গল্প: এক টুকরো বিশ্বাস || পর্ব: ০২
আমি আমার মেয়ে কে নিয়ে রুমে গেলাম ।কিছুক্ষণ পরেই সব কিছু শান্ত হয়ে গেল ।কিন্তু আমার ভেতর ঝড় বইছে ।আমার মেয়ের কি হবে ? তনয়া যদি জানতে পারে ওর বাবা একজন দুশ্চরিত্র তখন ।মেয়ে টা কিভাবে সহ্য করবে।এইসব ভাবতে ভাবতে সকাল হল।ফজরের আজান শোনার পর ই ওযু করে নামায পড়লাম আর দুই হাত তুলে বললাম হে আল্লাহ্ আমি তো শুনেছি আপনি একজন দুশ্চরিত্র লোকের জন্য একজন দুশ্চরিত্রা ঠিক করেছেন ।কিন্তু আমার কি দোষ ছিল কেন আমার সাথে এমন করলেন ?? নামায থেকে উঠে বাইরে গিয়ে দেখে ছায়া ওর রুমে আর মা বাবা দুইজন সোফায় শুয়ে আছে ।কেন জানি আজ একটু হেসেই দিলাম তাদের দিকে তাকিয়ে ।বাবা মা কি আজব মেয়ের ভালোর জন্য জীবন দিতে রাজি কিন্তু টাকাকে ই আসল সুখ মনে করে ।আজকে বাবা যদি টাকাওয়ালা না খুঁজে সৎচরিত্রবান মানুষ খুজত তাহলে আজ আর আমার এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হত না । আমি আমার রুমে চলে গেলাম ।সকালে সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে বাবা মা কে দিলাম ।হঠাৎ বাবা আমার পা ধরে বলল
বাবা:মা ,আমাকে মাফ করে দিস ।আমি তোকে বোঝা মনে করে কিছু না জেনে শুনে ই তোর জীবন টা নষ্ট করে দিয়েছি ।আমাকে মাফ করে দে, মা।
আমি :বাবা কি করছ উঠো ।এখানে তোমার কোন দোষ নেই ।
এর ই মধ্যে আরেকটা কন্ঠ শুনতে পাওয়া যায় ।আরে উনি তো আমার শাশুড়ি মা জাহানারা ।
জাহানারা: এখানে দোষ আমার ছেলের ও নেই ।আরে ছেলে মানুষ একটু তো ভুল করতে ই পারে এর জন্য কি বাড়ি ছাইরা যাইবা ।আরে পোলার শরীরে গরম রক্ত একজন রে দিয়া কি ঠান্ডা হয় ।
বাবা:আপনি এখানে এসেছেন কেন ।?? চলে যান ।
জাহানারা: আরে সম্মানের কোন চিন্তা আছে আপনাগো ।আপনার মাইয়ার লেগা আমার ছেলের চরিত্রে দাগ পড়ছে ।আর তুমি ই বা কেমন বউ নিজের জামাইকে হাতের মুঠে রাখতে পারে না ।তুমি যদি সুখ দিতে না পারে আমার পোলায় তো অন্য দিকে যাইবই।
আমি শুধু তার কথা গুলো শুনছি ।ঠিক এই সময় আবির এসে পরে ।আবির বলে চলো মায়া ।বাবা মা আমাকে জিজ্ঞেস করে মায়া কই যাবি ।তখনই আবির বলে মায়া আর রাশেদ এর ডিবসের জন্য ।এই কথা শুনে বাবা ,মা আর শাশুড়ি র মুখ কালো হয়ে যায় ।আমার শাশুড়ি আমাকে বকতে বকতে চলে যায় ।আর বাবা বলে মা আর একটু ভেবে দেখ ।আমি বলি
আমি:বাবা এইসব এর পরে ও যদি ওই মানুষটার কোন অপরাধ বোধ না থাকে তাহলে পরে আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে এইসব করবে না তার কি নিশ্চয়তা ।
এই কথা বলে আমি চলে যাই ।
ছয় মাস পর,
আমার আর রাশেদ এর ডিবস হয়ে যায় ।রাশেদ একবার ও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে নি ।আমার মেয়ের দিকে ও একবার তাকায় নেই ।আবার আরেকটা বিয়ে করতে পারবে ।আমি আর এখন কান্না করি না কার জন্য ই বা করব ।এখন আমি হাসব আমার মেয়ের জন্য ।
দুই দিন পরে
আমার ফোনে ফোন আসে
.....:আমার সাথে আপনি আপনার বাসার কফি সপ এ দেখা করেন ।
আমি:ঠিকাছে
বিশ মিনিটের মধ্যে পৌছে যাই ।
দেখি উনি আগে থেকেই আমার জন্য অপেক্ষা করছে ।আমাকে দেখে উঠে বলে
.....:বসেন ।
আমি বসলাম উনি বলতে শুরু করল
......:আপনার মনে আছে আমার কথা ।আমি রাশেদ এর নোংরা চেহারা সবার সামনে ফাঁস করি ।এখন আপনি আপনার কথা রাখুন ।
আমি:দেখুন ,আবির আপনি যা বলছেন তা ঠিক না ।আপনি যানের আমি একজন ডিবসী ।
আবির :আমি কালকে মা কে নিয়ে আপনার বাসায় আসব ।তুমি রেডি থেকো ।
আমি:আবির !
আবির :আমি এখন যাই ।
বাসায় যেতে যেতে আগের সৃতি মনে পড়ে গেল ।একদিন আবির আমাকে ফোন দিয়ে রাশেদ এর নামে এইসব কিছু বলেছে ।তখন ও শুধু এইটা ই বলেছে যে পরে তার কথা রাখতে ।আজ বুঝলাম তার কথা তা কি ।বাসায় পৌছে আমি আমার মেয়ে কে নিয়ে কিছুক্ষণ খেলাম।
পর দিন সকালে
আবির তার মাকে নিয়ে হাজির ।
আবিরের মাকে আর আবির কে দেখে বাবা বলে আপনারা এখানে ।
আবিরের মা:আপনার সাথে কিছু কথা ছিল ।আর ছায়া কে দেখছি না??
বাবা: ওকে তো আমরা নানি বাড়ি পাঠিয়েছি সেই দিনই ।কিন্তু আপনারা এখানে কেন??
আবিরের মা : বলছি ।আমরা ভুল শোধরাতে এসেছি।
বাবা: ছায়াকে আপনারা আপনারা আপন করে নিতে চান ।দাঁড়ান আমি ছায়াকে ফোন দিচ্ছি।
আবিরের মা : আহ ,আপনি তো দুই লাইন বেশি বোঝেন ।আমরা মায়ার আর আবিরের বিয়ের জন্য এসেছি ।
বাবা:কী ??
আবিরের মা : হ্যাঁ ।আমারা দুই দিনের মধ্যে ছোট একটা অনুষ্ঠান করে মায়া কে আর আমার নাতনি কে নিয়ে যেতে চাই ।মেয়েটা ও বাবার ছায়া পাবে আর মায়া ও একটা ভালো ভবিষ্যত ।
বাবা এই কথা শুনে কিছু না ভেবে ই হ্যাঁ বলে দেয় ।এর মাঝে আবির বলে উঠে মায়ার মতামত তা নেয় ।
বাবা আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করে
বাবা: কিরে মা। তুই কি বলিস ।
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেই ।সবাই বিয়ের জন্য কাজে লেগে যায় ।
আজ আমার বিয়ে কাজে এসে পড়েছে ।সব কিছু ঠিক সেই মূহুর্তে ছায়া এসে আমার পা ধরে বলে
ছায়া:আপু আমাকে মাফ করে দে ।আবিরকে তুই বিয়ে করিস না ।আমি ওকে ভালোবাসি ।
ওর কান্না দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না তখনই আবির এসে বলে
আবির : আরে ছায়া পতিতালয় থেকে কবে আসলে ??
আমি:আবির
আবির: মায়া চলো দেরি হয়ে যাবে ।
আমি :আবির আমার কথা টা শুন ।
আবির আর কোন কথা না বলে আমার হাত টানতে টানতে নিয়ে যায় ।আমার পিছু পিছু বাবা মা ও আসে।বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। আবির আমাকে তাদের বাসায় নিয়ে আসে। রুমটা ফুলে সাজানো। আমার মেয়ে ঘুমিয়ে আছে ।আমি বাথরুমে চলে যাই আর একটা লম্বা শাওয়ার নেই ।বের হয়ে দেখি আবির দরজার বাইরে আবিরের মা বলছে
আবিরের মা:তনয়া কে আমার কাছে দে আজকে ।
আবির :না মা। ও আজকে থাকুক না ।কোন সমস্যা নেই ।
রুমে ঢুকে আবির আমাকে দেখে বাথরুমে চলে যায় ।আমি চুল মুছতে মুছতে সামনের দেয়ালে চোখ পড়লে দেখি আমার অনেক ছবি দেয়াল এ ।
হঠাৎ করে আবির পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার ঘারে মুখ গুঁজে দেয় আর বলে
চলবে
পরের পর্বে আবিরের রহস্য ফাঁস হবে ।
গল্প টা কেমন লাগল জানাবেন
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com