গল্পঃ বাড়িটি ভূতুড়ে || পর্ব- ০২
অর্থাৎ মহুয়া ব্যালকনিতে নেই। বাড়িতে ভূত ঢুকছে মনে হয়। তাড়াতাড়ি আবার রুমে ঢুকে গেলাম। ঢুকে দেখি মহুয়া বিছানায়। শিট,হচ্ছেটা কি এসব। মহুয়ার দিকে ভালো ভাবে তাকানোর আগেই রুমের দরজা কেও ধাক্কা দিতে লাগলো।আমি দরজার দিকে তাকিয়ে আবার বিছানায় তাকিয়ে দেখি,মহুয়া নেই। এখন কি হবে?
কি হবে আবার। শেষ মুহূর্ত এসে গেছে।
আজ মহুয়ার ভিতর কোনো ভূত ঢুকেছে নিশ্চয়। কেও নেই আশেপাশে। জনবহুল ও অনেক দূরে। পালাবো বা কোথায়।এদিকে কোনটা আসল বউ,আর কোনটা নকল বউ সেটাই বুঝতেছিনা।রুমের দরজা ধাক্কাধাক্কি করা অফ হয়ে গেছে। রুম পুরো শান্ত। শুধুমাত্র আমার নিশ্বাসের ফুস ফুস শব্দ দেওয়ালে উপচে পড়ছে। মাথাটা হটাৎ একটা চক্কর মেরে উঠলো। আর কিছু মনে নেই। সোজা অজ্ঞান।
.
– এই উঠো? এখানে কেন তুমি?
– কেক কে? কে রে? ( লাফ মেরে উঠে)
– আরে আমি মহুয়া।তুমি ফ্লোরে শুয়ে আছো কেনো?
– কাল রাতে সাপের খেলা দেখিয়ে,এখন ন্যাকামি করতাছো?
– কি বলো এসব। আমি সাপের খেলা দেখোবো কেন। রাতে কিছু খেয়ে এসেছো নাকি।
– কিছু খেতে দিয়েছো কি?
– আসলেই তো? আমার তো কিছুই মনে নেই।
– কিছুই না?
– না, দুপুরবেলা রান্না করার জন্য নিছে গেছিলাম।এরপর আর কিছু মনে নেই।
– তো এখন কোথা থেকে হুশ এসেছে।
– আমি তো বিছানায় থেকেই উঠেছি।কিন্তু তুমি ফ্লোরে কেনো।
মহুয়াকে এখন কিছু বলা যাবেনা। পরে আবার একা একা ভয় পাবে। তাই কথা কাটিয়ে ঘুরিয়ে দিলাম।
– আসলে তুমি অজ্ঞান ছিলে। তাই আমি তোমার সেবা করতে করতে,এখানে এসে ঘুমিয়ে গেছি।
– কি বলো এসব। বিছানায় কি হয়েছে।
– কিছু হয়নি। ঘুমের তালে কোনটা বিছানা আর কোনটা ফ্লোর,সেটাই ভুলে গেছিলাম।
– তুমি আসলেই একটা পাগল। নিছে আসো,নাস্তা বানাচ্ছি।
– হুম বানাও। আর শুনো,আজ অফিসে যাবোনা।
– এইটা নতুন করে বলার কি আছে। আজ শুক্রবার। অফিস তো এমনিতেই বন্ধ।
– ওওও, মনে ছিলো না।
– আচ্ছা,তোমার হয়েছে টা কি বলবা?
– উঠে বসেছে।
– কি
– দেখাচ্ছি।
এইটা বলেই মহুয়াকে জড়িয়ে ধরলাম। মেয়েটিও কিছুক্ষণ ঠাসটুস কিস মেরে নিছে চলে যায়।( নিচ তলায় নাস্তা বানাতে গেছে।)
আমি ব্যালকনিতে বসে বসে ভাবছি। কাল রাতের ব্যাপারটা মোটেও স্বাভাবিক না।
এমন ভয়ংকর ঘটনা মুভি আর গল্পে দেখেছি। বাস্তবে প্রথম দেখলাম,তাও আমার সাথে।
কিন্তু এর সমাধান কি। বাড়ি ছেড়ে দিবো? কিন্তু বাড়ি ছেড়ে দিলে তো আরেক বিপদ।
নতুন বাসা খুজতে খুজতে আরো ২ সাপ্তাহ লাগবে।আবার ২ মাসও লাগতে পারে।
এই কয়দিন কি এখানেই থাকবো? থাকতেই হবে।
এছাড়া উপায়ও যে নেই। ভাবনার মাঝে হটাৎ নিচ তলা থেকে মহুয়ার চিৎকার ভেসে এলো।
.
আমি লাফ মেরে চেয়ার থেকে উঠেই দৌড় দিলাম। বউডা মনে হয় ভূতের কবলে পড়ছে।
তাড়াহুড়া করে যেতে গিয়ে, দরজার সাথে ধাক্কাও খেয়েছি। তবুও মাত্র ১০ সেকেন্ডে নিছে গেলাম।
গিয়ে দেখি, মহুয়া দাঁড়িয়ে আছে,আর গ্যাসের চুলার পাশে একটা তেলাপোকা।
এই মেয়েটাও পারে বটে। কলিজাটা প্রায় বের হতে যাচ্ছিলো।
সামান্য তেলাপোকা দেখে এত জোরে চিৎকার দেওয়া লাগে?
এরপর আমি যে তেলাপোকাটাকে জানালা দিয়ে ফেলে দিলাম,
সেটা তো বড় কথা নয়।বড় কথা হচ্ছে,দরজার সাথে যে ধাক্কা খেয়েছি, এখন হাতের বাহু ব্যাথা করতেছে।
মহুয়াকে ধমক দিয়ে থামালাম। ধমকের সাথে সে সাইলেন্ট হয়ে, সোজা গিয়ে রান্না করতে লাগলো। একি? এক সেকেন্ডেই ভয় শেষ? আসলেই মেয়েরা তেলাপোকা ভয় পায়? নাকি ঢং ধরে কে জানে।
যাইহোক, আমি ফ্রেশ হতে উপরে গেছি।মহুয়া রান্না করতেছে। ওয়াশরুমে ঢুকে মাত্র ফ্রেশ হওয়া শুরু করলাম,ওমনি আবার মহুয়া চিৎকার মেরে উঠলো। আমি উপর থেকে বললাম” ওটা তেলাপোকা, রাক্ষস না”। আমার কথার পরও মহুয়া আরো জোরে চিৎকার মারা শুরু করে। এবার আর সুবিধের ঠেকলো না। চিৎকারের মাঝে মহুয় বলল,” রিয়াজ, ভূত ভূত “। আর কে থামায় আমায়।সোজা ওয়াশরুম থেকে এক দৌড়ে নিছে গেলাম। গিয়ে দেখি মহুয়া কিচিং রুমের কোনায়, মুখ গুজে বসে বসে কাঁপছে। আমি গিয়েই জড়িয়ে ধরে বললাম,
– কই ভূত।এখানে কিছুই নেই।
– না রিয়াজ,আমি একটা ছায়া দেখেছি।এইজে জানালার বাহিরে।
– আরে,ওটা তোমার মনের ভুল। কিছুই নেই।
– সত্যিই আমি দেখেছি।বিশ্বাস করো?
– ভালো করেছো।চলো এবার রান্না করো।আমি তোমার সাথেই আছি।
– ষিহহহ, তোমার প্যান্ট কই।
কি লজ্জা কি লজ্জা। প্যান্ট তো ওয়াশরুমে। ঢং,এতে ষিহহ বলার কি আছে। বউ এই তো দেখছে। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে আছি। ও রুটি বানাচ্ছে। ১০ মিনিট পর শেষ হলো সব।তাকে নিয়েই চলে এলাম রুমে। সে সাজুগুজু করছে,আর আমি ফ্রেশ হচ্ছি। অবশেষে ফ্রেশ আর নাস্তা,দুটোই সম্পুর্ন। দুজনে ব্যালকনিতে বসে বসে কপি খাচ্ছি। সে কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত আছে বুঝতে পারছি। কিন্তু আমিও যে কাল রাতের ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত, সেটা বুঝতে দিচ্ছিনা। কিছুক্ষণ পর মহুয়া বলল,
– আচ্ছা,একটা কথা বলার ছিলো।
– হুম বলো?
– কালকে দুপুরবেলা একটা ঘটনা ঘটেছে।
– কি ঘটনা?
– এই বাড়িতে ভূত আছে।
– মানে?( চমকে উঠে বললাম)
– হ্যা, কাল দুপুরবেলা আমি দেখছি।
– কিভাবে, কোথায়?
– আমি কিচিং রুমে গেছিলাম।হটাৎ জানালায় চোখ যেতেই দেখি, একজন লোক আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি চমকে উঠেছি। লোকটি আমার দিকে তাকাতে তাকাতে হটাৎ হাওয়া হয়ে যায়।
– এরপর?
– পরে আমি দৌড় দিতে যাবো,তখনি দেখি লোকটি বাসার ভিতরে। শূন্যে ভাসছিলো লোকটি। এরপর চোখ মেলে দেখি সকাল হয়ে গেছে, আর তুমি ফ্লোরে শুয়ে আছো। আর কিছু মনে নেই।
– আগে বলোনি কেন এসব?
– তুমি ভয় পাবা তাই।
– আহারে বউ আমার। কাল রাতে যে নির্যাতন
করেছো, এইটা বুক ফেটে বের হতে চাচ্ছে।মন চায় সব বলি তোমায়।কিন্তু ভয় পাবে, তাই বলিনি। এখন দেখি আমার আগে তুমিই দেখেছো।
– তোমার সাথে কি হয়েছে?
– ওই যে? সাপের খেলা।
– ভূতে সাপের খেলা দেখায়?
– আরে না, শুনো তবে।
এরপর মহুয়াকে সব খুলে বললাম। মহুয়াও আমার কথা শুনে চিন্তিত। এখন একটাই পথ,এই বাড়ি ত্যাগ করতে হবে। মহুয়া নিজেই বলল বাড়ি ছাড়ার কথা। আমিও হ্যা সম্মতি দিলাম। কিন্তু এখন হুট করে বাড়ি ছেড়ে দিলে,নতুন বাড়ি পাবো কোথায়।আরেক ঝামেলায় পড়লাম। কপিতে চুমুক দিয়ে আমি ভাবনায় ঢুবে আছি। কি থেকে কি করা যায়,সেটা নিয়েই ভাবছি। কিছুক্ষণ পর মহুয়া কি যেনো মনে করে বলল,
– রিয়াজ, আমরা এই বাড়ি ছাড়বোনা।
– মানে? কি বলছো।
– হ্যা,ঠিকই বললাম।
– কিন্তু একটু আগে তো বললা ছেড়ে দিবা।
– হুম বলেছি,কিন্তু এখন বলছি তো ছাড়বোনা।
– আরে বাবা কেনো ছাড়বেনা।
– আমরা তাদের হেল্প করবো।
– তোমার কি মাথা খারাপ?
– না, আমরা এই বাড়ি ছেড়ে যাবোনা ফাইনাল।
– আমি পারবোনা । আজ সন্ধার মধ্যেই এই বাড়ি ত্যাগ করবো।
– ওই, তোকে বলছি না? এই বাড়ি ছাড়া যাবেনা, আমি ছাড়তে দিবোনা।তোরা দুজনেই থাকবি এই বাড়িতে।
প্রচন্ড রাগের উপর মহুয়া কথা গুলো বলল। একদম ক্ষেপে গেছে। এরকম গরম হয়ে কথা বলেনি কখনো। আমাকে ধমকটা দিয়েই মহুয়া চেয়ার থেকে উঠে সোজা রুমে চলে গেলো। আমি হা করেই তাকিয়ে আছি। এমন ভাবে মহুয়া বলল কেন? ওয়েট ওয়েট, মহুয়া তো বলল তোরা দুজন। মহুয়া এখানে দুজন ফেলো কোথায়। তবে কি ভূত এখন মহুয়ার শরীরেই আছে? ওহ মাই গড।এখন তো আরেক ঝামেলা। আমি ধীরে ধীরে রুমের দিকে আসলাম। এসে দেখি মহুয়া বিছানায় বসে ফুলছে। ফুস ফুস করে নিশ্বাস নিচ্ছে।মনে হচ্ছে রেগে আছে। আমি ধীরে ধীরে ওর কাছে গিয়ে কাধে হাত রাখতেই,মহুয়া বিছানায় পড়ে যায়। একেবারে অজ্ঞান হয়ে গেছে। নিশ্চয় ভূত দেহ ছেড়ে দিছে। এরপর আমি মহুয়াকে কয়েকবার ডাক দিতেই মহুয়া চোখ মেলে। এরপর কুকাতে কুকাতে বলল, ওর নাকি শরীর খারাপ লাগছে। লাগবেই তো, সবার লাইফে ভিলেন থাকে শশুর, আমার লাইফের ভিলেন হচ্ছে ভূত।
ঝটপট করে,১০ মিনিটের মধ্যে ব্যাগ ঘুছিয়ে ফেলেছি আমি। এক্ষুনি এই বাড়ি ছাড়তে হবে।আর এক মুহূর্তও না। মহুয়াও আমাকে সাহায্য করলো। এরপর দুজনেই বের হওয়ার জন্য দরজা খুলতে গিয়ে দেখি,দরজা অটোমেটিক লক হয়ে গেছে। ভয়ে কপালে ঘামের চিহ্ন বসে যায় আমার। অনেক্ষন টানাটানি করার পর হটাৎ মহুয়া বলল,” কই যাস তুই? “। আমি মহুয়ার এমন প্রশ্ন শুনে আলিফ হয়ে গেছি। অর্থাৎ মূর্তির মত সোজা হয়ে গেলাম। মহুয়া আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর,ঠাসস করে এক চড় মারলো আমাকে। এরপর চোখে কালো রঙের আলো দেখছি।অর্থাৎ অজ্ঞান।
চোখ মেলে দেখি,চারপাশে অন্ধকার। একি, অন্ধকার হলো কেমনে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সন্ধ্যা ৬ টা বাজে।হায় আল্লাহ, এতক্ষন অজ্ঞান ছিলাম। কিন্তু মহুয়া কোথায়। লাফ মেরে ফ্লোর থেকে উঠে মহুয়াকে খুজতে লাগলাম। মোবাইলের ফ্লাশ লাইট অন করে দেখি মহুয়া ব্যালকনিতে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। আমি মহুয়াকে টেনে টুনে কাধে নিলাম।
এরপর কাধে নিয়েই,এক দৌড়ে নিছে চলে এসেছি। আমাকে পালাতেই হবে। দরজা খুলেই বাড়ির বাহিরে চলে এলাম। এরপর সামনের মাঠের মধ্যে মহুয়াকে রেখে, কয়েকবার ডাক দিতেই,সে উঠে গেলো। মহুয়া চোখ মেলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি তাকে জড়িয়ে ধরি শক্ত করে। পাগলি মেয়েটি কান্নাও করে দিলো। এরপর আমি তার কান্না থামিয়ে, হাত ধরে দৌড় দিতে লাগলাম। আর ৫ মিনিট পরই মাঠের শেষে রাস্তায় উঠতে পারবো। ব্যস,তাহলেই বেচে যাবো আমরা। এমন সময় দেখি, এক লোক মাঠের দিক থেকে রাস্তার দিকে যাচ্ছে। যাক,কোনো মানুষের দেখা ফেলাম। এরপর লোকটিকে ডাক দিয়েই উনার কাছে গেলাম।
– ভাই,আমাদের হেল্প করুন প্লিজ।
– আরে,কি হইছে আপনাগো । এরাম কইরা ঘাইমা আছেন কেন।
– ওইজে দেখছে বাড়িটি।ওখানে ভূত থাকে।আমরা পালিয়ে এসেছি।প্লিজ,আমাদের সাথে রাস্তার দিকে একটু আসুন না।
– আল্লাহ,কি কইতাছেন। হজ্ঞলে কয় ওই বারিতে ভূত আছে।তয় আপনাগো কে কইছে এই বারিতে থাকতে।
– সে অনেক কথা।আপনি একটু চলুন না।
আমার কথা বলার মাঝেই মহুয়া আমাকে হাত দিয়ে খোচা মারতে লাগলো।
আমি বুঝিনি ও কি বলছে,এরপর মহুয়া আমার কানে ফিস ফিস করে বলল,” লোকটির পা কোথায়?।
এতক্ষণ পর আমিও খেয়াল করলাম উনার পায়ের দিকে। উনার পা নেই বললেই চলে।
এর উপর আবার শূন্যে ভাসছে। আমি গলা দিয়ে, এক ঢোক ছেপ গিলে থ হয়ে গেছি।
এ আমরা কার কাছে হেল্প চাইলাম।উনি নিজেই তো ওটা।
মনে মনে এসব বলতেই হটাৎ লোকটি ভয়ংকর ভাবে,জোরে চিৎকার দিয়ে অট্টহাসি দিতে লাগলো।
উনার হাসির শব্দ এতই ভয়ংকর যে, মহুয়া অজ্ঞান হয়ে আমার কাধে ঠেলে পড়ে।
মহুয়াকেও বা আর কি সামাল দিবো।
মহুয়ার সাথে সাথে আমি নিজেও অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম।
আবার চোখ মেলে দেখি,আমরা সেই বাড়িতেই পড়ে আছি।
নিছ তলার ফ্লোরের উপর। মহুয়াও আমার পাশে শুয়ে আছে। আজ মনে হয় আর রক্ষা নেই।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com