Breaking News

আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ২৫/অন্তিম || লেখিকা: সুলতানা তমা

কপালে কারো ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে সামনে তাকালাম, হা করে হিমির দিকে তাকিয়ে আছি দেখে হিমি মিটিমিটি হাসছে। আবারো সেই আগের হিমি? পড়নে বেগুনী রঙের কাতান শাড়ি, শাড়ির আঁচল টেনে মাথায় ঘোমটা দেওয়া, চোখে গাড়ো করে কাজল টানা, কপালে ছোট টিপ, ঠোঁটে লিপস্টিক, কানে ঝুমকো আর চুলগুলো পিটময় ছড়িয়ে আছে।
হিমি: কি দেখছ?
আমি: আমার মায়াবতীকে। (হিমি হাসছে আর আমি মুগ্ধ  নয়নে ওর টোলপড়া হাসি দেখছি)
হিমি: তুমি বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলে তাই ডেকে তুলিনি, সবাই রেডি হয়ে গেছে উঠে রেডি হয়ে নাও।
আমি: তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে একদম বউ বউ লাগছে।
হিমি: এখন সবাই জানে আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে, আজ প্রথমবার তোমার স্ত্রী হিসেবে তোমাদের বাড়িতে ঢুকবো বউ বউ না লাগলে হয়? (হিমি উঠে চলে যেতে চাইলো ওর হাত ধরে টেনে কাছে এনে হিমিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম, হিমি আমার বুকে তুথুনি রেখে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে লাজুক দৃষ্টিতে)
আমি: আজ আর ভয় করছে না?
হিমি: না।
আমি: লজ্জা করছে?
হিমি: ধ্যাত তুমি না।
আমি: আমি কি?
হিমি: আরশান একটা অনুরোধ করবো রাখবে?
আমি: হ্যাঁ বলো।
হিমি: আমি সজিবের সাথে একবার দেখা করতে চাই।
আমি: মানে? (হিমি ভয় পেয়ে দূরে ছিটকে গেলো, আমি উঠে বসে হিমির দিকে তাকালাম)
আমি: হিমি এতকিছুর পর সজিবকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে আমরা একটু শান্তি পেয়েছি আর তুমি...
হিমি: শুধু একবার আরশান।
আমি: কিন্তু কেন?
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: ঠিক আছে যাবো মুখ গোমড়া করে থেকো না প্লিজ!
হিমি উঠে চুপচাপ চলে গেলো, আমিও উঠে ফ্রেশ হতে চলে আসলাম, এই হিমি যে কি চায় আল্লাহ্‌ জানেন।

ড্রয়িংরুমে বসে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমি আসতেই সবাই উঠে দাঁড়ালো, কিন্তু শান্তরা কোথায়?
আপু: এবার বেরুনো প্রয়োজন ওদিকে আম্মুরা অপেক্ষা করছেন।
আমি: হিমি শান্ত, আরিয়ান, সিফাত ওরা কোথায়?
হিমি: জানিনা, নাশতা করার সময় আরিয়ান ভাইয়ার কাছে একটা ফোন আসলো তারপর ওরা নাশতা না করেই চলে গেলো। (আশ্চর্য আমাকে না জানিয়ে কোথায় গেলো ওরা তিনজন?)
রিমি আপু: আরশান তুমি নাশতা করে নাও তারপরই আমরা বেরুবো।
আমি: না আপু এখন আর ভালো লাগছে না চলুন।
রিমি আপু: ঠিক আছে। (হিমির দিকে তাকালাম ও কি সত্যি থানায় যেতে চায় সজিবের সাথে দেখা করার জন্য? কিন্তু দেখা কেন করতে চায়?)

যতটুক বুঝতে পারছি গাড়ি থানার দিকে যাচ্ছে, রুদ্র ভাইয়া ড্রাইভ করছেন তাই কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারছি না। আচ্ছা এই হিমি চায়টা কি? গাড়ি থানার সামনে দাঁড় করানো হলো, আমি হিমির দিকে তাকালাম।
রুদ্র ভাইয়া: হিমি আমরা সবাই গাড়িতে আছি তুই আরশানকে নিয়ে থানার ভিতরে যা। আর হ্যাঁ মনে রাখিস তুই কিন্তু পাঁচ মিনিট সময় চেয়েছিস।
হিমি: ঠিক আছে।
হিমির পিছুপিছু থানার ভিতরে ঢুকলাম।

সজিব হিমিকে দেখে চমকে উঠলো, হিমি আস্তে আস্তে সজিবের দিকে এগিয়ে গেলো।
হিমি: কেমন আছ?
সজিব: থানায় কেউ ভালো থাকে?
হিমি: এমন অন্যায় করো কেন যে অন্যায় এর জন্য জেলে পঁচে মরতে হয়?
সজিব: (নিশ্চুপ)
হিমি: যখন তুমি প্রথম আমাকে কিডন্যাপ করেছিলে আর চারদিন আটকে রেখেছিলে তখন আমার খুব কষ্ট হয়েছিল। আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম প্রচণ্ড ভয় পেতাম, জানো তবুও আমি তোমাকে অভিশাপ দেইনি। কারণ ভালোবাসার মানুষকে কখনো অভিশাপ দেওয়া যায় না, মন থেকে সায় আসে না। আমি তোমাকে সত্যি ভালোবেসে ছিলাম সজিব কিন্তু তুমি... তুমি তো আমাকে ভালোবাসনি, তুমি আমার শরীরটাকে চেয়েছিলে। ভালোবাসা হয় মন থেকে শরীরের জন্য নয় সজীব। তুমি যা চেয়েছিলে তা সম্পূর্ণ পাপ ছিল আর আমি তোমার কথায় পাপে জড়াতে চাইনি বলে তুমি আমাকে কিডন্যাপ করেছিলে। ভালোবাসা কি প্রিয় মানুষের ক্ষতি করার শিক্ষা দেয় সজিব?
সজিব: তুমি কি করেছ? আমি যেমন তোমার ক্ষতি করেছিলাম তুমিও তো আমাকে জেলে দিয়েছ, তোমার আর আমার মধ্যে পার্থক্য কি রইলো?
হিমি: প্রথমবার তো আমি তোমাকে শাস্তি দেইনি অভিশাপও দেইনি বরং ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে দ্বিতীয় বার কিডন্যাপ করলে তোমার জিদের জন্য আর আরশানের আব্বুর কথায়। সজিব অন্যায় একবার ক্ষমা করা যায় কিন্তু বারবার নয়।
সজিব: (নিশ্চুপ)
হিমি: শাস্তি পেয়ে তোমার মুখটা দেখতে ঠিক কেমন হয়েছে সেটাই দেখতে এসেছিলাম। মনে রেখো ভালোবাসা মনের ব্যাপার শরীরের নয়। আর ভালোবাসার মানুষকে কখনো কষ্ট বা অভিশাপ দেওয়া যায় না। তুমি তোমার করা অন্যায় এর শাস্তি পাচ্ছ, আমি কখনো মন থেকে তোমার ক্ষতি চাইনি। (হিমির এই কথাটা শুনে সজিব বেশ অবাক হয়েই হিমির দিকে তাকালো)
সজিব: তুমি কি এখনো...
হিমি: না সজিব, আমি আর তোমাকে ভালোবাসি না। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা সেদিনই মরে গেছে যেদিন তুমি ভালোবাসার নামে আমার কাছে শরীর চেয়েছিলে। আমি একটা জিনিস খুব বিশ্বাস করি এখন "জীবনে সঠিক মানুষটি আসার জন্য ভুল মানুষটিকে কোনো না কোনো ভাবে চলে যেতে হয়" তুমি আমার জীবনে ভুল মানুষ ছিলে আর তুমি চলে যাওয়াতেই আরশান নামের সঠিক মানুষটি আমার জীবনে এসেছে। ধন্যবাদ তোমাকে আমার জীবনে সঠিক মানুষটিকে আসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। (সজিব হিমির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, সজিবের দুচোখে পানি টলমল করছে। হিমি আমার হাত ধরে চলে আসতে চাইলো তখনি সজিব হিমিকে পিছু ডাকলো)
হিমি: কিছু বলবে?
সজিব: পারলে ক্ষমা করে দিও।
হিমি মৃদু হেসে আমার হাত ধরে চলে আসলো।

হিমি: তোমার মনে প্রশ্ন জেগেছিল তো আমি কেন সজিবের সাথে দেখা করতে চাই? বুঝতে পেরেছ এখন? (আনমনা হয়ে গাড়িতে বসে ছিলাম হঠাৎ হিমির এমন কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম)
হিমি: শাস্তি পেয়ে ওর অবস্থা কেমন হয়েছে দেখতে গিয়েছিলাম আর ওকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়েছিলাম। সজিব আমার জীবন থেকে চলে গিয়েছে বলেই তো তুমি আমার জীবনে আসার সুযোগ পেয়েছ।
আমি: (নিশ্চুপ)
হিমি: আচ্ছা আরশান ভালোবাসার মানুষ গুলো বেঈমানি করে কেন? কেন ওরা নিজের স্বার্থের জন্য প্রিয় মানুষটির মনে আঘাত করে? (হিমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ওর প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে কিন্তু আমি কি উত্তর দিবো? আমার কাছে তো উত্তর নেই, আমি সত্যি জানিনা মানুষ কেন নিজের স্বার্থে ভালোবাসার মানুষের ক্ষতি করে বা তার মনে আঘাত করে)
আমি: হিমি সব ভালোবাসার মানুষ গুলো একরকম হয় না, কেউ খারাপ হয় আবার কেউ ভালো হয়। মানুষের জীবনে বারবার স্বার্থপর মানুষ আসলেও একটা সময় কেউ একজন আসে যে তাকে সত্যি ভালোবাসে তাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে।
হিমি: যেমন তুমি। (হিমি আমার দিকে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত এক মুগ্ধতায়, মুচকি হেসে ওকে আমার কাছে টেনে নিলাম)

আম্মু, চাঁচি, চাচ্চু, রোদেলা, আদিত্য, তারিন আর হিমির পরিবারের সবাই আমাদের বরণ করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে দেখে বেশ অবাক হলাম। কিন্তু খারাপও লাগছে এখানে আব্বু নেই দেখে, তবে কি আব্বু এখনো আমাদের মেনে নেননি? অবশ্য এই খারাপ মানুষটার পক্ষে মেনে না নেওয়াটাই স্বাভাবিক। ভালো হতো এই মানুষটাকে শাস্তি দিতে পারলে।
আম্মু: আরশান কি হলো ভিতরে চল। (হঠাৎ আম্মুর ধাক্কায় হকচকিয়ে উঠলাম, সবাই বাসার ভিতর যাচ্ছে দেখে আমিও পিছুপিছু গেলাম)
আব্বু: তাহলে তোমার কথা গুলোই সত্যি করলে? (আব্বু সোফায় বসে ছিলেন আমরা ভিতরে ঢুকতেই আম্মুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলেন)
আম্মু: হ্যাঁ করলাম, ছেলে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি কোনো অন্যায় করিনি।
আব্বু: ভুল মানুষের সাথে বিয়ে দেওয়াটা অন্যায় নয়?
আম্মু: আমি ভুল মানুষের সাথে ওদের বিয়ে দেইনি, ওরা যাকে ভালোবাসে তার সাথে দিয়েছি আর ভালোবাসা কখনো অন্যায় হতে পারে না।
আব্বু: ভালোবাসা? আমার মান সম্মান নষ্ট করে এখন ভালো...
আম্মু: খবরদার আমার বৌমা বা মেয়ের জামাইর দিকে এক পা এগুলে খবর আছে।
আব্বু: আমি কিন্তু এবার তোমার উপর রেগে যেতে বাধ্য হবো।
আম্মু: সারাজীবন তো এটাই করে এসেছ আর আমি মুখ বুজে সহ্য করেছি। কিন্তু আর না... (কলিংবেল বেজে উঠলো, এই দুপুরবেলা আবার কে আসলো?)
আমি: আম্মু আমি দেখছি।
আম্মু: হুম।

দরজা খুলে পুলিশের দিকে বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে আছি, আশ্চর্য বাসায় পুলিশ কেন এসেছে?
আম্মু: আরশান ওদের ভিতরে আসতে দে।
আমি: আম্মু ওরা...
আম্মু: আমিই ডেকেছি।
আদিত্য: কিন্তু কেন চাঁচি?
আম্মু: অন্যায়কারীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।
আমি: মানে? (কি বলছে আম্মু এসব? তাহলে কি আম্মু আব্বুকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্যই পুলিশ এনেছেন?)
আম্মু: আমার বৌমাকে কিডন্যাপ করানোর অপরাধে উনাকে নিয়ে যান।
আব্বু: কি বলছ এসব?
আম্মু: অন্যায় যখন করেছ শাস্তি তো পেতেই হবে।
আব্বু: শফিক তুই কিছু বলছিস না কেন? (আব্বুর কথা শুনে চাচ্চু কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলেন)
আব্বু: কিছুই বলবি না?
চাচ্চু: কি বলবো ভাইয়া? আমারো তো একটা মেয়ে আছে, রোদেলাকে যদি কেউ কিডন্যাপ করতো আমার কেমন লাগতো? আমি জানতাম তুমি ছেলে মেয়ের ভালোর জন্য টাকার পিছনে ছুটো কিন্তু তুমি যে এমন জঘন্য কাজ করবে আমি ভাবতে পারিনি। আজ যদি হিমির কিছু হয়ে যেতো পারতে ওকে ওর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে?
আব্বু: (নিশ্চুপ)
আম্মু: নিয়ে যান ওকে।
পুলিশ আব্বুকে নিয়ে যাচ্ছে আমি নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, কি হয়ে গেলো এসব? আমিতো এমন কিছু চাইনি। হ্যাঁ আমি চেয়েছিলাম আব্বু শাস্তি পান কিন্তু এভাবে নয়।

পরন্ত বিকেল, বারান্দায় দাঁড়িয়ে আনমনা হয়ে আকাশ দেখছি। হঠাৎ কে যেন আমার কাধে হাত রাখলো, পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি আম্মু, তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম।
আম্মু: আরশান আমি জানি তোর খুব কষ্ট হচ্ছে, ফারিয়াও কান্নাকাটি করছে। আমি তোদের কথা দিচ্ছি খুব তাড়াতাড়ি আমি তোদের আব্বুর জামিনের ব্যবস্থা করবো।
আমি: (নিশ্চুপ)
আম্মু: এই কাজটা না করলে তোর আব্বু কখনো শোধরাতো না, এই কাজটা করা খুব প্রয়োজন ছিল তোর আব্বুর চোখে আঙ্গুল দিয়ে ওর অন্যায় গুলো দেখিয়ে দেওয়ার জন্য।
আমি: কিন্তু আম্মু...
আম্মু: অন্যায় বারবার ক্ষমা করলে হয় না আরশান মাঝেমাঝে অন্যায়কারীকে শাস্তিও দিতে হয়। আমি কথা দিচ্ছি তোদের আব্বুকে বেশি শাস্তি পেতে দিবো না। আমি চাই তোর আব্বু একটুখানি শাস্তি পেয়ে নিজেকে শোধরে নিয়ে ফিরে আসুক।
আমি: হুম।
আম্মু: তোরা মন খারাপ করে থাকিস না আমার ভালো লাগে না।
মৃদু হেসে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম। এই মানুষটা আমাদের সাপোর্ট না করলে কবেই ভেসে যেতাম, এমন মা যে ভাগ্যগুণে পাওয়া যায়।

আদিত্য: তারিন তুমি কিছু বলবে কিনা? (হিমির রুমের দিকে যাচ্ছিলাম হঠাৎ আদিত্যর কন্ঠ শুনে থেমে গেলাম, কিছু দূরে আদিত্য আর তারিন দাঁড়িয়ে আছে)
আদিত্য: আমি কিন্তু খারাপ কিছু করতে বাধ্য হবো, অনেক সহ্য করেছি তারিন। আজ থেকে আমি তোমার পিছনে পড়ে আছি? তুমি বারবার আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছ কাউকে কিছু বলতেও দিচ্ছ না। আমিতো আরশান ভাইয়াকে জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি...
তারিন: প্লিজ আমাকে যেতে দাও।
আদিত্য: মন থেকে বলছ? তোমার চোখে তো আমি ভালোবাসা দেখেছি। আমি জানি তারিন তুমি শান্ত ভাইয়াকে ভয় পাচ্ছ।
আমি: কি হয়েছে রে আদিত্য? (আমাকে দেখে দুজন দুদিকে সরে গেলো, দুজন এভাবে কষ্ট পাচ্ছে আর আমরা কেউ কিছু বুঝতে পারিনি?)
আদিত্য: ভাইয়া গতকাল তোমাকে তারিনের কথাই বলতে গিয়েছিলাম কিন্তু তোমার মন খারাপ ছিল। ভাইয়া আমি তারিনকে ভালোবাসি কিন্তু ও শান্ত ভাইয়ার ভয়ে কিছু বলছেই না।
তারিন: আসছি আমি।
আমি: তারিন দাঁড়াও। (তারিন হনহন করে হেটে চলে গেলো, আদিত্য তারিনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
আমি: তারিন তোকে ভালোবাসে?
আদিত্য: ওর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি কিন্তু ও শান্ত ভাইয়ার ভয়ে... (আমার ফোন বেজে উঠলো, শান্ত ফোন দিয়েছে)
আমি: হ্যালো।
শান্ত: একটু কলেজে আয়।
আমি: কেন?
শান্ত: তাড়াতাড়ি আয় প্রয়োজন আছে।
আমি: ঠিক আছে আসছি। (ফোন রেখে আদিত্যর দিকে তাকালাম)
আমি: তুই তারিনকে প্রপোজ করার ব্যবস্থা কর বাকিটা আমি দেখছি, এতো সুন্দর সারপ্রাইজ দিবি যেন তারিন অবাক হয়ে যায়।
আদিত্য: হুম।

শান্তর পাশে অধরা দাঁড়িয়ে আছে দেখে অবাক হয়ে ওদের দিকে এগিয়ে গেলাম, আমাকে দেখে অধরা মৃদু হাসলো।
আমি: কেমন আছিস? আর এতদিন কোথায় ছিলি? জানিস আমরা তোকে কতো খুঁজে...
অধরা: তুই ভালো আছিস তো?
আমি: হ্যাঁ ভালো।
অধরা: আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি আর কখনো এই শহরে ফিরবো না, দেখা হবে না আর তোদের সাথে।
আমি: কি বলছিস এসব?
অধরা: আসছি, ভালো থাকিস।
আমি: অধরা শুন। (অধরা চলে যাচ্ছে আমি নির্বাক হয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি)
শান্ত: এই নে।
আমি: কি এইটা?
শান্ত: চিঠি, অধরা দিয়ে গেছে। (চিঠিটা হাতে নিয়ে অধরার দিকে তাকালাম, অনেক দূরে চলে গেছে)
শান্ত: চিঠিটা পড়।
আমি: হুম।

আস্তে আস্তে অধরার রেখে যাওয়া চিঠিটা খুললাম...
"আরশান তোরা বরাবরই আমার বন্ধু ছিলি, আমি কখনো তোকে নিয়ে অন্য কোনো স্বপ্ন দেখবো ভাবতেও পারিনি। তোর আব্বু আর সজিব আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল। তোর আব্বু বলেছিল উনার কথা শুনলে আমাকে তোর বউ করে ঘরে নিবে। তোর আব্বুর কথায় সেদিন আমি তোর অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে ওসব নোংরামি করেছিলাম। বিশ্বাস কর আমার ভালোবাসায় কোনো নোংরামি ছিল না, আমি তোকে সত্যি ভালোবাসি। আর তাই তোর জীবন থেকে চলে যাচ্ছি, আমি না গেলে হিমি আর তুই এক হবি কিভাবে? দুজন ভালোবাসার মানুষকে এক হতে হলে তো তৃতীয় জনকে কষ্ট পেতেই হয়। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, পারলে ক্ষমা করে দিস"
শান্ত: আরশান কাঁদিস না।
আমি: অধরা আমাদের ছেড়ে এভাবে চলে যেতে পারলো?
শান্ত: তৃতীয় ব্যক্তিকে তো সরতেই হয়।
আমি: হুম।
শান্ত: বাসায় চল অন্ধকার হয়ে আসছে আন্টি টেনশন করবেন।
আমি: চল।

বাসায় এসে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম কিন্তু কে যেন আমার হাত ধরে টেনে অন্য রুমে নিয়ে আসলো, নিজেকে সামলে নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি হিমি। এই মেয়েটা রোজ এতো সাজগোজ করে কেন? ও কি বুঝেনা নিজেকে সামলে রাখতে পারিনা? আজ তো হিমিকে খুব সুন্দর লাগছে একদম আমার আগের মায়াবতী।
হিমি: এইযে? (হিমির ধাক্কায় আমার ঘোর কাটলো, ওকে পাত্তা না দিয়ে চলে আসার জন্য পা বাড়ালাম)
হিমি: কি হলো আমাকে এড়িয়ে চলছ কেন? (হিমি আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো)
হিমি: শাস্তি দিচ্ছ?
আমি: হ্যাঁ, রাতে তুমি আমাকে শাস্তি দিয়েছ আমি তোমাকে এখন শাস্তি দিচ্ছি।
হিমি: আরশান এতো গুলো বছর পর আপুর সাথে আমার দেখা হয়েছে তাই আমি আপুর কাছে ঘুমিয়েছিলাম আর তুমি কিনা এজন্য রাগ করছ?
আমি: আরে কান্না করছ কেন আমি রাগ করিনি। আসলে অধরার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম তাই তোমার কাছে যাওয়ার সুযোগ পাইনি।
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: এখনো মুখ গোমড়া করে থাকবে? (হিমিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম)
আমি: আসলে আদিত্য আর তারিন...
হিমি: আমি সব জানি আর সব ব্যবস্থা করা হয়ে গেছে। শান্ত ভাইয়াকেও ফোন করে ডেকে নিয়েছি। তুমি ছাদে যাও আমি তারিনকে নিয়ে আসছি।
আমি: ঠিক আছে।
হিমির কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে ছাদের দিকে এগিয়ে গেলাম।

বাহ্ এখানে তো দেখছি সবাই আছে। আপু, রিমি আপু, দুলাভাই, শান্ত, সিফাত, আরিয়ান আর আদিত্য।
আদিত্য: ভাইয়া হয়েছে সব সাজানো? (ছাদের চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম)
আমি: হ্যাঁ খুব সুন্দর হয়েছে কিন্তু তুই এতো ঘামছিস কেন?
আদিত্য: ভয় হচ্ছে খুব।
আমি: আমিও হিমিকে প্রথম এভাবেই প্রপোজ করেছিলাম।
আদিত্য: ভাবি রাজি হয়েছিল?
আমি: না।
আদিত্য: ওহ।
আমি: ভয় নেই তারিন রাজি হবে।
শান্ত: আরশান আজ আবার পার্টির আয়োজন? হিমিকে আবার প্রপোজ করবি নাকি?
আমি: না তোকে প্রপোজ করবো।
শান্ত: মানে?
হিমি: আরশান? (হিমির ডাকে পিছনে তাকালাম, হিমি আর রোদেলা দুজন তারিনকে নিয়ে এসেছে। তারিন অবাক হয়ে সবকিছু দেখছে আর আদিত্যর দিকে তাকাচ্ছে)
আমি: শান্ত একটা জিনিস চাইবো দিবি?
শান্ত: কি?
আমি: তোর বোনকে আমার বোন করে সারাজীবনের জন্য আমাদের বাসায় নিয়ে আসতে চাই।
শান্ত: মানে বুঝলাম না।
আপু: আদিত্য আর তারিন দুজন দুজনকে ভালোবাসে কিন্তু তোর ভয়ে তারিন রাজি হচ্ছে না।
রোদেলা: শান্ত ভাইয়া কথা দিচ্ছি তোমার বোনকে আমার বোন করে রাখবো, ভাবি ভেবে কখনো দূরে সরিয়ে দিবো না। (শান্ত চুপচাপ আদিত্যর দিকে এগিয়ে গেলো)
শান্ত: কিন্তু যে আমার বোনকে চায় সে তো আমাকে কিছু বলেনি।
আদিত্য: ভাইয়া আমি তারিনকে কখনো কষ্ট দিবো না আআর আ...
আমি: শান্ত ওকে ছেড়ে দে, দেখছিস না ভয় পেয়ে ঘেমে যাচ্ছে?
শান্ত: তুই তো আমাকে একবার বলতে পারতি। আমি কি মেনে নিতাম না? তোর সুখেই তো আমরা সুখী। (শান্ত তারিনকে জড়িয়ে ধরলো, বাহ্ এই নাহলে ভাই বোনের ভালোবাসা)
রোদেলা: ভাইয়া এবার রিংটা ভাবির হাতে পড়িয়ে দাও। (আদিত্য তারিনের সামনে হাটু গেড়ে বসে তারিনের আঙ্গুলে রিং পড়িয়ে দিলো)
আমি: কিরে কাঁদছিস কেন? (শান্ত কাঁদছে দেখে ওকে জড়িয়ে ধরলাম)
শান্ত: তারিনকে সবসময় হাসতে দেখেছি কিন্তু আজকের মতো এতোটা হাসতে দেখিনি।
দুলাভাই: হয়েছে এবার ওদের একটু একা ছেড়ে দাও। ফারিয়া চলো রুদ্র অপেক্ষা করছে আর সিফাত... (দুলাভাই সিফাতকে কি যেন ইশারা করলো, সিফাত আর আরিয়ান এসে প্রথমে হিমির চোখ তারপর আমার চোখ বেঁধে দিলো)
আমি: কি করছিস তোরা?
সিফাত: যেখানে নিয়ে যাই চুপচাপ চল।

চোখের বাঁধন খুলে দিতেই অবাক হয়ে রুমের চারপাশে তাকালাম, হিমি আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি: এভাবে তাকাচ্ছ কেন আমি কিছু জানিনা।
সিফাত: আরে ভাবি রেগে যাচ্ছ কেন? বাসর সাজিয়েছি এর বেশি কিছুনা। বন্ধু হিসেবে তো এইটুকু করতেই পারি।
আরিয়ান: ভাবি রেগে যাচ্ছে তারমানে ভাবি বাসর চায় না।
আমি: চুপ করবি তোরা? এমনি আমার বউটা লজ্জাবতী।
সিফাত: আজকে সব লজ্জা ভাঙ্গিয়ে দিস।
আমি: দাঁড়া। (সিফাত আর আরিয়ান দৌড়ে পালিয়ে গেলো। হিমি চারদিকে চোখ বুলিয়ে সাজানো দেখছে)
আমি: হিমি সত্যি আমি কিছু জানিনা এসব ফাজিলগুলো করেছে। তাছাড়া বাসর তো সাজানো লাগতোই, বিয়ে হয়েছে দুদিন হয়ে গেছে অথচ আমাদের... (হিমি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে দেখে থেমে গেলাম। একটু একটু করে হিমির দিকে এগিয়ে গিয়ে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম)
আমি: আজো কি বাঁধা দিবে? (হিমির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে প্রশ্নটা করলাম, হিমি নীরব হয়ে আছে দেখে মুচকি হাসলাম কারণ নীরবতা সম্মতির লক্ষণ)
আমি: ভালোবাসি হিমি।
হিমি ঘুরে গিয়ে আমার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। হিমির কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলাম। বিছানায় শুয়ে দিতেই হিমি লজ্জায় দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো। হিমির হাত দুটো সরিয়ে দিলাম, দুচোখ বন্ধ রেখে হিমি হাসছে, লজ্জায় লাল হয়ে গেছে আমার মায়াবতীটা। হিমির হাতের আঙ্গুলের বাজেবাজে আমার আঙ্গুল গুলো আটকে দিলাম, হিমির নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে দেখে মুচকি হাসলাম আর ওর নাকের ডগার তিলকটায় ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম।

সমাপ্ত😍

(হয়তো গল্পটা আরো একটু ভালো হতে পারতো কিন্তু পরিস্থিতির কারণে ভালোভাবে লিখতে পারিনি। ভুল ত্রুটি সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com