গল্প : রোমান্টিক অত্যাচার || পর্ব : ৩
এখনি তোরা ওর পিছনে লাগবি আর বিরক্ত করবি!!
আমি তখন রুমের ভিতরে হালকা গান বাজিয়ে!!
নাচানাচি করতে থাকলাম!!
কারন এতদিনে তিথি কে একটু হলেও শিক্ষা দিতে পারবো এই ভেবে!!
কিছুক্ষন পর তিথির নাম্বার থেকে ফোন আসতে লাগলো, আমিত মহাখুশি কারন সেদিন ও মিথ্যা কথা বলে আমার আরামদায়ক ঘুম হারাম করে দিয়েছিলো!!
আজকে সত্যি সত্যি বিপদে পড়ছে তাই আমাকে ফোন দিতেছে!!
তবে আমি এত সহজেই ফোনটা রিসিভ করবই না!!
২০ বারের এর উপরে ফোন আসলো! এর পর আর ফোন না আসাতে আমি নিজেই তিথিকে ফোন করলাম!!
আমি : হ্যালো কী হয়ছে এতবার ফোন দিচ্ছিলে কেনো??
তিথি : তেমন কিছু হয়নি তবে আপনার পাঠানো দুজন ছেলেকে মেরে তিন রাস্তার মোড়ে রেখে এসেছি!!
বেচারা অনেক কষ্ট পাচ্ছে হয়তো আপনি এসে তাদের কে রিসিভ করে নিয়ে যান কেমন!!
এইটুকু বলেই তিথি ফোন রেখে দিলো!!
আমি বাসা থেকে বের হয়ে তিন রাস্তার মোড়ে যে দুজন কে পাঠিয়েছি তাদের খুঁজতে লাগলাম!!
দূরে দেখতে পেলাম সেই দুজন ছেলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেটে আমার দিকেই আসছে!!
এসে তারা বলল : এই ছিলো আপনার মনে! আমাদের কে এক গুন্ডি মেয়ের হাতে মার খাইয়ে কি লাভ পাইছেন!!
আপনি বলেছিলেন মেয়েকে যেনো আমরা টার্চ না করি!!
মেয়েটা সেই সুযোগ নিয়ে আমাদের কে ইচ্ছে মত মারধোর করে গেলো!!
আপনার সাথে আর কোন কথা নেই!!
এই বলে ওরা চলে গেলো!!
আমি আর কিছুই ভাবতে পারলাম না!!
ঠিক তখন আমার ফোনটা বেজে উঠলো,,
দেখি আমার এক মেয়ে ফ্রেন্ডের ফোন।
রিসিভ করলাম,,
আমি : হ্যা, কি খবর তোর??
ফ্রেন্ড : আমার আর খবর!!
আচ্ছা তুই কিছুদিন আগে আমাকে বলছিলি না, যে তুই নাকি প্রেম করবি??
আমি : হুম মেয়ের খুজ দিতে পারবি সিংগেল থাকতে একদম ই ভালো লাগতেছে নাহ্!!
ফ্রেন্ড : হুম সে জন্যই তোকে ফোন দিয়েছি আমার এক ফ্রেন্ড আছে ও নাকি তোকে পছন্দ করে!!
আমি : সত্যি??
ফ্রেন্ড : হুমম সত্যি!!
আমি : তাহলে দেখা করিয়ে দে,না!!
ফ্রেন্ড : আচ্ছা কাল তাহলে ওকে নিয়ে আমি রেস্টুরেন্ট এ যাবো তোকে ফোন দিলে চলে আছিস!!
আমি : আচ্ছা!! খুব উপকার করলি রে দোস্ত !
এটা বলেই ফোনটা রেখে মনের সুখে গুনগুন করে গান গাইতে লাগলাম!!
কারন এর আগে যতবার প্রেম করার জন্য চ্রেষ্টা করেছি প্রতি বার কোন না কোন ঝালেমা গেলে রিলেশন আর করা হয়নি!!
এই বার নতুন করে কোন ঝামেলা হতে দেওয়া যাবে না "!
তাই কদিন এর জন্য তিথির উপর প্রতিশোধ নেওয়ার বিষয়টা মাথা থেকে বের করে দিতে হবে!!
আমি সেদিন এর মত বাসায় চলে আসি!
বাসায় ঢুকতেই বদমাইশ গুন্ডি তিথির সাথে দেখা!!
তিথি : কোথায় গিয়েছিলেন??
আমি : তুমাকে বলতে হবে বুঝি!!
তিথি : বলবেন না মানে হ্যা!!
অব্যশই বলতে হবে!!
আমি : না বললে কি করবেন শুনি!!
তিথি : আপনার পাঠানো দুজন ছেলের কি অবস্তা করেছি দেখছেন ই তো!!
আপনাকেও সেই অবস্তা করে ফেলবো!!
বেশি বুঝলে আর অযথা ঘুরাঘুরি করলে!!
আমি তখন আর কিছু বলার সাহস পেলাম না!
আর মনে মনে ভাবলাম.. সোজা আঙুলে ঘি উঠছে তো কি হয়ছে!!
আমি তো আর আঙুল বেঁকিয়ে ঘি তুলবো নাহ্!!
দরকারে চামুচ ব্যাবহার করবো!!
তাই ভাবলাম কালকে যার সাথে রিলেশন করতে যাবো তাকে প্রথম এবং শেষ শর্ত দিবো এটা " যে.. তাকে তিথির সাথে সারাক্ষন ঝগড়া করতে হবে আর সবসময় তিথি কে হারাতে হবেই ""
পরদিন সকালে সেই মেয়ে ফ্রেন্ড ফোন দিয়ে বললো; আমরা এসেছি তুই তাড়াতাড়ি আয়!!
আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম!
রেস্টুরেন্ট গিয়ে দেখি আমার ফ্রেন্ড আর একটা মেয়ে মানে যার সাথে আমার রিলেশন করার কথা ওরা দুজন আমার অপেক্ষা করছে!!
আমি সেখানে যেতেই মেয়েটা আমাকে সালাম দিলে ফ্রেন্ড বলল দেখছিস কত ভদ্র একটা মেয়ে।
আমি বললাম : হুম ভালো লাগছে!!
এভাবে কিছুক্ষন কথা বলার পর যখন আমি মেয়েটা কে প্রপোজ করবো ঠিক সেই সময় কোথা থেকে যেনো তিথি এসে পড়লো!!
তিথি আমার কাদেঁ হাত রেখে বলল : বাবু তুমার সাথে একটু রাগ করেছি বলে তুমি আমাকে ছেড়ে অন্য জনের কাছে যাইতেছো ছিঃ, ছিঃ!!
আমি : এই এই কি বলো এসব হ্যা!
দেখেন অনেক দিন সিংগেল ছিলাম! এখন ঝামেলা করলে সারাজিবন ই সিংগেল থাকতে হবে!! প্লিজ। এখান থেকে যাও!!
তিথি : যাবো মানে আমাদের ৪ বছরের রিলেশন এত সহজেই কি ছাড়তে পারি!!
তখন আমার ফ্রেন্ড ঐ মেয়েকে নিয়ে আমাকে কিছু না বলেই চলে গেলো!!
পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি তিথিও আস্তে আস্তে চুরের মত চলে যাচ্ছে!!
আমি পিছন থেকে তিথির দু হাত ধরে টান দিয়ে ওর মুখ আমার কাছে টেনে বললাম কেনো করলে এরকম ( রেগে আগুন)
তিথি হালকা মুসকি হেসে বলল সরি!!
আমি : সরি মানে এত বড় একটা ঝামেলা করে শুধু সরি!!
তিথি : তো আর কি করবো!! আপনি সেদিন আমাকে বিরক্ত করার জন্য দুজন ছেলে ভাড়া করেছিলেন, তাই আপনাকে বিরক্ত করলাম!!
আমি : এটা কে বিরক্ত করা বলে তাই না??
আর সেদিন তো দুজন ছেলে কে তুমি নিজেই মারধোর করেছো "ওরা তুমাকে বিরক্ত করার আগেই!!
আচ্ছা যাইহোক প্রতিশোধ তো নিয়েছো তাই না!
তাহলে আজকের পর থেকে আমার সামনে কখনো আসবে না!!
আমার থেকে সব সময় দূরে দূরে থাকবে আর আমার সাথে কথা বলার ও চ্রেষ্টা করবা না!!
এইটুকু বলে চলে আসার সময় তিথির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ও লাল হয়ে গেছে আর গম্ভির মুখ!!
তার মানে ও আমার কথায় প্রচুর কষ্ট পেয়েছে!!
সত্যি বলতে ওর মুখ আমি এই প্রথম গম্ভির হতে দেখলাম!!
কারন ও একটু Crazy টাইপের মেয়ে তাই সব সময় হাসিখুশি থাকে!
আমি সেখান থেকে বাসায় চলে আসলাম!!
মাঝখানে দুদিন চলে গেলো!
তিথি আমাকে না করেছে ফোন!!
না এসেছে আমার সামনে!!
এখন আমি নিজেকেই নিজে গালিগালাজ করতে লাগলাম!!
কেনো যে সেদিন রাগের মাথায় এত কিছু বলতে গেলাম!!
এই দু দিন তিথিকে দেখতে না পেয়ে সত্যি এক প্রকার পাগলের মত লাগছে!!
মনের মধ্যে অস্তিরতা কাজ করছে!!
আমি ছাদে গেলাম,কারন আমার রুমের ভিতরে শ্বাস নিতেই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল!!
ছাদে গিয়ে দেখি তিথির ফুল গাছ গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে!!
তার মানে এ দুদিন তিথি ছাদেও আসেনি!!
আমি নিচ থেকে পানি নিয়ে এসে ফুল গাছে পানি দিলাম!!
তিথির জন্য আমার মনের অস্তিরতা কাজ করে!!
এটার মানে আমার মনে ওর জন্য জায়গা আছে!!
মনের অজানতেই হয়তো তিথিকে ভালোবেসে ফেলেছি!!
আবার ভাবলাম, আমাদের বাসায় ই এত সুন্দর মেয়ে থাকতে আমি অন্য মেয়েদের সাথে প্রেম করতে কেনো গেলাম!!
আর আমি আগেই বলেছি তিথি এতটাই সুন্দর যে হাজার টা মেয়ের মধ্যে থেকে একজন!! রাজকন্যা মত লাগে একদম!!
একবার যখন ও গোসল করে ভেজা চুলে, চোখে হালকা কাজল লাগিয়ে চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে ওর ফুল গাছে পানি দিচ্ছিল!!
তখন আমি ছাদে যেতেই আমার জ্ঞান হারানোর মত অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো!!
কারন ওর মায়াবি চোখ, মৃদু হাসি, সাথে হালকা বাতাসে ভেসে আসা ওর চুলের মাতাল করা সুঘ্রাণ!!
সব কিছু মিলে পাগল ই হয়ে যাচ্ছিলাম!!।।
যাইহোক আমি আমার সব রাগ অভিমান ভুলে তিথিদের রুমের দরজায় কড়া নাড়লাম!!
আন্টি দরজা খুলে ভিতরে আসতে বললে আমি ভিতরে গিয়েই তিথি কে খুজতে লাগলাম!!
তিথির রুমে গিয়েই দেখি তিথি কাথামোড়ি দিয়ে সুয়ে আছে!!
আমি আন্টি কে বললাম কি হয়েছে তিথি এমন সময় সুয়ে আছে কেনো??
আন্টি : ওর গতকাল থেকে খুব জ্বর আসছে অনেক ঔষুধ খাইয়েছি, তবে কোন পরিবর্তন দেখতে পেলাম না!
আচ্ছা তুমি ওর সাথে কথা বলো আমি কফি করে নিয়ে আসছি!!
আমি তিথির বিছানার পাশে হাটুগেড়ে বসে পড়লাম!!
তিথির মাথায় হাত রাখতেই ও আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল : কেমন আছেন??
আমি : ভালো,আর তুমার জ্বর আসছে এটা ফোন করে একটু বলতে পারলে না??
তিথি : আপনিই তো সেদিন বলেছিলেন আপনার সামনে যাতে না আসি, তাহলে ফোন দিবো কেমন করে!!
আমি : তখন রাগের মাথায় কি, না কি বলেছি!!
সেই কথা চিন্তা করেই অভিমান করে রয়েছো আসলে তুমরা মেয়েরা এমন কেনো!!
তিথি চুপ করে রইলো!!
আমি মনের মধ্যে অনেক সাহস নিয়ে!
তিথির হাতটা শক্ত করে ধরে ফেললাম!!
তখন তিথি আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো!!
আমি ভাবলাম " তিথি সুস্থ হয়ে উঠলেই আমি ওকে প্রপোজ করবো কারন আমি বুঝে গিয়েছি!
তিথি কে আমার মনের গভীরে জায়গা দিয়ে ফেলেছি!!
তাই তিথিকে ছাড়া কেমন যেনো একা একা লাগে!!
এর মাঝখানে আরো ২ দিন চলে গেলো!!
তিথির অবস্থা আরো খারাপ এর দিকে চলে যাচ্ছিল!!
আমি একটু ভয়ে ভয়েই ছিলাম কারন কখন যে কি হয়ে যাবে বুঝা যাচ্ছিল না!!
আর ওর কিছু হলে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারবো নাহ্ "!!
★চলবে.......
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com