তোমায় আমার প্রয়োজন | পর্ব- ৫
– হ্যালো আসসালামু আলাইকুম
– হেই
– কে বলছেন ?
– তাওহীদ , তাওহীদ মাহবুব বলছি
– কোন তাওহীদ ?
– যাকে দুই দিন পরে বিয়ে করবে তাকেই ভুলে গেছো
– মানে
– জ্বি i am Tawhid Mahbub , your future husband
.
কথা শুনে পুরো তব্দা খেয়ে যায় তনু । তার মানে ইনিই তাওহীদ সাহেব । তাওহীদ মাহবুব যার কথা আফরোজ আপু বলছে । এই সেই তাওহীদ যার সাথে তনুর বিয়ে । তনুর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না । প্রচন্ড গতীতে হার্টবিট টা ধুকপুক ধুকপুক করতে থাকে তার । মাশা-আল্লাহ ভয়েস তো এমন যে কেউই ক্রাশ খাবে । ইসসস দেখতে জানি কেমন হবে এই লোক ? প্রায় ৫ মিনিট ফোন কানে অথচ কথা নেই আর অপরপাশে তাওহীদ হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে । পরে রেগে গিয়ে এক ধমক দেয় তাওহীদ
.
– hello , excuse me , আছেন নাকি গেছেন ?
– জ্ব,,,জ্ব,,,জ্বি বলুন
– কানে প্রবলেম আছে , আই মিন শুনতে সমস্যা হয় নাকি
– নাহ তো
– তাহলে হ্যালো হ্যালো করছি উত্তর নেই কেন নাকি হ্যালতে হ্যালতে একদম শুয়েই গেছেন
– তেমন কিছু না
– কি করা হচ্ছে এখন
– ঘুমাচ্ছিলাম
– এত তারাতারি কেউ ঘুমায় নাকি
– আমি ঘুমাই
– বিয়ের পরে কি করবা
– মানে
– মানে মানে করা অফ করো , বিয়ের পরে আমার সাথে রাত ৪/৫ টা অবদি সজাগ থাকতে হবে , বুঝলা
– ওহ
– প্রশ্ন করলা না যে
– ওহ সরি , কেমন আছেন আপনি
– what……..
– আপনি না বললেন প্রশ্ন করি নি যে
– আরে ধুর , আমি বলতে চেয়েছি আমি নাম্বার কোথায় পেয়েছি ? কে দিয়েছে ? ব্লা ব্লা ব্লা
– আপনার পরিবারের তিন জনের কাছে আমার নাম্বার আছে , আন্টি আংকেল আর মাইশা , খুব সম্ভবত মাইশা হয়তো দিয়েছে , জানার পরেও ন্যাকামি করবো কোন দুঃখে
.
এই প্রথম কোন মেয়ের সাথে কথা বলে তাওহীদের ভালো লাগছে । একদম সোজাসাপ্টা কথা বলে । আর ভয়েস টাও মিষ্টি । দেখতে না জানি কেমন হবে ?
.
– দেখা করবা ?
– নাহ
– কেন না কেন , আর তাওহীদ মাহবুব কে কখনো কোন মেয়ে না করে নাই
– আমি তো সব মেয়ে নই , আর তাছাড়া দুইদিন পর তো আমি আপনার বাসাতেই যাবো তখন দেখবেন
– ok , take care , see u soon
.
বাকি কথা টুকু শেষ করতে না দিয়েই তাওহীদ লাইন টা কেটে দেয় । ওই মুহূর্তে মাথা পুরা হ্যাং তনুর । তবে এর কথা ভেবে লাভ হবে না । সব ব্যবস্থা তাকেই করতে হবে । তাই খারাপ কিছু না ভেবে বাকি কাজে মাথা ঘামানো টাই ব্যাটার মনে করছে তনু ।
.
পরদিন সকাল সকাল তনু রুমেল কে নিয়ে বীমা অফিসে চলে যায় । সেইখানে সব কাজ সাড়তে সাড়তে প্রায় দুপুর দুইটা বেজে যায় । সর্বমোট ৩ লক্ষ ৯৮ হাজার ৫৭০ টাকা জমা হইছে ওনারা পুড়িয়ে ৪ লক্ষ টাকার চেক ইস্যু করে দিয়েছে ।
.
– তনু , যাক অবশেষে বের করতে পারলি
– হ্যাঁ এখন আর আমার মাকে কারো কাছে হাত পাত তে হবে না
– হুম
– রুমেল শপিং এ যাবো রে , চল
– এখন ?
– হ্যাঁ
– এত গুলা টাকা নিয়ে ? রিস্কি হয়ে যাবে না
– নাহ , কিসের রিস্ক , নরমাল থাকিস তাহলেই হবে
– ওকে , কি কিনবি ? কাল ন মা আর বাবার জন্য কিনলি
– আমার পৃথিবী টা কি শুধু মা আর বাবার মাঝেই সীমাবদ্ধ ?
– আমার কিছু লাগবে না কিন্তু , আমার আছে , তুই ছুটকির জন্য কিন আমি রুবেল কে কিনে দিবো
– তোর টাকার পাহাড় আছে নাকি , ওই তো ১২ হাজার টাকার বেতন এর চাকরি করিস , সব দিয়ে নিজের কাছে ৪ আনাও থাকে না তোর
– বাদ দে , আছে আমার কাছে
– আছে ?
– হ্যাঁ আছে
– তাহলে আজকে লাঞ্চ টা তুই করা না প্লিজ , আমার খুব ক্ষুধা লাগছে
– আচ্ছা চল
– আচ্ছা শুন না , খেয়ে বসুন্ধরা তে যাবো একটু
– ওরে বাবা , ওইদিকে কেন
– কাজ আছে একটু
– আচ্ছা
– রুমেল
– হ্যাঁ বল
– আফরোজ আপু আর ওয়াসিম ভাইয়ার জন্য কিছু কিনবো ?
– মাথা খারাপ নাকি ? আগুন লাগাতে চাস নাকি , এইসব করলে জীবনেও সে আসবে না , প্লিজ তনু এইসব করিস না
– আফরোজ আপুর আত্নমর্যাদা বোধ বেশি তেমনি ওয়াসিম ভাইয়ার ও
– আর মূলত এইসব আজ তার জন্যেই পসিবল
– হ্যাঁ , আমি সব সময় আফরোজ আপু লে ফলো করার চেষ্টা করি জানিস
– আচ্ছ বাদ দে , নে খাবার খা
.
দুই ভাইবোন খাওয়া দাওয়া করে বসুন্ধরার দিকে রওনা হয়েছে । সেইখানে তনুর কিছু কাজ আছে । কাজ সেড়ে তারপর বাসায় যাবে । এইদিকে বাসা থেকে ফোন আসে । তনুর দুই মামা আর চাচা ফুফা আর বড় ফুফী তারা সবাই বরের বাড়ি আই মিন তাওহীদের বাসায় যাচ্ছে । বিয়ের ৩ দিন আগে হঠাৎ ছেলের বাড়ি কেন ।
.
– হঠাৎ ও বাড়ি যাওয়ার ধুম পড়লো যে
– মামা রা নাকি ছেলে দেখবে তাই তো মা বললো
– আমাদের মায়ের এই এক দোষ যে যা বলে নাচতে থাকে
– বাদ দে তনু , চল কাজ সাড়
.
কাজ সেড়ে দুই ভাই বোন মিলে বাসায় ফিরে । ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত ৮ টা বাজে । এত রাত হয়ে যাওয়ায় তনুর মা চিন্তিত ছিলেন ।
.
– এত দেরি হলো যে
– আর বলো না মা , তোমার এই মেয়ে যা হাটতে পারে , আমার পায়ে ব্যাথা ধরিয়ে দিয়েছে
– হ্যাঁ সব আমারই দোষ , তুই তো ভালো মানুষ তাই না
– যা ভাগ
– ভাগ না ভাগ না , চলেই যাবো আর দুই দিন অপেক্ষা কর , এই রুবেল এইদিকে আয়
– জ্বি আপু
– এই নে এইখানে তোর জন্য পাঞ্জাবি আছে , আর একটা ফরমাল আছে পাঞ্জাবি বিয়েতে পড়িস আর ফরমাল টা রিসিপশনে
– ওয়াও আপু , অনেক সুন্দর হয়েছে তো
– হ্যাঁ পাঞ্জাবি টা তোর টা আর আমার টা সেম দেখে কিনেছি
– ওহ তাই
– মা ছুটকি কই
– ও তো ওর রুমে বাকিরাও ওইখানেই আছে
– আচ্ছা আমি একটু ওর কাছ থেকে আসতেছি
.
– এই এই তনু শুন না
– জ্বি ফুফু
– তোর জামাই টা না সেই রকম , অনেক সুন্দর , যেমন লম্বা তেমন ফিগার তেমন স্বাস্থ্য তেমন চেহারা , আর কি ভালো ব্যবহার ।
– ওহ
– তুই সত্যিই অনেক পূন্য করছস যে এমন জামাই পাইছিস , পরিবারের সবাই কত ভালো
– আচ্ছা ফুফু তোমরা গল্প করো আমি একটু আসতেছি
.
– ছুটকি আছিস
– হ্যাঁ দিদি আয়
– কিরে সব গুলা আজকে এইদিকে আড্ডা জমাইছিস
– হ্যাঁ দিদি , আমরা সবাই মিলে তোর বিয়েতে কি কি মজা করবো তার প্ল্যানিং করতেছিলাম
– ওহ আচ্ছা , ছুটকি তুই একটু রুমে আসিস তো
– আচ্ছা আসতেছি আমি
.
রুমে এসে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তনু , হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে । হাতে নিয়ে দেখে আফরোজ ফোন দিচ্ছে
.
– হ্যালো আসসালামু আলাইকুম আপু
– ওয়ালাইকুম আসসালাম , কিরে বিয়ের কনে কেমন আছিস
– ভালো , তুমি
– ভালোই আছি
– আপু তোমাকে কিন্তু আসতেই হবে
– ঘটক যখন আমি আসতে তো হবেই
– হ্যাঁ , ভাইয়া কেমন আছে
– ভালো , আচ্ছা ভালো থাক
– আচ্ছা আপু
.
যেই ঘর টায় এত টা বছর ছিল তুই দিন পর এই ঘর টাই পর হয়ে যাবে । হঠাৎ ছুটকি আসে রুমে । আসলে ছুটকির জন্যে সেম ড্রেস এনেছে , গতকাল বোনের মলিন মুখ টা দেখে বুঝে গেছে ছোট বোন টা কি চেয়েছিল । সব বুঝে গেছে সে তাই আজ সবার আগে বোনের জন্য ড্রেস কিনেছে সে । বোনের একটু হাসিতে তনু সারা দুনিয়া সমান খুশি পায় ।
.
রাত প্রায় ১ টা , সবাই ঘুমাচ্ছে । সারাদিনের ছুটাছুটি তে অনেক ক্লান্তু তনু
তাই সেও ঘুমের রাজ্যে আছে । হঠাৎ vibrate মুডে থাকা ফোন টা ভো ভো শছ করতে থাকে । ঘুমের ঘোরে থাকা তনু আস্তে আস্তে মোবাইল টা নিয়ে রিসিভ করে
.
– হ্যালো
– হ্যালো মিসেস তাওহীদ
– কেহহহহহ
– আস্তে , এত জোড়ে আওয়াজ বের হয় কেন
– আপনি ঘুমান না নাকি
– উহু আমি এখন মদের বোতল সামনে নিয়ে বসে আছি
– ওহ
– আফসোস আমি আমার wife কে এখনও অবদি দেখতে পেলাম না । by the way আজকে তোমার মামা চাচা ফুফু রা আসছে ।
– ওহ
– তুমি কি সব সময় কম কথা বলো
– এই কথার উত্তর নেই আমার কাছে
– শুনেছি তোমার বাবা পঙ্গু ,হাটা-চলা করতে পারে না
– আমার বাবা প্যারালাইসিস , পঙ্গু না
– ওই একই তো কথা
– না এক না , ভালো থাকবেন , আসসালামু আলাইকুম
.
– এত রাগ , ok , no problem বিয়ে টা হোক তারপর দেখাবো রাগ কাকে বলে ? অপেক্ষা করো মিস,,,, নাম টা মনে নাই । কিন্তু কথা গুলো ব্রেনে রেখে দিলাম সুধ সমেত ফেরত পাবে । আমায় বিয়ে করার যে কত জ্বালা প্রত্যেক রাতে তা তোমাকে বুঝতে হবে মিসেস তাওহীদ মাহবুব । আগে বিয়ে টা করি , টাকা গুলো নিজের করি সম্পত্তি গুলো নিজের নামে করি , তারপর দেখবে আমি কে ? just wait & watch
.
অপরদিকে ,
.
– যার কথার শ্রী এমন , যে আমার বাবা সম্পর্কে এইভাবে বলতে পারেন সে আমায় আদৌ মেনে নিতে পারবেন তো ? নাকি সারাজীবন আমাকে একটা বিয়ের দায়-ভার নিয়েই বাচতে হবে । নাকি তাওহীদ নামক ব্যাক্তির লাথি ঝাটা খেয়েই কাটাতে হবে বাকিটা জীবন । এক জোড়া দম্পতীকে তাদের ছেলে ফেরত দিতে গিয়ে আমি নিজেই ভেসে যাবো না তো ? নিজের প্রয়োজন গুলো মেটাতে গিয়ে স্বার্থপরের খাতায় নাম টা উঠিয়েই দিলাম । জানি না , ভবিতব্য কোথায় নিয়ে দাড় করাবে আমাকে । যেই আগুনে পা দিতে যাচ্ছি জানি না নিজের শীতল উষ্ণতায় সেই আগুন কে ঠান্ডা করতে পারবো কিনা ? তবে চেষ্টা করে যাবো ওই drug addicted লোক টা কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার । কর্তব্য যখন নিয়েছি তার দ্বায়িত্ব তো পালন করতেই হবে । পিছুপা হলে হবে না আমায় , শক্ত হতে হবে , কঠিন হতে হবে৷, জানি একদিনে সম্ভব হবে না আস্তে আস্তে অনেক দূর আগাতে হবে আমায় ।
.
.
.
চলবে……..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com