Breaking News

তোমায় আমার প্রয়োজন | পর্ব-৩

– তনু
– হুম
– বিয়ে করবি ?
– কিহহহহহহহহ
– হ্যাঁ , বিয়ে করবি ?
– আপু কি বলো না বলো , আমি বিয়ে করবো , আমার পরিবার টা ভেসে যাবে
– ভাসবে না , বরং ভালো চলবে
– মানে
.
তারপর আফরোজ এক এক করে সব টা খুলে বললো তনু কে । তনু যত শুনছে ততই অবাক হচ্ছে । বার বার নিঃশ্বাস টা আটকে আসছে তার ।
.
– আপু
– হ্যাঁ বল
– তুমি আমায় এতই লোভী ভাবো ?
– কি বলিস এইসব তনু
– তা নয়তো কি আপু , নিজের পরিবার কে খুব ভালোবাসি , তাই বলে নিজেকে বিকিয়ে দিব আপু , তাও বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে তাও আবার একজন drug addicted মানুষের সাথে , শুধুমাত্র নিজের প্রয়োজনের জন্য । আপু আমি এইসব পারবো না । ক্ষমা করো আপু আমার চাকরির দরকার নাই

দাড়া তনু আগে শুনে যা তারপর চলে যাস ।

আমাকে এখন তোর খুব খারাপ মনে হচ্ছে , কিন্তু বাস্তবতা র দিক থেকে ভেবে দেখ তো ,

যদি আজ তোকে খারাপ কাজ করতে হতো , যদি তোকে prostitute এর কাজে লাগতে হতো ,

তখন কি করতি ? তখন কি ভাগ্য ভেবে মেনে নিতি ? নাকি এখন যা বললি এইসব লেকচার দিতি ।

তনু আমি তোকে কাপড় খুলে বিছানায় অন্য পুরুষের সাথে শুতে বলি নি ,

এতে তোর পরিবার টা বাচবে , শুভ টা একটা চাকরি পাবে , আংকেল এর ভালো চিকিৎসা হবে ,

রুবেল ছুটকির পড়াশোনা টাও আগাবে , আন্টিও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাবে ।

আর ওই মানুষ গুলো তোকে দেখে বাচতে শিখবে ।

ছেলেকে স্বাভাবিক করার শক্তি পাবে তোর থেকে । তনু আমি বিবেক দিয়ে ভাবি , আবেগ দিয়ে নয় ।

কত টুকু জানিস তুই দুনিয়া সম্পর্কে ? বড় জোড় সাত থেকে আট টা টিউশনি করিস তাই দুনিয়া এখনও চিনিস নি ।

আমি চিনি দুনিয়া । চাকরি করবি তুই ? তা কি চাকরি করবি ?

ইন্টারভিউ দিতে গেলে যখন বস আস্ক করবে তোমার সাইজ কত ?

উত্তর দিতে পারবি তো ? আআরেকজন বলবে এক রাত আমার সাথে স্পেন্ট করো প্রমোশন করিয়ে দিব ।

কি করবি , স্পেন্ট করবি নাকি ? আরেকজন বলবে ,

নিউড পিক দাও না হলে সেলারি বাড়াবো না তখন কি করবি ?

আপু

– ঠিক বললাম , যা বললাম একদম ঠিক বললাম । এখন হয়তো বলবি আপু সব অফিস এমন হয় না ,

হ্যাঁ জানি সব অফিস এমন হয় না , কিছু অফিসে মাহবুব সাহেব এর মতো বাবার

বয়সে বস থাকে যারা স্টাফদের নিজের সন্তানের মত দেখে ।

এতক্ষণ যা যা বললাম সব গুলা উপলব্ধি করতে পেরেছি , আজ আমি মেয়ে এখানে এই পর্যায়ে

এমনি এমনি আসি নি তনু । বহুত ঝড় অতিক্রম করে আসতে হয়েছে আমায় ।

তারপর জয়েন করলাম মাহবুব ইন্ডাস্ট্রি তে । আর তারপর বুঝলাম দুনিয়াতে হয়তো কিছু

ভালো মানুষ ও আছে যারা মাহবুব সাহেবের মত হয় । তাওহীদ স্যার নেশাগ্রস্থ হতে পারে তবে ভালো ।

বদমেজাজি হতে পারে তবে অনেক বিনয়ী ।

আর তোকে দেখে মনে হয়েছে তুই হয়তো পারবি ।

আপু আসি
.
চলে গেছে ?
– হ্যাঁ , ভেবেছে আমিই হয়তো ওর অসহায়ত্বের সুযোগ টা নিলাম
– আমার বউটা বুঝি অন্যের অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে জানে ?
– ওয়াসিম আমি কি ভুল ছিলাম ?
– তুমি যেমন তোমার জায়গায় ঠিক ছিলে তেমনি ও ওর জায়গায় ঠিক ছিল
– শরীর কেমন এখন ?
– একদম ফিটফাট , যার এমন একটা বউ থাকে সে কি কখনো অসুস্থ থাকতে পারে ?
– মজা নিও না তো , সারাদিন অফিসে খাটি তোমার যত্ন ও নিতে পারি না
– আরে ধুর বাদ দাও তো , চলো ক্ষুধা পেয়েছে
– আচ্ছা চলো
.
রাত ১২ টা বেজে ৪০ মিনিট । আফরোজ আর ওয়াসিম ঘুমানোর ব্যবস্থা করছে । তখনই আফরোজ এর ফোনে ফোন আসে ।
– আফরোজ , এই আফরোজ
– জ্বি আমি ওয়াসরুমে
– কল আসছে তোমার
– ওয়েট আসতেছি
.
– কে কল দিয়েছে এত রাতে
– নিজেই দেখে নাও
– ও কল দিলো তাও এত রাতে ,
– কল ব্যাক করে দেখো
– হ্যাঁ ঠিক বলেছো
.
আফরোজ চিন্তিত হয়ে কল করে । আল্লাহ জানে এত রাতে কল দিলো কেন ? কোন বিপদ আপদ হয় নি তো আবার ?
.
– হ্যালো , কিরে তনু এত রাতে কল দিলি , সব ঠিক আছে তো
– হ্যাঁ আপু সব ঠিক আছে
– তাহলে কি হয়েছে
– আপু আমি রাজি
– মানে
– মানে আমি বিয়েটা করবো আপু , তুমি ওনাদের নিয়ে বাসায় আসো
– তুই কি সিরিয়াসলি বলছিস ?
– হ্যাঁ আপু , ভেবেছি অনেক ভেবেছি । ভেবে দেখলাম বিয়ে হলে তো সেফে থাকবো কিন্তু এই ভাবে থাকলে মানুষের ভোগের সামগ্রী হতে হবে । আর তাছাড়া এমনিতেও আশেপাশের মানুষ কত কথা বলে তার ঠিক নেই
– যাক বুঝলি তাহলে
– নিজের ভালো থাকার জন্য বিয়ে টা করব না , আমার পরিবার টা ভালো থাকবে আর সাথে আরেক বাবা মায়ের কাছে তাদের সন্তান কে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমার এই বিয়ে করা । জুয়াতে নামলাম আমি । নিজের জীবন টা নিয়ে জুয়া খেলে দেখিই না একবার । জিতি নাকি হারি
– জুয়াতে নামতেই হয় তনু , আমাদের মত মিডেল-ক্লাস পরিবারের মেয়েরা জুয়াতে না নামলে জীবনের সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না
– আমার কিছু শর্ত আছে আপু
– বল
– আমার ভাই টাকে ভালো টাকা সেলারির একটা জব দিতে হবে , কারন আমার বিয়ের পরে ও থাকবে একমাত্র আমার পরিবারের হাতিয়ার
– আচ্ছা আমি স্যার কে কাল বলব সব
– আপু
– হ্যাঁ বল
– যদি তারা রাজিই না হলেন তখন
– স্যার তোর মতই কাউকে খুজতেছেন , কাল অফিসে গিয়ে কথা বলবো আমি স্যারের সাথে
.
কথা শেষ হলো ?
– হ্যাঁ শেষ হলো
– এখানে আসো
– কি ?
– আমার বউ টা এত কিছু একা হাতে ম্যানেজ করে কিভাবে বলো তো ? অফিস সামলানো , সংসার সামলানো প্রতি ফ্রাইডে তে শ্বশুরবাড়ির সব কাজ করে দিয়ে আসা , নিজের বাসার সব কাজ করা , তারপর এই অধম বান্দার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা । আর এখন অন্য কারো সুখের খোজে ছুটে বেড়াচ্ছে , কিভাবে পারো এত কিছু ?
– ভাবনার বিষয় তো ব্যাপার টা ভাবতে হচ্ছে , আচ্ছা ভেবে জানাবো তোমাকে
– ফাযিল মেয়ে সব সময় খালি মজা তাই না
– ওয়াসিম আমার সারাদিনের ক্লান্ত মনের একমাত্র শান্তির ছায়া তো আমি তোমার এই হাসিমুখ টা দেখেই পাই
– আচ্ছা চলো , কাল আমারও অফিস আছে ,ঘুমিয়ে পড়ো
– কাল অফিসে যাবা নাকি
– হ্যাঁ , আফরোজ কাল অফিসে যেতেই হবে , এক সসপ্তাহ অফিসে যাই না , বস না জানি এইবার গেলে বরখাস্ত করে
– ইসসসসসস বললেই হলো , বলবা আমি অনেক অসুস্থ ছিলাম
– আচ্ছা দেখা যাবে , ঘুমিয়ে পড়ো
.
আফরোজ এর অক্লান্ত চেষ্টার পরে দুই পরিবারের মাঝে কথা হয় । মাহবুব সাহেব তো মেয়ে দেখেই খুশি । রাবেয়া বেগম তো পারছে না এক্ষুনি মেয়েকে ঘরে তুলেন । দুই পরিবারের সম্মতি তে বিয়ে ঠিক হয় তাওহীদ-তনুর । কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে তাওহীদ এখনো জানে না যে আসছে ১০ ই ফাল্গুন ১৪২৫ বঙ্গাব্দ মানে ২২ ফেব্রুয়ারি তার বিয়ে । এইদিকে তাওহীদের বাবা মা বোন গিয়ে তনুর বাড়িতে গিয়ে সব ঠিকঠাক করে পাকা কথা দিয়ে আসে । কিন্তু খারাপ লাগে তনুর বাবার জন্যে । লোক টা নিজের মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকদের সাথে ঠিক মত কথাই বলতে পারলো না । শুধু বাকা ঠোঁটে সালাম টাই দিতে পেরেছেন আর দু-চোখ বেয়ে অজস্র পানি ঝড়িয়েছেন ।
দুইদিন পর সকালে নাস্তার টেবিলে সবাই বসে আছেন । এমন সময় তাওহীদ আসে ।
.
– morning আব্বু
– morning , কেমন আছো ?
– ভালোই
– তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার
– বলতে থাকো কান আছে শুনছি আমি
– ২২ তারিখ তোমার বিয়ে , নিজেকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করো
– whatttttttttttttt
– whattttttt এর কিছু নেই , বয়স বেড়েছে দেখছো সেটা , তোমার মত বয়সে আমার বিয়ের দু বছর পার হয়ে গিয়েছিল
– আহহহহ , তুমিও না
– তুমি থামো রাবেয়া , ওকে এখন দ্বায়িত্ব বুঝে নিতে হবে
– মেয়েটা কে ?
– মেয়েটা কে বিয়ের দিনই দেখতে পাবে , দয়া করে মদের নেশা থেকে নিজেকে একটু দূরে রাখো
– আমার লাইফ আমি যেভাবে ইচ্ছা চালাবো আমার লাইফে বাধা ক্রিয়েট করো না বাবা
– shut up তাওহীদ , just shut up অনেক হয়েছে আর না নিজেকে এখন থেকে সংযত করার চেষ্টা করো আর কিছুই বলবো না আমি
.
বাবার কথা গুলো ঠিক হজম হয় নি তাওহীদের । তাই খাবার সমেত খাবারের প্লেট টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে সোজা বেরিয়ে যায় তাওহীদ ।
.
– দিলে তো রাগিয়ে
– চুপ থাকো তুমি
– এভাবে বলার কি দরকার ছিল
– এভাবেই বলার দরকার ছিল কিন্তু তাও আরো আগে
– কি লাভ হলো , রেগে চলে গেলো
– আরে যাবে না কোথাও , ওর প্রান ভোমরা আমার হাতে
– মানে
– মানে আজ রাতে দেখবে , আমি আসছি , মামুনি এডমিশনের খবর কি
– আব্বু তুমি ফ্রী হও তারপর এডমিশন হওয়া যাবে
– আচ্ছা
– আব্বু তোমাকে না আজকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে
– তাই ?
– হ্যাঁ অনেক পুরা আমিতাভ বচ্চনের মত
– বলে ফেলেন আম্মুজান , কত লাগবে আপনার ?
– ৫ হলেই হবে , আজকে নতুন ভাবি কে নিয়ে শপিং এ যাবো
– আমার আম্মুজান শপিং এ যাবে আর মাত্র ৫ ?
– হাউ কিউট আব্বু , বলে যখন ফেলেছো তাহলে দিয়েও যাও
– হা হা বদমাশ , রাবেয়া আমার আম্মুজান কে ক্রেডিট কার্ড টা দিয়ে দিও । আম্মুজান এখন আমার বড় হয়ে গেছে
– তুমিও যেমন
– আসছি , আল্লাহ হাফেজ
.
রাতে বাসায় এসে তাওহীদ তুমুল অশান্তি শুরু করে দিয়েছে । সব কিছু ভেঙে চুরে একাকার করছে । চিৎকার করে পুরো বাড়ি মাথায় করছে সে
– মাহবুব সাহেব , মাহবুব সাহেব
– আস্তে চিৎকার করো এটা ভদ্রলোকের বাসা , তোমার ক্লাব বা মদের আড্ডাখানা নয় যে চিৎকার করবে
– তোমার সাহস হয় কি করে এইসব করার
– কিসের সাহস , কি বলতেছিস তুই তাওহীদ
– জিজ্ঞেস করো তোমার হাজবেন্ড কে কি করেছে সে
– তাওহীদ…………… সাবধানে কথা বল , উনি তোর বাবা
– আরে বাবা তো বাবার মত থাকুক না ? এত বারাবারি করতেছে কেন
– কি হয়েছে কি
– কি হয়েছে , জানতে চাও , তাহলে শুনো উনি আমার সব ক্রেডিট কার্ড সিজ করে দিয়েছে , ATM এর সব টাকা ট্রান্সফার করিয়ে নিজের একাউন্টে নিয়ে নিয়েছে , কেন ?
– তো কি করবো , টাকা দিয়েছিলাম সেভ রাখার জন্য , মদের পিছনে আর ড্রাগস এর নেশায় ব্যয় করার জন্য না
– তার মানে তুমি ওর সব টাকা নিয়ে নিয়েছো
– হ্যাঁ
– দেখলা মা দেখলা
– কি দেখবো আমি , উনার টাকা উনি নিয়েছে আমার কিছুই বলার নাই
– মা তুমিও
– মা মা করছো কেন , মা কি করবে
– এইসব অফ করো , তোমাকে বলেছিলাম না যে আমার জীবনে নাক না গলাতে
– এখন তো টাকা অফ করলাম , বিয়ে না করলে ত্যাজ্যপুত্র করে দিব , আমার সম্পত্তির এক কানা কড়িও তুমি পাবা না তাওহীদ , মাথায় রাখো কথা টা
– মা দেখছ
– রাবেয়া উপরে আসো , আর তাওহীদ আজ সারা রাত আছে তোমার কাছে , ভাবতে থাকো , যা ডিসিশন নিবে জানাবে আমাকে , শুভ রাত্রি
.
.
চলবে……..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com