দ্যা ডেন্জারাস লাভার ।। সিজন -২ ।। পার্ট-১২
বৃষ্টি সেখানেই স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে শ্রাবনের গাড়ির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
এদিকে ঐ লোকগুলোও এগিয়ে আসছে বৃষ্টির কাছে সেদিকে বৃষ্টির কোনো খেয়ালই নেই।
শ্রাবন ওকে এমন বিপদের মাঝে একা ফেলে এভাবে চলে যেতে পারে সেটা ভাবতেই চোখ থেকে
দুফোটা জল গড়িয়ে পরলো বৃষ্টির। এদিকে ঐ নেশাখোর লোকগুলো বৃষ্টির কাছে
এসে দাড়িয়ে পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললো
— কি গো রাত পরী এখন তোমায় কে বাঁচাবে?
তার চাইতে তুমি নিজেই ধরা দাও আমাদের কাছে এতে তোমারই ভালো হবে।
সাথে মজাও পাবে।
লোকগুলোর কথায় ধ্যান ভাঙলো বৃষ্টির। সাথে সাথে বৃষ্টি কয়েকপা পিছিয়ে গেলো।
বৃষ্টি বুঝতে পারলো ভুলটা ওর নিজেরই হয়েছে।
তাই এদের হাত থেকে বাচতে হলে নিজেকেই কিছু করতে হবে।
বৃষ্টি আর কোনো চিন্তা ভাবনা না করে পিছন দিকে দৌড়াতে লাগলো।
বৃষ্টির পিছু পিছু ঐ লোকগুলোও ছুটে চলেছে। আসে পাশের সব লোকই তাকিয়ে দেখছে
কিন্তু একজনও এগিয়ে আসছে না বৃষ্টিকে বাচাতে।অথচো কাল সকালে যখন নিউজ
বের হবে একটা তরুণী মেয়েকে গনধর্ষ,, এর পর হত্যা,
তখন এই মানুষ গুলোরই আফসোসের শেষ থাকবে না। হইরে মানুষ।
দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেলো বৃষ্টি।
বৃষ্টি ভয়ে ভয়ে ওপরে তাকিয়ে দেখলো সেটা আর কেউ নয় নীল।
নীলকে দেখে যেনো দেহে প্রান ফিরে পেলো বৃষ্টি।
বৃষ্টি দ্রুত গিয়ে নীলের পিছনে দাড়িয়ে নীলের শার্টটা খামচে ধরলো ভয়ে।
লোকগুলো নীলের সামনে এসে দাড়িয়ে বললো
ঐ কে রে তুই? আশেপাশে এতলোক দাড়িয়ে আছে কেউ এলো না।
আর তুই কিনা এখানে হিরো সাজতে এসেছিস?
লোকগুলোর কথা শুনে নীল মুচকি হেসে বললো
না ভাই আমি তো আর ফিল্মের হিরোর মতো ফাইট করতে পারবো না আপনাদের সাথে।
তাই হিরো হওয়ার কোনো ইচ্ছাও নেই আমার। আমি শুধু আপনাদের সাথে একটু কথা বলতে চাই।
— কি কথা বলবি তুই, মেয়েটিকে তো আজকে আমাদের চাইই চাই।
তুই সর তো সামনে থেকে।
আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি আমি সরে যাবো শুধু আমার সাথে একটা মিনিট কথা বলেন প্লিজ।
তারপর আপনারা যা বলবেন আমি তাই করবো।
একটা মেয়ের জন্যে মরে যাওয়ার কোনো শখ নেই আমার।
নীলের কথা শুনে বৃষ্টি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে।
কি বলবে বুঝতে পারছে না ও। তাই চুপচাপ দাড়িয়ে দেখছে কি হয়।
নীলের কথায় রাজি হয়ে ঐ লোকগুলো ওর কথা শুনতে চাইলো।
নীল বৃষ্টিকে দাড় করিয়ে রেখে লোকগুলোকে নিয়ে একটু দুরে এসে কি যেনো কথা বললো কিছুক্ষণ।
তারপর বৃষ্টির কাছে ফিরে এসে নীল বললো
চলো নীলা বাসায় চলো।আর কোনো ভয় নেই ওরা চলে গেছে।
নীলের কথা শুনে লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখলো সত্যিই চলে যাচ্ছে লোক গুলো।
বৃষ্টি আর কিছু না বলে বাসায় চলে এলো নীলের সাথে।
বাসায় পৌছে বৃষ্টি নীলকে ডেকে বললো
আচ্ছা নীল ভাইয়া আপনি এমন কি বললেন ঐ লোকগুলোকে যে, তারা সবাই পালিয়ে গেলো?
বৃষ্টির কথা শুনে বৃষ্টির দিকে ঘুরে মুচকি হেসে নীল বললো
আমাকে দেখে কি তোমার পাগল মনে হয় নীলা?
আমার একার কোনে ক্ষমতা ছিলোনা ওদের কিছু বলে ভয় দেখিয়ে ভাগিয়ে দেওয়ার।
আমি তো ওদের কিছু দিয়েছি বলে ওরা চলে গেছে।
কিছু দিয়েছেন মানে? কি দিয়েছেন আপনি ওদের?
বেশি কিছু না নীলা, ১০ হাজার টাকা দিয়ে বলছি তোমায় মুক্তি দিতে আর
ঐ টাকা দিয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে নেশা করতে।
ওরা তো নেশা খোর তাই ১০ হাজার টাকা ওদের কাছে অনেক।
নীলের কথা শুনে প্রথমে অবাক হলেও খুব রাগ হলো বৃষ্টির।
বৃষ্টি নীলকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো।
বৃষ্টির এমন কান্ডে ঠোট উল্টে মাথা চুলকাতে চুলকাতে চলে গেলো নীল।
আর বৃষ্টি রুমে গিয়ে একা একাই বলতে লাগলো
কি ভাবলাম আর কি হলো। ইশশ উনি ১০ হাজার টাকার বদলে বাচিয়ে আনছে আমায়। কেনো রে তুই কি ছেলে মানুষ না যে ওদের দেখে ভয় পেলি। আমার শ্রাবন হলে ওদের ফিল্মের হিরোর মতো ডুসুম ডুসুম করে মেরে আমায় বাচিয়ে আনতো।শালা ভিতুর ডিম একটা, আবার বাহাদুরি করে বলছে আমি তোমায় ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বাচিয়ে এনেছি। কচু করেছো তুমি
কথাগুলো বলেই নিজের মুখটা চেপে ধরলো বৃষ্টি। তারপর আবারও বললো
— আমি কেনো বার বার ঐ শয়তান শ্রাবনের নাম নিচ্ছি? ও হিরো নয় ও একটা ভিলেন। নাহলে কি করে পারলো আমায় এমন বিপদের মাঝে রেখে ওভাবে চলে যেতে। ওনার চাইতে নীল ভাইয়া হাজার গুন ভালো।আমারি ভুল হয়েছে ভাবতে।
কথাগুলো ভেবেই মন খারাপ করে শুয়ে পরলো বৃষ্টি। তারপর শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে লাগলো, ও আর রাতে ঐ শ্রাবনের বাসায় যাবে না। গেলে দিনের বেলাতেই যাবে আর ছবিগুলো চুরি করে আনবে। আর সেই দিনটা কালকের দিনই।
,
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেলো বৃষ্টির। কারন রাতে ঠিক করে ঘুমাতে পারেনি ও। ভোরের দিকে চোখটা লেগে এলে ঘুমিয়ে পরে বৃষ্টি। যার ফল সরুপ এখন ঘুম থেকে উঠলে বেলা ৯.৩০ বেজে গেছে।
বৃষ্টি ঘুম থেকে উঠে ঘড়ি দেখে তারাতারি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো নীল সোফায় বসে টিভিতে নিউজ দেখছে মনযোগ দিয়ে। বৃষ্টিকে দেখে নীল সোফা ছেরে উঠে এসে টিভি বন্ধ করে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বললো
— ঘুম কেমন হলো নীলা? তোমার চোখ এমন ফোলা ফোলা লাগছে কেনো?
— কিছু না ভাইয়া, আসলে রাতে ঘুমোতে একটু লেইট হয়েছিলো তো তাই হয়তো। আচ্ছা আপনি বসুন আমি আপনার জন্যে নুডুলস রান্না করে আনছি। ঘুম থেকে উঠতে খুব দেরি হয়ে গেলো আজ আমার।
— তোকে কোথাও যেতে হবে না নীলা মা। আমি ওকে নুডুলস রেধে দিয়েছিলাম ওর খাওয়া শেষ। তুই এখানে এসে নাস্তা কর আয়।(কিচেন থেকে বের হয়ে বললো নীলের মা)
নীলের মায়ের কথা শুনে বৃষ্টি আর কিছু না বলে নাস্তা করতে চলে গেলো। ওর এখন অন্য চিন্তায় থাকলে চলবে না। ওকে এখন শুধু ভাবতে হবে কি করে শ্রাবনের বাসা থেকে ঐ ছবিগুলো আনতে পারবে ও।
সকালের নাস্তা শেষ করে ছাদে গিয়ে প্ল্যান করতে লাগলো বৃষ্টি। কখন কি করে শ্রাবনের বাসায় যাবে এটা নিয়ে। সব কিছু প্ল্যানিং করা শেষ হলে বেলা ১১.৪৫ মিনিটে শ্রাবনের বাসার উদ্যেশে বেরিয়ে পরলো বৃষ্টি। আর নীলের মাকে বললো ও এক বান্ধবীর বাসায় যাবে আসতে দেরি হতে পারে।
,
,
,
রিক্সায় করে শ্রাবনের বাসার সামনে এসে নামলো বৃষ্টি। তারপর ওড়না দিয়ে নিজেকে ভালোভাবে ঢেকে নিয়ে গেইটের ভেতর প্রবেশ করলো। গেটে দারোয়ান বসে বসে ঘুমে ঝিমোচ্ছিলো বলে ভিতরে ঢুকতে বেশি বেগ পেতে হলো না বৃষ্টির। বৃষ্টি চুপি চুপি বাড়ির দরজার সামনে গিয়ে ভিতরে উকি দিলো। উকি দিয়ে দেখলো কালকের সেই গাড়িতে শ্রাবনের পাশে বসা মেয়েটার সাথে শ্রাবন খুব হেসে হেসে কথা বলছে। আর মেয়েটা কথা বলতে বলতে বার বার শ্রাবনের হাতের ওপর হাত রাখছে।
মেয়েটির এমন আচরন দেখে যেনো গায়ে জ্বালা করছে বৃষ্টির। বৃষ্টি মনে মনে বললো
— ঐ আল্ট্রামর্ডান শাঁকচুন্নি পেত্নীটাকে ইচ্ছা করছে কানের নিচে কষিয়ে কয়েকটা দেই। ব্যাদ্দপ মেয়ে কথা বলার ছলে বার বার কি ভাবে ওনার গায়ে হাত দিচ্ছে দেখো। যেনো উনি ওর কোন জম্মের জামাই লাগে।
কথাগুলো বলেই রাগে নিজের নাকটা ঘষে নিলো বৃষ্টি। তারপর আবার নিজেই নিজেকে বললো
— বৃষ্টি তুই এসব কি বলছিস বলতো। তুই কেনো ঐ মেয়েটিকে দেখে এমন রেগে যাচ্ছিস। ও যা খুশি করুক শ্রাবনের সাথে তাতে তোর কি। তুইকি ওনাকে ভালবাসিস?
না না ইম্পসিবল একে বারেই ইম্পসিবল। আমি ওনাকে ঘৃনা করি। তাই ঐ মেয়েটা ওনার হাত ধরুক বা গলায় ঝুলে পরুক তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি বরং এখন চিন্তা করি কি করে ওনার রুমে ঢুকতে পারবো।
কথাগুলো ভেবে বৃষ্টি আশেপাশে খোজা শুরু করলো বাসায় ঢোকার আর কোনো রাস্তা আছে কিনা। কিন্তু নাহ এই রাস্তা ছারা আর কোনো রাস্তা বৃষ্টির চোখে পরলো না। তাই বৃষ্টি ভাবলো ও ঐখানে বসেই অপেক্ষা করবে ভিতরে যাওয়ার জন্যে সুজোগের। যে ভাবা সেই কাজ। বৃষ্টি ফুল গাছের আড়ালে বসে রইলো শ্রাবনরা সরে যাওয়ার অপেক্ষায়।
একটু পর বৃষ্টি দেখলো শ্রাবনের সাথের ঐ মেয়েটা কোথায় যেনো যাচ্ছে। সাথে শ্রাবনও এগিয়ে দিতে যাচ্ছে গেটের বাইরে। বাসার ভিতরে ঢোকার এটাই সঠিক সময়।
বৃষ্টি আশেপাশে চোখ বুলিয়ে আর দেরি না করে বাসার ভিতর ঢুকে পরলো। তারপর পা টিপে টিপে সোজা চলে গেলো শ্রাবনের রুমে।
কিন্তু রুমে পৌছালেও কিছু খুজবে কি তার আগেই ভয়ে যেনো বৃষ্টির গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির এখন মনে হচ্ছে ও যেনো ইচ্ছা করে খুধার্থ বাঘের গুহায় ঢুকে পরছে মরার জন্যে। ভয়ে বৃষ্টি ছবিগুলো খোজার কথাই ভুলে গেছে। এমন সময় বৃষ্টি দেখে যে শ্রাবন ফোনে কথা বলতে বলতে রুমের দিকেই আসছে।
এটা দেখে বৃষ্টির এবার হার্টএটাক করার মতো অবস্থা। বৃষ্টি এখন কি করবে ভেবে না পেয়ে দৌড়ে বেলকুনিতে গিয়ে লুকায়।
বৃষ্টি বেলকুনিতে গেলে শ্রাবন রুমের ভেতরে এসে দরজা লাগিয়ে ফোনের ঐ পাশের লোককে বলে
— আচ্ছা আমি এখন ফোন রাখছি তুমি আরো লোক লাগিয়ে দিয়ে যত তারাতারি সম্ভব কাজটা করো। bye
কথাগুলো বলেই ফোনটা কেটে দিয়ে বিছানার ওপর ফোনটা রেখে দিলো শ্রাবন।
এদিকে ভয়ে বৃষ্টি শেষ, গলা শুকে যেনো মরুভূমি হয়ে গেছে বৃষ্টির। এখন পানি না খেলে হয়তো মরেই যাবে ও। বৃষ্টি আসে পাশে পানি খুজতে শুরু করলো। আর তখনি ওর চোখে পরলো বেলকুনিতে ছোট একটা টি টেবিলের ওপর রাখা একটা বোতলের দিকে। বৃষ্টি বোতলের জিনিসটাকে ভয়ে ও পিপাসায় পানি ভেবে ঢকঢক করে পুরোটা সাবার করে দিলো।
এদিকে শ্রাবন নিজের গায়ের টিশার্টটা খুলে গোসলের জন্যে রেডি হচ্ছে। যখনি শ্রাবন ওয়াশরুমে ঢোকার জন্যে পা বারালো তখনি বেলকুনি থেকে কিছু পরে ভেঙে যাওয়ার শব্দ পেলো শ্রাবন। শব্দ পেয়েই শ্রাবন আর ওয়াশরুমে না গিয়ে ভ্রু কুচকে বেলকুনির দিকে এগিয়ে গেলো।
বেলকুনিতে গিয়ে শ্রাবন যা দেখলো তাতে শ্রাবনের চোখ প্রায় বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। শ্রাবন দেখলো,,,,,, (কি দেখলো আগামি পর্বে জানবেন আমি আগে একটু হাইসা লই কারন আমি জানি??)হিহিহিহি
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com