Breaking News

আঘাত

মা আমি পেগনেট (রিতা)

-কি বলছিস মা সত্যি।কবে থেকে? (মা)
_হ্যা মা আগামীকাল ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম আর আজ রিপোর্ট এসেছে।ওখান থেকেই জানতে পেরেছি (রিতা)
-তা জামাই কি তোর সাথে গিয়েছিল (মা)
_না ওর সময় নেই তাই আমি একাই গিয়েছিলাম।আর তোমার জামাইকেও এই কথা বলি নি।সবার আগে শুধু তোমাকেই বললাম (রিতা)
-ওহ তার মানে তুই জামাইকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিস (মা)
_হ্যা মা।তুমি যেন আবার তাকে বলে দিও না (রিতা)
-আচ্ছা বাবা আচ্ছা বলবো না (মা)
_এখন তাহলে রাখছি (রিতা)
-হ্যা রাখ (মা)
.
রিতা ফোন কেটে দিয়ে ফোনটা টেবিলের ওপর রাখলো।
ঘড়িতে এখন রাত ৯টা ।উনার আসার সময় হয়ে এসেছে।হয়তো এখুনি চলে আসবে।
আরো কিছুক্ষন সময় পার হতেই হঠাৎ ডোরবেল বেজে উঠলো।রিতা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই রিফাত ঘরে প্রবেশ করলো।মুখে সারাদিনের কর্মক্লান্তির ছাপ।রিফাত ঘরে ঢুকে টেবিলে গিয়ে বসল।
রিতা পানির গ্লাস রিফাতের হাতে দিতেই নিমিষের মধ্যেই তা শূন্য করে দিল।শাড়ির আচল দিয়ে রিতা রিফাতের মুখ মুছে দিতে দিতে বলল..
_একটা সারপ্রাইজ আছে (রিতা)
রিফাত কৌতুহলি দৃষ্টিতে রিতার দিকে তাকাল।
-কি বলো তো (রিফাত)
রিতা কিছুটা ইস্ততিস্ত করে লজ্জামাখা কন্ঠে বলল..
_আমি মা হতে চলেছি (রিতা)
-সত্যি বলছো আমি বাবা হব (রিফাত রিতা জড়িয়ে ধরে বলল)
_হ্যা গো (রিতা)
আচমকা হঠাৎ রিফাতের মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল।
রিতা রিফাতের গালে হাত রেখে বলল…
_ কি গো এমন ভাবে তোমার মুখটা মলিন হয়ে গেল কেন (রিতা)
রিফাত মলিন কন্ঠে রিতার দুহাত নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল …
-তুমি আমাকে এত বড় একটা সারপ্রাইজ দিলে আর আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারলাম না।তবে কথা দিচ্ছি “আমার ছোট্ট বাবা পৃথীবিতে আসার আগেই” আমি তোমাকে অনেক অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ দেব।
যেটা পেয়ে তুমি হতবাক হয়ে যাবে (রিফাত)
রিতা রিফাতের বুকে মুখ লুকিয়ে বলল …
_না গো তোমার কোনো সারপ্রাইজ আমার চাই না।তুমি শুধু সারা জীবন তোমার এই বুকে আমাকে মাথা লুকানোর মতো ছোট একটু সুযোগ দিও।এটাই হবে আমার কাছে সব চেয়ে বড় সারপ্রাইজ (রিতা)
.
রিফাত রিতার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে মনে মনে বলল …
-সেটা তো আমিও চেয়েছিলাম রিতা।কিন্তু নিষ্ঠুর এই ভাগ্য আমার সেই চাওয়া পূরণ করতে দিল না (রিফাত)
রিফাত মনে মনে কথাটা বলায় রিতা তার মনের এই কথাটা শুনতে পেল না।
.
.
রিতার দিনগুলো যেন স্বপ্নের মতো কেটে যাচ্ছিল।দেখতে দেখতেই রিতার গর্ভের বাবুর বয়স ৯মাস হয়ে গেছে।আর এখন যেন রিফাত রিতাকে
আগের তুলনায় আরো বেশি ভালবাসছে।কিছুদিন থেকে রিফাত অফিসে না গিয়ে সর্বদা রিতার পাশে পাশে থাকছে।রিতা রিফাতকে অফিসে যাওয়ার কথা বললেই রিফাত বলে..
-এই কটা দিন তোমাকে মোটেও আমার চোখের আড়াল হতে দিতে চাই না।তুমি সবসময় আমার চোখের সামনেই থাকবে (রিফাত)
রিতাও রিফাতের কথার ওপর আর কোনো কথা বলে নি।
.
.
রিতার বাবু ডেলিভারি ডেইটের যখন আর মাত্র ৮ দিন বাকি তখন এক দুপুরে রিফাত রিতার কোলে মাথা রেখে রিতার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।রিতা দেখল রিফাতের চোখে পানি।
_কি গো তোমার চোখে পানি কেন (রিতা)
-আচ্ছা রিতা মনে করো কোনোদিন যদি আমি তোমাকে ছেড়ে বহুদূরে কোথাও চলে যাই তখন তুমি কি করবে (রিফাত)
রিফাতের এমন আজগুবি প্রশ্নে রিতার বুকটা কেপে উঠলো।তবুও শান্তভাবে রিফাতের মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল..
_কিছুই করব না।এমনকি তোমাকে খুজতেও যাব না।আমি জানি আমার ভালবাসার জোর তোমাকে আমার কাছেই টেনে আনবে (রিতা)
-কিন্তু যদি কোনোদিন না ফেরার দেশে চলে যাই তখন…তখন কি করবে (রিফাত)
রিতা রিফাতের চোখে চোখ রেখে বলল..
_তুমি এমন অলুক্ষুনে কথা কেন বলছো (রিতা)
-রিতা সবাই চিরদিন বেচে থাকবে না।তাই যদি কখনও আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাই তখন কি তুমি নিজেকে সামলাতে পারবে (রিফাত)
রিতা রিফাতের মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকল।
_রিফাত আমি জানি না আজ তোমার কি হয়েছে।তুমি কেন আজ এমন অবান্তর প্রশ্ন করছো।তবুও তোমার প্রশ্নের জবাবে আমি বলতে চাই…..
জীবন কোনোদিনও কারো জন্য থেমে থাকে না।তাই তুমি আমাকে ছেড়ে গেলেও আমি থেমে থাকবো না।তোমার স্মৃতি আর আমার গর্ভের সন্তানকে আকড়ে ধরে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিব।জানি আমার অনেক কষ্ট হবে তবুও বলছি তোমাকে ছেড়ে থাকাটা আমার কাছে খুব কঠিন কাজ হবে না (রিতা)
রিফাত রিতার কোল থেকে মাথা উঠিয়ে রিতার কপালে একটা চুমু দিল।
-আমি তোমার কাছ থেকে এমন উত্তরই আশা করেছিলাম রিতা।তুমি আমার আশাটা পূরণ করেছ (রিফাত)
.
.
.
পরদিন সকালে রিতা ঘুম থেকে উঠে পাশে তাকিয়ে দেখে রিফাত বিছানায় নেই।রিতা অবাক হলো এটা ভেবে যে….
রিফাত যে ঘুম কাতুরে তাতে সে এত দ্রুত ঘুম থেকে উঠতে পারবে না।
বিছানা ছেড়ে উঠে রিতা রিফাতের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ড্রইংরুমে হাজির হলো।
ডাইনিং টেবিলের ওপর “একগুচ্ছ কাঠ গোলাপের” নিচে চাপা দেওয়া একটা সাদা কাগজ দেখে রিতা ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল।ফুলটা হাতে নিয়ে নাকের কাছে ধরে জোরে একবার শ্বাস নিল।কিন্তু ফুলের কোনো ঘ্রাণই তার নাকে এলো না।
ফুলটা সাইডে রেখে সাদা কাগজটা হাতে নিল রিতা।সাদা কাগজে গোটা গোটা অক্ষরে কিছু লেখা।হাতের লেখা বলছে এটা রিফাতেরই হাতের লেখা।রিতা পড়তে শুরু করলো।
.
.
প্রিয় রিতা ……
.
কাল যখন তোমার কাছ থেকে আমি জানতে পেরেছিলাম যে তুমি আমাকে ছাড়াও বেচে থাকার চেষ্টা করতে পারবে তখন সত্যিই আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।আমাদের বাবুর পৃথীবিতে আশার সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আমার সময়ও ঘনিয়ে আসছিল।সেই সাথে সাথে তোমাকেও ব্যাপারটা জানানোর প্রয়োজন ছিল।তাই আজ তোমাকে সব সত্যি কথাই আমি বলে যাচ্ছি।
.
ডাক্তার বলে দিয়েছিলেন যে আমি বড় জোর আর ১০ থেকে ১১ মাস বাচবো।হ্যা আমার শরীরে মরণব্যাধি ক্যান্সার বাসা বেধেছে।যখন তুমি এই চিঠিটা পড়বে তখন হয়তো আমি কোনো এক রাস্তার পাশে মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছি।বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই নি।চেয়েছিলাম আমার শেষ নিঃশ্বাসটা যেন তোমার কোলে মাথা রেখে নিতে পারি।কিন্তু আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি।তাই তোমার থেকে দূরে বহুদূরে চলে যাচ্ছি।আমার অনাগত সন্তান তোমার কাছে আমানত রেখে গেলাম .
আর আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।টেবিলের ড্রয়ারে আমার সারা জীবনের পরিশ্রমের অর্থ আছে। এটা আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য সারপ্রাইজ।
.
ইতি
তোমার দুর্ভাগা “রিফাত”
.
.রিতার চোখের পানিতে চিঠিটার একপাশ ছিড়ে গেছে।
চিঠিটা বুকে জড়িয়ে রিতা চিৎকার করে কাদতে লাগল।রিতা বিলাপ করে বলতে লাগলো …..
রিফাত তুমি আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলে।এভাবে আমাকে ছেড়ে যে চলে যাওয়ার মতো একটা সারপ্রাইজ তুমি আমাকে দেবে তা আমি ভাবতেও পারি নি।
.
.
ঘন্টা খানেক পর যখন কাদতে কাদতে রিতার চোখের পানি শুকিয়ে গেল তখন রিতা টেবিলের ড্রয়ারটা খুললো।পুরো ড্রয়ার ভর্তি টাকা।রিতার মনে পরলো রিফাত এগুলো তাকে সারপ্রাইজ দিয়েছে।হয়তো বাকিটা জীবন চলার জন্যেই রিফাত এগুলো রেখে গেছে।
.
কিন্তু রিতা বুঝতে পারলো না যে এগুলো কি সত্যিই সারপ্রাইজ।এই প্রতিটা টাকার সাথে রিফাতের ঘাম মিশে আছে।
“এর প্রতিটা টাকা খরচ করতে গেলে রিতার বুকে যে আঘাত লাগবে”
সেটা রিতা বেশ বুঝতে পারছে।
রিতার মনে হলো……
এগুলো রিফাতের তার চলার জন্য রেখে যাওয়া সারপ্রাইজ নয় , তাকে #আঘাত করার জন্য রেখে যাওয়া সারপ্রাইজ।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com