Breaking News

সন্তানের খুশিতেই বাবা-মা খুশি

এই নে পাঁচশ টাকা।বাহিরে গিয়ে বন্ধুবান্ধবের সাথে একটু আড্ডা দিয়ে আয়।
আম্মু’চোখ লাল করে পাঁচশ টাকার একটা নোট আমার দিকে বাড়িয়ে দিল।
আম্মুর লাল চোখ পাত্তা না দিয়ে মুস্কি হেঁসে বললাম। না, মা আমার তো টাকা লাগবে না।
তোমার কাছেই রেখে দেও। আম্মু’র চোখ আরো লাল হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে ভষ্ম হয়ে যাব।তাই চোখ বইয়ের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে পড়া শুরু করলাম।
আজকের মধ্যে তড়িৎ রসায়নটা শেষ করতে হবে!

এই তুই আমার দিকে তাকা।সমস্যাটা তোর! সারাদিন এমন পড়া পড়া করস কেন?
এই দেশে তো আরো অনেক ছেলে আছে কই তাঁরা তো তোর মত পড়ালেখা করে না!
পড়ালেখা করবি ভাল কথা! তাই বলে সারাদিন! পড়ারও তো একটা সময় আছে!
মানুষের পোলাপাইন কত ঘুরাঘুরি, আড্ডা দেয়।বন্ধুবান্ধব নিয়ে সিনেমা দেখে।আর তুই!
গতকাল ‘রাহাতের মা ‘আমাদের বাসায় এসেছি।রাহাত কক্সবাজার গিয়েছে বন্ধুবান্ধব নিয়ে।
উনি ওই ছবি গুলা আমাকে দেখাচ্ছিল। আমার ইচ্ছা করছিল লজ্জায় বিষ খেয়ে মরে যাই।
তুই যদি এমন কক্সবাজার, বান্দরবন গিয়ে ঘুরাঘুরি করতি আমিও তো তাদের কাছে গর্ব
করে বলতে পারতাম ‘ভাবী ভাবী দেখেন “আমার ফয়সাল কক্সবাজার গিয়েছে ওইখান থেকে যাবে বান্দরবন।
আর তুই কিনা বাসা থেকেই বাহির হস না!!! কারো কাছে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না।
সবাই বলে ভাবী, ফয়সাল এমন সারাদিন পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকে কেন?
আপনি তাকে ঘুরাঘুরি করতে পাঠান না কেন!!

আম্মুর এই সব কথা এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বাহির করে দিতে হয়।
সুযোগ পাইলেই হইল “আমি টাকা নেই না কেন? ঘুরাঘুরি করি না কেন?
এইগুলা নিয়ে পড়ে।আর ভাই! টাকা, ঘুরাঘুরি এই গুলাই কি জীবনের সব! পড়ালেখা তো করতে হবে নাকি!
ফিজিক্সের কেপলারের ক্ষেত্রফলের সুত্র গুলা একটু দেখতেছিলাম।
হটাৎ করে আম্মু চিৎকার দিয়ে উঠল ‘ফয়সাল,ফয়সাল এই দিকে আয়! তোর জন্য বিশাল বড় সারপ্রাইজ!!
গিয়ে দেখি বাসার সামনে KTM Duke 125 বাইকটা পড়ে আছে।
আব্বু হাঁসি হাঁসি মুখ করে বাইকের চাবিটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। মনটাই খারাপ হয়ে গেল।
আমি ভাবছিলাম আমার জন্য বোধ হয়ে এক গাড়ি বই নিয়ে এসেছে।
আব্বুকে অনেক দিন আগে একটা বইয়ের লিষ্ট দিয়েছিলাম।বই গুলা এনে দেওয়ার জন্য,
ভাবছিলাম লিষ্টের বই গুলো নিয়ে এসেছে।অন্য পোলাপাইনের বাবা
তাদেরকে কত বই কিনে দেয় আর আমার মা-বাবা।ভাবছিলাম কি আর হইলটা কি!
মনটাই খারাপ হয়ে গেল।ভেবেছিলাম আদা ঘন্টার জন্য বাহিরে যাব।
আর যাব না।সারাদিন পড়ব।আব্বু অনেক বকাবকি করল।
অন্যের ছেলেরা সারাদিন বাইক নিয়ে কত ঘুরাঘুরি করে।
নিজের না থাকলে অন্যেরার থেকে নিয়ে ঘুরে আর তুই!
নিজের ঘরের সামনে বাইক পড়ে রইছে আর তুই ফিরেও তাকাস না!!
তোর জন্য আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারি না।

সকাল পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠেই পড়তে বসে গেলাম।
ভাবলাম আজকের মধ্যেই ক্যালকুলাস চ্যাপ্টার শেষ করে ফেলব।
আগেও এই চ্যাপ্টার অনেক বার করা হয়েছে।
কিন্তু আরেকবার করলেও তো সমস্যা নাই!
কয়েকটা ম্যাথ করার পর আম্মু এসেই জড়িয়ে ধরে কাঁন্না আরম্ভ করল।
আরে কি হল ‘এই সকাল সকাল কান্নাকাটি কেন? শরীর খারাপ নাকি!
আমার শরীর খারাপ হলে তোর কি!
তুই কি আমার কোন কথা শুনছ! আচ্ছা আগে কান্না বন্ধ কর।
সব কথা শুনব? আগে ওয়াদা কর যে আমি যা বলব তাই শুনবি?
অকে তুমি যা বলবে তাই শুনব।সত্যি! হ্যাঁ।

তাইলে আগামী সকালে তুই কক্সবাজার ঘুরতে যাবি।
সেইখানে একসপ্তাহ থেকে যাবি সেন্টমার্টিন ওইখান থেকে বান্দরবন।
তোর কোন টেনশন করতে হবে না।তোর আব্বু সব ব্যবস্থা করে রেখেছে।
এই না’ বলতে পারবি না।তুই ওয়াদা করছোস।

আম্মু বাইকের চাবিটা আমার হাতে দিয়ে “যা আজকে সারাদিন ঘুরবি,তোর বাবা অনেক খুশি হবে।
লোকটা তোর জন্য কত কষ্ট করে। আর এই নে ” পাঁচহাজার টাকা।লাগলে আরো দিব।
আমি বাইকের চাবি আর টাকাটা নিয়ে বাহিরে আসতে আসতে শুনতেছি।
আম্মু চিৎকার করে বলতেছে “ওই ফয়সাল কক্সবাজার যেতে রাজি হয়ে গেছে।কই তুমি!
কোন একটা খুশির সংবাদের সময় তোমাকে পাওয়া যায় না।
তাড়াতাড়ি বারান্দা এসে দেখে যাও। ফয়সাল বাইক নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে।
আবেগে আমার চোখ দিয়ে পানি এসে যাচ্ছে।
আমি সামান্য একটু ঘুরতে বের হচ্ছি দেখে তাঁর এতে খুশি!
আর আমি যদি সময় ঘুরতাম,আড্ডা দিতাম তাঁরা কত খুশি থাকতো!……..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com