Breaking News

সংসার || ২য় পর্ব

তোমার পিঠের বাঁ পাশে যে একটা চন্দ্রবিন্দুর ন্যায় তিল আছে,
সেই তিলটা কি তোমার বরেরও নজর কেড়েছে নীলাঞ্জনা?
লিখাটা পড়ে আমার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছিলো।
-বিশ্বাস করো আহিল,আমি এসবের কিছুই জানিনা।
কে করছে এমন কিছুই বুঝতে পারছিনা।প্লিজ তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা।যদি আমার জীবনে এমন কেউ থাকতো তবে আমি তোমাকে বিয়ে করতাম না।বাবা মাকে বলে তাকেই বিয়ে করতাম।
-পাগলীরে থামো প্লিজ।আর বুঝাতে হবেনা আমাকে।আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।
কাঁদেনা লক্ষীটা।এই যে আমার দিকে তাকাও।
তুমি কি জানো?আমাদের বাসর ঘরের ফুল গুলো মন খারাপ করে বসে আছে,আমরা যাচ্ছিনা বলে।
আর আমাদের জন্য অপেক্ষাও করছে সেই কখন থেকে।
আর এদিকে তুমি মন খারাপ করে ওদের আরো কষ্ট দিবে?
তুমি না কাউকে কষ্ট দিতে পারোনা?এত গুলো ফুলকে তুমি কষ্ট দিবা?
আহিলের কথা শুনে অশ্রুভরা চোখেই ঠোঁটে হাসি ফুটে গেলো।
ছেলেটা বড্ড ফাজিল,কিভাবে হাসিয়ে দিলো।তাও আবার এমন আজিব কথা বার্তা বলে,
ফুল গুলো নাকি আমাদের জন্য কষ্ট পাচ্ছে।
পাগল একটা।
আহিল হঠাৎ করেই আমাকে কোলে তুলে নিলো।
-কি করছো?কি করছো?ছাড়ো ছাড়ো।কেউ দেখে ফেলবেতো।
-কেউ দেখবেনা,আর দেখলে দেখুক।আমার বউকে আমি কোলে নিয়েছি।অন্যের বউকে তো আর নেইনি।
আহিল কোলে করে আমাকে আমাদের রুমে নিয়ে আসলো।
বন্ধ করে দিলো রুমের বাতি।
আর সেই মুহূর্তে আহিলের মোবাইলে আরেক টা মেসেজ এলো।
আহিল ফোন নাম্বার টা তুলেই সেই নাম্বারে ফোন দিলো।
রিং বাজছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছেনা।
আহিল মোবাইল টা অফ করে দিলো।
আর আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল বেলা আম্মু আমাদের নাস্তা দিলো।আমরা নাস্তা করলাম,
আহিল সবার সাথে কথা বলছে।
কথা বার্তা শেষে আমরা আহিলদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
সবাই বিকেলে যেতে বল্লেও আহিল থাকেনা,ওর নাকি কি কাজ আছে।
আমরা আহিলের বাসায় পৌছালাম।বাবা মাকে সালাম দিলাম আরকি আমার শশুড় শাশুড়ি।
আম্মু আব্বুর জন্য মন খারাপ লাগছে,কত করে বল্লো আহিলকে বিকেলে যেতে।কিন্তু আহিল শুনলোনা,বিকেলে আসলে কি এমন ক্ষতি হতো।
আমি শাড়ী খুলে একটা ড্রেস পরে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।
আহিল পেছন থেকে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে।
-ছাড়োতো,ভালো লাগছেনা।
-কেন লাগছেনা শুনি?
-আম্মু আব্বু কত করে বল্লো,বিকেল পর্যন্ত থাকতে,তুমি থাকলেনা।থাকলে কিই এমন হতো?
-কি হতো?সকালেও আমি একটা চিরকুট পেয়েছি।যদি বিকেল অব্ধি থাকতাম,হয়তো দুপুরে আর বিকেলে দুই টা চিরকুট সে পাঠাতো।
আর আমি পেলে তো কোন সমস্যা নেই।
যদি অন্য কারো হাতে পড়ে যায়,তাহলে তারা কি মনে করবে?একবার ভেবে দেখেছো?কতটা চিন্তা করবে তারা।তাই চলে আসলাম।
তাছাড়া যে চিরকুট পাঠায় সে অবশ্যই খোঁজ নেয়,তুমি আমি আছি কিনা।
আর যদি জানে আমরা নেই তবে আর পাঠাবেনা চিরকুট।বুঝলে পাগলী?
আমি আহিলকে জড়িয়ে ধরলাম।
ছেলেটা কত দিকে খেয়াল রাখে,আর আমি কিনা ওকে ভুল বুঝলাম,অভিমান করলাম।
দুপুর হলো শাশুড়ি মা আমাদের খেতে ডাকলেন।
আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা বলে মা আমাকে জোড় করে নিজের হাতে,
মুখে তুলে খাওয়ালেন।
বাবাও মাকে বার বার বলছেন ওকে বেশি করে খাওয়াও,এই বয়সেইতো খাবে।
আমাদের মত বয়সে কি খেতে ইচ্ছে করে নাকি।
আহিল: খাওয়াও খাওয়াও। বেশি করে খাওয়াও।খাইয়ে খাইয়ে গলুমলু বানাও।
মা:বানাবোই তো।দশ টা না পাঁচটা না একটা মাত্র ছেলের বউ আমার।
রত্না:(ননদ):হ্যাঁ হ্যাঁ।আমিতো এখন কারো কিছু হইনা,তাই আমাকে কেউ মুখে তুলে খাওয়ায় না।
আহিল:ওই দেখো আরেক জন জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।
রত্না:তোকে বলেছে?
আহিল:তাইতো মনে হচ্ছে।তাইনা নীলাঞ্জনা?
রত্না:আমার ভাবী তোর মত মাথা মোটা নাকি হুম?আমার ভাবী ঠিকই বুঝে আমি ফান করেছি।তাই না ভাবী?
আমি:হ্যাঁ ঠিক তাই।আমি আমার ননদিনীকে খুব ভালো করেই চিনি।
তোমাদের আগেতো আমার ওর সাথেই পরিচয়।
রত্না আবিরের ক্লাসমেট,আবির আমার চাচাতো ভাই।ওরা এক সাথে পড়ে।যদিও আমিও ওদের সাথেই পড়ি।কিন্তু আমার ডিপার্টমেন্ট আলাদা।আর ওরা এক ডিপার্টমেন্টের।
ও আমাদের বাসায় আসতো মাঝে মাঝে আবিরের কাছে নোট নিতে সাজেশন নিতে।
তখন পরিচয় টা আরো ভালো মত হয়।
আর তখনি ও আমাকে ওর ভাইয়ের জন্য পছন্দ করে।আর ওর বাবা মা আর আহিল আমাকে একদিন দেখতে আসে।
এরপরই সবার পছন্দে,মতামতে আমাদের বিয়ে হয়।
আমাদের খাওয়া দাওয়া শেষ হয় আর কলিং বেলের শব্দ।
গেইট খুলে দেখি আবির।
-কিরে আবির তুই?
-ভাবিস না তোকে আর তোর সংসার দেখতে এসেছি।আমিতো এসেছি রত্নার কাছে।
-ও হো,বুঝি বুঝি।সব বুঝি।সামথিং সামথিং না?
-ধুর কি যে বলিস না,নাথিং নাথিং।
-আয় ভেতরে আয়।
রত্না আবিরকে দেখে একটু লজ্জা ভরা চোখে তাকায়।
মনে হয় ওরা দুজন দুজনকে পছন্দ করে।
কিন্তু কেউ কাউকে বলছেনা হয়তো।
দেখি একদিন সময় করে আমিই তুলবোনে কথা।
ফাইনাল এক্সাম টা আগে হোক।
রাতে সবার খাওয়া দাওয়া শেষে শুতে যাবো,দেখি ড্রইং রুমের মেঝেতে একটা কাগজ পড়ে আছে।
কি এটা?
হাতে নিয়ে খুলে দেখি, লিখা
“তোমায় শাড়ীতেই দারুণ লাগে নীলাঞ্জনা।
সেলোয়ার কামিজ পরোনা“
কে লিখে এই চিরকুট?আর এ বাসায় কি করে এলো?
তবে কি আহিলই লিখে এই চিরকুট?
না না,ও হতে যাবে কেন?
কি সব আবোলতাবোল ভাবছি আমি।
-কি হলো নীলাঞ্জনা!আসোনা?
-এইতো আসছি...


চলবে.................

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com