Breaking News

অন্যরকম তুই | পর্বঃ- ৩ ও ৪

অনন্তকে অন্যান্য দিনের মতো আজ রাগী লাগছে না।

খুব শান্ত হয়েই বোর্ডে অনন্ত অংক করাচ্ছে৷ হাতে বেন্ডেজ বাঁধা অবস্থাতেই

খুব নিখুঁতভাবে অনন্ত বোর্ডে অংক করাচ্ছে। সব মেয়েরা অনন্তের দিকে অপলক

দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তুু অহনা অনন্তের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।

অহনা শুধু অনন্তের বোর্ডের লেখার দিকে তাকিয়ে আছে। বোর্ডে লেখা শেষ হলে অনন্ত

সবার অংক ঘুরে ঘুরে চেক করছে। অহনা ভেবেছিল অনন্ত আজ তাকে কিছু বলবে না।

অহনাও সবার মতো স্বাভাবিকভাবে অনন্তের বোর্ডে দেওয়া অংক খাতায় লিখছিল।

অহনার হাতের ব্যথা এখনও যায় নি তবুও অহনা ব্যথা হাতে খুব মনোযোগ দিয়েই অংক লিখছিল।

ওড়নাটা বুকের আরেকটু উপরে তুলে দিতি তাহলে আরো ভালো করে সব ছেলেরা উপভোগ করতে পারতো।

এমন বাজে কথা শুনে অহনা চমকে পাশে ঘুরে দেখল অনন্ত তার পাশেই দাড়িয়ে আছে।

অহনার বুঝতে আর বাকি রইল না অনন্তই তাকে এ কথাটা বলেছে।

এদিকে ক্লাসে ইতিমধ্যেই হাসাহাসি শুরু হয়ে গেছে৷ অহনা নিজের বুকের

দিকে তাকিয়ে দেখল সত্যি ওড়নাটা বুকের উপরে উঠে গেছে। লেখতে লেখতে অহনার

খেয়াল ছিল না। তাই কোনোমতে তাড়াতাড়ি ওড়নাটা ঠিক করে পড়ে নিল।

অহনা মুখে কিছু বলল না। কিন্তুু অহনা মনে মনে বলতে লাগল

–এই ফালতু স্যারের কি খেয়ে দেয়ে আর কোনো কাজ নেই! বেটা লুচু

তোর এতদিকে চোখ যায় কেন উফ অসহ্য। লেখতে লেখতে কখন যে

ওড়নাটা উপরে উঠে গিয়েছিল টের পাই নি৷ দুর ভালো লাগে না৷ এই

স্যারটাকে আমার একদম অসহ্য লাগে। ফালতু স্যার একটা।

অনন্ত নিজের ক্লাসের পড়া বুঝিয়ে চলে গেল। অহনার সবগুলো ক্লাস

করার পর যখন অহনা কলেজ থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটছিল। তখনই

কেউ একজন পেছন থেকে অহনাকে ডাক দিতে লাগল
–অহনা… এই অহনা.. দাঁড়া।

অহনার কন্ঠটা চেনা চেনা মনে হলো তাই যখন অহনা পেছনে ফিরল তখন অহনা চমকে উঠল।

এ যে আর কেউ নয় অনন্ত। অহনা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে অনন্তকে বলল
–স্যা স্যা স্যার আ আ আপনি?!!
–তোর হাতটা দেখি তো।

–কেন স্যার! আমার হাত দেখে আপনি কি করবেন?

–আহ্ বেশী কথা বলছিস কেন? হাতটা দেখা বলছি।

–না স্যার আমার হাত দেখতে হবে না। আমি এখন আসি স্যার।

এটা বলেই অহনা চলে যেতে নিলে অনন্ত রাগী কন্ঠে অহনাকে বলল
–তুই কি দাঁড়াবি নাকি কালকে কলেজে কঠিন শাস্তি পাওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করবি?
মুহূর্তেই অহনা নিজের চোখ মুখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবতে থাকে
–না না না এ হতে পারে না! অনেক অপমান অনেক শাস্তি এই দানবটার কাছ থেকে আমি পেয়েছি আর নয়। তার চেয়ে ভালো নিজের হাতটা দেখিয়েই ফেলি।
অহনা পেছন থেকে ফিরে এসে অনন্তকে নিজের বাম হাতটা দেখাল। এটা দেখে অনন্ত খুব রেগে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল

–আমি কি তোকে বাম হাতে মেরেছি যে বাম হাত দেখাচ্ছিস? তোর ডান হাতটা দেখা।
অহনা বাধ্য হয়ে ডান হাত দেখাল। অনন্ত পকেট থেকে একটা মলম বের করে অহনার হাতটা ধরে মলম লাগাতে লাগল। অনন্তের এই কান্ড দেখে অহনা মুহূর্তেই তার চোখ রসগোল্লা করে ফেলল।
–স্যার আপনি রাস্তায় আমার হাত ধরে মলম লাগাচ্ছেন! কেউ যদি এটা দেখে ফেলে তাহলে কি ভাববে স্যার! প্লিজ আমার হাতটা ছাড়ুন আমার হাতে আর ব্যথা নেই।
–তুই একদম চুপ থাক৷ সেদিন রাগটা আমার এতই উঠেছিল যে নিজের উপর কনট্রোল রাখতে পারি নি। আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস অহনা।

অনন্তের কথা শুনে অহনা অবাক থেকে অবাক হচ্ছে। অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–না স্যার আপনি ক্ষমা চেয়ে আমাকে অপরাধী করবেন না। আপনি আমার শিক্ষক তাই আমি ভুল করলে আপনি আমাকে শাস্তি দিতেই পারেন। এতে ক্ষমা করার কিছুই নেই।
–অহনা তুই আমার দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বলছিস কেন? আমি কি দেখতে এতটাই খারাপ?
অনন্তের এসব অদ্ভুত প্রস্নের উত্তর কি দিবে অহনা বুঝতে পারছে না৷ অহনার মুখে কোনো কথা নেই কিন্তুু অহনা মনে মনে ঠিকই বলল
–ইসস শখ কতো! কেন রে তোর দিকে তাকাতে আমার বয়েই গেছে ব্যাটা লুচু। মেয়েরা তো তোর দিকে খালি ক্রাশ খায়। আমি কচুও খাব না হুহ্।
–কিরে কিছু বলছিস না কেন?
–স্যার আমি এখন আসি।

এটা বলেই অহনা অরণ্যের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে চলে গেল।

অনন্ত অহনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

এখনও অনন্ত রাস্তায় দাড়িয়ে আছে। অনন্ত মনে মনে বলল #অন্যরকম তুই

–একবারও তুই জিজ্ঞেস করলি না অহনা আমি কেন হাতটা কাটলাম!

আমাকে তুই এত ঘৃণা করিস!

অহনা বাসায় ফিরে বিশ্রাম নিয়ে তারপর পড়ার টেবিলে পড়তে বসল।

কিন্তুু পড়াতে একদম মনোযোগ দিতে পারছে না অহনা।

অহনা ঠোঁটের কাছে কলম লাগিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগল

–আচ্ছা অনন্ত স্যার এমন কেন? স্যারের কি আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই?

সবসময় আমার পেছনেই লেগে থাকে! আমাকে শাস্তি দিল আবার আমার ব্যথা

হাতে মলম লাগাল! ব্যাপারটা আমার মোটেও ভালো লাগছে না। স্যার নিজেকে ভাবে টা কি?

যখন মন চায় তখন অপমান করবে, যখন মন চায় তখন শাস্তি দিবে আবার যখন

মন চায় তখন মলম লাগাবে! একদম অসহ্যকর। এই দানব স্যারটাকে তো মাঝে মাঝে

মন চায় গলা টিপে মেরে ফেলি হুহ্। না না না আমি এসব ভাবা বন্ধ করে

পড়ায় মনোযোগ দেই নাহলে দানবটা আবার কালকে আমাকে পড়া না পারার

অজুহাতে শাস্তি দিবে।
অহনা খুব মন দিয়ে পড়ল। পড়তে পড়তে যখন খুব রাত হয়ে যায় তখন অহনা

ঘুমিয়ে পড়ল। পরেরদিন সকালে উঠে অহনা কলেজ গেল। তিনটা ক্লাস অহনা

মনোযোগ সহকারে করল। এবার চতুর্থ ক্লাস মানে অনন্তের ক্লাস। অহনা এবার

ভয় পেতে লাগল। অহনা মনে মনে বলতে লাগল

–অংক তো খুব ভালো করেই করেছিলাম কিন্তুু এই লুচু দানবটা যদি আবার

আমাকে বোর্ডে অংক করতে বলে তখন যদি আমি ভয়ে ভুলে যাই।

না না না আমি অনেকবার অংক চর্চা করেছি। কিছুতেই ভুলব না আমি।

অনন্ত ক্লাসে চলে আসল। সবাই অনন্ত স্যারকে দাঁড়িয়ে সালাম দিল।

অহনাও দাড়িয়ে সালাম দিল। তারপর সবাই নিজের সিটে বসে পড়ল।

অনন্ত ক্লাসে এসেই বই নিয়ে বোর্ডে অংক করাতে লাগল। এটা দেখে অহনা

তো মহা খুশি। অহনা মনে মনে বলতে লাগল

–যাক বাবা! স্যার আজ আমাকে পড়া ধরবে না! ভাবতেই মনটা খুশি খুশি লাগছে।

আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। ইয়াহুু !
কিন্তুু অহনার এই খুশি বেশিক্ষণ থাকল না। অহনার ভাবনায় এক বালতি জল

দিয়ে অনন্ত বোর্ডে অংক করা শেষ করে অহনার কাছে

এসে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল

–অহনা আজ তুই পড়া শিখে এসেছিস? অংক করতে দিলে পারবি তো?

অনন্তের কথা শুনে অহনা আকাশ থেকে পড়ল। ভয়ে বসা থেকে উঠে

দাড়িয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–জ্বি স্যার পা.. পা.. পারব।

–সত্যি তুই অংক করতে পারবি তো অহনা? যদি তুই অংক করতে না

পারিস তাহলে তোর কপালে যে শনি, রবি, সোম, মঙ্গল সব নাচছে তা কি তুই বুঝতে পারছিস?
–জ্বি স্যা.. স্যা.. স্যার ।

–তাহলে যা বোর্ডে গিয়ে তৃতীয় অধ্যায়ের ৫ নং অংকটা ঝটপট করে ফেল দেখি।

–স্যার বোর্ডে অংকটা না লিখে আমি অংকটা খাতায় লিখি?

অহনার কথা শুনে অনন্ত রাগী দৃষ্টিতে অহনার দিকে তাকাল।

অহনা অনন্তের ভয়ংকর দৃষ্টি দেখে ভয়ে চুপসে গেল। অনন্ত অহনাকে রাগী গলায় বলল

–তুই কি আমার কথার অবাধ্য হচ্ছিস অহনা? তুই জানিস এর ফল তোর জন্য কি হতে পারে?

–না না না স্যার৷ আমি এক্ষুণি বোর্ডে অংকটা করছি।

অহনা বাধ্য হয়েই হোয়াইট বোর্ডে অংক করতে গেল। ভয়ে অহনার হাত পা

ঠান্ডা হয়ে আসছে। অহনা হাতে মার্কার নিল। কিন্তুু যখন অহনা অংক করতে

নিল তখন অহনার অংক আর মনে পড়ল না। অহনার মাথার মস্তিস্ক আর কাজ করল না।

এদিকে অনন্ত অহনার পাশেই দাড়িয়ে আছে৷

–কি হলো অহনা অংক করছিস না কেন? এখন নিশ্চয়ই তুই বলবি যে ভুলে গেছিস।

স্যার সত্যি আমি অংকটা ভুলে গেছি। কিন্তুু স্যার আপনি বিশ্বাস করুন

আমি কাল সারাদিন অংক করেছি। কিন্তুু এখন মনে পড়ছে না।

অহনার কথা শুনে ক্লাসের ছেলে মেয়েরা হাসাহাসি শুরু করে দিয়েছে।

এদিকে অনন্ত রাগী দৃষ্টিতে অহনার দিকে তাকিয়ে আছে। অনন্ত রাগী দৃষ্টিতে চিতকার

করে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল

–আমাকে কি তুই বোকা মনে করিস অহনা? তুই বলবি আর আমি বিশ্বাস করে নিব।

তুই ক্লাস থেকে এখনি বেরিয়ে যা এবং খালি পায়ে কান ধরে ২০ বার কলেজ চক্কর দিয়ে আসবি।

অনন্তের কথা শুনে অহনা স্তব্ধ হয়ে গেল। অহনার চোখের পানি টলমল করতে লাগল।

অহনা অনন্তকে অনুরোধ করে বলল

–স্যার আপনি আমাকে যা শাস্তি দিবেন আমি মাথা পেতে নিব।

কিন্তুু এমন শাস্তি আমাকে দিবেন না স্যার প্লিজ? এইটুকু দয়া করুন স্যার।

অহনার চোখের পানি অনন্তের মন গলাতে পারল না।

অনন্ত খুব রাগী গলায় অহনাকে বলল

.

তুই কি আমার আদেশ মানবি নাকি আমি তোকে কলেজ থেকে চিরতরে বের করার ব্যবস্থা নিব?

অনন্তের এমন কথায় অহনার বুক ফেটে কান্না আসছে। ক্লাসের সব ছেলে মেয়েরা

অহনার কস্ট উপভোগ করছে। অহনা বাধ্য হয়েই ক্লাস থেকে বেরিয়ে খালি পায়ে

কান ধরে ২০ বার কলেজ চক্কর দিতে লাগল। কান ধরে কলেজ চক্কর দেওয়ার মুহূর্তে

অহনা খুব কান্না করেছে। খালি পায়ে হাঁটার কারণে ইটের ছোট ছোট টুকরো অহনার

পায়ে লেগেছে৷ অহনা অনেক ব্যথাও পেয়েছে এবং পা দিয়ে রক্তও পড়েছে ।

চোখ দিয়ে অনবরত জল ফেলেছে অহনা। অন্যান্য স্যাররা অহনাকে এ অবস্থায় দেখে

খারাপ লাগলেও অনন্তকে কিছু বলতে পারে নি। কারণ অনন্তের বাবার অনেক ক্ষমতা।

তাই কোনো স্যার সাহস করে অনন্তকে কিছু বলতে পারে নি। অহনা ধীরে ধীরে রক্তমাখা

পায়ে ক্লাসে গিয়ে ব্যাগটা নিয়েই সোজা কলেজ থেকে বের হয়ে রিকশা নিয়ে বাসায় চলে গেল।

বাসায় গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে অহনা প্রচুর কান্না করল। অহনার মা বাবা

কিছু জানতে চাইলে অহনা তাদের বলে রিকশা থেকে পড়ে ব্যথা পেয়েছে। অনন্তের কঠিন

শাস্তি অহনা আর পেতে চায় না। তাই অহনা তার মা বাবাকে কিছু বলে নি।

অহনা মনে মনে বলতে লাগল

.

স্যার আপনি আজকে আমাকে যেভাবে অপমান করলেন, যেভাবে শাস্তি দিলেন তা

আমি কোনোদিনও ভুলতে পারব না৷ কোনোদিনও না। আমি আপনাকে

কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারব না।
অহনা দুই দিন কলেজ গেল না। অহনা তার রক্তাক্ত পায়ে দুইদিন মলম

লাগালো কিন্তুু তবুও ব্যথা কমল না। দুইদিন পর অহনা ব্যথা পা নিয়েই কলেজ গেল এবং

ক্লাস করতে লাগল। কিন্তুু অহনার মনটা খুব খারাপ। চতুর্থ ক্লাসে অনন্ত আসল।

অনন্তকে দেখে অহনার খুব রাগ হচ্ছে।সবাই অনন্তকে দেখে দাঁড়িয়ে সালাম করল।

অহনা দাঁড়াতে চায় নি কিন্তুু তবুও সবাই দাড়িয়েছে দেখে অহনা দাঁড়াল।

কিন্তুু একি দেখছে অহনা! অনন্তের দুই পায়ে বেন্ডেজ। বেন্ডেজের উপর রক্ত

জমাট বাঁধা। অনন্তকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে হাঁটতে অনন্তের ভীষণ কস্ট হচ্ছে।

অহনা অনন্তের এ অবস্থা দেখে অবাক হয়ে মনে মনে বলতে লাগল

–এই দানবটার আগে হাত কেটেছিল আবার এখন দেখি দুই পায়ে বেন্ডেজ!

তারমানে দানবটার দুই পায়েই আঘাত পেয়েছে। কিন্তুু দানব স্যারটার পা কাটলো কিভাবে?

#চলবে

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com