Breaking News

তবুও ভালবাসি || পর্ব:- ১৯

লোকটির হাত থেকে বাঁচতে লোকটির হাতে ছোঁয়া কামড় বসিয়ে দেয়।কামড়ের জ্বালায় ওই গুন্ডা ছোঁয়ার গায়ে হাত তুলে।গালে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে গুপ্ত ঘরে নিয়ে আবার বেঁধে ফেলে।ছোঁয়ার গাল দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।৪ দিনে অনেক শুকিয়ে গেছে।মুখ চোখ কালো হয়ে গেছে।যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে।
"ছোঁয়া কেঁদে কেঁদে ভাবতে থাকে "হবেনা মুক্ত?? পাবেনা অপূর্বকে?
.
.
.
অপূর্ব ২-৩ দিন ধরে শান্তি পাচ্ছেনা।কেমন কলিজাটা পুরতেছে। রাতে ছোঁয়াকে নিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখে লাফিয়ে উঠে।মনে হয় ছোঁয়া খুব বিপদে আছে অপূর্বের সাহায্য প্রয়োজন।তেমনি আজ রাতে ও অপূর্ব একটা বাজে স্বপ্ন দেখে লাফিয়ে উঠে।শরীর কাপঁতেছে। ঘাম ঝড়তেছে অনেক।

"নাহহ। আর সহ্য করা যায়না।ছোঁয়া খবর নিতেই হবে।আমি আজ ওর কথা ভেংগে বাসায় কল করব।যেহেতু এখন আমেরিকায় মাঝ রাত মানে বাংলাদেশ দুপুর।এখনই উপযুক্ত সময় কল দেওয়ার। "

অপূর্ব ছোঁয়ার নাম্বারে কল দেয় কিন্তু ছোঁয়া নাম্বার বার বার অফ বলে।তাই মায়ের নাম্বারে কল দেয়।

অপূর্বের মা তখন রান্না করতেছিলেন কল আসে তখন।

"অপূর্বের বাপ ফোনটা ধরো"।

"তোমার পাশে ফোন তুমি ধরো।আমি রুম থেকে বের হয়ে ধরতে পারবনা।" অপূর্বের আব্বু জোরে বলে।

অপূর্বের আম্মু রেগে কটমট করতে করতে ফোন হাতে নিয়ে কল রিসিভড করে।

"হ্যালো আম্মু" অপূর্ব।

মুহূর্তেই অপূর্বের মা থমকে যায়।তার ছেলে কল করেছে।কি বলবেন বুঝতে পারতেছেনা।তাই জোরে চিল্লিয়ে বলে"অপূর্বের বাপ জলদি আসো অপূর্ব কল করছে।"

অপূর্ব হাসতে থাকে ওপাশে।

"হ্যালো বাবা তুই কই? কেমন আছিস বাবা?? ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করিস তো??  নাকি আমি নাই বলে নিজের খেয়াল রাখিস না"? " একদমে অপূর্বের মা বলেন।

"হাহাহা। পাগল হইয়োনা মা।পানি খাও। একসাথে এত্তো প্রশ্ন করলে আন্সার দিব কেমনে।"

"পানি টানি পরে খাবো।আগে যা বলছি আন্সার দেয়"।

"এত্তো প্রশ্ন করছো, তাই মনে নাই "। অপূর্ব হাসতে থাকে।

"তুই খাওয়া দাওয়া করিস না ঠিকমতো তাই তর স্বরনশক্তি কমে গেছে তাই মনে রাখতে পারতেছিস না।"

"উফফফ মা। তুমি পারো ও বটে।" 

অপূর্বের বাবা এসে ফোনটা কেড়ে নিয়ে নেয়।অপূর্বের মা রেগে যান।

"হ্যালো অপূর্ব বৌমার কাছে ফোনটা দেয়। বলবো তোকে যেন কয়টা থাপ্পড় দেয় আমার হয়ে "।

"বৌ মা??" অপূর্ব অবাক হয়ে বলে।

'এখন বউ কে? ওইটা ও ভুলে গেছিস? " 

"না মানে বৌমা বলতে তো ছোঁয়া তাইনা তাহলে ছোঁয়া এইখানে কেন থাকবে ও তো তোমাদের কাছে থাকবে"। অপূর্বের বুকে টেনশনে ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।

'কি বলছিস? আমিতো ভাবলাম বৌ মা গিয়ে তকে দিয়ে কল দেওয়াইছে।কিন্তু বৌ মা যায়নি"?

"মানে? ও কি আমেরিকায় আসছে??

"হুম গেলো তো, তকে খুঁজে।

"হোয়াট!!!!! কবে আসলো???  সাথে কে আছে??

"একাই তো গেলো।আজ রাত শেষ হলে ৫ দিন আগে গেছে।"

"কি বলছো বাবা?? ওকে একা কেন ছাড়ছো? ওর কি আমেরিকায় কেও আছে? আবার ৫ দিন হয়ে গেলো এখন ও আমার কাছে পৌঁছাতে পারেনি উফফফফ!বাবা কি করো তোমরা"। অপূর্ব রাগে কল কেটে দেয়।বিছানায় ধপ করে বসে ভাবতে থাকে এখন কি করবে? এত্তো বড় আমেরিকায় কোথায় খুঁজবে? কিচ্ছু ভাবতে পারতেছেনা অপূর্ব। কলিজায় আঘাত লেগে গেছে।রাগে অপূর্ব দেয়ালে ঘুষি দিয়ে হাত থেকে রক্ত বের করে ফেলে।তবুও রাগ কমতেছেনা। এখন আর ভাবার সময় নাই ছোঁয়াকে খুঁজতে হবে তাই অপূর্ব বেড়িয়ে পড়ে।

.
.
.
.
সকালে মায়া শুশুর বাড়িতে আসছে এখন সন্ধ্যা পাড়া-প্রতিবেশি দেখতে আসছে আলয়ের বউকে।মায়া নাস্তা আনতে গেছে।

"ভাবি শুনলাম মাইয়া নাকি ডিভোর্সি "? পাশের বাড়ির সঞ্জুর মা বলে।

"ভাবি শুনেন ডিভোর্সি মেয়েদের চরিত্র ভালো হয়না বুঝলেন? আপনার ঠিক হয় নাই ডিভোর্সি মেয়ে ঘরে আনা।" 

এরকম আরো হাজার রকমের কথা বলতে থাকেন কয়েকজন মহিলা বলে,যাকে বলে কুটনামি!

আলয়ের মা কিছু বলেনা।মায়া পর্দার আড়াল থেকে সব শুনতেছে।মায়ার চোখ দিয়ে টুপ করে চোখের জল পড়ে।  

"আসলেই তো মায়া তো ডিভোর্সি! এই দাগটা সারাজীবন থাকবে।পাড়া-প্রতিবেশিরা কয়দিন পর পর উস্কিয়ে উস্কিয়ে মনে করিয়ে দিবে "মায়া ডিভোর্সি "।কোথাও কি সে শান্তি পাবেনা??? সব জায়গায়ই কি তার পরিচয় "সে ডিভোর্সি মেয়ে"? মায়া পর্দার আড়ালে থেকে কাঁদতে থাকে।আলয় এতক্ষন সিঁড়ির পাশে থেকে সব শুনছে কিন্তু পর্দা একটু ফাঁক হতেই দেখে মায়া কাঁদতেছে তাই নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারেনি সিঁড়ি থেকে নেমেই মহিলাদের উদ্দেশ্যে বলে "নিজের ঘরে ছেলে-মেয়ে নাই?? ওদের ও এমন দশা হবে না তার কোনো গ্যারান্টি আপনাদের কাছে আছে??? আর এইযে আন্টি আপনার ছেলে রঞ্জু যে মেয়ে ভাগাইয়া আনছে আমরা কিছু বলছি??? আর এইযে আপনার মেয়ে যে এলাকায় পুলা নিয়া ঘুরে আমরা আপনারে গিয়ে কিছু বলছি??? আগে নিজেদের ঘর গুছান পরে অন্যের সম্পর্কে কথা বলবেন।আর এক্ষুনি আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে খুশি হবো "। 

মহিলাগুলো অপমানে লাল হয়ে যায়। একজন আলয়ের মা কে বলে "ভাবি আপনার ছেলে কিন্তু ঠিক করতেছেনা এসব। "

"আমার ছেলে যা ই করুক সব ঠিক।আর আমি এতক্ষন চুপ ছিলাম আপনাদের পশ্রয় দিছি এর মানে এই না যে আমার ছেলে ও সব সহ্য করবে।" 

মহিলাগুলোর অপমানের সীমা এইবার চূড়ান্ত হয়ে যায়।তাই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

মায়া শুধু অবাক হয়ে ভাবে "এরা কত্ত ভালো।এত্তো ভালো হাজবেন্ড শাশুড়ি পাবো ভাবিই নাই।আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই আমার ডিভোর্স না হলে আমি এমন সংসার পেতামই না। " মায়া আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া জানিয়ে নিজের রুমের দিকে যায়।আলয় তা দেখতে পেরে নিজেও যায় রুমের দিকে।

"সরি মায়া আসলে উনারা এসব বলবে ভাবিনি "!

"তো আপনি সরি বলবেন কেনো??? আর উনারাতো ঠিকই বলছে আমিতো..........

মায়া কিছু বলার আগে আলয় মায়ার মুখে ধরে ফেলে আর বলে "আপনার পরিচয় আপনি আমার বউ বুঝছেন?? আর যেনো ওই শব্দ আপনার মুখে নআ শুনি"? 

মায়া মাথা নাড়িয়ে বলে "ওকে"।
আলয় আর মায়া খুব কাছাকাছি দুজন দুজনের নিশ্বাস শুনতেছে খুব কাছ থেকে আলয় অনেকটা লম্বা হওয়াই আলয়ের নিশ্বাস মায়ার চোখে মুখে ঝড়ের বেগে পড়তেছে। মায়ার শরীরে নতুন এক ভাললাগা কাজ করতেছে।মানুষটার নিশ্বাসেও এত্তো ভাল লাগা।আলয় বার বার মায়ার চোখে হারিয়ে যাচ্ছে।কত্তটা শান্ত চোখ দুটি যে কেউ হারিয়ে যাবে।মায়ার হুশ আসে আলয়কে ইশারায় বলে তার মুখ থেকে হাত সড়াতে । আলয় লজ্জা পেয়ে বের হয়ে যায়।মায়া বিছানায় বসে হাসতে থাকে। ছেলেটা এত্তো সাহসী,কিন্তু একটা মেয়ের কাছে এত্তো লজ্জা পায়।ভালোই লাগে দেখতে।
.
.
.
.
অপূর্ব পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে।ছোঁয়ার যে এয়ারপোর্টে নামার কথা সেই এয়ারপোর্টের দিকে যায় পুলিশ নিয়ে।সবাইকে ছোঁয়ার পিক দিয়ে জিজ্ঞাসা করতে থাকে এই মেয়েকে দেখেছে নাকি কিন্তু কেউ দেখেনি।অপূর্ব সারাদিন তন্ন হয়ে খুঁজে ও কোনো ক্লু না পেয়ে বিকেল বেলা এয়ারপোর্টের পাশে রাস্তায় বসে মুখে হাত দিয়ে কাঁদতে থাকে।
"তবে কি সে একবারে হারিয়ে ফেলেছে ছোঁয়াকে "।

তখন এক ভিক্ষুক আসে।

[আমেরিকায় ইংলিশে কথা হয় সবার বুঝার জন্য আমি বাংলায় লিখতেছি]

"আমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন"?

অপূর্ব ভেজা চোখে তাকিয়ে পকেটে যা টাকা ছিলো সব দিয়ে দেয়।

"এতো টাকা কেনো"?
"এমনি"! খুশি হয়ে দোয়া কইরেন যেনো আমি আমার ছোঁয়াকে ফিরে পাই"!

"কে ছোঁয়া "?

"আমার বউ"।

"কি হইছে তার "?

অপূর্ব শর্ট করে সব বলে।ভিক্ষুকটি সব শুনে পিক দেখতে চায়।অপূর্ব পিক দেখায়। 

"আরেএএ এই মেয়েকে তো আমি দেখেছি।

অপূর্বের চোখ ঝলঝল করে উঠে কলিজায় পানি ফিরে আসে।খুশিতে মরে যাবে এমন অবস্থা।ভিক্ষুকটির ২ হাতে ধরে অপূর্ব বলে "কোথায় দেখছেন"?

.
.
.
To be continue❤

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com