তবুও ভালোবাসি | পর্ব -২৯
গোধূলি সন্ধ্যা চারপাশ একটু একটু করে অন্ধকার হয়ে আসছে ল্যাম্পপোস্ট গুলো একে একে জ্বলে উঠছে, মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে পাখিরা। আমি ছাদের এক কোণে বসে সবকিছু আজ খুশি মনে উপভোগ করছি। আজ কেন যেন মন খুব ভালো লাগছে, মনে হচ্ছে খুব ভারী একটা পাথর মনের উপর থেকে সরে গেছে। আদিলকে খুব মিস করছি, ফুফুর ফোন থেকে অনেকবার ফোন করেছিলাম রিসিভ করেনি হয়তো ব্যস্ত আছে কিন্তু কিসের এতো ব্যস্ততা?
ফুফু: আনিশা আনিশা...
আমি: হ্যাঁ ফুফু এখানে।
ফুফু: কিরে সন্ধ্যাবেলায় এখানে বসে আছিস যে?
আমি: ভালো লাগছে।
ফুফু: আদিল ফোন করেছে।
আমি: কি? (ফুফুর কথা শুনে চমকে উঠে ফুফুর হাত থেকে ফোনটা আনলাম)
ফুফু: আসলে তুই একটা পাগলী, কথা বল আমি আসছি।
ফুফু চলে যেতেই আদিলের নাম্বারে ডায়াল করলাম কিন্তু রিসিভ করছে না, কিসের যে এতো ব্যস্ততা ওর...
আদিল: আনিশা?
আমি: হুম এতো ব্যস্ততা কিসের তোমার?
আদিল: একবার বেরুতে পারবে?
আমি: এই সন্ধ্যাবেলায়?
আদিল: হ্যাঁ খুব প্রয়োজন।
আমি: কিন্তু আব্বু নিষেধ করবেন।
আদিল: দেখো না একবার বলে।
আমি: কি হয়েছে আদিল?
আদিল: কি হবে কিছু হয়নি, তুমি আসো এক ঘন্টার মধ্যে আবার ফিরে যাবে।
আমি: ঠিক আছে আব্বুকে বলে দেখছি, কিন্তু কোথায় আসবো?
আদিল: প্রান্তর বাসায়।
আমি: প্রান্তর বাসায় কেন?
আদিল: আসার পরই বুঝতে পারবে।
আমি: ঠিক আছে।
ফোন রেখে ভাবছি আদিল প্রান্তর বাসায় যেতে বললো কেন? কি প্রয়োজন?
ফুফু বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে বই পড়ছেন, ভাবছি ফুফুকে কি করে বলবো আব্বুর থেকে পারমিশন এনে দিতে?
ফুফু: কিরে উঁকিঝুঁকি মারছিস কেন? কথা হলো?
আমি: হুম হয়েছে।
ফুফু: কি বললো?
আমি: একটু বাইরে যেতে বলেছে কি যেন প্রয়োজন।
ফুফু: এই সন্ধ্যাবেলায়?
আমি: তাতে কি হয়েছে আদিল তো আছেই, ওর উপর তোমাদের ভরসা নেই?
ফুফু: ভরসা থাকবে না কেন ছেলেটা তো তোকে অনেক ভালোবাসে, তবুও...
আমি: ফুফু প্লিজ! কি যেন প্রয়োজন বললো।
ফুফু: কি প্রয়োজন?
আমি: জানিনা, আচ্ছা ফুফু এমন নয়তো ভাইয়া মা'কে সব বলেছে আর মা আমাকে মেনে নিয়েছেন?
ফুফু: সেটা হলে তো আদিল তোকে ফোনেই বলতো।
আমি: হয়তো সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে।
ফুফু: হতে পারে। আচ্ছা তুই যা আমি ভাইয়া আসলে বলবো।
আমি: আব্বু কোথায়?
ফুফু: কার সাথে যেন দেখা করতে গেছেন।
আমি: ঠিক আছে আসছি আমি।
ফুফু: গাড়ি নিয়ে যা আর সাবধানে যাস।
আমি: ওকে।
ড্রাইভ করছি আর ভাবছি আমি যা ভাবছি তা কি সত্যি হতে চলেছে? মা কি আমাকে মেনে নিয়েছেন? যদি তাই হবে তাহলে আদিল আমাকে প্রান্তর বাসায় যেতে বললো কেন? আচ্ছা ভাইয়া কি আদৌ মা'কে সব সত্যি বলেছে? উফফ হাজারটা প্রশ্ন এসে মাথায় কিলবিল করছে আর সব প্রশ্নের উত্তর আদিল দিতে পারবে।
প্রান্তর বাসায় এসে দরজা খুলা দেখে সোজা ভিতরে ঢুকে গেলাম, ড্রয়িংরুমের অবস্থা দেখে চমকে উঠলাম। মিতু বউ সাজে আর নীরব বর সাজে সোফায় বসে আছে আর পাশে কাজী সাহেব, আদিল আর প্রান্ত। কি হচ্ছে এসব শেষ পর্যন্ত আদিল ওর কথাটাই সত্যি করে ফেললো?
আদিল: ওহ আনিশা তুমি এসে পড়েছ? (আদিলের কথায় ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো)
আমি: এসব কি হচ্ছে আদিল?
আদিল: বিয়ে হচ্ছে।
আমি: কিন্তু আদিল...
আদিল: চুপ করে বসো যা বলার তোমার পরে বলো।
আমি: আদিল আমার কথাটা তো শুনো।
আদিল: ওদিকে চলো।
আদিল আমার হাত ধরে টেনে দূরে নিয়ে আসলো।
আমি: হাত ছাড়ো, কি করছ এসব?
আদিল: মিতুর বিয়ে দিচ্ছি।
আমি: এভাবে?
আদিল: তো কিভাবে দিবো?
আমি: আদিল...
আদিল: দেখো আনিশা আমার বোনের সুখের কথা ভেবে আমি এসব করছি আর ভুল কিছু করছি না। আমি ওদের এভাবে বিয়ে না দিলে আম্মু মিতুর বিয়ে অন্যদিকে দিয়ে দিতো আর এতে মিতু কষ্ট পেতো। আম্মু মিতুর সুখের কথা না ভাবলেও আমি ভাবি, নীরব মিতুকে অনেক সুখে রাখবে আমি জানি।
আমি: তুমি তো আমার কোনো কথাই শুনছ না।
আদিল: তোমার কথা গুলো আমার মুখস্থ হয়ে গেছে আম্মুকে না জানিয়ে ওদের বিয়ে দেওয়া অন্যায় করা হবে, তুমি আমার সাথে একা থাকতে চাও না সবাইকে নিয়ে সংসার সাজাতে চাও, উফফ আনিশা আর কতো বুঝাব তোমাকে?
আমি: আমার কথা তো শুনবে তুমি। (আমার চিৎকার শুনে আদিল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
আদিল: এভাবে রেগে যাচ্ছ কেন?
আমি: তো কি করবো আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিচ্ছ না। শেষ একটা সুযোগ হয়েছিল সবকিছু সমাধান করার, মিতুর বিয়ে এভাবে দিয়ে তুমি শেষ সুযোগটাকেও নষ্ট করে দিলে।
আদিল: মানে? কি সুযোগ?
আমি: সিহাব ভাইয়া সব দোষ স্বীকার করেছে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে আর বলেছে মা'কে সব সত্যি বলে মায়ের ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করবে। সব সমস্যা ভাইয়া সৃষ্টি করেছিল তাই ভাইয়া সব সত্যি বললে অবশ্যই মা বুঝবেন। কিন্তু তুমি এখন যে ভুল করেছ তারপর তো মা আর তোমাকে ক্ষমা করবেন না। (আদিল চুপচাপ ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে পড়লো)
আমি: আদিল বিয়েটা এখনো হয়নি যাও বিয়েটা ভেঙে দাও, মা'কে বুঝিয়ে নীরবের সাথেই আমরা মিতুর বিয়ে দিব।
আদিল: আনিশা বিয়ের কথা বাদ দাও আমি আরো একটা ভুল করে ফেলেছি।
আমি: আবার কি করেছ তুমি?
আদিল: (নিশ্চুপ)
আমি: চুপ করে থেকো না বল কি করেছ?
আদিল: সিহাব বোধহয় আম্মুকে সব বলতে আমাদের বাসায় গিয়েছিল কিন্তু আমি...
আমি: কি করেছ তুমি?
আদিল: আমি আর নীরব সিহাবকে কিছু বলতে না দিয়ে ওকে মেরে...
আমি: কি? ভাইয়াকে মেরে ফেললে?
আদিল: প্রাণে মারিনি হসপিটালে ভর্তি আছে।
আমি: আদিল কি করেছ এইটা? আচ্ছা তুমি কি চাও না মা আমাকে মেনে নিক?
আদিল: (নিশ্চুপ)
আমি: সব শেষ, শেষ সুযোগটুকুও নষ্ট হয়ে গেলো।
আদিল: আনিশা আমি সরি আসলে...
আমি: একদম চুপ।
আদিলকে রেখেই তাড়াতাড়ি মিতুদের কাছে আসলাম।
সবাই মিষ্টি খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত তারমানে বিয়ের কাজ শেষ। এখন কি হবে মা তো আর আদিলকে ক্ষমা করবেন না।
প্রান্ত: আরে ভাবি মিষ্টি নাও। (প্রান্তর কথায় সাড়া না দিয়ে চুপচাপ সোফায় বসে পড়লাম)
মিতু: ভাবি কি হয়েছে তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
আমি: (নিশ্চুপ)
নীরব: ভাবি কি হয়েছে?
আমি: কিছু হয়নি।
আদিল: আনিশা কেন রেগে আছ বললাম তো আর তোমার কথার অবাধ্য হবো না, এই নাও মিষ্টি খাও। (আদিল হাসতে হাসতে এসে আমার মুখে জোড় করে একটা মিষ্টি ঢুকিয়ে দিলো। আমি আদিলকে চোখ বড় বড় করে দেখছি এইটুকু সময়ে এতোটা স্বাভাবিক ও হলো কিভাবে?)
আদিল: মিতু তোর ভাবি আমার উপর রাগ করেছে ওর রাগ ভাঙিয়ে আসছি।
আমি: আরে কি করছ?
আদিল আমাকে এক প্রকার জোড় করে টেনেই উপরের রুমে নিয়ে আসলো।
আদিল: মুখ গোমড়া করে রেখেছ কেন?
আমি: আদিল তুমি কি বুঝতে পারছ না তোমার আজকের এই দুইটা ভুলের জন্য আমাদের দুজনের কতো বড় ক্ষতি হবে?
আদিল: আনিশা যা হবার তাতো হয়েই গেছে এসব মিতু আর নীরব শুনে আজকের এই খুশির দিনে ওদের মন খারাপ হউক আমি তা চাই না।
আমি: আজ নাহয় চুপচাপ থাকলে কিন্তু কাল? কাল তো মায়ের সামনে গিয়ে তোমাদের দাঁড়াতে হবেই।
আদিল: যাবো না, আমি মিতুকে নিয়ে আর ফিরে যাবো না। আমি আলাদা বাসা নিয়ে তোমাদের সবাইকে নিয়ে থাকবো।
আমি: যে তোমাদের মায়ের ভালোবাসা দিয়েছে তাকে ভুলে যাবে?
আদিল: সে কি আমাদের সুখের কথা ভেবেছে?
আমি: আদি...
আদিল: মিতু আজ কোনো কারণে কান্না করুক আমি তা চাই না, আর হ্যাঁ ওরা আজ এই বাসাতেই থাকবে।
আমি: না ওরা বাসায় ফিরে যাবে আর মায়ের দোয়া নিয়েই নতুন জীবন শুরু করবে, অনেক ভুল করেছ তোমাকে আর কোনো ভুল আমি করতে দিবো না।
আদিল: আনিশা শুনো।
আদিলের ডাকে সাড়া না দিয়ে চলে আসলাম।
মিতু আর নীরব পিক তুলতে ব্যস্ত আছে, ওদের এই খুশির মুহূর্তটাকে নষ্ট করতে ইচ্ছে হচ্ছে না কিন্তু কিছু করার নেই। মায়ের থেকে সারাজীবনের জন্য দূরে সরে যাওয়ার থেকে এখন মায়ের বকা হজম করা ভালো।
আমি: মিতু...
আদিল: আনিশা প্লিজ!
মিতু: হ্যাঁ ভাবি কিছু বলবে?
আমি: হুম।
আদিল: আনিশা...
আমি: মা'কে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেললে? দাদু কি দোষ করেছেন দাদুর কি তোমাকে বউ সাজে দেখার ইচ্ছে ছিলনা?
মিতু: (নিশ্চুপ)
আমি: বাসায় চলো।
মিতু: কিন্তু ভাবি...
আমি: এখন ক্ষমা চাইলে হয়তো মা ক্ষমা করে দিতে পারেন কিন্তু পরে ক্ষমা নাও করতে পারেন।
নীরব: হ্যাঁ মিতু বাসায় চলো, আম্মুকে না জানিয়ে বিয়ে করেছি আম্মুর দোয়া ছাড়া নতুন জীবন শুরু করতে মন একদম সায় দিচ্ছে না।
আদিল: নীরব আনিশার সাথে তুইও পাগল হয়ে গেলি?
নীরব: ভাগ্যে যা আছে তাতো হবেই।
আমি: চলো।
প্রান্ত: আদিল কোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন করিস।
আদিল: ঠিক আছে।
ড্রাইভ করছি আর বারবার আদিলকে আড়চোখে দেখছি, কপালে একটা হাত রেখে আদিল এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। জানি আদিল টেনশন করছে কিন্তু এছাড়া কোনো উপায় ছিলনা। ওদিকে সিহাব ভাইয়ার কি অবস্থা কে জানে। পিছনে তাকালাম মিতু নীরবের কাধে মাথা রেখে বসে আছে, ওদের দুজনের মুখও চিন্তিত। আমার যে চিন্তা হচ্ছে না তাতো নয় আমিও ভয় পাচ্ছি কি হবে তা ভেবে।
কলিংবেল চাপতেই মা এসে দরজা খুললেন, আমি আর আদিল একপাশে মিতু আর নীরব একপাশে দাঁড়ানো। মা মিতু আর নীরবের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন।
দাদু: শিরিন ওরা এসেছে বোধহয়, আমি বলেছিলাম না ওরা যেখানেই থাকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে তুই শুধুশুধু টেনশন করছিলি। একটু রাত হয়ে গেছে ওদের ফিরতে এই আরকি... (দাদু কথা গুলো বলতে বলতে দরজার কাছে আসলেন, মিতু আর নীরবকে দেখে চমকে উঠলেন। মা এখনো ওদের দিকে তাকিয়ে আছেন)
দাদু: এসব কি? আদিল আনিশা এসব কি মিতু আর নীরব...
মা: বাবা দেখেছ ওরা বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিল আর আমি এদিকে টেনশন করে মরছি।
দাদু: আদিল এসব কি? (মা কিছুক্ষণ আদিলের দিকে তাকিয়ে থেকে চুপচাপ ভিতরে চলে গেলেন)
আমি: দাদু ওরা ভয় পেয়ে ভুল করে ফেলেছে।
দাদু: কিসের ভয়?
আমি: প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয়, নীরবকে হারালে মিতু ভালো থাকতে পারতো না তাই আদিল ওদের বিয়ে দিয়েছে।
দাদু: কিন্তু তাই বলে এভাবে আমাদের না জানিয়ে?
আদিল: তোমাদের জানালে আম্মু রাজি হতো না তাই আমাকে এই অন্যায় কাজটা করতে হয়েছে। দাদু প্লিজ ওদের মেনে নাও।
নীরব: দাদু...
দাদু: ভিতরে আয়।
দাদুর অনুমতি পেয়ে সবাই ভিতরে আসলাম।
মা গোমড়া মুখ করে সোফায় বসে আছেন, মিতু আর নীরব গিয়ে মায়ের দুপাশে দুজন বসলো।
মিতু: আম্মু...
মা: আমি তোর আম্মু নই।
নীরব: আম্মু ওর কোনো দোষ নেই ওকে বকো না।
আদিল: ওদের কারো কোনো দোষ নেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
মা: হ্যাঁ তাতো নিবেই তোমার বউ যা সিদ্ধান্ত নিবে তুমি তো সেটাতেই রাজি।
আদিল: আম্মু তুমি সত্যি পাল্টাবে না, এসবে আনিশার কোনো মত ছিলনা আর তুমি কিনা না জেনে ওকে দোষ দিচ্ছ।
মা: হ্যাঁ দিবো কারণ ও একটা অপায়া মেয়ে, শুধু ও না ওর বোন রাইমাও। ওরা দুবোনের ছায়া আমার সংসারে পড়ার পর থেকে অশান্তি লেগেই আছে।
আমি: আমি যদি বলি সব অশান্তির মূল কারণ আপনি?
মা: এই মেয়ে একদম চুপ।
আমি: চুপ তো ছিলাম আপনিই তো আমার মৃত বোনকে নিয়ে বাজে কথা বলে আমাকে কথা বলতে বাধ্য করেছেন।
মা: আদিল এই মেয়েকে চুপ করতে বল।
আদিল: কেন ও চুপ করবে? তুমি সবকিছুতে ওকে দোষ দাও কেন?
মা: মিতু আর নীরবের বিয়েতে ও ছিলনা?
আদিল: না ও কিছু জানতো না আর যখন জেনেছে তখন আমাকে বারবার বিয়েটা ভেঙে দিতে বলেছে।
মা: (নিশ্চুপ)
দাদু: তোরা এভাবে লুকিয়ে বিয়ে করতে পারলি? আমাকে অন্তত জানাতে পারতি।
নীরব: ইচ্ছে ছিল দাদু কিন্তু আম্মুর ভয়ে...
মা: এখন ভয় হচ্ছে না মা'কে?
দাদু: শিরিন থাম যা হবার তাতো হয়েই গেছে।
মা: বাবা ওরা এইটা ইচ্ছে করে করেছে আর তুমি বলছ যা হবার তাতো হয়েই গেছে?
দাদু: ওরা ইচ্ছে করে করেনি তুই বাধ্য করেছিস ওদের। আনিশা যাতো ওদের নীরবের রুমে দিয়ে আয়।
আমি: ঠিক আছে দাদু।
মা'কে পাশ কাটিয়ে ওদের নিয়ে নীরবের রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
মিতু: ভাবি আমাদের জন্য তোমাদের কোনো ক্ষতি না হয়ে যায়।
আমি: কি ক্ষতি হবে? আমরা এক হতে পারবো না তাইতো? তাতে কি হয়েছে আমাদের নাহয় আলাদা রাখবে কিন্তু আমাদের মনকে কি আলাদা রাখতে পারবে?
মিতু: ভাবি তুমি সবকিছু এতো সহজ ভাবে নাও কিভাবে? (মিতুর কথা শুনে মৃদু হাসলাম)
আমি: এতো কিছু তোমাদের ভাবতে হবে না আমাদের ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। তোমরা নতুন জীবনে পা রেখেছ নতুন করে জীবন শুরু কর অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো তোমাদের জন্য। আর হ্যাঁ মায়ের এমন রাগের মাঝে তোমাদের জন্য বাসর সাজাতে পারলাম না সেজন্য সরি।
মিতু: ভাবি তুমি এই সময়ে দুষ্টুমি করছ?
আমি: আমার ননদের বিয়ে হলো আর আমি একটু দুষ্টুমিও করবো না তা কি করে হয়?
নীরব: ভাবি আমার কিন্তু সত্যি ভয় করছে।
আমি: আদিল আর আমার উপর ভরসা রাখো আমরা সব সামলে নিবো ইনশাআল্লাহ, আদিল যে আশা নিয়ে তোমার হাতে মিতুকে তুলে দিয়েছে তুমি শুধু ওর সে আশাটা পূরণ করো।
নীরব: আমি আদিলকে নিরাশ করবো না ভাবি, মিতুকে আমি নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি।
দুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বেরিয়ে আসলাম। অনেক রাত হয়েছে বাসায় ফিরতে হবে আব্বু হয়তো টেনশন করছেন, তাছাড়া ভাইয়ার কি খবর সেটাও জানিনা।
দাদু: হ্যাঁ তুই ওদের এই কাজ করতে বাধ্য করেছিস, তুই ওদের সম্পর্ক মেনে নিলে ওদের আজ এভাবে বিয়ে করতে হতো না। সবকিছুর জন্য তুই দায়ী। (নিচে আসতেই দাদুর চেঁচামেচি শুনে আদিলের পাশে এসে চুপচাপ দাঁড়ালাম, মা নিশ্চুপ হয়ে বসে আছেন)
দাদু: সেদিন তুই আমাকে তোর সম্পর্কের কথা জানাসনি এইটা তোর ভুল, তোর ভুলের শাস্তি এখন আমার নাতি নাতনিরা পাবে কেন? আনিশার বাবার উপর তোর জমে থাকা রাগ ক্ষোভকে তুই আমার নাতি নাতনিদের উপর ছাপিয়ে দিচ্ছিস কেন?
মা: (নিশ্চুপ)
দাদু: একবারো ভেবে দেখেছিস তুই তোর রাগ জিদকে প্রাধান্য না দিয়ে ওদের মেনে নিলে আজ কত সুন্দর একটা পরিবার হতো এই পরিবারটা, ভেবে দেখেছিস কখনো?
মা: (নিশ্চুপ)
দাদু: এখনো ভাবিসনি কিন্তু কোনোদিন যে ভাববি না তা কিন্তু নয়, একদিন তুই ঠিক সব বুঝতে পারবি কিন্তু অনেক দেরি হয়ে যাবে। তুই এতো দেরীতে বুঝতে পারবি যে সেদিন কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখ টুকুও থাকবে না তোর। আদিল আর আনিশার কাছে ক্ষমা চাইতে পারবি না সেদিন। (মা নিশ্চুপ হয়ে বসে আছেন আর দুচোখের পানি ফেলছেন, হয়তো উনি বুঝতে পেরেছেন তাই অনুতপ্ত হয়ে দুচোখের পানি ঝরাচ্ছেন)
আমি: আদিল আমি যাই।
আদিল: চলে যাবে?
দাদু: একা যেতে পারবি?
আমি: হ্যাঁ দাদু পারবো, আব্বু হয়তো টেনশন করছেন।
আদিল: হুম চলে যাও তোমাকে আটকিয়ে রাখার অধিকার তো আমার নেই কারণ তোমার কাছে আমার ভালোবাসা বড় নয় বড় এই অহংকারী মায়ের ভালোবাসা আর অনুমতি।
আদিলের অভিমানী সূরে কথা শুনে মৃদু হাসলাম তারপর বেরিয়ে আসলাম।
আদিল: আনিশা? (গাড়িতে উঠতে যাবো তখনি আদিল পিছন থেকে ডাক দিলো, পিছন ফিরে তাকাতেই আদিল এসে ওর বুকের সাথে ঝাপটে ধরলো আমাকে)
আমি: আরে বোকা আমি কি একেবারে তোমার জীবন থেকে চলে যাচ্ছি নাকি?
আদিল: সেটাই তো মনে হচ্ছে।
আমি: জ্বী না আমি এতো সহজে তোমাকে জ্বালানো ছাড়ছি না, আমাদের কয়েকটা বাচ্চাকাচ্চা হবে ওরা বড় হবে ওদের বিয়ে দিবো আর নাতি নাতনী দেখে তারপর তোমাকে মুক্তি দিবো। (আমার কথা শুনে আদিল জোড়ে হেসে দিলো)
আদিল: তুমি আসলেই একটা পাগলী। (আমার কপালের চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিলো, আমি দুহাতে আদিলের গলা জড়িয়ে ধরে ওর আরো কাছে চলে আসলাম)
আমি: এতো সহজে ছেড়ে দিবো কেন ভালোবেসেছি কি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য? আমাদের ভালোবাসা তো কোনো ঠোনকো ভালোবাসা নয় আমরা তো বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ, আল্লাহ্ ছাড়া আমাদের আলাদা করার সাধ্য কার আছে? অল্প আঘাতে হাত ছেড়ে দেওয়ার নাম ভালোবাসা নয় আদিল, সুখে দুঃখে বিপদে আপদে সবসময় একে অপরের পাশে থাকার নাম ভালোবাসা।
আদিল অবাক হয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে আমি মুচকি হেসে ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম, আদিল দুচোখ বন্ধ করে হাসছে আর আমি মুগ্ধ নয়নে ওর হাসি দেখছি...
চলবে😍
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com