রোমান্টিক পুলিশ ম্যাম
শীতের দিন সকালে ৪-৫ টা কম্বল একসাথে গায়ে দিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে থাকার ভান করার মজাই আলাদা।আর সেই মজাটাই উপভোগ করছিলাম।কিন্তু সেই মজাটা আর বেশিক্ষণ থাকলো না।
-হিমান্ত!এই হিমান্ত! ওঠ…(মা)
-আরে আমি ঘুমাই নাই তো!শুয়ে আছি।উঠতে ইচ্ছা করছে না।(আমি)
-তা বললে হবে?কোচিংএ যাবি না?
-যেতে তো ইচ্ছা করে। কিন্তু বিছানা ছারতেই তো মায়া হয়।বেচারা কত কষ্ট পাবে আমি উঠে গেলে!
-আচ্ছা, তাহলে তুই শুয়ে থাক।আমি গিয়ে বরং তোর বাবাকে বলি।যে ছেলে বিছানার মায়া ছারতে পারছে না।
-ক.ক.কি?বাবা এখনো অফিসে যায় নি?(লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে)
-না,রেডি হচ্ছে। তোকে ডাকতে বললো।
-তুমি যাও,আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
-হুম,তারাতারি কর।
-হুম…
উঠে চলে এলাম ফ্রেশ হতে।তার মাঝে পরিচয়টা দিয়ে দেই।আমি হিমান্ত হিমু।ফ্রেন্ড সার্কেলে সবাই হিমু নামেই ডাকে।পড়াশুনায় তেমন একটা ভালো ছাত্র না।এবার HSC Candidate।বাবা একটা ছোটখাটো অফিসে জব করে।মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের।আমরা ১ ভাই ১ বোন। বড় আপু ভার্সিটি ৩য় বর্ষে পড়ে।আমার পরীক্ষার আর ২ মাস বাকি।তাই কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি।
-হিমু!এখনো হয়নি তোর!(মা)
-এইতো আসছি মা!(খাবার টেবিল এর সামনে এসে)
-বস এখানে।
-আব্বু কোথায় আম্মু?
-এইমাত্র বেড়িয়ে গেল।
-ওও,
সকালের নাস্তা করে একটা খাতা আর একটা কলম নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম কোচিংয়ের উদ্যেশে।প্রতিদিনের মতো রিকশা করে পৌঁছে গেলাম।ভাগ্যিস লেট হয় নাই,নাহলে স্যারের আরো কিছু নীতিবাক্য শুনতে হতো।
কোচিং শেষ করে বাইরে এসে একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম।বসে চা সহ আরো কিচু নাস্তা করে নিলাম।
হঠাৎ চোখ গিয়ে পরলো দুইটা ছেলের ওপর।দুঃখি, ছেলে বললে ভুল হবে।ওরা তো হিজরা। আমার দিকে এক নজরে তাকিয়ে ছিল।একটু একটু একটু ভয়ও করছিলো।ছোট বেলা থেকেই আমি এই জিনিসগুলোকে প্রচুর ভয় পাই।(বাস্তবেও)
একটু পর দেখলাম ওরা উঠে আমার দিকেই আসছে।আমি ভয়ে ভয়ে কোনমতে পকেট থেকে টাকা বের করে দোকানদারকে দিয়েই হাটা ধরলাম রাস্তা দিয়ে।ওরাও আমার পিছু নিলো।অবস্তা ভালো ঠেকছে না।
দিলাম দৌড়…
ওরাও পিছন পিছন দৌড়াতে লাগলো।কোনদিকে যাচ্ছি তার কোনো হোস নেই।শুধু এতটুকুও জানি আমাকে এদের হাত থেকে পালাতে হবে।এভাবে অনেক্ষণ দৌড়ানোর পর পিছন ফিরে দেকি ওরা নেই।তার মানে পিছু ছেরেছে।রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে হাঠুতে ভর দিয়ে শ্বাস নিচ্ছিলাম।হঠাৎ মনে হলো সামনে কোনো একটা গাড়ি এসে দারালো।সামনে তাকিয়ে তো ভয়ে গলা শুকিয়ে গেল।
-প.প.পুলিশ।(পুলিশের গাড়ি এসে দারিয়েছিল আমার সামনে।)
…দৌড়ে পালাতে যাবো ঠিক তখনই পিছন থেকে একটা লোক এসে শার্টের পিছনে ধরে ফেলল।…
-কিরে পালাচ্ছিলিস কেন?(পুলিশ)
-না ভাই,কই আমি তো পালাচ্ছিলাম না!
-চোপ!আমি নিজে দেখলাম তুই দৌড়ে আসছিলি।
-স্যার এমনি দৌড়াচ্ছিলাম।মানে জ.জ.জগিং, হ্যা স্যার জগিং করছিলাম…?
-এই দুপুর বেলা জগিং? তাও আবার রাস্তার মাঝখানে?কিছুতো ঝামেলা আছে।
-না স্যার কিচ্ছু ঝামেলা নাই।?আমি স্টুডেন্ট,এইমাত্র কোচিং শেষ করে জগিং করতে করতে বাসায় যাচ্ছিলাম।এই দেখেন খাতা!
…খাতা দেখাতে গিয়ে আরও বড় রকমের টাসকি খাইলাম।কারণ আমার হাতে কোনো খাতাই নাই।ভয়ে সেই চায়ের দোকানেই ফেলে চলে এসেছিলাম…??
-কোথায়?
-সরি স্যার,ফেলে এসেছি।?
-আবার মিথ্যা কথা?চল আমার সাথে,থানায় চল।
-প্লিজ স্যার আমাকে ছেরে দিন।
কিন্তু কে শুনে কার কথা?পুলিশ আমাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে এলো থানায়।থানার সামনে সাইনবোর্ড দেখে আরও বেশি চমকে গেলাম।
-স্যার স্যার,এ আমি কোথায় চলে এলাম?এটা তো আমাদের এরিয়ার থানা নয়?(আমি পুলিশকে বললাম।)
-তাহলে কোন থানায় বাস করিস তুই?
-………(আমাদের থানার নাম বললাম)
-কি?আরে ওইটা তো অনেক দূর।তুই এখানে এসেছিলিস কেন?
-স্যার সে এক দুর্ঘটনা…?
-চোপ!আবার আরেক নতুন স্টোরি।
পুলিশের ধমকে একেবারে চুপ হয়ে গেলাম।চলে গেলাম থানার ভিতরে।ভয় ভয় করছে।অচেনা এক থানায় এলাম।কোনো পরিচিত মানুষ নেই।সেটা বড় কথা না।বড় কথা হলো আমি এখানে এলাম কি করে?তার মানে আমি এত দৌড় দিছিলাম,যে এক থানা পেরিয়ে অন্য থানায় চলে আসছি।আরেকটু দৌড়াতে থাকলে তো জেলা পার হইয়া যাইতাম।?থাক সে কথা না ভাবলেও চলবে।
-ম্যাম এই ছেলেটি কিছু একটা চুরি করে পালাচ্ছিল,আমি ধরে এনেছি।(পলিশটা)
-না ম্যাম মুটেও না।(মহিলা পুলিশটা এখনো অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।)
-চোপ!চোরের আবার বড় গলা?কি হয়েছিল বল তাহলে?(পুলিশ)
-হুম কি হয়েছিল?(ম্যাম এদিকে ঘুরে।)
…একি দেখছি আমি?এটা কি কোনো মেয়ে নাকি আকাশের পরী পুলিশের ড্রেস পরে এসেছে।?প্রথম দেখাতেই ক্রাশ খাইলাম।হোক না সিনিয়, তাতে কি?ক্রাশ যেহেতু খাইছি,প্রেমতো করমুই…??ড্রেসে নাম দেখে নিলাম “সিমি”। কি কিউট নাম মাইরি…??
-এই ছেলে!(সিমি ম্যামের মিষ্টি কন্ঠের ডাক শুনে ঘোর কাটলো।)
-না মানে ম্যাম কি করে যে বলি?মান ইজ্জতের বেপার।(আমি)
-চুরি করার সময় মনে ছিলনা?(আবির-যে আমাকৈ ধরে এনেছিল,লোকটার নাম আবির)
-হোপ!বারবার শুধু চোর চোর করে মাথা খাচ্ছেন কেন?বলছি না আমি কিছু করি নাই?আমাকে দেখে কি আপনার চোর চোর মনে হয়?(আবিরকে বললাম কথাগুলো)
-আহ্ আবির!বলতে দাও ওকে।হুম,আপনি বলেন কেন দৌড়াচ্ছিলেন?(সিমি ম্যাম)
-এই দেখুন,কত মিষ্টি শুরে বলতে বললো!আর আপনি!আপনার কন্ঠ শুনলেই কু.কু.কু………(পুরোটা বলতে পারলাম না,সামনে তাকিয়ে দেখলাম সিমি ম্যাম লাঠিটাকে নারাচারা করছিলেন।অন্তরে ভয় ডুকে গেল)
-আসলে ম্যাম হয়েছিল কি!সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে কোচিংয়ে গিয়েছিলাম………(পুরোটা বললাম)
আমার কথা শুনে সিমি ম্যাম হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।কি সুন্দর হাসি মাইরি।সারাদিন তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করছিলো।
-ও তাহলে এই ব্যাপার?শেষে হিজরাদের দৌড়ানি খাইয়া এই অবস্তা হইছে তোমার?(হাসতে হাসতে)
-জ্বি ম্যাম।কিন্তু এখন ওই দুইটা হিজরাকে ধন্যবাদ দিতে খুব ইচ্ছা করছে?(আমি)
-কেন কেন?(সিমি ম্যাম)
-না মানে ওরা যদি না দৌড়ানি দিতো,তাহলে তো আপনার মতো এত মিষ্টি একটা মেয়ের সাথে পরিচিত হওয়া যেত না।?
-ও হ্যালো!সাবধান হ্যাঁ? এখন যান বাড়ি ফিরে যান।(সিমি ম্যাম লাঠি দেখিয়ে।)
-কিন্তু ম্যাম আমি তো…………
চলবে………?
সবার মতামত পেলে পরের পার্ট লিখবো…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com