Breaking News

আমার বিয়েটা হয়েছিলো খুব অদ্ভুতভাবে

আমার বিয়েটা হয়েছিলো খুব অদ্ভুতভাবে। কোন অনুষ্ঠান না,কোন খাওয়া-দাওয়া না। জাস্ট বিয়ে। কাজী এসে আমার ঘর থেকে কবুল নিয়ে গেল,পাশের ঘরে ছেলে বসে ছিল তার কাছ থেকে কবুল নিয়ে এলো, ব্যস! বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর আমার জামাই ইয়াবড় এক স্যুটকেস নিয়ে আমার ঘরের দরজায় নক দিলো। আমি দরজা খুলে দিলাম। সে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো, "বাহ! খুব সুন্দর ডেকোরেশন। আমি কোথায় থাকবো?"
আমি বিছানার ডানপাশ দেখিয়ে বললাম, "আপনি এখানে থাকতে পারেন।" সে বললো, "থ্যাংকস।" বলেই স্যুটকেস খুলে জামাকাপড় বের করে বাথরুমে চলে গেল। আমি বিয়েতে শাড়ি পর্যন্ত পরিনাই। একটা কামিজ পরেছিলাম। সেটা চেন্জ করে বাসায় পরা একটা টপস পরে নিলাম।
এত আয়োজনহীন বিয়ের পেছনে তেমন কোন কারন নাই। বিয়েবাড়ির হুল্লোড়, মাতামাতি এসব আমার আর আমার বরের কারোর‌ই পছন্দ না।‌ তাছাড়া সে থাকবে ঘরজামাই,কাজেই লোক জানাজানি করে বিয়ে করে কি লাভ!
আমার বর আমার ঘরে উঠে এসেছে পর্যন্ত আমার জীবনযাত্রায় তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। আগেও যেমন ছিলাম এখনো তেমন আছি। তফাৎ এইটুকু যে আগে বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে একা ঘুমাতাম এখন একটু এডজাস্ট করা লাগে। আগে একা একা ভাত খেতাম এখন দুইজন একসাথে খাই। আগে বাইরে বের হলে ব্যাগ ধরার লোক ছিল না এখন ব্যাগ ধরবার একটা লোক আছে। কম্বলের ভেতর শুয়ে যখন মনে হয় ফ্যানটা একটু কমানো দরকার তখন কমিয়ে দেবার একজন লোক আছে। এইতো! আমি খুব যে খারাপ আছি তা না,ভালোই আছি। আমার বরটাও খুব একটা খারাপ না। সেও আমার মতো ব‌ই পড়ে,সেও আমার মতো সিনেমা দেখে। আমাদের ভালোই মনের মিল।
তা সত্ত্বেও একদিন আমাদের মধ্যে কঠিন ঝগড়া হয়ে গেল। কথায় কথায় সে একদিন আমার প্রিয় নায়ক সম্পর্কে মন্তব্য করলো, "ছেলেটা দেখতেই ভালো, অভিনয় পারে না!"
আমি তাকে ঘর থেকে বের করে দিলাম। বাকি রাতটা মশার কামড় খেয়ে বারান্দায় কাটাবার পর পরদিন সে এসে জানালো, "ঐ নায়কের একটা সিনেমা কাল রাতে দেখেছে,আসলে তার অভিনয় ভালোই, অন্যরকম একটা আর্ট আছে।"
ব্যস আমাদের মধ্যে মিল হয়ে গেল।
আমি সাধারণত ঘর থেকে বের হ‌ইনা। মানুষের সাথে মিশিও কম। বেশীরভাগ সময় ছাদে বসে আকাশ দেখি।‌ এই সময় মাঝেমধ্যে সে চা এনে দেয়। দুইজন একসাথে বসে চা খাই। ভালোই লাগে।
কখনো কখনো আমার রাতে ঘুম হয় না। তখন তাকে ডেকে তুলে গল্প করি। অদ্ভুত সব গল্প।‌ সদ্য দেখা সিনেমার গল্প,সদ্য পড়া ব‌ইয়ের গল্প। কলেজে পড়বার সময় কোন কোন ছেলে আমার জন্য পাগল ছিল। আমার বর হাই তোলে আর শোনে। জেলাসি বলতে তার মধ্যে কিছু নাই। সে কখনোই আমাকে জিজ্ঞেস করেনি আমার কারো সাথে রিলেশন ছিল কি না, আমি কাউকে ভালোবাসি কিনা। বরং আমি নিজে থেকেই একদিন বললাম, "আমার একজন ক্রাশ আছে। ছোটবেলা থেকেই আমি তাকে খুব‌ই পছন্দ করি। কয়েকবার প্রপোজ করেছি,রাজি হয়নাই। কিন্তু কখনো যদি সে রাজি হয়ে যায় আমি তোমাকে ছেড়ে, সবকিছু ছেড়ে দৌড় লাগাবো।"
আমার বর তার ছবি দেখতে চাইলো। আমি ফোন গ্যালারিতে ক্রাশের একশ বারোটা ছবির ফোল্ডার বের করে তার হাতে ধরিয়ে দিলাম। সে হাই তুলতে তুলতে ছবি দেখতে লাগলো। একপর্যায়ে বললো, "হুম ভালোই আছে! সুন্দর ছেলে! রাজি হলো না কেন?"
আমি হতাশ গলায় বললাম, "হয়তো আমাকে পছন্দ না,নাহয় গার্লফ্রেন্ড আছে।"
সে বললো, "কি যে বলো! তোমাকে পছন্দ না হবার তো কিছুই নাই। আমি চেষ্টা নিবো?"
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "কি চেষ্টা নিবা?"
-আমি তোমার ক্রাশের সাথে কথা বলি। তাকে বলি যে তুমি তাকে কতটা ভালবাসো।‌ হয়তো তুমি তাকে বোঝাতে পারোনাই,আমি পারবো।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। ইতিহাসের কোন স্বামী তার স্ত্রীর ক্রাশকে পটানোর দায়িত্ব নিয়েছে বলে আমার মনে পড়ছে না। ইতিহাস কেন! গল্প উপন্যাসেও এরকম স্বামী নাই।
আমি বিরক্ত গলায় বললাম, থাক লাগবেনা। তুমি এক কাজ করো তো। বুকসেলফ থেকে তিন নাম্বার ব‌ইটা এনে দাও। পড়ি।
সে ব‌ই এনে দিলো। তারপর নিজেই বললো, কফি খাবা? খাইলে বানাই দুইজন মিলে খাই।
- ওকে।
সে কফি বানাতে গেল। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে ফিরছে না। এক পর্যায়ে সে ফিরে এলো এবং মেয়েলী গলায় চিৎকার করতে লাগলো, "লাবণ্য ওঠ! কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে! লাবণ্য! লাবণ্য! ঐ লাবণ্য!!"
ঘুম ভেঙ্গে দেখি আপু ডাকছে‌। তার হাতে কোন কফির কাপ নাই। ঘুম ভেঙ্গে অবাক হয়ে তার দিকে তাকাতেই আপু গম্ভীর গলায় বললো, "কখন থেকে এলার্ম বাজছে! তোর না কলেজ আছে! উঠে কলেজে যা।"
আমি ভালো‌ করে চোখ রগড়ে সদ্য স্বপ্নে দেখা আদর্শ স্বামীটিকে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু মাথাটা একটু পরিস্কার হ‌ওয়া মাত্র‌ই বুঝতে পারলাম, এরকম আদর্শ স্বামী আর এরকম ঝামেলাবিহীন বিয়ে শুধুমাত্র স্বপ্নেই দেখা সম্ভব।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com