আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ১৬ || লেখিকা: সুলতানা তমা
সকালে রোদের আলো মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো, ঘুম ঘুম চোখে তাকালাম হিমি জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। রাতে লজ্জা পেয়ে দৌড়ে চলে গিয়েছিল এখন আবার এসেছে, আবার লজ্জা দিবো কিনা ভাবছি।
হিমি: ফ্রেশ হয়ে আসুন।
আমি: আবার আমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে এসেছ?
হিমি: সরি তো। এখন এসেছি আপনার জ্বর কমেছে কিনা দেখতে।
আমি: কমেছে?
হিমি: অনেকটা কমেছে। যান তো ফ্রেশ হয়ে আসুন, খাবার খেয়ে ওষুধ খাবেন।
আমি: ঠিক আছে।
হিমির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে ফ্রেশ হতে চলে আসলাম।
তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরুতে যাবো তখনি ঠাস করে কিসের যেন একটা শব্দ হলো, কিছু একটা ভেঙ্গে গেছে বুঝতে পারলাম। তাড়াতাড়ি রুমে আসলাম, রুমের অবস্থা দেখে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। খাবারের প্লেট, পানির গ্লাস ভাঙ্গা অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে। হিমির দিকে তাকালাম রাগে কটমট করছে, তাহলে কি হিমি এগুলো ভেঙ্গেছে?
আমি: হিমি কি হয়েছে?
হিমি: সজিব তো আমার জীবনে অতীতে ছিল আমিতো ওকে রেখে আপনার সাথে রিলেশন করিনি, আপনি কেন আমাকে রেখে অধরার সাথে রিলেশন করেছেন?
আমি: কি বলছ এসব?
হিমি: এমন করার ইচ্ছে ছিল যখন আমাকে এতো স্বপ্ন দেখালেন কেন?
আমি: হিমি কেঁদো না কি হয়েছে বলো আমাকে।
হিমি: ভেবেছিলেন একসাথে দুটো রিলেশন করবেন আর আমি কখনো কিছু জানতে পারবো না? আমি সব জেনে গেছি অধরার মেসেজ পড়ে, আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন। আপনার সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই, কখনো আমার সামনে আসবেন না।
আমি: হিমি আমার কথা...
হিমির হাতে আমার ফোন ছিল, ফোন ফ্লোরে আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে গেলো। আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছি, একটু সময়ের মধ্যে কি ঘটে গেলো কিছুই বুঝতে পারছি না। অধরা কি এমন মেসেজ করেছিল যে হিমি এতোটা রেগে গেলো?
আম্মু: আরশান কি হয়েছে এতো চেঁচামেচি... এগুলো ভাঙ্গলো কিভাবে? (আম্মু রুমে এসে এগুলো ফ্লোরে দেখে অবাক হয়ে গেলেন)
চাঁচি: হিমি মেয়েটাকে দেখলাম দৌড়ে চলে গেল ও ভেঙ্গেছে এসব তাই না? এই মেয়ের এতো সাহস? আজ তো ওর আম্মুকে সব বলবো। (সবাই আমার রুমে এসে ভীড় জমিয়েছে, কারো কথা আমার কান দিয়ে ঢুকছে না। আমি শুধু ভাবছি একটু আগে কি ঘটে গেলো। বিছানায় দফ করে বসে পড়লাম, হিমি আমাকে ভুল বুঝেছে অনেক বেশি ভুল বুঝেছে)
আম্মু: আরশান কি হয়েছে বল, হিমি কাঁদতে কাঁদতে তোর রুম থেকে বেরিয়ে গেল কেন? তুই অসুস্থ তাই মেয়েটা তোর জন্য নিজের হাতে রান্না করে খাবার নিয়ে এসেছিল আর...
আমি: কিছু হয়নি আম্মু রাগ করেছে আমি সামলে নিবো তুমি টেনশন করো না।
চাঁচি: হুহ রাগ করেছে ঢং।
আমি: চাঁচি প্লিজ আমার মাথা গরম করিও না।
চাঁচি: তোর মাথা তো ওই মেয়ে চিবিয়ে খেয়ে নিয়েছে। (চাঁচির দিকে রাগি চোখে তাকালাম, আম্মু তাড়াতাড়ি চাঁচিকে নিয়ে চলে গেলেন)
আপু: কি হইছে ভাই? হিমি তো রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, আমি ওখানেই ছিলাম কতো ডাকলাম সাড়া দিচ্ছে না।
আমি: যা ভয় পেয়েছিলাম তাই হয়েছে, এই অধরা আমাদের মধ্যে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আপু: অধরা?
আমি: হুম।
আদিত্য: কি হলো বাসায় এতো হৈচৈ কেন?
আমি: (নিশ্চুপ)
আপু: হিমি নাকি রাগ করেছে।
আদিত্য: কেন?
আপু: জানিনা। (আপু চলে গেল, আদিত্য এসে আমার পাশে বসলো)
আদিত্য: কি হয়েছে?
আমি: ভুল বুঝাবুঝি।
আদিত্য: আচ্ছা ভাইয়া মেয়েটা তোমাকে সত্যি ভালোবাসে তো?
আমি: মানে?
আদিত্য: না মানে ভালোবাসলে তো এভাবে তোমার পরীক্ষা নিতো না, বিশ্বাস করতো তোমাকে।
আমি: কখন পরীক্ষা নিলো?
আদিত্য: তুমি নিজেও সেটা জানো। কাল রাতে আমি ওদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তোমার আর হিমির কথা শুনে তোমার দরজার পাশে দাঁড়াই, তুমি আবার ভেবো না লুকিয়ে তোমাদের রোমান্স দেখেছি।
আমি: না হেসে বল কি পরীক্ষা।
আদিত্য: কাল যখন ও বলছিল ও অপবিত্র তখনি আমি থমকে দাঁড়াই। অবাক হই যখন ও সেই চারদিনকে জড়িয়ে বললো ও অপবিত্র। কারণ সে চারদিন আমি আর আমাদের আরো দুটো ফ্রেন্ড ছিলাম সজিবের সাথে। সজিব চেয়েছিল হিমিকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলতে কিন্তু আমি আর রায়হান তা করতে দেইনি, এমনকি সজিব আমাদের জন্য হিমির গায়ে হাত দেওয়ার সাহস পায়নি। হিমি সব জেনেশুনে যখন রাতে তোমাকে বলছিল ও অপবিত্র তখন সত্যি খুব অবাক হয়েছিলাম কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পেরেছিলাম যে ও তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিচ্ছে। (তারমানে আমি ঠিক বুঝেছিলাম হিমি আমার পরীক্ষা নিয়েছিল কিন্তু নিজেকে অপবিত্র বলে পরীক্ষা নিবে আমি ভাবিনি)
আদিত্য: রেস্টুরেন্টে যখন সজিব বলেছিল হিমির সাথে ওর সব হয়ে গেছে তখন আমি চাইলে প্রতিবাদ করতে পারতাম কারণ আমার সব জানা কিন্তু আমি করিনি কারণ...
আমি: কারণ?
আদিত্য: ভুল বুঝো না, আমিও দেখতে চেয়েছিলাম তোমার ভালোবাসা কতটা সত্যি। সজিবের এসব কথার পরও তুমি হিমিকে ভালোবাস কিনা সেটা দেখতে চেয়েছিলাম।
আমি: বাহ্ ভালো তো, আমার ভালোবাসা কেউ বিশ্বাস করেনা।
আদিত্য: আমি করি, তোমার ভালোবাসায় জোড় আছে। নাহলে কেউ একটা মেয়েকে অপবিত্র জেনেও কাছে টেনে নেয়?
আমি: লাভ কি হলো সেই তো অধরা মাঝখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়ালো।
আদিত্য: এসব ছোটখাটো ভুল বুঝাবুঝি হয়েই থাকে, চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি: হুম।
আদিত্য মুচকি হেসে চলে গেলো। আমি চুপচাপ বসে আছি কি করবো বুঝতে পারছি না।
বারান্দার রেলিং ধরে উদাসীন হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলাম, পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি হিমি। হিমির দুচোখে পানি টলমল করছে।
হিমি: অন্যায় করেছেন শাস্তি ভোগ করবেন, এতো ঢং কিসের?
আমি: কি?
হিমি: খাবার খাচ্ছেন না কেন? ওষুধ খাচ্ছেন না কেন?
আমি: খাবার, ওষুধ... (রুমের দিকে চোখ পড়লো রোদেলা দাঁড়িয়ে হাসছে, তারমানে রোদেলা হিমিকে এসব বলে নিয়ে এসেছে। এরকম ভাই বোন থাকলে আমাদের আলাদা করার সাধ্য কার আছে?)
হিমি: ওদিকে তাকিয়ে আবার হাসছেন কেন?
আমি: একটু আগেই তো বললে আমাদের সব সম্পর্ক শেষ আমি যেন তোমার সামনে না যাই।
হিমি: হুম।
আমি: সম্পর্ক যেহেতু শেষ তাহলে আমি ওষুধ না খেলে তোমার কি?
হিমি কিছু না বলে আমার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসলো।
হিমির পিছু পিছু এসে ভদ্র ছেলের মতো বিছানায় বসলাম। হিমি টেবিল থেকে খাবার এনে আমার সামনে ধরলো।
হিমি: রোদেলা এতো করে বললো তখন খেলেন না কেন? (হিমির কথা শুনে হাসলাম, হিমি তো আর জানেনা আমার বোন যে ওকে বোকা বানিয়ে নিয়ে এসেছে)
হিমি: হাসুন বেশি করে, অধরা...
আমি: হিমি প্লিজ!
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: আমার ফোন তো ভেঙ্গে ফেলেছ নাহলে অধরার এখন খবর ছিল।
হিমি: সত্যিটা আমি জেনে গেছি তাই?
আমি: কিসের সত্যি? তখন থেকে আমি কিছু বলার চেষ্টা করছি তুমি শুনছই না। অধরা কি মেসেজ করেছিল সেটা...
হিমি: অন্যায় তো করেছেন আবার আমাকে ধমক দিচ্ছেন, থাকুন আপনি।
হিমি খাবারের প্লেট রেখে হনহন করে হেটে চলে গেলো। এই অধরার সাথে কথা বলতে হবে নাহলে পরবর্তীতে আরো বড় ঝামেলা হবে। শান্তদের বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।
শান্ত: সব তো শুনলাম এবার বল কি করতে পারি? অধরা এমন করবে আমিতো ভাবতেই পারিনি। (শান্তর সামনে চুপচাপ বসে আছি কি করবো বুঝতে পারছি না)
শান্ত: এতো টেনশন করিস না আমি অধরাকে বুঝাবো।
আমি: ওকে ফোন করে তোদের বাসায় আসতে বল।
শান্ত: ঠিক আছে।
তারিন: আরশান ভাইয়া তোমার থেকে এমন কিছু আশা করিনি। (তারিন এসে শান্তর পাশে বসতে বসতে কথাগুলো বললো, আমি নির্বাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি)
তারিন: তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে হিমির চোখে কখনো পানি আসতে দিবে না।
শান্ত: এতে আরশানের কোনো দোষ নেই, না জেনে কথা বলবি না।
তারিন: হিমি আমাকে সব বলেছে।
শান্ত: হিমি ভুল বুঝেছে আর তোকে ভুলটাই বলেছে। অধরা এখানে আসছে অপেক্ষা কর সব বুঝতে পারবি।
তারিন: হুম।
প্রায় এক ঘন্টা অপেক্ষা করার পর অধরা আসলো। আমাকে দেখে চমকে উঠলো, হয়তো শান্ত আমার কথা বলেনি।
শান্ত: এতো অবাক হচ্ছিস কেন?
অধরা: না মানে আরশান এখানে?
আমি: আমিই তোকে আনিয়েছি।
অধরা: কিন্তু কেন?
আমি: অধরা প্লিজ তুই সত্যিটা বল, তুই কি আমাকে সত্যি ভালোবাসিস নাকি সজিবের কথায় এসব করছিস?
অধরা: সজিব কে? আর ভালোবাসা নিয়ে কেউ মিথ্যে বলে নাকি?
আমি: সকালে কি মেসেজ করেছিলি? জানিস হিমি আমাকে ভুল বুঝেছে?
অধরা: আমিতো জাস্ট আই লাভ ইউ লিখে মেসেজ করেছিলাম। আর হিমি তোকে ভুল বুঝলে আমার কি? আমিতো আরো খুশি যে হিমি তোকে ভুল বুঝে ছেড়ে চলে যাবে আর তুই আমার... (অধরার গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় দিলাম, ও গালে হাত দিয়ে হাসছে)
আমি: তুই এমন করবি আমি কখনো ভাবতেই পারিনি।
শান্ত: তুই এতো পাল্টে যাবি ভাবিনি রে। তুই সত্যি অনেক নিচু মনের মানুষ হয়ে গেছিস।
অধরা: কখনো কখনো ভালোবাসার জন্য খারাপ হতে হয়।
আমি: তারিন এখন বুঝেছ তো কার দোষ?
তারিন: হুম বুঝেছি। অধরা আপু প্লিজ হিমি আর আরশান ভাইয়ার সুন্দর সম্পর্কটা নষ্ট করে দিওনা।
অধরা: ওদেরকে তো আলাদা আমি করবই।
আমি: পারবি না আমাদের ভালোবাসা এতো ঠুনকো না। (অধরা চলে যাচ্ছিল আমার কথা শুনে পিছন ফিরে তাকিয়ে মুচকি হাসলো)
অধরা: সেটা সময়ই বলে দিবে। (অধরা চলে গেলো, কোনো লাভ হলো না ওর সাথে দেখা করে, উল্টো মাথা গরম করে দিয়ে চলে গেলো)
তারিন: আরশান ভাইয়া তুমি টেনশন করো না আমি হিমিকে বুঝিয়ে বলবো।
আমি: ঠিক আছে আসছি।
শান্ত: সাবধানে যাস।
দুপুরের কড়া রোদে ফুটপাত ধরে হাটছি, জ্বর গায়ে বড্ড ক্লান্ত লাগছে। একদিকে সজিব কখন যেন কি করে বসে তার উপর আবার অধরা পাগলামি শুরু করেছে, আমি যে কি করবো ভেবেই পাচ্ছি না। হঠাৎ রাস্তার পাশের ছোট একটি দোকানে চোখ পড়লো, হরেক রকমের কাঁচের চুড়ি দেখে আমার সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো। হিমি তো চুড়ি খুব পছন্দ করে, চুড়ি নিয়ে গেলে নিশ্চয় ওর রাগ কমে যাবে। দোকানে এসে চুড়ি দেখছি আর ভাবছি কোন রঙের চুড়ি নিবো। হিমির কোন রঙ পছন্দ আমিতো জানিনা। এক কাজ করলে কেমন হয় সব রঙের চুড়ি নিয়ে যাই, হিমির যেগুলো পছন্দ হবে সেগুলো পড়বে। এক এক করে সব রঙের চুড়ি কিনলাম। দোকানদার প্যাকেট করছে আর হাসছে, হয়তো ভাবছে আমি পাগল হয়ে গেছি।
চুড়ির প্যাকেট হাতে নিয়ে হিমিদের ফ্ল্যাটে এসে কলিংবেল বাজালাম, ভাবি এসে দরজা খুলে দিলেন।
আমি: ভাবি হিমি...
ভাবি: হিমি তো বাসায় নেই।
আমি: কোথায় গেছে?
ভাবি: মা'কে নিয়ে ডক্টর এর কাছে গেছে।
আমি: ওহ!
ভাবি: গিফট নিয়ে আসা হয়েছে বুঝি মহারাণীর রাগ ভাঙ্গানোর জন্য? (ভাবির কথা শুনে মৃদু হাসলাম)
ভাবি: হিমি আসলে বলবো তোমার সাথে দেখা করার জন্য।
আমি: ঠিক আছে।
ভাবির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে আসলাম।
বাসায় এসে সবার তাড়াহুড়ো করে কাজ করা দেখে বেশ অবাক হলাম, কিছুই তো বুঝতে পারছি না। বাসায় কি কোনো অনুষ্ঠান নাকি সবাই এতো কাজ করছে কেন?
রোদেলা: ভাইয়া তুমি এসেছ? বাসায় মেহমান আসবে কাজে লেগে পড়ো।
আমি: মেহমান?
আম্মু: হ্যাঁ ফারিয়াকে দেখতে আসবে। (আম্মুর কথা শুনে বেশ অবাক হলাম, হুট করে দেখতে আসবে আপুকে বিষয়টা কেমন যেন লাগছে)
আমি: কিন্তু আম্মু হঠাৎ করে...
আম্মু: তোর আব্বু কি কখনো কিছু বলে করে? কিছুক্ষণ আগে ফোন করে বললো সন্ধ্যার দিকে বাসায় আসবে আর সাথে মেহমানও আসবে।
আমি: আপু জানে?
আম্মু: হ্যাঁ। ফারিয়া তো রেডি হচ্ছে, বিকেল হয়ে গেছে তো মেহমান হঠাৎ চলে আসতে পারে।
আমি: আসছি আমি।
রুমে এসে চুড়ির প্যাকেট'টা রেখে আপুর রুমের দিকে আসলাম। আপুর রুমের দরজা লক করা দেখে বেশ অবাক হলাম, এই সময়ে দরজা লক?
আমি: আপু আপু?
আপু: কি হয়েছে?
আমি: দরজা খুলো।
আপু: আমি শাড়ি পড়ছি, পরে আসিস।
আমি: ঠিক আছে। (আপু কি মিথ্যে বললো? আপুর গলাটা কেমন যেন লাগছিল, মনে হলো গলায় কান্না দলা পেকে আসছিল। আপু কি কিছু লুকাচ্ছে আমার থেকে? এসব ভাবতে ভাবতে রুমে এসে ঢুকলাম, হিমি বসে আছে দেখে বেশ অবাক হলাম)
আমি: হিমি?
হিমি: আমাকে খুঁজে নাকি বাসায় গিয়েছিলেন?
আমি: হুম, ডক্টর এর কাছ থেকে কখন আসলে?
হিমি: এইতো কিছুক্ষণ হলো, রুমে না গিয়ে সোজা এখানে আসলাম।
আমি: তারমানে তারিনের সাথে তোমার কথা হয়নি?
হিমি: কি কথা?
আমি: অধরাকে নিয়ে।
হিমি: আমি এই নামটা শুনতে চাই না। আর একটা কথা শুনে রাখুন...
আমি: কি কথা?
হিমি: সজিবের ব্যাপারে আমি ছোট ভাইয়াকে সব বলেছি, ভাইয়া দেশে আসছেন আর...
আমি: আর?
হিমি: ভাইয়া আসলেই আমরা এ বাসা ছেড়ে চলে যাবো।
আমি: হিমি?
হিমি: এখানে থাকলে আমি আপনাকে ভুলতে পারবো না, অন্য কোথাও চলে যাওয়াটাই ভালো।
আমি: তারিনের সাথে কথা বলো তাহলে তোমার সব ভুল ভেঙ্গে যাবে। আর আজ প্লিজ এমন করো না, এমনিতেই আমি আপুকে নিয়ে টেনশনে আছি।
হিমি: কেন?
আমি: আপুকে আজ দেখতে আসবে।
হিমি: সত্যি? আমি আপুকে সাজাবো, আমার কনে সাজাতে ভালো লাগে। আসছি।
আমি: হিমি শুনো।
হিমি: কি?
আমি: এই প্যাকেট'টা খুলো।
হিমি: কি আছে এতে?
আমি: খুলে দেখো। (হিমি বিস্ময়ভরা চোখে প্যাকেট'টা নেড়েছেড়ে দেখছে)
আমি: কি হলো খুলো।
হিমি: হুম। (প্যাকেট খুলে এতো গুলো চুড়ি দেখে হিমি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো)
হিমি: এতগুলো?
আমি: তোমার পছন্দের রঙ কি আমিতো জানিনা তাই সব রঙের চুড়ি নিয়ে আসলাম। (হিমি আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে চুড়ি গুলো বিছানার উপর রেখে দিলো)
আমি: কি হলো নিবে না এগুলো?
হিমি: ভালোবাসাটাই তো অন্য একজন কেড়ে নিয়েছে চুড়ি দিয়ে কি হবে? একটা মেয়ের কাছে তার ভালোবাসার চেয়ে দামী কিছু হয় না। মেয়েরা এসব চায় না ভালোবাসা চায় একটুখানি, আর সেটা পেলে কাউকে ভাগ দিতে পারেনা। মেয়েরা সব ভাগ করতে পারে কিন্তু নিজের ভালোবাসাকে না।
হিমি চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে গেলো। অনেক কষ্ট পেয়েছে হিমি, সত্যিই তো অন্য মেয়েকে সহ্য করবে কিভাবে?
মেহমানরা সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আপুকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছে, পাশে আব্বু আর চাচ্চু বসা। আমি আর আদিত্য এক পাশে দাঁড়িয়ে আছি। আমি এক দৃষ্টিতে ছেলেকে দেখছি আর ভাবছি কেমন হবে ও? আমার বোনকে সুখে রাখবে তো? ভালোবাসবে তো আপুকে?
আব্বু: আরে আরশান উনাদের অনেক দূর যেতে হবে গিয়ে দেখো ফারিয়ার হলো কিনা।
আমি: যাচ্ছি আব্বু।
আপুর বিয়ে নিয়ে আব্বু যে কেন এতো তাড়াহুড়ো করছেন আমি বুঝতে পারছি না। নিশ্চয় আব্বুর কোনো একটা প্ল্যান আছে। আপুর রুমে ঢুকতে যাবো তখনি হিমি আর রোদেলা আপুকে নিয়ে রুম থেকে বের হলো। আমি অপলক দৃষ্টিতে আপুকে দেখছি, কি সুন্দর লাগছে আমার আপুটাকে।
আপু: কিরে আরশান কি হলো?
আমি: দেখছিলাম ছেলেটার সাথে তোকে মানাবে কিনা, ছেলেটা দেখতে মোটামুটি ভা... (আপু মুখটা মলিন করে ফেললো, হিমি আর রোদেলাও সেটা লক্ষ করেছে)
রোদেলা: আপু কি হয়েছে?
আপু: কিছু নাতো।
আমি: আপু তুই এই বিয়েতে খুশি তো? নাকি আব্বুর কথায়...
আপু: তোর সুখের জন্য আমি নিজের সুখকে বিসর্জন দিতে পারি।
আমি: মানে?
আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলো, আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছি। আপু কি বলে গেলো? আমার সুখের জন্য আপু নিজের সুখ বিসর্জন দিচ্ছে মানে কি? আপু কি কাউকে ভালোবাসে? কিন্তু ভালোবাসলে আমার সুখের জন্য অন্য কাউকে বিয়ে করবে কেন? কি বুঝাতে চেয়েছে আপু? মাথায় হাজারটা প্রশ্ন নিয়ে আমি ড্রয়িংরুমের দিকে এগিয়ে গেলাম...
চলবে😍
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com