Breaking News

আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ৫ || লেখিকা: সুলতানা তমা

ফোনের রিংটোনে আমার ঘুম ভাঙ্গলো, ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিভ করলাম।
আমি: হ্যালো কে?
সিফাত: তোর দাদা।
আমি: ওহ তুই।
সিফাত: এই শালা মানুষ আর ছ্যাকা খায় না? তোর রিলেশন তো গড়ার আগেই ভেঙ্গে গেছে এইটাকে তো ছ্যাকাও বলা যায় না আর তুই কিনা এইটার জন্য কলেজ বন্ধু সব ছেড়ে দু সপ্তাহ ধরে ঘরবন্ধী হয়ে বসে আছিস।
আমি: এসব বলার জন্য সাতসকালে ফোন করেছিস?
সিফাত: আজ কলেজে আয়।
আমি: না ভালো লাগছে না।
সিফাত: আরশান আমরা ঐ গ্রাম থেকে ফিরে এসেছি দু সপ্তাহ হয়ে গেছে, মাঝখানে দুটো সপ্তাহ কেটে গেছে কিন্তু তুই এখনো হিমি নামটা ভুলতে পারছিস না, দু সপ্তাহ সময় কি কম?
আমি: সিফাত ভালো লাগছে না এসব শুনতে।
সিফাত: তা লাগবে কেন একটা মেয়ের জন্য তো আমাদের ভুলেই গেছিস। ওদিকে শান্ত দুদিন ধরে গ্রামের বাড়িতে আছে তুইও কলেজে আসছিস না, আমি আর আরিয়ান শুধু। একা একা ভালো লাগে বল।
আমি: ঠিক আছে আগামীকাল আসবো কলেজে।
সিফাত: সত্যি তো?
আমি: হ্যাঁ।
সিফাত: ঠিক আছে।
সিফাত ফোন রাখতেই উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে রুমে আসলাম, আপু আমার ফোন থেকে কার সাথে যেন কথা বলছে।
আমি: আপু কে ফোন করেছে?
আপু: শান্ত।
আমি: ওহ!
আপু: ধর কথা বল, আর নাশতা রেখে যাচ্ছি খেয়ে নিস। (আপু ফোন আমার হাতে দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো, আপুর হাসির কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না)
আমি: হ্যাঁ শান্ত বল।
শান্ত: কলেজে আসবি না?
আমি: তুই তো গ্রামে।
শান্ত: গতকাল রাতে চলে এসেছি।
আমি: ওহ!
শান্ত: কলেজে আয় তোর জন্য একটা বড়সড় সারপ্রাইজ আছে।
আমি: কি সারপ্রাইজ?
শান্ত: আগে বলে দিলে সারপ্রাইজ থাকবে?
আমি: কিন্তু আমার ভালো লাগেনা এসব।
শান্ত: আরশান মধ্যে দুটো সপ্তাহ কেটে গেছে, নিজেকে আর কতদিন ঘরবন্ধি করে রাখবি?
আমি: ঠিক আছে আসছি।
শান্ত: তাড়াতাড়ি।

শান্ত ফোন রাখতেই রেডি হওয়ার জন্য আলমারি থেকে শার্ট নিতে আসলাম, হাত লেগে সাদা টিশার্ট'টা ফ্লোরে পড়ে গেলো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি টিশার্টে লেগে থাকা হিমির ঠোঁটের লিপস্টিকের দাগের দিকে দুচোখে পানি ছলছল করছে। তাড়াতাড়ি টিশার্ট তুলে আলমারিতে রেখে আলমারিটা বন্ধ করে দিলাম। চোখ দুটো বুজে আলমারিতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, এই টিশার্ট, হিমির চুড়ি আর কাজলের কৌটো আমাকে বড্ড বেশি যন্ত্রণা দেয়, এগুলো আমাকে রোজা কাঁদায়। মাঝখানে কেটে গেছে দুটো সপ্তাহ, কিন্তু আমি হিমিকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারিনি। আর হয়তো কখনো ভুলতে পারবোও না। চোখের পানি মুছে রেডি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

"আরশান" কলেজে আসতেই সিফাত, আরিয়ান আর অধরা অবাক হয়ে একসাথে আমার নাম ধরে চিৎকার করে উঠলো। সবাই গাছের নিচে বসে আছে, বাইক রেখে আমিও গিয়ে ওদের পাশে বসলাম।
সিফাত: কিরে তুই না বললি আসবি না আগামীকাল আসবি?
আমি: শান্ত ফোন করেছিল কিনা কি সারপ্রাইজ আছে বললো।
আরিয়ান: কিন্তু শান্ত তো ওদের গ্রামে ওর আম্মু, আব্বু আর তারিনকে আনতে গেছে।
আমি: কেন?
আরিয়ান: তারিন তো আমাদের কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে তাই ওরা সবাই এখানে বাসায় উঠেছে।
আমি: ওহ! শান্ত গতকাল রাতে চলে এসেছে।
অধরা: তোর মতো প্রেমিক আমি এই প্রথম দেখলাম, যে রিলেশন গড়ার আগেই ভেঙ্গে গেছে সে রিলেশনের জন্য কিনা তুই দু সপ্তাহ কলেজে আসিসনি। ওই তোর মায়াবতী কি দেখতে খুব সুন্দর যে চাইলেও ভুলা যায় না?
সিফাত: অধরা চুপ কর না দেখছিস ওর মন খারাপ।
অধরা: ওর মন খারাপ দেখতে ভালো লাগছে না বলেই তো বকবক করে যাচ্ছি। আচ্ছা আরশান এতোই যখন ভালোবাসিস তাহলে এভাবে চুপচাপ বসে আছিস কেন? (অধরার প্রশ্ন শুনে ওর দিকে তাকালাম)
আমি: মানে?
অধরা: পিছনে লেগে থাকলে তবেই না মেয়ে রাজি হবে, আর এমনিতেও মেয়েরা ছেলেদেরকে পিছনে ঘুরাতে একটু পছন্দ করে।
আমি: শুন হিমি এমন মেয়ে নয়।
অধরা: যাক বাবা আমি কি তোর হিমিকে খারাপ মেয়ে বলেছি? আমিতো শুধু বলেছি...
শান্ত: আরশান? (শান্তর ডাক শুনে সামনে তাকালাম, চোখ দুটো স্থির হয়ে আছে হিমির দিকে। হিমি তারিনের সাথে কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছিল আমাকে দেখে থমকে দাঁড়ালো, দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি অপলক দৃষ্টিতে। আমার চোখে যেমন পানি ছলছল করছে তেমনি হিমির চোখেও পানি ছলছল করছে, মনে হচ্ছে কতো বছর ধরে দুজন দুজনকে দেখিনা)
আরিয়ান: হিমি এখানে?
সিফাত: কিরে শুভ দৃষ্টি এখানেই সেরে ফেলবি নাকি? (সিফাতের কথা শুনে হিমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো, আমি এখনো তাকিয়ে আছি ওর লজ্জামাখা মুখের দিকে)
অধরা: এই তোর মায়াবতী?
সিফাত: হ্যাঁ ও হিমি, কিন্তু হিমি তুমি আমাদের কলেজে?
অধরা: বাহ্ খুব সুন্দর, এজন্যই বুঝি আমাদের আরশান তোমার বিরহে কেঁদে কেঁদে...
শান্ত: অধরা চুপ করবি?
হিমি: তারিন চল।
হিমি তারিনের হাত ধরে চলে যাচ্ছে, আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে।

শান্ত: সারপ্রাইজটা কেমন হলো? (শান্তর ধাক্কায় যেন আমি স্তম্ভিত ফিরে পেলাম, ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম)
আমি: হিমি আমাদের কলেজে?
শান্ত: আজ থেকে এইটা হিমিরও কলেজ, মানে হিমি আর তারিন এখানেই অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে। (আমি যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না, হিমি এই শহরে এই কলেজে? তবে কি এইটা হিমিকে ফিরে পাওয়ার কোনো আশা?)
শান্ত: আব্বু যখন বললো তারিনকে এখানে ভর্তি করবে তখন আমি ভাবলাম হিমিও এখানে ভর্তি হলে কেমন হয়? তারিনকে দিয়ে হিমির ভাইয়াকে রাজি করালাম, হিমি তো অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে তাই ওর ভাইয়া আর না করেনি।
আমি: থ্যাঙ্ক ইউ দোস্ত। (খুশিতে শান্তকে জড়িয়ে ধরলাম)
শান্ত: তোর জন্য আরো একটা খুশির খবর আছে, তবে তুই যদি সেটা কাজে লাগাতে পারিস ত...
আমি: কি বল।
শান্ত: হিমির ছোট ভাই বাহিরে আছে ছয়মাস পর দেশে আসবে আর ওর বড় ভাই সরকারী চাকরিজীবী বর্তমানে রাঙামাটিতে আছে এক বছরের মধ্যে ট্রান্সফার হওয়ার সম্ভাবনা নেই...
আমি: কিন্তু এতে আমার লাভ কি?
শান্ত: আমার কথা শেষ হতে দে। হিমিরা আপাতত আমাদের বাসায় উঠেছে, দু এক দিনের মধ্যে নতুন বাসা খুঁজে ওরা চলে যাবে। হিমির ভাইয়া যেহেতু ওদের কাছে থাকতে পারবে না তাই ভাইয়া চাইছে কোনো একটা পারিবারিক বাসা ভাড়া নিয়ে হিমিদের রাখতে।
অধরা: আমি বুঝে গেছি এতে আরশানের কি লাভ।
শান্ত: অধরা সবসময় এতো বকবক করিস কেন? চুপ কর না।
অধরা: ওকে করলাম চুপ।
শান্ত: আরশান তুই কিন্তু ছয় মাসের জন্য হিমিকে তোর কাছে পাচ্ছিস যদি সুযোগটা কাজে লাগাতে পারিস।
আমি: কিরকম?
অধরা: তোদের বাসায় হিমিদের ভাড়া দিবি সিম্পল।
শান্ত: এই বকবক করা মেয়েটা বুঝে গেছে আর তুই বুঝতে পারছিস না? তোদের তিনতলা বাসাতে তো তোদের সবার দুতলাতেই হয়ে যায় তৃতীয় ফ্লোর ফাঁকা থাকে, তুই চাইলে আমি হিমির ভাইয়াকে তোদের ঠিকানা দিয়ে দিতে পারি।
সিফাত: শান্ত আমার মনে হয় না বাসা ভাড়া দিতে আরশানের আব্বু রাজি হবে।
আরিয়ান: হ্যাঁ উনি যেরকম মানুষ রাজি হবে না।
শান্ত: দেখ আরশান আমার আর তারিনের পক্ষে যতোটা করা সম্ভব আমরা করেছি এখন বাকিটা তোর হাতে।
আমি: যতোটুকু করেছিস তাতেই আমি হিমিকে ফিরে পাওয়ার আশার আলো দেখতে পাচ্ছি, থ্যাংকস দোস্ত বাকিটা আমি করে নিবো।
অধরা: আমার কোনো হেল্প লাগলে বলিস।
সিফাত: তুই যা বেশি বেশি কথা বলিস কি থেকে কি বলবি পরে আবার দুজনের মধ্যে ঝগড়া লেগে যাবে হাহাহা।
ওরা সবাই মজা করছে আমি একটু দূরে এসে রোদেলাকে ফোন দিলাম, রোদেলা তো ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে এবার যা করার ওকে দিয়েই করাতে হবে।
রোদেলা: হ্যাঁ ভাইয়া বলো।
আমি: তুই কোথায়?
রোদেলা: কোথায় আবার তুমি জানোনা আজ আমার ফার্স্ট ক্লাস।
আমি: তোর ভাবিকে দেখবি?
রোদেলা: কি? সত্যি?
আমি: হুম।
রোদেলা: আমি ক্লাসে আছি প্লিজ তুমি আসো।
আমি: আসছি।

হিমি: তারিন তুই জানতিস আরশান যে এই কলেজে পড়ে? (ক্লাসে ঢুকতে যাবো তখনি হিমির কন্ঠ শুনে থমকে দাঁড়ালাম)
তারিন: হ্যাঁ, ওরা চার বন্ধু আর অধরা আপু সবাই তো ফাইনাল ইয়ারে পড়ে জানবো না কেন?
হিমি: তুই জেনেশুনে আমাকে কেন এই কলেজে আনলি?
তারিন: কারণ আমি চাই তুই আরশান ভাইয়াকে ভালোবেসে বিয়ে করে সুখে থাক।
হিমি: তারিন তুই বুঝতে পারছিস না...
আমি: আর কিছু বুঝতে হবে না এবার তুমি বুঝে নাও তোমাকে আমি আর দূরে যেতে দিচ্ছি না। (হিমির সামনের সিটে এসে বসে ওর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারলাম হিমি মাথা নিচু করে ফেললো)
রোদেলা: ভাইয়া? (রোদেলা এসে আমার পাশে বসলো, হিমি কিভাবে যেন রোদেলার দিকে তাকাচ্ছে)
আমি: ও তারিন শান্তর বোন আর ও...
রোদেলা: আর ও আমার মিষ্টি ভাবিটা। (রোদেলা হিমির গাল টেনে দিলো হিমি তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
রোদেলা: আজ থেকে আমরা শুধু ননদ ভাবি নই আমরা দুজন ফ্রেন্ড, আর তারিন তুমিও।
তারিন: ওকে।
আমি: এবার তোর ভাবিকে আমার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য হেল্প কর।
রোদেলা: কিরকম?
হিমি: ক্লাসের মধ্যে কি শুরু করেছেন সবাই দেখছে তো? (চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে হিমির দিকে তাকালাম)
আমি: আমি কি তোমায় কিস করেছি? (হিমি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো, তারিন আর রোদেলা ফিক করে হেসে উঠলো)
আমি: সবাই কি দেখছে? কিস তো করিনি চাইলে সেটাও করতে পারি, করবো?
হিমি: আপনি যান তো এখান থেকে।
আমি: যাচ্ছি যাচ্ছি তবে খুব শীঘ্রই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে যাবো।
হিমি আমার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে চলে আসলাম।

অধরা: আরশান একবার যেহেতু ফিরে পেয়েছিস আর হারাতে দিস না।
শান্ত: কি করবো হিমির ভাইয়াকে তোদের ঠিকানা দিবো?
আমি: বাসায় যাই রোদেলাকে দিয়ে সবাইকে রাজি করাবো।
শান্ত: ঠিক আছে।
সিফাত: এতো কিছু যে করছিস শেষ পর্যন্ত হিমি তোর হবে তো?
আমি: হিমির চোখে আমি আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। হিমি যদি আমাকে ভালো না বাসতো তাহলে সেদিন রাতে ওকে জড়িয়ে ধরার জন্য রাগ করতো, ও সেদিন রাগ করেনি উল্টো আমার বুকে মুখ গুঁজেছিল। সেদিন রাতে তারিনের সামনে ওকে জড়িয়ে ধরেছিলাম তাতেও হিমি রাগ করেনি উল্টো আমার বুকের সাথে লেপ্টে ছিল। আসার সময় ওর কপালে চুমু দিয়েছিলাম হিমি রাগ করেনি আবেশে দুচোখ বুজে রেখেছিল।
অধরা: আমি বলছি হিমি তোকে ভালোবাসে, আমিতো একটা মেয়ে তাই আমি বুঝি একটা মেয়ে কখন একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরার অধিকার দেয়।
সিফাত: প্রেম নিয়ে গবেষণা করছিস নাকি আজকাল? নাকি নিজেই কারো প্রেমে পড়েছিস?
অধরা: তোকে আমি...
আমি: তোরা ঝগড়া কর আমি বাসায় যাচ্ছি।
শান্ত: ঠিক আছে।

বাইক স্টার্ট দিতেই রোদেলা দৌড়ে এসে বাইকে বসলো।
আমি: কিরে ক্লাস করবি না?
রোদেলা: না।
আমি: চাঁচিকে বলে দিবো।
রোদেলা: আমিও বলে দিবো ভাবির কথা।
আমি: ভয় দেখাচ্ছিস?
রোদেলা: হ্যাঁ, এবার বাসার দিকে যাও তো।
আমি: ওকে।
রোদেলা: ভাইয়া তুমি জানো আজ আব্বু আর চাচ্চু বাসায় আসছেন। (রোদেলার কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম, আব্বু বাসায় আসলে আমার নিজস্ব স্বাধীনতা বলতে কিছু থাকেনা, সবকিছু আব্বুর ইচ্ছেতে করতে হয় আর তাই আব্বুকে আমার পছন্দ না। তাছাড়া আব্বু সারাক্ষণ শুধু টাকার পিছনে ছুটে, ছেলে মেয়ে যে বাবার কাছে একটু ভালোবাসা চায় একটু সময় চায় সেটা উনি অনেক আগেই ভুলে গেছেন)
রোদেলা: ভাইয়া সরি তোমার মন খারাপ করে দিলাম, তবে একদিকে ভালো হয়েছে হিমিদের বাসা ভাড়া দিতে হলে তো আব্বু আর চাচ্চুর অনুমতি লাগবে।
আমি: তুই জানিস কিভাবে বাসা ভাড়া দিতে হবে? আমিতো কিছু...
রোদেলা: তানিয়া আমাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছে।
আমি: হুম। কিন্তু তোর আব্বু অনুমতি দিয়ে দিলেও আমার আব্বু দিবে না কারণ উনি তো একটা...
রোদেলা: প্লিজ ভাইয়া রেগে যেওনা, আমি সব সামলে নিবো।
আমি: হুম।

রোদেলার সাথে হাসতে হাসতে বাসায় ঢুকলাম, ড্রয়িংরুমে আব্বু, চাচ্চু, চাঁচি বসে আছেন, আব্বুকে দেখে আমার হাসি মুখটা নিমিষেই চুপসে গেলো।
চাচ্চু: আরশান চলে এসেছিস? কেমন আছিস?
আমি: ভালো। (আম্মু কিচেনে রান্না করছেন দেখে ওদিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম, আব্বু পিছু ডাকলেন)
আব্বু: আরশান?
আমি: হুম বলো।
আব্বু: আজকাল নাকি গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছ এসব তো...
আম্মু: আরশান এদিকে আয়। (আম্মুর ডাক শুনে আব্বুর কথার কোনো জবাব দিলাম না)
চাচ্চু: ভাইয়া ছেলেটা কলেজ থেকে ফিরেছে মাত্র এখন এসব নিয়ে বকাবকি করলে তো মন খারাপ করবে দুপুরের খাবারটাও খাবে না, তুমি জানো না আরশান কতোটা জেদি? (চাচ্চুর কথা গুলো শুনতে শুনতে আম্মুর কাছে চলে আসলাম)
আম্মু: কিরে এতো তাড়াতাড়ি যে চলে আসলি?
আমি: মন ভালো ছিল তাই। কিন্তু বাসায় এসে তো...
আম্মু: বাবা এসব নিয়ে মন খারাপ করিস না তুই তো জানিস তোর আব্বু একটু এরকম। উনার কোন বন্ধুর ছেলের বিয়ে তাই বাসায় এসেছে দুভাই, চারদিন থাকবে বিয়েতে যাবে আবার ব্যবসার কাজে বাহিরে চলে যাবে, চারটা দিনই তো।
আমি: উনার সাথে চারদিন কেন এক মুহূর্তও এক বাসায় থাকতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।
রাগে কথা গুলো বলে রুমের দিকে চলে আসলাম। এই লোকটাকে আমার একদম সহ্য হয় না, সারাক্ষণ শুধু টাকা টাকা করে ভাল্লাগেনা এসব।

খাবার টেবিলে বসে আনমনা হয়ে ভাত নাড়াচাড়া করছি আর ভাবছি আব্বু বাসা ভাড়া দিতে আদৌ রাজি হবে তো? হিমিকে আমার কাছে আনতে পারবো তো?
আব্বু: আরশান কি হলো খাচ্ছ না কেন?
আম্মু: কিরে খাবার সামনে নিয়ে কি এতো ভাবছিস?
আপু: আম্মু খাচ্ছে তো ছাড়ো না।
রোদেলা: আব্বু, চাচ্চু তোমাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ ছিল। (রোদেলার কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকালো, খুব ভয় হচ্ছে কিযে হবে)
চাচ্চু: কি অনুরোধ বলো।
চাঁচি: রোদেলা যা চাইবার পরে চাস এখন খাবারের সময় না।
রোদেলা: এই খাবারের সময়টাতেই তো সবাই এক জায়গায় হই।
আব্বু: রোদেলা বলো কি চাও।
রোদেলা: আসলে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড হিমি ওদের ছয়মাসের জন্য একটা ভাড়া বাসা প্রয়োজন অনেক খুঁজেছে পাচ্ছে না।
আব্বু: তো?
রোদেলা: বলছিলাম আমাদের বাসার তৃতীয় ফ্লোর তো ফাঁকা পরে আছে যদি...
চাচ্চু: ভাড়া দিতে বলছ?
রোদেলা: না আব্বু, তোমরা ভাড়া দিতে না চাইলে ওদের তো এমনিতেই থাকতে দিতে পারো। কিন্তু ওরা এমনিতে থাকবে না আসলে ওর ভাইয়া...
আব্বু: রোদেলা তোমার মাথা ঠিক আছে?
রোদেলা: (নিশ্চুপ)
আপু: আব্বু রোদেলা ওর ফ্রেন্ডকে সাহায্য করতে চাইছে এতে দোষের কি? (আব্বু চাচ্চু দুজনেই চুপ হয়ে আছেন, খুব ভয় হচ্ছে)
আব্বু: ঠিক আছে আসতে বলো ওদের। (আব্বুর কথা শুনে সবাই চমকে উঠলাম, আমিতো অবাক হয়ে আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছি আব্বু এতো সহজে রাজি হয়ে যাবেন ভাবতেই পারিনি)
রোদেলা: সত্যি?
আব্বু: হুম।

হিমি এই শহরে, দুজন একই কলেজে, এখন আবার একই বাসায় সবকিছু কেমন যেন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। তারমানে আমি হিমিকে আমার করে পাবো, আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। আনমনা হয়ে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ কলিংবেল এর শব্দে আমার ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো। আম্মু দরজা খুলতে গেলেন।
আম্মু: আরশান তোর নামে পার্সেল এসেছে। (আম্মুর কথা শুনে বেশ অবাক হলাম, আমার নামে পার্সেল?)
আব্বু: কি হলো যাও পার্সেলটা নিয়ে এসো।
আমার নামে কে পার্সেল পাঠাতে পারে আর কি আছে এতে ভাবতে ভাবতে গিয়ে সাইন করে পার্সেলটা নিয়ে আসলাম। সবার চোখ পার্সেলের দিকে, আব্বু চোখমুখ কুঁচকে পার্সেলের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমাকে কে পার্সেল পাঠাবে? আব্বুর সামনে কি প্যাকেট'টা খুলা ঠিক হবে? মাথায় হাজারটা প্রশ্ন নিয়ে ভয়ে ভয়ে প্যাকেট'টা খুলতে শুরু করলাম...

চলবে😍

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com