গল্পঃ সন্দেহ । লিখা- তন্ময় আহসান
মিরা অফিস থেকে এসেছে মাত্র। গায়ে একটা লং ড্রেস জড়ানো। ওড়নাটা ফেলে দিল সোফায়। তখনই কাব্য এসে পিছন থেকে জরিয়ে ধরল। মিরা কেপে উঠল,
– উম, তোমার দুষ্টুমি আরম্ভ হয়ে গেলো। [ কাব্যকে উদ্দেশ্য করে বলল ] কাব্য স্মেলট নিতে লাগল মিরা শরীর থেকে। ভ্রু কুঁচকে বলল,
– তোমার শরীর থেকে জেন্টস পারফিউম এর গন্ধ আসছে কেনো?
মিরা অজানা ভয়ে কেপে উঠল। বুক ধুকপুক ধুকপুক করতে লাগল। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো। কাব্য কিছু টের পেলো না তো?
– কি কি বলছ এ এসব? জেন্টস পারফিউম আসবে কোথা থেকে?
[ তুতলিয়ে বলল ] – সেটা তো আমিও ভাবছি…।
মিরা ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে রয়েছে। কাব্য যদি জেনে যায় তাহলে…। না না জানতে দেওয়া যাবে না। মিরা ঘুরে কাব্যের কাধে হাত রাখল। কাব্যের হাত মিরার কোমড়ের উপর। মিরা ওর মুখ এগিয়ে নিল কাব্যের নাকে নাক ঘসল। কপালে কপাল টেকিয়ে বলল,
– খুব ক্লান্ত লাগছে। আজ অফিসে কাজের খুব চাপ ছিল। আর তুমি এখন শুরু করলে ফাইজলামু।
– ওকে, ওকে যাও ফ্রেস হয়ে নাও।
কাব্য মিরাকে ছেড়ে দিচ্ছিল। মিরা টান মেরে কাব্যকে আবার কাছে আনল।
– ভালো লাগছে না।
[মুখ গোমড়া করে বলল ] – কি?
– তোমাকে ছাড়তে আর ফ্রেস হতেও…।
– উহু, এতো সময় তো ছাড়ানোর জন্য কতকিছু করছিলে। এখন কি হল?
– ছাড়ানোর চেষ্টা করলে ছাড়তে হবে বুঝি? কিছু বুঝনা নাকি?
[ অভিমান করে বলল ] – ওকে ওকে, আজ আর ছাড়ছি না।
কাব্য ওর মুখ মিরার কাধে নিয়ে গেল। ঘাড়ে মুখ ঘসতে লাগল। মিরা চোখ বন্ধ করে নিল। কাব্যের সন্দেহ কিছুটা দূর হয়েছে বোধ হয়।
– উফফ, আবার আরম্ভ। ছাড়ো তো ফ্রেস হতে হবে তো।
[ কাব্যকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলল ] – এই না বললে, তোমাকে যেন না ছাড়ি। আর এই আবার বলছ ছেড়ে দিতে। আজব তো… [ নিজের মাথা হাত বুলাতে বুলাতে বলল ] – তো…গাধা..
বলে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল কাব্যের কাছে থেকে। ওয়াসরুমের দিকে গেল। কাপড়-চোপড় নিয়ে গেলো শাওয়ার নেয়ার জন্য। কাব্য কিছুই বুঝতে পারল না। এই বলে এক কথা পরক্ষনে বলে আরেক কথা। আর গাধা বলল কেনো? কি জানি। কাব্য বারান্ধায় যেতে যেতে গান ধরল,
” মেয়েদের মন বোঝা নয়রে নয় সোজা,
মেয়েদের মন বোঝা নয়রে নয় সোজা। ”
আসলেই.. মেয়েদের মন বোঝা ওতোটাও সোজা না। ওয়াসরুম থেকে মিরা কাব্যের গান শুনছে আর হাসছে।
– পাগল একটা…।
[ মুচকি হেসে বলল ] তবুও মিরার মন খচখচ করছে। কাব্য যদি টের পেয়ে যায় যে, ওর আকাশের সাথে…। তাহলে, কাব্য তুলকালাম বাধিয়ে দিবে। কাব্য বারান্ধায় চেয়ারে বসে মোবাইল টিপছে। আর মিরাকে নিয়ে ভাবছে। মিরা ইদানীং কেমন যেন হয়ে গেছে? মনে হয় আমার কাছে আসলে অপরাধবোধে ভোগে। এরকম করে কেনো? আগে তো এরকম করত না। মিরা আমার কিছু লুকুচ্ছে।
– কি ভাবছ?
মিরা চুলে টাওয়াল ঠিক করতে করতে বলল,
– ভাবছি, তোমাকে এখনি জরিয়ে ধরি।
– জরিয়ে ধরাধরি পরে। আগে খেতে চল।
– হুম, চল।
টেবিলে খেতে বসল কাব্য আর মিরা। মিরা কি যেন ভাবছে?
– মিরা।
– হুম। [ অন্যমনস্ক হয়ে ] – কি ব্যাপার? খাচ্ছো না কেনো? কি ভাবছো? [ ভ্রু কুচকে বলল ] – না কই কি কিছু না তো। [ তুতলাতে তুতলাতে বলল ] – তাহলে খাচ্ছো না যে?
– হ্যা, হ্যা খাচ্ছি তো।
[ নিচের দিকে তাকিয়ে বলল ] মিরার হাবভাব কাব্যের ভালো ঠেকছে না। কি হয়েছে মিরার?
– তোমার কি হয়েছে বলো তো? [ প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাল মিরার দিকে ] মিরা চোখ তুলে তাকাল কাব্যের দিকে। মিরা ভাবে, কাব্য বুঝে নেয় কি করে আমাকে? এতোটাই ভালোবাসে ও আমাকে। কাব্য গিয়ে মিরার পাশে বসল।
– Any Problem? বল আমাকে।
– না, কিছু না। আসলে শরীর খারাপ লাগছে। ভালো লাগছে না।
– ওও, আগে বলবে তো। দেখি জ্বর আসল নাকি?
কপালে হাত দিয়ে দেখল। সামান্য জ্বর জ্বর লাগছে।
– এই জন্যই তো খারাপ লাগছে। জ্বর বাধিয়ে ফেলেছো।
[ রাগী কন্ঠে বলল ] খাবারের প্লেটটা হাতে নিল,
– দেখি হা করো।
মিরা হা করল। কাব্য খাইয়ে দিতে লাগল। মিরা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কাব্যের দিকে। খাওয়া শেষ মিরার হাত ধুইয়ে নিজে হাত ধুলো। মুখ মুছে দিল মিরার। মিরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কাব্যের দিকে। প্রার্থনা করছে এই সময়টা যেন এখানেই স্তব্ধ হয়ে যায়। এখানেই যেন থেমে যায়।
– এভাবে কি দেখছ? [কাব্য] – কিছু না।
– তাহলে।
জরিয়ে ধরল কাব্যকে। কাব্য বুঝে উঠতে পারল না। কাব্যও জরিয়ে ধরে মিরার মাথায় হাত বুলাতে লাগল। মিরার কান্না পাচ্ছে। কিন্তু, পারছে না। কেনো যে সেদিন ভুলটা করল। এখন নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন, আমি ওকে ঠকাচ্ছি।কাব্য মিরাকে কোলে তুলে নিলো,
– রুমে চলো। ডাক্তার আঙ্কেল কে ফোন করে আসতে বলি।
মিরা কাব্যের গলা জরিয়ে ধরতে ধরতে বলল,
– সামান্য জ্বরই তো। কমে যাবে।
– চুপ চলো।
কাব্য মিরাকে নিয়ে বেডরুমে গেলো। শুইয়ে দিয়ে ডাক্তার আঙ্কেলকে ফোন করল। উনি এসে চেক করে ঔষধ দিয়ে চলে গেলেন। কাব্য মিরাকে ঐষধ খাইয়ে শুইয়ে দিল। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
– ঘুমিয়ে পড়ো এখন।
মিরা চোখ বুজে নিল। কাব্য এতোটা ভালোবাসে আমাকে। কেনো? কি আছে আমার মাঝে? কাব্য তো আমাকে চাকরি করতে মানা করেছিল। তবুও আমি চাকরিটা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলাম। যার জন্য কাব্য চাকরি করার অনুমুতি দিয়েছিল। ফল স্বরুপ এখন সেটা ভোগ করতে হচ্ছে।
– না ঘুমিয়ে কি চিন্তা করছো? [কাব্য] উফফ, কাব্যও না। চোখ বুজে ভাবছি তবুও বুঝে গেছে যে, ঘুমুই নি।
– উম, ঘুমাচ্ছি তো।
কাব্য মিরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। মিরার চোখে ঘুম এসে পড়েছে। ঘুমিয়েও পড়ল। কাব্যেরও চোখ লেগে আসছিল। ঘুম ভেঙে গেল ফোনের আওয়াজে। মিরার ফোন এসেছে। কাব্য ভাবল, মিরাকে ডাকবে। কিন্তু, ডাকল না। ফোন হাতে নিয়ে দেখল মিরার বস আকাশের ফোন। ফোন রিসিভ করল,
– হ্যালো।
– হ্যালো, কে বলছেন?
– আমি মিরার হাসব্যান্ড কাব্য।
– ওও, কেমন আছেন?
– ভালো।
– আচ্ছা, মিরা কোথায়?
– ওও তো ঘুমিয়ে আছে। কোনো জরুরী দরকার নাকি?
– নাহ, ঘুম থেকে উঠলে বলবেন আমি ফোন করেছি।
– ওকে।
ফোন কেটে দিল। কাব্য ফ্রেস হয়ে আসল। মিরার মোবাইলে একটা মেসেজের উপর চোখ পড়ল। মিরা তখনও ঘুমিয়েই আছে। ফোন হাতে নিয়ে দেখল আকাশের মেসেজ। ওপেন করে দেখল,
” কাল বিকেলে লেকের পাড়ে এসে দেখা করো। ”
কাব্য ভ্রু কুচকালো। কাল তো ছুটির দিন। তাহলে আকাশ মিরাকে লেকের পাড়ে কেনো ডাকছে?
.
.
চলবে………………
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com