আমার গল্পে তুমি || পার্ট: ৭ || লেখিকা: সুলতানা তমা
নদীর পাড়ে আনমনা হয়ে বসে পানিতে ঢিল ছুড়ছি আর মাঝেমাঝে হিমিকে দেখছি, হিমি আমার থেকে কিছুটা দূরে নদীর পাড়ে বসে আছে। আমার উপর রাগ করে দূরে বসে আছে আর আমাকেও ওর কাছে যেতে নিষেধ করেছে। এদিকে বিকেল হয়ে আসছে বাসায় যেতে হবে, মেয়েটা এতো অভিমানী কেন?
আমি: হিমি?
হিমি: (নিশ্চুপ)
আমি: কথাও বলবে না নাকি? (রাগি চোখে আমার দিকে তাকালো, বাহ্ রাগলে তো মায়াবতীকে দারুণ লাগে)
আমি: তুমি জানো রাগ করলে তোমার মায়াবী মুখটা আরো বেশি সুন্দর লাগে।
হিমি: কাছে আসলে একদম গলা টিপে মেরে ফেলবো।
আমি: ঠিক আছে আমি তাহলে চলে যাচ্ছি।
হিমি: আমিতো কিছু ছিনি না আমাকে একা রেখে চলে যাবেন?
আমি: তো কি করবো? বিকেল হয়েছে সে খেয়াল আছে? দেরিতে ফিরলে আমার কোনো প্রবলেম হবে না তোমারই হবে।
হিমি: হুম যাবো তার আগে আপনি কথা দিন আর আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না।
আমি: ভেবে দেখবো।
হিমি: আমি কিন্তু নদীতে ঝাপ দিবো।
আমি: কি? সামান্য বিষয় নিয়ে তুমি...
হিমি: আপনার কাছে সামান্য হতে পারে কিন্তু আমার কাছে সামান্য নয়।
আমি: ঠিক আছে এবার চলো।
হিমি: আর জ্বালাবেন নাতো আমায়? (এবার কি বলবো? এই মেয়ে তো পাগলামি শুরু করেছে)
হিমি: কি হলো?
আমি: আমি নিজ থেকে তোমার কাছে আসবো না কিন্তু যদি তুমি আমার কাছে আসো বা দুজনের অজান্তে দেখা হয়ে যায় তাহলে কিন্তু আর পিছু ছাড়ছি না।
হিমি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চুপচাপ হাটতে শুরু করলো, আমিও হিমির পিছু পিছু হাটছি। হিমির দীঘল কালো চুল গুলো বাতাসে উড়ছে আমি তা মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখছি আর নিজের অজান্তেই হাসছি। আচ্ছা এই মেয়েটা এতো মায়াবী কেন? ওর সবকিছু আমাকে এমন মাতাল করে দেয় কেন এতো কাছে টানে কেন? এই মায়াবতীটার প্রেমে বারবার পড়তে ইচ্ছে হয় কেন? মায়াবতীকে অনেক বেশি ভালোবাসতে মন চায় কেন? আবোলতাবোল প্রশ্নগুলো ভেবে আনমনেই হেসে উঠলাম।
শান্ত: কিরে দুজন কোথায় গিয়েছিলি? (সবাই এক জায়গাতেই বসে আছে আমিও এসে বসলাম, তারিন হয়তো হিমির জন্য অপেক্ষা করছিল এসে হিমিকে আস্তে আস্তে কি যেন বলছে)
আমি: দুটো ভালোবাসার মানুষ একসাথে কোথায় যায়?
সিফাত: কোথায়?
আমি: কোথায় আবার হানিমোনে। (আমার কথা শুনে সবাই জোরে হেসে উঠলো, হিমি চোখ দুটো আগুনের মতো করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: আরে আমিতো দুষ্টুমি করে বলেছি।
হিমি: আপনি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছেন আর ডিস্টার্ব করবেন না আমাকে।
আরিয়ান: কিরে গাধার মতো এমন কথা দিয়েছিস কেন?
অধরা: তোর প্রেম আর সাকসেসফুল হবে না।
আমি: সাথে কিন্তু আরো একটা কথা বলেছি তুমি যদি আমার কাছে আসো বা দুজনের অজান্তে দেখা হয়ে যায় তাহলে কিন্তু আর পিছু ছাড়বো না। আর আমি জানি তুমি খুব শীঘ্রই আমার কাছে আসবে আমাদের শুভ দৃষ্টিও হবে।
তারিন: হিহিহি!
হিমি: পেত্নীর মতো না হেসে চল তো এখান থেকে। (হিমি তারিনের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে, আমি হিমির দিকে তাকিয়ে আছি আর হাসছি পাগলী একটা)
শান্ত: তুই এই কথা দিয়েছিস ওকে?
আমি: ও পাগলামি করছিল তাই বলেছি। আমার কি মনে হয় জানিস হিমি ভয় পেয়ে আমার প্রপোজে রাজি হচ্ছে না।
সিফাত: কিন্তু কিসের ভয়?
অধরা: হয়তো পরিবার।
আমি: না, চিঠির লোকটাকে হিমি ভয় পায়। মানুষটা কে আমাকে জানতে হবে আর সেটা হিমির থেকেই।
আরিয়ান: কিন্তু কিভাবে?
আমি: জানিনা, কিন্তু চেষ্টা তো করতেই হবে।
সিফাত: খুব ভালোবাসিস হিমিকে তাই না? (সিফাতের কথা শুনে মৃদু হাসলাম)
আমি: এই প্রথম কোনো মেয়েকে ভালোবেসেছি আর সারাজীবন তাকেই ভালোবাসতে চাই।
শান্ত: চিন্তা করিস না তুই সাকসেসফুল হবি কারণ তোর ভালোবাসা সত্যি।
আমি: আসছি আমি, আর হ্যাঁ আগামীকাল আমি আসছি না।
আরিয়ান: কেন?
আমি: কাল হিমি প্রথম আমার বাসায় যাবে বুঝেছিস?
অধরা: তুই সত্যি গেছিস।
হাসতে হাসতে চলে আসলাম, সত্যি আমি হিমির প্রেমে পাগল হয়ে গেছি।
রাতের আকাশে তারা'রা দল বেধে ছুটাছুটি করছে, কখনো এক ফালি মেঘ ভেসে এসে তারাদের ঢেকে দিচ্ছে, আমি বারান্দায় বসে তারা আর মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখছি। হঠাৎ হিমির কথা মনে পড়লো, হিমি যদি এখন আমার পাশে থাকতো তাহলে কেমন হতো? নিশ্চয় মেয়েটা তারা আর মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখে মিটিমিটি হাসতো। হিমি মুগ্ধনয়নে তারা দেখতো আর আমি দেখতাম মুগ্ধনয়নে আমার মায়াবতীকে। আবোলতাবোল ভাবনা গুলো ভেবে নিজের অজান্তেই হাসছি হঠাৎ পাশে রাখা গীটারের দিকে নজর পড়লো। গীটার হাতে নিয়ে টুংটাং সূর তুলতেই কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম, পিছনে তাকিয়ে দেখি আম্মু।
আম্মু: কিরে অনেক রাত তো হলো ঘুমাবি না?
আমি: তোমার বৌমার চিন্তায় ঘুম আসছে না।
আম্মু: কাল থেকে তো চোখের সামনেই পাবি সবসময়। (আম্মু হাসছেন দেখে আমিও হাসলাম)
আমি: আম্মু ওকে আমার করে এনে দাও না, বড্ড ভয় হয় ওকে হারানোর।
আম্মু: দুজনেই পড়াশোনা শেষ করো তারপর বিয়ের চিন্তা।
আমি: কিন্তু ওকে হারানোর ভয় যে আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে?
আম্মু: খুব ভালোবাসিস তো তাই এমন ভয় হচ্ছে।
আমি: হয়তো।
আম্মু: যা বলতে এসেছি, আগামীকাল আমরা সবাই বিয়েতে যাচ্ছি তুই যাবি তো? তুই তো হুটহাট না করে দিস তাই তোর আব্বু...
আমি: আম্মু কাল তো হিমিরা আসবে, হিমি আসবে আর আমি ধেইধেই করে বিয়ে খেতে চলে যাবো?
আম্মু: তাতে কি হয়েছে বাসায় তো কাজের লোক গুলো থাকবেই।
আমি: আমার বউ আসবে আর তোমার কাজের লোক গুলো ওকে রিসিভ করবে? আম্মু কাঁদবো কিন্তু।
আম্মু: আচ্ছা থাক যেতে হবে না। কিন্তু তোর আব্বুকে কি বলবো?
আমি: আব্বুর কোনো বন্ধুর বাসায় পার্টি বলো বা বিয়ে কোনো কিছুতে যেতে আমার ভালো লাগেনা আর আব্বু সেটা ভালো করেই জানেন, গিয়ে বলো আমার এসব ভালো লাগেনা।
আম্মু: ঠিক আছে, অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়।
আমি: আচ্ছা।
আম্মু চলে গেলেন, আমি চুপচাপ এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। এখন শুধু সকালের অপেক্ষা হিমি আমার কাছে চলে আসবে, রোজ ওর মায়াবী মুখটা দেখতে পারবো এইটা ভাবতেই খুশিতে মনটা নেচে উঠছে।
"আরশান উঠ অনেক বেলা হয়েছে" সকালে দরজায় কারো ঠোকার শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো।
আপু: আরশান?
আমি: হুম আপু।
আপু: উঠ অনেক বেলা হয়েছে। (উঠে দরজা খুলে দিয়ে আবার বিছানায় এসে বসলাম, ঘুম যেন চোখ থেকে যেতেই চাচ্ছে না)
আপু: ভাই এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমালি যে রাতে ঘুম হয়নি নাকি? শরীর ঠিক আছে তো? (আপুর কথা শুনে মাথা তুলে আপুর দিকে তাকালাম, আপুকে দেখে বেশ অবাক হলাম)
আমি: এতো সকালে বিয়েতে চলে যাচ্ছিস নাকি এতো সেজেছিস যে?
আপু: ঘড়ির দিকে থাকা তো। (আপুর কথা শুনে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম, ঘড়ির কাটায় সকাল এগারোটা পঁচিশ বাজে দেখে বেশ অবাক হলাম এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছি আজ?)
আপু: আম্মু ডাকছে নিচে চল।
আমি: হুম।
ঘুম ঘুম চোখে ড্রয়িংরুমে এসে সোফায় বসলাম। সবাই রেডি, চলে যাবে হয়তো।
আম্মু: আরশান নে ধর বের হলে বাসায় তালা দিয়ে যাবি, এই নতুন দারোয়ানকে একদম বিশ্বাস নেই। (আম্মু আমার হাতে একটা চাবি ধরিয়ে দিয়ে চলে যেতে পা বাড়ালেন, আবার থমকে দাঁড়ালেন)
আম্মু: আর এইটা তৃতীয় ফ্লোরের চাবি হিমিরা হয়তো বিকেলে আসবে দিয়ে দিস, আমাদের ফিরতে রাত হবে। (হিমি যে আজ আসবে আমিতো ঘুমের ঘোরে ভুলেই গিয়েছিলাম)
আম্মু: কিরে কি বলছি শুনছিস?
আমি: কি?
আম্মু: বিউটি একটু ওদের বস্তিতে গেছে এসে তোর জন্য রান্না করবে, তোর নাশতা টেবিলে রাখা আছে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিস।
আমি: ঠিক আছে।
আব্বু: আরশান যদি আমাদের সাথে যেতো তাহলে তোমাকে শুধু শুধু এতো টেনশন করতে হতো না। (আব্বু টাই বাঁধতে বাঁধতে নিচে নেমে আসছেন)
আমি: আব্বু ভালো করেই জানো এসব আমার পছন্দ না।
আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বেরিয়ে পড়লেন, আব্বুর পিছুপিছু বাকি সবাইও বেরিয়ে পড়লো। আব্বু যেমন উনার বন্ধু গুলোও তেমন যত্তোসব, চুপচাপ দরজা লাগিয়ে রুমে চলে আসলাম।
গোসল করে রুমে আসতেই কলিংবেল এর শব্দ শুনতে পেলাম, কাজের মেয়ে বিউটি এসেছে হয়তো। ভেজা চুল গুলো হাত দিয়ে নাড়তে নাড়তে এসে দরজা খুললাম।
আমি: কিরে তোর এখন আসার...
হিমি: ইহহ! (হিমির চিৎকার শুনে সামনে তাকালাম, হিমি দুহাতে মুখ ঢেকে রেখেছে। হিমিকে দেখে যেন বুকের মধ্যে কেমন হচ্ছে, মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি পিটাচ্ছে, কিন্তু হিমিকে সেটা বুঝতে দেওয়া যাবে না)
আমি: ওহ তুমি, কিন্তু মুখ ঢেকে রেখেছ কেন?
হিমি: তোয়ালে পড়ে কেউ বাইরে আসে? আর আপনি সত্যি সত্যি আমার পিছু নিয়ে আমাদের নতুন বাসায় চলে এসেছেন? (হিমির কথা শুনে নিজের দিকে একবার তাকালাম সত্যিই তো তোয়ালে পড়ে চলে এসেছি)
আমি: কি করবো এমন ভাবে বেল বাজাচ্ছিলে যে চেঞ্জ করার সুযোগই পাইনি।
হিমি: কিন্তু আপনি এই বাসায় কেন আপনিও ভাড়া নিয়ে... (এগিয়ে গিয়ে হিমির মুখ থেকে ওর হাত দুটো সরিয়ে দিলাম। হিমি আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মুচকি হেসে ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম...)
আমি: বলেছিলাম না খুব শীঘ্রই দেখা হবে আর শুভ দৃষ্টিও হবে। (হিমি লজ্জা পেয়ে দু চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে ফেললো)
আমি: মেডাম আমি আপনার পিছু পিছু এসে বাসা ভাড়া নেইনি এইটা আমার বাসা আর আপনি তৃতীয় ফ্লোর ভাড়া নিয়েছেন।
হিমি: ভাইয়া যে কি করে, চাবি দিন। (হিমি হাত বাড়াতেই ওর হাত ধরে টান দিয়ে ভিতরে নিয়ে আসলাম ওকে, দরজা লাগিয়ে দিতেই হিমি ভয়ে কেঁপে উঠলো)
হিমি ভয় পেয়ে চোখমুখ কুঁচকে দেয়ালের সাথে লেপ্টে দাঁড়িয়ে আছে, আমি দুহাত দেয়ালে রেখে হিমিকে খুব কাছ থেকে দেখছি। এই মেয়েটাকে প্রতিটা মুহূর্তেই মায়াবী লাগে, লজ্জা পেলে, ভয় পেলে আর...
হিমি: চাবি নিতে এসেছি ভাইয়া খুঁজবেন আমাকে।
আমি: আমি কিন্তু তোমার কাছে যাইনি তুমিই এসেছ, মনে আছে তো কি বলেছিলাম?
হিমি: সব আপনার প্ল্যান আমি বুঝে গেছি।
আমি: নিজের বউকে কাছে আনার জন্য এটুকু প্ল্যান তো করতেই হতো। (হিমির কপালে আসা চুল গুলো আলতো করে ওর কানের পাশে গুঁজে দিলাম, হিমি ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে তাকালো)
আমি: ভালোবাসার মানুষকে কেউ ভয় পায় পাগলী?
হিমি: কেন করছেন এরকম?
আমি: ভালোবাসি তাই, তুমি আমাকে ভালো না বাসলে আমি কখনো এমন করতাম না। কিন্তু আমি তোমার দুচোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি।
হিমি: চাবি দিন আমাকে যেতে হবে।
আমি: ওকে। (চুপচাপ মায়াবতীকে কোলে তুলে নিলাম)
হিমি: কি করছেন ছাড়ুন বলছি।
আমি: চাবি আমার রুমে আছে, তুমি প্রথম আমার রুমে পা রাখবে...
হিমি: তাই বলে...
আমি: নড়াচড়া করলে কিন্তু পড়ে যাবে। (হিমি ভয় পেয়ে দুহাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো)
হিমি: আমাকে ছাড়ুন প্লিজ ভাইয়া আমাকে খুঁজবে।
আমি: জানো মায়াবতী আজ তোমাকে রিসিভ করার জন্য অনেক আয়োজন করতে ইচ্ছে হয়েছিল কিন্তু তোমার ভাইয়ার ভয়ে কিছু করতে পারিনি, ভাইয়া সন্দেহ করলে তো তুমি কষ্ট পাবে তাই। (হিমিকে আমার রুমে এনে নামিয়ে দিলাম, ও রুমের চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। চাবি এনে হিমির সামনে ধরলাম, ও আমার দিকে মুগ্ধনয়নে তাকিয়ে আছে)
আমি: এইযে মেডাম চাবি।
হিমি: বাসার বাকি সবাই কোথায়?
আমি: বিয়েতে গেছে।
হিমি: আপনি যাননি কেন?
আমি: আমি চলে গেলে তোমাকে চাবি কে দিত? (হিমি কিছু না বলে চুপচাপ চাবি নিয়ে চলে যেতে পা বাড়ালো)
আমি: মায়াবতী তুমি কিন্তু আজ আবারো প্রমাণ করে দিয়েছ তুমি যে আমায় ভালোবাস। (আমার কথা শুনে হিমি ভ্রু কুঁচকে পিছন ফিরে তাকালো)
আমি: ভালো না বাসলে যখন তোমাকে দেয়ালে চেপে ধরেছিলাম তখন তুমি চিৎকার করতে কিন্তু তুমি করনি, যখন কোলে তুলে নিয়েছিলাম তখন তুমি রেগে যেতে পারতে কিন্তু তুমি রাগনি তারমানে সামথিং সামথিং...
হিমি লজ্জা পেয়ে দৌড়ে চলে গেলো, ভালোবাসে কিন্তু প্রকাশ করতে চায় না উল্টো দূরে সরিয়ে রাখতে চায় ভীতুর ডিম একটা।
পরন্ত বিকেল, বাগানের দোলনায় বসে আনমনা হয়ে বই এর পৃষ্ঠা উল্টিয়ে যাচ্ছি একের পর এক আর হিমির কথা ভাবছি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো কিন্তু এতো সময়ের মধ্যে হিমিকে একবারো দেখতে পারলাম না, হিমি হয়তো জিনিসপত্র গুছাতে ব্যস্ত আছে। কিন্তু একবার তো দেখা দিতে পারতো ও কি জানে না এতো প্ল্যান করে ওদের এখানে এনেছি শুধু ওকে দেখবো বলে? এই মেয়েটা না... হঠাৎ হিমিদের ফ্লোরে চোখ আটকে গেলো, হিমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল গুলো মুছছে। আমি হা হয়ে তাকিয়ে আছি ওর লম্বা চুল গুলোর দিকে। হঠাৎ হিমির নজর আমার উপর পড়লো, আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
আমি: হিমি?
হিমি: কি?
আমি: আমার রুমে এসো। (হিমি মাথা নেড়ে না করলো)
আমি: তাহলে আমি তোমার রুমে আসছি।
হিমি: না না ভাইয়া আছে।
আমি: তাহলে এসো।
হিমি অসহায়ের মতো আমার দিকে তাকালো আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে হাত দিয়ে ইশারা করে আমার রুমে আসতে বললাম।
দরজা খুলে ড্রয়িংরুমে বসে হিমির জন্য অপেক্ষা করছি, হঠাৎ হিমি হন্তদন্ত হয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো। রাগে গজগজ করে আমার দিকে এগিয়ে আসলো।
হিমি: আমাকে এভাবে ব্ল্যাকমেইল করবেন বলে প্ল্যান করে এ বাসায় এনেছেন? এভাবে হুটহাট... (উঠে এসে হিমির মুখ চেপে ধরলাম)
আমি: তুমি জানোনা তোমাকে না দেখলে যে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে? এতো সময়ের মধ্যে একবারো দেখা দেওনি কেন? তুমি জানো আমি কতক্ষণ ধরে ছটফট করছি তোমাকে এক নজর দেখবো বলে? (হিমি বেশ অবাক হয়ে ওর মুখ থেকে আমার হাত সরিয়ে দিলো)
হিমি: এতোটা ভালোবাসেন? কিন্তু এই অল্প কয়েকদিনে এতো বেশি ভালোবাসলেন কিভাবে? (হিমির কথা শুনে মৃদু হাসলাম)
আমি: জানো হিমি আমার কাছে এই প্রেম ভালোবাসা এক্সট্রা একটা পেইন মনে হতো যার কারণে কখনো কাউকে ভালোবাসিনি, এভাবে হুট করে প্রথম দেখায় কাউকে এতোটা ভালোবেসে ফেলবো সেটাও কখনো ভাবিনি। ভালোবাসা বোধহয় এমনই ভেবে চিন্তে করা যায় না হুট করে এক পলকের দেখায় হয়ে যায়। কাউকে কখনো ভালবাসবো না এইটা বারবার ভাবার পরও হঠাৎ করে মনের অজান্তে কাউকে ভালোবেসে ফেলাটাই হয়তো ভালোবাসার নিয়ম, যেমনটা তোমার ক্ষেত্রে হয়েছে। (হিমি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: তুমি বারবার ভেবেছ আমাকে ভালোবাসবে না কিন্তু দেখো তোমার অজান্তেই তোমার মনে আমি জায়গা করে নিয়েছি। হিমি ভালোবাসা লুকানো যায় না এইটা নিজের অজান্তেই প্রকাশ হয়ে যায়, তুমি যে আমায় ভালোবাস এইটা কিন্তু বারবার তুমি নিজের অজান্তে প্রকাশ করে ফেলেছ। হিমি ভালোবাস কিন্তু দূরে সরিয়ে রাখছ কেন? নিজেও কষ্ট পাচ্ছ আমাকেও কষ্টের আগুনে পুড়ে মারছ। (হিমি মাথা নিচু করে ফেললো ওর দুচোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। হিমির তুথুনি ধরে ওর মুখটা উপড়ে তুলে আলতো হাতে ওর দুচোখের পানি মুছে দিলাম, হিমি বাচ্চা মেয়েদের মতো কেঁদেই যাচ্ছে)
আমি: কাঁদলে তোমার নিচের ঠোঁট কাঁপে আর এমন কাদের হয় জানো? ছোট বাচ্চাদের, তারমানে আমার মায়াবতী ছোট...
হিমি: আপনি খুব দুষ্টু।
হিমি চলে যেতে চাইলো তাড়াতাড়ি ওর হাত ধরে ফেললাম, হিমি পিছন ফিরে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। মুচকি হেসে হিমির হাত ধরে টান দিয়ে ওকে আমার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম। হিমি একটা হাত আমার বুকের বাম পাশে রেখে আমার বুকের সাথে মিশে রইলো। এখন তো খুশিতে আমার দুচোখ দিয়ে পানি ঝরছে, শেষ পর্যন্ত মায়াবতীটাকে আমার করেই নিলাম। হিমির দুগালে ধরে ওর চোখের দিকে তাকালাম। হিমি পলকবিহীন ভাবে আমার দুচোখের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে মুচকি হেসে ওর কপালে আমার ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিলাম...
চলবে😍
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com