গল্প: এক টুকরো বিশ্বাস || পর্ব:০৬
কয়েক ঘন্টা পর ছায়া আবিরকে বলে
ছায়া:আবির যেই বাসে মায়া তনয়া ছিল ওই বাস একটা খাদে পড়ে গেছে ।
এই কথা শোনার পর আবির পাগলের মতো দৌড়ে ওই জায়গায় পৌছায়।যেয়ে দেখে সত্যি ই বাস খাদে পড়া ।বাসে থাকা যাত্রীদের আত্মীয় স্বজন তাদের প্রিয় জন কে খুঁজছে ।আবির ও তাই করছে ।সহ খানে খোজে কিন্তু আবির তাদের পায় না ।উদ্ধারকর্মী রা বলছে খাদ গভীর হওয়ার লাশ আর পাওয়া যাচ্ছে না ।আবির পাগলের মতো মায়া আর তনয়া কে খুঁজে যাচ্ছে ।আর চিল্লাচ্ছে
আবির:মায়া, আমি শুধু চেয়েছিলাম তুমি আমার থেকে দুরে চলে যাও ।কিন্তু এত দূরে না যে আমি তোমাকে আর দেখতেই না পারি ।
আবিরের বুকটা খালি হয়ে আছে ।মায়ার মৃত্যুর জন্য নিজেকে দোষী মানছে ।
কয়েকদিন হয়ে গেছে মায়া আর তনয়ার কোন খোঁজ খবর নেই ।আবির এর গায়ে ঠিক একই কাপড় ,চুল গুলো এলোমেলো ।মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ।সব কিছু করে ও আবির মায়া আর তনয়ার খোঁজ না পেয়ে ওই খাদের সামনে ই ছুড়ি নেয় নিজেকে শেষ করার জন্য ।হঠাৎ পিছন থেকে একটা কন্ঠ ভেসে আসে ।সেই চিরচেনা কন্ঠ
মায়া:আমরা তো এখানে মরি নি ।শুধু শুধু নিজের জীবন দিয়ে সময় নষ্ট করা হচ্ছে ।
আবির পিছনে তাকিয়ে দেখে মায়া আর তনয়া দাড়িয়ে আছে।আবির দৌড়ে গিয়ে মায়া আর তনয়া কে জড়িয়ে ধরল আর বলল মাফ করে দাও আমাকে মায়া ।আর অসহ্র চুমু খাচ্ছে ।মায়া বলে উঠল
মায়া :আমাকে ধরবে না ।
আবিরের চোখ নিচে নামিয়ে ফেলে ।
মায়া বলে
মায়া:তোমার শরীর থেকে যা গন্ধ বের হচ্ছে না আমি তো মরে ই যাব ।
আবির মায়া কে জোরে বুকে চেপে ধরে ।আর জিজ্ঞেস করে
আবির:তোমরা তো ওই বাসে উঠেছিলে ।কীভাবে আসলে??
মায়া:আমরা বাসে উঠি নি ।
আবির :মানে??
মায়া:আমরা যখন বাসা থেকে বের হয়ে যাই তখন আমার ফোনে একটা ফোন আসে।
আবির :কার ফোন ??
মায়া:রাশেদের।ও আমাকে আবার আপন করে নিতে চায় ।
আমার কথা শুনে আবিরের মুখ শুকিয়ে গেলে ।আমি মুচকি হেসে বললাম
মায়া:মজা করছি ।
এই কথা শুনে আবিরের জান ফিরে এল ।আমি আবার বলতে শুরু করলাম
মায়া:আমি যখন ঘর থেকে বের হয়ে যাই তখন ডাক্তার ফোন দেয় তোমার রিপোট এর কথা বলে ।যে আজকে তুমি রিপোট আনতে যাবে কিন্তু আস নি ।আমি রিপোট আনতে গিয়ে ডাক্তার এর কাছে শুনি তুমি এই কথা আগে থেকে জানতে ।এখন বাকী কথা টি কি আমি বলব না তুমি ।
আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে
আবির:তুমি যেই দিন রিপোট আনতে গেলে ওই দিন অফিসে আমার কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে ।তাই দেরি না করে আমি ও হসপিটালে এসে পড়ি।কিন্তু এসেই আমি তোমার আর ডাক্তার এর কথপোকথন শুনে ফেলি ।তখন আমার মাঝে ঝড় বইছিল ।তোমার যাওয়ার পর ডাক্তার এর কাছে আমি আরো কথা বলল আর টেস্ট ও করতে বলল।বাসায় এসে যখন ঘুমাতে যাব ।যখন তুমি সব দোষ নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে নিলে ।তখন আমার মনে হচ্ছিল আমার বুকে কেউ অনেক বড় পাথর রেখেছে ।তোমাকে ওইদিন জড়িয়ে ধরে কাঁদতে মন চাইছিল ।কিন্তু নিজেকে অনেক বড় অপরাধী মনে হচ্ছিল ।বার বার আমার ভেতরটা কুঁকড়ে খাচ্ছিল ।আমি তোমার যোগ্য নই ।তিন দিন বাসায় বাইরে থাকি ।একদিন আসার সময় দেখলাম ছায়া কে দুটো লোক টেনে নিয়ে যাচ্ছে ।আমাকে দেখে ছায়া আকুতি মিনুতি করে ।প্রথমে চলে যেতে নেই কিন্তু তোমার সাথে থাকতে থাকতে আমাকে তোমার মত করে দিয়েছ।তাই ওকে না বাঁচিয়ে থাকতে পারলাম না। ছায়া কে বাঁচানোর পথ জানতে পারি বিয়ের পর থেকে ওর স্বামী ওর উপর অমানবিক নির্যাতন করে যাচ্ছে ।আজকে নাকি জুয়া তে হেরে এই দুই লোকের কাছে বেচে দিয়েছে ।আমি ছায়াকে সব খুলে বলি ।আর এইসব নাটক করার কথা বলি ।প্রথমে রাজি হয় না ।পরে ওকে তোমার কসম দেই ।পরে ও রাজী হয় ।
দেখি মায়ার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ।আমি ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলি
আবির:তাহলে কি তুমি ডাক্তারের কথায় আর যাও নি ।
মায়া:না। আরো একজনের সাথে কথা হয়েছে ।
আবির:কার সাথে ।
তখন ই ছায়া আসে ।ছায়া আর আগের মত নেই তার পোশাক এখন খুব সাবলীন।অনেক অনুতপ্ত ছায়া ।ছায়া এসে বলে
ছায়া:আমি মায়া কে ফোনে তোমার কথা সব বলি ।আর যাই হোক এত কিছুর পরে আমার বিবেক জাগ্রত হয়েছে ।এই দুইজন ভালোবাসার মানুষকে কীভাবে আলাদা করি। আমি মায়া কে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলি ।মায়া কে সব খুলে বলি ।আমার কথা শুনে মায়া একটা প্লান করে ।আর এই প্লান অনুযায়ী কাজ করি ।
আবির:কী তাহলে সব তোমার সাজানো নাটক ছিল ।
মায়া:হ্যাঁ গর্দব জামাই।
আবির মায়া কে জড়িয়ে ধরল ।ছায়া আবির আর মায়া থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল দূরে যাওয়ার আগে বলল
ছায়া:আপু ,অনেক চেষ্টা করেছি তোর থেকে ভালো আর আকর্ষণীয় হতে কিন্তু এখন আমি তোর ছায়ার মতো হওয়ার চেষ্টা করবে তোর ছায়া বোনটা ।আমাকে কে কি কখনো মাফ করতে পারবি ।
এই কথা শুনে মায়া ছায়াকে জড়িয়ে ধরে।ছায়া চলে যায় আর আবির মায়া কে নিয়ে তাদের বাড়িতে যায় ।তাদের নতুন জীবনের সূচনা ঘটাতে ।
দুই বছর পর
মেডিকেল সাইন্স অনেক ডেভলপমেন্ট করছে ।এই দুই বছরের আপনার অনেক অগ্রগতি হয়েছে ।আপনার রিপোট পজিটিভ হয়েছে মি আবির ।আপনি বাবা হতে পারবে ।ডাক্তারের মুখে এই কথা শুনে মায়া আবিরের হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ।
ডাক্তার বলল আপনারা চাইলে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন ।
বাসায় আসার পর মায়া কাজ করছে ।তনয়া এখন পাঁচ বছর হয়েছে ।তনয়া ঘর নোংরা করছে দেখে মায়া একটু বকা দেয় ।তনয়া দৌড়ে গিয়ে বাবার কাছে নালিশ করে
তনয়া:বাবা বাবা দেখ আম্মু আমাকে পিট্টি দেয় ।
আবির তার মেয়ের মাথায় চুমু দিয়ে বলে
আবির :কী এখন ই তোমার আম্মু কে পিট্টি দিচ্ছি ।
এই কথা বলতেই দেখে মায়া ঝাড়ু নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।আর বলে
মায়া:তো কাকে পিট্টি দেওয়ার কথা হচ্ছে??
তনয়া আবিরের কানে ফিসফিস করে বলে বাবা আজ তুম খেয়ে কাম ছে ।এই বলে ভৌ দৌড় দেয় ।
মায়া আবির সামনে আসতে নিলেই আবির পা ফেলে মায়া কে ফেলে দেয় নিজের উপর আর আমার ঠোঁট কে নিজের দখলে নিয়ে যায় ।অনেকক্ষণ পর ছেড়ে বলে
আবির:আমার মেয়ের একটা খেলার সাথী দরকার ।
মায়া লজ্জায় আবিরের বুকে মুখ লুকায় ।
কয়েকমাস পর ডাক্তারের রিপোট আসে মায়া প্যাগনেন্ট ।আবির মায়ার আরো বেশি যত্ন করতে লাগল ।মায়ার শাশুড়ি অনেক খুশি হল ।মায়া কে তো কোন কাজ ই করতে দেয় না। ছায়া মাঝে মাঝে মায়া কে এসে দেখে যায় ।মায়া র বাবা মা ও আসে ।
নয় মাস পর
একদিন হঠাৎ মায়া ব্যথা উঠে ।আবির মায়া কে নিয়ে হসপিটালে যায় ।মায়া বার বার একই কথা বলছে
মায়া:আবির আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে ।আবির আমার মনে হয় আমি আর বাচবো না ।
আবির ও কান্না করে দেয় ।যতক্ষণ পর্যন্ত মায়া ওটি তে আছে তত ক্ষণ পর্যন্ত আবির নামায পড়তে থাকে ।ডাক্তার বের হলে ই আবির জিজ্ঞেস করে
আবির:মায়া কেমন আছে ডাক্তার??
ডাক্তার:মায়া ঠিকাছে আর আপনার বেবি ওও।
আবির খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় ।মায়া কে দেখার জন্য কেবিনে যায় ।মায়া আবির কে দেখঃ কান্না করে দেয় ।আবির মায়ার কপালে চুমু দিয়ে বাচ্চা কে কোলে নেয় ।আবির বাসায় ফোন দিয়ে তনয়া কে জানায় নতুন বেবির কথা তনয়া তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় ।শাশুড়ি ও অনেক খুশি হয়।
তিরিশ বছর পর
আবির আর মায়া পার্কের বসে আছে ।সামনে ই একটা ছোট লেক ।তারা দৃশ্য উপভোগ করছে ।আবির তার ফোন বের করে একটা গান ছাড়ে ।মায়া বলে
মায়া:ছেলে মানুষি তোমার এখন ও যায় নি ।
মায়া আবিরের কাঁধে মাথা রেখে গান শুনতে থাকে
""এলে তুমি এক ফালি রোদ হয়ে
ভাবছি তাই খুব ঘোরে চুপ হয়ে
কী করে বোঝাই আমি রোজ প্রার্থনায় তোমায় চাই
এসো না আমার গল্পে তুমি,ডুবে যাই তোমার গল্পে আমি
সত্যি বলছি আমি তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই """
হঠাৎ পেছন থেকে ডাক আসে বাবা মা চলো যাই
আবির:তনয়া, বিশ্বাস তোমরা যাও আসসি আমরা ।
আবির বলে উঠে এই সময় টা কীভাবে পার হলো বুঝতে ই পারি নি ।তো মৃত্যু পরের জীবন টা কি আমার সাথে কাটাতে চাও ।
মায়া:না ।ভোর হয়ে গেছি তোমার থেকে ।
আবির হেসে উত্তর দেয়
আবির:তাই নাকি ।এক টুকরো বিশ্বাস করতে পারো এখন তো বুরো হয়ে গিয়েছি তখন কিন্তু বুড়ো হব না ।
এই কথা শুনে মায়া হেসে দেয়
সমাপ্ত
আশা করি আপনাদের কাছে গল্প টা ভালো লেগেছে ।এই গল্প দুই ধরনের মানুষ কে দেখানো হয়েছে ।ভালো আর খারাপ। খারাপ মানুষ যত ই আড়ালে থাকুক ধংস অনির্বাণ ।আর ভালো মানুষের সাথে যতই খারাপ হক পড়ে তারা সুখের প্রশান্তি পায় ।জানিনা প্রথম গল্প লেখা আপনাদের মনের মত হতে পেরেছে কি না । প্রথমে sad ending দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু লেখকের কাজ পাঠকের রুচি অনুযায়ী লিখা ।ভুল হলে মাফ করবেন💖💖💖😊😊😊💖💖💖💖💖।দোয়া করব আপনাদের জন্য যাতে আবির আর মায়ার মতো ভালোবাসার মানুষ পান💖💖💖💖💖
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com