প্রতারক | পর্ব- ০৬
সকালে ভার্সিটি ঢুকতেই কই থেকে নিতু এসে আমার গালে পাঁচ আঙুল বসিয়ে দিলো। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম চড় খেয়ে।না আজ আমার কান্না আসছেনা আজ আমি অবাক চরম অবাক নিতু কি করে পারলো?? আমার গায়ে হাত তুলতে?? মাঠের সবাই এখন আমার দিকে তাকিয়ে!! আমি নিতুর দিকে তাকিয়ে চিনার চেষ্টা করছি এটা সেই আমার চিরোচেনা নিতু!যাকে আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বলে জানতাম?? না আজ এই নিতুকে আমার কোনো এঙ্গেল এই পরিচিত মনে হচ্ছে না। নিতু এবার চেঁচিয়ে উঠলো।
— এই তোর এতো বড় সাহস হলো কি করে আমার হ্যাসবেন্ড কে এতভাবে ফাঁসানোর বল লনি কই। কোন নাগর কে দিয়ে গায়াব করে আমার হ্যাসবেন্ড কে ফাঁসাচ্ছিস বল??
.
আমি কি বলবো খুঁজে পাচ্ছিনা কি বলা উঠিৎ আমার আমি ঠিক করতে পারছিনা
এতো নোংরা ভাষায় কেউ আমার সাথে কখনো কথা বলেনি। আর নিতুও যে এভাবে কথা বলতে পাড়ে আমার জানা ছিলো না। নিতু আবার চেঁচিয়ে উঠলো।
— আরে কি হলো বলিস না কেনো??নাকি আমার হ্যাসবেন্ড এর দেওয়া ছ্যাঁকা খেয়ে বোবা হয়ে গেছিস??
.
এই কথা শুনে উপস্থিত সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। আমি পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার এই মুহূর্তে নিজের অজান্তেই সেই ছেলেটার কথা মনে পড়ছে সেই তো জানে লনি কই। আমি সারা বিল্ডিং তাকে খুঁজে এসেছি অন্যদিন তাকে দেখলেও আজ তার দেখা মেলেনি। এর মধ্যে শিহাব কই থেকে এসে আমার হাত টেনে নিয়ে যাচ্ছে ফাঁকা ক্লাস রুমের দিকে। আমার কোনো হেলদুল নেই আমি রবোট হয়েগেছি।যে যেদিকে টানছে আমি সে দিকেই যাচ্ছি।
.
ফাঁকা ক্লাসে এনেই শিহাব আমাকে ধাক্কা মারে। ফলে আমি পড়ে যেতে নেই কিন্তু আমাকে শিহাব নিজেই ধরে ফেলে।
— এই এত্ত ইনোসেন্ট সাজিস না তো যেমন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানিস না। তোকে তো ভালো মনে করেছিলাম আর তুই!! নিতু ঠিক বলেছিলো ছোট লোকের বাচ্চা রা এমনি হয়। ঠিক তোর মতো অন্যের জিনিশ এ নজর দেয় যেই দেখলি আমি তোকে ছেড়ে নিতুর সাথে ভালো আছি অমনি নতুন আশিককে দিয়ে লনি কে গায়াব করে দিলে যানো ওর ভাই আমায় ধরে?কারণ তুই তো ভালো করে জানিস দোষ আমার উপরি আসবে। তাই না ছিঃ হীর ছিঃ। এতো ছোটলোক তুই???
তাড়াতাড়ি বল লনি কই!!
.
আমার বেশ সময় লাগছে শিহাবের কথা গুলি হজম করতে। আল্লাহ এগুলা শুনবার ও যোগ্য ছিলাম আমি। আমি না চাইতেও চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।আমার কান্না দেখে শিহাব তাচ্ছিল্য স্বরে বললো।
— এই তোর ড্রামা বন্ধ কর তো তোর ড্রামা দেখার টাইম আমার নেই। যা আমার সামনে থেকে। তোর ফেইস দেখতে চাইনা। কাল যদি লনি কই না বলতে পারিস তো। এই কলেজে আর ঢুকতে পারবিনা।আর শোন তুই যাই করিস না কেনো তোর মতো থার্ডক্লাস ছোটলোক মেয়ের কাছে এই শিহাব ফিরবে না!!আমি আমার ক্লাস এর মেয়েকে বিয়ে করেছি আর সেটা নিতু।আউট!!
.
আমি খুন হয়ে গেছি আজ শিহাবের কথায়। আর আমার জিন্দা লাশটা। শিহাবের কথা শুনে আর এক মিনিট দাঁড়ায় নি দৌড়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দৌড়াতে থাকি আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আমি পাগলের মতো দৌড়াচ্ছি। শিহাব এর কথা গুলো কানে বাজছে আমি থার্ডক্লাস ছোটলোক। মানে শিহাব নিতু বড় লোকের মেয়ে বলে তাকে বিয়ে করেছে?? আর ভাবতে পারছিনা আমি টাকাই সব। টাকা দিয়ে ভালোবাসা হয়?? নিতু পারবে আমার মতো ভালোবাসতে শিহাব তোমাকে??? একদিন আজ কের কথা গুলোই তোমার উপর ভারি পড়বে শিহাব তুমি দেখে নিও এই টাকাই তোমার কাল হয়ে দাঁড়াবে। তুমি চাইলেই তখন কিচ্ছু করতে পারবে না।
.
আর একটা জিনিষ ও ভাবাচ্ছে কি পেলো ছেলেটা লনিকে গায়াব করে কেনো এতো অপমান করালো আমার। আমি হু হু করে কাঁদছি আর দৌড়াচ্ছি।
.
বাসায় এসে রুমে ঢুকে ইচ্ছামত কাঁদলাম। মা অনেক ডেকেছে শুনি নি। আমি কিছু শোনবার মন মানুষিকতায় নেই। আমি ভাবতে পারছিনা শিহাব কি করে আমায় এতো অপমান করলো আর নিতু?? আমি সারাবিকেল সারারাত কেঁদেই পাড় করলাম। ভোর ৪ টার দিকে। কালকের সেই নাম্বার টা থেকে কল এলো। কাল রাতে শুভাকাঙ্ক্ষী বলে ফোন কেটে দিয়েছিলো!!
আমি কি জানি কি ভেবে ফোন রিসিভ করলাম।
— হ্যালো??
— উফফ এই কান্নাকরা কণ্ঠ….!
— কি বলছেন?? কে আপনি!!
–…….
— হ্যালো কথা বলছেন না কেনো কে আপনি??
— শুনছি!!
— আশ্চর্য। আমি রাখছি নেক্সট টাইম রাত বিরাতে কল দিয়ে ডিস্টার্ব করবেন না। প্লিজ।
— কল কাটার চিন্তাও করো না!!
— কেনো কাটলে কি করবেন?? কে আপনি বলুন!!
— না বললে??
— না বললে আর কল দিবেন না। অপরিচিত মানুষ এর সাথে কথা বলি না।
— অপরিচিত ছেলেকে ভালো ঠিকি বাসতে পারো তাই না??
— কি বলতে চাইছেন কে আপনি। দেখুন আমার মন ভালো না প্লিজ শুধু শুধু রাগাবেন না!!
— ওহ হও তোমার ও রাগ আছে??রাগ থাকলে তোমাকে কেউ থার্ডক্লাস বলে যায় তোমার সামনে আর তুমি কিছুই বলো না তাকে!!
— আপনি কে?? কি করে জানেন এসব??
— আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী!!
— না মিথ্যে আমি জানি আপনি কে??
— কে আমি??
— রাহুল আপনি তাই না!!
— রাহুল?? কে রাহুল??আমি কোনো রাহুল কে চিনিনা!!
— মিথ্যে আপনি রাহুল। বলুন লনিকে লুকিয়ে আমাকে অপমান করাচ্ছেন কলেজ ভর্তি মানুষের সামনে। আর রাতের আধারে শুভাকাঙ্ক্ষী সেজে কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিঁটে দিচ্ছেন??
— তুমি ভুল আমি রাহুল নই। আমি সত্যি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী!!
— মিথ্যে আপনি রাহুল। অসভ্য ছেলে আপনি বলুন লনি কই??
— আমি রাহুল নই আবারো বলছি!!
— আমি আপনাকে ছাড়বো না!!
— ঠিক আছে আমাকে ছেড়ো না। কিন্তু ঐ প্রতারক গুলাকে ছেড়ে দিবে যারা তোমার সাথে। রাত দিন প্রতারণা করে গেছে। ঐ প্রতারক গুলাকে কিছু করবে না??
— কি চান আপনি বলবেন প্লিজ এসব কেনো বলছেন??
— বন্ধু হতে চাই!
— প্রপোজ করলেও না রাজী হয়ে যেতাম হয়তো। কিন্তু বন্ধু বা বান্ধবী আর চাই না আমার!!
বন্ধু বান্ধবী মানেই প্রতারক বুঝেছে আপনি নিজেও এসব থেকে দূরে থাকুন!!
— হাহা তোমাকে বন্ধত্বের সঠিক মানে বুঝাতে চাই। দিবে একটা সুযোগ??
— নো!!
কোনো দিন না আমার আর কাউকে চাইনা কাউকে!!
.
বলেই কেটে দিলাম ফোন এটা আবার কোন প্রতারক আমার লাইফে এলো?? কি চায় আমার কাছে?? এটা কি রাহুল ছিলো নাকি অন্য কেউ?? এই রাহুল কেই বা কই পাবো আর কেনো দেখি না এই ছেলেকে। কেনো লনিকে গায়াব করে এই অপমানের শিকার করলো আমায়?কেনো? কেনো??এর থেকে ভালো ঐদিন লনি….!!আবার কেঁদে দিলাম আমি কাদার মাঝেই শুনলাম।
.
আজান দিচ্ছি আজানে ধনী মন প্রাণ জুড়িয়ে দিচ্ছে। নামাজ পড়ে চুপিচুপি ছাদে চলে গেলাম।মা দেখলেই কেঁদে দিবে। রাতে ভাইয়া মা অনেক ডেকেছে আমি দরজা খুলিনি। কারণ কান্নাকাটি করে আমার চোখ মুখ এর অবস্থা খারাপ ছিলো। মা ভাইয়া এভাবে দেখলে আমায় না জানি কি করতো সেই ভয়ে খুলিনি। ছাদে এসে হাটছি আর ভাবছি। লাইফ টা একটা প্রশ্নে আটকে গেলো আমার। কেনো এসব হচ্ছে আমার সাথে কি দোষ ছিলো আমার???আমি তো কোনোদিন কাউকে কষ্ট দেই নি তাহলে এমন কেনো হচ্ছে আমার সাথে?? আজ নিজেকে বড্ড ভালোমানুষ মনে হচ্ছে কারণ ভালোমানুষ দেরই নাকি কষ্ট বেশী থাকে কি জানি!!
একা একা কথা বলতে বলতে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি উপভোগ করছি আর চিন্তা আকাশপাতাল চিন্তা মাথা যেমন মৌমাছির মতো ভোনভোন করছে।
.
হঠাৎ চিন্তার মাঝে বুঝলাম আমার ঘাড়ে কাউর নিশ্বাস পড়ছে। মুহূর্তে ভূতের ভয় আমায় গ্রাস করলো। হায় আল্লাহ সকাল সকাল আমায় কি তবে ভূতে ধরলো? আমি পিছন ফিরে দেখার শক্তি পাচ্ছি না।হাত পা অবশ হয়ে গেছে মিনিটেই। বিড়বিড় করছি হেল্প হেল্প আল্লাহ হেল্প। আমার এসব ফালতু চিন্তা দূর করে হঠাৎ কাউর কণ্ঠ কানে এলো।
— এই যে ভিতুরডিম আমি! ভূত না আমি!
.
মুহূর্তে সব ভয় গায়াব হয়ে গেলো। মাথায় ঢুকলো একরাশ প্রশ্ন। আমি সাথে সাথে পিছন ফিরে বললাম।
— আপনি কি ভূত??
.
উনি হু হা করে হাসছে পেটে হাত দিয়ে।হাসির চটে সিল্কি চুল গুলা কপাল লেপ্টে যাচ্ছে।উনার চুল গুলা না কেমন আজব টাইপ কাটিং পিছনে ছোট হলেও সামনে দিয়ে বড়বড়। এক্টু নড়াচড়া করলেই কপাল ছুঁয়ে যায়।আর উনি আঙুল এর সাহায্য খুব সুন্দর করে পিছনে ঠেলে দেয় খুব সুন্দর লাগে। মনে হয় চুল গুলা খুব স্ফট। ভালোই লাগে দেখতে। হঠাৎ ধ্যান এলো আমি কেনো এসব ভাবছি?? আশ্চর্য!! আশ্চর্য!!ছিঃ ছিঃ তাও এমন সিচুয়েশনে এসব চিন্তা?? এই ছেলের থেকে কত কিছু জানার বাকি আর আমি পড়ে আছি এই অসভ্য ছেলে চুল? চুল নিয়ে। আর ভাবতে পারলাম না কিছু নিজেকে ধিককার দিয়ে।
মুখে বিরক্তি এনে বললাম।
— থামুন!! আমি ভিতুর ডিম না!!
— দেখতেই পারছি। তা মনে হলো আমায় খুঁজছিলে??
.
বুঝলো কিভাবে জানিনা কিন্তু এই মুহূর্তে মন চাইছে উনাকে বলতে লনির মতো নিতু আর শিহাব কে সেইম ভাবে পিটিয়ে গায়াব করে দিতে। ভাবতেই চোখে পানি টলমল করছে কেনো জানিনা। আমি টলমল চোখেই বললাম।
— লনি কোথায় কি করেছেন ওকে??
ও বাসায় যায়নি কেনো।
— সেই অবস্থায় রাখিনি বলে!!
— মানে?লনি কই?
.
আমার প্রশ্ন শুনে উনার চোখ মুখ সাথে সাথে শক্ত হয়ে গেলো আমি স্পট বুঝলাম সেটা।রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে উনি বললেন।
— হোয়ায়??
— ওর ভাই খুঁজছে ওকে তাই।
— মাডার করেছি ওর [হাত দেখিয়ে] নিজের হাতে মেরেছি ওকে।
.
আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।হাত পা কাঁপছে বিষণ ভাবে কাঁপছে। এই কথা যদি সত্যি হয় তো কি হবে আমার কলেজ কিভাবে যাবো আমি?? আরো অপমানিত হতে হবে!! আর যদি কেউ জেনে যায় আমার জন্য লনিকে মেরেছে তো? আমার চোখের টলমল করা পানি গড়িয়ে পড়লো। তা দেখেই রাহুল…..
.
চলবে?
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com