গল্প : বাসর রাত
★রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিলাম । আমার বিয়ে করা বউটা বিছানায়
বসে আছে । জানেনেই তো আমার জন্যই অপেক্ষা করছে । তিন মাসে আগে আমদের
বিয়ে ঠিক হয়েছে । একটা পিক এ আমার বউটাকে দেখেছিলাম ।
সেই থেকে আমার ঘুম হারাম হয়েগেছে । কিন্তু আমারতো এখন লজ্জা লজ্জা লাগছে । থাক বাসর রাত লজ্জা পেলে চলবে না বিড়াল মারতে হবে
তো । তাই আবল তাবল না ভেবে বিছানায় উঠতে যাব তখনি…… .
-এই কি করছেনটাকি…??? ( আমার বউ )
-কেন বিছানায় উঠছি ..। (আমি হালকা ভয় পেয়ে) -কেন বিছানায় উঠছেন কেন?? -কেন তাহলে কি করবো ??
-কি করবেন মানে ???
-না মানে বিছানায় উঠবো না কেন ???
-না উঠতে পারবেন না ।।
-তাহলে কি করবো ???
-আমি কি জানি । জান সোফায় গিয়ে বসে থাকেন ।
.
.
আমি উৎস । বিদেশ থেকে লেখাপড়া শেষ করে মাত্র তিন দিন হলো দেশে এসেছি । আর এরই মধ্যে আমার জীবনের 12টা বাজিয়ে দিল । কি আর করা বিয়েটা করতে হলো । মেয়েটার নাম অনামিকা । কিন্তু আমি ভেবেছি ঢং কইরা অনু ডাকবো । কিন্তু মা ভাবি মিলে কেমন বউ এনে দিল আমাকে । বিছানায়ই উঠতে দিচ্ছে না । আমি আবার তাহসান স্টাইল তো তাই মেযেদের সাথে তেমন ইজি ফিল করতে পারি না । কিন্তু বাসর রাতেই আমার সাথে অত্যাচার করা হচ্ছে । না এটা হবে না …. .
-শুনো ( এটা বলতেই আমার দিকে গরম চোখে তাকালো তাই ভয় পেয়ে বললাম…
-না মানে শুনুন ।
-কি ….???(অনামিকা)
-দেখো তুমি না মানে আপনি আমার বিয়ে করা বউ ।(আমি)
-সো হোয়াট…??(অনামিকা)
-না মানে একটু বিছানায় উঠি ??? এটাতো আমারও বিছানা …….ভাগ আছে ।
-ওয়েট ওয়েট আপনারও ভাগ আছে রাইট ।বাট আপনাকে বিছানায়
উঠতে হলে কিছু কাজ করতে হবে । (অনামিকা)
-কাজ করতে হবে কেন ??? আচ্ছা কি কাজ ?? (আমি)
-আপনাকে কিছু শাস্তি আর জরিমানা দিতে হবে ???
-অ্যাঁ …..
-হুমমমম । আপনি যদি এই গুলো সঠিক ভাবে পালন করেন তাহলেই
বিছানায় উঠতে পারবেন ।
.
মেয়েটার কথা শুনে মাথা ঘোরাচ্ছে । কি বলে এই মেয়ে ।
বাসর রাতের মত একটা রাত । স্বামীকে সালাম করে আদর করবে কিনা স্বামীর কাছ থেকে জরিমানা নিচ্ছে । .
-এই যে বির বির করে কি বলছেন ?? (অনামিকা)
-না কিছু না । আচ্ছা আমার সাথে তো তোমার কোনদিন
কথাই হয় নি । তাহলে শাস্তি আর জরিমানা কিসের ?
আমি কি করেছি ????(আমি)
-কি করেছেন শুনবেন??? (অনামিকা)
-হুমম বলো …. সরি বলুন ।(আমি)
-শুনুন আমি জীবনে কোনদিন প্রেম করিনি । কারন আমি
আমার স্বামীর সাথে প্রেম করবো বলে । (অনামিকা)
-কিযে বলেন না । (আমি)
-ওই এত ঢং করতে হবে না । আপনার জন্য সেই স্বপ্ন আমার পূরন হয় নি ।
ভেবেছিলাম হবু স্বামীর সাথে বিয়ের তিন মাস আগে থেকে প্রেম করবো ।
তিন মাস আগে বিয়ে ঠিক হইছে ঠিকই আমি প্রেম করতে পারলাম না ।(অনামিকা)
-সো স্যাড ….!!!! (আমি)
-এখন আমি প্রতিশোধ তুলবো । (অনামিকা)
-কি করবেন ?? (আমি)
-তিন মাস প্রেম করতে পারি নি সে হিসাব পরে হবে । তিন মাসের প্রতি সপ্তাহে 2 দিন ঘুরতাম । সেখানে দুজনের খরচ হতো 4 হাজার এর মতো
তাহলে আমার 2 হাজার । মাসে চার সপ্তাহ । তিন মাসে 12 সপ্তাহ । তাহলে আমার
24 হাজার টাকা হচ্ছে । টাকা টা নিয়ে আসুন । (অনামিকা)
-কিহ? এখন তোমাকে এত টাকা দিতে হবে ?? (আমি)
-রুম থেকেই বের করে দিব কিন্তু ….(অনামিকা)
-আচ্ছা দিচ্ছি ।
. .
কি আর করা টাকা টা দিতে হচ্ছে এখন । না জানি এই
আমার জীবনে কত টাকা এভাবে মেরে দিবে ।……
.
-এই নিন টাকা । (আমি)
-পুরোটাই আছে তো ??? (অনামিকা)
-আপনি গুনে নিন । (আমি)
-থাক কম হলে পরে নিয়ে নিব । এখন নেক্সট…..
-আবার কি….
-শুনুন প্রতি সপ্তাহে 2 দিন যে ঘুরতে যেতাম আপনার তো গিফট দেওয়া লাগতো
সেই বাবদ 15 হাজার টাকা নিয়ে আসুন ।
-আমার কাছে তো আর নেই ।
– নেই মানে । জান বাইরে জান ।
-আচ্ছা তুমি এখন না মানে আপনি এখন টাকা নিযে কি করবেন ??? (আমি)
-জরিমানা নিচ্ছি । বেশি কথা না বলে জান টাকা নিয়ে আসুন ।নয়তো দুর হন ( অনামিকা)
.
হে আল্লাহ আমি কার হাতে পরলাম ।আমার বাসর রাত কি জরিমানা দিতে দিতেই যাবে …………..
.
কি আর করা ।আবার 15 হাজার টাকা এনে দিলাম । …
.
-হুম ঠিক আছে । এখন আমি যে তিন মাস প্রেম করতে পারি নি
তার হিসাব হবে । (অনামিকা)
-আবার কত টাকা দিতে হবে । আমার কাছে কিন্তু আর টাকা নেই । (আমি)
-এবার টাকা দিতে হবে না । তিন মাস প্রেম করতে না পারার
জন্য মাসে তো 30 দিন । তিন মাসে 90 দিন । 90 বার কানধরে উঠবস করতে হবে । (অনামিকা)
-ওয়াট । আমি উঠবস করবো ?? (আমি)
-জি হ্যাঁ ।
-ইম্পসিবল ।
-গেট আউট ।
-এতো রাতে আমি কোথায় যাব ???
-জানি না । তারাতারি রুম থেকে বের হন ।
. .
উপায় না পেয়ে ভাবলাম শাস্তি একটু কমিয়ে নেই । তাও আজকের মতো ঘুম টা অন্তত ভালো হোক। .
-বলছিলাম কি । আমার তো এখানে কোন দোষ নেই । আমি তো দেশে ছিলাম না তাই না । তা না হলে তো প্রেম করতাম । তাই বলছি কি শাস্তি টা একটু কম করা যায়
না ???? (আমি)
-আচ্ছা 80 বার ???(অনামিকা)
-না না একটা কথা বলি ….. 10 বার করি । -কিহ এত কম ??
-দেখো আজ অনেক টাইয়ারড । এত বার উঠবস করলে
আমাকে আর খুজে পাওয়া যাবে না ।তাই বলছি একটু শাস্তি টা কম করুন না ।
-ওকে 20 বার করুন ফাস্ট ।
. ভাবলাম এবার অনেক কম হইছে । ভাগ্যের কি করুন পরিনতি । বাসর রাতে
উঠবস করতে হচ্ছে । জানি না কি পাপ করেছিলাম ।
.
. এইভেবে কান ধরতে যাবো তখনি…..
-শুনুন বেলকুনিতে গিয়ে দেখে আসুন তো চাদ উঠেছে কিনা । (অনামিকা)
.
শাস্তির ভয়ে তারাতারি দেখতে গেলাম । দেখি অনেক বড় চাদ উঠছে ।
বাইরে চাদের আলোতে ঝিকমিক করছে । আজকের চাদ টা আমার
ঘরের চাদের মত এত সুন্দর নয় । যাই হোক রুমে এসে বললাম
আপনার মত একটা চাদ উঠেছে এত বড় ।
খুশি হয়ে বললো …. -ওকে চলো …(অনামিকা)
-কোথায় ? (আমি)
-বেলকুনিতে
. . যাক শাস্তি টা মাফ হয়ে গেল । আমিও খুশি মনে বেলকুনিতে
গেলাম । .
তার 10 হাত দুরে দাড়িয়ে আছি ।
বেলকুনির সোফায় বসে ……
-এখানে বসুন । (অনামিকা) .
তার থেকে দুরে সরে বসলাম ।
-একি এত দুর কেন ???(অনামিকা)
-না আপনি যদি কিছু মনে করেন ??(আমি)
-কিছু মনে করবো মানে । আমি তোমার বোউ না বুদ্ধু ।
-হুমম ।
-কাছে আসো ।
.
কাছে গেয়ে বসলাম । অনামিকা আমার হাত ধরে বসে রইলো । আমি কোন কথা বলছিনা ।
অনামিকা বললো কিছু বলছো না কেন ?।
আমি বললাম কি বলবো ।
অনামিকা মনটা খারাপ করে আমার হাত জরিয়ে কাধে মাথা রেখে বসে রইলো ।
কিছুক্ষন পর…..
-উৎস….(অনামিকা)
-হুমম বলো….(আমি)
-আই লাভ ইউ….
-কবে থেকে (আমি)
-তিন মাস আগে থেকে ?? (অনামিকা)
-আই লাভ ইউ ঠু ।(আমি)
. হঠাৎ আমার ঠোটে মিষ্টি একটা নরম ঠোটের স্পর্শ ….
নিজেকে মনে হয় হারিয়ে ফেলেছি ।
প্রকৃতির সব কিছু যেন থমকে গেছে ।
কিন্তু আমার মনের ভেতর ঢেউ খেলছে….
মধুর সময়টা পার করার পর…অনামিকার দিকে তাকালাম…
লজ্জায় আমাকে জরিয়ে ধরে আমার বুকে মুখ লুকালো । চাদের জোছোনায় ওর মুখের একপাশ টা ঝলমল করছিল …
কিছু চুল ওর চওল টা ঢেকে দিতে চাচ্ছে …
আমি চুলে হাত দিতেই ও আরো শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে
ধরলো ।আমিও ওকে পরম যত্নে আগলে রেখেছি……
.
-আমাকে এভাবেই সব সময় আগলে রাখবে তো ???(অনামিকা)
-হুম ….(আমি)
-কখনো কষ্ট দিবা না তো ??? (অনামিকা)
-তোমায় কখনোই কষ্ট দিব না ।। খুব ভালোবাসবো । (আমি)
-মাঝে মাঝে জরিমানা চাইলে দিবা তো???(অনামিকা)
.
তখন ওর মুখটা তুলে কপালে একটা আলতো চুমু একে
দিয়ে বল্লাম …
-আচ্ছা দিব ।
-আর কখনো দুরে চলে যাবে না তো ???(অনামিকা)
কখনও না (আমি)
আর এভাবে রাত্রি ভোর হয়ে এলো।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com