অন্যরকম তুই | পর্বঃ ৫ ও ৬
অনন্তের পায়ের এ অবস্থা দেখে অহনা কিছুটা কৌতুহল হয়ে পাশের মেয়েটিকে জিজ্ঞেস
করতে চেয়েছিল কিন্তুু অনন্তের দেওয়া ভয়ানক শাস্তির কথা মনে পড়তেই অহনা আর কাউকে কিছু
জিজ্ঞেস করল না। অহনা মনে মনে বলল
–এই দানব স্যারের যা মন চায় তাই হোক তাতে আমার কি? এসব ফালতু স্যার মরে যাক।
বেশ হয়েছে পায়ে আঘাত পেয়েছে। এই বদমাশ স্যারটার জন্যই আমার পায়ে ব্যথা পেয়েছিলাম।
এবার বুঝ অন্যকে কস্ট দিলে কেমন লাগে হুহ্।
আজকে অনন্তকে দেখতে একটুও রাগী লাগছে না। অনন্ত তার বেন্ডেজ হাত পা নিয়েই
বোর্ডে অংক করাচ্ছে। অহনার এই বেন্ডেজ ওয়ালা টিচারকে দেখে মনে হচ্ছে
এ কোনো সাদা ভালুক। অহনা অনন্তের ক্লাসের অংক খাতায় করতে লাগল।
অনন্তের ক্লাস যখন প্রায় শেষের দিকে তখন অহনা মনে মনে বলতে লাগল
.
আজকে এই দানব, শয়তান, বদমাশ, লুচু স্যারটা কি আমাকে শাস্তি দিবে?
দেখে তো মনে হচ্ছে না আজ আমাকে শাস্তি দিবে। কিন্তুু তাও আমার মনের মধ্যে সন্দেহ
বিরাজ করছে। এই স্যার কলেজে আমার মান সম্মান বিন্দু মাত্র রাখল না।
সব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে।
অনন্তের ক্লাস শেষ। অনন্ত যখন ক্লাস থেকে যেতে নিল তখন অহনা তো মহাখুশি৷
কিন্তুু অহনাকে অবাক করে অনন্ত ফিরে এসে অহনার কাছে এসে অহনাকে বলল
–তুই আজ ছুটির পর একা কলেজের সব ক্লাসরুম ঝাড়ু দিবি। কোনো রুমে যেন একটুও
নোংরা না থাকে। বুঝতে পেরেছিস? যদি কোনো রুমে একটু পরিমাণ নোংরা
আমি পাই তাহলে তোর অবস্থা কি হবে তুই নিশ্চয় বুঝতে পারছিস অহনা?
অনন্তের কথা শুনে অহনা অবাক।
এর থেকেও কঠিন শাস্তি অহনা পেয়েছে কিন্তুু অনন্তের এই শাস্তির কথা
শুনে অহনা মনে মনে বলল
শেষে কিনা আমি ঝাড়ুওয়ালি হবো! তাও কিনা কলেজের সব ক্লাসের ঝাড়ুওয়ালি!
সবার সামনে এত বড় অপমান করল আমাকে এই ফালতু স্যারটা।
এই স্যারটা আমার সাথে এমন করছে কেন?
কি হলো উত্তর দিচ্ছিস না কেন?
ইয়ে মানে স্যার আমি একা কলেজের সব ক্লাসরুম ঝাড়ু দিব?
আমার সাথে আর কেউ ঝাড়ু দিবে না?
আমি একা কি করে এতগুলো ক্লাস ঝাড়ু দিব স্যার?
তোর সাথে আর কেউ ঝাড়ু দিবে না। তুই একাই ঝাড়ু দিবি।
আমার সাথে বেশি কথা বাড়াবাড়ি করবি তো কঠিন শাস্তি ভোগ করবি তুই৷
অহনার এখন ইচ্ছে করছে এই স্যারকে গুলি করে মারতে কিন্তুু কি
আর করার ক্লাসরুম পরিস্কার না করলে যে অহনার কপালে আরও ভয়ংকর শাস্তি
থাকবে সেটা অহনা ভালো করেই বুঝতে পারছে।
প্রত্যেকটা স্যারের ক্লাস অহনা মনোযোগ সহকারে করল।
এবার ছুটি মানে সবাই বাসায় চলে যাবে কিন্তুু অহনা যেতে পারবে না।
কারণ অনন্ত অহনাকে ছুটির পর কলেজের সব ক্লাসরুম ঝাড়ু দিতে বলেছে।
অহনাও বাধ্য হয়ে একটা ঝাড়ু নিয়ে সবার আগে নিজের ক্লাসরুমটা ঝাড়ু দিল।
একেরপর এক সব ক্লাসরুম অহনা ঝাড়ু দিতে লাগল। অহনা হাঁপিয়ে যাচ্ছে।
অহনার শরীর থেকে বিন্দু বিন্দু ঘাম টুপ টুপ করে ঝরে পড়ছে। এবার অহনা যে
ক্লাসরুমটা ঝাড়ু দিবে সেটা হলো ঘন অন্ধকার ক্লাসরুম৷ অহনা ভীষণ ভয় পেতে
লাগল। অহনা মনে মনে বলল
.
–এই ক্লাসটায় কোনো স্যার পড়ায় বলে তো মনে হয় না৷ কি ভয়ানক অন্ধকার!
আমি এমনিতেও অন্ধকারে ভয় পাই তার উপর এই ক্লাস ঝাড়ু দিব কি করে!
কিন্তুু দানব স্যারটা বলেছিল কলেজের একটা ক্লাসও যেন বাদ না থাকে।
উফ কি আর করার ক্লাসটায় ঢুকতে তো হবেই৷
আমার যে আর কিছু করার নেই৷ নাহলে যে শাস্তি পেতে হবে
অহনা হাতে ঝাড়ুটা নিয়ে এক পা দু পা করে ক্লাসরুমটায় প্রবেশ করল।
ক্লাসরুমে সব ভাঙা বেঞ্চ রাখা। দেয়ালে একটা ভাঙা ব্লাকবোর্ড। অহনা
মনে একটু সাহস নিয়ে ঝাড়ুটা নিয়ে ক্লাসরুমটা ঝাড়ু দিতে লাগল। ক্লাসরুমটায়
এতটাই ধুলাবালি যে ঝাড়ু দেওয়ার সময় অহনার ভীষণ কাশি পাচ্ছে। হঠাৎ ক্লাসরুমটার দরজাটা
কেউ ঠাস করে বন্ধ করে দিল৷ অহনা বুঝতে পারছে ক্লাসরুমের ভিতরে
কারও আগমন ঘটেছে। অহনা ভয়ে ভয়ে বলতে লাগল
— ক.. ক.. কে ওখানে?
অহনা কোনো সাড়াশব্দ পেল না। কিন্তুু পায়ের শব্দ অহনা ঠিকই শুনতে পাচ্ছে।
পায়ের শব্দটা ধীরে ধীরে অহনার কাছেই আসছে।
অহনা ভয়ে ভয়ে বলল
–কে ওখানে? বলুন না? আমার যে খুব ভয় লাগছে। এমনিতেও অন্ধকারে আমি খুব ভয় পাই।
হঠাৎ অহনার দু বাহু ধরে টেনে কেউ দেয়ালে চেপে ধরল। অহনা ভয়ে কেঁপে উঠল।
অহনা আ করে চিতকার দিতে নিলে কেউ ওর মুখটা চেপে ধরল।
তারপর অহনার মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলতে লাগল
–অহনা তুই চুপ থাক। একদম চিল্লাচিল্লি করবি না।
আমাকে তুই চিনতে পারছিস না অহনা?
অহনার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। এই কন্ঠটা অহনার খুব চেনা।
অহনা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
–অনন্ত স্যার আপনি?
–হ্যা আমি। তোর অনন্ত স্যার।
ঐদিকে তীব্র বাতাসে ক্লাসরুমের একটা জানালা খুলে যায়। এর ফলে বাইরের আলো
ক্লাসরুমের ভিতরে আসতে লাগল। পুরো রুমটা একটু আলোকিত হলো। তার
সাথে বাইরের তীব্র আলো অনন্তের মুখে পড়ল। অহনা তো অনন্তকে দেখতে
পেয়ে ভয়ে কেঁপে যায়। অহনার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। অহনা কাঁপা
কাঁপা কন্ঠে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–স্যার আমার হাতটা ছেড়ে দিন প্লিজ। আমার খুব ব্যথা লাগছে।
–তোর তো হাতে ব্যথা লাগছে আর আমার যে বুকের মধ্যে ব্যথা
লাগছে তা কি তুই বুঝতে পারিস না অহনা?
অনন্তের এমন অদ্ভুত কথার মানে অহনা বুঝতে পারল না। অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি কি বলতে চান স্যার? আপনার বুকে ব্যথা মানে?
–আমাকে কেন তুই এত অবহেলা করিস অহনা? কেন তুই আমার দিকে ঠিকমতো তাকাস না?
আমার উপর তোর খুব অভিমান।
এতই অভিমান যে তুই বুঝিস না আমি তোকে কেন এত কস্ট দেই?
–আপনার উপর তাও আবার আমার অভিমান! হা হা হা আমাকে হাসালে আপনি।
আমি আপনাকে অভিমান না স্যার, আমি আপনাকে ঘৃণা করি৷
আমি আপনাকে মনে প্রাণে ঘৃণা করি৷ আগে আমি আপনাকে যথেষ্ট সন্মান করতাম
কিন্তুু এখন শুধু আমি আপনাকে
ঘৃণা করি। আপনি প্রতিদিন যেভাবে আমাকে সবার
সামনে অপমান করেছেন তার জন্য আমি আপনাকে কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারব না৷
— আমাকে একটু ভালেবাসা দিবি অহনা? আমাকে একটু তোর মনে জায়গা দিবি?
অনন্তের এমন কথায় অহনা স্তব্ধ হয়ে অনন্তের দিকে তাকিয়ে থাকে।
তারপর অহনা রেগে গিয়ে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনাকে যতই দেখছি ততই আমার আপনার প্রতি ঘৃণা
আরও বাড়ছে৷ আপনি একজন শিক্ষক হয়ে আপনার ছাত্রীকে
ভালোবাসার কথা বলেন! এসব বলতে আপনার লজ্জা করে না স্যার?
— আমার লজ্জা করে না। কেন রে আমি কোন দিক দিয়ে খারাপ যে
তুই আমাকে মেনে নিতে পারিস না? সব মেয়েরা আমার জন্য পাগল।
আর তুই যে কিনা আমাকে সবসময় অবহেলা করিস। কেন রে তোর আর
আমার বয়সের মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধান৷ তোর বয়স ১৮ আর
আমার বয়স ২৪৷ তাহলে সমস্যাটা কি? আমরা কি পারফেক্ট কাপল হতে পারি না?
–না পারি না কারণ আপনি আমার শিক্ষক৷ আর সবচেয়ে বড়
কথা আমি আপনাকে ঘৃণা করি।
–কেন এত ঘৃণা করিস তুই আমাকে অহনা? যেদিন কলেজে
আমি নতুন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ হই সেদিন আমার প্রথম করা ক্লাসে
সবাই আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর তুই কিনা আমার দিকে ভালো
করে তাকাসও নি। যেটা আমার কাছে অপমানজনক লাগে। সব মেয়েরা ক্লাসে
কথাবার্তা বলছিল আর তুই চুপ করে ছিলি৷ আমি ভালই বুঝতে পেরেছিলাম তোর
কোনো বন্ধু-বান্ধবী নেই। তুই একদম চুপচাপ, একদম শান্ত, আর হ্যা সবথেকে
বোকাও তুই। একদম অন্যরকম তুই৷ তাই সেদিনই আমার তোর প্রতি ভালোলাগা
কাজ করে। তোকে যতই দেখেছি ততই আমি তোর প্রেমে পড়েছি৷ হ্যা হ্যা হ্যা
আমি তোকে ভালোবাসি অহনা। তাই আমার প্রতি তোর অবহেলার জন্য
তোকে আমি এতটা শাস্তি দেই। তুই যতটা কস্ট পাস তার থেকেও হাজারগুণ
কস্ট আমি নিজেকে দিয়েছি৷ শুধু যে আমার হাত কেটেছি তা কিন্তুু নয় অহনা।
দেখ অহনা আমার হাতে ছুরি দিয়ে আমি তোর নামও লিখেছি৷
অহনা দেখল অনন্তের ডান হাতের একটু উপরে অহনার নাম লেখা৷
তাও আবার দাঁড়াল ছুরি দিয়ে লেখা। এসব দেখে অহনার মনে ভয় কাজ
করতে লাগল৷ অহনার মুখে কোনো কথা নেই। শুধু চুপ করে অনন্তের
কথা শুনছে অহনা। অনন্ত অহনাকে আবারও বলতে লাগল
–জানিস অহনা সেদিন তোকে খালি পায়ে পুরো ২০ বার কলেজ চক্কর
দিতে আমি চাই নি। কিন্তুু তুই যাতে পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হোস
তাই আমি তোকে এই শাস্তিটা দিয়েছি। তোর পায়ে যতটা আমি রক্ত জরিয়েছি
তার থেকে দ্বিগুণ আমি আমার পায়ে রক্ত জরিয়েছি অহনা। দেখতে
পারছিস আমার দু পায়ে বেন্ডেজ। আমি কাঁচের গ্লাস ভেঙে সেখানে দুই পা
রেখেছিলাম৷ আমার অহনাকে কস্ট দিব আর আমি নিজেকে ঠিক রাখবো
সেটা কি করে হয় অহনা! আর তুই জানিস তোকে আমি কেন তুই করে বলি?
কারণ আমি তোকে ভালোবেসে তুই করে বলি। তুই যে আমার কাছে সবচেয়ে আলাদা, #অন্যরকম তুই৷
অহনার মুখে কোনো কথা নেই। অহনা এখনও চুপ করেই আছে।
.
অহনার নিস্তব্ধতা দেখে অনন্তের বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভব হতে লাগল।
অনন্ত কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না তার ভালোবাসার মানুষ এভাবে চুপ করে আছে।
অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কি হলো অহনা তুই চুপ করে আছিস কেন? আমি তোকে এতটা ভালোবাসি, আমার
ভালোবাসার কথা শুনে কোনো উত্তর তুই কেন দিচ্ছিস না?
অহনা এখনো চুপ করে আছে। অনন্ত এবার অহনার দু বাহু ছেড়ে অহনার দু গালে আলতো
করে হাতের স্পর্শ দিয়ে অহনাকে বলল
–অহনা প্লিজ তুই এভাবে চুপ করে থাকিস না! আমি তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি
তুই আমাকে ক্ষমা করে দে অহনা। তুই শুধু আমাকে একবার বল তুই
আমাকে ভালোবাসিস তাহলে আমি আর কোনোদিনও তোকে কস্ট দিব না অহনা।
তুই আমাকে একটু ভালেবাসা দে অহনা৷
অহনা এবার অনন্তের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে খুব রেগে অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
এজন্যই ছেলেদের দেখলে আমার শরীরে এলার্জি হয়।
আমি এ কারণেই ছেলেদের বিন্দু মাত্র সহ্য করতে পারি না।
আচ্ছা আপনি কি ভাবেন? ভালোবাসা বাজারের কোনো পণ্য
যে চাইলেই টুপ করে পেয়ে যাবেন। আপনি এত সুন্দরী মেয়ে
ছেড়ে শেষে কিনা আমাকে ভালোবাসবেন সেটা নেহাতই হাস্যকর।
শুনেছিলাম আপনি বিদেশ থেকে খুব অল্প বয়সেই পড়াশোনা করে দেশে
ফিরে শিক্ষক পেশাতে নিয়োগ হয়েছিলেন। তো বিদেশ থেকে পড়াশোনা
করে কি আপনি ছাত্রীর সাথে অসভ্যতা করার শিক্ষা শিখে এসেছিলেন?
আপনাদের মতো ছেলেদের শিক্ষক হওয়ার কোনো যোগ্যতাই নেই।
বাবার টাকার ক্ষমতা, নিজের সুন্দর চেহারা আর নিজের রাগ আর
দম্ভ দিয়ে আপনি সব মেয়েদের ভালোবাসা কিনতে পারলেও আমার মনে
আপনার জন্য এক টুকরোও ভালোবাসা পাবেন না। কারণ আমি আপনাকে
ঘৃণা করি। আপনি আমার সাথে এতদিন যা যা অন্যায় করেছেন তার জন্য আমি
আপনাকে কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারব না, আর ভালোবাসা তো দূরের কথা।
অনন্ত এতক্ষণ অহনার কথা চুপচাপ শুনছিল। অহনার বলা কথাগুলোতে
অনন্তের মাথায় রক্ত উঠে যায়৷ অনন্ত এখন অহনার দিকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
অনন্তের ভয়ংকর দৃষ্টি দেখে অহনা ভয়ে চুপসে যায়। অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই যেন কি বললি অহনা তুই আমাকে ভালোবাসিস না! তুই আমাকে ঘৃণা করিস?
–হ্যা হ্যা আমি আপনাকে ঘৃণা করি, ঘৃণা করি, ঘৃণা…..
অহনাকে আর বলতে না দিয়ে অনন্ত অহনার কোমর জড়িয়ে একহাতে অহনার
পেছনের চুল আঁকড়ে ধরে অহনার ঠোঁট নিজের ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে নেয়।
অনন্তের এমন আচরণে অহনা অবাক হয়ে যায়। অহনা ভাবতেও পারে নি অনন্ত এমন করবে।
অহনা অনন্তের পিঠে কিল ঘুষি দিচ্ছে তো দিচ্ছে কিন্তুু অনন্তকে কিছুতেই অহনা ছাড়াতে
পারছে না। অনন্ত অহনার ঠোঁটজোড়া এত জোরেই আঁকড়ে ধরেছে যে
অহনার ঠোঁটে ভিষণ ব্যথা হচ্ছে৷ অহনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
অনেক্ষণপর অনন্ত অহনার ঠোঁটজোড়া ছেড়ে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–অহনা আমি এক বছর ধরে শিক্ষকতা করছি৷ বাবা চেয়েছিলেন
আমি বাবার বিজনেস দেখাশোনা করি কিন্তুু আমি তা শুনি নি।
কিন্তুু এখন যদি তুই চাস আমি এই শিক্ষক পেশা থেকে নিজেকে বের করে আনব।
তোর জন্য আমি আমার জীবনটাও দিতে পারি অহনা৷ তুই আমাকে একটু ভালেবাসা
দে অহনা। আমি যে তোকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।
অহনা এবার খুব রেগে গিয়ে অনন্তের গালে ঠাসসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
অনন্ত এত রাগী যে কোনোদিনও কাঁদে নি৷ কিন্তুু অহনার থাপ্পড়ে অনন্তের
চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল৷
অহনা খুব রেগে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমার মনে হয় আপনি মানসিকভাবে অসুস্থ। নাহলে কোনো সুস্থ শিক্ষক তার ছাত্রীর সাথে এমন অসভ্যতা করতে পারত না। আপনি নিজের মানসিকতা ঠিক করেন স্যার৷
এটা বলেই অহনা ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গেল৷ অনন্ত এখনোও সেখানেই দাড়িয়ে আছে৷ অনন্ত নিজের গালে হাত দিয়ে বলতে লাগল
–আমি ভাবতেও পারি নি অহনা তুই আমাকে এভাবে অপমান করবি!
এভাবে তুই আমার গালে থাপ্পড় দিবি৷ আমার ভালোবাসাকে এভাবে তুই অবহেলা করবি।
অনন্ত আহমেদকে কেউ কোনোদিন থাপ্পড় দেওয়ার সাহস পায় নি।
কিন্তুু তুই আজকে সেই সাহস দেখালি। এর শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে।
অহনা বাসায় গিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে হাঁপাতে লাগল। অহনা ভাবতেও পারছে না
যে সে অনন্ত স্যারকে থাপ্পড় দিয়েছে৷ অহনার মনে ভীষণ ভয় কাজ করছে। অহনা মনে মনে বলতে লাগল
এটা আমি কি করলাম! শেষে কিনা আমি ঐ শয়তান দানব স্যারটাকে থাপ্পড় মারলাম!
আমার মনে এত সাহস কোথা থেকে আসল!
এরপর আমার আর রক্ষা নেই৷ আমি চাইলেই স্যারের ক্লাসটা না করতে পারি কিন্তুু
আমি যে কারও কাছে প্রাইভেট পড়ি না! আমার যে প্রাইভেট পড়ার টাকাও নেই।
কারণ আমার পরিবার যে ভীষণ গরীব। অনন্ত স্যার অনেক ভালো অংক বুঝায়
তাই শত অপমান করা সত্তেও আমি তার ক্লাসটা করি। কিন্তুু এবার যে আমাকে
স্যারের হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
কিন্তুু অবশ্য উনার সাহস হয় কি করে আমার ঠোঁটের সাথে এমন কাজ করার!
অহনা আয়নায় গিয়ে দেখল অহনার ঠোঁটটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে।
অনন্তের ঠোঁটের স্পর্শের কথা মনে পড়তেই অহনা ভয়ে কেঁপে উঠে।
#চলবে….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com