ আবার আমাকে অপমান সহ্য করতে হলো তোর জন্য।
আমি: আমার জন্য নয় সিহাবের জন্য।
চাঁচি: মানে? ওই বাসায় তো তুই গিয়েছিলি তাহলে সিহাবকে দোষ দিচ্ছিস কেন?
হ্যাঁ মানছি আমার ছেলে খারাপ কিন্তু...
আমি: তোমার ছেলে শুধু খারাপ না জঘন্য একটা মানুষ।
জানো ও আমার শাশুড়ির কাছে বলেছে ওর সাথে আমার রিলেশন আছে।
আব্বু: কি?
আমি: শুধু তাই নয় আমার নামে আজেবাজে কথা বলেছে, কখনের না
কখনের আমাদের দুজনের পিক মা'কে দেখিয়েছে। কোন মা তার ছেলের
বউয়ের সম্পর্কে এসব সহ্য করবে?
ফুফু: সিহাব নাহয় দোষ করেছে কিন্তু তাই বলে তোর শাশুড়ি
তোকে চরিত্রহীনা বলবে তোর আব্বুকে অপমান করবে?
আমি: সেটা আব্বুকে জিজ্ঞেস করো, কেন মা বলেছেন বাবা যখন খারাপ
মেয়ে তো নষ্টা হবেই? বাবার সাথে মায়ের কিসের শত্রুতা?
ফুফু: ভাইয়া তুমি এই মহিলাকে ছিনো?
আব্বু: (নিশ্চুপ)
চাঁচি: সিহাব যে অন্যায় করেছে তার শাস্তি আমি ওকে দিবো।
কিন্তু তুই কথা দে ওই বাসায় আর যাবি না।
ফুফু: সেদিন একবার অপমান করলো আজ আবার তারপরও তুই
আদিলের সাথে সম্পর্ক রাখতে চাস?
ফুফুর কথার কোনো জবাব না দিয়ে চুপচাপ রুমে চলে আসলাম।
আকাশে আজ চাঁদ উঠেছে মেঘেরা বারবার চাঁদকে ঢেকে দিচ্ছে মেঘ
সরে যেতেই চাঁদ আবার উঁকি দিচ্ছে, আমি জানালার কাছে দাঁড়িয়ে চাঁদ আর
মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখছি। ফোন বাজছে, বালিশের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে
আবার জানালার কাছে আসলাম। আদিলের ফোন দেখে বেশ অবাক হলাম আদিল
এখনো ঘুমায়নি অনেক রাত হয়েছে তো।
আমি: হ্যালো।
আদিল: এখনো ঘুমাওনি যে?
আমি: তুমিও তো ঘুমাওনি।
আদিল: ঘুম আসছে না। একটা প্রশ্ন করবো যদি রাগ না করো।
আমি: হ্যাঁ বলো।
আদিল: সিহাবের সাথে কখনো পিক তুলেছিলে অনেকটা কাছাকাছি আর...
আমি: হঠাৎ এই প্রশ্ন করছ যে?
আদিল: আম্মু আমাকে পিক দেখিয়েছে খুব কাছাকাছি দুজন...
আমি: তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছ?
আদিল: ঠিক তা না কিন্তু পিকটা তো...
আমি: তোমার কন্ঠই বলে দিচ্ছে তুমি পিক দেখে আমাকে সন্দেহ করতে শুরু করেছ।
আদিল: (নিশ্চুপ)
আমি: মা আমাকে কি বললেন সেসব নিয়ে আমি ভাবি না আমার কাছে
তোমার ভালোবাসা বড় আর সেই তুমিই কিনা সামান্য
একটা পিক দেখে আমাকে অবিশ্বাস করছ? আদিল সিহাব আমার চাচাতো
ভাই হয়, হয়তো কখনো ভাই বোন হিসেবে পিক তুলেছিলাম আমার মনে নেই।
আদিল: আনিশা তুমি যা ভাবছ তা নয় আমি তোমাকে সন্দেহ করছি না।
আমি: করেছ তো আর এসব নিয়ে টেনশন করেই তোমার ঘুম আসছে না।
আদিল: আনিশা...
আমি: একটা সম্পর্ক ঠিকিয়ে রাখতে হলে আগে বিশ্বাস থাকতে হয়,
তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে শিখো তারপর ভালোবাসতে এসো।
ফোন কেটে দিলাম, আদিল আমাকে সন্দেহ করতে পারলো?
বিকেলে মা আমাকে কতো বাজে কথা বলেছেন আমি সব ভুলে গেছি মা তো
বকতেই পারেন কিন্তু আদিল ও তো আমায় অবিশ্বাস করছে, এই তাহলে ওর ভালোবাসা?
এমন ঠোনকো ভালোবাসা আদিলের? এতোটা অবিশ্বাস নিয়ে কি সম্পর্ক ঠিকিয়ে রাখা যায়?
সকালে ফোনের রিংটোনে ঘুম ভাঙ্গলো,
ঘুম ঘুম চোখে পাশ থেকে ফোনটা এনে রিসিভ করলাম।
আদিল: আনিশা.. (আদিলের কন্ঠ শুনে চুপ করে রইলাম, রাতে ওর জন্য
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েছি আর এখন সাত সকালে ফোন দিয়েছে আবার কাঁদানোর জন্য)
আদিল: কথা বলবে না আমার সাথে?
আমি: (নিশ্চুপ)
আদিল: ঠিক আছে অন্তত এইটা বলো অফিসে কখন আসবে?
আমি: প্রতিদিন যে সময় যাই।
আদিল: একটু তাড়াতাড়ি আসতে পারবে?
আমি: কেন?
আদিল: একটা ডায়েরী পেয়েছি ভাইয়ার ডায়েরী।
আমি: কোথায় পেলে?
আদিল: রাতে তুমি ফোন রেখে দেওয়ার পর ঘুম আসছিল না তাই ছাদে হাটছিলাম।
হঠাৎ চিলকোঠোর ঘরের দিকে নজর পড়লো, হাটতে হাটতে চিলকোঠোর ঘরে গেলাম।
ভাইয়ার অনেক জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল তার মধ্যেই ডায়েরীটা পেয়েছি।
আসলে ভাইয়া সুইসাইড করার চেষ্টা করার পর বেঁচে গেলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল
তো তাই তখনই চিকিৎসার জন্য এ বাসা ছেড়ে আমরা
কক্সবাজার চলে গিয়েছিলাম তাই চিলকোঠোর ঘরে কারো আসা হয়নি।
আমি: ডায়েরীতে কিছু পেয়েছ? মানে জানতে পেরেছ রাইমা কেন সুইসাইড করেছিল
বা ভাইয়া ওদের রিলেশনের কথা কাকে জানিয়েছিল?
আদিল: হ্যাঁ অনেক কিছুই লেখা আছে এই ডায়েরীতে,
তুমি অফিসে আসো ডায়েরীটা পড়লেই অনেক প্রশ্নের উত্তর আমরা পেয়ে যাবো।
আমি: তুমি অফিসে যাও আমি এক্ষণি আসছি।
আদিল: এক্ষণি আসতে হবে না তুমি নাশতা করে তারপর এসো।
আমি: না আমি এক্ষণি আসছি।
আদিল: আনিশা জিদ করো না তুমি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে...
আমি: কিছু হবে না, রাখছি।
ফোন রেখে তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে উঠতে চাইলাম কিন্তু মাথা ঘুরে গেল,
আবার বসে পড়লাম। আদিলের উপর খুব রাগ হচ্ছে শুধু শুধু আমাকে সন্দেহ
করেছে আর সারারাত আমাকে কাঁদিয়েছে। রাতে ঘুম হয়নি তাই মাথা খুব ভারী লাগছে।
আস্তে আস্তে উঠে ফ্রেশ হতে গেলাম, আজ যেভাবেই হউক অফিসে যেতে হবে।
ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে আসলাম, মাথাটা বড্ড যন্ত্রণা করছে অফিস যেতে
পারবো কিনা তাই ভাবছি।
ফুফু: কিরে আনিশা আজ এতো তাড়াতাড়ি অফিসে যাচ্ছিস?
আমি: মিটিং আছে ফুফু।
ফুফু: তোর কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন?
আমি: ঠিকই তো আছে।
ফুফু: ঠিক আছে বস আমি ছট করে কিছু একটা বানিয়ে দিচ্ছি।
আমি: ফুফু মিটিং আছে তো আজ নাশতা না করে গেলে হয়না?
ফুফু: চুপ করে বসে থাক। (ফুফু না খাইয়ে যেতে দিবে না তাই
চুপচাপ চেয়ার টেনে বসে পড়লাম)
আব্বু: আনিশা? (চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছিলাম আব্বুর ডাক শুনে হকচকিয়ে উঠলাম)
আমি: হ্যাঁ আব্বু।
আব্বু: কিরে রাতে ঘুম হয়নি ঝিমুচ্ছিস যে? তোর দুচোখ এতো লাল
কেন তুই কি কান্না করেছিস?
আমি: নাতো কাঁদবো কেন? ঘুম একটু কম হয়েছে।
আব্বু: দেখিস এই কাজ কাজ করে নিজেকে অসুস্থ করে ফেলিস না।
আমি: ঠিক আছে।
চাঁচি: আনিশা গুড মর্নিং।
আমি: আগে নিজের ছেলেকে খুঁজে এনে শাস্তি দাও তারপর আমাকে
গুড মর্নিং বলতে এসো।
চাঁচি: সিহাব যদি ফোন অফ করে লুকিয়ে থাকে তাহলে আমি ওকে কোথায় খুঁজবো?
আব্বু: আনিশা চাঁচির সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?
চাঁচি: সিহাবকে খুঁজে পেলে আমি ওকে শাস্তি দিবো তোকে কথা দিলাম।
আমি: দেখা যাবে।
নাশতা করে উঠতে যাবো তখনি আবার মাথা ঘুরে গেল চাঁচি আমার হাত ধরে ফেললেন।
চাঁচি: কিরে কি হয়েছে?
আমি: আসলে চাঁচি রাতে একদম ঘুম হয়নি তাই মাথাটা বড্ড যন্ত্রণা করছে।
আব্বু: তাহলে আজ অফিসে যাস না।
আমি: না আব্বু যেতে হবে।
আব্বু: রাস্তায় যদি প্রবলেম হয়?
আমি: হবে না।
নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।
দরজার কাছে আসতেই মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলো।
মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লাম।
মুহূর্তের মধ্যেই দুচোখে অন্ধকার নেমে আসলো,
আস্তে আস্তে দুচোখ বুজে ফেললাম...
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com