Breaking News

অপ্রিয় || পর্ব -৯

ভোর হতেই আমি রত্না আপুর বরকে ফোন দিয়ে বলি,
-ঘুম ভেঙেছে নাকি?তাড়াতাড়ি আসুন,এক্ষুণি আমাদের পালাতে হবে।
আর ওপাশ থেকে রত্না আপুর বরও বলে উঠলেন,
-আমিতো সারারাত ঘুমাই ই নি,শুধু ভেবেছি কখন ভোর হবে আর আমি তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবো।
তুমি বাইরে গিয়ে দাঁড়াও আমি এক্ষুণি আসছি।
আমি কোন রকম ধীর পায়ে খাট থেকে নেমেই বাইরে আসার জন্য রওনা দিচ্ছিলাম।
পরক্ষণেই আবার একটু ব্যাক করে দিহানের কাছে গেলাম।
কি নিষ্পাপ লাগছে আমার অপ্রিয় বরটাকে।
ওর কপাল আর মুখের অগ্রভাগে হাত রাখলাম।রেখে বললাম,
-আমি চলে যাচ্ছি আপনার জীবন থেকে।
আপনার পথ এখন পরিষ্কার।ভালো থাকবেন রত্না আপুকে নিয়ে।সবাই আমাকে খারাপ বলবে তা আমি জানি।
কিন্তু আপনারাতো আর খারাপ থাকবেন না।তাই আমিই সরে গেলাম।
চাইনা আপনাকে কেউ খারাপ বলুক।
তারপর হন হন করে বেড়িয়ে চলে এলাম।
ওদিকে রত্না আপুর বরও রত্না আপুকে ঠিক একই ভাবে এই কথা গুলো বলেই বাইরে আসার জন্য রওনা দিয়েছে।আর সাথে এড করেছে এই অল্প একটু কথা,
আমাকে এ ক'দিন ঠকিয়েছো সমস্যা নেই।তোমার দিহানকে ঠকিওনা।
এক জন ছেলের জন্য তার বউকে কাছে পেয়েও এভয়েড করে চলা টা যে কতটা কষ্টের সেটা তুমি কোন দিনও বুঝবেনা।ভালো থেকো।
এদিকে আমি রুম থেকে বেড়িয়ে বাইরে এসে গেছি।
রত্না আপুর বরও এসে গেছে।
রত্না আপুর বর আমার হাত ধরতে কেমন যেন সংকোচ বোধ করছেন।
তাই আমি নিজেই তার হাত ধরে ফেললাম,
-মন খারাপ করবেন না।আমরা তো আমাদের প্রিয় মানুষ গুলোর ভালোর জন্যই ওদের ছেড়ে পালাচ্ছি।
তাছাড়া আপনি আর আমি দুজন দুজনকে ভালবাসি না তাতে কি?
ভালবাসা একদিন ঠিক হয়ে যাবে।
তবে ওরা তো সুখী হবে।এটাই বা কম কি?
-হুম তুমি ঠিকই বলেছো।তাছাড়া তুমি কিন্তু যথেষ্ট সুন্দরি।আবার লক্ষীও বটে।আমি কিন্তু সত্যিই লাকী হবো তোমাকে পেয়ে।দিহানের চোখে হয়তো সমস্যা যে তোমার মত হীরাকে চিনলোনা।
-আপনিও কম হ্যান্ডসাম না।
যে কোন মেয়ে আপনাকে নিয়ে সুখী হতে চাইবে।রত্না আপু আপনাকে হারিয়ে জীবনে বড় একটা ভুল করে ফেল্লো।
যাক গে, চলুন এবার পালাই।
কেউ ঘুম থেকে উঠে যাবার আগেই।
-চলো তাড়াতাড়ি।
-দাঁড়াও,(দিহান)
কোথায় যাচ্ছো তোমরা?
-আর তুমিই বা কোথায় যাচ্ছো?(রত্না)
-না মানে আমরা..
-আমরা মর্নিং ওয়াকে যাচ্ছিলাম।
-তো আমাদের রেখে কেন?
-কি করবো?আমরা কি আর আপনাদের প্রিয় নাকি যে আপনারা আমাদের সাথে যাবেন।
তাই আমরা দুজনই যাচ্ছিলাম।
ভাবলাম আপনাদের দুজনের ঘুম ভাঙিয়ে কি লাভ।তাছাড়া যাবেনও না আপনারা।
-ওহ তোমরাও যাবে বুঝি?চলো চলো তাহলে।
-কোত্থাও যাবোনা আমি,আপনি আমার সাথে রুমে চলুন।(রত্না আপু রেগে)
-এ মা,কেন আপু?আমরা এখন হাঁটতে যাবোতো।
-কোত্থাও যাবিনা তুই,থাপ্পড় দিয়ে গাল ফাটিয়ে ফেলবো।
চল আমার সাথে রুমে।
দিহান আমাকে হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে এলো।
-কি হচ্ছিলো এসব?
-আজব, কি হচ্ছিলো?
-তুই কোথায় যাচ্ছিলি?
-একবার বলেছিই তো।
-আবার মিথ্যা বলে, আমাকে রাগাস না কিন্তু,নইলে ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি।
-আমি আপনাকে কই রাগালাম?
তাছাড়া আপনি আবার রাগ ছাড়া থাকেন নাকি কখনো?
-মুসাররাত প্লিজ,
আমার মাথায় রক্ত তুলে দিসনা।
আমি খুব রেগে আছি।
-গুড,ভেরি গুড।
-মুসাররাত,(রেগে)
দিহান ওর দু হাত দিয়ে আমার দু কাঁধ শক্ত করে ধরে ওর বুকের কাছে এনে আমার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে বলে,
-আমাকে তোর কি মনে হয় হ্যাঁ?
ফেলনা কিছু মনে হয়?
নাকি খেলনা মনে হয়?
আমি তোর বর,তিন কবুল পড়ে বিয়ে করা স্বামী আমি তোর।এটা মাথায় রাখিস।
এ কথা বলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বাইরে চলে যায়।
দিহানের চোখে আজ আমি প্রথম বারের মত জল দেখেছি।
লাল হয়ে ছিলো আজ ওর দু চোখ।
এমন লাল চোখ শুনেছি মানুষ রাগলে বা খুব বেশি আঘাত পেলে হয়।
ওই দিকে রত্না আপু তার বরকে বলছে,
-কোথায় যাচ্ছিলেন?
-বলেছিনা হাঁটতে।
-ফাইজলামি পাইছেন?নাকি আমাকে বোকা পাইছেন?
আমি কিচ্ছু বুঝি না,না?
মুসাররাতের সাথে কি হ্যাঁ?আমি কি মরে গেছি?আমি ছিলাম না তোর পাশে?আমাকে কেন ডাকলিনা?
বউ রেখে শালী নিয়ে যেতে ইচ্ছে করে?
এবার খপ করে রত্না আপু তার বরের শার্টের কর্লার ধরে ফেলে।
-একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ।
আমি তোর রেজিস্ট্রি করা বউ,ওকে?
বাজারের কিনে আনা পুতুল না যে ভালো লাগলোনা চেঞ্জ করে আরেকটা নিয়ে এলি।
কথাটা মাথায় যেন থাকে।
রত্না আপুও তারপর কর্লার ছেড়ে দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে যায়।
একটু পরে আম্মু খালামণি আমাদের সবাইকে নাস্তা করতে ডাকে।
আমি গিয়েই মাত্র রত্না আপুর বরের কাছে বসবো,
আর দিহান আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওর কাছে নিয়ে বসায়।
রত্না আপুও গিয়ে তার বরের পাশে বসে পড়ে।
আমরা নাস্তা করছি।
আর একটু পর পরই রত্না আপুর বর আর আমি চোখাচোখি করছি।
আর মিষ্টি করে হাসি দিচ্ছি।
কিছু ক্ষণ পর আম্মু আর খালামণি বলে উঠলেন,
তোদের বাবা আর আংকেল তোদের শপিং করার জন্য কিছু টাকা দিয়েছেন।
নাস্তা করেই তোরা চলে যাস শপিং করতে।
নিজেদের ইচ্ছে মত যা ইচ্ছে তাই কিনে নিস।
-আচ্ছা খালামণি।আমিতো দুই পায়ে খাঁড়া।
-জ্বী মা,আমরা নাস্তা করেই বেড়িয়ে যাবো।
দিহান আর রত্না আপু কোন কথাই বলছেনা।
নাস্তা শেষে আমি রুমে গিয়ে একটা শাড়ী বের করলাম,ও টা পরবো বলে।
-একটু বাইরে যান তো।
-কেন?
-আমি শাড়ীটা পরবো।
-তো আমার বাইরে কেন যেতে হবে?
-আজব,বাইরে যাবেন না?
-কেন যাবো?
-কারণ আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো।
-আই এম ইউর হাজবেন্ড ওকে?
সো চেঞ্জ করতে হলে আমার সামনেই করতে হবে।
-তাহলে অন্য সময় কেন বেড়িয়ে যেতেন?
আর এখন কেন যেতে যাচ্ছেন না?
-উফফ জানিনা জানিনা জানিনা,আমি কিচ্ছু জানিনা।
দিহান বেড়িয়ে যায়।
আমি শাড়ী পরে নেই।
কিছু ক্ষণ পর দিহান রুমে আসে।
এসেই হা করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
নিজের দিকে নিজেই কয়েক বার ঘুরেফিরে তাকালাম।কই নাতো আঁচল তো আজ ঠিকই আছে।কয়েকটা পিন দিয়ে আটকে নিয়েছি।
দিহান ধীরেধীরে আমার দিকে আসতে লাগলো।
আর আমি পেছন দিকে যেতে লাগলাম।ও আগাচ্ছে আর আমি পেছনে যাচ্ছি।
এক বারে দেয়ালের সাথে লেগেই গেছি আমি।
দিহান ওর মুখ টা আমার গালের কাছে আনতে লাগলো,আর আমার হার্টবিট বাড়তে লাগলো।
আস্তে আস্তে কানের কাছে ঠোঁট টা এনে
কিছু বলতে যাবে
আর তখনই রত্না আপু রুমে এসে পড়লো,
-হয়েছে তোদের?
আমি দিহান কে সরিয়ে দিয়ে বললাম।
-হুম রেডি আমরা।
-আজব,আসার আর সময় পেলেনা?
-কিহ?
-কিছুনা আপু।চলো।
আমরা সবাই শপিং করতে বেরুলাম।
মার্কেটে পৌছে গেছি।
শাড়ীর দিকে প্রথমে ঢুকেছি।
সবাই শাড়ী দেখছি।
রত্না আপুর বর একটা গাড় গোলাপি রঙের শাড়ী নিয়ে আমার দিকে আগাচ্ছে।
আর তখনই দিহান একটা লাল টুকটুকে শাড়ী নিয়ে আমার মাথায় পরিয়ে দিয়ে বলে,
-এই শাড়ীটা কেমন দেখোতো।
-আছে মোটামুটি।তবে ওই গোলাপি টা বেশি সুন্দর।
আর তখনই রত্না আপু গোলাপি শাড়ী টা নিয়েই বলে,এটা তাহলে আমি নিয়ে নিলাম।
-না, এটা দাও বলছি।
এটা মুসাররাত পছন্দ করেছে আগে,
তাই ওকে দাও ওটা।
তুমি দিহানের হাতের টা নাও।ওটা পরলে তোমাকে বেশি মানাবে।
-না আমি এটাই নিবো।ও নিক দিহানের হাতের টা।
-আপুই নিক ওটা আমি কোন শাড়ীই নিবোনা।
এই বলে আমি ওখান থেকে সরে আসলাম।
-দাঁড়াও মুসাররাত দাঁড়াও।
রত্না আপুর বর আমার আমার পেছন পেছন চলে আসলো।
আর এসেই বল্লো,
-এখন তো আটকাবার মত কেউ নেই।
এবার চলো তবে পালাইইইই...
-হি হি হি।
-হা হা হা।
চলবে................

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com