Breaking News

তবুও ভালোবাসি | পর্ব -২৮



আদিলের কোলে মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে আছি আদিল এক হাতে ফোন টিপছে অন্যহাত দিয়ে আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সকাল নয়টা বাজে আর কিছুক্ষণ পর বাসায় ফিরে যেতে হবে কিন্তু যেতে মন চাইছে না ইচ্ছে হচ্ছে আদিলের কাছে থেকে যাই। আর ফিরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না আব্বু আর মায়ের দ্বন্দ্বের মাঝে। মায়ের রাগের কাছে বারবার আমাদের ভালোবাসা হেরে যাচ্ছে তাই আর ফিরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না কিন্তু যেতে তো হবেই নাহলে যে আব্বু...
আদিল: আনিশা দেখো।
আমি: কি? (আদিল আমার সামনে ওর ফোনটা ধরলো ফোনের স্কিনে একটা ছোট্ট কিউট বেবির পিক ভেসে আছে)
আদিল: আমাদের বেবি এমন কিউট হবে। (আদিলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম)
আদিল: আর চোখ দুটু হবে তোমার চোখের মতো।
আমি: তাই?
আদিল: হুম, আনিশা আমি আর ফিরে যাবো না। এখান থেকে আমরা অনেক দূরে চলে যাবো। (আদিল আমার কপালে চুমু দিয়ে আমার একটা হাত ওর হাতের মুঠোয় পুরে নিলো)
আমি: না আদিল আমি আব্বুকে একা রেখে তোমার সাথে দূরে যেতে পারবো না।
আদিল: কেন? (আমার হাত ছেড়ে দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার চোখের দিকে)
আমি: আব্বু তো আমাদের মেনে নিয়েছেন আব্বু সব রাগ ভুলে গেছেন তাহলে আমি কেন আব্বুকে শাস্তি দিব?
আদিল: (নিশ্চুপ)
আমি: আমি আব্বুকে ছেড়ে যেতে পারবো না তুমি চাইলে...
আদিল: ঠিক আছে তুমি বাসায় যাও আমি আম্মুকে শেষ বার বুঝানোর চেষ্টা করছি।
আমি: উনি যদি না মানেন?
আদিল: মিতু আর তোমাকে নিয়ে অন্য বাসায় উঠবো, যে আমার সুখের কথা না ভেবে নিজের জিদ আর রাগকে প্রাধান্য দেয় তার কাছে আমি থাকবো না।
আমি: কিন্তু আদিল...
আদিল: আনিশা প্লিজ এখন আর বলো না তুমি সবাইকে নিয়ে সংসার সাজাতে চাও, এইটা সম্ভব না কখনো।
আমি: হুম।
প্রান্ত: আদিল নাশতা করবি আয়।
আদিল: আসছি, আনিশা রেডি হয়ে নাও তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমি বাসায় যাবো।
আমি: ঠিক আছে।

রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে আসলাম আদিল আর প্রান্ত বসে আছে নাশতার টেবিলে।
আদিল: আনিশা এসো।
প্রান্ত: মেডাম ডাকবো নাকি ভাবি? (প্রান্ত আর আদিল হাসছে, আমি মৃদু হেসে চেয়ার টেনে বসলাম)
প্রান্ত: আদিল কাল যা বলছিলি, আমি ভাবছি মিতু আর নীরব আমার বাসায় উঠলে কেমন হয়?
আমি: মিতু আর নীরব এই বাসায় উঠবে মানে?
আদিল: আনিশা তোমাকে বলা হয়নি আমি ভাবছি আম্মুকে লুকিয়ে ওদের রেজিস্ট্রি করে ফেলবো।
আমি: কি বলছ এসব?
আদিল: এছাড়া উপায় নেই, ওদের রেজিস্ট্রি হয়ে গেলে আম্মু আর ডিভোর্স নিয়ে ভয় দেখাতে পারবে না।
আমি: কিন্তু আদিল এইটা অন্যায়। মা কিন্তু বিয়ে না করে শুধুমাত্র মিতুর জন্য তোমাদের মা হয়ে আছেন।
আদিল: কিন্তু...
আমি: যে ফুফু তোমাদের কষ্টের কথা ভেবে নিজের সুখ বিসর্জন দিয়েছেন তাকে না জানিয়ে মিতুর বিয়ের কথা ভাবছ কিভাবে? আদিল উনি কিন্তু চাইলেই আব্বুর সাথে ব্রেকআপ হবার পর নতুন করে জীবন সাজাতে পারতেন কিন্তু মিতুর কথা ভেবে উনি...
আদিল: উনি এখন আর আমাদের সুখ খুঁজেন না এইটাও কিন্তু সত্যি।
আমি: কিন্তু তাই বলে লুকিয়ে বিয়ে? আদিল এইটা অন্যায় হয়ে যাবে।
আদিল: আর আম্মু যা করছে সেগুলো অন্যায় নয়? আনিশা তুমি প্রেগন্যান্ট এই সময় তোমার... (আদিল থেমে গেল কি যেন ভাবছে)
প্রান্ত: কিরে কি ভাবছিস?
আদিল: আচ্ছা আনিশা তুমি যে প্রেগন্যান্ট সেটা তো আম্মু জানেনা, জানলে হয়তো আম্মু তোমাকে মেনে নিবে।
আমি: মা জানেন।
আদিল: কি?
আমি: যেদিন আমি অসুস্থ হয়ে হসপিটাল ছিলাম সেদিনই আব্বু মা'কে জানিয়েছেন আর উনি আমাকে দেখতে হসপিটালও গিয়েছিলেন।
আদিল: তুমি হসপিটাল ছিলে?
আমি: হুম ডায়েরীর কথা যেদিন প্রথম বলেছিলে সেদিনই...
আদিল: এজন্যই তুমি সেদিন অফিস যাওনি? তুমি সেদিন প্রেগনেন্সির কথা জেনেছ আর আমাকে বলেছ কাল রাতে বাহ্!
আমি: সবাই নিষেধ করেছিল আর আমিও রাগ করে বলিনি।
আদিল: কিসের রাগ?
আমি: মা খুব বাজে কথা বলেছিলেন তাই...
আদিল: মা প্রেগনেন্সির কথা শুনেও মেনে নেয়নি?
আমি: না উনি উল্টো আমাকে আব্বু ফুফু চাঁচি সবার সামনে জিজ্ঞেস করেছিলেন বেবিটা কার তোমার নাকি সিহাবের। (কথাগুলো বলতে গলায় কান্না দলা পেকে আসছিল তাও বললাম নাহলে যে আদিল আমাকে ভুল বুঝবে)
আদিল: কি?
প্রান্ত: তোর আম্মু এতোটা নিচ ছিঃ! এসব শুনার পর যেকোনো মেয়ের রাগ হবে, ভাবি যে তোকে এখনো ভালোবাসে এটাই তো তোর ভাগ্য।
আদিল: আনিশা তুমি আবার আমাকে বলছ ওই মহিলাকে লুকিয়ে মিতুর বিয়ে দিলে অন্যায় করা হবে? আরে এই মহিলা তো...
আমি: আদিল প্লিজ নিজেকে সামলাও, উনি এমন কথা বলেছেন যখন অবশ্যই তার কারণ আছে। নিশ্চয় সিহাব মা'কে এমন কিছু বলেছে যা শুনে মা আমাকে সন্দেহ করে এসব বলেছেন।
আদিল: তুমি এখনো মায়ের দোষ ঢেকে যাচ্ছ?
আমি: দোষ ঢাকছি না শুধু তোমাকে বুঝাতে চাইছি যে এখানে দোষী সিহাব মা নয়, মা সিহাবের কথা শুনে এসব বলেছেন। সিহাবকে খুঁজে পেলে সব সমাধান হয়ে যেতো।
আদিল: ঠিক আছে এখন বাসায় চলো তোমার আব্বু হয়তো টেনশন করছেন
আমি: হুম চলো।
প্রান্তর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

আদিল আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে গেল। আমি কলিংবেল চাপতে যাবো তখনি কে যেন দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো, তাকিয়ে দেখি সিহাব ভাইয়া। এভাবে আমাদের বাসাতেই ওকে দেখতে পাবো ভাবিনি, ভাইয়া আমার দিকে একনজর তাকিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
আমি: ভাইয়া দাঁড়াও।
ভাইয়া: কি?
আমি: আমার সংসার ভেঙ্গে দিয়ে কোথায় চলে যাচ্ছ?
ভাইয়া: আমি তোর সংসার ভাঙ্গিনি বরং তোর জন্য আম্মু আর আমার মা ছেলের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে।
আমি: মানে?
ভাইয়া: আম্মু আমাকে ছেলে বলে অস্বীকার করেছে বলেছে আমি নাকি আম্মুর কাছে মৃত। (ভাইয়া কথাগুলো বলতে গিয়ে কেঁদে দিল, চাঁচি এতো বড় শাস্তি দিল ভাইয়াকে?)
আব্বু: যা করেছিস তারপর তো তোর জন্য এরচেয়ে বড় কোনো শাস্তি হয় না। (আব্বু গাড়ি থেকে নেমে আসছেন দেখে অবাক হলাম আব্বু কোথায় ছিলেন?)
আমি: আব্বু তুমি এই সকালবেলা কোথায় গিয়েছিলে?
আব্বু: তানিয়াদের বাসায় তোকে আনতে। (এখন আব্বুকে কি বলবো আমিতো আদিলের সাথে ছিলাম)
আব্বু: কোথায় ছিলি তুই?
আমি: আব্বু আমি...
আব্বু: আদিলের সাথে?
আমি: (নিশ্চুপ)
আব্বু: সিহাব আমার মেয়েটা আদিলকে ছাড়া থাকতে পারছে না ও তিলেতিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে তুই আমার মেয়ের সংসার ভেঙে দিলি।
ভাইয়া: চাচ্চু আমি...
আব্বু: ভিতরে চল।

আব্বু ভাইয়ার হাত ধরে টেনে ড্রয়িংরুমে নিয়ে আসলেন।
আব্বু: এবার বল কেন করেছিস আমার মেয়ের সর্বনাশ?
ফুফু: ভাইয়া কি হয়েছে? (ফুফু আর চাঁচি রান্নাঘরে ছিলেন আব্বুর চেঁচামেচি শুনে আসলেন)
চাঁচি: ভাইয়া ওকে আমার পক্ষ থেকে যা শাস্তি দেওয়ার আমি তা দিয়েছি এখন তোমাদের যা শাস্তি দেওয়ার ইচ্ছে হয় তোমরা দিতে পারো।
আব্বু: তার আগে আমি জানতে চাই ও আমার মেয়ের সংসার ভেঙ্গেছে কেন?
ফুফু: ভাইয়া আস্তে চেঁচামেচি করো।
আব্বু: আমার মেয়ে এই প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কেঁদে কেঁদে শেষ হয়ে যাচ্ছে আর আমাকে তুই আস্তে চেঁচাতে বলছিস? সিহাব বল কেন করেছিস এসব। (আব্বু ভাইয়ার দুগালে একের পর এক থাপ্পড় দিয়ে যাচ্ছেন)
আমি: আব্বু কি করছ শান্ত হও।
ভাইয়া: আনিশা প্রেগন্যান্ট?
ফুফু: হ্যাঁ আনিশা প্রেগন্যান্ট, তোর জন্য শুধু এই অবস্থাতেও মেয়েটা শশুড় বাড়ি যেতে পারছে না।
আমি: ভাইয়া কেন করেছ এরকম কি লাভ হয়েছে তোমার?
ভাইয়া: তোকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসি তাই তোর সংসার ভাঙতে চেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম তোর ডিভোর্স হয়ে গেলে চাচ্চুর আর কিছু করার থাকবে না আমার কাছে বিয়ে দেওয়া ছাড়া।
আমি: ডিভোর্স?
চাঁচি: ভালোবাসিস সেটা আনিশার বিয়ের আগে বলতে পারতি।
ভাইয়া: বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু চাচ্চু হুট করে বিয়ের সব ব্যবস্থা করে ফেললেন যে আমি কোনো সুযোগই ফেলাম না।
ফুফু: তখন সুযোগ পাসনি বলে এখন ওদের ডিভোর্স করিয়ে সুযোগ করার চেষ্টা করছিলি ছিঃ!
ভাইয়া: আমি ভুলে গিয়েছিলাম দুজন ভালোবাসার মানুষকে কখনো আলাদা করা যায় না। ডিভোর্স হলে হয়তো ওরা দুজন কাগজে কলমে আলাদা হয়ে যেতো কিন্তু ওদের মন ঠিকই এক থাকতো একে অপরকে ভালবাসতো।
আমি: সংসার ভেঙে দিয়ে এখন এই কথাটা উপলব্ধি করতে পেরেছ?
ভাইয়া: ভাঙেনি তো ডিভোর্স তো হয়নি।
ফুফু: কিন্তু ওর শাশুড়ি ওকে ভুল বুঝেছে তোকে নিয়ে সন্দেহ করেছে এমনকি ওর পেটের সন্তানটাকেও তোর সন্তান ভাবছে।
ভাইয়া: (নিশ্চুপ)
আব্বু: তুই আনিশার শাশুড়িকে কি বলেছিস যে ও আনিশাকে ভুল বুঝছে?
ভাইয়া: বলেছি আনিশার সাথে আমার অনেক বছরের রিলেশন।
আমি: আমাকে ভালোবাস কথাটা কখনো আমাকে বলেছিলে? ভালোবাসলে বলতে হয় এভাবে ক্ষতি করতে নেই।
ভাইয়া: (নিশ্চুপ)
আব্বু: আমার মেয়েদের আমি কখনো কষ্ট কি বুঝতে দেইনি, এক মেয়ে তো সুইসাইড করলো আরেক মেয়েকে এখন তোর জন্য কাঁদতে হচ্ছে। (আব্বু কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে সোফায় বসলেন আমিও আব্বুর পাশে এসে বসলাম)
চাঁচি: তুই আনিশাকে সত্যি ভালোবাসিস?
ভাইয়া: (নিশ্চুপ)
চাঁচি: বল ভালোবাসিস কিনা?
ভাইয়া: হ্যাঁ বাসি। (চাঁচির ধমক শুনে ভাইয়া কেঁপে উঠে মাথা নিচু করে ফেললো)
চাঁচি: তাহলে আনিশার সুখের জন্য যা করতে হয় তুই সব করে দিবি। (চাঁচির কথা শুনে ভাইয়া অবাক হয়ে একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আবার চাঁচির দিকে তাকাচ্ছে)
ভাইয়া: আমি কি করবো?
চাঁচি: আনিশার শাশুড়ির কাছে সব সত্যি বলবি তাহলে হয়তো উনার ভুল ভাঙবে।
ফুফু: আচ্ছা কি এমন বলেছিস যে উনি এতো ক্ষেপে গেছেন?
ভাইয়া: আনিশার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আমি ওকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম আর রাগে চাচ্চুর সবকিছু আমার নিজের নামে করে নিয়েছিলাম। কিন্তু ওর বিয়ের কিছুদিন পর ওর শাশুড়ির সাথে আমার কথা হয় আর জানতে পারি উনার আর চাচ্চুর মধ্যে আগে সম্পর্ক ছিল।
ফুফু: তারমানে ও সেই শিরিন?
আব্বু: হ্যাঁ।
ভাইয়া: আমি তখন আনিশাকে পাবার একটা সুযোগ পেয়ে যাই, ওর শাশুড়িকে বলি আমাদের অনেক বছরের সম্পর্ক ছিল আর সাথে এইটাও বলি চাচ্চু উনাকে সবসময় গালাগাল করেন আর চাঁচিকে অনেক ভালোবাসেন। চাচ্চু চাঁচিকে ভালোবাসেন এইটা বোধহয় উনি মেনে নিতে পারেননি ব্যস রেগে যান চাচ্চুর উপর আর আমি উনার রাগ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য রাইমার সাথে তুলা আমার পিক উনাকে দেখাই আর বলি এইটা আনিশা।
আমি: এইটা রাইমা ছিল কিন্তু...
ভাইয়া: রাইমার সাথে তোদের জন্মদিনের পার্টিতে তুলেছিলাম আর সেদিন পিক ইডিট করে ঠোঁটের নিচে একটা তিল বসিয়ে দিয়েছিলাম ব্যস তোর শাশুড়ি বিশ্বাস করে নিয়েছে এইটা তুই। রাইমা কিন্তু আমাকে ভাই ভেবেই পিকটা তুলেছিল।
আমি: আর তুমি সেটা খারাপ কাজে ব্যবহার করলে ছিঃ!
ভাইয়া: (নিশ্চুপ)
আব্বু: আর কি কি করেছিস?
ভাইয়া: রাইমা আর আবিরের সম্পর্কের কথা যখন জানতে পারলাম তখন আবির হসপিটালে আর রাইমা মৃত। আনিশার শাশুড়ি তোমাদের উপর রেগে ছিল আমি উনার রাগ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বলেছিলাম আবিরের পাগল হওয়ার জন্য রাইমা'ই দায়ী। আসলে উনি চাচ্চুর উপর রেগে আছেন আর এই রাগের কারণেই উনি সবকিছুতে বেশি বেশি রাগ করতেন। আর সেদিন বলেছিলাম আনিশা আদিলের সাথে থাকলেও ভালোবাসে আমাকে আমার সাথে এখনো সম্পর্ক আছে তাই উনি রেগে গিয়ে...
আমি: নিজের ছেলের বউয়ের সম্পর্কে এসব শুনলে কোন মা মেনে নিবে? আর তুমি ভাবলে কিভাবে আমার সংসার ভেঙে গেলে আমি তোমার হয়ে যাবো?
ভাইয়া: ভুলে গিয়েছিলাম জোর করে যে ভালোবাসা পাওয়া যায় না।
আমি: এইটাকে ভালোবাসা বললে ভালোবাসাকে অপমান করা হবে, যে ভালোবাসে সে কখনো ভালোবাসার মানুষের ক্ষতি করতে পারেনা।
ভাইয়া: (নিশ্চুপ)
আব্বু: এখন তুই বল তোকে আমি কি শাস্তি দিব।
ভাইয়া: সবচেয়ে বড় শাস্তি তো আমি পেয়েই গেছি চাচ্চু আর কি শাস্তি দিবে? আম্মু ছাড়া তো আমার কেউ নেই আম্মু তো আমার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছে, এর চেয়ে বড় শাস্তি আমার কাছে কিছু নেই।
চাঁচি: তোর মতো সন্তান থাকার চেয়ে না থাকা ভালো।
আব্বু: আনিশাকে ভালোবাসিস সেটা একবার আমাকে বলতে পারতিস তা না করে তুই আনিশার এতো বড় ক্ষতি করলি। আনিশা প্রেগন্যান্ট এই অবস্থায় আদিলকে পাশে প্রয়োজন, তুই বল আমি এখন কি করবো?
ভাইয়া: আমি সব ঠিক করে দিব, আনিশার বেবির জন্য আমি সব করবো। আনিশার শাশুড়িকে সব সত্যি বলবো উনার কাছে ক্ষমা চাইবো।
চাঁচি: যদি আনিশার শাশুড়ির ভুল ভাঙাতে পারিস তাহলে আমাকে আম্মু ডাকতে আসিস।
ভাইয়া: চাচ্চু আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি কথা দিচ্ছি আমি সব ঠিক করে দিব।
আব্বু: যার সংসার ভেঙেছিস যার চোখের পানি ঝরিয়েছিস তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নে।
ভাইয়া: আনিশা আমাকে ক্ষমা করে দে আমি আদিলকে তোর কাছে ফিরিয়ে দিবো যেভাবেই হউক।
আমি: আগে মায়ের ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করো উনি আমাকে মেনে নিলে তবেই তোমাকে আমি ক্ষমা করবো।
ভাইয়া: (নিশ্চুপ)
আমি: ভালোবাসা অন্যায় নয় ভাইয়া তবে ভালোবেসে কারো ক্ষতি করা অন্যায়। তুমি এভাবে আমার ক্ষতি না করে আমাকে বলতে পারতে। আর তোমার এসবকে ভালোবাসা বললে ভুল হবে, এসব তোমার আবেগ আর আবেগের বশে তুমি আমার এতো ক্ষতি কর‍তে পেরেছ। যে সত্যি ভালোবাসে সে কখনো ভালোবাসার মানুষের ক্ষতি করতে পারেনা তাকে কাঁদাতে পারেনা। তুমি আমাকে পাওনি তাই আমার সংসার ভাঙার চেষ্টা করেছ, তুমি যদি সত্যি আমাকে ভালোবাসতে তাহলে সেটা না করে আমি যেন ভালো থাকি সেটা চাইতে। সত্যিকারের ভালোবাসা সবসময় ভালো কিছুই শিখায় অন্যায় শিখায় না।
ভাইয়া: আমার ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দে, আমি তোর শাশুড়ির কাছে যাচ্ছি সব ঠিক করে দিবো।
আমি: ঠিক আছে।
ভাইয়া চলে গেল, আমিও উঠে রুমে আসলাম।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি ভাইয়া কি পারবে মা'কে বুঝাতে? মা কি বুঝার চেষ্টা করবেন নাকি আবারো মা নিজের রাগ আর জিদকে প্রাধান্য দিবেন? একদিকে যেমন ভয় পাচ্ছি অন্যদিকে আশার আলোও দেখতে পাচ্ছি। বারবার শুধু মনে হচ্ছে মা হয়তো বুঝবেন আর আমাকে মেনে নিবেন। আদিল আর আমি এক হবো ছোট একটা সংসার সাজাবো, হেরে যাবে রাগ অভিমান জিদ আর জিতে যাবে ভালোবাসা...

চলবে😍

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com