তোমায় আমার প্রয়োজন | পর্ব- ৪
বাবার কথায় বড় রকমের ধাক্কা খায় তাওহীদ । সারা রাত ভাবছে সে । এক বিয়ের জন্য ব্যাংকের টাকা সিজ করে দিল , আর এখন বলছে বিয়ে না করলে ত্যাজ্যপুত্র করে দিবে । এইসব ভাবতে ভাবতে বেচারা ক্লান্ত । মাহবুব সাহেব হঠাৎ এত কড়া হবেন কেউই ভাবে নি ।
একটা না একটা ডিসিশন নিতেই হবে তাকে । এইভাবে বসে থাকলে তো মারা পড়বে সে । তাই যত জলদি সম্ভব হয় একটা ব্যবস্থা করতে হবে ।
পরদিন সকাল বেলা
.
– আব্বু
– হ্যাঁ বলো
– আমি রাজি
– কিহ বুঝলাম না
– বললাম আমি রাজি বিয়েতে
– যাক লাইনে এসেছো তবে , প্রস্তুত করো নিজেকে বিয়ের জন্য , আর এখন থেকে অফিসেও বসবে । বাপের টাকায় ফূর্তি করতে ভালোই পারো এখন নিজে কামাই করে দেখো টাকা জিনিস টা কত কষ্ট করে উপার্জন করতে হয় । রাবেয়া আসছি আমি
– আব্বু আমার ক্রেডিট কার্ড টা………..
– সময় হলে সব পাবে , আগে বিয়ে টা হোক , তারপর
.
তাওহীদ কিছু না খেয়েই চলে গেছে বাহিরে । বন্ধুরা ক্রমাগত কল দিচ্ছে । অবশ্য দিবে না-ই বা কেন । এই দুই দিন তো তাওহীদের টাকার মদ তাদের পেটে পড়ে নি । বন্ধুদের সাথে বসে একটা প্ল্যানিং করবে ভাবছে সে । তাই সেখানে যাওয়া তার
.
– কিরে আজকেও মাল কড়ি আনিস নি
– ধুর আব্বু সব রকম ভাবে আটকে দিয়েছে
– সীট ইয়ার
– বিয়ে না করলে ত্যাজ্যপুত্র করে দিবে
– তাই নাকি
– হ্যাঁ , আমার মত নেশাখোর কে কোন শালি বিয়ে করবে আল্লাহ জানে
– তা কি করবি ঠিক করছিস কিছু
– বিয়ে করবো
-এএএএএএ
– হ্যাঁ , বিয়ে করে ফেলবো , বিয়ে না করে ত্যাজ্যপুত্র হওয়ার থেকে বিয়ে করে টাকা পয়সা হাতে পাবো তাই ভালো
– হ্যাঁ এটা ভালো ডিসিশন , কিন্তু মেয়েটা কে দেখছিস ?
– নাহ , আল্লাহ জানে কোন গাইয়া ভূত ঠিক করছে আমার জন্য
– আরে টেনশন নিস না বিয়ে টা কর , তারপর লাথি মেরে বের করে দিস ততদিনে সম্পত্তির ভাগ নিজের নামে করে নিস
– ঠিক তাই , তাওহীদ রায়হান যা বলছে কাজে লাগা
– হ্যাঁ তাই ভাবছি , ওই মেয়ের কপালে শনির দুর্দশা আছে , বহুত খারাপি আছে ওই মেয়ের ভাগ্যে
.
মাহবুব সাহেব অফিসে এসে দারুন মুডে আছে । মন টা তার আজ ফুরফুরা । বদমেজাজি নেশাগ্রস্থ ছেলে টাকে ভালোই জব্দ করেছে সে । এই রকম করলে যে ছেলে তার এত তারাতারি রাজি হবে ভাবে নি সে । এই বুদ্ধি টা তার নিজের মাথায় আসলে খুবই ভালো হতো । যে এই বুদ্ধি টা দিয়েছে তাকে একটা ধন্যবাদ তো জানাতেই হচ্ছে । চট করে মোবাইল টা হাতে নিয়ে কল দিয়ে বসলো তাকে
.
– হ্যালো আসসালামু আলাইকুম আংকেল
– ওয়ালাইকুম আসসালাম , বাবা কেমন আছো
– এইতো আংকেল একদম ফিটফাট , ওইদিকের কি অবস্থা
– একদম ঠান্ডা , অনেক ধন্যবাদ সাকিল তোমাকে , তুমি বুদ্ধি টা দিয়েছিলে
– ধন্যবাদ এর কি আছে আংকেল , আমি ওর বন্ধু শত্রু না , আমার দ্বারা ওকে নরকের দিকে ধাবিত করা পসিবল না । তো এখন কি সে রাজি হয়েছে ?
– হয়েছে মানে , একদম রাজি
– বাহ ভালো তো
– হ্যাঁ তোমাকে কিন্তু আসতেই হবে বিয়েতে
– ইনশাআল্লাহ আংকেল অবশ্যই আসবো
.
আজ ১৭ তারিখ , ২২ তারিখ বিয়ে । তার মানে আর মাত্র ৪ দিন বাকি আছে । এত তারাতারি বিয়ের তারিখ পড়ায় মেয়ের পরিবার ও হিম সিম খেয়ে যাচ্ছে । নিম্নমধ্যবিত্ত হয়ে বেচে থাকার অনেক জ্বালা যা তনু হারে হারে টের পাচ্ছে । অসুস্থ বাবার সব দ্বায়িত্ব ছোট ছোট ভাই বোনের পড়াশোনার খরচ , বাসা ভাড়া , মায়ের দেখা শোনা সব টাই তনু আর তার ভাই মিলে যোগাড় করে । ৪ বছরের একটা মেয়াদী বীমা করেছিল তনু কাউকে অবশ্য বলে নি । ভেবেছে যদি কখনো বড় বিপদ আসে তখন টাকা গুলো কাজে লাগবে । গত নভেম্বরের ২৭ তারিখ কিস্তি শেষ হয়েছে তার । তার মানে এখন টাকা টা তোলা যাবে । মায়ের কাছে চলে যায় তনু ।
.
– মা কি করো
– এই তো রান্না করতেছিলাম , বিকেলে তোর ফুপুরা আসবে , আর সন্ধ্যায় তোর খালামনিরা
– এত তারাতারি আসার কি দরকার ছিল মা , বিয়ের আগের দিন ই না হয় সবাই আসতো
– মুখ ফুটে বলছে , না করি কেমনে
– বাজার করছে কে
– রুমেল বাজার করে আনছে
– রুমেলের উপর দিয়ে ধকল যাবে এখন নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে মা
– কি বলস এইগুলা তনু , আর এমনিতেও বিয়ে তো করতেই হতো , নিজেদের প্রয়োজন এর জন্য তোকে আইবুড়ো করে রাখবো নাকি রে মা
– আচ্ছা বাদ দাও , মা একটা কথা ছিল
– হ্যাঁ বল
– রুমেলের রুমে আসো
– আচ্ছা যা আমি আসতেছি
.
ভাই আর মায়ের সাথে ব্যাপার টা নিয়ে বসতে চায় তনু । তাই ভাই আর মা কেই জানাবে সে । রুমেলের রুমে যায় তনু । পিঠা-পিঠি ভাই বোন তনু আর রুমেল তনু মাস্টার্সে আর রুমেল অর্নাস ফাইনাল দিল । দুইজন দুইজন কে নাম ধরেই ডাকে
.
– রুমেল আছিস ?
– হ্যাঁ আয়
– কিরে অফিসে যাস নাই
– আজকে ছুটি নিলাম
– অসময়ে ছুটি নিলি
– আরে বিকেলে লঞ্চ ঘাটে যেতে হবে সেই জন্যে
– রুবেল কোথায় , ও তো যেতে পারতো আর কোম্পানির চাকরি ছুটি নিলে ছাটাই করে এরা
– তুই জানিস না তোর ভাই কেমন
– ও তো তোরও ভাই
– আচ্ছা বাদ দে বল কিছু বলবি নাকি
– হ্যাঁ , মা আসুক তারপর বলবো
.
মায়ের প্রবেশ…………
.
– তনু , বল কি বলবি মা
– মা , রুমেল , একটা কথা বলার ছিল ,
– তো বল
– আসলে চার বছর আগে একটা বীমা করেছিলাম , কাউকেই বলি নি , ভেবেছিলাম বাবার বেশি বারাবারি হলে টাকা টা কাজে লাগবে । নভেম্বরের ২৭ তারিখ কিস্তি শেষ হয়ে গেছে । এখন কি টাকা টা তুলবো ?
– এই দেখি দেখি তুইন্না , তুই তো ভালোই চাপা রে
– মা দেখলা ওয় আমাকে সেই তুইন্না বলেই ডাকে
– আহহ রুমেল এমন করিস না
– না মা তুমি ভাবো একবার , তোমার মেয়ে ৪ বছরের বীমা করলো , তার কিস্তিও শেষ করলো অথচ কাক-পক্ষীতেও টের পেলো না
– মা তুমি ওর কথা শুনো না , এখন বলো
– তোর টাকা তুই ভালো বুঝিস মা
– মা তুমি কি খালামনি বা মামাদের কাছে টাকা চেয়েছো ?
– হ্যাঁ তুইন্না কাল বড় মামার কাছে টাকা চাইছে মা
– মা শুনো , কারো কাছে টাকা খুইজো না আমি কাল রুমেলকে নিয়ে বীমা অফিসে যাবো , দেখি টাকা টা তুলতে পারি কিনা
– শুন তনু , তোর বড় মামা-মামী বলছে ৩০০০০ দিবে আর জামাইকে রিং দিবে , আর তোর মেজো মামা-মামী টাকা দিবে না তবে জামাই কে রিং দিবে আর তোর ছোট মামা-মামী ২০০০০ দিবে , মারে একটা বিয়েতে কম করে হলেও ৫/৬ লাখ নিয়ে নামতে হয় ।
– তুইন্না তোর জামাইকে মা চেইন দিবে রে সেইটা আমিই দিবো , তুই তো এখন বড়লোক বাড়ির বউ হবি , আমার বউকে তুই কি দিবি
– ফাইযলামি করিস না রুমেল , মা শুনো আমি বিকেলে একটু বের হবো
– তনু
– হ্যাঁ মা বলো
– আফরোজের উপরে বিশ্বাস করে বিয়ে টাতে নামলান মা , ভালো পরিবার ছেলের ছবি দেখলাম সবই ঠিক আছে তুই খুশি তো মা ?
– খুশি মা , তোমরা খুশি হলেই আমি খুশি
– তুইন্না আমার থেকে কি চাস বল
– কিছুই না , শুধু আমার চলে যাওয়ার পর সংসার টার খেয়াল রাখিস , বাবা মা কে দেখে রাখিস , তাহলেই আমি খুশি ভাই
– সেন্টি হইস না , কিছু বিয়ের দিনের জন্যে রেখে দে
– যাহ তো সর , মা বাবা কি করে গো
– আর কি করবে শুয়েই আছে
– তুইন্না ছোট ফুফু আসবে রে , দেখিস কত বকবক যে এই মহিলা করবে
– আমার তো দেখলেই গা জ্বালা ধরে , মা একে বললা কেন
– তনু , রুমেল এইভাবে বলিস না , এই শিক্ষা তো তোদের দেই নাই আমি , ফুফুরা আসলে সুন্দর করে কথা বলবি
– আচ্ছা
.
বিকেলে তনু বের হয়ে যায় সাথে ছুটকিকেও নিয়ে যায় । আসলে মাইশা কল দিয়েছে , তনুকে বের গতে বলছে সে তাই তনু বের হলো । শপিং এ যাবে একটু তাই বের হওয়া । বসুন্ধরা তে যাবে না , গাউছিয়া তে তো আরো আগে না , তাই নিউমার্কেট টাই বেছে নেয় তনু । কিন্তু মাইশার জোড়াজুড়ি তে বসুন্ধরা তে যেতে হয় তনুর
.
– ভাবি এইটা কেমন ?
– অনেক সুন্দর
– তাহলে এইটা নেই , কি বলো ?
– নাও আপু
– এই ছুটকি তুমিও নাও
– নাহ মাইশা আপু , আমি পরে নিবো তুমিই নাও
– আচ্ছা , ভাবি তুমি কিছু নিবা না
– নাহ গো , তুমিই নাও তোমাকে সংগ দিতে আসলাম
– হি হি
– দিদি শুন না একটু
– হ্যাঁ বল
– দিদি মাইশা আপু এই ড্রেস টা নিল , বিয়েতে পড়বে ?
– জানি না
– ওহ
– মাইশা , ছুটকি কে দেখো তো আমি আসছি একটু
– আচ্ছা ভাবি
– মাইশা আপু একটা কথা বলি
– হ্যাঁ বলো
– এই ড্রেস টা কি তুমি বিয়ে তে পড়বা ?
– হ্যাঁ , সুন্দর না ড্রেস টা ?
– অনেক সুন্দর ,
– রিসিপশনের জন্য আরো ভালো কিছু নিবো
– ওহ
.
ছুটকির কাছে ড্রেস টা খুব ভালো লেগেছে , কিন্তু দিদি মানে তনুর জন্য কিছু বলতে পারছে না । ড্রেস টার প্রাইস অনেক , তনুর কাছে অনেক বেশি আর মাইশার কাছে পানি । ড্রেস টার লোভ ছাড়তে পারছে না ছুটকি । বোনের বিয়ে , অনেক মেহমান আসবে ছেলের বাড়ির পক্ষ থেকে তাদের সামনে কম দামী ড্রেস পড়তে কেমন জানি লাগছে তার কাছে ।
তবুও চুপচাপ দাড়িয়ে আছে ।
.
– মাইশা কেনাকাটা হয়েছে ?
– হ্যাঁ ভাবি
– তাহলে চলো যাই
– হ্যাঁ চলো , কিন্তু তুমি তো কিছুই নিলা না আম্মু শুনলে রাগ করবে
– যখন তোমাদের বাসায় যাবো তখন কিনবো কেমন ?
– ওকে , ভাবি তাহলে চলো তোমাদের ড্রপ করে দেই
– না আপু , তুমি চলে যাও , আমরা সি এন জি নিয়ে নিবো
– আচ্ছা তাহলে আসি ভাবি , আল্লাহ হাফেজ
– আল্লাহ হাফেজ
– আসি ছুটকি
– আচ্ছা আপু আল্লাহ হাফেজ
.
– দিদি
– হ্যাঁ বল
– না কিছু না , চল যাই
– নিউমার্কেট যাবো , চল
.
নিউমার্কেট যাওয়ার কারন আছে , সেখান থেকে জিনিসপত্র একটু কম দামে আর দাম কষাকষি করা যায় । তনু কিছু টাকা নিয়ে নিয়েছে আজ কিছু কেনাকেটা করবে বলে । তাই সেখানে যাওয়া
.
– দিদি , কি কিনবি
– মায়ের জন্য শাড়ি , বাবার জন্য পাঞ্জাবি
– ওহ
.
দুই বোন মিলে ঘুরে ঘুরে অনেক দামাদামি করে মায়ের জন্য দুইটা শাড়ি , এক জোড়া জুতা , বাবার জন্য ভালো দেখে দুইটা পাঞ্জাবি আর এক জোড়া জুতা কিনেছে । মায়ের জন্য দুই জোড়া সিটি গোল্ডের চুড়ি নিয়েছে । আর ছুটকির পছন্দ অনুযায়ী ওকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছে হলুদে পড়ার জন্য ।
.
– ছুটকি
– জ্বি
– আমার কাছে না এখন টাকা নেই , বাকি জিনিস কাল কিনে দেবো , কেমন ?
– আচ্ছা দিদি
.
সন্ধ্যার পরে বাসায় ফিরে ওরা । এসে দেখে বাসায় মেহমানে ভর্তি , দুই ফুফু এক চাচি আর খালামনিরা মামিরা সবাই আসছে । সাথে সব কাজিন রাও আছে । সবাইকে সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করছে তনু । এমন সময় চাচি বলে
.
– কিরে তনু , তোর তো ভাগ্য খুলে গেছে এত বড় ঘরে বিয়ে হচ্ছে তোর
– দোয়া করবেন চাচি
– তা তনুর মা , জামাই কি করে
– পড়াশোনা শেষ করছে এখন বাবার ব্যবসা দেখাশুনো করে
.
কথা শুনেই তনু মায়ের দিকে তাকায় । আসলে সত্যি টা যে কি তা তো তনু জানে । তনু সবার সাথে কথা বলছিল , এমন সময় ওর ফুফু ওকে বলে
.
– তনু জামাই কেমন রে
– ফুফু আমি দেখি নি গো
– কি বলিস , এখন কার যুগে এমন হয় নাকি
– আমার হচ্ছে তো , একেবারে বিয়ের দিনই দেখবো
– যাক ভালোই তো
– আমাদের তনু তো লাখে একটা
– হ্যাঁ খালামনি তোমাদের তনু লাখে একটা বটে তবে সে দুঃখের রানী , সুখের রানী নয়
– কেন রে তনু এইসব কেন বলিস
– কিছু না মামি , তোমরা বসো আমি বাবার কাছ থেকে আসতেছি ।
.
সবাই কে এড়িয়ে বাবার ঘরের দিকে পা বাড়ায় তনু । আগুনে পা দিয়ে ফেলছে তনু , পিছন থেকে ফিরে আসার কোন সুযোগ নেই তার । তার থেকে বরং যা হচ্ছে মেনে নেয়াটাই শ্রেয় । যা হবে দেখা যাবে । এখন ভেবে আর লাভ নাই
.
– বাবা ও বাবা , আমি আসছি , চোখ টা খুলো ।
.
মেয়ের কথায় আলতাফ হোসেন চোখ মেলে তাকায় । ফ্যাল ফ্যাল নজরে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন । ঠোঁট টা বাকিয়ে আছে আগে থেকেই । বাকা ঠোঁটে কথা গুলোও বেযে বেযে আসে ।
.
– আস,,,চ,,,,চি,,,,ছি,,,,স
– থাক বাবা কথা বলতে হবে না , আছি আমি এখানেই । শরীর টা একটু ভালো লাগছে এখন ?
– উউউউউ
– তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি বাবা
– ক,,,,,ক,,,,,ক,,,ইইই
– এই দেখো পাঞ্জাবি , আমার হ্যান্ডসাম বাবার জন্য পাঞ্জাবি নিয়া আসছি আমি ,আর জুতা এনেছি পছন্দ হয়েছে ?
– হুউউউ
– এই পাঞ্জাবি টা পড়ে আমার গায়ে হলুদ দিবা , আর এটা পড়বা বিয়েতে , কেমন ?
আমি তো চলে যাবো , তোমার তনু টা চলে যাবে , কষ্ট লাগবে না তোমার ?
– হুউউউউউ
– কেদো না , আমার বাবার চোখের পানি আমার ভালো লাগে না । আমি দূরে গিয়েও তোমার কাছেই থাকবো বাবা । তুমি শুধু দোয়া করো তোমার তনুকে । সে যেন সব রকম পরীক্ষায় পাশ করে
.
মেয়ের কথায় চোখের পানি ছেড়ে দেয় আলতাফ হোসেন । অক্ষমতা বড্ড বেশি ঘ্রাস করে তাকে । বড় মেয়ের বিয়ে নিয়ে তার কত স্বপ্ন ছিল , কিন্তু এই অক্ষমতা তাকে সব কিছু থেকে বঞ্চিত করে দিয়েছে
তার কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়েছে৷। হঠাৎ করেই তনু খেয়াল করে ওর বাবা যেন হাত টা দিয়ে বুকের দিক টায় কিছু ইশারায় বুঝাতে চাচ্ছেন । বাবার লক্ষী মেয়েটা বুঝে নেয় সব টা । বাবা তার বুঝাতে চাচ্ছেন যে তুই চলে গেলে বুকটা ফাঁকা হয়ে যাবে রে মা , বড় ফাঁকা হয়ে যাবে । বুক টা ফেটে কান্না আসছে তনুর৷। তবুও সে শক্ত হয়ে আছে , কান্না করা যাবে না একদমই না হয় তার বাবা আরো ভেঙে পড়বেন ।
.
বাবার সাথে সময় কাটানোর পরে সে নিজের রুমে যায় । বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফুফুর কথা ভাবছে তনু । ছেলেকে তো সে এখন অবদি দেখে নি । ছেলেটা কেমন হবে ? তাকে কি আসলেই দেখতে নেশাখোর , drug addicted এর মত লাগে ? তাকে দেখতে কি একদমই বাজে প্রকৃতির ?
আবার পরক্ষনেই আফরোজের কথা মাথায় আসে । আর যাই হোক আফরোজ তার জন্য নিশ্চয়ই এমন ছেলে খুজবে না । আফরোজের প্রতি তার ভরসা আছে । আসল কথা আল্লাহ জুড়ি যার সাথে যার মিলিয়েই রেখেছে । আফরোজ তো শুধু মাধ্যম মাত্র । যাকে বিশ্বাস করা যায় , ভরসা যায় , এই মেয়েটাও কম কষ্ট পায় নি জীবনে । জীবন থেকে বার বার ধোকা খেতে খেতে ওয়াসিমের সাথে তার পরিচয় । তারপর বিয়ে আর এখন এক বছরের সংসার , ভালোই চলে যাচ্ছে দুইজনের ।
এমন সময় মা সুরিয়া বেগম আসে
.
– তনু ঘুমিয়ে গেছিস ?
– নাহ মা , আসো
– কিরে তখন চোখে ইশারা দিয়েছিলি রুমে আসতে
– হ্যাঁ বসো
– কি বলবি , বল
– মা , তোমার জন্য দুইটা শাড়ি কিনেছি আর জুতা কিনলাম এক জোড়া , তাই দেয়ার জন্য ডেকেছিলাম
– হায় হায় করছিস কি , তুই এইগুলা কেন কিনলি , আমার তো অনেক কাপড় আছে ওইগুলাই পড়তাম , আমার জন্য না এনে তোর বাবা আর ছুটকির জন্য আনতি
– এনেছি মা , বাবার জন্য এনেছি এইযে এই গুলা বাবার । আর ছুটকির জন্য রুবেল , রুমেল এর জন্য কাল কিনবো
– আর তোর জন্য ?
– আমার জন্য কি কিনবো , আমার তো সবই আছে মা , কত গুলা থ্রীপিছ আছে ওই গুলা নিয়ে যাবো
– নাহ , নতুন কয়েকটা কিনবি আমি টাকা দিবো , ২ হাজার টাকা জমাইছিলাম , সেইগুলা দিব কিনে নিস । তারা কত বড়লোক , তাদের বাড়িতে এইসব পড়বি নাকি তুই ?
– তারা বড়লোক আমি নিম্নমধ্যবিত্ত এটা তারা জানে মা , আর সব জেনে শুনেই নিচ্ছে । ভয় নেই মা , আর টাকা দিতে হবে না , তুমি যখন বলছো তাহলে আমি কিনবো , কেমন ?
– দেখতে দেখতে আমার ছোট্ট তনুটা কত বড় হয়ে গেল , দুইদিন পর শ্বশুরবাড়ি যাবে সে
– কেদো না মা , তোমার তনু ভালো থাকবে
দেখে নিও মা ।
– আয় খেতে আয়
– নাহ মা আজ আর খাবো না , প্রচুর ঘুম আসতেছে , ঘুমাবো এখন
– তাহলে ভাত নিয়ে আসি এইখানে ? মা খাবাই দেই
– নাহ মা তুমি মেহমান সামলাও , আমি একটু ঘুম দেই
– আচ্ছা
.
রাত প্রায় ১২ টার মত বাজে । এমন সময় তনুর মোবাইল ক্রিং ক্রিং শব্দে আওয়াজ করতে শুরু করে । তনু মোবাইলের শব্দে লাফিয়ে উঠে । তারপর কল টা রিসিভ করে । এত রাতে কে কল দিল তাকে
.
– হ্যালো আসসালামু আলাইকুম
– হেই
– কে বলছেন ?
– তাওহীদ , তাওহীদ মাহবুব বলছি
– কোন তাওহীদ ?
– যাকে দুই দিন পরে বিয়ে করবে তাকেই ভুলে গেছো
– মানে
– জ্বি i am Tawhid Mahbub , your future husband
.
চলবে….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com