গার্লফ্রেন্ড । পর্ব - ০২
এই যে মিষ্টার!! তোমার নামটাইতো জানা হলোনা।আচ্ছা তোমার নাম কি বলতো??(মেয়ে)
-এতক্ষণ পর নাম জিজ্ঞেস করতেছেন?? (নাফিজ)
-আরে বলোতো,এতক্ষণ কই হলো,আমরাতো এই কিছুক্ষণ হলো কথা বলা শুরু করলাম।(মেয়ে)
-জন্মগত নাম আজমাল আল মাহমুদ।।বন্ধুদের পক্ষথেকে গিফ্ট হিসেবে সাঈদ নাফিজ নামেই পরিচিত। এই নামটা বন্ধুরা আমাকে গিফ্ট করেছে।তাই সবাই নাফিজ বলেই ডাকে। (নাফিজ)
-হাহাহা নামও কি তাহলে গিফ্ট করে?? (মেয়ে)
-হুমমম।কেউ যদি ভালবেসে এই নামে ডাকে, তাহলে কি কোন প্রবলেম আছে?? (নাফিজ)
-নাহ প্রবলেম নেই,তবে একটা জিনিস কি জানো?? তোমার নামটা না বেশ চমৎকার।।আর তোমারে দেখতেনা এক্কেবারে তামিল হিরোদের মতো লাগছে।তোমার বেশ ভুষা দেখলেনা যে কোন মেয়েই প্রেমে পড়ে যাবে।বলতে হবে বস্ সেই একটা চিজ তুমি। (মেয়ে)
-ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবোনা।আমি আপনাকে ছোট করতে চাইনা। (নাফিজ)
-কেন ধন্যবাদ দিতে যাবা???আমি এমন কি করেছি যে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবা না। (মেয়ে)
-একবার আমার আম্মু ডাক্তার কে বলেছিলো যে,আমার ছেলেটা মোটা হয়না কেন?? ডাক্তার তখন বলেছিলো যে,বেশি বেশি করে তরি-তরকারী খাওয়াবেন।।তাহলেই আপনার ছেলে মোটা হয়ে যাবে।
ঠিক বাসায় এসে আমার আম্মু আমার জন্য অলরেডি শাক শবজী তরিতরকারী বেশি বেশি করে রান্না করে আমাকে খাওয়াত।।
আমি এইসব খেয়েও মোটা হয়নি।
কিন্তু কি আজিব!! আজকে তোমার মিষ্টি মিষ্টি পাম খেয়ে আমি মনে হয় মোটা হয়ে গেছি।।ফ্রিতে মোটা হলাম, আর তার অবদান একমাত্র তুমি।
তারজন্য আমার পক্ষথেকে এক বস্তা ধন্যবাদ।ধন্যবাদ’টা না দিয়েও পারলাম না। (নাফিজ)
-ঐ ঐ ঐ কি বললি?? আমি পাম দিয়েছি তোরে?? আমি সত্যে কথা বলছি।(মেয়ে)
-আচ্ছা বাদদিন ওসব!! এখন চলেনতো এই বাসাটাতে উঠি !! (নাফিজ)
-সেটা না হয় বুঝলাম,কিন্তু বাসাটা কি ভাড়া দিবে?? মনে হয়না তো দিবে। (মেয়ে)
-আরে চলতো দেখি কি হয়,
বাসার সামনে এসে দরজায় কড়া নারলাম।।বাসার ওপাস থেকে কেউ একজন বলে উঠলো যে আসতেছে একটু অপেক্ষা করুন।।
দরজার পাসে একটু দাঁড়িয়ে ছিলাম।।মেয়েটাকে দেখে কেমন যেন গুন্ডি গুন্ডি লাগছে।।ওর রাগ দেখে,প্রচন্ড রাগি মনে হয়।।আমার সাথে যে ভাবে রাগি ভাবে কথা বলছিলো, আমিতো ভয় পেয়েই গিয়েছিলাম।
ওহহো!! ওর নামটাইতো জানা হলো না।থাক নামটা না হয় পড়েই জেনে নিবো।
হুট করে দরজা খোলার শব্দ পেলাম।
দেখি একটা মহিলা আর একটা বৃদ্ধ পুরুষ দরজার পাসে দাঁড়িয়ে আছেন।।
তারপর আমি লোকটাকে সালাম দিলাম।
-অাস্সালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আস্সালাম। (ওনারা)
-আমার সালাম দেয়া দেখে সাথে থাকা মেয়েটাও সালাম দিলেন ওনাদের।
তারপর আমি ওনাদের কে বললাম……
-আন্টি!! এ হচ্ছে আপনাদের বৌমা। (নাফিজ)
-তাইনাকি বাবা!! এদিকে আসতো মা।(আন্টি)
-জ্বী আন্টি!! (মেয়ে)
-মেয়েটা ওনাদের সামনে গেলেন।তারপর আন্টি বলতেছে……
-নাফিজ!! তোমার পছন্দতো খুব সুন্দর।আমারও অনেক পছন্দ হইছে বৌ মা কে।।
জানো মা!! নাফিজ আমাদের কে তোমাদের বিয়েতে যেতে বলেছিলো।
কিন্তু ব্যস্ততার কারনে যেতে পারিনি।
ওরে বলেছিলাম যে,বিয়ের পরে বৌ মা কে নিয়ে যেন এখানে চলে আসে।ও তাই করেছে।
ছেলেটা অনেক ভালো মা।(আন্টি)
-(কদিন আগে বাসা ভাড়া নিতে এখানে আসছিলাম,কিন্তু তারা ব্যাচেলার দের জন্য কোন বাসা ভাড়া দেয়না।তারপর আমি একটা রিক্সনিয়ে বলেছিলাম যে,আমি কদিন পরে আসবো, বিয়ে করে তারপর বৌ নিয়ে আসবো।তাই বাসাটা বুকিং করতে আসছি,তারা আমার কথা শুনে খুব খুশি হয়েছিলো,এবং তাদের বাড়িতে একদিনের অতিথীও ছিলাম। পরে বাসায় গিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছিলাম যে,আমার তো বৌ নেই তাহলে কি আমি কোন বাসা পাবোনা।আর ওখানে উঠতে গেলেতো বৌ লাগবে,পরে চিন্তে করলাম যে,নাহ আমি প্রয়োজনে অন্য কোথাও গিয়ে থাকবো,ব্যাচেলার দের জন্য কোথাওনা কোথাও একটা ব্যাবস্হা হবেই।।তাই বাসা থেকে ব্যাগ বোস্কা নিয়ে চলে আসছি ঢাকাতে,এখানে এসে দেখলাম যে এই মেয়েটাও বিপদের সম্মুখিন তারপর যা যা হলো সবইতো দেখলেন)(নাফিজ)
-তার মানে কি ওনারা নাফিজের আত্মীয়?? নাহ!! আত্মীয় হলেতো আমাকে জানাতো।মাথায় কাজ করতেছেনা কিছুই।
দেখি রুমে গিয়ে সব জিজ্ঞাস করবো (মনেমনে)
-এই তুমি কি দরজার এখানেই ওদের কে দাড় করিয়ে রাখবে নাকি??
রুমে নিয়ে যাও এদের কে।।
তারপর খাবার দাও।দেখোনা ওরা,কতটা পথ জার্নি করে এসেছে।।(আঙ্কেল)
-হ্যা তাইতো!! আমিনা কথা বলতে বলতে সবই ভুলে যাই।।আচ্ছা মা চলো তোমাদের কে রুম দেখিয়ে দেই?? (আন্টি)
-ঠিকআছে আন্টি চলেন।(মেয়ে)
আমাদের কে ঘরের ভিতরে নিয়ে গেলেন।আমি যে রুমটা পছন্দ করে গিয়েছিলাম সেই রুমটার ভিতরে নিয়ে গেলেন।।তারপর আন্টি বললেন যে……
-নাফিজ!! তোমরা ফ্রেশ হয়ে নেও।।তারপর আসো তোমাদের কে খানা দেই।।অনেক দুর থেকে আসছ। ক্লান্ত হয়ে গেছ না?? (আন্টি)
-ঠিকআছে আন্টি।আপনি জান আমরা ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।।(নাফিজ)
আন্টি চলে গেলেন আমাদের জন্য খাবার রেডি করতে।। আর আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে গেলাম।হাত মুখ ধুয়ে রুমে এসে ছোফার উপরে বসলাম।।
তারপর মেয়েটা দেখি আমার সামনে এসে আমাকে বললেন যে…….
-এই! ইনারা তোমার কি হয়?? (মেয়ে)
-সেটা পরে জানতে পারবে।
আগে বলো তোমার নাম কী?? নাম না জানা থাকলে মহাবিপদ।(নাফিজ)
-আমার নাম নিশি সুলতানা।
বাসা রাজবাড়ি। ২ভাই ১ বোন।।
তোমরা?? (নিশি)
-আমরাও ২ ভাই ১ বোন।আমি নাম্বার ওয়ান।।
-আচ্ছা চলো!! আন্টি ডাকতেছে।।(নিশি)
-ঠিকআছে চলো।।(নাফিজ)
আন্টি আমাদের কে খাবার দিলেন।
সাথে আঙ্কেল ও আমাদের সাথে খেতে বসছেন।
সবাই মিলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করলাম।
তারপর খাওয়া শেষ হলে আন্টি বললেন….
-নাফিজ!! আমাদের এই বাসায় তোমাদের কোন প্রবলেম হলে আমাকে মা মনেকরে বলবে । আমাদের কে সবসময় আপন মনে করবা।এই বাসাতে আরো যারা ভারাটিয়া আছে সবার থেকে তুমি একদমই আলাদা।তোমার কথা বার্তায় আমরা সবাই মুগ্ধ।
জানো বাবা!! আমার বড় ছেলেটা না তোমার কথা সব সময় পেচাল পারে যে, একটা মানুষ এতো ভালো হয় কি করে।।(আন্টি)
-কি আলু পাম দিচ্ছেরে।।আল্লাহগো মোরে বাঁচাও।(মনেমনে)
আন্টি! থাক ওসব বলেন না আর।
আপনি আপনার বৌমার সাথে কথা বলুন।আমি একটু বিশ্রাম নেই।।(নাফিজ)
-নাফিজ!! বৌ মাকেও নিয়ে যাও।
বেচারি লজ্জা পাচ্ছে।।(আন্টি)
-নাহ আন্টি লজ্জা কিসের,আমিতো আপনার মেয়ের মতনই।।(নিশি)
-হুম তুমি আমার মেয়ের মতনই।।আচ্ছা মা যাও।রুমে গিয়ে রুমটা দুজন মিলে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে নাও।(আন্টি)
-ঠিকআছে আন্টি।।(নিশি)
তারপর নিশি ওখান থেকে সোজা রুমে চলে আসলেন।রুমে এসে দেখলেন যে নাফিজ বসে বসে কি যেন ভাবতেছে।
প্রচন্ড চিন্তিত লাগছে ওরে।।মাথা থেকে টলটল করে ঘাম ঝড়ছে।।মুখটা লাল হয়ে গেছে।।তারপর নিশি নাফিজের পাসে গিয়ে বসলেন।এবং বললেন……
-এই তোমাকে এতো চিন্তিত লাগছে কেন?? (নিশি)
-এই আমার এতো কাছে এসে বসেছ কেন?? একটু দুরে সরে বসবা হ্যাঁ!! (নাফিজ)
-কেন?? পাসে বসলে সমস্যাটা কি?? এখানেতো আমরাই আছি শুধু। (নিশি)
-আমরা আছি দেখেইতো তোমাকে একটু দুরে সরে বসতে বলছি।।কেননা,আজকেই আমাদের দেখা হলো,আমি তোমাকে চিনিনা,তুমিও আমাকে চিনোনা।হুট করে রাস্তায় দেখা হলো তারপর থেকে এই পর্যন্ত চলে আসলো।
কেউ যদি জানে যে আমরা বিবাহিত না,তাহলেতো যাবত জীবন কারাদন্ডে থাকতে হবে।
আর যেখানে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে থাকে,ওখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে শয়তান খাকে।
এই শয়তানের পালায় পড়ে অনেক কিছুই কিন্তু ঘটে যায়।।
তাই যথাসম্ভব তুমি একটু দুরে দুরে বসবা আমার থেকে।।কেননা আমরা উভয়েই কিন্তু প্রাপ্য বয়স্ক।।আমি জানি তুমি আমাকে বিশ্বাস করে আমার সাথে এসেছ।এখন আমি যেন তোমার বিশ্বাস টুকু রাখতে পারি সেই চেষ্টা করবো।। (নাফিজ)
-হইছে হইছে আর বয়ান করতে হবেনা।।(নিশি)
-এই তুমি কি রান্না করতে পারো?? (নাফিজ)
(-এইরে কি বলবো।আমিতো রান্নাই করতে পারিনা।রান্না না পারলে কি হইছে? ফাফরতো মারতে পারি।)
কে বলছে পারিনা?? আমি সব রান্না করতে পারি।।কিন্তু করবোনা।।
(নিশি)
-রান্না পারলেতো করবা।।আকাইম্মা একটা।।রান্নার ‘র’ ও পারোনা তুমি।(নাফিজ)
-আমি রান্না পারি বুঝলা? যে কোন রান্নাই করতে পারি।পারলে জিজ্ঞাস করতে পারো কোন জিনিস কি করে রান্না করে।(নিশি)
-আচ্ছা ঠিকআছে। তাহলে বলতো ডিম সিদ্ধ করে কি ভাবে?? (নাফিজ)
-এটাতো সহজ।।কড়াইতে তৈল দিয়ে ডিমটা কিছুক্ষন নাড়া চাড়া করলেই সিদ্ধ হয়ে যাবে।।কি ঠিক বলেছিনা??(নিশি)
-হ্যাঁ হ্যাঁ! তুমিতো দেখছি সবই পারো।।তোমারে যে বিয়ে করবে তার জীবনটা একেবারে তেজপাতা হয়ে যাবে। (গুনগুনিয়ে বললাম)
-কিছু বলেছ?? (নিশি)
-না কি বলব।।চলো রুমটা সাজাতে হবে।কবি বলেছে মেয়ে মানুষ নাকি রুম সাজাতে পারেনা।তার মানেতো তুমিও পারোনা তাইনা?? (নাফিজ)
(হুদাই একটু বললাম,তা না হলেতো কোন কাজই করতে চাইবেনা)
-এহ কে বলছে মেয়েরা পারেনা।।মেয়েরাইতো রুমটাকে সাজিয়ে রাখে।
আর আমিতো অনেক সুন্দর করে রুম সাজাতে পারি।।(নিশি)
-আমি বিশ্বাস করিনা। যে মেয়ে ডিম সিদ্ধ করতে পারেনা।সে নাকি আবার রুম সাজাতে পারে।
পারলে একটু সাজিয়ে দেখাওতো??(নাফিজ)
-দাঁড়াও আমি একাই সাজিয়ে দেখাচ্ছি।। আর হ্যাঁ!! তুমি কিন্তু পাসের ঐ ছোট্টো রুমটাতে থাকবে বুঝলে??
আমি এটাতে থাকবো।।(নিশি)
-আন্টি যদি দেখে যে আমরা আলাদা থাকি তাহলে কিন্তু বিপদে পড়ে যাব।তার চাইতে ভালো হবে আমি বিছানায় ঘুমাব।আর তুমি সোফায়,বা ফ্লোরে ঘুমাও তাহলে ভালো হবে।।(নাফিজ)
-জ্বিনা স্যার!! আমি বিছানায় ঘুমাবো।
আর আপনি নিচে শুবেন।ব্যাস এটাই ফাইনাল।। (নিশি)
-আচ্ছা আচ্ছা ঠিকআছে। নাই মায়ের চাইতে কানা মা-ই ভালো।।(নাফিজ)
-হুমমমম।।আচ্ছা যাও রুম থেকে বের হও।আজ আমি একাই রুমটা সাজাবো।
পরে কথা হবে তোমার সাথে।
আমি না ডাকা পর্যন্ত রুমে আসবানা। (নিশি)
-ঠিকআছে আমি একটু ছাদে যাচ্ছি।তোমার রুম সাজানো হলে আমাকে ডাক দিও।।
সালার জীবনটাই তেজপাতা করে দিবে মনে হয়।কিসের জন্য যে এই মেয়ের পালায় পরলাম।ভেবেছিলাম একটু উপকার হবে।রান্না করার জন্যতো একটা লোক হবে অন্তত।কিন্তু নাহ,এই মহারানী রান্নাই পারেনা।।ডিমই তো সিদ্ধ করতে জানেনা।তাহলে রান্না করবে কেমনে।।ধুর ভাল লাগতেছেনা।।একটু বাসার ছাদ থেকে হাওয়া খেয়ে আসি।।তাহলে হয়তো একটু ভাল লাগতে পারে।।
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com