Breaking News

গার্লফ্রেন্ড । পর্ব - ০৩


বাসার ছাদের উপরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ব্যাস্ত শহরটাকে দেখতে ছিলাম।
রাতের বেলায় শহর অঞ্চল দেখতে বেশ ভালোই লাগে।।
আকাশের দিকে চেয়ে দেখলাম যে আকাশ টা কেমন যেন মেঘলা মেঘলা।।হয়ত বৃষ্টি হতে পারে।পকেট থেকে ফোনটা বের করে আম্মুর নাম্বারে একটা কলদিলাম।
সেই কখন আসছি এখন পর্যন্ত আম্মুকে জানানোই হয়নি।।
আল্লাহই জানে কতটা টেনশনে ছিলো ‘মা’ রিংহচ্ছে, কিছুক্ষন পরে মা ফোনটা রিসিভ করল…..
-আস্সালামু আলাইকুম (নাফিজ)
-ওয়ালাইকুম আস্সালাম। কেমন আছিস বাবা!! ঠিকমত পৌঁছাইছিস তো?? কোন অসুবিধা হয়ছে নাকি??(মা)
-নাহ মা!! আসতে কোন রকমের অসুবিধা হয়নি।।আসছি কিছুক্ষন আগেই।
এখানে এসে বাড়িওয়ালা আঙ্কেল আন্টিদের সাথে কথা বার্তা বললাম তো তাই তোমাকে ফোন দিতে পারিনি।।(নাফিজ)
-জানিস কতটা টেনশনে ছিলাম।। (মা)
-কোন টেনশন করবা না।
আর হ্যাঁ!! ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করবা।আমার জন্য একেবারে টেনশনে করবানা।তাহলে তোমার ক্ষতি হবে,আমার জন্য খাজ করে দোয়া করবা তাহলেই হবে।(নাফিজ)

-ঠিকআছে বাবা।।নিজের জত্ন নিবি সবসময়।।আর কখন কি লাগে ফোন করে বলিস।।(মা)
-মায়ের সাথে কিছুক্ষন কথা বলার পরে ফোনটা কেটে দিলাম।।
মনটা কেমন যেন খারাপ লাগছে।
নিজের এলাকা ছেড়ে শহরে আসছি,কতো বন্ধু বান্ধবদের কে রেখে আসছি।
এই কথা মনে পড়লে বুকটা ফেটে যায় যায় অবস্হা।ব্যস্ত শহরটাকে দেখতেছিলাম।
হঠাৎ করে মনে হলো কে যেন লুকিয়ে লুকিয়ে ফোনে কথা বলতেছে।
মনে হলো মানুষেরই গলা।
কিন্তু আস পাস দিয়ে কাউরেইতো দেখতেছিনা।কোন ভুত পেত্নি না তো আবার!!দেখি একটু ঘুরে কে কথা বলতেছে লুকিয়ে লুকিয়ে।
ছাদের পাস দিয়ে ভালো করে দেখতে ছিলাম।
দেখি ছাদের এক কনায় একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতেছে।।আমাকে দেখে ফোনটা কেটে দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।।
এবং তারপর সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল….
-কে কে কে আপনি??এখানে কি জন্য এসেছেন?? (মেয়ে)

মেয়েটার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কথা বলা দেখে হাসি পেলো।।বেচারি মনে হয় আমাকে দেখে একটু হলেও ভয় পাইছে।
দেখি এর সাথে একটু পরিচিত হয়ে নেই।
তা না হলে সে প্রেম করতে পারবেনা।আমাকে যতবার দেখবে ততবার এভাবে ফোন কেটে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।তারচেয়ে ভালো ওর সাথে একটু পরিচিত হয়ে নেই, তারও উপকার হবে আমারো উপকার হবে।
-আমার নাম সাঈদ নাফিজ।বাসা ফরিদরপুর।
আজ এই বাসায় আসছি।।
আপনার নাম কি?? (নাফিজ)

-আমার নাম সামিয়া।এটা আমার খালার বাসা।।দুদিন হলো এখানে আসছি।
এখানেই ভর্তি হয়েছি।।(সামিয়া)

-ওহ আচ্ছা!! তো কি BF এর সাথে কথা বলতেছেন বুঝি।।(নাফিজ)

আমার এরকম কথা শুনে মেয়েটা একটা লাজুক মাখা হাঁসি দিয়ে মাথা নাড়ালেন।।আমিও বুঝতে পেরেছি যে সে তার BF এর সাথেই কথা বলতেছিলো।

-আপনি বুঝলেন কি করে যে BF এর সাথে কথা বলতেছিলাম। (সামিয়া)

-এটাতো একটা সিম্পল ব্যাপার -কারন,একমাত্র BF/GF এর সাথে কথা বলার সময় লোকেরা লুকিয়ে লুকিয়ে গলা চেপেচেপে কথা বলে।আর যারা এ বিষয়ে অভ্যস্ত তারাতো চোখ দেখলেই বুঝতে পারে যে তার রিলেশন আছে কি না।।(নাফিজ)

-তাইনাকি?? তো আপনি প্রেম করেন?? (সামিয়া)
-নাহ!! আমাকে প্রেম করানো হয়।।(নাফিজ)
-মানে?? প্রেম করানো হয় মানে বুঝলাম না।। একটু বুঝিয়ে বলবেন?? (সামিয়া)

-সেটা পরে বলব,আজ না।।(নাফিজ)
-আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?? (সামিয়া)
-আচ্ছা ঠিকআছে।।আমরা তাহলে ফ্রেন্ড।।এখন আপনার Bf এর সাথে কথা বলুন, তা না হলে বেচারা কষ্ট পাবে।।(নাফিজ)
-আচ্ছা ঠিকআছে।। (সামিয়া)

-সামিয়ার ওখান থেকে চলে আসলাম রুমে।।রুমে এসে দেখি নিশি রুমটা খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে।
যাক মেয়েটার মাথায় বুদ্ধি আছে। রান্না না পারলেও রুম গুছাতে পারে।এখন যদি একটু পাম দেয়া যায় তাহলেতো ফুলে যাবে।
নাহ পাম দিবোনা।
একটু রাগাতে হবে।।
কিন্তু নিশিতো রুমে নেই।
তাহলে কোথায় গেলো?? মনে হয় ওয়াশরুমে গেছে।বারে,সেখানের দরজাতো দেখছি খোলা।।তাহলে নিশি কোথায়??
রুম থেকে বের হয়ে আন্টির রুমের কাছে গিয়ে দেখি নিশি বসে বসে চা খাচ্ছে আর আঙ্কেল আন্টির সাথে গল্প করতেছে।
পাসে দেখি সামিয়াও বসে রইছে।
সামিয়াটা কখন এলো?? ধ্যাৎ যখন মন চায় আসুক তাতে আমার কি।
আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।।আমাকে আন্টি দরজার সামনে দেখে ডাকদিলো।।তারপর রুমে ঢুকার পরে আন্টি আমায় টিটকারি মেরে বলল…..
-দেখ মা!! ছেলেটা বৌকে রুমে না পেয়ে বৌ কে খুঁজতে বের হয়ে গেছে।।বৌ পাগল ছেলে একটা।। (আন্টি)
-আন্টি ও এরকমই!!জানেন আন্টি,ও আমাকে রেখে কোথাও বের হতেই চায়না।।সব সময় ঘরে বসে থাকবে।।যদি একটু বলি যে বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তা থেকে একটু ঘুরে আস।
এই কথা বললেই হলো তাহলে ন্যাকা কান্না শুরু করে দিবে।।(নিশি)

আল্লাহগো কি ভেজাল মুক্ত মিথ্যা কথা বলতেছে আমার নামে।।এতো সুন্দর করে গুছিয়ে কি করে মিথ্যা কথা বলে মেয়েটা।।
নিশির কথা শুনে সবাই হাসতেছে।
আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ওদের হাসি দেখে।।কিন্তু এখন রাগলে চলবেনা।।আমি কি করব বুঝতেছিনা।হাসি না আসা সত্বেও বলদের মত লজ্জা পেয়েও তালে তাল মিলিয়ে আমিও হাসতেছি।।
-আচ্ছা নাফিজ ভাইয়া!! আপনাদের বিয়ের বয়স কতদিনের?? (সামিয়া)

কি বলব ভেবে পাচ্ছিনা।চুপ করে বসে বসে মাথা চুলকাচ্ছি।মাথায় কিছু আসতেছেনা।
আমার এরকম নিরবতা দেখে নিশি বলে উঠল
-আমিই বলছি।আমাদের বিয়ের বয়স এইতো ১ মাস হলো।আপু!!নাফিজ টা না কিছু মনে রাখতে পারেনা।।কালকে কি দিয়ে ভাত খেয়েছে সেটাইতো ওর মনে নেই।তাহলে বিয়ে কবে হইছে সেটা কি করে মনে রাখবে বলো?? (নিশি)

-হাহাহা ভাইয়া! আপনিতো দেখছি পুরাই স্মৃতি শক্তিতে দুরবল।।ভাবি ভাইয়াকে ভালো একটা চিকিৎসা করান।
তা না হলে কদিন পরে সব এলো মেলো করে ফেলবে।কদিন পরেতো দেখা যাবে কে যে তার বৌ সে-টা-ও হয়ত ভুলে যাবে।(সামিয়া)

-ধুর এতো অপমান ভালো লাগেনা।।আমাকে বোকা পেয়ে যার যেটা মনে আসতেছে সে সেটাই বলে যাচ্ছে!! এখানে আর এক মুহুর্তও থাকবোনা।
রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকবো তাহলে ভালো হবে।।
তারপর বসা থেকে উঠে সোজা রুম থেকে বের হয়ে আমার রুমে চলে আসলাম।

-কিরে নাফিজ চলে গেলো কেন?? (আন্টি)
-জানিনা।।পাগলটা কখন যে কি করে বসেনা তা বলে বুঝানো জাবেনা।। (নিশি)

-আমাদের কথায় মনে হয় কষ্ট পেয়েছে।।(আন্টি)
-আমরা মনে হয় একটু বেশিই বলে ফেলেছি।।ভাবি যাওতো একটু বুঝাও ওরে।।তা না হলে বেচারা কষ্ট পাচ্ছে খুব।।(সামিয়া)
-আরে ও রাগ করার মতো ছেলেনা।নাফিজ কখনো কারো কথায় রাগ করেনা,ওরে নিয়ে কত মজা করি কখনো ওরে রাগতে দেখিনি।
হয়তো একটু কাজ আছে তাই বের হয়ে গেছে।।ও একদমই ওরকম না,আমি সব ঠিক করতেছি হ্যাঁ!!
আপনারা কোন টেনশন নিবেন না।।(নিশি)

তারপর নিশি ওখান থেকে বের হয়ে রুমে চলে আসলেন।এসে দেখেন যে নাফিজ কার সাথে যেন কথা বলতেছে।
নিশি কিছু না বলে বিছানার উপরে গিয়ে বসলেন।।তারপর নাফিজের কথা বলা শেষ হলে নিশি বলে উঠলেন…..
-ঐ ওখান থেকে তখন চলে আসলা কেন?? (নিশি)
-তো কি করবো?? বসে বসে মহিলাদের বকবক শুনবো নাকি?? (নাফিজ)

-প্রয়োজনে তাই করবা।।তোমাকে সবাই মজা করে তখন ও কথা বলছিলো।আর তুমি রাগ করে চলে আসলে?! বোকা ছেলে।। আমি যদি তখন ওরকম ভাবে কথা গুলো না বলতাম তাহলে তারা বুঝতো কেমনে যে আমি তোমার বৌ।। এই কথা বলার পরে তারা আরো নিশ্চিত হলো যে আমরা ইয়ে..(নিশি)

-হইছে হইছে আর বক বক করতে হবেনা।।আসল কথা হলো GF ফোন দিয়েছিলো তাই চলে আসছি।(নাফিজ)
-কী!! তোমার GF আছে?? আগে বলোনি তো।(নিশি)
-আগে বলবই বা কবে?? আমাদেরতো আজই পরিচয় হলো।আর তুমি যে GF এর কথা ভাবতেছ এটা সে নয়।।এই GF এর পূর্ণরুপ গার্লফ্রেন্ড নয়,এটার পূর্ণরুপ হলো Good Friend আর আমার এই গুড ফ্রেন্ড টা হলো খালিদ। (নাফিজ)
-ওহ সে কথা, আমি তো অন্য কিছু ভেবেছিলাম।(নিশি)
-আচ্ছা যাইহোক,ওসব বাদ দেও, আমি এখন ঘুমাব।তুমি ঘুমালে যাও সোফায় গিয়ে ঘুমাও।।(নাফিজ)
-এই এই আমি বিছানায় ঘুমাব।তুমি সোফায় যাও?? (নিশি)

-আচ্ছা ঠিকআছে যাচ্ছি।।(নাফিজ)

তারপর কি আর করার আছে।
আমার বাড়ি আমার ঘর আমারে দেয় ঢেকি ঘর।সেরকমই হলো ব্যাপারটা।।
অসহায় ছেলেদের মতো সোফার উপরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।

চলবে……..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com