Breaking News

আমার বুড়ো || পর্ব-০১

আজ আমার বিয়ে হোয়েছে। লোকটা বারো বছরের বড় আমার থেকে। বিয়েতে খুশি হয়েছি, না দুঃখিত ঠিক বুঝতে পারছি না। কারণ আমার পরিবারে বিয়ের জন্য মেয়ের মতামত নেওয়া হয় না। কেউ ভুল করলে তার ওপর রাগ করা যায়। কিন্তু ভূল্টাকেই যখন মানুষ নিয়ম বানিয়ে ফেলে, তখন তার উপর রাগ করা বুদ্ধিমানের কাজ না। আমি নিজেকে বুদ্ধিমান মনে করি না। আমি আসলে খুব বোকা একটা মেয়ে। আমি এতই বোকা, যে বাবা মার থেকে বিদায় নেয়ার সময় মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, " মা, প্লিজ এই বিয়ে আমি করবো না। আমাকে বাঁচাও," কাদতেঁ কাদতেঁ আকুতি করেছিলাম। মানুষজন আমার কন্যাকে স্বাভাবিক ভাবেই নেয়। বিদায়ী র সময় মেয়ে তো কাঁদবে ই।
মা সবার সামনে জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখে বলে, " মা শোন, ছেলেটার অনেক টাকা। ভালো চাকরি করে। তোকে ভালো রাখবে,"
নিজের ওপর প্রচণ্ড আক্রোশ হয় তখন। কেন এদের কাছ থেকে কিছু চাইলাম। যারা টাকার জন্য নিজের মেয়েকে বিক্রি করে দেয়, তাদের থেকে অপরিচিত একজনের সাথে সংসার করাই ভালো।
আমি লোকটাকে কখনো দেখি নি। বিয়ে পড়ানোর সময়ও না। অবশ্য দেখে কি আর হবে। আমার জীবন তো শেষই।
পায়ের আওয়াজ পেলাম কারো। আমি খাটের এক কোনায় জুবুথুবু হয়ে বসে আছি। পারলে পর্দার পিছনে লুকিয়ে পড়ি।
কেউ একজন রুমে ঢুকেছে। আমি দৃষ্টি নিচের দিকে আমার আঙ্গুলগুলোর দিকে রেখে কাজ খাড়া করে শুনতে লাগলাম। দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ পেলাম। আমি আমার গায়ের চাদর টা আরো শক্ত করে অষ্টে ধরলাম। বুক কাপছে দুরুদুরু।
লোকটা আমার পাশে এসে বসলো বিছানায়। আমি তারদিকে তাকাচ্ছি না, তবে বুঝতে পারছি সে আমারই দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কোনো কথা না বলে অনেকক্ষন হোয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত তিনি বলে উঠলেন, "তুমি কি আজকে কোনো কথা বলবে না আমার সাথে?"
আমি চমকে উঠি। কথায় মোটেও বয়সের ছাপ নেই। বরং বেশ গম্ভীর, তবে গায়ক গোছের গলা। রেডিও আরজে দের মতো। থাক, তাকে দেখা লাগবে না। আমি তার কণ্ঠ শুনেই জীবন পার করে দিবো।
" প্লিজ, কিছু একটা বল, আমি খুব অকওয়ার্ড ফিল করছি। ওহ্, তোমাকে তুমি তুমি বলছি কিছু মনে করছ না তো? তুমি বয়সে আমার অনেক ছোট,"
"না, না। আমি কিছু মনে করছি না," আমি বলে উঠলাম।
"ওহ্, কথা বলেছ তাহলে। আমি তো ভাবলাম আজকে আর কথা বলবা না"বলেই সে হাসতে লাগলো। তার হাসির শব্দটাও সুন্দর। এই রে.. আমি কি কণ্ঠ শুনেই এই বুড়ার প্রেমে পড়ে গেলাম নাকি? ছি ছি..
"তোমার চেহারাটা কি দেখবে না আমাকে? একটা কথা বলার ছিল, যেটা মুখোমুখি না বললে হবে না,"
আমি ঢোক গিললাম। এখনি মনে হয় হায়নার মতো আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।
আমি আস্তে আস্তে ঘোমটা খুলে তার দিকে ফিরলাম। সে আবার হেসে ফেললো,
"চোখ বন্ধ করে আছো কেন? চোখ বন্ধ থাকলে আমাকে দেখবে কিভাবে?"
ভয়ে যে চোখ বন্ধ করেছিলাম, তাও খেয়াল নেই। আমি চোখ মেলে তাকালাম।
আমার সামনে যে পুরুষটি আধশোয়া অবস্থায় রয়েছে, সে আর যাই হোক, বুড়া না। মুচকি হাসি মুখে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন আমার কান্ড দেখে বেশ মজা পাচ্ছে। বেশ সাদামাটা একটা শেরওয়ানি পরা, কিন্তু তাকে খুব মানিয়েছে। খুব খুব খুব।
আমি তো অবাক হয় তাকিয়ে আছি। সে বলল,
" এত অবাক হয় কি দেখছ? "
আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নাড়ি। সে হেসে বললো,
" একটা কথা বলি?"
আমি মাথা হেলিয়ে হ্যা জবাব দিলাম।
" তুমি না...পরির মত সুন্দর"
আমার লজ্জায় গাল গরম হয়ে উঠলো। হালকা কেশে বললাম,
" আপনি কেমনে জানলেন আমি পরির মতো? আপনি পরি দেখেছেন?"
"। তাদেখিনি। কিন্তু ছোটবেলায় যখন আমার মা পরির গল্প শোনাতে, তখন আমি একদম তোমার মত একটা পরি কল্পনা করতাম। দীর্ঘ কালো চুলের ছোট্ট একটা পরি। আমার খুব শখ ছিল একটা পরি বউএর। আজ এতদিন পর আমার শৈশবের কথা মনে হলো তোমাকে দেখে,"
আমি গাল ফুলিয়ে বললাম, " ছোট্ট মানে? আমি ছোট না,"
সে আবার হেসে ফেললো। কি সুন্দর হাসি। যেন কোনো কিশোরের প্রাণোচ্ছ্বল হাসি।
সে হঠাৎ গম্ভীর হলে গেলো। বললো,
" আমি আমাদের মাঝে কোনো ভুল বোঝাবুঝি রাখতে চাই না। তাই তোমাকে সত্যিটা বলে দিতে চাই। আমি তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করিনি,"
আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ আগেও আমি এই বিয়ে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু কিছু মুহূর্তেই কেন যেন খুব আপন মনে হচ্ছিল মানুষটাকে। আমার মনটা ভেঙে গেলো।
আমি চুপ করে থাকলাম। আবার বলতে লাগলো।
" আমার বিজনেস কিছু অর্গানাইজেশনের সাথে করতে হচ্ছে যারা অবিবাহিত পুরুষদের সাথে বিজনেস করবে না। কিন্তু এই প্রজেক্টটা আমার খুব দরকার। তাই তোমাকে বিয়ে করা।"
ওহ্.. মানে বিয়েটা সে যেকোনো মেয়েকেই করতে পারতো। আমি বিশেষ কিছু না।
" আমার কোনো প্ল্যান ছিল না বিয়ে করার কখনো। সবসময় নিজের কাজকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। শোন, তুমি একদম মন খারাপ করবে না, তোমার পড়াশোনা যেমন চলছিল, তেমনি চলবে। কোনো খরচ নিয়ে কোনো চিন্তা করবে না। তোমার সব কিছুর দায়িত্ব আমার। আমি কখনো জোর করবনা তোমাকে কিছুর জন্য। তুমি তোমার মতো জীবন যাপন করবে, আর আমি আমার মত। আর শোন,"
আমি তাকালাম তার দিকে।
" রুমে ঢুকেই জা বুঝতে পারলাম, তুমি খুব ভয় করছিলে আমাকে। আমাকে কখনো ভয় পেয়ও না। আমি মানুষটা কিন্তু অতটাও খারাপ না,"
আমি এতটাই অবাক হলাম, যে কিছু বলতেই পারলাম না। আমি কখনো চিন্তা করি নি আমার জিবনে এমন একটা মোড় আসবে। তার কথায় আমার খুশি হওয়া উচিত ছিল। আমি যা চেয়েছিলাম, সে তাই দিচ্ছে। তবুও কেমন যেন শূন্যতায় হাহাকার করে উঠলো ভেতরটা..

চলবে..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com