সবশেষে আমি নিশ্চুপ!!
বিয়ের একমাস পরেই সে আমার গায়ে হাত তোলে। এবং গত দু'মাস ২৩ দিনের মধ্যে সে তিন থেকে চারবার আমার উপর হাত তুলেছে।
বিয়ের প্রায় একমাস পর প্রথম একদিন সে আমার উপর হাত তোলে এবং আমাকে ঐদিন লাথিও দেয়। ঐ দিন সে একটু পর আমাকে এসে বলতে থাকে যে, "আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারি নি। রাগের চোটে ওরকম করে ফেলেছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আসলে তুমি অনেক ভাল, আর আমি এত ভালোর উপযুক্ত নই।"
আমি তখন মন খারাপ না করে উল্টো তাকে বলতে লাগলাম, আচ্ছা যা হবার হয়ে গেছে, এরকম বলতে নেই। আচ্ছা কোন সমস্যা নেই।
আমি মনে মনে ভাবলাম যে, রাগের চোটে ভুলেই হয়তো ওরকম করে ফেলেছে। আর কখনো হয়তো করবে না।
কিন্তু কিছুদিন পর আবার সে আমার উপর হাত তুললো। এর কিছুদিন পর আবার সে হাত তুললো। এই তৃতীয়বারের পর আমি আর বিষয়টা মেনে নিতে পারলাম না। বাধ্য হয়ে ফোন করে আব্বুকে জানালাম।
এরপর গত ১৯ এপ্রিল (২০১৯ইং) আব্বু ও খালামণি আমাকে নিয়ে আসার জন্য সেখানে যায়। আর তখন আমি সেখানে থাকার কোন ভরসাই পাচ্ছিলাম না। কেননা অন্যান্য সবাই থাকতে বললেও সে কিছুই বলছিল না। আমি মনে মনে তার একটাবার বলার অপেক্ষা করছিলাম। সে যদি একটাবারও বলত যে, "তুমি যেও না, থাকো" আমি আর চলে আসতাম না।
আসার সময় শ্বাশুরী খুব বোঝাচ্ছিলেন যে, তুমি যদি চলে যাও আমার থাকতে কষ্ট হবে। তুমি ওর কাছে না থাকে আমার কাছে নাহয় থেকে যাও, ও যতদিন ভাল হবে না ওর কাছে তোমার যেতে হবে না।
আর তুমি চলে যাবার পর যদি তোমাদের মাঝে 'বিবাহবিচ্ছেদ' হয়ে যায়, তাহলে দুজনই তো আবার অন্য কোথাও না কোথাও বিবাহ করবে।
তখন তোমার হয়তো সারাজীবন এই কথা শুনতে হবে যে, "তুমি কতটা ভাল জানা আছে, তাই তো আগের স্বামীর ঘরে থাকতে পারো নি।
আর তাকেও হয়তো সারাজীবন এই কথা শোনা লাগতে পারে যে, "আপনি কেমন দেখা আছে, তাই তো আগের বউ ঘর ছেড়ে চলে গেছে। " তাই এসবকিছু লক্ষ্য করে তোমার থেকে যাওয়াটাই ভাল হবে।
আর সে তো তখন আমার থাকার জন্য কিছু বলেছেই না, বরং উল্টো বলছে যে, " ও না থাকতে চাইলে ওকে বুঝিয়ে রাখার দরকার নেই। চলে যেতে চাইলে ও চলে যাক।" পরে আমি বাবার সাথে চলে আসি।
চলে আসার পর প্রথমরাতে তো আর ঘুম আসে না, আমি সারারাত জেগে থেকে রাত তিনটার দিকে ওনাকে ফোন দিলাম, উনি ফোন কেটে দিলেন।
এরপর ১৯ তারিখ থেকে নিয়ে আজ ২৬ তারিখ পর্যন্ত সে একবারও ফোন দেয় নি।
আবার গতরাতে আমি তাকে ফোন দিলাম। প্রায় ২৫-৩০ বার ফোন দেবার পর একবার রিসিভ করলেন। রিসিভ করে বললেন যে, কিছু বলার থাকলে বল্। তোর মত মেয়ের সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।
আমি বললাম, আপনি কি তাহলে আমাকে ডিভোর্স দিবেন নাকি এভাবে ঝুলিয়ে রাখবেন??
--আমার যদি কোনদিন মনেহয় যে, ডিভোর্স দেয়া দরকার সেদিন দিব।
--আচ্ছা আমার ফ্যামিলি যদি এখন আমার পক্ষ থেকে আপনাকে ডিভোর্স দেয় তো এতে কি আপনার কোন সমস্যা আছে?
--নাহ নাই, এটাই তো ভাল হয়।
এই হল গতরাতে তার সাথে আমার কথাবার্তা। কথা বলার পর মা জানতে চাইলেন কী বললো, আমি ঘটনা শোনালাম।
বাবা তো এখন কেস করে দিতে চাচ্ছে। আমি বাবাকে নিষেধ করলাম যে, ওসবে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কেননা ও সরকারী চাকরী করে। কেস করে দিলে সর্বপ্রথম ওর চাকরীতে ঝামেলা হবে।
আর কেসের কথা শুনে উল্টা ও বলছে যে, কেস করলে করুক। এতে কী এমন ক্ষতি হবে আমার! বেশি থেকে বেশি আমার চাকরীটা চলে যাবে। এরপর আমাকে কিছুদিন জেলে থাকতে হবে। জেল থেকে বের হয়ে কি আর কোন কিছু করে খেতে পারব না আমি??
প্রতিবার ও আমাকে যখনই মারত আমার চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি ঝরত। কিন্তু আমার মুখ থেকে কোন আওয়াজ বের হত না। কেননা আমি চাইতাম না যে, আমার কান্নার আওয়াজের কারণে বাড়ির কেউ বুঝতে পারুক যে এদের মাঝে কিছু হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওর চিল্লাচিল্লি আর রাগারাগির শব্দেই লোকজন জড়ো হয়ে যেত।
আমার বাসায় থাকাবস্থায় আমাকে কখনো চুলোয় রান্না করতে হয় নি। টুকটাক যা করতাম গ্যাসেই করতাম। কিন্তু ওদের বাসায় জয়েন পরিবার। প্রায় দশবারো জন খাওয়ার লোক। তাই ওত লোকের রান্না গ্যাসে সম্ভব হয় না। চুলোয় রান্না করতে হয়। সবার খাবার আমার একার রান্না করতে হয়। আবার অনেক সময় সকালের খাবার রান্না করার জন্য আমাকে ভোর সারে চারটায়ও রান্নাঘরে যেতে হয়।
বিয়ের আগে পড়াশুনা করাবে বলে কত কথাই না দিয়েছিল, বিয়ের কিছুদিন পর বলছে যে, তোমার ইংলিস সাবজেক্টটা পরিবর্তন করে তুমি বাংলা নাও। আমি তো এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। শেষে অনেক কষ্ট পেয়েও শুধু হাজবেন্ড এর কথা হিসেবে বাধ্য হয়ে মেনে নিলাম। এর কিছুদিন পর সে বলছে যে, তোমার আর কোন পড়াশুনাই করতে হবে না। পড়াশুনা পুরা বন্ধ। অথচ বিয়ের আগে প্রাইভেট দিয়ে পড়াবে বলেও কথা দিয়েছিল।
আমি তো ওর কোন বিষয়ে ত্রুটি করার চেষ্টা করি নি। আমি ওর পাঞ্জাবিটা পর্যন্ত ড্রয়ার থেকে বের করে রেখে দিতাম, যেন ওর নিজের কষ্ট করে বের করতে না হয়। খাওয়ার সময় পানিটা পর্যন্ত ঢেলে খেতে দিতাম না।
এখন বাবা বলছে যে, তুই বাসায় থেকে ভাল করে পড়াশুনা কর। ভার্সিটিতে এ্যডমিশন নে। ভাল চাকরী করার চিন্তাভাবনা কর। পরে বিয়ে দিব তোকে।
মনে মনে বলি, আব্বু যদি এই বুঝটা তখন একটু বুঝতো!! তখন তো মাতাল হয়ে আমাকে বিয়ে দিল। কেননা ছেলে সরকারী কলেজের প্রফেসর। অথচ তখন আমি বিয়ে না করে আরেকটু পড়াশুনার জন্য কী আকুতিটাই না করেছিলাম!! জীবনে একটা দাগ লেগে যাবার পর এখন ওরা এরকম বলছে।
মা বলছে, তোর জীবনটাকে তো আমরাই শেষ করে দিলাম।
সবশেষে আমি নিশ্চুপ!!
বিঃদ্রঃ পরিচিত কারো জীবনের বাস্তবতা থেকে। গল্পটি পুরোটাই সত্য।
খাতায় লিখে রেখেছিলাম ২৭ এপ্রিল ২০১৯ইং। আজ খাতা থেকে ফেবুতে তুললাম।
----আব্দুল্লাহ আওন
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com