গার্লফ্রেন্ড ।পর্ব -০৬
এই তুমি আমার দিকে অমন করে তাকিয়ে আছ কেন?? (নিশি)
হুট করে নিশির এরকম কথা শুনে নাফিজ থতমত খেয়ে বলল,
‘কি,কই না তো,আমিতো তোমার দিকে তাকাইনি,আমিতো ঐ গাছের দিকে চেয়ে ছিলাম। (নাফিজ)
‘হুহহ,আমার দিকেই তুমি তাকিয়ে ছিলে আমি সবই বুঝি বুজলে।। আমার প্রেমে পড়তে এসোনা,তাহলে কিন্তু প্রেমের অনলে জ্বলে পুরে ছাঁড়খার হয়ে যাবে। (নিশি)
‘বাব্বাহ,তাইনাকি?? (নাফিজ)
‘হুমমমমমম,তাই। (নিশি)
‘ওকে,তুমি এখানে হাওয়া খাও,আমি আম্মুর সাথে একটু কথা বলে আসি।। (নাফিজ)
‘ওকে বলো,’সমস্যা নেই’ (নিশি)
তারপর নাফিজ একটু দুরে সরেগিয়ে ওর আম্মুকে ফোন দিলো।।ওর আম্মু ফোনটা রিসিভ করা মাত্রই নাফিজ সালাম দিয়ে কথা শুরু করলেন————–
“আস্সালামু আলাইকুম”
“ওয়ালাইকুম আস্সালাম”কেমন আছিস বাবা।
“হুমমম,’আল্লাহর রহমতে,তোমাদের দো’য়ার বরকতে ভালোই আছি।’
তুমি কেমন আছ?? (নাফিজ)
‘আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি।’,নিশি কেমন আছে?? (মা)
মায়ের মুখে নিশির নাম শুনে নাফিজ একটু ঘাবরে গেলেন।তারপর তুতলাতে তুতলাতে বলল,
‘কি বলো মা,নিশি আসবে কোত্থেকে,’আর নিশিই বা কে।’
“হাহাহা,আরে আমার পাগল ছেলে,’তুই আমাকে কিছু না বললে কি কইছে,
তোর সাথে যে নিশি থাকে সেই আমাকে সব বলে দিছে। সমস্যা নেই বাবা, আমি আমার ছেলে কে তো চিনিই ,আমার ছেলেটা কেমন।’জান চলে যাবে তবুও মান হারাবে না।তাইতো আমি ওরে সবকিছু বলেছি তোর ব্যাপারে তুই কেমন,তোর উঠাবসা কেরকম সব কিছু ওরে বলেছি।(মা)
“তারমানে নিশিই তোমাকে সব বলেছে।’যাইহোক আগে বলেদিছে সেটাতো আমি জানিনা।আমি মনেকরলাম তোমার সাথে ব্যাপার টা শেয়ার করি,কেননা তুমিতো মা। এখন দেখি নিশি আগে থেকে আমার মা কে পটিয়ে ফেলেছে। (নাফিজ)
‘একটা কথা কি জানিস? মেয়েটা বড্ড ভালোরে বাবা।। ওরে কষ্ট দিসনা।
দুজন মিলতাল দিয়েই থাকিস।আর কোন কিছুর প্রোয়োজন হলে অবশ্যই বলবি।।কেননা,আমার ছেলেটি এখন একা না,এখন তার একটা অবিবাহিত বৌ আছে।হিহিহি (মা)
“মা,তুমিও না’ (নাফিজ)
“তো কি হইছে, সবাই তো জানে ওটা তোর বৌ। সামনে যখন বাড়িতে আসবি তখন ওরেও সাথে করে নিয়ে আসবি। (মা)
“ওকে ঠিকআছে নিয়ে আসবো।।এখন রাখি বায়।ভালো থেকো ডিয়ার আম্মু”
-নাফিজ ওর মায়ের সাথে কথা বলা শেষ করে নিশির কাছে আসলেন।
দেখলেন যে নিশি মনখারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে।। চুল গুলো এলো মেলো।দক্ষিনা বাতাসে চুলগুলো উড়ন্ত ঘুড়ির মতো উড়ছে,দৃশ্যটা দেখতে বেশ ভালোই লাগছে।।তারপর নাফিজ নিশির পাশে দাঁড়িয়ে,নিশির দিকে তাকিয়ে বলল……
‘নিশি, ‘এভাবে মনখারাপ করে দাঁড়িয়ে আছ কেন। তোমার কি কিছু হয়েছে!! (নাফিজ)
নিশি নাফিজের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল,
‘নাহ,’আমার তো কিছু হয়নি।আমি একদম ঠিকআছি। (নিশি)
‘নাফিজ লক্ষ্য করলেন যে নিশির চোখে পানি জমেআছে।যে কোন মুহুর্তে টলমল করে প্রবাহিত হবে।।নাফিজ ওর হাত দিয়ে নিশির চোখে জমে থাকা পানি গুলো মুছে দিয়ে বলল,
‘যদি কিছু না-ই হতো,তাহলে চোখের কণে কেন পানি জমেআছে?? হয়েছেতো অনেক কিছুই,বাট তুমি বলতে চাচ্ছনা তাইনা?? (নাফিজ)
‘হুমমমমম,’সবই বলব,বাট এখন না,একদিন সবই জানতে পারবে আমার সম্পর্কে।। (নিশি)
“হুমমমম,’শুনার অপেক্ষায় থাকলাম।।
“এখন চলো,রান্না করবে না!! সময় তো অনেক হয়ে গেছে।।
“হুমমমম,চলো রান্না করতে হবে।দুজন মিলে রান্নাটা করে ফেলি। (নাফিজ)
তারপর ওরা নিচে চলে গেলো রান্না করার জন্য, দুজন মিলে রান্নাটা শেষ করলেন।।রান্না নাফিজ করেছে,নিশি টুকটাক কুটে বেটে দিয়েছে।।
দুপুরে খাওয়ার সময় নিশি খাবার মুখে দিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
‘সত্যই বস্,তোমাকে স্যালুট জানানো দরকার। এতো সুন্দর রান্না আজ দ্বিতীয় বারের মতন খেলাম। আমার মায়ের রান্নার সাথে কারো রান্নাকে তুলনা করতে পারবনা।কেননা,মার রান্নার উপরে কারো রান্না হতে পারেনা।। মায়ের রান্নার পরে তোমার রান্নাকে আমি পছন্দ করেছি আজ।। সত্যই অনেক সুন্দর হইছে।
(নিশি)
‘ধন্যবাদ, খাওয়াটা তাহলে শেষ করো।
তারপর দুজন মিলে খাওয়াটা শুরু করলেন।।নাফিজ খেয়ে দেয়ে রুমে গিয়ে বিস্রাম নিচ্ছিলেন।। এরই মাঝে কলিং বেলটা বেঁজে উঠলো।নাফিজ দরজা খুলে দেখলেন যে, বাড়ি ওয়ালি আন্টি দাঁড়িয়ে আছে। নাফিজ তাকে সালাম দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করার আহ্বান জানান…
“কিরে নাফিজ, লাঞ্চ করোনি?? (আন্টি)
“হুমমমম, করেছি।আপনি করেছেন? (নাফিজ)
“হুমম,করেছি।বৌ মা কই!! (আন্টি)
“নিশি খাচ্ছে, আমি এইমাত্র খেয়ে আসলাম আর আপনিও আসলেন।।যান নিশির সাথে কথা বলুন। (নাফিজ)
“না থাক,পরে একসময় কথা বলব।
এখন বিস্রাম নেও।।
তারপর আন্টি চলে গেলেন। নাফিজ দরজা আটকিয়ে শুয়েপড়লেন।। কিছুক্ষন পর লক্ষ্য করলেন যে নিশি এখনো রুমে আসেনি,তারমানে নিশির কি এখনো খাওয়া শেষ হয়নি।। নাহ মেয়েটা যে কি করেনা,বুঝে আসেনা।।
নাফিজ বিছানা থেকে নেমে খাওয়ার রুমে গেলেন,এবং দেখলেন যে নিশি খাবার প্লেট সামনে রেখে মনখারাপ করে বসেআছে।। ২-৩ লোকমার মতন খাইছে,বাকি খাবার ওরকমই পড়ে রয়েছে।
তারপর নাফিজ একটা চেয়ার টেনে নিশির পাসে বসলেন,এবং আস্তে করে নিশিকে বললেন,
‘কি হইছে তোমার। এভাবে মনমরা হয়ে বসেআছ কেন? খাচ্ছনা কেন।।খাবার ভালো হয়নি নিশ্চয়।(নাফিজ)
“উফ,সবই ঠিকআছে, আচ্ছা বলোতো,তুমিকি অন্ধ!! (নিশি)
“কই না তো,আমিতো সবই দেখতে পাচ্ছি।
(নাফিজ)
“হাহাহা, সত্যই তুমি অন্ধ।অন্ধ না হলে আমার যে হাত কেটেছে এটা ঠিকই দেখতে পেতে।।
নাফিজ লক্ষ্য করলেন যে,সত্যই তো ওর হাত কেটেগেছে।। নাহ আমি না সত্যই অন্ধ হয়ে যাচ্ছি মনেহয়।। নাফিজ নিশির হাতটা ধরে বললেন,
‘হাত কাটলো কি করে??
“বটিতে কেটে গেছে”
“একটু সাবধানে কাজ করা জায়না।। আচ্ছা এদিকে আসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি। আমি খাইয়ে দিলে সমস্যা আছে নাকি?? (নাফিজ)
“আমিতো এটাই চাইছিলাম, তুমি যেন আমাকে খাইয়ে দেও, কেননা,যে হাতের রান্না এতো সুন্দর।সে হাতটাকে নিজের করে নিতে কেইবা না চায়। (মনেমনে)
“নাহ সমস্যা নেই, (নিশি)
‘তারপর নাফিজ নিশিকে খাইয়ে দিলেন। আর নিশি চোখ বুঝে ওর হাতের খাইয়ে দেয়া অনুভব করতে লাগলেন।।
নাফিজ আর নিশির মাঝে এরকম করে প্রায় ২ মাস চলে গেলো।
নাফিজ পড়া শুনার পাশা পাশি একটা জব পায়,সেটা দিয়েই সংসার চলে।
নিশিও প্রায় রান্না শিখে ফেলেছে।
তাদের সংসার মোটামুটি খুনসুটি দিয়ে ভালোই চলছে।
তারপর একদিন নাফিজ লক্ষ্য করলেন যে,নিশি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তারপর নাফিজ নিশির পাসে গিয়ে বসলেন,এবং নিশির মাথাটা নাফিজের কোলে নিয়ে নিশিকে বললেন……
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com