আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ১ || লেখিকা: সুলতানা তমা
"আরশান তোর ফোন বাজছে"
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সামনে পিছনে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম হলুদ পাঞ্জাবীতে আমাকে কেমন লাগছে তখনি শান্তর ডাক পড়লো। শান্ত, আরিয়ান, সিফাত ওরা সবাই বাগানে বসে গীটারে টুংটাং সূর তুলছে আর গান গাইছে, আমার ফোনটা ওদের হাতে বন্ধী আছে তাই তাড়াহুড়ো করে বাগানের দিকে ছুটলাম।
আমি আরশান। আব্বু, আম্মু, বড় বোন ফারিয়া, চাচ্চু, চাঁচি, চাচাতো ভাই আদিত্য আর চাচাতো বোন রোদেলা এই আমাদের পরিবার। আমার আরো একটা পরিবার আছে শান্ত, আরিয়ান, সিফাত আর অধরাকে নিয়ে ওরা সবাই আমার কলিজার টুকরো বন্ধু। শান্তর বোনের বিয়েতে গ্রামে এসেছি সবাই আর আজ রাতে গায়ে হলুদ।
সিফাত: বাব্বাহ্ এ আমি কাকে দেখছি?
আরিয়ান: যাই বলিস হলুদ পাঞ্জাবীতে তোকে খুব সুন্দর মানিয়েছে।
সিফাত: এই বিয়ে বাড়ির মেয়েরা আজ তোর প্রেমে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। (শালারা হাসছে দেখে ইচ্ছে হচ্ছে দেই দু একটা কিন্তু দিলাম না কারণ আগে দেখতে হবে কে ফোন করেছিল, আপু নয়তো?)
আমি: অনেক বকবক করেছিস এবার আমার ফোনটা কোথায় দে।
শান্ত: এইযে।
শান্তর থেকে ফোন এনে তাড়াতাড়ি কল লিস্ট চ্যাক করলাম আপু অনেক বার ফোন করেছিল, আজ তো আপু খুব রাগ করবে। তাড়াতাড়ি আপুকে কল ব্যাক করলাম।
আপু: কিরে ভাই এতক্ষণ ধরে কল দিয়ে যাচ্ছি ধরছিলি না কেন?
আমি: আপু কিছুক্ষণ পর তো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান তাই রেডি হচ্ছিলাম।
আপু: ভাই তুই এমনিতে যা সুন্দর একটু কম সাজগোজ করিস, বিয়ে বাড়ির মেয়েরা কিন্তু তোর প্রেমে হাবুডুবু খাবে তখন কাকে রেখে কাকে মন দিবি?
আমি: আপু শেষ পর্যন্ত তুইও শুরু করলি?
আপু: কেন আরিয়ানরা বুঝি খুব ক্ষেপিয়েছে?
আমি: হ্যাঁ, ভাগ্য ভালো অধরা গ্রামে আসেনি।
আপু: যাই বলিস অধরা মেয়েটা কিন্তু খারাপ না।
আমি: আপু ও আমার বন্ধু হয়। আর তুই তো জানিস এসব প্রেম টেম আমার ভালো লাগেনা।
আরিয়ান: আপুকে মিথ্যে বলা হচ্ছে? এখনি যদি কোনো রূপবতী তোর সামনে দিয়ে যায় তাহলে তো তার প্রেমে হাবুডুবু খাবি।
আমি: থামবি তুই?
শান্ত: কেন থামবে ও ভুল কিছু বলেছে নাকি?
আমি: তোদের আমি...
আপু: ভাই মারিস না ওদের ফাজলামো করতে দে। (এদিকে ওরা হাসাহাসি করছে আবার ফোনের ওপাশে আপু হাসছে রাগ কন্ট্রোলের বাইরে চলে যাচ্ছে তাই তাড়াতাড়ি ওদের সামনে থেকে চলে আসলাম)
আমি: হ্যাঁ আপু এবার বল।
আপু: ওদের কথা শুনা যাচ্ছে না কেন?
আমি: কারণ আমি ওদের রেখে রুমের দিকে যাচ্ছি।
আপু: ওহ!
আমি: আম্মু কি করছে রাতের খাবার খেয়েছে?
আপু: হ্যাঁ। আচ্ছা তুই বাসায় ফিরছিস কবে?
আমি: এইতো বিয়ে... (চোখ আটকে গেলো এক এলোকেশীর চুলের উপর, লম্বা দীঘল কালো চুল গুলো পুরো পিটময় ছড়িয়ে কোমড় ছাড়িয়ে একদম হাটুর কাছে গিয়ে থেমেছে। এতো সুন্দর চুল? কিন্তু মেয়েটা এই রুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কি করছে? আমি কি তাহলে ভুল করে অন্য কারো রুমে ঢুকে পড়লাম? আমাদের মানে শান্তর রুমে এই মেয়ে কে? চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম হ্যাঁ এটাই তো শান্তর রুম এইতো আমাদের চার বন্ধুর জিনিসপত্র)
আপু: ভাই কথা বলছিস না কেন কি হয়েছে?
আমি: দেখছি।
আপু: কি?
আমি: এক এলোকেশীকে।
আপু: কি? তোর মাথা ঠিক আছে তো? ভাই আমি কিন্তু শুনেছি গ্রামে ভূত পেত্নী থাকে।
আমি: আপু ও কোনো পেত্নী নয়, যদিও এখনো মুখ দেখিনি তবে আমার মন বলছে ও দেখতে খুব মায়াবতী হবে।
আপু: মায়াবতী?
"উফফ কিছুতেই হচ্ছে না বারবার লেপ্টে যাচ্ছে কাজলটা, আর দিবোই না" (নিজের উপর একরাশ বিরক্তি নিয়ে মেয়েটি পিছন ফিরে তাকালো, দরজায় আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হকচকিয়ে উঠে থমকে দাঁড়ালো। গায়ের রঙ কিছুটা চাপা, হাটু অব্ধি দীঘল কালো চুল, চোখ দুটু কাজল ছাড়াই হরিণীর চোখের মতো, নাকের আঘায় ছোট একটি তিলক, ঠোঁটে পিংক কালারের হালকা লিপস্টিক, কানের পাশে দুটু কাঠগোলাপ গাঁথা, কপালে ছোট একটি লাল টিপ, দু হাত ভর্তি লাল হলুদ রেশমী চুড়ি, পায়ে আলতা, লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি সুবহানআল্লাহ্ খুব সুন্দর)
আপু: ভাই কথা বলছিস না কেন কি হয়েছে?
আমি: আপু আল্লাহর সৃষ্টি এতো সুন্দর? আমিতো প্রথম দেখায় ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।
আপু: মানে?
আমি: মায়াবতী...
"আপনি এই রুমে কি করছেন? আর নক করে ঢুকলেন না কেন?" (মেয়েটির কথায় যেন আমি স্তম্ভিত ফিরে পেলাম)
আমি: আপু রাখছি পরে কল দিচ্ছি।
আপু: ভাই এই ভাই শুন...
আপুর কথা না শুনে ফোন কেটে দিলাম।
মুগ্ধ নয়নে মায়াবতীর দিকে তাকিয়ে আছি, গভীর দুটু চোখে মায়া ভরা ওর।
"কি হলো কথা বলছেন না কেন"
মায়াবতীর কথায় আমার হুশ ফিরলো, মৃদু হেসে আস্তে আস্তে রুমের ভিতর ঢুকছি আর মায়াবতী ভয়ে চুপসে একটু একটু করে পিছিয়ে যাচ্ছে। আমি এগুচ্ছি আর মায়াবতী পিছিয়ে যাচ্ছে, ও পিছিয়ে গিয়ে টেবিলের সাথে ধাক্কা খেয়ে থেমে গেলো। মায়াবতীর ভয় পেয়ে চুপসে যাওয়া মুখ দেখে মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিলাম, ওর কোমড়ের কাছ দিয়ে আমার হাত যাচ্ছে দেখে ও ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো। টেবিল থেকে আমার ঘড়িটা এনে মায়াবতীর দিকে তাকালাম ভয় পেয়ে চোখ দুটু বন্ধ করে ফেলেছে।
আমি: এইযে মায়াবতী। (আমার ডাক শুনে চোখ খুলে তাকালো আর আমার হাতে ঘড়ি দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো)
আমি: কি ভেবেছিলে প্রথম দেখায়...
যাহ্ ভয়ে পেয়ে হাতের কাজলের কৌটোটা ফেলে রেখেই দৌড়ে চলে গেলো, পাগলী একটা।
কাজলের কৌটোটা ফ্লোর থেকে তুলে হাতে নিলাম, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি কৌটোটার দিকে। আচ্ছা কাজল ছাড়াই তো মায়াবতীর চোখ দুটু হরিণীর চোখের মতো তাহলে এই কাজল দিলে পর ওই মায়া ভরা চোখ দুটি দেখতে ঠিক কতোটা সুন্দর হয়? নিশ্চয়ই ওই চোখ দুটির গভীরতা আরো বেড়ে যায় আরো বেশি মায়াময় হয়ে উঠে ওই হরিণী চোখ দুটু।
শান্ত: এই আরশান? (শান্তর ধাক্কায় চমকে উঠে কাজলের কৌটোটা লুকিয়ে পিছনে তাকালাম)
শান্ত: কিরে কতক্ষণ ধরে ডাকছি শুনছিসই না আর তোর হাতে ওটা কি ছিল কি লুকালি?
আমি: ককই কিকিছু নাতো।
শান্ত: কিছু তো একটা ব্যাপার আছেই নাহলে এভাবে তোতলাচ্ছিস কেন?
আমি: কিছু না অজতা ভাবছিস।
শান্ত: ঠিক আছে এবার বাইরে চল অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।
আমি: হ্যাঁ আসছি।
শান্ত চলে গেছে, উফফ জোড় বাঁচা বেঁচে গেছি। একবার যদি ওরা এই কাজলের কৌটোটা দেখে তাহলে আমাকে হাজারটা প্রশ্ন করবে। কিন্তু আমি কি করে ভুলবো এই কৌটোর কথা? এই কাজলের কৌটোর মালিনী যে আমার মন কেড়ে নিয়েছে তাকে যে আমি প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি। মায়াবতীকে দেখার পর থেকে আমার মনের ভিতর কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এই মায়াবতী কে কি তার পরিচয় সবকিছু আমাকে জানতে হবে। কৌটোটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কৌটোটা লুকিয়ে রেখে স্টেজের দিকে পা বাড়ালাম।
আরিয়ান: কিরে এতক্ষণ কোথায় ছিলি?
আমি: এইতো রুমে আপুর সাথে ফোনে কথা বলছিলাম।
সিফাত: তুই কি কাউকে খুঁজছিস চারদিকে এভাবে চোখ বুলাচ্ছিস যে।
আমি: কোথায় কাউকে নাতো। (খুঁজছি তো বটেই, এক ঝাক মেয়েরা শান্তর বোনের পাশে আছে কিন্তু আমার মায়াবতীকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না)
আরিয়ান: এই আরশান কি হয়েছে তোর?
আমি: আরে কি হবে?
আরিয়ান: বারবার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছিস কোথায় যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলছিস কি ব্যাপার?
আমি: শান্ত কোথায়?
সিফাত: তুই এতো মনোযোগ দিয়ে শান্তকে খুঁজছিলি আমিতো ভাবলাম ঐ এক ঝাক মেয়ে থেকে বুঝি...
আমি: মেয়ে দেখার অভ্যাস তোর তুই'ই দেখ আসছি আমি।
সিফাত: কোথায় যাচ্ছিস?
সিফাতের কথার জবাব না দিয়ে চারপাশে চোখ বুলাতে লাগলাম কোথায় যে হারিয়ে গেলো মেয়েটা।
খুঁজতে খুঁজতে বাগানের দিকে আসতেই হঠাৎ মায়াবতীকে পেয়ে গেলাম, একা দাঁড়িয়ে আছে। দেখে তো মনে হচ্ছে কারো জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু কার জন্য বয়ফ্রেন্ড নাতো? এক পা দু পা করে ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর আমার হার্টবিট বেড়ে চলেছে মনে হচ্ছে এখনি ওর বয়ফ্রেন্ড এসে ওর হাত ধরে নিয়ে যাবে ওকে।
"এই হিমি এদিকে" কারো ডাকে ও পিছন ফিরে তাকালো আমিও তাকালাম এতো শান্তর ছোট বোন তারিন, তারমানে মায়াবতীর নাম হিমি? বাহ্ খুব সুন্দর নাম।
তারিন: কিরে ওদিকে ডাকছিলাম যাচ্ছিলি না কেন? এই নে তোর আইসক্রিম, এই রাতের বেলা আইসক্রিম খেয়ে যে কি মজা পাস বুঝিনা। (হিমির দিকে লক্ষ করলাম আইসক্রিম না নিয়ে বারবার আড়চোখে আমাকে দেখছে, ওর দুচোখে ভয় স্পষ্ট ফুঁটে ওঠেছে)
তারিন: আরে আরশান ভাইয়া তুমি এখানে বাকিরা কোথায়? (হঠাৎ তারিনের প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে উঠলাম)
আমি: না মানে ওদেরকেই তো খুঁজছিলাম। (হিমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমি ওকে আড়চোখে দেখছি, এর মধ্যে চোখে কাজলটাও দিয়ে নিয়েছে। আমার ধারণাই সত্যি কাজল পড়লে মেয়েটার মায়া ভরা হরিণী চোখ দুটু আরো মায়াবী হয়ে উঠে)
তারিন: দেখো হয়তো স্টেজের দিকে গীটার নিয়ে বসে আছে, আসছি। হিমি চল।
হিমি আমার দিকে একনজর তাকিয়ে তারিনের হাত ধরে তাড়াতাড়ি চলে গেল, আশ্চর্য এই মেয়ে আমাকে এতো ভয় পায় কেন?
ভোররাত, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ তবুও মেহমানদের গিজগিজ কমেনি। এতো মেহমানের সামনে তো আর ড্রিংক করা যায় না তাই চার বন্ধু পুকুরপাড়ে বসে এনজয় করছি।
শান্ত: আব্বু যদি একবার বুঝতে পারে তাহলে আমাকে বাড়ি ছাড়া করবে।
আমি: আসছে সাধু মানুষ, বিভিন্ন পার্টিতে যখন ড্রিংক করিস তখন বাবার কথা মনে পড়ে না?
সিফাত: তখন তো ওর বাবা মঙ্গল গ্রহে থাকে তাই ভুলে যায়। (সিফাতের কথায় সবাই একসাথে হেসে উঠলাম)
শান্ত: কিন্তু গ্রামে এসে তো কখনো এসব খাইনি।
আরিয়ান: তাতে কি হয়েছে আজ খাঁ, তোর বোনের বিয়ে আর তুই এনজয় করবি না? (আরিয়ান আমার দিকে গ্লাস এগিয়ে দিলো, আমি গ্লাস হাতে নিতেই কয়েকটা মেয়ের হাসির শব্দ শুনতে পেলাম)
আরিয়ান: এই রাতের বেলা এদিকে আবার কে আসছে?
শান্ত: তারিন হবে ওর বান্ধবীদের সাথে নিয়ে আসছে হয়তো।
সিফাত: এসব লুকাতে হবে?
শান্ত: না না তারিন জানে আমরা যে ড্রিংক করি।
আমি: তাহলে আর প্রবলেম কি? (গ্লাসে চুমুক দিতে যাবো তখনি দেখি সামনে হিমি, এখনি ওদের আসতে হলো? তাড়াতাড়ি গ্লাস ছুড়ে পুকুরে ফেলে দিলাম, প্রথম দিনেই হিমির সামনে খারাপ হয়ে গেলাম?)
শান্ত: কিরে কি হলো?
আমি: কতবার তোদের এসব ছাইপাঁশ খেতে বারণ করেছি আমার কথাই শুনিস না তোরা। (সবাই আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে)
তারিন: ভাইয়া এখানে এসব আব্বু দেখলে কি হবে বুঝতে পারছ?
শান্ত: ওদের আমি আগেই বলেছিলাম এসব না আনতে।
আমি: হ্যাঁ আমিও বলেছিলাম।
তারিন: আব্বু দেখলে খুব রেগে যাবে এসব তাড়াতাড়ি সরিয়ে ফেলো।
শান্ত: ঠিক আছে। (তারিন সবাইকে নিয়ে চলে যেতেই আরিয়ান এসে আমার হাত চেপে ধরলো)
আরিয়ান: এই শালা এতো ভালো হলি কবে? এসব আমাদের থেকে কে বেশি খায়?
আমি: খাইতো আমিই তবে এবার মনে হচ্ছে এসব ড্রিংক মারামারি ঝামেলা ছেড়ে দিতে হবে।
সিফাত: কি?
আমি: সবাই আমার দিকে এমন হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?
শান্ত: ভাই তুই কি প্রেমে টেমে পড়েছিস? ব্যাপারস্যাপার একদম ভালো ঠেকছে না। (ফোন বেজে উঠলো, আম্মু এই ভোররাতে ফোন করেছেন বাসায় কোনো বিপদ হয়নি তো?)
শান্ত: কিরে এই সময় কে ফোন করলো?
আমি: আম্মু।
সবার থেকে কিছুটা দূরে এসে ফোন রিসিভ করলাম।
আমি: আম্মু কি হয়েছে?
আম্মু: কিছুনা এমনি ফোন করলাম।
আমি: এই ভোররাতে?
আম্মু: ছেলের কাছে ফোন দিতে বুঝি সময় অসময় লাগে? হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো ভাবলাম তুই ঠিক আছিস কিনা দেখি।
আমি: আম্মু তুমি আমাকে নিয়ে এতো ভাবো কেন? তুমি যতোটা ভাবো তার এক ভাগ যদি আব্বু আমাকে নিয়ে ভাবতেন তাহলে সত্যি আমি পৃথিবীর সেরা সুখী মানুষ হতাম।
আম্মু: বাদ দে না বাবা, এবার বল গ্রামে তোর কোনো অসুবিধা হচ্ছে নাতো?
আমি: না আম্মু বরং এখানে আমি অনেক ভালো আছি।
আম্মু: এতো খুশির কারণ কি জানতে পারি?
আমি: অবশ্যই, আচ্ছা আম্মু আমি যদি তোমার জন্য একটা বৌমা নিয়ে আসি তাহলে কেমন হয়?
আম্মু: তারমানে এতোদিনে আমার ছেলে কাউকে পছন্দ করেছে, এই আমার বৌমা দেখতে কেমন?
আমি: মাশাআল্লাহ্ অনেক সুন্দর, তুমি হিমিকে পছন্দ করবে আমি শিওর।
আম্মু: নাম বুঝি হিমি?
আমি: হ্যাঁ।
আম্মু: প্রপোজ করেছিস?
আমি: না আজকেই তো মাত্র দেখলাম। তাছাড়া তোমার বৌমা আমাকে দেখলেই ভয় পায়।
আম্মু: একবার প্রপোজ করে নে দেখবি ভয়ডর সব হারিয়ে যাবে।
আমি: ঠিক আছে।
আম্মু: আর হ্যাঁ তোর ক্যামেরায় যেন আমার বৌমার অনেক গুলো ছবি থাকে।
আমি: ঠিক আছে আম্মু।
আম্মু: রাখছি।
আমি: লাভ ইউ আম্মু।
আম্মু: লাভ ইউ টু।
আম্মু ফোন রেখে দিতেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম, আম্মুকে তো হিমির কথাটা বলে দিলাম যদিও জানি আম্মু আমার পছন্দকে কখনো অপছন্দ করবে না, এমন মা যে সবার ভাগ্যে জুটে না।
গাছের ডালপালা আর পাতার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে সূর্য, আমি বাগানে দাঁড়িয়ে সকালের এই মুগ্ধ করা সূর্যোদয়কে ক্যামেরায় বন্ধি করছি। ফটোগ্রাফিটা আমি খারাপ পারি না তাইতো বাগানে ফুটা নানা রঙের ফুল আর সূর্যোদয় ক্যামেরায় বন্ধি করছি। সকালের মৃদু হাওয়া সাথে এমন মন্ত্রমুগ্ধকর সূর্যোদয়, পাখির কিচিরমিচির ডাক গ্রামে না আসলে বোধহয় এগুলো কখনো উপভোগ করা হতো না। মুগ্ধকর এই সকালের পরিবেশ দেখে নিজের অজান্তেই মিটিমিটি হাসছিলাম আর এটাসেটার ছবি তুলছিলাম হঠাৎ ক্যামেরায় চোখ আটকে গেলো, হিমি পুকুরপাড়ে বসে আছে। ক্যামেরা সরিয়ে হিমির দিকে তাকালাম, হিমি আনমনা হয়ে চায়ের কাপে ছোট ছোট চুমুক দিচ্ছে, ওর দীঘল কালো চুল গুলো পিটময় ছড়িয়ে মাটিতে এসে পড়েছে। সকালের মিষ্টি বাতাস অবাধ্যের মতো বারবার হিমির চুল গুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে আর হিমি চোখেমুখে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বারবার চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে নিচ্ছে। যদিও জানি কারো অনুমতি না নিয়ে ছবি তোলা অন্যায় তবুও এখন তুলতে হচ্ছে আম্মুর জন্য, আম্মুর তো উনার বৌমাকে দেখার অধিকার নিশ্চয় আছে। গাছের আড়াল থেকে ঝটপট হিমির কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম, কোনো ছবিতে হিমি চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে, কোনো ছবিতে অবাধ্য চুল গুলোকে কানের পাশে গুঁজে দিচ্ছে আবার কোনো ছবিতে হিমি পুকুরে ঢিল ছুড়ে মারছে।
আরিয়ান: কিরে একা একা মিটিমিটি হাসছিস যে কি আছে ক্যামেরায়? (হিমির ছবি গুলো দেখে নিজের অজান্তেই হাসছিলাম হঠাৎ আরিয়ানের কথায় হুশ ফিরলো)
আমি: ক্যামেরায় আবার কি থাকবে কিছু নেই তো।
আরিয়ান: তুই তো আবার ফটোগ্রাফিটা ভালোই পারিস থাকতেও তো পারে কোনো ছবি।
আমি: হ্যাঁ আছে তো এই সুন্দর সকাল, বাগানের নানা রঙের ফুল আর সূর্যোদয় এর ছবি।
আরিয়ান: ভাই তুই পারিসও।
সিফাত: এই তোরা ওখানে কি করছিস? (সিফাত আমাদের ডেকে গীটার হাতে নিয়ে এদিকেই আসছে, সিফাতের ডাক শুনে হিমি পিছন ফিরে তাকালো। আমাকে বোধহয় হিমি এখানে আশা করেনি তাই উঠে চলে যেতে চাইলো, পরক্ষণেই আবার কি যেন ভেবে না গিয়ে আবার বসে পড়লো)
সিফাত: কিরে ওদিকে কি?
আমি: কিছুনা।
সিফাত: কত সুন্দর সকাল দেখেছিস?
আমি: হুম, তবে একটু পর আর এই সৌন্দর্য থাকবে না। বিয়ে বাড়ির মেহমানরা সব গিজগিজ করতে শুরু করবে।
শান্ত: এখন যে সৌন্দর্য আছে সেটাকে আরো একটু সুন্দর করে তুলনা। (শান্ত এসেই বাগানে বসে পড়লো, শান্তকে দেখে আমরাও বসে পড়লাম)
সিফাত: আরশান কিন্তু চাইলেই ওর মিষ্টি কন্ঠের গান দিয়ে এই সুন্দর সকালটাকে আরো সুন্দর করে তুলতে পারে।
আরিয়ান: হ্যাঁ আরশান একটা গান প্লিজ!
হিমির দিকে তাকালাম বারবার আড়চোখে আমাকে দেখছে আর আমি তাকালেই তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিচ্ছে। হিমি পুকুরপাড়ে বসে আছে আর আমরা বাগানে, দুজনের মধ্যে দূরত্বটা খুব একটা বেশি নয়। আমি গান গাইলে নিশ্চয় হিমি শুনতে পাবে আর ভালোবাসার মানুষকে গান শুনাতে কে না চায়? সিফাতের থেকে গীটার এনে হিমির দিকে তাকিয়েই গীটারে টুংটাং সূর তুললাম, হিমি আড়চোখে আমাকে দেখছে দেখে এক গাল হেসে গান শুরু করলাম...
প্রথম দেখে ভালোলাগা এলোমেলো মন
সময় যেন যাচ্ছে থেমে ভেবে সারাক্ষণ!
রোদের রঙে যাক মিশে ভালোলাগা সব
তোমায় পেলে আর কিছুই চায় না অনুভব!
তুমি এলে যেন অবাক শ্রাবণের সুখ
বলো চোখের যাক থেমে দেখে ঐ মুখ!
ভাসলো মেঘে পরাণ আমার উদাসী মন
কান পেতে শুনতে পাবে বুকের কাঁপন....
চলবে😍
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com