Breaking News

তবুও ভালবাসি || পর্ব:২০(শেষ পর্ব)

অপূর্বের চোখ ঝলঝল করে উঠে কলিজায় পানি ফিরে আসে।খুশিতে মরে যাবে এমন অবস্থা।ভিক্ষুকটির ২ হাতে ধরে অপূর্ব বলে "কোথায় দেখছেন"?

"৫-৬ দিন আগে এই মেয়েকে এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে দেখছি।মনে হয় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতেছিলো।কিন্তু একটা গাড়ি পেয়ে যায়। গাড়িতে ৩-৪ টা ছেলে ছিলো পরে ওইদিক দিয়ে গাড়িটি চলে যায়।" ভিক্ষুকটি বামের রাস্তার দিকে ইশারায় বলে।

অপূর্ব স্তব্ধ হয়ে যায়।ছোঁয়া তো আমেরিকার কাওকে চিনে না তাহলে  ৩-৪ জন ছেলের সাথে কই যাবে।কিডন্যাপ করেনিতো কেউ??? ও মাই গড!!!
অপূর্ব তাত্তাড়ি করে পুলিশ নিয়ে বামের রাস্তার দিকে যেতে থাকে।৬ দিন আগে এই রাস্তা দিয়ে গেছে পরে কই গেছে  তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।পাবে কিনা শিওওর না।তবুও ও তো ছোঁয়া এই দিক দিয়ে গেছে সেই আশায় অপূর্ব ছুটে চলে।
.

.
.
.
[ইংলিশের কথা বাংলায় লিখতেছি]

-ব্র।রজন ভাই আসছে। এই মেয়েরে নিতে।"  ছোঁয়ার সমবয়সী একটা ছেলে বলে।

ওই কাটা দাগওয়ালা লোকটা বলে"ওকে যা ভাইরে পাঠা।ভাই এসে ভাইয়ের মালরে নিয়ে যাক।ছেলেটি চলে যায়। কিছুক্ষন পরই একটা লোক আসে।দেখে অনেল ধনীই মনে হলো।লোকটি ছোঁয়ার সামনে এসে ছোঁয়াকে দেখে চমকে যায়।আর দাগওয়ালা লোকটার গালে কষে থাপ্পর মারে।

"এইটা কে???

"কেনো আপনি যে মেয়ের কথা বলছেন সে ই তো।" গালে হাত দিয়ে বলে।

'এইটা সেই মেয়ে না"। রাগে বলে।

"আপনি তো আমাকে মেয়েটির ছবি দেন নি। শুধু বলছেন বাংলাদেশ থেকে একটা মেয়ে আসবে শাড়ি পরা,শাড়ির রঙ সাদা আর কালো।আপিনি যে এয়ারপোর্টের নাম বলছেন সে এয়ারপোর্টে এই মেয়েকেই পেয়েছি আর তুলে আনছি।"

"তদের দিয়ে কোনো কাজ হয় না।এই সেই মেয়েনা।উফফ তদের দিয়ে কি হবে!

"সরি ভাই।

'"মেয়েটার চোখ বেঁধে রাস্তায় গিয়ে ছেড়ে আয়। " 

"ওকে"।
.
.
.
.
আরশান ছোঁয়াকে কল করে।

"হ্যালো আরশান?এত্তোদিন আমার কল ধরনি কেনো?  জানো আমার কত্ত কস্ট হইছে???

"সরি ছায়া। আসলে আমি জলদি বিয়ে করতে চাইছি কিন্তু তুমি রাজি হওনি তাই। তাই একটু রাগ অভিমান  হইছিলো।কিন্তু এখন বুঝছি।এত্তোদিন তোমাকে ইগ্নোর করা আমার ঠিক হয়নি।সরি ছায়া প্লীজ" আরশান কাঁদতে থাকে।

"আরেএ আরশান।কেদোঁনা আমি রাগ করিনি।একটু কস্ট হইছিলো কিন্তু এখন ভালো হয়ে গেছে মন তোমার ভয়েস শুনে।"

"একটা ছোট্ট ব্যাপারে তোমাকে ওত্তোদিন এত্তোটা ইগ্নোর করছি তবুও......??

"হ্যাঁ তবুও ভালবাসি।তুমি যা ই করো তবুও ভালবাসি বুঝছো???" 

"লাভ ইউ ছায়া "। 

"লাভ ইউ টু।এখন কান্না থামাও। আর এক্ষুনি আমার সাথে দেখা করতে আসো।

'ওকে"। হেসে বলে।
.
.
.
.
ছোঁয়াকে একটা নিরিবিলি রাস্তায় রেখে চলে যায়।যাবার আগে চোখের বাঁধন খুলে দেয়।ছোঁয়া শরীর বড্ড দূর্বল। হাঁটতে পারতেছেনা।কিছু চিনেনা আবার হাতে টাকা নাই।কই যাবে কিছু বুঝতেছেনা।তবুও শরীরে শক্তি জোর করে এনে হাঁটতে থাকে গন্তব্যহীন।

অপূর্ব ছোঁয়াকে এত্তো খুঁজে ও পায়নি। রাত তখন ৮ টা হবে।অপূর্ব ক্লান্ত হয়ে একটা ব্রিজের পাশে বসে পড়ে।মুখে হাত দিয়ে কাঁদতে থাকে।

"ছোঁয়া কেমন আছো তুমি?? আসবেনা অপূর্বের বুকে।ছোঁয়া প্লীজ আসো। " অপূর্বের কান্না থামেনা।পুলিশ অফিসার অপূর্বের কাঁধে হাত রাখে। আশ্বাস দেয় ছোঁয়াকে খুঁজে পাবে।অপূর্ব কোনোমতে নিজের শরীরটা টেনে তুলে দাঁড়ায় আবার গাড়িতে উঠে ছোঁয়াকে খুঁজার আশায়।
ছোঁয়া ও তখন দুলিয়ে দুলিয়ে হেঁটে সেই ব্রিজের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো।মাথাটা ঘুরতেছিলো খুব।কিন্তু যখনই চোখ পরে সামনে দেখে অপূর্ব একটা গাড়ির দিকে যাচ্ছে।ছোঁয়া জোরে চিল্লিয়ে ডাক দেয় "অপূর্ব"।  ছোঁয়া দৌরে আসতে চাইছিলো কিন্তু মাথা ঘুরিয়ে সেখানেই পরে যায় আর মাথায় আঘাত লাগে।

অপূর্বের মনে হয় ছোঁয়া ডাকলো। কিন্তু পরে ভাবে "প্রত্যেকদিনই তো শুনি ছোঁয়া ডাকতেছে কিন্তু পরে তাকিয়ে দেখি ছোঁয়া নাই আজও হয়তো তেমনি "। তাই আর অপূর্ব তাকায় না গাড়িতে উঠে পরে।
.
.
.

.

আলয়ের কাজিন আসছে অনকজন আলয়ের বাসর ঘর সাজাতে।আলয় তো বার বার বলতেছে "আরেএ তোরা আমার ঘর ফুল দিয়ে সাজাচ্ছিস কেন"? 

"আরেএএ ব্র আজ বাসর রাত।ফুল ছাড়া হয় নাকি "। সবাই হেসে উঠে।

রাত ১১ টার দিকে কাজিনগুলো বাসর ঘর সাজিয়ে চলে যায়।যাবার আগে মায়া আর আলয়কে ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়।আলয় মায়া দুজনই লজ্জা পেতে থাকে।কিন্তু আলয় মনে মনে ভাবে সে ছেলে লজ্জা পেলে চলবেনা।নিজেকে সামলিয়ে মায়ার সামনে গিয়ে বলে "কেমন আছেন?  " 
"আপনি যেমন রাখছেন " 

"কেমন রাখছি"?

"খুব ভালো "। 

"ভালবাসতে পারবেন আমাকে"?

মায়া কথাটি শুনে শিউরে উঠে। আলয়ের চোখের দিকে তাকায়। ছেলেটির চোখ দুটি কত্তটা নিষ্পাপ। এই চোখের প্রেমেতো পড়েছে দুই দিন আগেই।আর আলয়ের প্রতি ও দূর্বল হয়তো ভালবাসে।

"কি হলো মায়া"? 

মায়া চোখ সড়িয়ে নেয়।আর বলে "জানিনা"।

আলয় বিছানায় বসে পড়ে।আর বলে "আপনার চুল গুলো কিন্তু অনেক সুন্দর। আমার ইচ্ছে ছিলো আমার বউয়ের চুল কোমর সমান লম্বা হবে।" আলয় হেসে বলে।

"ওহ ভালো তো "।

"আ..আ..আপনি জানেন আপনাকে আমি প্রথম দেখার পর প্রত্যেকদিন লুকিয়ে দেখেতাম।" কাঁপা কাঁপা গলায় আলয় বলে।

মায়া এইবার চমকানোর চূড়ান্ত পর্যায়ে।কি বলতেছে আলয়। 
"মা...মানে?"

"ভালবাসি মায়া"।

"আমিতো ডিভোর্সি মেয়ে"।

আলয় মায়ার সামনে এসে বলে "তবুও ভালবাসি"।

মায়া কেঁদে দেয় খুশিতে। আলয়কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।অনবরত কাঁদতে থাকে মায়া।আলয় মায়ার মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয়।
.
.
.
.
.
.
.
ছোঁয়ার জ্ঞান ফিরে, ছোঁয়া তাকিয়ে দেখে সে একটা ঘরে।জানালা দিয়ে থাকিয়ে দেখে মাত্র সন্ধ্যা হইছে এমন।

"অদ্ভুত। আমিতো রাতে এক রাস্তায় ছিলাম এখন সন্ধ্যা আবার একটা রুমে।  তার মানে কি আমি আবার কিডন্যাপ হইছে।হায় আল্লাহ এখন আবার কার হাতে পড়লাম।আমিকি আমার অপু কে পাবোনা।আমরা আর এক হবোনা।কেন এমন হচ্ছে।" ছোঁয়া মাথা নিচু করে ডুকরে কাঁদতে থাকে।

কেউ একজন এসে ছোঁয়ার মাথায় হাত দেয়।ছোঁয়া ভয় পেয়ে ছিটকে দূরে চলে যায়।কিন্তু মানুষটার মুখের দিকে তাকিতে ছোঁয়া অবাক হয়ে যায়।স্তব্ধ হয়ে যায়।যারে খুঁজতে এসে এত্তো কিছু হচ্ছে সে সামনে। ছোঁয়া কথা হারিয়ে ফেলে।কি করবে সে?? জড়িয়ে ধরবে??  নাকি সরি বলবে?নাকি কাঁদবে? ছোঁয়া হা করে অপূর্বের উপর তাকিয়ে থাকে।

অপূর্ব হেসে বলে "বুকে আসবেনা?? আমি যে চলে আসছি তোমাকে রেখে, মারবেনা???

ছোঁয়া আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা "অপুউউউউউ" বলে ঝাপিঁয়ে পড়ে অপূর্বের বুকে।পিঠে খামচে ধরে অপূর্বের। অপুউ হেসে ছোঁয়ার মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয় সে জানতো যে "ছোঁয়া আর সে বেশিদিন আলাদা থাকতে পারবেনা।"

"অপুউউউউ আমি সরি অপুউ।আমি তোমাকে ভুল বুঝছিলাম।আমি তোমাকে বিশ্বাস করিনি।আমাকে মাফ করো অপুউ।আমি তোমার পায়ে পড়ে ও মাফ চাইবো।" ছোঁয়া অপূর্বের পায়ে ধরতে চায়। অপূর্ব ছোঁয়ার হাতের বাহুতে ধরে আবার বুকে জড়িয়ে ধরে। 

"পাগলি তোমার স্থান আমার বুকে পায়ে না সবসময় বুকে থাকবা। এইবার বলেন তো কি জন্য আমার সাথে আপনি এমন করেছেন ম্যাম"।

ছোঁয়া ঠোঁট ফুলিয়ে কান্নার ভান করে সব বলে।অপূর্ব জোরে হেসে উঠে।

"তুমি এইটার জন্য এমন করছো??? এই ছোট ব্যাপারটার জন্য আমরা এত্তোদিন দূরে ছিলাম।" অপূর্ব জোরে হেসে উঠে আবার।

"তুমি হাসতেছো?? যাও কথা বলবনা জানো কত্ত কস্ট হইতো আমার ওই মেয়ের সাথে দেখে।একটাবার ও তো বলোনি তোমার মেয়ে ফ্রেন্ড আছে। সব তোমার দোষ।" ছোঁয়া মুখ ঘুরে অন্য দিকে অভিমানে তাকায়।অপূর্ব ছোঁয়ার সামনে গিয়ে বলে।

"ওমা এখন সব দোষ আমার।একটু দোষ তো আছেই।তোমাকে সব বলা উচিৎ ছিলো।আচ্ছা এজন্য সরি।" অপূর্ব কানে ধরে বলে।

ছোঁয়া হেসে দেয়।আর অপূর্বর বুকে আবার ঝাপিঁয়ে পড়ে।অপূর্ব ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
.
.
.
.
রাত ২ টা।অপূর্বের বুকে ছোঁয়া শুয়ে আছে।ছোঁয়ার জ্বর উঠছে অনেক। জ্বরের ঘোরে হিবিজিবি বলতে থাকে।

"এই অপুউ"??

"কিহ??

"আমি তোমাকে কত্ত কস্ট দিছি। এত্তোদিন দূরে রাখছি।অপমান করছি।মা-বাবা থেকে দূরে দেশ থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করছি তবুও...........

"হ্যাঁ ছোঁয়া।তবুও ভালবাসি। তুমি ছাড়া অপূর্ব অচল জানোনা??  যত্ত ভুলই থাকুক ছোঁয়া শুধু অপূর্বের আর অপূর্ব সারাজীবন ছোঁয়াকেই ভালবাসবে"। অপূর্ব ছোঁয়ার কপালে কিস করে।ছোঁয়া কেঁদে দেয়।এত্তো ভালো কেনো অপু??

"এই অপুউ"

"কি "? 

"আসো রোমান্স করি।আমার তোমার ভালবাসা পেতে ইচ্ছে হচ্ছে।" ছোঁয়া বাচ্চাদের মতো আবদার করে বলে।

অপূর্ব ভ্রু-কুঁচকিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকায়।

 "না না এসব হবেনা এখন। অসুস্থ তুমি ঘুমাও"।

"না প্লীজ। প্লীজ।আমি আদর খাবো।করো করো।

অপূর্ব ছোঁয়াকে বুকের সাথে আরো লেপ্টিয়ে বলে।"সুস্থ হও পরে জ্বালিয়ে মারবো সহ্য কইরো।এখন ঘুমাও লক্ষিটি। " 

"আমি কিন্তু কেঁদে দিবো। " ছোঁয়া ঠোঁট উল্টিয়ে ফেলে বাচ্চাদের মতো"।

"একদম বাচ্চা হয়ে গেছো।আচ্ছা করতেছি একটা কিস করবো পরেই কিন্তু ঘুমাবা"

"লিপস কিস কিন্তু"।

অপূর্ব ভ্রু-কুঁচকিয়ে কতক্ষণ ছোঁয়াকে দেখে।  দেখা শেষ হলে,ছোঁয়ার জ্বরের গরম দুটি ঠোঁট  অপূর্ব নিজের ঠোঁটের দখলে নিয়ে নেয়।আজ ছোঁয়ার লজ্জা শরম বলতেই নেই জ্বরের ঘোরে।তাই অপূর্বের সাথে নিজেও তালে তাল মিলিয়ে কিস করতে থাকে।

পরিবিষ্ট:
ছোঁয়া রাস্তায় অজ্ঞান হওয়ার পর। অপূর্ব গাড়িতে উঠে চলে যাচ্ছিলো তখন চোখ পরে একটু দূরে একটা মেয়ে রাস্তায় পড়ে আছে।পুলিশের গাড়িসহ গিয়ে দেখে ছোঁয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।আর তক্ষনি বাসায় নিয়ে আসে ছোঁয়াকে অপূর্ব"।

"কস্টের ছায়া সড়ে গেছে এইবার সুখের নীড়ে পৌঁছে গেছে। চলতে থাকুক তাদের এই সুখের সময় আজীবন। সত্যি ভালবাসার মরণ নেই।"❤

সমাপ্ত ❤

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com