Breaking News

আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ৩ || লেখিকা: সুলতানা তমা

হিমি হঠাৎ আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে হাটা শুরু করলো, আমি পিছু ডাকলাম।
আমি: হিমি? (থমকে দাঁড়ালো তারপর পিছন ফিরে আমার দিকে তাকালো)
আমি: কিছু বললে না যে?
হিমি: হুট করে গ্রামে এসেছেন তো তাই সবকিছুই সুন্দর লাগছে, আবার যখন ইট পাথরের শহরে ফিরে যাবেন তখন এই গ্রামের কথা এই গ্রামের মানুষের কথা নিমিষেই ভুলে যাবেন।
আমি: তুমি আমায় ভুল বুঝছ আমি তোমাকে ভালোবাসি।
হিমি: এভাবে হুট করে ভালোবাসা হয় না যা হয় সেটা হলো ভালোলাগা। শহরের আধুনিক মেয়েদের ভীর থেকে এসে হঠাৎ করে গ্রামের সহজ সরল মেয়ে দেখেছেন তো তাই ভালো লেগেছে, আবার যখন শহরে ফিরে যাবেন তখন আধুনিকতার ভীরে এই গ্রামের মেয়েটাকে ভুলে যাবেন।
আমি: ভালোবাসা বলে আসেনা হিমি ভালোবাসা হুট করেই মনের অজান্তে হয়ে যায়। আর শহরের আধুনিক মেয়েদের কথা বলছ? আমার মন ছুঁতে পারলে তুমিই পেরেছ আধুনিক মেয়েরা পারেনি।
হিমি: ফিরে যান নিজের শহরে সব আস্তে আস্তে ভুলে যাবেন।
আমি: কি ভুলবো? কাকে ভুলবো? নিজেকে কখনো ভুলা যায়? আমিতো তোমার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি ভুলবো কিভাবে তোমায়?
হিমি: আমার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন? হাসালেন। আজ যদি আমাদের দুজনকে একসাথে গ্রামের মানুষ দেখে কাল সকালে বদনাম আমার হবে, আর আপনি? আপনি তো পালাবেন ঐ শহরে। এসব ক্ষণিকের ভালোলাগা ভালোবাসা নয়।
আমি: হিমি...
হিমি: যতো তাড়াতাড়ি পারেন এই গ্রাম ছেড়ে চলে যান, আমি চাইনা এই বিষয়টা লোকেরা মুখে মুখে বলুক।
আমি: যদি তোমাকে আমি কালই বিয়ে করতে চাই?
হিমি: আমার পড়াশুনা নিয়ে অনেক স্বপ্ন আছে, আমাকে নিয়ে আমার মা এবং ভাইদের অনেক স্বপ্ন। এসব ভালোবাসা আমার জন্য নয়।
আমি: যদি তোমার পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব দেই?
হিমি: হাত জোড় করছি প্লিজ এমনটা করবেন না, এমন করলে আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। (হিমি আমার সামনে দুহাত জড়ো করে কেঁদে দিলো, একহাতে ওর দুহাত ধরলাম অন্যহাতে ওর চোখের পানি মুছে দিলাম)
আমি: তোমার পরিবার জানবে না কিন্তু আমি তোমাকেও ভুলবো না, তোমার স্বপ্ন গুলো পূরণ হতে যতো দিন সময় লাগবে আমি ততোদিন তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। হিমি আমি তোমার জন্য সব করতে রাজি শুধু আমার থেকে দূরে থেকো না। আমরা রিলেশন চালিয়ে যাই কেমন? তোমার স্বপ্ন পূরণ করো তারপর নাহয় আমরা বিয়ে করবো, তাছাড়া আমারো তো পড়াশুনা শেষ হয়নি।
হিমি: আপনি একটা পাগল আপনাকে বুঝানোর সাধ্য আমার নেই।
আমি: পাগল ছিলাম নাতো তোমাকে দেখার পর থেকে তোমার প্রেমে পাগল হয়ে গেছি।
হিমি: ধ্যাত আমার হাত ছাড়ুন, আপনি থাকুন আপনার পাগলামি নিয়ে। (হিমি ঝটকা দিয়ে আমার হাত ছাড়িয়ে দিয়ে হনহন করে হাটা শুরু করলো, হিমিকে শুনিয়ে জোড়ে বললাম...)
আমি: হিমি আমি তোমাকে আগামীকাল প্রপোজ করবো সবার সামনে, আজ সারারাত ভেবে তুমি সিদ্ধান্ত নিও। আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি হিমি।
হিমি: পাগল।
হিমি পিছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলেই দৌড়ে চলে গেল, ওর মুখে পাগল ডাক শুনে মুচকি হেসে রুমের দিকে পা বাড়ালাম।

শান্ত: কিরে কোথায় ছিলি এতক্ষণ? (রুমে আসতেই শান্ত প্রশ্ন করলো, উত্তর না দিয়ে চেয়ার টেনে ওদের সামনে বসলাম। শান্ত আর আরিয়ান গান গাইছে, ওদিকে সিফাত চ্যাটিং এ ব্যস্ত)
আরিয়ান: আচ্ছা আমরা সকালে চলে যাচ্ছি তো?
সিফাত: হ্যাঁ সকাল নয়টার দিকে বেরিয়ে পড়বো।
আমি: আমি কাল যাচ্ছি না।
আরিয়ান: মানে?
শান্ত: তোদের তো কালই যাওয়ার কথা আর আমি দুদিন পর যাবো।
আমি: কাল আমি হিমিকে প্রপোজ করবো।
সিফাত: কি? (সিফাত ফোনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়েই ফিক করে হেসে দিলো)
আমি: মেয়েদের মতো গড়াগড়ি খেয়ে হাসছিস কেন?
সিফাত: শান্ত তুই জানতে চাইছিলি না আরশান এতক্ষণ কোথায় ছিল? আমি জানি ও কোথায় ছিল।
শান্ত: কোথায় ছিল আর কিভাবে জানিস আমরা তিনজন তো একসাথেই এই রুমে আছি।
সিফাত: ভালো করে ওর দিকে তাকিয়ে দেখ। (সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে নিজের শরীর দেখছি, বুঝতে পারছি না ওরা কি দেখে হাসছে। টিশার্ট এর দিকে নজর পড়তেই জিহ্বায় কামড় দিলাম, বুকের কাছে লিপস্টিক এর দাগ। এই দাগ লাগলো কিভাবে? হঠাৎ মনে পড়লো হিমি ভয় পেয়ে আমার বুকে মুখ গুঁজেছিল তখন হয়তো লেগেছে)
সিফাত: এবার বল কোথায় ছিলি তুই?
আরিয়ান: বাব্বাহ্ জল এতো দূর গড়িয়েছে আর আমরা কিছু জানিই না?
আমি: তোরা যা ভাবছিস তা নয়।
শান্ত: তাহলে কি? আরশান তোর টিশার্ট এ লিপস্টিক এর দাগ আসলো কিভাবে? আরশান ভুলে যাসনা এইটা গ্রাম, এখানে...
আমি: শান্ত তুই অজতা ভয় পাচ্ছিস তেমন কিছু না। আমি হিমির সাথে কথা বলছিলাম তখন দুজন লোকের কথা শুনতে পাই আর হিমি ভয় পেয়ে...
শান্ত: হিমি কিছু বলেছে?
আমি: হুম।
আরিয়ান: কি বলেছে? রাজি হয়েছে?
আমি: না, হিমি না করে দিয়েছে।
সিফাত: কি বলছিস?
আমি: তবুও আমি কাল ওকে প্রপোজ করব।
আরিয়ান: একবার যেহেতু না করে দিয়েছে আমার মনে হয় না কাল রাজি হবে।
আমি: দেখা যাক আজ কি সিদ্ধান্ত নেয়, এখন শুধু সকালের অপেক্ষা।

মেঘাচ্ছন্ন সকাল, পুকুরপাড়ে বসে আনমনা হয়ে পুকুরে ঢিল ছুড়ছি আর বারবার হিমিদের বাড়ির দিকে তাকাচ্ছি। হিমি কি সিদ্ধান্ত নিবে এইটা ভেবে সারারাত ঘুমাতে পারিনি ছটফট করেছি শুধু। কি যে হবে আজ...
শান্ত: কিরে এতো সকালে উঠে পড়লি আজ? (শান্তর কন্ঠ শুনে পাশ ফিরে তাকালাম, আমার দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে শান্ত আমার পাশে বসলো)
শান্ত: টেনশন হচ্ছে? (চায়ের কাপে চুমুক দিতে যাচ্ছিলাম শান্তর কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম)
শান্ত: তোর বোধহয় ঘুম হয়নি চোখ দুটু বিষণ লাল হয়ে আছে। (মৃদু হাসলাম)
আমি: কি করে ঘুম হবে? মায়াবতী যে আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
শান্ত: একটা কথা বলবো?
আমি: বল।
শান্ত: প্রপোজ করার জন্য যখন আজ থাকবি তাহলে প্লিজ আপুর বৌভাতে চল।
আমি: আমার এসব ভালো লাগছে না একা থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে।
শান্ত: যদি হিমি যায় তবুও যাবি না? (শান্তর দিকে অবাক চোখে তাকালাম)
শান্ত: তারিনের বেষ্ট ফ্রেন্ড হিমি, তারিন হিমিকে রেখে কখনো আপুর বাসায় যাবে না আমি নিশ্চিত।
আমি: আমি যাবো না কখন বললাম?
শান্ত: তুই সত্যি হিমির প্রেমে পাগল হয়ে গেছিস।
শান্ত হাসতে হাসতে চলে গেল। হিমিদের বাড়ির দিকে তাকালাম এই মেয়েটা কি একবারের জন্য বের হতে পারে না? ও কি বুঝেনা ওকে দেখার জন্য আমি সবসময় ছটফট করি? কবে যে মায়াবতী আমার ভালোবাসা বুঝবে।

তারিন: আরশান ভাইয়া আরশান ভাইয়া... (হিমির কাজলের কৌটোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম হঠাৎ তারিনের চেঁচামেচি শুনে কৌটো লুকিয়ে রুম থেকে বের হলাম)
আমি: তারিন কি হয়েছে?
শান্ত: তারিন আস্তে চেঁচামেচি কর, রুমে চল আমি তোকে সব বুঝিয়ে বলছি। (শান্ত তারিনের হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসলো পিছন পিছন আরিয়ান সিফাতও আসলো, তারিন এভাবে রেগে আছে কেন তবে কি হিমি তারিনকে সব বলে দিয়েছে?)
তারিন: ভাইয়া আমার হাত ছাড়ো।
শান্ত: ঠান্ডা মাথায় আমার কথা শুন।
তারিন: কি শুনবো হ্যাঁ? শহর থেকে দুদিনের জন্য গ্রামে এসে গ্রামের মেয়েদের মন নিয়ে খেলা করা...
শান্ত: তারিন চুপ কর।
তারিন: আরশান ভাইয়া তুমি হিমিকে কি বলেছ?
আরিয়ান: তারিন তুমি আরশানকে ভুল বুঝছ, আরশান তো হিমিকে ভালোবাসে।
তারিন: বড় লোকের ছেলেরা কখনো গ্রামের সাধারণ মেয়েদের ভালোবাসে না, সব আবেগ। শুনো আরশান ভাইয়া তোমার জন্য হিমি আজ কেঁদেছে সারা সকাল আমাদের বাড়িতে আসেনি, হিমি যদি তোমার কারণে আপুর বাসায় না যায় তাহলে কিন্তু...
শান্ত: তারিন চুপ কর বলছি। (শান্তর ধমক শুনে তারিন চুপ হয়ে গেল)
শান্ত: তুই সবটা না জেনে কেন আরশানকে ভুল বুঝছিস? আরশান তো হিমির কোনো ক্ষতি করেনি ভালোবেসেছে আর তো কিছু নয়, আর ভালোবাসা তো অন্যায় নয়।
তারিন: সত্যি ভালোবাসে? নাকি...
সিফাত: তারিন তুমি তো আমাদের প্রায় চার বছর ধরে ছিনো, এতোদিনে আরশানকে ছিনতে পারোনি? আরশান হিমিকে সত্যি ভালোবাসে।
শান্ত: হ্যাঁ তারিন আরশান হিমিকে সত্যি ভালোবাসে। হিমি তোর বেষ্ট ফ্রেন্ড আর আরশান খুব ভালো ছেলে হিমিকে ও অনেক সুখে রাখবে, তুই কি চাস না তোর বেষ্ট ফ্রেন্ড সুখে থাকুক?
আমি: তারিন আমি হিমিকে সত্যি অনেক ভালোবাসি। আর আমি হিমির আচরণে যতোটুকু বুঝেছি হিমিও আমাকে পছন্দ করে।
তারিন: কিন্তু ভাইয়া তোমাদের এই সম্পর্ক কেউ মেনে নিবে না, হিমির ভাইয়া কখনো মেনে নিবে না।
শান্ত: কোনো বড় ভাই'ই বোনের প্রেম মেনে নেয় না, কিন্তু যখন দুজনের ভালোবাসাটা সত্যি হয় তখন সবাই মানতে বাধ্য হয়। আগে তো ওদের দুজনকে এক হতে হবে তারপর নাহয় পরিবার নিয়ে ভাবা যাবে।
তারিন: কিন্তু...
আমি: তারিন প্লিজ তোমার সাহায্য ছাড়া কিছু সম্ভব না, আমাদের তুমি সাহায্য কর প্লিজ!
তারিন: হিমি রাজি হবে বলে আমার মনে হয় না।
শান্ত: তুই রাজি করাবি।
সিফাত: একবার ওদের দুজনকে এক করে দাও বাকিটা আমরা বুঝে নিবো। (তারিন আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে)
আরিয়ান: কি ভাবছ আরশান হিমিকে সত্যি ভালো রাখবে কিনা? আরশানকে আমরা ছিনি তুমি ওর উপর ভরসা কর‍তে পারো।
তারিন: হিমি ভালো থাকবে এজন্য শুধু আমি রাজি হচ্ছি, তোমার জন্য যদি কখনো হিমির চোখে পানি আসে তাহলে...
আমি: একবার ভরসা করে দেখোই না।
তারিন: ঠিক আছে কি করতে হবে আমাকে?
আমি: হিমির সাথে আমার দেখা করিয়ে দিতে হবে।
তারিন: কিন্তু হিমি তো আমাদের বাড়িতে আসতে চাচ্ছে না।
আমি: আজ ওকে প্রপোজ করবো বলেছিলাম তাই হয়তো ভয় পেয়ে আসেনি।
তারিন: আপুর বাসায় যাওয়ার জন্য ওকে কতো করে বললাম কিন্তু ও কিছুতেই যেতে রাজি হচ্ছে না উল্টো বলছে আরশান ভাইয়া শহরে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত ও আমাদের বাড়িতে আসবে না।
আমি: হিমি যে কেন এতো ভয় পায়।
তারিন: হিমি ওর ভাইদের ভয় পায় আর এই ভয়ে ও হয়তো রিলেশনে জড়াতে রাজি হবে না।
আমি: তুমি শুধু একবার ওকে নিয়ে এসো বাকিটা আমি বুঝে নিবো।
তারিন: ঠিক আছে। (তারিন চলে গেল, ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। বারবার শুধু একটা কথাই আমার মাথায় ঘুরছে হিমি এখনি এতো জিদ ধরে বসে আছে প্রপোজ করার পর যদি ডাইরেক্ট না করে দেয়? কিছু ভাবতে পারছি না বড্ড ভয় হচ্ছে)
শান্ত: আরশান এতো টেনশন কেন করছিস?
আমি: বিশ্বাস কর তোরা আমি হিমিকে সত্যি অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।
শান্ত: সেতো বুঝাই যাচ্ছে।
আমি: আচ্ছা আপুর শশুড় বাড়ি কোথায়?
শান্ত: আমাদের এখানকার শহরে, কেন?
আমি: ওখানে হোটেলে রুম বুক করা যাবে?
শান্ত: হ্যাঁ কিন্তু কেন?
আমি: আমি আপুর বাসায় গেলে হিমি যেতে চাইবে না তাই আমি যাবো না, আমি চাই না আমার জন্য হিমির আনন্দ নষ্ট হউক। আমি হোটেলে রুম বুক করে তোকে ফোনে জানিয়ে দিব তুই শুধু বৌভাত এর অনুষ্ঠান শেষে হিমি আর তারিনকে নিয়ে হোটেলে চলে আসবি।
আরিয়ান: তুই কি করতে চাইছিস বলতো।
আমি: আমার হিমিকে আমি প্রপোজ করবো সাদামাটা ভাবে করবো নাকি?
সিফাত: তো?
আমি: সারপ্রাইজ।
শান্ত: তোর মাথায় যে কি ঘুরছে, তুই সত্যি হিমির প্রেমে ফেঁসে গেছিস।
আমি: তুই শুধু ওদের নিয়ে আসিস।
শান্ত: ঠিক আছে।
হিমিকে আজ এমন সারপ্রাইজ দিব যে হিমি আমার প্রপোজ ফিরিয়েই দিতে পারবে না।

হোটেল রুমে বসে আছি আর ডায়মন্ড এর রিং এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছি, এই রিংটা আমার হিমির আঙ্গুলে খুব সুন্দর মানাবে।
আরিয়ান: আমিতো ভাবতেই পারিনি আরশান এর মাথায় এতো সুন্দর একটা প্ল্যান ঘুরছিল।
সিফাত: ওর দ্বারা সব সম্ভব। (আরিয়ান আর সিফাত কথা বলতে বলতে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে)
আরিয়ান: কিরে তোর মনের মতো করে রুমটা সাজানো হয়েছে তো? (আরিয়ানের কথায় রুমের চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম, কাঁচা ফুল দিয়ে পুরো রুমটা সাজানো হয়েছে চারদিকে ফুলের গন্ধ ছড়াছড়ি করছে, আমি মৃদু হেসে বললাম...)
আমি: একদম।
সিফাত: আচ্ছা তুই এতো টাকা পেলি কোথায় টাকা কি সঙ্গে নিয়ে এসেছিলি?
আমি: না, আপুকে ফোন করে বলেছিলাম আমার একাউন্টে টাকা দিতে।
আরিয়ান: এতো জাঁকজমক ভাবে প্রপোজ? দোস্ত বিয়ের সময় কি করবি?
আমি: সব, আমার হিমি যেভাবে চাইবে সেভাবে বিয়ে হবে।
আরিয়ান: কিন্তু ওরা এখনো আসছে না কেন সন্ধ্যা কেটে রাত নেমে আসছে তো।
সিফাত: আকাশের অবস্থাও ভালো না ঝড় বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে, এখান থেকে শান্তদের গ্রাম কিন্তু মোটামুটি কিছুটা দূরেই।
আমি: ভয় নেই শান্ত গাড়ি নিয়ে আসবে আর আমরা সবাই সে গাড়িতে করেই ফিরে যাবো।
আরিয়ান: এতো কিছু করছিস এবার হিমি রাজি হলেই হলো।
আমি: হুম।

আনমনা হয়ে বসে আছি আর হিমিদের আসার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। আমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে যখন হিমি আসবে তখনি ওকে প্রপোজ করে আমার করে নিবো।
"আরশান" হঠাৎ শান্তর ডাক শুনে চমকে উঠলাম, শান্ত আর তারিন ভিতরে ঢুকলো। হিমি দরজায় দাঁড়িয়ে আছে আর রুমের ভিতরে অবাক হয়ে চোখ বুলাচ্ছে। আমি উঠে হিমির কাছে আসলাম, আমাকে দেখে ও কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। হিমির ভয় কাটানোর জন্য মৃদু হেসে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম।
আমি: এসো।
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: ভয় পাচ্ছ কেন এখানে তো তারিন আছে, এসো। (হিমি আমার হাত না ধরে রুমের ভিতর পা রাখলো আর ঠিক তখনি উপর থেকে গোলাপের পাপড়ি হিমির উপরে ছড়িয়ে পড়লো, হিমি অবাক চোখে পাপড়ি পড়ার দিকে তাকিয়ে আছে)
তারিন: ওয়াও কি সুন্দর করে সবকিছু সাজিয়েছ, আরশান ভাইয়া তুমি হিমিকে এতোটা ভালোবাস? (তারিনের প্রশ্ন শুনে হিমি আমার দিকে তাকালো তারপর তারিনের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো)
হিমি: তারিন তুই আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছিস?
তারিন: আরে আরশান ভাইয়া তোকে প্রপোজ করবে তাই আমরা এখানে এসেছি, প্রপোজ করা হয়ে গেলেই আমরা ফিরে যাবো।
হিমি: তারিন তুইও?
তারিন: আরশান ভাইয়া তোকে সত্যি ভালোবাসেরে।
হিমি: কিন্তু...
শান্ত: আরশান একটু তাড়াতাড়ি কর প্লিজ বৃষ্টি নামলে গ্রামের কাঁচা রাস্তা দিয়ে যেতে তোদেরই কষ্ট হবে।
হিমি: তারিন ফিরে চল আমি এখানে আর এক মুহূর্তও থাকবো না।
আমি: হিমি? (আমার ডাক শুনে হিমি পিছন ফিরে আমার দিকে তাকালো, পকেট থেকে রিংটা বের করে হিমির সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়লাম। হিমি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
"হিমি ভালোবাসা কাকে বলে আমি বুঝতাম না কখনো বুঝার চেষ্টাও করিনি, তোমাকে দেখার পর বুঝেছি।
ভালোবাসা কেমন হয় কতোটা গভীর হতে পারে জানতাম না, তোমাকে দেখার পর সেটা অনুভব করেছি।
শুনেছি কারো প্রেমে পড়ার জন্য নাকি কোনো কারণ লাগে না, বিশ্বাস করতাম না হাস্যকর মনে হতো। কিন্তু তোমাকে দেখার পর বুঝেছি প্রেমে পড়ার জন্য এক পলকের দেখাই যথেষ্ট।
হিমি আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি প্রথম দেখাতেই, আই লাভ ইউ মায়াবতী"
হিমি আমার হাতে থাকা রিং এর দিকে তাকিয়ে আছে, এখন শুধু হিমির হাত বাড়িয়ে দেওয়ার অপেক্ষা তারপর আমি ওর আঙ্গুলে রিংটা পড়িয়ে দিবো।
তারিন: কিরে হিমি হাতটা বাড়িয়ে দে আরশান ভাইয়া সেই কখন থেকে তোর সামনে হাটু গেড়ে বসে আছে।
হিমি: (নিশ্চুপ)
আরিয়ান: হিমি ভয় পেয়ো না বোন আমরা সবসময় তোমাদের সাথে আছি।
হিমি: (নিশ্চুপ)
সিফাত: পরিবারের ভয় পাচ্ছ? ওসব আমরা সামলে নিবো।
শান্ত: হিমি হাতটা বাড়িয়ে দে আরশান অপেক্ষা করছে তো। (হিমি আমার দিকে তাকালো তারপর হাত বাড়িয়ে আমার হাত থেকে রিংটা কেড়ে নিলো, ওর এমন আচরণে সবাই বেশ অবাক হলাম। হিমি রিংটা আমার হাতে দিয়ে হাত মুঠো করে দিলো, রিংটা মুঠোয় নিয়ে ওর দিকে বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে আছি)
হিমি: এসব ডায়মন্ড এর রিং আমাদের মতো সাধারণ মেয়েদের হাতে মানায় না। এতো ভালোবাসা এতো চাকচিক্যতা আমাদের মানায় না।
আমি: হিমি আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমি যা চাইবে আমি তাই এনে দিব, বলো কি চাও।
হিমি: কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
আমি: কেন? আমি দেখতে খারাপ? নাকি...
হিমি: আমি আপনাকে পছন্দ করি না, ভালোবাসি না আপনাকে। আমাকে আর ডিস্টার্ব করবেন না প্লিজ!
হিমি চেঁচিয়ে কথা গুলো বলে হনহন করে চলে গেল, আমার হাত থেকে রিংটা ফ্লোরে পড়ে গেলো। নিশ্চুপ হয়ে হিমির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি, দুচোখ বেয়ে বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে। কি বলে গেলো হিমি এসব? আমার মনের ভিতর উলটপালট হয়ে যাচ্ছে, বারবার শুধু মনে হচ্ছে আমি হেরে গেছি, হেরে গেছে আমার ভালোবাসা...

চলবে😍

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com