মেঘের নেশা || পর্ব- ৪
নুন মেঘালয়ের গাড়ি থেকে নামল এবং মেঘালয় কে তার হাত ধরে নামালো।।নেমেই সে তুহিনকে খুব তাড়াতাড়ি বললো"""
ভাইয়া তাড়াতাড়ি চলুন এখনই হাসপাতলে যাব আর ওর হাতের একটা ব্যবস্থা করতে হবে। "
এই বলে সামনে গেল, আর নুন সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার পরিচিত কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে সে লোকটাকে চিনতে পারছে তার ভাই ফার্মেসিতে ওষুধ কিনছে, মনে মনে কু ডাক দিল সে ভাবলো বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো?? সে এই ভেবে দৌড়ে তার ভাইয়ের কাছে গেল এবং হাপাতে হাপাতে ভাই সামনে দাঁড়িয়ে বলল
""" ভাই ভালো আছো?? বাড়ির সবাই ঠিক আছে??"""
জনি নুন কে দেখে চমকে গেলো সে বলল,
"" নুন তুই কখন এলি,তর কোন হ্মতি হয় নি ত বোন?? নুন কোন কথা বলল না সে কাপছে,
তা দেখে জনি বলল,
"বাড়ির সবকিছু ঠিক আছে। "
এবার নুন বলল আমি ভাল আছি তুমি হাসপাতালে কেন এত সকালে???.
জনি আমতাআমতা করতে লাগল..তা দেখে নুন আরো ঘাবড়ে গেল,
জনি বলল মা বাবা তর কথা শুনে প্রেসার বাড়িয়ে ফেলেছে।তাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছি।
জনি ওষুধের প্যাকেটটা নিতে নিতে বলল চল হাসপাতালে ভিতরে।
নুন এবার আর নিজেকে সামলে রাখতে পারল না সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলল,
""ভাই সত্যি করে বল কি হয়েছে বাবা মা ভালো আছে??""
তার হাত পা কাঁপতে লাগলো। আর জনি বল, ""আরে পাগলি কিছু হয়নি বললাম না শুধু প্রেসার চল চল।
নুন চলে গেল তার ভাইয়ের সাথে
___________________________________
নুন একবারও পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল না তার দিকে তাকিয়ে আছে এক জোড়া চোখ যে চোখে হাজারো মিনতি যেন না যায় কিন্তু না নুন আর পিছনে ফিরে তাকায় নি সে তার ভাইয়ের সাথে চলে গেছে মেঘালয় ভাবছে যে মেয়েটা আমার জন্য সারাটা রাত কান্না করলো সে কিনা এখন আমাকে না বলেই চলে গেল??? কেন কান্না করলো??? তাহলে সেটা কি ছিল নুন কি আমার জন্য কান্না করে নি??? নাকি সে নিজের জন্য কান্না করেছে?? যেন ডাকাতেরা তারা কান্না ধরে সে কি ভয় পেয়ে কান্না করেছিল?? এভাবেই হাজারো প্রশ্ন মেঘালয় নিজেকে করতে থাকে.
পাশে থেকে তুহিন বলে উঠলো কিরে মেঘালয় তুই আর নুন দুজন দুজনকে ভালোবাসি কিন্তু নুন তকে এভাবে এই অবস্থায় রেখে চলে যেতে পারল আবার কিছু বলে ও গেল না তাহলে তোদের ভালোবাসা মানেটা কি??? আর আমাদেরকে কেন জানাস নি এতদিন???
তুহিনের কথা শুনে মেঘালয় চমকে গেল তার দিকে দিকে তাকিয়ে বলল
"" সালা মদ খেয়েছিস?? এই আবোল তাবোল কথা বলছিস কেন??
শাকিব তাদের কথার মধ্যে ফোড়ন কেটে বলল """মিথ্যে বলছি আমরা তাই না গাড়িতে কি করেছেন???নুন তর জন্য দেখেছিস কান্না করছে জড়িয়ে ধরে কি পাগলামি এটা তো শুধু একজন প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে হয়ে থাকে তাই না??
মেঘালয় এবার বলল
""" আমিও জানিনা কেন নুন এমন করেছে কেন সে ধূমকেতুর মত আমার জীবনে এসেছে আর কেনই বা সে আমার জন্য এত কান্না করেছে জানিস ও মনে হয় আমার জন্য কান্না করে নি রে ভয় পেয়েছিল ডাকাতের ভয় তাই সে কান্না করেছে মেঘালয় আরো বললো যে তারা নুনএর মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই ওইদিনই তাদের প্রথম দেখা হয়।
এই কথা শুনে তার বন্ধুরা সবাই চমকে গেল একটা অচেনা মেয়ে একটা অচেনা ছেলের জন্য এভাবে কান্না করতে পারে তুহিন বিরক্তি ভরা কণ্ঠে বলল
"""এই বাদ দে তো চল আমরা মেঘকে ডাক্তার কাছে নিয়ে যাই এসব নাটক দেখার টাইম নাই বুঝলে দেখছিস না ওর হাত কেটে গেছে কষ্ট পাচ্ছে তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেল।
একটা ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে বসলো ডাক্তার ডেসিং করে তারপর সেলাই করে ব্যান্ডেজ করে দিলেন, আর বললেন বাসায় গিয়ে কিছুদিন রেস্ট নিতে হবে।
আর এদিকে মেঘালয় শুধু এটাই ভাবছি এটা কেন ধূমকেতুর মতো তার জীবনে এলো আবার কেনই বা সে উড়ে চলে গেল এর মানে তো বুঝলো না মেঘালয়।
________________________________________
জনি তার বোনকে তার বাবা-মায়ের কাছে নিয়ে গেল তার বাবা-মা নুন কে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল তাতে খুশি দেখে মনে হলো তারা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। একজনের পর একজন নুনকে কাছে টেনে নিচ্ছে আর প্রতিযোগিতা লেগেছে কে নুনকে বেশি আদর করতে পারে বাবা-মায়ের কিছু হয়নি সেটা দেখে নুন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
আরিফ সাহেব বললেন,
""নুন পিন্সিপাল বলল তোমাকে নাকি একটা লোক ডাকাতের হাত থেকে উদ্ধার করেছে,সে কই??
নুন বলল মেঘালয় বাবা,
"" কই সে??
নুন তার বাবাকে কিছু না বলে দৌড়ে আবার হাসপাতালের বাহিরে চলে আসলো এসেই মেঘালয় কে খুঁজতে লাগলো কিন্তু না কোথাও খুঁজে পেল না মেঘালয় চলে গেছে, নুন কি করে পারল তাকে এই অবস্থায় রেখে চলে যেতে,
নুন সেখানে দাঁড়িয়ে কান্না করতে লাগলো আরিফ সাহেব পিছনে পিছনে দৌড়ে এসেছিলেন এসে দেখলেন তার মেয়ে কান্না করছে তিনি মেয়ের কাধে হাত রাখলেন,
নুন তার বাবাকে দেখতে পেয়ে বলল
""বাবা মেঘালয় চলে গেছে। ""
তখন নুনের বাবা বলল ""তার কোন মোবাইল নাম্বার আছে তোমার কাছে??
নুন বলল"" না বাবা""
তখন তিনি বললেন""" তাহলে তো আর যোগাযোগ করা সম্ভব না যেহেতু সে নিজ থেকে চলে গেছে "
নুন বলল বাবা আমি ভাইয়াকে দেখে আর তার দিকে ফিরেও তাকাই নি তাকে নিচে রেখে উপরে চলে গিয়েছি।জানো বাবা ডাকাতরা না তার হাত কেটে ফেলেছে তা হাত দিয়ে অনেক রক্ত পরছিল নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিনা কি করবো বলো???
আরিফ সাহেব নিজেও কষ্ট পেলেন কথা শুনে তিনি মেয়েকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তার মার কাছে নিয়ে আসলো।।
এসে বলল """জনি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে বিল মিটিয়ে দাও আর রনি কে ফোন করে বল গাড়ি নিয়ে আসতে আমরা এখনই বাড়ি যাবো।
তার কথামতো সবকিছু করল এবং এক ঘণ্টার মধ্যে তাদের বাড়িতে ফিরে গেল কিন্তু সারাদিনে একটিবারও নুন কারো সাথে ভালো মতো কথা বলে নি তার মন কেমন ছটফট করছে তার নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে মেঘালয় চেহারা বারবার তার মুখের সামনে ভেসে উঠছে সে কিছু করতে পারছেনা তার খারাপ লাগছে বুকের ভেতর হাহাকার লাগছে সে বুঝতে পারছে কিছুটা সে হারিয়ে গেছে এমন ভাবেই সন্ধ্যার দিকে বসে বসে কান্না করছিল তার মনে হলো একেবারে বলা যেত না মেঘালয় তার ফোন নাম্বারটা দেওয়ার জন্য কিন্তু আমি তো এটা করিনি আহা কি ভুল করে ফেললাম মেঘালয় কে হারাতে হলো এই ভুলের জন্য। আহা আরেকবার যদি মেঘালয় কে খুঁজে পেতাম একদম মনের গভীরে জায়গা করে নিতাম। তখন হঠাৎ মনে হল আরে আমি মেঘালয় এর মোবাইল থেকে লামিয়া কে ফোন করেছিলাম তাহলে নিশ্চয়ই লামিয়ার মোবাইলের নাম্বার রয়েছে সাথে সাথে লামিয়াকে ফোন করলো আর তাদের বাড়ির সামনের মোড়ে আসতে বলল তাড়াতাড়ি মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে পরলো বাড়ির পাশে যে মোর আছে তার উদ্দেশ্যে।
তার মনে এখনও আশার আলো জ্বলছে আবার ফিরে পেতে চলেছে মেঘালয় কে, তার যেকোনো মূল্যে মেঘালয়কে চাই।
মেঘালয়কে ভালবেসে ফেলেছে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। একদিনে এক রাতে কি ভালোবাসা সম্ভব যদি সম্ভব হয় তাহলে নুন মেঘালয় কে ভালোবাসে।
নুন যখন মোড়ে পৌঁছাল তখন তার সাথে আবার আরেকটা দুর্ঘটনা ঘটলো এবার নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল তার সাথে কেন এমন হচ্ছে সে খুজে পাবে না।। যে আশা ছিল সেটাও বন্ধ হয়ে গেল কি করবে সে কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল কোন মূল্য দিয়ে হোক। তখনই লামিয়া একটা আইডিয়া দিল যা শুনে নুন আবার দোড় লাগলো,,, তার মন বলছে মেঘালয় কে সে আবার ফিরে পাবে।
চলবে........
আগামী কাল গল্পে নতুন মোড় নিবে..... 😍😍😍
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com