Breaking News

ধর্ষিতা বউ - শেষ পর্ব

আয়াতের বাসা থেকে ফোন পেয়েই আবির ছুটে গেলো হসপিটালে।আবির কে হসপিটালে দেখেই আয়াতের বাবা-মা কান্নায় ভেঙে পরলো।চিন্তায় আবিরের মুখচোখ শুকিয়ে গেছে।আচমকা আবির দেখতে পেলো হসপিটালে পুলিশের সাথে সাথে মিডিয়ার লোকজনও ভীর জমিয়েছে।বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও নিউজপেপারের মিডিয়া কর্মিরা।এটা দেখে আমি আরো খানিকটা ঘাবরে গেলো।কিছুটা কাঁপা কন্ঠেই আয়াতের বাবা কে জিজ্ঞেস করলো
– আঙ্কেল আয়াত কোথায়?ও কেমন আছে?
(আবিরের প্রশ্ন শুনেই আয়াতের বাবা কিছু না বলেই আবিরকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পরলো)
-আঙ্কেল!আমাকে বলুন কি হয়েছে আয়াতের!
(আয়াতের বাবা জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।হসপিটালে অস্থিরতা দেখা দিলো)
আবির এবার পুলিশ অফিসার কে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো
-অফিসার!(আবির)
-জ্বী মিস্টার আবির….
-আয়াতের কি হয়েছে?আপনারা ওকে কোথায় পেলেন!
-আসলে মিস্টার আবির,মিস আয়াতকে রাস্তার একটি গলিতে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিলো…
-অজ্ঞান অবস্থায়!কি হয়েছে আয়াতের!
অফিসার স্পিক আউট!
-মিস আয়াতের শরীরের বাহ্যিক চিহ্ন আর ফরেনসিক রিপোর্ট বলছে মিস আয়াত গণধর্ষনে স্বীকার হয়েছেন।
-whattt!¡!!!অফিসার এসব কি বলছেন আপনি!
-দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি মিস্টার আবির!
এসব শোনার পর আবিরের কাছে সমস্ত পৃথিবীটা যেনো থমকে গেলো।আবিরের নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে।মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ভীতরটা কেউ ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে।তার ভালবাসার ফুলকে একদল নরপশু ছিড়ে খেয়েছে।আবিরের শরীর খারাপ করতে লাগলো।মাথাটা চরকির মত ঘুরছে।ভীষণ যন্ত্রনা হচ্ছে।
এর মধ্যে ডাক্তার সাহেব বেড়িয়ে এলেন…
-ডাক্তার সাহেব!আমার মেয়েটা কেমন আছে ডাক্তার সাহেব(আয়াতের বাবা)
-দেখুন রোগীর প্রচন্ড ব্লাড লস হয়েছে।আর শরীরে ক্ষতও রয়েছে।সেরে উঠতে কিছুদিন সময় লাগবে।সম্পূর্ণ ভাবে সেরে না ওঠা অব্দি আমরা রোগীকে ডিসচার্জ করছিনা।(ডাক্তার)
আবির পাশে থেকে সবটা শুনছিলো।আবিরের ভালবাসা হসপিটালের বেডে শুয়ে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিলো শুধুমাত্র কতকগুলো হিংস্র নরপশুদের কারনে।আবিরের শরীরের রক্ত টগবগ করতে লাগলো।
সেদিন আবির বাড়ি ফিরে গেলো আয়াতের সাথে দেখা করলো নাহ।কয়েকদিনের মধ্যে আয়াত কে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে দিলো।কিন্তু এই কয়েকদিনের মধ্যে আবির একটাবারও আয়াতের সাথে দেখা করতে যায়নি।একটাবার ফোনও করেনি।এভাবে প্রায় ২সপ্তাহ কেটে গেলো না আবিরের কোনো খোজ আছে না আবিরের পরিবারের।
-মা আয়াত(আয়াতের মা)
-হ্যাঁ মা….
-আবির কি তোকে আর ফোন করেনি?
-না মা!
-কি হলো বলত ছেলেটার!না ওর কোনো খোঁজ আছে না ওর পরিবারের!
-বাদ দাও না মা(দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো আয়াত)….তুমি তো জানই মা সমাজে ধর্ষিতা মেয়েদের কি চোখে দেখে।আবিরের আর আবিরের পরিবার আর যেমনই হোক অন্তত একটি ধর্ষিতা বউ চায়না!
-চুপ কর মা এসব বলিসনা….
-আমি চুপ করলেই কি সমাজ মুখ বুজে থাকবে মা?
-(আয়াতের মা মেয়ের কথার উত্তর না দিতে পেরে চুপ করে রইলেন)
এভাবেই কেটে গেলো একটা মাস।আয়াত সমাজের থেকে সবার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।একলা ঘরে আবদ্ধ করে নিয়েছে নিজেকে।সেদিনের সেই নরপশু দের অত্যাচারের কথা সে কিছুতেই ভুলতে পারছিলো না।ধর্ষক নামের সেইসব নরপশুরা নারীর দেহকে ভোগের সামগ্রী মনে করে।নারীরদেহকে শুধুমাত্র মাংস্পিন্ড মনে করে।নারীর চিৎকার,যন্ত্রনায় কাতরানো তাদের গণ্ডারের মত শক্তচামড়া ভেদ করতে পারেনা।নিজের চাহিদা মিটিয়ে জানোয়ার গুলো চলে যায়।নরপশু গুলো এটাও ভাবেনা যে তাদের কয়েক মুহূর্তের আনন্দের জন্য নষ্ট হয়ে যায় একটি মেয়ের সারটা জীবন……
কলিংবেলের শব্দ পাওয়া গেলো।আয়াতের মা দরজা খুলে দিলেন…
-এ কি!বাবা আবির তুমি?!
-জ্বী আন্টি….আয়াত কোথায়?
-আয়াত তো ওর ঘরে বাবা….
-আন্টি আমি ওর সাথে দেখা করতে চাই…
-হ্যাঁ বাবা…ভিতরে এসো..
আয়াত ওর রুমের দরজার পাশে দাড়িয়ে সবটা শুনছিলো।
-আয়াত!!!!
-কেনো এসেছো…(মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো আয়াত)
-কেনো!আসতে পারিনা বুঝি!
-না পারোনা…
-কি বলছো এসব!
-ঠিকি বলছি….বেশ তো ছিলে এতদিন আজ কেনো আসলে?
-অভিমান হয়েছে বুঝি?
-অভিমান করার অধিকারটা বোধ হয় আর নেই..
-কে বলেছে নেই?তোমার না থাকলে আর কার আছে বলো…!
-কি বলতে এসেছো যে বিয়েটা আর করবে না? এটাই তো?আমি জানি কোনো ছেলে কিংবা তার পরিবার ধর্ষিতা বউ চায়না।
-আয়াত চুপ!ভেবেই নিয়েছো যে এতদিন কোনো যোগাযোগ করিনি বলে তোমায় আমি বিয়ে করবোনা? আমার পরিবার তোমায় মেনে নেবেনা?একটাবার তো জানতেও চাইলে না কেনো যোগাযোগ রাখিনি!
-কি আর কারন থাকতে পারে!
-আর বুঝি কারন থাকতে পারেনা!আমার ভালবাসার মানুষটা যাদের জন্য এক নরক যন্ত্রনা সহ্য করছে তাদের কি আমি এমনি এমনি ছেড়ে দেবো?
-মানে!!!….কি করেছো তুমি!!
-সেসব কথা বাদ্দাও….সব কথা জানতে নেই…
-আচ্ছা সমাজ তোমার ধর্ষিতা বউকে মানবে তো!
-সমাজের কটাক্ষর থেকে নিশ্চই আমার ভালবাসা আমার কাছে বেশি মূল্যবান
-কিন্তু…..
-উহু কোনো কিন্তু নাহ…আসলে তুমি ধর্ষিত না সমাজের বিচার দৃষ্টকোণ ধর্ষিত….কয়েক মুহূর্তের শারীরিক প্রশান্তির জন্য যে জানোয়ার গুলো একটা মেয়ের সারাটাজীবনকে নষ্ট করে দেয় তারাও তো এই সমাজেরই অংশ… সমাজ যদি তাদের এই জঘন্য কাজের পরেও মেনে নিতে পারে তাহলে সে সমাজ ব্যবস্থাই ধর্ষিত।
-আবির…..(কান্না ভেজা চোখে আবির কে জড়িয়ে ধরে বললো আয়াত)
-উহু একদম নাহ,একদম কাঁদবেনা।কালকের তারিখ টা মনে আছে তো?
-কি কালকে?
-যাহ ভুলে গেছো!এই যে আব্বু-আম্মু,আমার শ্বশুর আব্বা-শ্বাশুরি আম্মা আমাদের বিয়ের জন্য তারিখ ঠিক করলো সবটা ভুলে গেলে!!!
-opppsss!!!!
-punishment…..
(আবির আর আয়াত তো এক হয়ে গেলো।কিন্তু আমাদের সমাজে নারীরা এখনো নিরাপদ নয়।প্রতিদিন কোথাও না কোথাও নারীরা ধর্ষনে স্বীকার হচ্ছে?।ধর্ষক ধর্ষিতাকে ধর্ষন করে একবার আর সমাজ ধর্ষন করে বারবার।)

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com