তবুও ভালোবাসি | পর্ব -২৪
সকালের আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেছে সাথে বইছে ধমকা বাতাস, বারান্দায় দাঁড়িয়ে উদাসীন হয়ে মেঘলা আকাশ দেখছি। মেঘলা আকাশ আর ধমকা বাতাস যেন আমার মনেও প্রভাব ফেলছে তোলপাড় করে দিচ্ছে আমার ভিতরটা, বারবার ঢুকরে কেঁদে উঠতে চাইছে মন। রেলিং এ রাখা ফোনটা বারবার বেজে উঠছে স্কিনে ভেসে উঠছে আদিলের নাম, ইচ্ছে করে রিসিভ করছি না। রাতেও আদিল অনেক বার ফোন করেছিল কিন্তু রিসিভ করিনি, এবার বোধহয় রিসিভ করতেই হবে বড্ড বেশি জ্বালাচ্ছে ও।
আমি: হ্যালো।
আদিল: এতোগুলো কল দেওয়ার পর রিসিভ করেছ তাও আবার বিরক্তি ভরা কন্ঠে হ্যালো?
আমি: কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।
আদিল: আনিশা তুমি আমাকে ইগনোর করছ কেন?
আমি: এতো কথা বলার মতো সময় আমার কাছে নেই কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।
আদিল: হ্যাঁ তা থাকবে কেন আমি কে, অফিসে আসবে না?
আমি: আমার অফিসে আমি যাবো কিনা সেই কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে?
আদিল: উঁহু আমি কৈফিয়ত চাইছিও না, আসলে ডায়েরীটা...
আমি: রেখে দাও আমি কাল আসবো।
আদিল: এই ডায়েরী থেকে কিন্তু অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতে।
আমি: হ্যাঁ রেখে দাও কাল এসে পড়বো।
আদিল: তোমাকে আজ আসতে হবে আর এক্ষণি নাহলে...
আমি: নাহলে কি?
আদিল: ডায়েরীটা আমি পুড়িয়ে ফেলবো।
আমি: আদিল?
আদিল: চিৎকার করে লাভ নেই আমার কথা না শুনলে আমি ডায়েরীটা এখনি পুড়িয়ে ফেলবো।
আমি: না প্লিজ এমন করো না।
আদিল: ডায়েরী থেকে এইটা স্পষ্ট যে রাইমার সুইসাইড এর জন্য আম্মু দায়ী, এখন তুমি বলো আম্মুর বিরুদ্ধে প্রমাণ আমি কেন রাখতে যাবো, বরং পুড়িয়ে ফেলা ভালো।
আমি: না আদিল প্লিজ! তুমি থাকো অফিসে আমি আসছি।
আদিল: হ্যাঁ তাড়াতাড়ি এসো।
ফোন রেখে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম, বাসায় কাউকে জানালাম না জানালে যেতে দিবে না অফিসে গিয়ে নাহয় ফোন করে জানিয়ে দিবো। আদিলকে ইগনোর করেছিলাম কারণ মুখ ফসকে বলে দিতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট কিন্তু আদিল তো এখন আমায় উল্টো হুমকি দিচ্ছে, কেন যে ডায়েরী পুড়িয়ে ফেলার কথা ভাবছে ও জানে। আচ্ছা আদিল তখন কি বলছিল রাইমার সুইসাইড এর জন্য মা দায়ী, সত্যি কি তাই? ডায়েরী পড়েই বুঝতে পারবো।
অফিসে পৌঁছে সোজা আদিলের রুমে আসলাম কিন্তু আদিল নেই। আশ্চর্য তো আমাকে আসতে বলে আদিল নিজেই আসেনি? আচ্ছা আদিল আমার রুমে নয়তো? প্রশ্নটা মনে জাগতেই আমার রুমের দিকে এগুলাম।
আদিল টেবিলের উপর বসে আছে আর রাগে কটমট করছে, পাশে একটা লাল রঙের ডায়েরী রাখা। আমি আদিলের সাথে কোনো কথা না বলে ডায়েরীর দিকে হাত বাড়ালাম, আদিল আমার হাত ধরে ফেললো।
আমি: কি হলো?
আদিল: আমাকে ইগনোর করছ কেন?
আমি: আদিল আমি এখানে ডায়েরীটা নিতে এসেছি তোমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে আসিনি।
আদিল: ধ্যাত। (আদিল ডায়েরীটা ছুড়ে ফেলে দিলো আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, ওর চোখ দুটু রক্তবর্ণ হয়ে আছে)
আদিল: আমার প্রশ্নের উত্তর তোমাকে দিতে হবে তুমি বাধ্য আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে।
আমি: আদিল হাত ছাড়ো লাগছে। (আদিল আমার হাত জোড়ে চেপে ধরে আছে, ওর এমন অবস্থা দেখতে আমারো ভালো লাগছে না কিন্তু এছাড়া যে উপায় নেই। আদিলকে অবহেলা না করলে বেশি কথা বললে মুখ ফসকে বলে ফেলতে পারি তখন আব্বু খুব কষ্ট পাবেন। আমার জন্য আব্বু বারবার অপমানিত হচ্ছেন আর কষ্ট দিতে চাইনা আব্বুকে)
আদিল: কেন অবহেলা করছ আমায় কি করেছি আমি?
আমি: হাত ছাড়ো ডায়েরীটা নিয়ে আমাকে বাসায় যেতে হবে।
আদিল: কেন আমার কাছে থাকতে এখন আর ভালো লাগেনা?
আমি: আদিল তুমি কি এজন্য আমাকে অফিসে এনেছ? এসব কেন করছ?
আদিল: তুমি আমাকে অবহেলা কেন করছ?
আমি: (নিশ্চুপ)
আদিল: আনিশা তাকাও আমার দিকে বলো কি হয়েছে তোমার, হঠাৎ করে আমার সাথে এমন ব্যবহার কেন করছ? (আদিল আমার একদম কাছে দাঁড়িয়ে আমার দুগালে ধরে আমার দুচোখের দিকে শান্ত ভাবে তাকিয়ে আছে)
আদিল: নাকি আমি ধরে নিবো আম্মুর কথাই সত্যি, তুমি সিহাবের জন্য আমাকে অবহেলা করছ।
আদিলের মুখে এই কথা শুনে আমি যেন স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমার মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না, শেষ পর্যন্ত আদিলও? আদিলের দিকে বোবার মতো তাকিয়ে আছি দুচোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আদিল দুহাতে আমার মাথা চেপে ধরে আমার কপালে ওর কপাল ঠেকালো। হঠাৎ আচমকা আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেল।
সোফায় বসে ফ্লোরে পড়ে থাকা ডায়েরীটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আদিল আমার সামনে এসে দাঁড়ালো আমার মধ্যে যেন কোনো ভাবান্তর নেই বরফের মতো জমে গেছি আমি। আদিল হুট করে হাটু গেড়ে বসে পড়লো আমার পায়ের কাছে তারপর আমার কোলে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
আদিল: তখন আমার মাথা ঠিক ছিলনা তাই কথাটা বলে ফেলেছি ক্ষমা করে দাও প্লিজ!
আমি: (নিশ্চুপ)
আদিল: আম্মু মিতুর বিয়ে অন্য জায়গায় ঠিক করে নিচ্ছে, ডিভোর্স এর ব্যবস্থা করে ফেলেছে আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। আনিশা এই সময় যদি তুমি আমাকে ইগনোর করো তাহলে আমি কার কাছে যাবো? মাথা ঠিক ছিলনা তাই তখন... ক্ষমা করে দাও প্লিজ!
আমি: ডিভোর্স পেপারে সাইন করে পাঠিয়ে দিও আমি সাইন করে দিবো।
আদিল: কি?
আমি: নাহলে মিতুর বিয়ে আটকানো যাবে না। (আদিলকে দূরে সরিয়ে দিয়ে উঠে পড়লাম, ফ্লোর থেকে ডায়েরীটা তুলে হাতে নিলাম)
আমি: আমার সাথে আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করোনা।
আদিল: দাঁড়াও আনিশা। (দরজার কাছে চলে এসেছিলাম আদিলের ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পড়লাম)
আদিল: তুমি হয়তো এখন আর আমাকে ভালোবাস না তাই অবহেলা করতেই পারো কিন্তু একটা অনুরোধ প্লিজ ডায়েরীটা এখানে বসে পড়ো। দেখো আমরা একসাথে থাকি কিংবা না থাকি একসাথে রাইমার সুইসাইড এর কারণটা খুঁজে বের করতে হবে।
আদিলের কথা শুনে কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম তারপর চুপচাপ এসে সোফায় বসলাম, আদিল চেয়ার টেনে আমার সামনে এসে বসলো।
আমি ডায়েরী পড়তে শুরু করলাম...
"রাইমার সাথে আমার এক বছর ধরে সম্পর্ক, মেয়েটার সাথে এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় প্রথম দেখা হয়েছিল। প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম কারণ মেয়েটা ছিল খুব বেশি মায়াবতী। রাইমাকে আমি খুব ভালোবাসি রাইমা যে আমাকে ভালোবাসে না তা কিন্তু নয় শুধু ওর ভালোবাসা প্রকাশ করে না। রাইমাকে নিয়ে কখনো ডায়েরী লেখার প্রয়োজন হয়নি কারণ রাইমার প্রতি ভালোলাগা, ভালোবাসা, রাগ, অভিমান সবকিছু আমি ওর সাথেই শেয়ার করতাম, মেয়েটা অদ্ভুত ভাবে ভালোবেসে আমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিতো। কিন্তু আজ থেকে আমার ডায়েরী লিখতে হবে কষ্ট গুলো সব এই ডায়েরীর সাথেই শেয়ার করতে হবে কারণ আমার রাইমা তো আর কথা বলতে পারবে না। রাইমার আজ এক্সিডেন্ট হয়েছে ওর কন্ঠনালীতে আঘাত লেগেছে ডক্টর বলেছে রাইমা আর কখনো কথা বলতে পারবে না। রাইমার মুখে আর কখনো ভালোবাসি শব্দটা শুনতে পাবো না কষ্ট হচ্ছে খুব কিন্তু তবুও ভালোবাসি ওকে! এখন থেকে আমার একটাই কাজ রাইমাকে সবসময় হাসিখুশি রাখা"
পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম মাঝখানে কতোগুলো পৃষ্ঠা ছিঁড়া, ছিঁড়ল কে আদিল নয়তো? আদিলের দিকে তাকালাম ও আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি: আদিল..
আদিল: (নিশ্চুপ)
আমি: আদিল? (জোড়ে ডাক দিতেই আদিল হকচকিয়ে উঠলো)
আদিল: কি?
আমি: মাঝখানের পৃষ্ঠা গুলো ছিঁড়েছ কেন?
আদিল: আমি ছিঁড়তে যাবো কেন? আগে থেকেই ছিঁড়া ছিল। এতো অবিশ্বাস করো আমাকে? (আদিল আমার হাত থেকে ডায়েরী নিতে নিতে কথা গুলো বললো, মৃদু হাসলাম)
আমি: এইটা তো সামান্য ডায়েরী চরিত্র নিয়ে তো আর অবিশ্বাস করিনি ভালোবাসা নিয়ে তো সন্দেহ করিনি। (আদিল আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে)
আদিল: খোঁচা দিচ্ছ? বললাম তো ভুল হয়ে গেছে...
আমি: খোঁচা দিতে যাবো কেন? (আদিল ডায়েরীর শেষের দিকের পাতা গুলো থেকে কিছু লেখা বের করলো, ওর থেকে ডায়েরীটা এনে আবার পড়তে শুরু করলাম)
"ছিঁড়ে ফেলেছি ডায়েরীর মাঝখানের কিছু পাতা কারণ এগুলোতে রাইমার সাথে করা খুনসুটি গুলোর কথা লিখা ছিল। খুনসুটি গুলোর কথা মনে পড়লে ইদানীং বড্ড বেশি কষ্ট হয় কারণ রাইমা যে দুদিন পর অন্য কারো হয়ে যাবে। হ্যাঁ রাইমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, মেয়েটা আজ আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছে আমি ওর চোখের পানি মুছে দিতে পারিনি কারণ আম্মু আমাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি। সেদিন আম্মুকে রাইমার কথা বলেছিলাম শুধু বলতে পারিনি রাইমা যে কথা বলতে পারেনা, আম্মু হাসি মুখে আমাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছিল কিন্তু...
জানিনা হঠাৎ কি হলো আম্মু রাইমাকে দেখতে গিয়ে রাইমাদের বাসার বাইরে থেকেই ফিরে আসলো আর এসে কড়া ভাষায় জানিয়ে দিলো এ বিয়ে সম্ভব নয়"
"মাঝখানে কেটে গেছে কয়েকটা দিন, যতো দিন যাচ্ছে ততোই রাইমার বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে। আম্মুকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু আম্মু মানতে চাইছে না, কেন মানতে চাইছে না সেটাও বলছে না। রাইমা ওর আব্বুকে আমাদের সম্পর্কের কথা বলতে পারছে না, বলবে কি ভাবে প্রিয় মানুষ প্রতারণা করলে কি বলা যায় কার ভরসায় বলবে? হ্যাঁ আমি রাইমার সাথে প্রতারণা করেছি শুধুমাত্র আম্মুর জন্য"
"আজ রাইমার বিয়ে, রাইমা বারবার ফোন করে ঢুকরে কেঁদে উঠছে কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছি না। রাইমার অনুরোধে ওকে শেষবার দেখতে যাবো, দেখবো আমার মায়াবতীকে বউ সাজে কেমন লাগছে"
"হাত কাঁপছে কিছু লিখতে পারছি না পাশে রাখা ব্লেডের দিকে বারবার নজর পড়ছে, কিছুক্ষণ পর এই ব্লেড দিয়েই হাতের শিরা কাটবো। কেন বাঁচবো কার জন্য বাঁচবো? আজ যে আমার রাইমার বাসররাত। সকালে রাইমাকে দেখতে গিয়েছিলাম লাল বেনারসিতে লাল টুকটুকে পরীর মতো লাগছিল ওকে, দুহাত ভর্তি মেহেদী খুব সুন্দর লাগছিল আমার মায়াবতীকে। এখন তো রাইমা অন্যকারো অন্য কারো বিছানায় আছে হয়তো...
রাইমা অন্যকারো কথাটা ভাবতেই গাঁ শিউরে উঠছে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে, আম্মু চাইলে আজ রাতটা রাইমা আর আমার হতো"
"ভোররাত, রাইমা হয়তো পরম সুখে ওর স্বামীর বুকে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে অথচ ওর ঘুমানোর কথা ছিল আমার বুকে। বড্ড বেশি কষ্ট হচ্ছে আম্মুকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু পারবো না কারণ আমার মিতুটা মা হারা হয়ে যাবে, আমার মৃত্যুর পর আমার ভাই আদিলকে সামলে রাখবে কে? আম্মু আব্বুর মৃত্যুর পর যে ফুফু আমাদের মা হয়ে আমাদের আঘলে রেখেছেন, মিতুর জন্য ফুফুকে আমাদের মা হয়ে বেঁচে থাকতে হবে। আমি চলে যাচ্ছি ফুফু অবাক হওয়ার কিছু নেই তোমাকে এই শেষ সময়ে মা ডাকতে ঘৃণা হচ্ছে, মা হলে সন্তানকে এতো কষ্ট পেতে দিতে না। যদি কখনো পারো নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করো রাইমাকে আমার শেষ কথাটা বলে, আমি রাইমাকে সত্যি ভালোবাসি প্রতারণা করিনি আমি প্রতারণা করেছ তুমি"
শেষ পৃষ্ঠায় শুকনো রক্তের ছোপের আড়ালে লেখা "ভালোবাসি রাইমা" হয়তো শেষ লেখাটা লিখেই হাত কেটে ফেলেছিল পাগল প্রেমিকটা। আমার দুচোখ থেকে টুপটুপ করে পানি ডায়েরীতে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগে পড়ছে। আদিল আমার হাত থেকে ডায়েরীটা নিয়ে আমার পাশে এসে বসলো তারপর আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো, আদিলের কাধে মাথা রেখে কাঁদছি আর ভাবছি কতোটা কষ্ট পেলে একজন মানুষ সুইসাইড এর মতো পাপ কাজ বেছে নেয়?
আদিল: কাঁদছ কেন কাঁদলে কি ভাইয়া আর রাইমা ফিরে আসবে?
আমি: আপুর বিয়ের দিন রাতে ভাইয়া এসব লিখেছে আর সুইসাইড করেছে...
আদিল: সেদিন ভাইয়াকে সাথে সাথে হসপিটাল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, ভাইয়া প্রাণে বেঁচে গেলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল।
আমি: একটা মানুষ কতোটা কষ্ট পেলে এমন করে ভাবতে পারছ? ভাইয়া ভেবেছিল রাইমার বাসর হচ্ছে তাই এতো কষ্ট পেয়েছে ভাইয়া তো আর জানতো না রাইমা বিয়ের দিন দুপুরবেলা বিষ খেয়েছিল। সেদিন ভোররাতে ভাইয়া ধরে নিয়েছিল রাইমা ওর স্বামীর বুকে পরম সুখে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে কিন্তু ভাইয়া তো আর জানতো না সেদিন রাত আট'টায় রাইমাকে কবরে চিরনিদ্রায় আব্বু ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছিল।
আদিল: আনিশা নিজেকে সামলাও, কেন কাঁদছ এভাবে?
আমি: ভাইয়া ডায়েরী লিখেছিল বলে ভাইয়ার কষ্টটা আমরা জানতে পেরেছি একবারো ভেবে দেখেছ আমার বোন কতোটা কষ্ট নিয়ে মারা গেছে? এই বোকা মেয়েটা আমাকে পর্যন্ত নিজের ভালোবাসার কথা বলেনি একা একা সব কষ্ট বুকে নিয়ে চলে গেছে।
আদিল: এভাবে কাঁদবে নাকি বুঝার চেষ্টা করবে ওদের দুজনের মৃত্যুর জন্য কে দায়ী?
আমি: বুঝার কি আছে এইটা তো স্পষ্ট ওদের মৃত্যুর জন্য তোমার আম্মু দায়ী।
আদিল: (নিশ্চুপ)
আমি: তোমার আম্মু এতোদিন অনেক করেছে এবার আমি উনাকে বুঝাবো কাউকে সুইসাইড এর জন্য বাধ্য করার শাস্তি কি। দুজনকে মেরে উনার মন শান্ত হয়নি এখন আবার চার চারটা জীবন নিয়ে উনি খেলা করছেন।
আদিল: আনিশা একটা কথা ভেবে দেখেছ আম্মু এখন যেমন আমাদের এক হতে দিচ্ছেন না তেমনি ভাইয়া আর রাইমাকে এক হতে দেননি। আচ্ছা আনিশা এখন নাহয় সিহাব তোমার নামে বাজে কথা বলেছে তখনও কি সিহাব রাইমার নামে বাজে কথা বলেছিল? (সত্যি তো সিহাব তো রাইমা আর আবির ভাইয়ার ব্যাপারে জানতো না আর সিহাব তো পছন্দ করে আমাকে রাইমাকে নয়)
আদিল: কি ভাবছ? এমন নয়তো আম্মু পুরনো কোনো শত্রুতা থেকে এমন করছেন?
আমি: যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে শত্রুতা নিশ্চয় আব্বুর সাথে, কিন্তু কি শত্রুতা?
আদিল: আম্মুর কাছে চলো আজ জিজ্ঞেস করবো সবকিছু।
আমি: তোমার আম্মু যা মহিলা উনি আবার বলবেন।
আদিল: তুমি রাইমার সুইসাইড এর জন্য আম্মুকে দায়ী করবে তাহলেই উনি সব বলতে বাধ্য হবেন।
আমি: হুম চলো। (ডায়েরী হাতে নিয়ে পা বাড়াতেই আদিল আমার হাত ধরে ফেললো)
আমি: কি?
আদিল: কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছ? (আদিলের প্রশ্ন শুনে পেটের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম)
আমি: চলো।
আদিলকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে আসলাম।
আদিলদের বাসায় এসে দরজা খুলা দেখে দুজন বেশ অবাক হলাম, এক পা দু পা করে ভিতরে এসে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছি কাউকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। মিতু, নীরব, দাদু, মা সবাই কোথায়? মায়ের রুমের পাশে আসতেই দুটু চেনা কন্ঠ শুনে আদিল আমি দুজন থমকে দাঁড়ালাম...
চলবে😍
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com