গল্প: এক টুকরো ভালোবাসা | পর্ব - ০৬
দুপুরের খাবার শেষে মায়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে ।হঠাৎ মনে হল পিছনে কে জেন ।মায়া মনে করে আবির এসেছে ।পিছনে তাকাতেই দেখে
মায়া:সাবিত ভাইয়া আপনি?? কিছু লাগবে ।
সাবিত:আবিরের থেকে আমার কাছে টাকা ,সম্পত্তি বেশি ।ধরতে গেলে আবির এর কিছুই নাই ।সবই আমাদের ।তাই আবিরকে ছেড়ে তুমি আমার কাছে চলে আসো ।অনেক সুখে রাখব ।কথা দিচ্ছি ।
মায়া অবাক এর চরম সীমায় পৌছে বলে
মায়া:আপনার মাথা ঠিক আছে তো সাবিত ভাইয়া ।আপনি এগুলো কি বলছেন।
সাবিত:যা বলছি তাই সত্যি ।তোমার কোন কষ্ট হবে না। একবার আমার কাছে আসো ।
এইবার মায়া রাগের চরম সীমায় পৌছে বলে
মায়া: সাবিত ভাইয়া, আবিরের যদি কিছুই না থাকে তাতে আমার কিছু যায় আসে না ।আবিরকে আমি ভালোবাসি ।আর টাকার কথা বলছেন আমি আবিরকে ভালোবেসেছি আমার প্রতি ওর পাগলামো দেখে ।নাকি টাকা দেখে।
সাবিক:তুমি কি জানো আবির আমাদের কেউ না ।
মায়া:মানে??
সাবিত:আবির আমার সৎ ভাই ।বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে ।এর পর আবির হয় কিন্তু আবিরের মা অনেক ছোট থাকতেই মারা যায় ।তাই আবিরকে আমরা ই রেখে দেই ।বুঝতেই তো পারছ ।
মায়া:ওওও এর জন্য ই আবির এমন হয়েছে ।ছোট বেলা থেকে না বাবা না মা আর নাই ভাইয়ের ভালোবাসা পেয়েছে ।এত অবহেলা করেছেন মানুষটাকে যে এক টুকরো ভালোবাসা পাওয়া জন্য আপনাদের কাছ থেকে এত মরিয়া হয়ে উঠেছিল ।কিন্তু যা হয় ভালোর জন্য ই হয়।আপনাদের এই অবহেলার কারণেই আবির আমাকে পাগলের মত ভালোবাসে।আমি সত্যি ই অনেক ভাগ্যবতী যে আবিরের মত জীবনসঙ্গী পেয়েছি ।
এই কথা বলে মায়া যেতে নেয় তখনই সাবিত মায়ার হাত ধরে বলে
সাবিত:কোন ভালোবাসার কথা বলছো ।তুমি আমার ভালোবাসা ছিলে ।যা আবির নিজের করেছে ।আবিরের ছোট বেলা থেকে স্বভাব আমার যা আছে তা নিজের করার।
মায়া:কী?
সাবিত:ঠিক ই বলছি ।আবির তোমাকে ভালোবাসে না ।ও শুধু তোমাকে নিজের করে রাখতে চায় যাতে আমি তোমাকে না পাই।
এই বলে সাবিত মায়া কে তার ডাইরি দিল ।মায়া দেখে বলল
মায়া:এই টা তো আমার ডাইরি ।
সাবিত:হ্যাঁ ।তোমার বোন আমার গাড়ি তে এই ডাইরি টা ফেলেছে ।তোমাকে দিতে যাব তখনই তোমার ডাইরি টাতে তোমার ছবি পাই আর তোমাকে প্রথম দেখাতে ভালো লেগে যায় ।মনে আছে তোমার বাসায় প্রতিদিন ফুল রেখে যেত কেউ ।ওইটা কেউ না আমি ই ছিলাম ।আমার কাজে যখন লন্ডনে যাই ।এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আবির তোমাকে তার করে নেয় ।
মায়া কিছু বুঝছে না ।মায়ার কাছে সব কিছু ঘোলা ঘোলা লাগছে। এইসব নিতে না পেরে মায়া জ্ঞান হারায় ।জ্ঞান ফিরে মায়া দেখল আবির মায়ার মাথার কাছে সবে আছে ।ডাক্তার মায়া কে দেখছে সামনে সাবিত ও আছে ।
আবির:ডাক্তার, কি হয়েছে?? মায়ার কিছু হয় নি তো ??
ডাক্তার:আবির সাহেব চিন্তার কোন কারণ নেই আপনার স্ত্রী প্যাগনেন্ট ।
আবির নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারছে না। আর মায়ার কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে খুশির সংবাদ এইটা ই। সাবিত রুম থেকে চলে গেল ।আবির মায়ার কপালে চুমু দিয়ে ডাক্তার কে বিদায় দিয়ে আসে। দেখে মায়া উঠে বসতে চাইছে ।আবির মায়ার কাছে গিয়ে বলে।
আবির:কি করছ ?? উঠো না ।রেস্ট নাও।
মায়া তার চোখ মুখ শক্ত করে বলে
মায়া:আবির ,সাবিত ভাইয়া আমাকে একটা কথা বলেছে এইটা কি সত্যি ।
আবির বুঝে গেছে যে মায়া কে সাবিত সব বলেছে ।আবির মায়া কাছে বসে মাথা নিচু করে বলে
আবির: হ্যাঁ, সব সত্যি ।
মায়া:তবুও আমি তোমার মুখ থেকে সব কিছু শুনতে চাই।
আবির কে সব ঘটনা বলতে লাগল
আবির:ভাইয়া একদিন বাসায় আসে আর আমাকে একটা ডাইরি দেয় ।আর ছবিটা নিয়ে ভাইয়া নিজের রুমে চলে যায় ।
সারারাত আমি তোমার ডাইরি টা পরি ।তোমার প্রত্যেক কথা ,প্রত্যেক অনুভূতি আমার ভালো লাগতে থাকে। সকালে ভাইয়া বলে যে এই মেয়ে টা কেমন?। আমি বললাম জান্নাতের একটা পবিত্র পড়ি ।যার আছে সোনার মন। এই কথা শুনে ভাইয়া আমাকে ছবি দিল তোমাকে খুঁজে বের করার জন্য ।আমি তোমার ছবি দেখে প্রতি দিন তোমার প্রতি মুগ্ধ হচ্ছিলাম।একদিন তোমাকে খুঁজে পেয়ে গেলাম ।ভাইয়া কে জানালে ভাইয়া বলে যে তোমার উপর নজর রাখতে।প্রতি দিন তোমার জন্য নিজের হাতে তোমার পছন্দের ফুল কিনে দরজায় রেখে দিতাম।আর যখন বারান্দায় আসতে তখন তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম ।একদিন ভাইয়া জানতে পারে এইসব কথা তখন তোমার কাছ থেকে দূরে সরানোর জন্য আমাকে আর তোমাদের বাসায় সামনে আসতে দেয় না ।জানতে পারলাম তুমি জবের জন্য চেষ্টা করছ ।তাই আমি তোমাকে আমার কোম্পানিতে জব দেই। ভাইয়া কিছু জানে না ।কিছু কাজে ভাইয়া লন্ডনে যায় ।আর তখন আমি তোমাকে আমার মনের কথা বলি ।এর পরে তুমি সব জানো ।
আবিরের কথা শুনে কি বলব বুঝতে পারছি না ।মনে মনে বলতে লাগলাম আমার অনুভূতির আসল মূল্যায়ন তো আবির ই করেছে ।উল্টো সাবিত আমাকে কতগুলো মিথ্যা কথা ও বলছে ।আবিরের ডাকে মায়ার ধ্যান ভাঙে।মায়া বলে
মায়া:আমাকে আগে জানাও নেই কেন ??
আবির :আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ।আমাকে তুমি একটু একটু করে ভালোবাসছিলে ।এখন যদি এই কথা সব নষ্ট করে দেয় ।
আবির আমার আরেকটু কাছে এসে আমাকে বলে
আবির:মায়া, এই কথা জানার পর কি আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা কমে গেছে ।
আবিরের চেহারা দেখে আমার খুব মায়া হল ।এই মানুষ টা কারো ভালোবাসা না পেয়ে বড় হয়েছে।আর তারই মনে আমার প্রতি এত ভালোবাসা। মায়া আবিরকে বলে
মায়া:আবির,ভালোবাসি ।
আবির:আবার
মায়া:ভালোবাসি
আবির:আবার
মায়া:ভালোবাসি
আবিরের বার বার আবার বলে ই যাচ্ছিল মায়া আর কিছু না ভেবে আবিরের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোট মিলিয়ে দেয় ।একটু পর ছেড়ে বলে
মায়া:চুমু দিয়ে ই কি পেত ভরবা ।আমার আর আমার বেবির কিন্তু অনেক ক্ষুধা পাই সে।
আবির নিচে গিয়ে মায়ার জন্য খাবার নিয়ে আসে। আবির নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দেয়।রাতে আমি মায়া কে বুকে নিয়ে ঘুমায় ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মায়া ফ্রেশ হয়ে সাবিত এর রুমে যায় ।সাবিত মায়া কে দেখে বলে
সাবিত:আমি জানি তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে ।
মায়া সাবিদ কে থামিয়ে বলল
মায়া:আমি আবিরের একটা জিনিস নিতে এসেছি ।
সাবিত:কী
তখনই মায়া নিজের ডাইরি দেখতে পেল।
মায়া ডাইরি টা নিয়ে বলল
মায়া:এই ডাইরি টা আবিরের কাছে ই থাকার অধিকার ।জানেন ই তো স্ত্রীর সমস্ত জিনিসের উপর শুধু স্বামীর অধিকার থাকে। অন্য কারো না ।
এই কথা বলে মায়া চলে যায় ।রুমে গিয়ে দেখে আবির উঠে পড়েছে। মায়ার হাতে ডাইরি দেখে ।
মায়া আবিরকে বলে
মায়া:আবার লিখা শুরু করব ।এই তুমি আমার পারমিশন ছাড়া পড়বা না ।
আবির একটা হাসি দিয়ে মাথা ঝুলায় ।
সাবিত কয়েকদিন থেকে চলে যায় আর মায়ার সাথে কথা বলে নি। আবির মায়ার অনেক যত্ন নিচ্ছে। মায়া কে কোন কাজ করতে দেয় না ।
একদিন মায়া দরজা খুলে দেখে ছায়া এসেছে। ছায়া মায়া কে বলল
ছায়া:মা পাঠিয়েছে। তোর যদি কিছু লাগে তার জন্য।
ছায়া আর মায়া গল্প করতে লাগল ।ছায়া মায়ার ভালোভাবেই দেখা শুনা করছে ।রাতে আবির মায়া কে বলছে
আবির:মায়া জানো আমার মনে হয় আল্লাহ্ আমাদের একটা মেয়ে দিবে ।
মায়া:ছেলে ও তো দিতে পারে ।
আবির:না। আমার মনে হচ্ছে মেয়ে দিবে ।জানো আমরা আমাদের মেয়ের নাম মিলিয়ে রাখব।
মায়া:তা কীভাবে?
আবির:মায়া আর আবির মিলে মায়াবী ।
মায়া :ভালো তো।
আবির :এখন ঘুমাও।
মায়া:ঠিকাছে।
মায়া আর আবিরের কথা দেয়ালে দাড়িয়ে কেউ শুনছে ,,,,,,,,,,,
চলবে…………..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com