Breaking News

আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ১৯ || লেখিকা: সুলতানা তমা

আস্তে আস্তে চোখ খুলার চেষ্টা করলাম কিন্তু মাথা যন্ত্রণায় পারলাম না, আবার চোখ বুজে ফেললাম।
আব্বু: আরশান আস্তে আস্তে চোখ খুলার চেষ্টা করো।
--উনাকে চাপ দিবেন না নিজে থেকেই চোখ খুলবে, ভয় নেই খারাপ কিছু হয়নি। (অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর আস্তে আস্তে চোখ খুলতে পারলাম, চারপাশে মিটমিট করে তাকালাম। আমি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি, আমার দুপাশে চারজন ডক্টর আর পাশে আব্বু আর চাচ্চু বসা)
আব্বু: কষ্ট হচ্ছে?
ডক্টর: এখনি কথা বলতে হবে না তুমি রেস্ট নাও, সব ঠিক হয়ে যাবে।
আব্বু: আদিত্য বাসায় ফোন করে জানিয়ে দে আরশানের জ্ঞান ফিরেছে।
আদিত্য: ঠিক আছে চাচ্চু।
চাচ্চু: আরশান কে করেছে তোর এই অবস্থা?
ডক্টর: আরে ওকে এখনি এতো প্রশ্ন করবেন না।
আমি: আমি ঠিক আছি ডক্টর। চাচ্চু আদিত্যকে ডাকো। (চাচ্চু আদিত্যকে ডেকে এনে আমার পাশে বসালেন)
আদিত্য: কি ভাইয়া?
আমি: হিমি কোথায়? বাসায় আছে তো ও?
আদিত্য: একদম চুপ, এই মেয়ের জন্যই তুমি আজ মরতে বসেছিলে।
চাচ্চু: আদিত্য তুই জানিস ওর এই অবস্থা কে করেছে?
আদিত্য: খুব ভালো করেই জানি। আপুর বিয়ের অনুষ্ঠান'টা মিটে যাক তারপর বুঝাবো শালাকে।
আমি: তোকে আমি কি জিজ্ঞেস করেছি?
আদিত্য: হুম হিমি বাসায় আছে।
আব্বু: বলেছিলাম পঁচা শামুকে পা কাটতে যেওনা, এবার বুঝেছ তো? (আব্বু রাগ দেখিয়ে চলে গেলেন, পিছু পিছু চাচ্চুও চলে গেলেন)
আদিত্য: সজিব এসব করেছে তাই না?
আমি: হুম।
আদিত্য: সব এই হিমির জন্য হয়েছে।
আমি: ওকে কেন দোষ দিচ্ছিস? ও কি সজিবকে বলে দিয়েছে নাকি?
আদিত্য: হুম হিমিকে দোষ দেওয়াটাও বোকামি, এসব শুনার পর থেকে মেয়েটা পাগলের মতো কাঁদতেছে শুধু।
আমি: (নিশ্চুপ)
আদিত্য: আচ্ছা তুমি এতো রাত পর্যন্ত বাসার বাইরে কি করছিলে? আর সাথে মোবাইলটা আনলে কি হতো?
আমি: বুঝতে পারিনি সজিব হঠাৎ করে এমন কিছু করবে।
আদিত্য: তুমি বাসায় ফিরছ না দেখে সবাই খুব টেনশনে পড়ে যাই, বাসায় অনুষ্ঠান জেনেও তুমি এতো রাত পর্যন্ত বাইরে বিষয়টা খটকা লাগছিল। ফোন করি কিন্তু তোমার মোবাইল তো রুমে রাখা ছিল। আমি এক ফাঁকে হিমির কাছে যাই, হিমি বলে ওর আম্মু সব জেনে গেছে। আমি বুঝতে পেরেছিলাম তুমি টেনশনে আর ভয়ে বাসায় ফিরছ না। সবাই মিলে খুঁজতে বের হই, আমিতো ভাবতেও পারিনি তোমাকে রাস্তায় এভাবে রক্তাক্ত অবস্থায় পাবো।
আমি: বাসায় ফিরতে হবে আমাকে, কয়টা বাজে?
আদিত্য: চারটা এগারো।
আমি: সকাল হলেই বাসায় ফিরতে হবে।
আদিত্য: পাগল হয়েছ ডক্টর তোমাকে এই অবস্থায় রিলিজ দিবে?
আমি: রিলিজ নিতে হবে, হিমিকে আগলে রাখতে হবে আর আপুর বিয়ে আটকাতে হবে।
আদিত্য: কি?
আমি: হ্যাঁ বিয়েটা আটকাতে হবে, আমি হসপিটালে থাকলে বিয়েটা অনায়াসে হয়ে যাবে।
আদিত্য: কিন্তু বিয়ে আটকাবে কেন?
আমি: কারণ আপু বিয়েটা নিজের ইচ্ছেয় করছে না, আপু অন্য কাউকে ভালোবাসে। কিন্তু কাকে ভালোবাসে সেটা জানিনা।
আদিত্য: ঠিক আছে আমি ডক্টর এর সাথে কথা বলবো তুমি একটু রেস্ট নাও।
আমি: হুম।
আদিত্য চলে গেলো, আমি চোখ দুটো বুজে শুয়ে রইলাম।

ঘুম ভাঙ্গতেই আস্তে আস্তে চারপাশে তাকালাম, শান্ত, আরিয়ান, সিফাত আর আদিত্য একটু দূরে বসে আছে। আমি নড়াচড়া করছি দেখে সবাই উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসলো।
শান্ত: কে করেছে তোর এই অবস্থা?
আমি: সজিব।
সিফাত: ওর ঠিকানা জানিস? একবার বল ওকে মেরে ওর বাসায়ই কবর দিয়ে আসবো।
আদিত্য: আমি জানি ওর ঠিকানা, কিন্তু এখন ঝামেলা করা যাবে না, আগে আপুর বিয়েটা মিটে যাক। (বিয়ের কথা বলতেই মনে পড়লো আমাকে তো বাসায় যেতে হবে)
আমি: আদিত্য ডক্টর এর সাথে কথা বলেছিস?
আদিত্য: হ্যাঁ ডক্টর রিলিজ দিতে চাইছে না।
আরিয়ান: আজই রিলিজ নিতে চাস? পাগল হয়েছিস নাকি?
আমি: সজিব বলেছে হিমিকে নিয়ে যাবে আ...
সিফাত: আমরা তোর হিমিকে দেখে রাখবো তুই নিশ্চিন্তে থাক।
আমি: নারে আপুর বিয়েটাও আটকাতে হবে।
আদিত্য: কিন্তু আজকেই তো আপুর বিয়ে।
আমি: হুম ডক্টর এর সাথে কথা বল।
আদিত্য: আব্বু আর চাচ্চু আমাকে মেরেই ফেলবে।
শান্ত: তোর হাতে, পায়ে, মাথায় ব্যান্ডেজ আর তুই এই অবস্থায় বাসায় চলে যেতে চাচ্ছিস? পাগলামি করিস না প্লিজ!
আমি: বললাম তো আমাকে যেতে হবে।
সিফাত: ঠিক আছে আমরা ডক্টর এর সাথে কথা বলছি।
সবাই চলে গেল, আমি চুপচাপ শুয়ে আছি আর হিমির কথা ভাবছি, পাগলীটা কি করছে কে জানে।

আব্বু: আরশান এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। (চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম হঠাৎ আব্বুর চেঁচামেচিতে কেঁপে উঠে চোখ খুলে তাকালাম)
আব্বু: তুমি নাকি বাসায় চলে যেতে চাচ্ছ? তোমার যা মন চায় তাই করবে তুমি?
আমি: আপুর বিয়ে কবে?
আব্বু: আমি বিয়েটা পিছিয়ে দিতাম কিন্তু এতো মেহমান চলে এসেছে দু বাড়িতেই যে এখন সম্ভব না। আমাকে এখানে থাকতে হবে তাই বিয়ের অনুষ্ঠান সন্ধ্যায় হবে। এক ফাঁকে গিয়ে সব মিটিয়ে আসবো। (আব্বুর কথা শুনে মুচকি হাসলাম, আমি হসপিটালে তবুও উনি আপুর বিয়েটা দিবেনই এতোটাই জরুরী বিয়েটা)
আদিত্য: ভাইয়া ডক্টর রিলিজ দিয়েছে।
আব্বু: আদিত্য?
আদিত্য: আমি কি করবো ভাইয়া জিদ করছিলো।
শান্ত: ভয় নেই আঙ্কেল আমরা ওকে দেখে রাখবো।
আব্বু রাগ দেখিয়ে চলে গেলেন। সব ঝামেলা মিটিয়ে সবাই আমাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

বাসায় পৌঁছাতে প্রায় দশটা বেজে গেলো, এখনো অনেক সময় আছে আমার হাতে। বাসায় ঢুকতেই আম্মুর দিকে নজর পড়লো, আম্মু খুব কাঁদছেন।
আমি: আম্মু? (আমার ডাক শুনে আম্মু দৌড়ে আমার কাছে আসলেন)
আম্মু: কষ্ট হচ্ছে না তোর? আমি সবসময় ভয় পেতাম তোর বাইক চালানোটাকে আর আজ কিনা...
আমি: আম্মু তেমন কিছু হয়নি কেঁদো না। (আম্মুর চোখের পানি মুছে দিলাম, কেন যে বারবার আম্মুকে কাঁদাই)
ফুফু: এতো তাড়াতাড়ি রিলিজ নিয়ে চলে আসলি যে? (ফুফুর কথার উত্তর না দিয়ে বসতে বসতে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম, আপুকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না আপু কোথায়?)
আমি: আম্মু আপু কোথায়?
আম্মু: রুমে হয়তো।
চাঁচি: আরশানের জন্য বিয়েটা পিছিয়ে দিলেই হতো, শুধু শুধু ছেলেটা এই অবস্থায় বাসায় চলে এসেছে।
চাচ্চু: ও জিদ করে রিলিজ নিয়ে আসে কেন? ও ছাড়া কি ফারিয়ার বিয়ে আটকে থাকতো?
আপু: যে ভাইয়ের সুখের জন্য এতকিছু তার উপস্থিতি ছাড়া আমি কবুল বলবো সেটা তোমরা ভাবলে কিভাবে চাচ্চু? (আপু আমার দিকে আসতে আসতে কথা গুলো বললো, আপুর কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারিনা। চাচ্চুর দিকে তাকালাম আপুর কথার উত্তর না দিয়ে চুপচাপ চলে গেলেন)
ফুফু: আচ্ছা তোর এই অবস্থা কিভাবে হয়েছে?
আদিত্য: ফুফু আ...
আমি: রাতে বাইরে ছিলাম তো ছিনতাইকারী এমন করেছে। (মিথ্যে বললাম নাহলে হিমিকে নিয়ে সমালোচনা হবে আর আমার হিমিকে কেউ খারাপ কথা বলুক আমি সেটা সহ্য করবো না)
আব্বু: বাহ্ আমার ছেলে বড় হয়ে গেছে।
ফুফু: এতো রাত পর্যন্ত বাইরে থাকলে তো এমন খারাপ কিছু ঘটবেই। ভাইয়া আমি বলছিলাম কি আরশানকে বিয়ে করিয়ে দাও তখন দেখবে বাইরে থাকার অভ্যাসটা চলে যাবে। (ফুফুর কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম, ফুফু এসব কি বলছে?)
আম্মু: আরশানের পড়ালেখা এখনো শেষ হয়নি কি বলছ এসব তুমি?
ফুফু: তাতে কি হয়েছে? রাইসা আর আরশান একসাথে পড়াশুনা করবে।
আপু: ফুফু কি বলতে চাইছ স্পষ্ট করে বলতো।
চাঁচি: কি আবার রাইসার সাথে আরশানের বিয়ে, এই কথা তো অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে।
ফুফু: ভাইয়া ফারিয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানে ওদের দুজনের এংগেজমেন্ট সেরে ফেললে কেমন হয়?
আব্বু: ভেবে দেখছি। (আব্বুর কথা শুনে আপু রাগে কটমট করতে করতে আব্বুর দিকে এগিয়ে গেলো)
আপু: আব্বু বেঈমানি করোনা বেঈমানি আমি একদম পছন্দ করিনা। কথার নড়চড় হলে খুব খারাপ হবে মনে রেখো।
আপু রাগে রুমের দিকে চলে গেল। এখানে থাকলে আমিও ঝগড়া করবো ওদের সাথে তাই আমিও রুমের দিকে এগুলাম।

শান্ত: একটু রেস্ট নে আমরা বাইরে আছি।
আমি: হুম। (ওরা আমাকে রুমে দিয়ে চলে গেলো। খুব অস্বস্তি লাগছে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম। হিমি একবারো আমার কাছে আসেনি তাহলে কি হিমি জানেনা আমি যে বাসায় ফিরেছি? নাকি ওর আম্মু আসতে দিচ্ছে না? আনমনা হয়ে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ কে যেন আমার বুকে মাথা রাখলো, কে আবার হবে এই সাহস তো হিমিরই শুধু আছে। মুচকি হেসে এক হাতে জড়িয়ে ধরলাম, সাথে সাথে কেঁপে উঠে চোখ মেলে তাকালাম। রাইসা? এজন্যই চুল গুলো ছোট)
রাইসা: কি হলো ছেড়ে দিলে কেন?
আমি: উঠো বলছি।
রাইসা: ড্রয়িংরুমে এংগেজমেন্ট নিয়ে কথা হচ্ছিল কিছু না বলে চলে আসলে যে?
আমি: আগে আমার বুক থেকে সরো, তোমার সাহস হয় কি করে এসব করার? (এখন হিমি আসলে তো আমার বারোটা বাজিয়ে ফেলবে, এক হাতে ধাক্কা দিয়ে রাইসাকে সরিয়ে দিলাম)
রাইসা: আচ্ছা এমন করছ কেন? কিছুদিন পর আমাদের বিয়ে হবে, তুমি এখন অসুস্থ এই অবস্থায় কি আমি তোমাকে একটু আদরও করতে পারিনা।
আমি: না, এই অধিকার শুধু হিমির আছে। আর শুনো আমি তোমাকে বিয়ে করছি না, এই বিয়ে নিয়ে ভুল ধারণা তোমার আম্মু আর আমার আব্বুর।
রাইসা: হিমি কে? ওইযে উপরতলায় ভাড়াটে থাকে কালো মেয়েটা? (রাইসা হাসছে ইচ্ছে হচ্ছে একটা লাতি মারি, আমার হিমিকে নিয়ে হাসাহাসি)
রাইসা: এই কালো মেয়েকে তুমি ভালোবাস।
আমি: আর একবার হিমিকে নিয়ে বাজে কথা বললে তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এই রুম থেকে বের করে দিবো।
রাইসা: আমি আম্মুকে সব বলবো, তুমি ওই মেয়েটার জন্য আমাকে অপমান করেছ।
আমি: আমি আব্বুকেই পরোয়া করিনা ফুফু তো অনেক দূরের ব্যাপার। বেড়িয়ে যাও এই রুম থেকে।
রাইসা রাগে কটমট করতে করতে বেড়িয়ে গেলো। মাথাটাই নষ্ট করে দিলো।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছি হঠাৎ রোদেলা আসলো।
রোদেলা: হিমির সাথে দেখা করবে না?
আমি: ও আসেনি কেন?
রোদেলা: তুমি বাসায় এসেছ হিমি তো জানেই না অনেক কান্নাকাটি করতেছে। আর ও চাইলেও আসতে পারবে না কারণ ওর আম্মু আসতে দিবে না।
আমি: আমাকে ওর রুমে নিয়ে চল।
রোদেলা: ভাইয়াকে ডাকবো? তুমি তো হাটতেই পারো না।
আমি: না, তুই একটু ধর আমি যেতে পারবো। (বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখি অধরা, রিসিভ করবো কিনা ভেবে করেই ফেললাম)
আমি: হ্য...
অধরা: আরশান তোর নাকি এক্সিডেন্ট...
আমি: তোকে কে বললো?
অধরা: তুই বলিস নি তো কি হয়েছে আমি খবর পেয়েছি।
আমি: হুম ভালো।
অধরা: হসপিটালে আছিস? তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।
আমি: বাসায় আছি, যদি বন্ধু হিসেবে দেখতে চাস আসতে পারিস।
অধরা: আরশান তুই কি আমার ভালোবাসা কখনো বুঝবি না?
আমি: আমার জীবনে হিমি আসার আগে তুই বললে ভেবে দেখতাম কিন্তু এখন সম্ভব না। অধরা পাগলামি ছাড় আমাদের আগের অধরা হয়ে যা।
অধরা: হুম।
আমি: রাখছি। (ফোন রেখে বিছানায় ছুড়ে মারলাম যত্তোসব ঝামেলা)
রোদেলা: এভাবে কতদিন ভাইয়া? আমার মনে হয় অধরা আপুকে সবাই মিলে বুঝালে বুঝবে।
আমি: বুঝিয়েছি ওর মাথায় সমস্যা আছে তাই বুঝতে চাইছে না।
রোদেলা: হুম চলো।
আমি: হুম।

হিমিদের ফ্ল্যাটে এসে কলিংবেল চাপতেই ভাবি এসে দরজা খুলে দিলেন।
ভাবি: তোমরা?
রোদেলা: ভাবি এতো ভয় পাচ্ছ কেন?
ভাবি: আসলে মা আছেন বাসায় তাছাড়া...
আমি: তাছাড়া কি?
ভাবি: মা তো হিমির ভাইয়াকে সব জানিয়ে দিয়েছেন উনি আসতেছেন। দু একদিনের মধ্যে হয়তো আমাদের নিয়ে গ্রামে অথবা অন্য বাসায় চলে যাবে। (ভাবির কথা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, এখন কি করবো আমি?)
রোদেলা: ভাবি তুমি কিছু কর প্লিজ!
ভাবি: এই ভুল তো একবার হয়নি, হিমির ভাইয়া খুব রেগে গেছে আমার কথা শুনবে না। হিমির থেকে ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল আর হিমি ওর ভাইকে কথাও দিয়েছিল এই ভুল আর দ্বিতীয় বার করবে না। কিন্তু হিমি ওর কথা রাখেনি, ওর ভাইয়ার রাগ করাটা তো স্বাভাবিক।
আমি: (নিশ্চুপ)
ভাবি: হিমিকে যখন সজিব কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়েছিল চারদিন ওর দুই ভাই খাওয়া দাওয়া ছেড়ে পাগলের মতো হিমিকে খুঁজেছে, মা'কে তো হসপিটালে ভর্তি করতে হয়েছিল। হিমিকে যখন পাওয়া গেল তখন ওর সেন্স ছিলনা, হসপিটালে ভর্তি করা হলো। সেন্স ফিরত আবার হিমি চিৎকার দিয়ে সেন্স হারিয়ে ফেলত। অনেক দিন হিমিকে হসপিটালে রাখতে হয়েছিল। ঐ সময়ের কথা আমরা কখনো ভুলতে পারবো না, ওর দুই ভাই অনেক কষ্ট করেছে ওর জন্য, কাজেই ওদের এখন রাগ করাটা স্বাভাবিক।
রোদেলা: আচ্ছা আমাদের বাসা থেকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে ভাইয়া হিমিকে আরশান ভাইয়ার হাতে তুলে দিবে তো?
ভাবি: জানিনা, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারো। আমি যতটুকু পারি সবাইকে বুঝাবো।
আমি: হিমি কোথায়?
ভাবি: ওর রুমে আছে।
ভাবিকে পাশ কাটিয়ে হিমির রুমের দিকে গেলাম।

আমি: হিমি? (বিছানায় শুয়ে পাগলীটা কাঁদছিল আমার ডাক শুনে চমকে উঠে পিছন ফিরে তাকালো, আমাকে দেখে দৌড়ে এসে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো)
তারিন: এবার তুমি সামলাও এতক্ষণ আমি অনেক চেষ্টা করেছি কান্না থামানোর।
আমি: কি হয়েছে কাঁদছ কেন?
হিমি: সব আমার জন্য হয়েছে, এজন্যই আমি ভালোবাসা সত্ত্বেও আপনার সাথে সম্পর্কে জড়াতে চাইনি। আমিতো জানি সজিব কেমন, আগেই বুঝেছিলাম ও আপনার ক্ষতি করবে।
আমি: তুমি শুধু শুধু কাঁদছ দেখো আমার তেমন কিছু হয়নি, আচ্ছা বেশি কিছু হলে কি আমি আজই বাসায় চলে আসতাম? (হিমি একটু সরে গিয়ে আমাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে শুরু করলো, ওর পাগলামি দেখে হাসি পাচ্ছে)
আমি: কি দেখছ? আমার তেমন কিছু হয়নি।
হিমি: হুম হয়নি, ডক্টর তো অঝতা হাতে পায়ে মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। (হিমির কোমড় জড়িয়ে ধরে ওকে আমার কাছে টেনে আনলাম, ওর কপালে কপাল ঠেকালাম)
হিমি: কি করছেন ওরা আছে রুমে।
আমি: অনেক বেশি ভালোবাস আমাকে তাই না?
রোদেলা: তারিন বাইরে চল বড়দের রোমান্স দেখতে নেই। (হিমি লজ্জা পেয়ে দূরে সরে গেল, তারিন আর রোদেলা হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল রুম থেকে)
হিমি: আম্মু আসতে পারেন যেকোনো সময়।
আমি: শাশুড়িকে আমি ভয় পাই নাকি? (কুড়িয়ে কুড়িয়ে হেটে এসে বিছানায় বসলাম, হিমি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
আমি: কি দেখছ?
হিমি: আপনার না কিছু হয়নি তাহলে কুড়িয়ে কুড়িয়ে হাটছেন কেন?
আমি: পায়ে একটু বেশি লেগেছে, সজিবের বুদ্ধি আছে নাহলে কি রাস্তায় একা পেয়ে এটাক্ট করে? যেদিন ও সরি বলেছিল সেদিনই বুঝেছিলাম ঝরের পূর্বাভাস। কিন্তু বুঝতে পারিনি এভাবে রাস্তায় একা পেয়ে পিছন দিক থেকে আঘাত করবে।
হিমি: কেন যে আমার জীবনের সাথে নিজেকে জড়াতে গেলেন। (হিমি আমার পাশে বসতেই ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে ওকে আমার কাছে নিয়ে আসলাম, হিমি আমার দুচোখের দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: রাইসা তো আমার কেউ না তবুও আমি অসুস্থ বলে আমাকে আদর করতে এসেছিল আর তুমি আমার বউ হয়ে আমাকে একটুও আদর করছ না, এটাই বুঝি ভালোবাসা? (হিমি দুহাতে চোখের পানি মুছে নিয়ে আমার গলা চেপে ধরলো)
আমি: কি করছ?
হিমি: অন্য মেয়ে আপনাকে টাচ্ করবে কেন?
আমি: তুমি যেহেতু করনা অন্য মেয়ে করলে দোষ কোথায়? (হিমি অভিমান করে মাথা নিচু করে ফেললো, ওর কান্না থামানোর জন্য দুষ্টুমি করেছিলাম কিন্তু ও তো এখন গাল ফুলিয়ে ফেলেছে)
হিমি: চোখ বন্ধ করুন।
আমি: কেন?
হিমি: করুন বলছি।
আমি: ওকে করলাম। (চোখ বন্ধ রাখলেও বেশ বুঝতে পারছি হিমি আমার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে আসছে, এক চোখ খুলে একটু তাকালাম সাথে সাথে হিমি সরে গেলো)
হিমি: আপনি চিটিং করেছেন।
আমি: আর করবো না।
আমি দুচোখ বন্ধ করতেই হিমি আমার একদম কাছে এসে আমার কপালে ওর মিষ্টি দুইটা ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। আচমকা হিমির এমন চুমু আমি যেন বরফের মতো জমে গেলাম। হিমির খিলখিল হাসির শব্দে আমার ঘোর কাটলো। চোখ মেলে তাকালাম, হিমি লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। হিমির লাজুক মুখে মৃদু হাসি, আমি মুগ্ধ নয়নে হিমির লজ্জামাখা মুখ দেখছি...

চলবে😍

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com